বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহ, মহান মুক্তিযুদ্ধের যেকোন দুটি সেক্টর সম্পর্কে আলোচনা কর
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা আমরা সবাই জানি। জানি আমাদের মুক্তির কথা, স্বাধীনতার কথা।মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ, মানে সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানকে যে কতগুলো সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল, তাও জানো নিশ্চয়ই। যুদ্ধ করার জন্য পুরো দেশটাকে ১১টা ভাগে ভাগ করা হয়েছিল।
এগুলোই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর। চলো আজ জেনে নিই কোন কোন জেলা নিয়ে কোন কোন সেক্টর গঠিত হয়েছিল এবং কারা ছিলেন কমান্ডার।
সেক্টর ১
ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও ফেনী পর্যন্ত ছিল সেক্টর ১। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম।
সেক্টর ২
ঢাকা, ফরিদপুরের কিছু অংশ, নোয়াখালী ও কুমিল্লা নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেক্টর ২। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ ও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর হায়দার।
সেক্টর ৩
ঢাকার কিছু অংশ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও কুমিল্লা ছিল সেক্টর ৩ এর আওতায়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর শফিউল্লাহ। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন মেজর নুরুল্লাহ।
সেক্টর ৪
সিলেট জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেক্টর ৪। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর সি এর দত্ত।
সেক্টর ৫ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহ
সেক্টর ৫ গঠিত হয় সিলেট জেলার অংশ বিশেষ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল নিয়ে। মেজর মীর শওকত আলী ছিলেন সেক্টর কমান্ডার।
সেক্টর ৬ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহ
রংপুর ও দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহাকুমা নিয়ে গঠিত হয় সেক্টর ৬। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ইউং কমান্ডার বাশার।
সেক্টর ৭ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহ
দিনাজপুরের দক্ষিণ অঞ্চল, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া ও রংপুরের কিছু অংশ ছিল এই সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর কাজী নুরুজ্জামান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে কেন ১১টি সেক্টরে ভাগ করা
সেক্টর ৮
কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও ফরিদপুরের কিছু অংশ ছিল সেক্টর ৭ এর অন্তর্ভুক্ত। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এম এ মঞ্জুর।
সেক্টর ৯
খুলনার কিছু অংশ, বরিশাল ও পটুয়াখালী নিয়ে গঠিত হয় সেক্টর ৯। ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ জলিল ও তারপর মেজর জয়নাল আবেদীন।
সেক্টর ১০
এ সেক্টরের অধীনে ছিল নৌ কমান্ডো, সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ও আভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন। এ সেক্টরে নৌ কমান্ডোরা যখন যে সেক্টরে মিশনে নিয়োজিত থাকতেন, তখন সে সেক্টরের কমান্ডারের নির্দেশে কাজ করতেন।
সেক্টর ১১
কিশোরগঞ্জ বাদে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা নিয়ে গঠিত হয় সেক্টর ১১। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু তাহের ও তারপর ফ্লাইট লেফট্যান্যান্ট এম হামিদুল্লাহ।
মহান মুক্তিযুদ্ধের যেকোনো দুটি সেক্টর সম্পর্কে লেখ
১৯৭১ সালে সংগঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচলনায় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র ভূখন্ডকে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্র বা সেক্টরে ভাগ করা হয়।
যুদ্ধক্ষেত্র | বিস্তৃতি | কমান্ডার |
---|---|---|
১নং সেক্টর | চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার অংশবিশেষ (মুহুরী নদীর পূর্ব পাড় পর্যন্ত) | মেজর রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম |
২নং সেক্টর এবং “কে” ফোর্স | ফরিদপুর এর পূর্বাঞ্চল, ঢাকা শহরসহ ঢাকা জেলার দক্ষিণাংশ, কুমিল্লা জেলা (আখাউড়া-আশুগঞ্জ রেললাইনের উত্তরাংশ বাদে) এবং নোয়াখালী জেলা (মুহুরী নদীর পূর্বাঞ্চল বাদে) | মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম |
৩নং সেক্টর এবং “এস” ফোর্স | কুমিল্লা জেলার অংশবিশেষ (আখাউড়া-আশুগঞ্জ রেললাইনের উত্তরাংশ), সিলেট জেলার অংশবিশেষ (লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ লাইনের দক্ষিণাংশ), ঢাকা জেলার উত্তরাংশ ও ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমা | মেজর জেনারেল কে.এম.সফিউল্লাহ, বীর উত্তম |
৪নং সেক্টর | সিলেট জেলার অংশবিশেষ (১) পশ্চিম সীমান্ত: তামাবিল-আজমিরীগঞ্জ-লাখাই লাইন এবং (২) দক্ষিণ সীমান্ত: লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ লাইন | মেজর জেনারেল সি.আর.দত্ত, বীর উত্তম |
৫নং সেক্টর | সিলেট জেলার বাকি অঞ্চল (তামাবিল-আজমিরীগঞ্জ লাইনের পশ্চিমাংশ) | লেঃ জেনারেল মীর শওকত আলী, বীর উত্তম |
৬নং সেক্টর | যমুনার পশ্চিমে রংপুর ও দিনাজপুর জেলা, দিনাজপুরের রাণীশঙ্কৈল-পীরগঞ্জ-বীরগঞ্জ লাইনের উত্তরাংশ ও রংপুর জেলার পীরগঞ্জ-পলাশবাড়ী লাইনের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল | এয়ার ভাইস-মার্শাল এম.কে.বাশার, বীর উত্তম |
৭নং সেক্টর | সমগ্র বগুড়া, রাজশাহী ও পাবনা জেলা, দিনাজপুর ও রংপুরের অংশবিশেষ (দিনাজপুরের রাণীশঙ্কৈল-পীরগঞ্জ লাইনের দক্ষিণাংশ ও রংপুরের পলাশবাড়ী-পীরগঞ্জ লাইনের দক্ষিণাংশ) | লেঃ কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামান, বীর উত্তম আগষ্ট ১৯৭১ থেকে মেজর নাজমুল হক আগষ্ট ১৯৭১ পর্যন্ত |
৮নং সেক্টর | কুষ্টিয়া ও যশোর এর সমগ্র এলাকা, ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ, খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমা। সীমানাঃ উত্তরে পদ্মা নদী। পদ্মা-যমুনার মোহনা থেকে মাদারীপুর পর্যন্ত এর পূর্ব সীমান্ত এবং মাদারীপুর-সাতক্ষীরা কাল্পনিক লাইন ছিল দক্ষিণ সীমান্ত | মেজর জেনারেল এম.এ.মনজুর, বীর উত্তম |
৯নং সেক্টর | সমগ্র বরিশাল, পটুয়াখালী ও খুলনা জেলা (সাতক্ষীরা বাদে), ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ এবং গোপালগঞ্জ | মেজর এম.এ.জলিল |
১০নং সেক্টর | কোন আঞ্চলিক সীমানা ছিল না। কেবলমাত্র নৌ-কম্যান্ডোদের নিয়ে গঠিত। যে সেক্টরের এলাকায় কম্যান্ডো অভিযান চালানো হতো, কম্যান্ডোরা সেই সেক্টর কমান্ডারের অধীনে কাজ করত। | — |
১১নং সেক্টর | কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা। উত্তরে যমুনা নদীর তীরে বাহাদুরাবাদ ঘাট ও ফুলছড়ি ঘাট | কর্ণেল এম.আবু তাহের, বীর উত্তম |
জেড্ ফোর্স | ১১ নং সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করে। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সিলেট জেলায় যুদ্ধ করে | লেঃ জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম |
টাঙ্গাইল এলাকার স্বতন্ত্র সেক্টর | ১১ নং সেক্টর এলাকা | কাদের সিদ্দিকী |
আকাশপথ | বাংলাদেশের সমগ্র আকাশসীমা | গ্রুপ ক্যাপ্টেন এক.কে. খন্দকার |
মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর, সীমানা ও সেক্টর কমান্ডারদের নাম
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর মনে রাখার কৌশল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহ
ছন্দটি হল “জিয়ার খাস দশ বানুর ওজন শুন্যতা”
জিয়া – জিয়াউর রহমান (১ নং)।
খা- খালেদ মোশারফ (২নং)।
স – কে এম শফিউল করিম (৩নং)।
দ – সি আর দত্ত (৪ নং)।
শ – মীর শওকত আলী (৫ নং)।
বা – উইং কমান্ডার বাশার ( ৬ নং)।
নুর – কাজী নুরুজ্জামান (৭নং)।
ও – ওসমান চৌধুরী (৮ নং)।
জন- মেজর জলিল। (৯ নং)।
শুন্য – শুন্য ( কোনো সেক্টর কমান্ডার ছিলনা) (১০নং)।
তা – কর্নেল তাহের (১১নং) ইনারা ছিলেন প্রধান।
মুক্তিযুদ্ধে কোন জেলা কোন সেক্টরে ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহ
সেক্টর নং: ১
যে অঞ্চল বা এলাকা নিয়ে গঠিতঃ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম
এবং নোয়াখালী জেলার পূর্বাংশ
সদর দপ্তর: হরিণা
সাব-সেক্ট্রঃ ৫
সেক্টর কমান্ডার:
১। মেজর জিয়াউর রহমান
২। মেজর রফিকুল ইসলাম
সাব-সেক্টর: ৫
সেক্টর নং: ২
যে অঞ্চল বা এলাকা নিয়ে গঠিতঃ নোয়াখালী, কুমিল্লা, আখাউড়া, ভৈরব এবং
ঢাকা ও ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ
সদর দপ্তর মেলাঘর
সেক্টর কমান্ডার:
নৌ সেক্টর
১। মেজর খালেদ মোশাররফ
২। মেজর এটিএম হায়দার
সাব-সেক্টর: ৬
সেক্টর নং: ৩
যে অঞ্চল বা এলাকা নিয়ে গঠিতঃ কুমিল্লা, হবিগঞ্জ,
কিশোরগঞ্জ ও ঢাকার অংশবিশেষ
সদর দপ্তর: হেজামারা
সেক্টর কমান্ডার:
১। মেজর কে এম শফিউল্লাহ
২। মেজর এএনএম নূরুজ্জামান
সাব-সেক্টর: ১০
সেক্টর নং: ৪
যে অঞ্চল বা এলাকা নিয়ে গঠিতঃ সিলেটের পূর্বাঞ্চল
সদর দপ্তর: করিমগঞ্জ (১ম)
মাছিমপুর (২য়)
সেক্টর কমান্ডার:
১। মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত
সাব-সেক্টর: ৬
আরও পড়ুন
সেক্টর নং: ৫
যে অঞ্চল বা এলাকা নিয়ে গঠিতঃ সিলেটের পশ্চিমাঞ্চল
সদর দপ্তর; বাঁশতলা
সেক্টর কমান্ডার:
১। মেজর মীর শওকত আলী
সাব-সেক্টর: ৬
সেক্টর নং: ৬
যে অঞ্চল বা এলাকা নিয়ে গঠিতঃ রংপুর ও ঠাকুরগাঁও
সদর দপ্তর: পাটগ্রাম
সেক্টর কমান্ডার:
১। উইং কমান্ডার মোঃ খাদেমুল বাশার
সাব-সেক্টর: ৫
সেক্টর নং: ৭
যে অঞ্চল বা এলাকা নিয়ে গঠিতঃ রাজশাহী, দিনাজপুরের
অংশবিশেষ
সদর দপ্তর: তরঙ্গপুর
সেক্টর কমান্ডার:
১। মেজর নাজমুল হক
২। মেজর কাজী নূরুজ্জামান
সাব-সেক্টর: ৮
সেক্টর নং: ৮
যে অঞ্চল বা এলাকা নিয়ে গঠিতঃ কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর ও
খুলনার অংশবিশেষ
সদর দপ্তর: কল্যাণী
সেক্টর কমান্ডার:
১। মেজর আবু ওসমান চৌধুরী
২। মেজর এম এ মনজুর
সাব-সেক্টর: ৭
সেক্টর নংঃ ৯
যে অঞ্চল বা এলাকা নিয়ে গঠিতঃ সাতক্ষীরা ও খুলনার অংশবিশেষ
বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা
সদর দপ্তর: টাকি, বসিরহাট
সেক্টর কমান্ডার:
১। মেজর এম এ জলিল
সাব-সেক্টর: ৩
সেক্টর নং: ১১
যে অঞ্চল বা এলাকা নিয়ে গঠিতঃ ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল
সদর দপ্তর: মহেন্দ্রগঞ্জ
সেক্টর কমান্ডার:
১। মেজর জিয়াউর রহমান
২। মেজর আবু তাহের
৩। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম হামিদুল্লাহ খান
সাব-সেক্টর: ৮
মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডার
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহ