বাংলায় মুঘল শাসন সুদৃঢ়করণে ইসলাম খানের অবদান নিরূপণ কর, ইসলাম খানের বাংলায় মুঘল শাসন,ইসলাম খানের পরিচয়

প্রশ্ন সমাধান: বাংলায় মুঘল শাসন সুদৃঢ়করণে ইসলাম খানের অবদান নিরূপণ কর, ইসলাম খানের বাংলায় মুঘল শাসন,ইসলাম খানের পরিচয়


উত্তর : ভূমিকা : জাহাঙ্গীর কুলি খানের মৃত্যুর পর ইসলাম খানকে সম্রাট জাহাঙ্গীর বাংলার সুবাদার নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন সুদক্ষ শাসক, দুর্ধর্ষ সেনাপতি ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। বাংলার বারভূঁইয়াদের দমন করে এদেশে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করার কৃতিত্ব ছিল সুবাদার ইসলাম খানের । তিনি শুধু বার ভূঁইয়াদের দমন করেননি সারাদেশে সুশাসন ও শৃঙ্খলা, ফিরিয়ে আনেন। 

এজন্য তার নাম বাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলায় মুঘল শাসন সুদৃঢ়করণে ইসলাম খানের অবদান
: নিম্নে বাংলায় মুঘল শাসন সুদৃঢ়করণে ইসলাম খানের অবদান আলোচনা করা হলো :


১. ইসলাম খানের পরিচয় : ইসলাম খান ছিলেন ফতেহপুর সিক্রির সাধক পুরুষ শেখ সেলিম চিস্তির দৌহিত্র। ১৬০৮ সালে তিনি বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন এবং দীর্ঘ ৫ বছর তা পরিচালনা করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে অভিযানের পর অভিযান পরিচালনা করে বাংলার বার ভূঁইয়া এবং পাঠান সর্দারদের
বিপর্যস্ত ও ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিলেন। সুবাদার ইসলাম খানের কৃতিত্বপূর্ণ কার্যাবলিসমূহ হলঃ

২. ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তর : ইসলাম খান খুব বিচক্ষণ শাসনকর্তা ছিলেন। শাসনভার গ্রহণ করেই তিনি বুঝতে পারেন যে, বার ভূঁইয়াদের নেতা মুসা খানকে দমন করতে পারলে তার পক্ষে অন্যান্য জমিদারকে বশীভূত করা সহজ হবে। সেজন্যে তিনি রাজমহল হতে ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৬১০ সালের এপ্রিল মাসে সুবাদার ইসলাম খান বাংলার রাজধানী রাজমহল হতে ঢাকায় স্থানান্তরিত করেন এবং সম্রাটের নামানুসারে তার নামকরণ করেন জাহাঙ্গীর নগর ।

৩. নৌবাহিনী গঠন : জমিদারদের নৌবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য তিনি শক্তিশালী নৌবহরের ব্যবস্থা করেন। ইসলাম খান জল ও স্থলপথে মুসা খান ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানের আয়োজন করেন।

৪. বার ভূঁইয়াদের ঐক্য নষ্ট : কূটনীতির সাহায্যে ইসলাম খার্ন বার ভূঁইয়াদের ঐক্য নষ্ট করতে সচেষ্ট হন।

৫. বীর হামির, বীরভূমের শামস খান ও সলিম খানকে দমন : বিষ্ণুপুরের বীর হামির, বীরভূমের শামস খান ও হিজলির সলিম খান রাজধানী রাজমহলের দক্ষিণে ভাগীরথীর পশ্চিম তীরের শক্তিশালী জমিদার ছিলেন। ইসলাম খানের আক্রমণে তারা মুঘলদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হন।

৬. ভূষণা অঞ্চল দখল : ভূষণা অঞ্চলের জমিদার সত্যজিৎ রায় কিছু দিন মুঘলদের প্রতিরোধের পর মুঘলবাহিনীর সাথে যোগ দেয়। তার সাহায্যে মুঘলরা মজলিস কুতুবের ফতেহাবাদ অধিকার করে।

৭. মুসা খানকে দমন : ১৬০৯ সালে ইসলাম খান মুসা খানের দুর্ভেদ্য যাত্রাপুর দুর্গ আক্রমণের জন্যে প্রস্তুতি নেন। মুসা খান ও তার মিত্রবাহিনী যাত্রাপুরের তিন মাইল দূরে ডাকচরায় আরও একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। তারা মুঘলদের বিরুদ্ধে তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হয় কিন্তু পরাজিত হয়। মুঘল সৈন্যরা সোনারগাঁও দখল করে। শামসুদ্দীন বাগদাদী, বাহাদুর গাজী ও মজলিস কুতুব ইসলাম খানের নিকট আত্মসমর্পন করেন। অনন্যোপায় মুসা খান সুবাদার ইসলাম খানের নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন এবং তার জমিদারি জায়গির স্বরূপ পান।


