ভূমিকা : বর্তমান সময়ে কাঠামোর কর্মপরিধি, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য দল, অর্থের উৎস প্রভৃতির ভিত্তিতে নানা ধরনের এনজিও পরিচালিত হয়। কাজেই একথা স্পষ্ট যে এনজিওতে শ্রেণিবিন্যাস করা বেশ দুরূহ। তবে বেশ কিছু উপাদানের ভিত্তিতে নিম্নে শ্রেণিবিভাগ বিভক্ত করা যায়।
যথা-
বাংলাদেশে কর্মরত NGO শ্রেণিবিভাগ লিখ, NGO এর প্রকারভেদ,NGO কয় প্রকার ও কী কী,NGO কয় প্রকার ও কী কী ব্যাখ্যা কর
(ক) কার্যক্রমের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ ।
(খ) আঞ্চলিক ও ভৌগোলিক দিক ও অর্থের উৎসের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ ৷
(গ) ভূমিকার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ ।
নিম্নে এগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
(ক) কার্যক্রমের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ : মূলত কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে এনজিওগুলোকে নিম্নোক্ত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
১. চ্যারিটিভিত্তিক এনজিও : চ্যারিটি দর্শনের উপর ভিত্তি করে এই সমস্ত এনজিওর কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। মূলত মানুষের কিছু জরুরি প্রয়োজন মিটানোই এদের লক্ষ। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও যুদ্ধের সময় এ ধরনের এনজিওর কর্মকাণ্ড বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় ।
২. উন্নয়ন সেবাভিত্তিক এনজিও : এ সমস্ত এনজিও তাদের লক্ষ্য দলের জন্য নানা ধরনের উন্নয়নমূলক সেবা সরবরাহ করে । এ সমস্ত সেবা দীর্ঘমেয়াদে সরবরাহ করা হয়। যেমন- স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা প্রভৃতি ।
৩. অংশগ্রহণমূলক এনজিও : এই ধরনের এনজিও আত্ম সাহায্যমূলক প্রকল্প গ্রহণ করে এবং স্থানীয় জনগণ এগুলোর বাস্ত বায়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখে। অর্থ সাহায্যে প্রদান, ভূমি প্রদান, শ্রম প্রদান, উপকরণ প্রদান ।
৪. ক্ষমতায়নমূলক এনজিও : সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য এ ধরনের এনজিও তাদের অর্থনৈতিক সামাজিক, রাজনৈতিক উপাদানসমূহ সম্পর্কে সচেতন করে তুলে।
(খ) আঞ্চলিক/ ভৌগোলিক দিক ও অর্থের উৎসের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ : ভৌগোলিক কভারেজ ও অর্থের উৎসের ভিত্তিতে এনজিওসমূহকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় । যথা-
১. স্থানীয় এনজিও : এই ধরনের এনজিওগুলো কয়েকটি গ্রাম অথবা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাতাদের নিকট ফান্ড সংগ্রহ করে ।
২. জাতীয় এনজিও : এই ধরনের এনজিওগুলো একটি দেশের চারটি অথবা অধিক ভৌগোলিক এলাকায় তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে । এই ধরনের এনজিওগুলোর অধিকাংশ বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহ করে ।
৩. আন্তর্জাতিক এনজিও : এই এনজিওগুলো একাধিক দেশে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে । এসব এনজিও বৈদেশিক অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়।
৪. মিশ্র প্রকৃতির এনজিও : এই সমস্ত এনজিও স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও সংগঠিত তবে তারা বিদেশি সরকার অথবা সংগঠনের নিকট থেকে অর্থ পেয়ে থাকে ।
(গ) ভূমিকার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ : এনজিওগুলোকে আবার তাদের ভূমিকার ভিত্তিতেও শ্রেণিবিভাগ করা হয়ে থাকে । যথা-
১. ত্রাণ ও কল্যাণমূলক এনজিও : এই ধরনের এনজিও অসহায়ক ও দুস্থদের ত্রাণ সহায়তা প্রদান করে থাকে । প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে এদের লক্ষ করা যায়।
২. সেবাভিত্তিক এনজিও : এই ধরনের এনজিও তাদের লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীকে দীর্ঘমেয়াদি সেবা সরবরাহ করে ।
৩. দাতা এনজিও : কিছু কিছু এনজিও অন্যান্য স্থানীয় ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এনজিওকে ফান্ড বা অর্থ সরবরাহ করে। যাতে এনজিওগুলো টিকে থাকতে পারে ৷
৪. নেটওয়ার্কিং/সমন্বয়কারী এনজিও : কিছু কিছু বৃহৎ সংস্থা একই ক্ষেত্রে কর্মরত এনজিওদের এক ফোরাম বা Platform হিসেবে ভূমিকা রাখে। এই বৃহৎ সংস্থা তাদের সহযোগী সংস্থাগুলোকে নানা ধরনের সহযোগিতা করে থাকে ।
৫. উন্নয়নমূলক এনজিও : এই ধরনের এনজিও শিক্ষা সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষকে তাদের নিজস্ব সংগঠনের বিকাশ ঘটাতে সঞ্চলনের ভূমিকা পালন করে ।
৬. পরামর্শক এনজিও : এই ধরনের এনজিও তথ্য কিছু কিছু সংস্থা, সরকার, দাতা সংস্থা এবং উন্নয়ন ক্ষেত্রে অন্যান্য সংস্থাকে নানা ধরনের পরামর্শ সেবা প্রদান করে ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, একটি দেশের পিছিয়ে পড়া জনগণ এবং জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি এনজিও সংস্থাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।