বিষয়:প্রতিরোধ ও প্রতিকার ব্রেস্ট ক্যান্সারের, ব্রেস্ট ক্যান্সারের এর সহজ সমাধান ও লক্ষণ
অল্পবয়সী মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ – তাৎপর্য
স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer) সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে। এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় না ঠিকই তবে স্তন ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু রোধ করা যায়। স্তন ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু রোধ করার উপায় হল প্রথম স্টেজে এটিকে সনাক্ত করা এবং সঠিক চিকিৎসা করানো।
স্তন ক্যান্সার প্রথম দিকে সনাক্ত করলে কেন তা সাহায্য করে?
বিজ্ঞানীদের মতে, স্তন ক্যান্সারের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা সম্ভব যদি এটি প্রথম দিকেই ধরা পড়ে। কারণ এই পর্যায়ে টিউমারগুলি (tumours) খুব ছোটো হয় এবং ক্যান্সার সাধারণত অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে না।
কারা স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছেন
- বয়স্ক মহিলা
- যাদের স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে
- যেসব মহিলারা বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাননি
- BRCA-1, BRCA-2 নামক জিনের মিউটেশনের কারণে
- অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া
- দেরিতে মাসিক বন্ধ হওয়া
- মদ্যপান করলে
- ব্রেস্টের কিছু অসুখ যেমন atypical ductal বা lobular hyperplasia থাকলে
- অন্য কোনো ক্যান্সার যেমন- কোলন, ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হলে।
স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধে করণীয়
অল্পবয়সী মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী কী?
প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলি (Breast Cancer Symptoms) নিম্নরূপ (দ্রষ্টব্য: এই লক্ষণগুলির উপস্থিতি কেবলমাত্র আপনার ক্যান্সার আছে বলেই নয়, আপনি যদি এর মধ্যে যে কোনওটি লক্ষ্য করেন তবে দেরি না করে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন):
- স্তনে বা বগলে লাম্প বা পিণ্ড
- breast-এর চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া বা চামড়া মোটা হওয়া। (কমলালেবুর খোসার মতো)
- Nipple দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া
- পুরো স্তন বা স্তনের একটি অংশ ফুলে যাওয়া
- স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন
- স্তনবৃন্তে (Nipples) চুলকানি বা ব্যথা
- স্তনের ত্বক অস্বাভাবিক কুঁচকে যাওয়া
- breast এ চাকা দেখা দেয়া।
- Nipple বা স্তনের বোঁটা ভেতরে দেবে যাওয়া।
অল্পবয়সী মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ – তাৎপর্য
স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer) সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে। এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় না ঠিকই তবে স্তন ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু রোধ করা যায়। স্তন ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু রোধ করার উপায় হল প্রথম স্টেজে এটিকে সনাক্ত করা এবং সঠিক চিকিৎসা করানো।
স্তন ক্যান্সার প্রথম দিকে সনাক্ত করলে কেন তা সাহায্য করে?
বিজ্ঞানীদের মতে, স্তন ক্যান্সারের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা সম্ভব যদি এটি প্রথম দিকেই ধরা পড়ে। কারণ এই পর্যায়ে টিউমারগুলি (tumours) খুব ছোটো হয় এবং ক্যান্সার সাধারণত অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে না।
চিকিৎসা
প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ রোগী সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন। এ ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রধানত কয়েকভাগে বিভক্ত-
- সার্জারি
- কেমোথেরাপি
- রেডিওথেরাপি
- হরমোন থেরাপি
- টার্গেটেড থেরাপি।
স্তন ক্যান্সারের অস্ত্রোপচার / সার্জারি
স্তনের টিউমার অপসারণের জন্য অনেক ধরনের অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে-
* লাম্পেকটমি : টিউমার এবং আশপাশের কিছু টিস্যু অপসারণ করা হয়।
* মাস্টেকটমি : এক্ষেত্রে পুরো স্তন অপসারণ করা হয়। ডাবল মাস্টেকটমি মানে উভয় স্তন অপসারণ।
* সেন্টিনেল নোড বায়োপসি : স্তনের টিউমার থেকে কয়েকটি লিম্ফ নোড কেটে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। যদি ক্যানসারের রিপোর্ট নেগেটিভ হয়, লিম্ফ নোড অপসারণের জন্য কোন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না।
* অ্যাক্সিলারি লিম্ফ নোড অপারেশন : যদি সেন্টিনেল নোড বায়োপসির সময় অপসারিত লিম্ফ নোডগুলোতে ক্যানসার ধরা পড়ে, চিকিৎসক অতিরিক্ত লিম্ফ নোডগুলো অপসারণ করতে পারেন।
* কনট্রালট্রাল প্রোফিল্যাকটিক মাস্টেকটমি : একটি স্তনে ক্যানসার ধরা পড়লেও কিছু ক্ষেত্রে সুস্থ স্তনও সরিয়ে নেয়া হয়।
* বিকিরণ থেরাপি : এ পদ্ধতিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিকিরণ রশ্মি ক্যানসার কোষগুলোকে লক্ষ্য করে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়। এ চিকিৎসায় সাধারণত একটি বড় মেশিন ব্যবহার করা হয়।
রেডিওথেরাপি স্তন ক্যান্সারের
এ পদ্ধতি শরীরের ভেতর থেকে ক্যানসার অপসারণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে টিউমারের স্থানের কাছে শরীরের ভেতর অল্প সময়ের জন্য তেজস্ক্রিয় বীজ বসানো হয় এবং এভাবে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হয়।
কেমোথেরাপি স্তন ক্যান্সারের
এ পদ্ধতিতে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এ চিকিৎসা প্রায়ই ক্যানসার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের সাথে ব্যবহৃত হয়। ক্যানসার কোষগুলোকে সঙ্কুচিত করার জন্য অস্ত্রোপচারের আগে কেমোথেরাপি করা যেতে পারে, যাতে পরবর্তীতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেগুলো সহজেই অপসারণ করা যায়।
হরমোন থেরাপি স্তন ক্যান্সারের
হরমোন থেরাপি বা হরমোন-ব্লকিং থেরাপি সেই স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় যা হরমোনের প্রতি সংবেদনশীল। হরমোন থেরাপি ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন (নারীদের সেক্স হরমোন) উৎপাদন বা ক্যানসার কোষের হরমোন রিসেপ্টরগুলোতে কিছু ওষুধ ব্যবহার করে ব্লক করতে সাহায্য করে। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা ক্যানসারের বৃদ্ধি ধীর বা বন্ধ করতে সাহায্য করে।
স্তন ক্যান্সারের এর লক্ষণ কী
টার্গেটেড থেরাপি স্তন ক্যান্সারের
এ পদ্ধতির চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
ইমিউনো থেরাপি স্তন ক্যান্সারের
বিশেষ ক্ষেত্রে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়। ক্যানসার কোষ প্রোটিন তৈরি করে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয় ও শরীরকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাধা দেয়। এ ধরণের চিকিৎসাকে ইমিউনোথেরাপি বলে।
ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য Breast Cancer Screening জরুরি। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে সবারই জানা উচিত এবং এই program-এর আওতায় আসা উচিত। তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়বে এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হবে। আমাদের সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন হলে (যা ক্যান্সার রোগের কারণ) এ রোগের প্রকোপ অনেকাংশেই কমে আসবে এবং আমাদের সমাজে সুস্থ-সুন্দর জীবনের অধিকারী মানুষের অবস্থান সুদৃঢ় হবে।