ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ছোট-বড় শহরের অনেক মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে গেলেই প্রকাশ্যে একশো বা দুইশো টাকার বিনিময়ে মোবাইলের মেমোরি ভর্তি করে গান, ভিডিও, চলচ্চিত্র নেয়া যায়।
কিন্তু যিনি নিচ্ছেন, তিনি জানেন না যে, এভাবে গান বা ভিডিও নিয়ে তিনি আসলে কপিরাইট আইন ভঙ্গ করছেন। আর যে বিক্রেতা টাকার বিনিময়ে এগুলো দিচ্ছেন, তিনিও জানেন না যে, কতটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ তিনি করছেন।
বাংলাদেশে কপিরাইট আইন রয়েছে ২০০০ সাল থেকে, কিন্তু সেই আইনের শক্ত প্রয়োগের অভাবে অহরহ আইন ভঙ্গের ঘটনা ঘটছে। ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এগুলোর নির্মাতারা।
ফেসবুকে একজনের একাউন্টে তার তোলা একটি চমৎকার দেখে সেটা ডাউনলোড করে নিজের মোবাইলের ওয়ালপেপার তৈরি করলেন সুমন চৌধুরী (ছদ্মনাম)। সরল মনে এই কাজটি করলেও আসলে এর মাধ্যমে তিনি কপিরাইট আইন ভঙ্গ করলেন।
কপিরাইট কী?
মৌলিক সৃষ্টিকর্মের মালিকানা বা সত্ত্বাধিকারী নিশ্চিত করাই হচ্ছে কপিরাইট।
সাহিত্য বা যেকোনো লেখা, শিল্পকর্ম, সংগীত, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, লেকচার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, নকশা অর্থাৎ যা কিছু মৌলিকভাবে তৈরি করা হবে, সবকিছুই কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
কপিরাইট থাকলে বিনা অনুমতিতে সেগুলো ব্যবহার, পুনর্মুদ্রণ, অনুবাদ, প্রকাশ ইত্যাদি করা হলে এই আইনের আওতায় শাস্তি ও জরিমানা হতে পারে।
ধরা যাক, একটি চলচ্চিত্র কেউ অবৈধভাবে ডাউনলোড করে বা বন্ধুর কাছ থেকে নিয়ে দেখলেন, তার মানে তিনি সেটির কপিরাইট লঙ্ঘন করলেন।
বাংলাদেশেও কোন ব্যক্তি যদি কপিরাইট দপ্তরে আবেদন করে নিজের স্বত্বাধিকার তালিকাভুক্ত করতে হবে, তাহলেই ভবিষ্যতে কপিরাইট দাবি করা যাবে।
একাডেমিক ক্ষেত্রে চৌর্যবৃত্তি (প্ল্যাজারিজম) বলতে সাধারণত অন্য কারও লেখাকে সঠিকভাবে উদ্ধৃতি না করে নিজের লেখা বলে চালিয়ে দেওয়াকে বোঝানো হয়। গবেষণায় এ কাজটি করা বিশ্বব্যাপী একটি মারাত্মক নিন্দনীয় বিষয়। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি বন্ধে জাতীয় নীতিমালা থাকলে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এমন কিছু তৈরি করা হয়নি।
দেশে মাত্র ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যাত্রা করে এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দেড় শতাধিক। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পদোন্নতি পেতে হলে গবেষণা কাজের দরকার পড়ে। কিন্তু অনেক শিক্ষক চুরি করা গবেষণা জমা দিয়ে পদোন্নতি নিচ্ছেন। সম্প্রতি গবেষণা চুরির দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের শাস্তি পাওয়ার পর বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
দেশে জাতীয় পর্যায়ে বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্ল্যাজারিজম পলিসি বা গবেষণা চুরি ঠেকানোর নীতিমালা না থাকায় অনেক সময় দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে না। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষার লেখায় নকল যাচাইয়ের সফটওয়্যার থাকলেও বাংলার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই নেই। ফলে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কেউ কেউ এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড করলেও তাদের শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, প্ল্যাজারিজম হচ্ছে অন্য কারো গবেষণা বা ধারণা নিজের বল চালিয়ে দেওয়া। অনুমতি নিয়ে বা অনুমতি না নিয়েও হতে পারে এটি। নিজের গবেষণাকর্মে অন্যের কিছু নিলে স্বীকার করে তা বিধি মোতাবেক গবেষণাকর্মের মাঝেই উল্লেখ করতে হবে। প্রকাশিত, অপ্রকাশিত, ছাপা অথবা ইলেকট্রনিক, সব মাধ্যমের গবেষণাকাজেই এই নিয়ম প্রযোজ্য।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্ল্যাজারিজমের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে। সংস্থাটি জানায়, দেশে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডিরত ৪০ লাখের বেশি মানুষ রয়েছে। শুধু ২০১৯ সালে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গবেষক মিলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে অন্তত ২২ হাজার প্রবন্ধ লেখেন।
নীতিমালা ছাড়া প্ল্যাজারিজমকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি এখন অত্যন্ত জরুরি। বাংলা ভাষার গবেষণা কাজে চুরির ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সফটওয়্যার নির্মাণ জরুরি। ইউজিসি এক্ষেত্রে উদ্যোগ নিতে পারে।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী গবেষক এবং গবেষণা প্রকল্পে জড়িতরা যাতে বিষয়টি নিয়ে সঠিক ধারণা পায় সেজন্য একটি জাতীয় নীতিমালা তৈরি করা দরকার। ইউজিসি এটি তৈরির উদ্যোগ নিতে পারে বলে মত দিয়েছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
তবে এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) তাদের প্ল্যাজারিজম নীতিমালা তৈরি করেছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় দুটির সিন্ডিকেট সভায় এ নীতিমালা অনুমোদন পেতে অপেক্ষায় রয়েছে।
ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আগামী সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের জন্য আমরা আমাদের প্ল্যাজারিজম নীতিমালা উত্থাপন করব। এর মাধ্যমে আমি আশা করি প্ল্যাজারিজম কমবে এবং শিক্ষার্থী ও গবেষকরা এ বিষয়ে সম্যক ধারণাও পাবেন।
শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্ল্যাজারিজম বিশ্বব্যাপী গর্হিতকর একটি কাজ। অন্যদের লেখা থেকে শুধুমাত্র শিরোনাম বা একটিমাত্র প্যারাগ্রাফ নেওয়ার কারণেও অনেক শিক্ষকের চাকরি গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে এখন এটি অবহেলিত একটি বিষয়ই রয়ে গেছে। আমরা প্ল্যাজারিজম বন্ধে একটি নীতিমালা করেছি। হয়ত খুব অল্প সময়ের মাঝেই তা বাস্তবে রূপ নেবে।
ভারত ও পাকিস্তানে চৌর্যবৃত্তির যে শাস্তি হয়
ভারতে প্ল্যাজারিজম করলে চার ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়। প্রথম ধাপ অর্থাৎ ১০ শতাংশ বা তার কম সাদৃশ্য পাওয়া গেলে কোনো শাস্তি নেই। অন্যের গবেষণার ১০ থেকে ৪০ শতাংশ নকল বা চুরি করলে অর্থাৎ দ্বিতীয় ধাপের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শিক্ষার্থীদের বেলায় গবেষণাপত্র পুনর্পাঠ করে জমা দিতে বলা হয় আর শিক্ষকদের বেলায় হলে গবেষণাপত্রটি বাতিল করা হয়। আর ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ মিল পাওয়া গেলে শিক্ষার্থীদেরকে এক বছরের জন্য বরখাস্ত করা হয় আর শিক্ষকদের বেলায় এমনটি হলে তাদের জরিমানা হয় এবং দুই বছরের জন্য শিক্ষার্থীদের সুপারভাইজ করার কাজ থেকে বিরত রাখা হয়।
এছাড়া ভারতের কোনো শিক্ষার্থী গবেষণায় ৬০ শতাংশের বেশি প্ল্যাজারিজম করলে তাকে প্রোগ্রাম থেকেই বরখাস্ত করা হয়। শিক্ষকরা এমনটি করলে দুই বছর তাদের বেতন বাড়ানো বন্ধ থাকে এবং তিন বছরের জন্য শিক্ষার্থীদের সুপারভাইজ করা থেকে বিরত রাখা হয়। এ ছাড়া শিক্ষকদের কেউ এই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করা হতে পারে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানে প্ল্যাজারিজমের কড়া শাস্তি হিসেবে চাকরিচ্যুত বা কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে লঘু শাস্তি হিসেবে রয়েছে সতর্ক করা, গবেষণা বরাদ্দ বন্ধ, পদোন্নতি আটকে দেওয়া বা পিএইচডি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি। দেশটিতে সহ-লেখকের প্ল্যাজারিজমের দায়েও সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি গবেষণায় প্ল্যাজারিজমের প্রমাণ পাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানকে সহকারী অধ্যাপক পদে অবনমন, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হককে বাড়তি দুই বছর প্রভাষক পদে স্থির থাকা ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুককে প্রভাষক পদে অবনমন ও পিএইচডি ডিগ্রি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট।
চকুরি
- Schedule of oral examinations for recruitment of manpower in Vocational Branch Institutions under the Department of Technical Education
- কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন ভোকেশনাল শাখাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহে জনবল নিয়োগের নিমিত্ত মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি
- কারিগরি অধিদপ্তরে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ
- সিনিয়র অফিসার নেবে ওয়ান ব্যাংক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২১
- যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এ বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ।।Jessore Palli Bidyut Samity Job Circular
- Ministry of Disaster Management and Relief Recruitment Circular 2021 ।। ddmr job circular 2021
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি 2021 ।। ddmr job circular 2021
- বিআরটিএ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি 2021 ।। DBRT job circular 2021
- ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড জব সার্কুলার 2021 । Electro Mart Ltd Job Circular 2021
- বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২১ ।। BSCIC Job Circular 2021
2 thoughts on “প্ল্যাজারিজম বন্ধে নেই কোনো নীতিমালা, থেমে নেই গবেষণা চুরি”