বাজার দক্ষতার ধরন সমূহ আলোচনা কর, দুর্বল অবস্থা কাকে বলে,অর্ধ সবল অবস্থা কাকে বলে, সবল অবস্থা কাকে বলে

বাজার দক্ষতার ধরন সমূহ আলোচনা কর, দুর্বল অবস্থা কাকে বলে,অর্ধ সবল অবস্থা কাকে বলে, সবল অবস্থা কাকে বলে

বাজার দক্ষতার ধরন (Forms of Market Efficiency)

আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি, স্টক মূল্য প্রভাব বিস্তারকারী তথ্যই হলো বাজার দক্ষতা পরিমাপের চাবিকাঠি। এর আলোকে নিচে বাজার দক্ষতার ধরন আলোচনা করা হলো-

শেয়ার বাজারে মূল্যের সাথে সংবেদনশীল তথ্যগুলো নানা স্তরে অবস্থান করে। নিচে বিষয়টি একটি ছকের সাহায্যে দেখানো হলো। আসুন, চিত্রটি অংকন করি।

উপরের চিত্রে দেখা যায় যে, শেয়ার বাজারে দুর্বল ও সবল উভয় ধরনের তথ্যই থাকতে পারে। আবার মাঝামাঝি পর্যায়ও থাকতে পারে।

১. দুর্বল অবস্থা (Weak Form): বাজার উপাত্ত (Market Data) হলো সিকিউরিটি মূল্য নির্ধারণের সর্বাধিক প্রচলিত তথ্য পর্যায়। এ ধরনের তথ্যে শুধু আয়ের অতীত মূল্য এবং লেনদেন সংখ্যা সম্পর্কিত তথ্য থাকে। ফলে এ ধরনের উপাত্ত ভবিষ্যত মূল্য পরিবর্তনে কোনো ভুমিকা রাখতে সক্ষম নয়। উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশের শেয়ার বাজারে তথ্যের পর্যায় দুর্বল অবস্থায় থাকে। যার ফলে প্রতিনিয়ত বাজারে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি এবং দর পতন

২. অর্ধ সবল অবস্থা (Semi-strong Form): এটি দুর্বল বাজার দক্ষতার চেয়ে একটু উন্নত। এখানে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত তথ্য যেমন— আয়, লভ্যাংশ, স্টক বিভাজন (Stock Split) ঘোষণা, নতুন দলিলের উন্নয়ন ইত্যাদি তথ্য

বিদ্যমান থাকে। এ বাজারে শেয়ারের মূল্যে এ সব তথ্যের সমন্বয় করতে পারে। তাই এ বাজারকে আধা সবল (Semi-strong) বাজার বলা হয়। এ ধরনের বাজার পূর্ণরূপে দক্ষ নয়। এ ধরনের বাজারে অস্বাভাবিক লাভ করা যায় না।

৩. সবল অবস্থা (Strong Form): এ ধরনের বাজার সকল ধরনের পাবলিক (Public) এবং প্রাইভেট (Private) তথ্য বর্তমান থাকে যার প্রভাব শেয়ার মূল্যে প্রতিফলন ঘটে। শেয়ার বাজারের কিছু তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এগুলোকে মূলত পাবলিক (public) তথ্য বলা হয়। আবার কিছু তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা বাধ্যতামূলক নয়। এগুলোকে প্রাইভেট (Private) তথ্য হিসেবে গণ্য করা হয়।

ধরুন, আপনি একজন বিনিয়োগকারী। তাহলে আপনাকে লগ্নি করার পূর্বে বাজরের দক্ষতা পরিমাপ করে নিতে হবে। অর্থাৎ বাজারটি দুর্বল না, অর্থ সবল, না সবল তা আপনাকে নিরূপণ করতে হবে। এটি করার জন্য আপনাকে নানা পরীক্ষা করতে হবে। তাহলে আসুন আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করি ।

অর্ধ-সবল দক্ষতা পরিমাপের পরীক্ষাসমূহ (Test of Semi – Strong Efficiency)

বাজারের দক্ষতার ধরন মূলত: অনুমান (hypothesis) যা বাজারের বিদ্যমান তথ্যের পর্যায় বোঝায়। এ ধরনের অনুমান ধরে নেওয়া হয়, স্টকের বর্তমানমূল্য শুধু বাজারের সকল ঐতিহাসিক তথ্য বহন করে না, সাথে বাজারের সকল বিদ্যমান তথ্যও সমন্বয় করে। যেমন: কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য. কোম্পানির কোনো ঘোষণা, প্রেস বিজ্ঞপ্তি, লভ্যাংশ ঘোষণা, স্টক বিভাজন ইত্যাদি। তথ্যগুলো সহজেই তাৎক্ষণিক শেয়ারের স্টক মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য করে নেয়।

এ ধরনের অনুমানে দক্ষ বাজারে বিনিয়োগকারীরা অস্বাভাবিক মুনাফা করতে পারে না। কারণ শেয়ারের মূল্য খুব দ্রুত নতুন তথ্যের সাথে সমন্বয় সাধন করে। যদি তথ্যের ভিত্তিতে মূল্য দ্রুত কার্যকর না হয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা অতিরিক্ত আয় করার সুযোগ পেতো। এ পরীক্ষাটি আপনি সহজেই একটি সূত্রের সাহায্যে করতে পারেন।

এ পরীক্ষায় একটি শেয়ারের প্রকৃত আয় এবং প্রত্যাশিত আয়ের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা হয়।

এ পরীক্ষাটি করার জন্য William Sharpe-এর বাজার মডেল (Market Model) ব্যবহার করা হয়। এটি তেমন কিছুই নয়; শুধু একটি গাণিতিক সূত্র। নিচে এটি দেওয়া হলো:

R = a + b; Rm + ei

এখানে,

R; = i সিকিউরিটি থেকে প্রাপ্ত আয়;

aj =সিকিউরিটির আয়ের অংশ যেখানে বাজারের অবদান নেই;

bi = বাজার দক্ষতার কারণ আয়ের ধ্রুব

Rm = বাজারের সূচকের উপর আয়;

ei = র‍্যান্ডম ইরর। (Random error)

বাজার সম্পর্কিত বিশ্লেষণটি Residual Analysis নামে পরিচিত। এটি একটি সমীকরণ মাত্র। সুতরাং এর ফলাফল ধনাত্মক বা ঋণাত্মক উভয়ই হতে পারে। এখানে প্রকৃত আয় এবং প্রত্যাশিত আয়ের মধ্যে পার্থক্য যদি ধনাত্মক হয় তবে বুঝতে হবে ঐ শেয়ারের অতিরিক্ত আয় সম্ভব। যদি অতিরিক্ত আয় শূন্য এর দিকে ধাবিত হয় তবে বোঝা যায় যে, প্রকাশিত তথ্য দ্রুত স্টক মূল্যের উপর প্রভাব ফেলেছে এবং তা নুতন দামের সাথে সামঞ্জস্য করে ফেলেছে। জানা হলো অর্ধ সবল বাজারের পরীক্ষা। এবার আসুন সবল শক্তিশালী বাজারের দক্ষতার পরীক্ষা সম্পর্কে জেনে নিই ।

সবল ধরনের দক্ষতার পরীক্ষাসমূহ (Test of Strong Efficiency)

দক্ষ কাঠামো অনুমান (Strong Efficiency Hypothesis) দক্ষ বাজারে শেয়ারের মূল্য সব ধরনের তথ্য, যা গণমাধ্যম ও ব্যক্তিগত উৎস হতেও আসতে পারে এমন সব তথ্য বহন করে। এ বাজারে কোন ধরনের তথ্যই সুপ্রিম মুনাফা আয় করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না। কারণ তথ্যগুলো এত দ্রুত ছড়িয়ে পরে যে, সবাই তা জেনে যায় এবং স্টকের বর্তমান মূল্য

তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন হয়ে যায়। তাই কোনো অভ্যন্তরীণ তথ্য দিয়ে স্টকের মূল্যকে প্রভাবিত করে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করা যায় না ।

মৌলিক ও কৌশলগত বাজার বিশ্লেষণ

Efficient Market Hypothesis (EMH) vs Fundamental and Technical Analysis

আপনাকে বিনিয়োগের পূর্বে অবশ্যই বাজার বিশ্লেষণ করে নিতে হবে। শেয়ারের মূল্য বিশ্লেষণের নানা তত্ত্ব রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি তত্ত্ব প্রচলিত। মৌলিক বিশ্লেষণ; কৌশলগত বিশ্লেষণ ও দক্ষ বাজার অনুমান। মৌলিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী অর্থনৈতিক ও আর্থিক চলকগুলোকে বিশ্লেষণ করে শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য (intrinsic value) নির্ণয় করা যায়।

তারপর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী করতে হবে তা নির্ণয় করা হয়। মৌলিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে শেয়ারের অধিমূল্য (over value) বা অবমূল্য (under value) নির্ণয় করা যায়। ফলে বিনিয়োগকারী ক্রয়বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

অপরদিকে কৌশলগত বিশ্লেষণ অনুযায়ী ঐতিহাসিক তথ্য বিবেচনা করে শেয়ারের মূল্যের গতির সম্ভাবনা সম্পর্কে অনুমান করা যায়। অদক্ষ বাজার কাঠামো সরাসরি কৌশলগত বিশ্লেষণকে বিরোধিতা করে। কেননা কৌশলগত বিশ্লেষণ অনুযায়ী অতীত মূল্য এবং অতীত মূল্য পরিবর্তন শেয়ারের ভবিষ্যত মূল্যের পরিবর্তন অনুধাবনের জন্য ব্যবহার করা যায় না। কারণ মূল্যের পরিবর্তন স্বাধীন। অর্ধদক্ষ বাজারের ক্ষেত্রে মৌলিক বিশ্লেষণ একই আচরণ করে। এখানে বলা হয় যে, গণভাবে প্রাপ্ত জনগণের জন্য উন্মুক্ত তথ্যকে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ আয় পাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যায় না।

আবার দক্ষ বাজার কাঠামো অনুযায়ী শুধু প্রাপ্ত তথ্য নয় বরং সকল ধরনের তথ্যই প্রয়োজনীয়। তবে যদিও EMH-এর সাথে মৌলিক ও কৌশলগত বিশ্লেষণের বিরোধ আছে তাই একটি দক্ষ বাজার তৈরির জন্য মৌলিক ও কৌশলগত বিশ্লেষণ উভয়ই প্রয়োজন ।

পরে মৌলিক এবং কৌশলগত বিশ্লেষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সর্ব ক্ষেত্রেই একটি দক্ষ মূলধন বাজার প্রয়োজন। তাহলে আসুন, পরবর্তী পাঠে দক্ষ মূলধন বাজারের তাৎপর্য বিস্তারিত জেনে নেই।

সারসংক্ষেপ: আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি, স্টক মূল্য প্রভাব বিস্তারকারী তথ্যই হলো বাজার দক্ষতা পরিমাপের চাবিকাঠি। মূলধন | বাজারে মূল্যের সাথে সংবেদনশীল তথ্যগুলো নানা স্তরে অবস্থান করে। বাজারের দক্ষতার ধরন মূলত অনুমান (hypothesis), যা বাজারের বিদ্যমান তথ্যের পর্যায় বোঝায়। এ ধরনের অনুমান ধরে নেওয়া হয়, স্টকের বর্তমান মূল্য শুধু বাজারের সকল ঐতিহাসিক তথ্য বহন করে না, সাথে বাজারের সকল বিদ্যমান তথ্যও সমন্বয় করে। বাজার |

সম্পর্কিত বিশ্লেষণটি Residual Analysis নামে পরিচিত। এটি একটি সমীকরণ মাত্র। সুতরাং এর ফলাফল ধনাত্মক বা ঋণাত্মক উভয়ই হতে পারে। দক্ষ কাঠামো অনুমান (Strong Efficiency Hypothesis) দক্ষ বাজারে শেয়ারের মূল্য | সব ধরনের তথ্য, যা গণমাধ্যম ও ব্যক্তিগত উৎস হতেও আসতে পারে এমন সব তথ্য বহন করে। শেয়ারের মূল্য বিশ্লেষণের নানা তত্ত্ব রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি তত্ত্ব প্রচলিত। মৌলিক বিশ্লেষণ; কৌশলগত বিশ্লেষণ ও দক্ষ বাজার অনুমান ।

একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ অর্ধ-সবল দক্ষতা পরিমাপের পরীক্ষাসমূহ, সবল ধরনের দক্ষতার পরীক্ষাসমূহ, মৌলিক ও কৌশলগত বাজার বিশ্লেষণ

Leave a Comment