প্রশ্ন সমাধান: বাব এল মান্দেব কি?,বাবেল মান্দেব কোন ভাষার শব্দ? ,বাব-এল-মান্দেব প্রণালী কোন কোন জলরাশিকে সংযুক্ত করেছে?,বাব আল-মান্দাব এর রহস্যগাঁথা, বাব আল মান্দেব সংযুক্ত করেছে, বাব এল মান্দেব প্রণালী
বাব এল মান্দেব লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরকে সংযোগকারী একটি প্রণালী। প্রণালীটি আরব উপদ্বীপে অবস্থিত ইয়েমেন এবং আফ্রিকার অন্তরীপে অবস্থিত জিবুতি, ইরিত্রিয়া ও সোমালিয়াকে পৃথক করেছে। আরবী বাব এল মান্দেবের অর্থ দুর্দশার দুয়ার। ইংরেজিতে প্রণালীটিকে কখনও কখনও মান্দাব প্রণালী হিসেবে অভিহিত করা হয়।
বাব এল মান্দেবের অবস্থান নামকরণ : বাব এল মান্দেব নামটি সম্ভবত উদ্ভূত হয়েছে প্রণালীটিতে দিকনির্দেশনায় সমস্যার কারণে। আবার আরব কিংবদন্তী অনুসারে, এক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে এশিয়া আর আফ্রিকা আলাদা হয়ে যায় এবং তার ফলে প্রচুর মানুষ মৃত্যুবরণ করে। সেই দুর্যোগের কথা স্মরণ করে প্রণালীটির নাম রাখা হয়েছে বাব এল মান্দেব বা দুর্দশার দুয়ার।
তথ্যাবলী: বাব এল মান্দেব লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল হয়ে ভারত মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যে একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হিসেবে কাজ করে। ২০০৬ সালে এ প্রণালীটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩.৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল বহন করা হয় যেখানে সমগ্র বিশ্বে তেলবহনকারী ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে বহন করা হয় গড়ে ৪৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল।
সংযোগকারী সেতু: ২০০৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জানা যায় যে, তারেক বিন লাদেন মালিকানাধীন কোম্পানী বাব এল মান্দেবের দুই প্রান্ত, ইয়েমেন ও জিবুতিকে সংযোগকারী একটি সেতু নির্মানের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
উপঅঞ্চল: বাব এল মান্দেব আরব লীগের একটি উপঅঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। এর সদস্যগুলো হল: ইয়েমেন, সোমালিয়া, জিবুতি ও কোমোরোস দ্বীপপুঞ্জ।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
আমাদের এই পৃথিবী তার আনাচে-কানাচে বিভিন্ন রকম রহস্য ছড়িয়ে রেখেছে। আর এই রহস্য সম্পর্কে জানতে উদগ্রীব থাকে মানুষের মন। সকল রহস্যের পেছনে লুকিয়ে থাকে কোনো না কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। মানুষ যখন এসব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে জেনে যায় তখন রহস্য হয়ে যায় সরল।
তবে প্রাচীনকালে এসব অনেক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় মানুষের অজানা ছিল। তাই সামান্যতম রহস্যের গন্ধ পেলেই মানুষটাকে নিজের কল্পনা মিশিয়ে আরো বেশি রহস্যময় করে তুলত। রহস্যাবৃত এইসব স্থানকে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করত। আজকে এমনই একটি স্থান নিয়ে সাজিয়েছি আমাদের আয়োজন। স্থানটির নাম বাবেল মান্দেব। তাহলে চলুন দেরী না করে জেনে আসি বাবেল মান্দেব এর রহস্য ঘেরা বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের কথা।
বাবেল মান্দেব মূলত একটি প্রণালী। ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন এই প্রণালীটি লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগর কে সংযুক্ত করেছে। এছাড়া বাবেল মান্দেব আরব উপদ্বীপে অবস্থিত ইয়েমেনের সাথে আফ্রিকা উপকূলে অবস্থিত জিবুতি ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়া কে পৃথক করে। লোহিত সাগর এবং সুয়েজ খাল হয়ে এই প্রণালীটি ভারত মহাসাগর এবং ভূমধ্যসাগরের সংযোগ ঘটিয়েছে যা ভূ-রাজনৈতিক ভাবে বাবেল মান্দেব কে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে বসিয়েছে।
বাবেল মান্দেব কে ঘিরে বিভিন্ন রকম রহস্য লুকিয়ে রয়েছে মূলত এর নামের মধ্যেই। এই অঞ্চলটিতে প্রায় সময়ই বিভিন্ন ভারবাহী জাহাজগুলোকে হারিয়ে যেতে দেখা যায়। হয়তো এর ধারাবাহিকতায় এর নাম দেওয়া হয়েছে বাবেল মান্দেব। এটি মূলত একটি আরবি শব্দ যার বাংলা প্রতিশব্দ দাঁড়ায় দুর্দশার দুয়ার বা মৃত্যুর দরজা।
এই প্রণালীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাহাজ নিখোঁজ হতে শোনা গিয়েছিল সেই সাথে মৃত্যু ঘটেছিল অনেক মানুষের। এছাড়া এ প্রণালি তেল রপ্তানির জন্য একটি অন্যতম মাধ্যম হওয়ায় জাহাজ ডুবিতে তেলের ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে বিভিন্ন সময়। তবে এই ক্ষয়ক্ষতি বা রহস্যের পেছনে একটি সরল বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। বস্তুত এই প্রণালীটি এমন একটি ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থিত যেখানে সহজেই নাবিকেরা দিক ভুল করে।
যেমন পৃথিবীর সবথেকে রহস্য ঘেরা অঞ্চল বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে নিয়ে বিভিন্ন রহস্য প্রচলিত রয়েছে ঠিক একইভাবে বাবেল মান্দেব কেউ রহস্যের অন্ত নেই। কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতোই এখানকার রহস্যের মূলে রয়েছে এর ভৌগোলিক অবস্থান যার মাধ্যমে সহজেই কম্পাসের দিক ভ্রম হয়। তবে এই প্রণালী তীর এরূপ নামকরণের পিছনে আরেকটি কারণ প্রচলিত রয়েছে।
ধারণা করা হয় একটি ভয়াবহ ভুমিকম্পের দরুন যখন আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশ দুটি পৃথক হয়ে যায়। তখন এই ভয়াবহ ঘটনায় লাখো মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ফলে এই দুটি মহাদেশকে পৃথক কারী এই প্রণালী কে মৃত্যুর দরজা নামে অভিহিত করা হয়। তবে ইংরেজি ভাষায় বাবেল মান্দেব কে শুধুমাত্র মান্দেব প্রণালী হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
বাবেল মান্দেব একটি অন্যতম বিশাল প্রণালী। এর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য প্রায় 80 মাইল এবং সর্বোচ্চ প্রস্থ প্রায় 25 মাইল। এই প্রণালীতে প্রায় -৬০৯ ফুট গভীর। আরব উপদ্বীপে অবস্থিত এই প্রণালীটি তেল রপ্তানির জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রণালী। 2006 সাল থেকে এই প্রণালীর মাধ্যমে প্রায ৩.৩ বিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি করা হয়ে থাকে। যেখানে সারা বিশ্বব্যাপী অন্যান্য প্রণালী বা পথের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ৪৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি করা হয়ে থাকে।
এছাড়া 2008 সালে এমন একটি সংবাদ শোনা যায় যে তারেক বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন একটি কোম্পানি প্রণালীটি দুই প্রান্তে অর্থাৎ ইয়েমেন এবং জিবুতিকে সংযুক্ত করে সেতু নির্মাণের কাজ চালু করেছে।
ভৌগোলিকভাবে রহস্যেঘেরা বাবেল মান্দেব কে নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার শেষ নেই। প্রায়শই এখানে তেল রপ্তানি কে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। এমনই একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল 2018 সালের জানুয়ারি মাসে। যখন আরববিশ্ব এই প্রণালীর দ্বারা তেল রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছিল। বস্তুত ওই সময়ে তেল বহনকারী দুটি জাহাজের ওপর ইয়েমেনের একদল মানুষ হামলা করে।
যদিও এই ঘটনায় তেলের কোনরকম ক্ষতি হয়নি। কিন্তু আরববিশ্ব ঘোষনা করে যে যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে ততদিন এই পথ দিয়ে তেল রপ্তানি করা হবে না।
বাবেল মান্দেব তার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে আরব বিশ্বের অন্যতম উপদ্বীপীয় সদস্য। রহস্যময় এই প্রণালীটি তার সকল রহস্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজের অবস্থানকে ধরে রেখেছে।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- লিভারেজ ইজারার সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ লিখ
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট