প্রশ্ন সমাধান: পানির ধর্ম কি?, পানির উৎস, জলজ উদ্ভিদের জন্য পানির প্রয়ােজনীয়তা আলোচনা করো, পানির মানদণ্ড , পানি তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি, পানি দ্রবীভূত অক্সিজেন
পানির অপর নাম জীবন- তা আমরা সবাই কমবেশি জানি। পানি ছাড়া একদিনও চলা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।প্রতিদিন প্রায় সব ধরণের কাজে আমাদের পানি লাগবেই। এছাড়া সারাদিন আমরা যত ধরণের খাবার খাই, তার মধ্যে একমাত্র পানিই ক্যালরি,ফ্যাট,শর্করা ও চিনি মুক্ত। যদিও পানিতে কোনো পুষ্টি নেই তবে এটি জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
শরীরের পানির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে একটু বিশদ ব্যাখ্যাই বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার করবে-
আমাদের রক্তের ৮৩ ভাগ, হাড়ে ২২ ভাগ, মস্তিষ্কে ৭৪ ভাগ, পেশিতে ৭৫ ভাগ পানি থাকে, অর্থাৎ আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে পানি। শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্ম সম্পাদনের জন্যও প্রয়োজন পানি।
যদি যথেষ্ট পানি পান না করি তাহলে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। গাছের গোড়ায় পানি না দিলে যেমন শুকিয়ে যায় তেমনি পানির অভাবে আমাদের শরীরে পুষ্টি সরবরাহ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়। শরীরের প্রতিটি কাজে পানির সাহায্য প্রয়োজন। খাবার ব্যতীত এক সপ্তাহ থাকা সম্ভব হলেও পানি ছাড়া এতদিন থাকা সম্ভব নয়। তার মানে শরীরকে সচল রাখা ও শারীরিক ফিটনেস অর্জনে খাদ্য তালিকায় প্রচুর পানি থাকতেই হবে ।
প্রয়োজনীয় পানি পানের অভাবে অনেক রকম সমস্যা, যেমন- পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনির সমস্যা,শরীরের টক্সিন জমা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
পিপাসার্ত অবস্থায় পানি খেলে, তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়। ফলে শারীরিক ক্লান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি শক্তিও ফিরে আসে ।
পানি রক্তে ও কোষে অক্সিজেন ও অনান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। এছাড়া সারা শরীরের রক্ত সরবরাহ ও সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় পানি পানে। পানি শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। পানির অভাবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। পানি হজম শক্তি বাড়ায়, হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। আমাদের শরীরে ঠিক ভাবে খাবার হজম হওয়ার জন্য প্রচুর পানির দরকার। তাই আঁশ জাতীয় খাবারের পাশাপাশি, প্রচুর পানিও পান করতে হবে।
পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। পানি ঠিক মতো পান না করলে শরীর সব পানি শুষে নেয়, এতে কোলন শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ঠিক মতো নির্গত হয় না। পানি কিডনির পাথর হওয়া থেকে বাঁচায় কারণ, পানি ইউরিনের লবন ও খনিজ ভেঙ্গে দেয়, ফলে কিডনিতে পাথর হয় না। ব্রেইনের ৮৫% হচ্ছে পানি। একটু পর পর পানি পান করলে তাই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং শারীরিক শক্তি বাড়ে। পানি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, তাই উচ্চ রক্তচাপ কমে।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
পৃথিবীতে যত ধরনের তরল পদার্থ পাওয়া যায়, পানি তার মাঝে সবচেয়ে সহজলভ্য। মানুষের শরীরের শতকরা ৬০-৭৫ ভাগই হচ্ছে পানি। মাছ, মাংস কিংবা শাক-সবজিতে শতকরা ৬০-৯০ ভাগ পানি থাকে। পৃথিবীপৃষ্ঠের শতকরা ৭৫ ভাগই হচ্ছে পানি। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য, তাই পানির আরেক নাম হচ্ছে জীবন। তাহলে পানির কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পানির ধর্ম
গলনাংক ও স্ফুটনাংক। তােমাদের কি মনে আছে, পানির গলনাংক আর স্ফুটনাংক কত? পানি যখন কঠিন অবস্থায় থাকে সেটিকে আমরা বলি বরফ। যে তাপমাত্রায় বরফ গলে যায়, সেটিই হচ্ছে বরফের গলনাংক। বরফের গলনাংক ০° সেলসিয়াস। অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলীয় চাপে যে তাপমাত্রায় তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হয়, তাকে বলে স্ফুটনাংক। পানির স্ফুটনাংক ৯৯.৯৮° সেলসিয়াস যেটা ১০০° সেলসিয়াসের খুবই কাছাকাছি।
তাই সাধারণভাবে আমরা পানির স্ফুটনাংক ১০০° সেলসিয়াস বলে থাকি। বিশুদ্ধ পানি স্বাদহীন, গন্ধহীন আর বর্ণহীন। তােমরা কি জান পানির ঘনত্ব কত? পানির ঘনত্ব তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। ৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি আর সেটি হচ্ছে ১ গ্রাম/সি.সি বা ১০০০ কেজি/মিটার কিউব। অর্থাৎ ১ সি.সি. পানির ভর হলাে ১ গ্রাম বা ১ কিউবিক মিটার পানির ভর হলাে ১০০০ কেজি।
বিদ্যুৎ বা তড়িৎ পরিবাহিতা
বিশুদ্ধ পানিতে বিদ্যুৎ বা তড়িৎ পরিবাহিত হয় না, তবে এতে লবণ কিংবা এসিডের মতাে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ দ্রবীভূত থাকলে তড়িৎ পরিবাহিত হয়। পানির একটি বিশেষ ধর্ম হলাে এটি বেশির ভাগ অজৈব যৌগ আর অনেক জৈব যৌগকে দ্রবীভূত করতে পারে। এজন্য পানিকে সর্বজনীন দ্রাবকও বলা হয়।
পানি একটি উভধর্মী পদার্থ অর্থাৎ কখনাে এসিড, কখনাে ক্ষার হিসেবে কাজ করে। সাধারণত এসিডের উপস্থিতিতে পানি ক্ষার হিসেবে আর ক্ষারের উপস্থিতিতে এসিড হিসেবে কাজ করে। তবে বিশুদ্ধ পানি পুরােপুরি নিরপেক্ষ অর্থাৎ এর pH হলাে ৭, যেটি সম্পর্কে আমরা সপ্তম অধ্যায়ে বিস্তারিত আলােচনা জানব।
পানির গঠন
তােমাদের মনে কি প্রশ্ন জেগেছে যে আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য এই পানি কী দিয়ে তৈরি? পানি * দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু আর একটি অক্সিজেন পরমাণু (চিত্র ২.০১) দিয়ে গঠিত। তাই আমরা রসায়ন এ পড়ার সময় পানিকে H,O লিখি অর্থাৎ এটিই হলাে পানির সংকেত। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন আমরা জানি যে আমরা যে পানি দেখি সেখানে অনেক পানির অণু একসাথে ক্লাস্টার (Cluster) হিসেবে থাকে।
পানির উৎস
তােমরা কি বলতে পারবে আমাদের অতি দরকারি এই পানি আমরা কোন উৎস থেকে পাই? পানির সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে সাগর, মহাসাগর বা সমুদ্র। পৃথিবীতে যত পানি আছে, তার প্রায় শতকরা ৯০ ভাগেরই উৎস হচ্ছে সমুদ্র। সমুদ্রের পানিতে প্রচুর লবণ থাকে এজন্য সমুদ্রের পানিকে লােনা পানিও (Marine water) বলে। লবণের কারণে সমুদ্রের পানি পানের অনুপযােগী, এমনকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্য কাজেও সমুদ্রের পানি ব্যবহার করা যায় না।
পানির আরেকটি বড় উৎস হলাে হিমবাহ তুষার স্রোত, যেখানে পানি মূলত বরফ আকারে থাকে। এই উৎসে প্রায় শতকরা ২ ভাগের মতাে পানি আছে। উল্লেখ্য যে বরফ আকারে থাকায় এই পানিও কিন্তু অন্য কাজে ব্যবহারের উপযােগী নয়। ব্যবহার উপযােগী পানির উৎস হলাে নদ-নদী, খাল-বিল, হ্রদ, পুকুর কিংবা ভূগর্ভস্থ পানি। ভূগর্ভস্থ পানি আমরা নলকূপের মাধ্যমে তুলে আনি। পাহাড়ের উপর জমে থাকা বরফ বা তুষার গলেও ঝর্ণা সৃষ্টি করতে পারে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলাে, পৃথিবীতে ব্যবহারের উপযােগী পানি মাত্র শতকরা ১ ভাগ।
বাংলাদেশে মিঠা পানির উৎস