আরো ও সাজেশন:-

৮. চন্দ্রদ্বীপ অধিকার : বার ভূঁইয়াদের নায়ক মুসা খানের আত্মসমর্পণের পর অন্যান্য জমিদাররা মুঘল সম্প্রদায়ের বশ্যতা স্বীকার করেন । চন্দ্রদ্বীপের রামচন্দ্র এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। যশোহরের

৯. প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে অভিযান :
প্রতাপাদিত্য প্রথমে সুবাদার ইসলাম খানের নিকট আনুগত্য প্রকাশ করে কিন্তু পরে বিরুদ্ধাচরণ করলে এক নৌযুদ্ধে তাকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত এবং আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন।

১০. অনন্ত মাণিক্যকে দমন: ভুলুয়ার অনন্ত মাণিক্য মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার না করায় তার বিরুদ্ধে অভিযান করলে তিনি আরাকানে পলায়ন করেন এবং তার মন্ত্রী আত্মসমর্পণ করেন।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


১১. কামরূপ জয় : বাংলায় মুঘল শাসন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইসলাম খান কামরূপ জয়ের পরিকল্পনা করেন। কামরূপের রাজা পরীক্ষিত নারায়ণ সুসংয়ের কুচজমিদার রাজা রঘুনাথের রাজ্য আক্রমণ করলে তিনি ইসলাম খানের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ইসলাম খান শেখ কামালের নেতৃত্বে সৈন্য প্রেরণ করেন এবং শেখ কামাল পরীক্ষিত নারায়ণকে পরাজিত করে কামরূপ দখল করেন। সাথে সাথে তিনি সিলেটও মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।

১২. ওসমান খানকে দমন : ১৬১১ সালে ইসলাম খান বিদ্রোহী আফগান নেতা ওসমান খানের রাজধানী বোকাইনগর আক্রমণ করে তা অধিকার করেন।

১৩. মগ ও ফিরিঙ্গিদের দমন : ইসলাম খান বাংলায় মগ ও ফিরিঙ্গীদের অত্যাচার কঠোরভাবে দমন করে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। আরাকানের মগ ও পর্তুগিজ ফিরিঙ্গীরা বাংলায় ব্যাপক লুটতরাজ ও অত্যাচার করত। ইসলাম খান ১৬১০ সালে একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে তাদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন।

১৪. শাসক হিসেবে : সুবাদার ইসলাম খান ছিলেন একজন সুদক্ষ শাসক ও বীর যোদ্ধা। তিনি তার অপরিসীম যোগ্যতা বলেই বাংলার বারো ভূঁইয়া ও পাঠানদের দমন করে তাদের
রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। তিনি সমগ্র বাংলায় সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়ন করেন।জনদরদি শাসক হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন।


উপসংহার : সুবাদার ইসলাম খান নিঃসন্দেহে বাংলার ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠতম সুবাদার ছিলেন। তিনি যেমন সুদক্ষ শাসক তেমনি দুর্ধর্ষ সেনাপতি ও দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন। ১৬০৮ হতে ১৬১৩ সাল পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলার বারো ভূঁইয়া ও পাঠানদের দমন করে বাংলায় মুঘল শাসন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। মুঘল সাম্রাজ্য। গঠনে তার অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

রচনা ,প্রবন্ধ উত্তর লিংক ভাবসম্প্রসারণ উত্তর লিংক
আবেদন পত্র ও Application উত্তর লিংক অনুচ্ছেদ রচনা উত্তর লিংক
চিঠি Letter উত্তর লিংক প্রতিবেদন উত্তর লিংক
ইমেলEmail উত্তর লিংক সারাংশ ও সারমর্ম উত্তর লিংক
Paragraphউত্তর লিংক Compositionউত্তর লিংক
CVউত্তর লিংক Seen, Unseenউত্তর লিংক
Essayউত্তর লিংক Completing Storyউত্তর লিংক
Dialog/সংলাপউত্তর লিংক Short Stories/Poems/খুদেগল্পউত্তর লিংক
অনুবাদউত্তর লিংক Sentence Writingউত্তর লিংক

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment