বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা কর, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, বাংলাদেশের ভৌগোলিকঅবস্থান ও এর সুবিধাবলি বর্ণনা করুন?
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান | বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ব-দ্বীপ। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হলেও প্রাচীনকাল থেকেই এটির অবস্থান ছিল। এদেশটির রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে।
বাংলাদেশ অসংখ্য নদীবেষ্টিত নিম্ন উচ্চতার ব-দ্বীপ এলাকা। বাংলাদেশ ২০°৩৪´ উত্তর থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে এবং ৮৮°০১´ থেকে ৯২°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। তিন দিক থেকে ভারত দ্বারা বেষ্টিত বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্য, পূর্ব ও পূর্ব দক্ষিণে ত্রিপুরা রাজ্য এবং মায়ানমার, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
নদীমাতৃক দেশ: বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে ৫৮ টি আন্তর্জাতিক নদীসহ সর্বত্র ছিটিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী। এসব নদ-নদী একদিকে যেমন শহর, নগর, বন্দর গড়ে তুলতে সহায়তা করছে তেমনি অন্যদিকে এদেশের সংস্কৃতিকেও নিয়ন্ত্রণ করছে।
মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত: বাংলাদেশ মৌসুমি জলবায়ুর আন্তর্গত হওয়ায় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসার সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প সাথে নিয়ে আসে। বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালার অবস্থান হওয়ায় মৌসুমি বায়ু সেখানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান | প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত সীমা: বাংলাদেশের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম এই তিন দিক পাহাড়, পর্বত, উচ্চভূমি, নদী-নালা ও গহীন অরণ্য দ্বারা বেষ্টিত। এছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর, যা বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক বেষ্টনীতে আবদ্ধ করে রেখেছে।
বাংলাদেশের আয়তন
আয়তনের থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৯৪ তম। বর্তমানে বাংলাদেশে আয়তন হচ্ছে ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে সমুদ্রসীমা বিজয়ের মাধ্যমে আরো অনেক বড় এলাকা বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮ টি বিভাগ, ৬৪ টি জেলা এবং ৫৫০ টি উপজেলা রয়েছে।
বাংলাদেশের স্থলসীমা
বাংলাদেশের সর্বমোট স্থল সীমানার দৈর্ঘ্য ৫,১৩৮ কিলোমিটার। এর মধ্য ভারতের সীমারেখার সাথে বাংলাদেশের দৈর্ঘ্য ৪,১৪৪ কিলোমিটার। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার দৈর্ঘ্য রয়েছে ৭১১ কিলোমিটার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা রয়েছে ২০০ নটিক্যাল মাইল এবং রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা রয়েছে ১২ নটিক্যাল মাইল।
বাংলাদেশের প্রান্তীয় অবস্থান
সমুদ্র হতে দূরত্ব এবং সমুদ্রের অবস্থান অনুসারে বিভিন্ন দেশের অবস্থান মহাদেশীয় প্রান্তীয় ও উপদ্বীপীয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অবস্থান প্রান্তীয় রয়েছে। এরূপ অবস্থা হওয়ার কারণে এর দক্ষিণের ভগ্ন উপকূলে সমুদ্র বন্দর গড়ে ওঠেছে। এ কারণে বিশ্বের অন্যন্য দেশের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা
বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা রয়েছে ১৬ কোটি ৯৮ লক্ষ। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম তম। নারী ও পুরুষের অনুপাত ১০০: ১০২। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর জনসংখ্যা রয়েছে ৮৮.৩%, হিন্দু ধর্মাবলম্বীর জনসংখ্যা রয়েছে ১০.৫%, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর জনসংখ্যা রয়েছে ০.৬% ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর জনসংখ্যা রয়েছে ০.৩%। বর্তমানে বাংলাদেশের ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১৪৫ জন।
বাংলাদেশের প্রকৃতির অবস্থা
বাংলাদেশ বিশ্বের একটি বৃহত্তম ব-দ্বীপ। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ি অঞ্চল, মধ্য অঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল সোপান চত্বর এবং দক্ষিণে নদী বাহিত প্লাবন সমভূমি অঞ্চল।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ
নদীমাতৃক বাংলাদেশে বর্তমানে ৭০০ টির বেশী নদ-নদী রয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ টি আন্তর্জাতিক নদী রয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ তাই প্রায় সকল অঞ্চলে নদী, উপনদী, শাখা নদী দেখা যায়। নদী অঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা হচ্ছে মাছ ধরা এবং নৌকা চালিয়ে যাত্রীদের পারাপার করানো।
বাংলাদেশ মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত
বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। ঋতু প্রবাহের এই বাংলাদেশে ১২ মাসে ৬টি ঋতু রয়েছে। বাংলাদেশে মৌসুমি জলবায়ু হওয়ার কারণে প্রতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসার সময় প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প নিয়ে আসে। বাংলাদেশের উত্তর দিকে হিমালয় পর্বত হওয়ার কারণে সেখানে আঘাত প্রাপ্ত হয় ফলে এ অঞ্চলে অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল
অসংখ্য চিরসবুজ ছোটবড় বৃক্ষরাজি দ্বারা আবৃত বাংলাদেশের পাহাড়গুলো। বাংলাদেশে অসংখ্য পাহাড় দেখা যায়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় আছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের উঁচু নিচু পাহাড় লক্ষ করা যায়। এদের উচ্চতা হাজার এর কম। বাংলাদেশে সবচেয়ে উঁচু বৃহৎ পর্বতমালা হচ্ছে তাজিংডং (বিজয়)। যার উচ্চতা ১২৩১ মিটার। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় হচ্ছে গারো পাহাড়।
বাংলাদেশের বনাঞ্চল
চির সবুজের এই বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ বন-জঙ্গল দ্বারা বোষ্টিত। সমগ্র বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১৭ ভাগই হচ্ছে বনভূমি। বাংলাদেশের এই বনভূমি গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে (১) ক্রান্তীয় চিরহরিৎ ও পত্রপতনশীল পত্রভুক্ত বনভূমি (২) শালবন (৩) সুন্দরবন। এছাড়াও বেশ কয়েকভাবে বাংলাদেশের বনাঞ্চলকে ভাগ করা হয়েছে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তরসমূহ
“বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা কর?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো।
বাংলাদেশের প্রশাসনিক বিভাগ কয়টি ও কি কি?
বাংলাদেশের প্রশাসনিক বিভাগ ৮ টি। যথাক্রমেঃ ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, রাজশাহী, ও ময়মনসিংহ।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্য কয়টি ও কি কি?
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার সাথে ভারতের ৫টি রাজ্য রয়েছে। রাজ্যগুলো যথাক্রমেঃ আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, ও মিজোরাম।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা কর, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, বাংলাদেশের ভৌগোলিকঅবস্থান ও এর সুবিধাবলি বর্ণনা করুন?