আমরা আমাদের বাসায় রান্না থেকে শুরু করে কাপড় ধােয়া, গােসল কিংবা খাওয়ার পানি কোথা থেকে পাই? মাঠে ফসল ফলাতে কখনাে কখনাে (যেমন: ইরি ধানের জন্য) প্রচুর পরিমাণে পানির দরকার হয়। এ পানিই বা আমরা কোথা থেকে পাই? আমাদের দেশে ঝর্ণা তেমন একটা না থাকায় মিঠা পানির মূল উৎস হচ্ছে নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর, হ্রদ এবং ভূগর্ভের পানি। তবে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বিশেষ করে আর্সেনিক থাকায় বাংলাদেশের বিস্তৃত এলাকার ভূগর্ভের পানি পানের অনুপযােগী হয়ে পড়েছে। তাই ঐ সকল এলাকার মানুষ বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করার পর পরিশােধন করে সেটি পান করতে বাধ্য। হয়েছে।
জলজ উদ্ভিদের জন্য পানির প্রয়ােজনীয়তা
তােমরা কচুরিপানা, ক্ষুদিপানা, ওড়িপানা, সিংগারা, টোপাপানা, শাপলা, পদ্ম, শ্যাওলা, হাইড্রিলা, কলমি, হেলেঞ্চা, কেশরদাম ইত্যাদি নানা রকম জলজ উদ্ভিদের নাম শুনেছ এবং তাদের অনেকগুলাে নিজের চোখেও দেখেছ। এরা কোথায় জন্মে জান? এদের বেশির ভাগই পানিতে জন্মে এবং কিছু কিছু আছে (যেমন: কলমি, হেলেঞ্চা, কেশরদাম) যারা পানিতে আর মাটিতে দুজায়গাতেই জন্মে।
অর্থাৎ পানি না থাকলে বেশির ভাগ জলজ উদ্ভিদ জন্মাতই না, কিছু কিছু হয়তাে জন্মাতাে কিন্তু বাঁচতে পারত কিংবা বেঁচে থাকলেও বেড়ে উঠতে পারত না। তখন কী হতাে? তখন পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটত। তার কারণ, এই জলজ উদ্ভিদগুলাে একদিকে যেমন সালােকসংশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখে, অন্যদিকে এদের অনেকগুলাে বিশেষ করে শ্যাওলাজাতীয় জলজ উদ্ভিদগুলাে জলজ প্রাণীদের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে।
এসব জলজ উদ্ভিদ না থাকলে মাছসহ অনেক জলজ প্রাণী বাঁচতেই পারত না, যেটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতাে। তােমরা জান যে উদ্ভিদগুলাে সাধারণত মূলের মাধ্যমে পানি আর অন্যান্য প্রয়ােজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে। কিন্তু জলজ উদ্ভিদগুলাে সারা দেহের মাধ্যমেই পানিসহ অন্যান্য প্রয়ােজনীয় উপাদান বিশেষ করে খনিজ লবণ সংগ্রহ করে থাকে। তাই এদের পুরাে দেহ পানির সংস্পর্শে না এলে এদের বেড়ে ওঠাই হতাে না।
আরেকটি লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে জলজ উদ্ভিদের কাণ্ড আর অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুব নরম হয়, যেটা পানির স্রোত আর জলজ প্রাণীর চলাচলের সঙ্গে মানানসই। পানি ছাড়া শুকনাে মাটিতে এদের জন্ম হলে এরা ভেঙে পড়ত এবং বেড়ে উঠতে পারত না এমনকি বাঁচতেও পারত না। তােমরা কি জান জলজ উদ্ভিদ কীভাবে বংশবিস্তার করে? জলজ উদ্ভিদগুলাে সাধারণত অঙ্গজ উপায়ে বংশবিস্তার করে।
পানি না থাকলে এই বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হতাে। তাই আমরা বলতে পারি, আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জলজ উদ্ভিদগুলাের জন্ম খুবই জরুরি এবং তাদের বেড়ে উঠার জন্য পানির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পানি না থাকলে জলজ উদ্ভিদগুলাে জন্মাতে পারত না, জন্মালেও বাঁচতে পারত না, তার ফলে পরিবেশের ভয়াবহ একটি বিপর্যয় ঘটত।
জলজ প্রাণীর জন্য পানির প্রয়ােজনীয়তা
হাজার হাজার জলজ প্রাণীর মাঝে আমাদের সবচেয়ে পরিচিত জলজ প্রাণী হচ্ছে মাছ। মাছ ধরে পানির বাইরে রেখে দিলে কী হয়? তােমরা সবাই দেখেছ যে মাছ মরে যায়। কেন মরে যায়? কারণ আমরা যেরকম বাতাস বা অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারি না, দম বন্ধ হয়ে মারা যাই, মাছের বেলাতেও তাই ঘটে। মাছ অক্সিজেন গ্রহণ করে ফুলকা দিয়ে আর ফুলকা এমনভাবে তৈরি যে এটি শুধু পানি থেকেই অক্সিজেন নিতে পারে, বাতাস থেকে নয়।
যদি পানি না থাকত তাহলে কোনাে মাছ বাঁচতে পারত না। শুধু মাছ নয়, যেসব প্রাণী ফুলকা দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ করে শ্বাসকার্য চালায়, তাদের কোনােটাই বাঁচতে পারত না। ফলে পরিবেশ হুমকির মধ্যে পড়ত আর আমাদেরও বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যেত।
তােমরা আগের অধ্যায় থেকে জেনেছ যে প্রােটিন আমাদের বেড়ে ওঠার জন্য খুবই প্রয়ােজনীয় একটি উপাদান। আমাদের প্রয়ােজনীয় প্রােটিনের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগই আসে মাছ থেকে। কাজেই পানি না থাকলে আমরা প্রয়ােজনীয় প্রােটিন পেতাম না, যার ফলে আমাদের দৈহিক বৃদ্ধি এবং অন্যান্য কোনাে জৈবিক প্রক্রিয়াই ঠিকভাবে ঘটতাে না।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
পানির মানদণ্ড
পানি অত্যন্ত মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আগের আলােচনায় আমরা দেখেছি যে নদ-নদীর পানি আমাদের পরিবেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ, এটি জলজ উদ্ভিদ আর প্রাণীর আশ্রয়স্থল (Habitat)। শুধু তা-ই নয়, এই পানি কৃষিকাজে সেচের জন্য ব্যবহার করা হয়। একইভাবে জাহাজের নাবিকেরা, লঞ্চ, নৌযান বা ট্রলার দিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করে, তারা সবাই নদ-নদী বা সমুদ্রের পানিই প্রক্রিয়া করে পান করে, তাদের অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করে থাকে।
তাই পানির নির্দিষ্ট মান যদি বজায় না থাকে তাহলে এটি জীববৈচিত্র্য বা পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর হবে, তেমনি অন্যান্য কাজেও এর ব্যবহার ব্যাহত হবে। এবার তাহলে পানির মানদণ্ড সম্পর্কে একটা ধারণা নেওয়া যাক: পানির মানদণ্ড নির্ভর করে সেটি কোন কাজে ব্যবহার করব তার ওপর।
প্রথমে নদ-নদী, খাল-বিল কিংবা সমুদ্রের পানির মানদণ্ড কেমন হওয়া উচিত সেটা জেনে নিই। বর্ণ ও স্বাদ: তােমরা জান যে বিশুদ্ধ পানি বর্ণহীন আর স্বাদহীন হয়, তাই পানিতে বসবাসকারী প্রাণী আর উদ্ভিদের জন্য নদ-নদী, খাল-বিল ইত্যাদির পানি বর্ণহীন আর স্বাদহীন হওয়াই উত্তম।
ঘােলার পরিমাণ পানি ঘােলাটে হলে সেটি পানিতে বসবাসকারী প্রাণী আর উদ্ভিদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে। পারে। তার কারণ, পানি ঘােলা হলে সূর্যের আলাে পানির নিচে থাকা উদ্ভিদ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না, যার ফলে সালােকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হয়।
এতে একদিকে পানিতে থাকা উদ্ভিদের খাবার তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে, যেটা তাদের বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেয়, অন্যদিকে সালােকসংশ্লেষণের ফলে যে অক্সিজেন তৈরি হতাে, সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। পানি ঘােলা হলে মাছ বা অন্য প্রাণী ঠিকমতাে খাবার সংগ্রহ করতে পারে।
পানি ঘােলা হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণ, অর্থাৎ নদীভাঙন, পলি মাটি ইত্যাদি। আবার মানব সৃষ্ট কারণেও পানি ঘােলা হয়, যেমন তেল, গ্রিজ ও অন্যান্য অদ্রবণীয় পদার্থের উপস্থিতি। পানিতে এসব পদার্থ, বিশেষ করে মাটি আর বালি বেড়ে গেলে তা এক পর্যায়ে নদ-নদীর তলায় জমা হতে থাকে।
ফলে নাব্যতা হ্রাস পায় এবং নৌযান চলাচলে অসুবিধা ঘটে। তােমরা সংবাদপত্র বা টেলিভিশনে নিশ্চয়ই লঞ্চ, স্টিমার ডুবাে চরে আটকে পড়ার খবর দেখে থাকবে। কেন এগুলাে আটকে পড়ে? নাব্যতা কমে যাওয়াই এর প্রধান কারণ।
তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি
নদ-নদীর পানিতে কোনাে তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকলে সেটা জলজ উদ্ভিদ আর প্রাণীর দেহে ক্যান্সারের মতাে রােগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই নদ-নদীর পানি পুরােপুরি তেজস্ক্রিয়তামুক্ত হতে হবে।
ময়লা-আবর্জনা
নদ-নদীসহ সকল প্রাকৃতিক পানি অবশ্যই ময়লা-আবর্জনামুক্ত হতে হবে। কারণ ময়লা-আবর্জনা থেকে জীবন ধ্বংসকারী সব ধরনের জীবাণু তৈরি হয়।
দ্রবীভূত অক্সিজেন
আমাদের নিঃশ্বাসের জন্য যে রকম অক্সিজেনের দরকার হয়, ঠিক সেরকম পানিতে বসবাসকারী প্রাণীদেরও শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেনের দরকার হয়। এই অক্সিজেন তারা কোথা থেকে পায়? তারা এই অক্সিজেন পায় পানিতে দ্রবীভূত হয়ে থাকা অক্সিজেন থেকে। কোনাে কারণে যদি এই অক্সিজেন নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কমে যায়, তাহলে জলজ প্রাণীগুলাের সমস্যা হতে থাকে। যদি পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন না থাকে, তাহলে মাছসহ অন্যান্য প্রাণী বাঁচতেই পারে না। জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য ১ লিটার পানিতে কমপক্ষে ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা দরকার।
তাপমাত্রা
তাপমাত্রা পানির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে, একদিকে যেমন দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যায়, অন্যদিকে জলজ প্রাণীর প্রজনন থেকে শুরু করে সব ধরনের শারীরবৃত্তীয় কাজেরও সমস্যা সৃষ্টি হয়।
PH
pH হলাে এমন একটি রাশি, যেটি দ্বারা বােঝা যায় পানি বা অন্য কোনাে জলীয় দ্রবণ এসিডিক, ক্ষারীয় নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ হলে pH হয় ৭, এসিডিক হলে ৭-এর কম, আর ক্ষারীয় হলে ৭-এর বেশি। এসিডের পরিমাণ যত বাড়বে, pH-এর মান তত কমে, অন্যদিকে ক্ষারের পরিমাণ যত বাড়ে, pH-এর মানও তত বাড়ে।
নদ-নদী, খাল-বিল ইত্যাদির জন্য pH-এর মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত নদ-নদীর পানি ক্ষারীয় হয়। গবেষণা করে দেখা গেছে নদ-নদীর পানির pH যদি ৬-৮ এর মধ্যে থাকে, তাহলে সেটা জলজ উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য কোনাে অসুবিধার সৃষ্টি করে না।
তবে pH-এর মান যদি এর চাইতে কমে যায় বা বেড়ে যায়, তাহলে ঐ পানিতে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী আর উদ্ভিদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। মাছের ডিম, পােনা মাছ পানির pH খুব কম বা বেশি হলে বাঁচতে পারে পানিতে এসিডের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে, অর্থাৎ pH-এর মান খুব কমে গেলে জলজ প্রাণীদের দেহ থেকে ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ বাইরে চলে আসে, যার ফলে মাছ সহজেই রােগাক্রান্ত হতে শুরু করে।
লবণাক্ততা
তােমরা কি জান আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ ডিম ছাড়ার সময় মিঠা পানিতে আসে কেন? ইলিশ সামুদ্রিক মাছ অর্থাৎ লবণাক্ত পানির মাছ হলেও প্রজননের সময় অর্থাৎ ডিম ছাড়ার সময় মিঠা পানিতে আসে কারণ সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে, যা ডিম নষ্ট করে ফেলে, ফলে ঐ ডিম থেকে আর পােনা মাছ তৈরি হতে পারে না। তাই প্রকৃতির নিয়মেই ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সময় হলে মিঠা পানিতে আসে। তবে সব মাছের জন্য এটি প্রযােজ্য নয়। কিছু মাছ এবং জলজ প্রাণী লবণাক্ত পানিতেই প্রজনন করতে পারে।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- সোয়াপ (SWAP) কাকে বলে? , সোয়াপ (SWAP) কতো প্রকার বিস্তারিত আলোচনা করো
- ব্যবসায়িক ঝুকি বলতে কি বুঝায় উদাহরণ সহ আলোচনা করো
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization