বাহিরে তো সে ধরা দিলই না তাহাকে মনেও আনিতে পারিলাম না।”, “এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি। ”,“ছোটোকে যাঁহারা সামান্য বলিয়া ভুল করেন না তাঁহারা ইহার রস বুঝিবেন।”,“আমরা যে ধনী একথা তিনিও ভোলেন না আমাকেও ভুলিতে দেন না।

বিষয়: বাহিরে তো সে ধরা দিলই না তাহাকে মনেও আনিতে পারিলাম না।”, “এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি। ”,“ছোটোকে যাঁহারা সামান্য বলিয়া ভুল করেন না তাঁহারা ইহার রস বুঝিবেন।”,“আমরা যে ধনী একথা তিনিও ভোলেন না আমাকেও ভুলিতে দেন না।

পাঠ বিশ্লেষণ :
১। “বাহিরে তো সে ধরা দিলই না, তাহাকে মনেও আনিতে পারিলাম না।”
উত্তর : বিনুদাদার কল্যাণে অনুপমের বিয়ের আসরটা জমজমাট হয়ে উঠল। তার এমনই দুর্ভোগ যে, কনে আসার আগেই বিয়ে ভেঙে গেল। বিনুদার বর্ণনায় আকর্ষিত হয়ে কল্পনার দৃষ্টিতে তাকে দেখার সুযোগ সৃষ্টি হলেও তাকে চাক্ষুষ দেখার সুযোগই পেল না সে। বাইরে তো সে ধরা দিলই না, তাকে মনেও আনত পারল না অনুপম।

২। “এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি। ”
উত্তর : মায়ের সাথে যাত্রাপথে গাড়িতে ওঠার সময় কল্যাণীর কণ্ঠে প্রথম অনুপম শুনতে পায় ‘জায়গা আছে’ কথাটি। ‘জায়গা আছে’ কথাটি অনুপমের কাছে চিরজীবনের গানের ধুয়া হয়ে রয়েছে। কল্যাণীকে বিয়ে করতে পারেনি বলে অনুপমের কোন কষ্ট নেই, বরং সুযোগ হলে তার ছোটখাটো কাজ পর্যন্ত সে করে দেয়। আর মনে মনে ভাবে, এই তো সে জায়গা পেয়েছে। যদিও তার সম্পূর্ণ পরিচয় পায়নি, আজও সে অপরিচিতা। তবুও ভাগ্য ভালো যে, সে জায়গা পেয়েছে।

৩। “ছোটোকে যাঁহারা সামান্য বলিয়া ভুল করেন না তাঁহারা ইহার রস বুঝিবেন।”
উত্তর : গল্পের নায়ক অনুপমের জীবনের মাত্র চার বছরের চমক ইতিহাসটুকু ছোট। ছোট জলবিন্দুর মধ্যেই সিন্ধুর ব্যাপকতা থাকে, রসমাধুর্য থাকে। ওটুকু চয়ন করে নিতে হয়। এ কারণে ছোটকে যারা সামান্য বলে ভুল করেন না, তারা এর রস পান করে আনন্দ অনুভব করতে পারেন।

৪। “আমরা যে ধনী একথা তিনিও ভোলেন না, আমাকেও ভুলিতে দেন না।”
উত্তর : ধনী কথাটার মধ্যে এক ধরনের অহংকারবোধ যেমন আছে তেমনি অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার মনোভাবও আছে। বিশেষ করে যারা গরিব থেকে হঠাৎ ধনী হয়, তাদের ক্ষেত্রে এ কথা বেশি খাটে। অনুপমের মায়ের স্বভাবও মনোভাবের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। কারণ তিনি গরিব ঘরের মেয়ে, তাই হঠাৎ ধনী হওয়ার অহংকারটা নিজেও ভোলেন না, ছেলেকেও ভুলতে দেন না।


আরো ও সাজেশন:-

৫। “তাহাকে না খুঁড়িয়া এখানকার এক গণ্ডুষও রস পাইবার জো নাই।”
উত্তর : গোটা সংসারের দায়িত্বে যিনি থাকেন, তিনিই জানেন কী দিয়ে কী হয়, কার জন্য কী দরকার। সংসারের সব রহস্যই তার জানা থাকে। সে রহস্যের ছিটেফোঁটা রস উদঘাটন করতে চাইলে তাকে খুঁড়তে হয়। অনুপমদের সংসারের দায়িত্ব তার মামার ওপর। তাকে না খুঁড়ে এখানকার এক গণ্ডুষও রস পাওয়ার উপায় নেই।

৬। “এখনো আশা ছাড়ি নাই, কিন্তু মাতুলকে ছাড়িয়াছি।”
উত্তর : কানপুরে নামার সময় মেয়েটির নাম পরিচয় জানতে পেরে অনুপম ও তার মা দুজনই চমকে উঠল। তারপর মামার নিষেধ অমান্য করে , মাতৃ আজ্ঞা ঠেলে অনুপম কানপুরে চলে এলো। কল্যাণী ও তার বাবার সাথে দেখা করে হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করল। শম্ভুনাথ বাবুর হৃদয় গলল। তাতে বিশেষ কোন ফল হলো না। কল্যাণী স্পষ্ট জানিয়ে দিল সে বিয়ে করবে না। বিয়ের আশায় সে মাতুলকে ছেড়েছে, তবু কল্যাণীর আশা সে এখনও ছাড়েনি।

৭। “মস্তু বাংলাদেশের মধ্যে আমিও একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহের আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে।”
উত্তর : বাংলাদেশে সাধারণত বর ও বরের বাবা কোন কারণে কনেপক্ষের সাথে মতপার্থক্য হলে বিয়ের আসর থেকে চলে আসে অথবা কনেকে ত্যাগ করে। গল্পের নায়ক অনুপমের ক্ষেত্রেই এর বিপরীত ঘটনা ঘটেছে। কেবল মামার অহংকারের কারণেই তার মতো ব্যক্তিহীন সুুুপুরুষকে কন্যার বাবা বিয়ের আসর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

৮। “ভিড়ের মধ্যে দেখিলে সকলের আগে তাঁর উপরে চোখ পড়িবার মতো চেহারা।”
উত্তর : সুগঠিত অঙ্গসৌষ্ঠবের মানুষের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। শম্ভুনাথ সেন সেরকম চেহারার একজন মানুষ। বিয়ের পর তিন দিন আগে তিনি অনুপমকে প্রথম চোখে দেখলেন এবং আর্শীবাদ করলেন। তাঁর বয়স চলি­শের কিছু এপারে বা ওপারে। চুল কাঁচা, গোঁফে পাক ধরতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে সুপুরুষ। ভিড়ের মধ্যে দেখলেও সবার আগে চোখে পড়ার মতো।



৯। “তাহার বিশেষত্ব এই যে, তাহার মধ্যে বয়সের তফাত কিছুমাত্র ছিল না।- ছোটদের সঙ্গে অনায়াসে এবং আনন্দে ছোট হইয়া গিয়াছিল।”
উত্তর : মিষ্টি সুরে ‘এখানে জায়গা আছে’ বলা মেয়েটিকে অনুপম এইমাত্র দেখল। এখনও তাকে সুর বলেই মনে হচ্ছে। দেখতে দেখতে চোখে পলক পড়ছে না। বয়স ষোলো সতেরো হবে। সারা দেহে নবযৌবনের আভা ছড়িয়ে আছে। কিন্তু তা তাকে ভারাক্রান্ত করে তোলেনি অর্থাৎ তার দেহ মনে কোথাও ভার চাপিয়ে দেয়নি। তার চলা ও বলার গতি সহজ স্বচ্ছন্দ, দীপ্তি নির্মল, সৌন্দর্যের শুচিতা অপূর্ব, কোথাও কোন জড়িমা নেই।

১০। “তিনি এমন বেহাই চান যাহার টাকা নাই অথচ যে টাকা দিতে কসুর করিবে না।”
উত্তর : অনুপমের মামা শোষণ ও শাসন দুটিই ভালো বোঝেন। তিনি আত্মীয়তাও রাখতে চান অথচ তাকে যথাযথ সম্মান দিতে চান না। তিনি তার ভাগ্নের জন্য এমন ঘরের মেয়ে চান, যে এ বাড়িতে মাথা হেঁট করে আসবে। এমন বেয়াই চান, যার টাকা নেই অথচ টাকা দিতে কসুর করবে না, যাকে শোষণ করা যাবে, আবার গুড়–গুড়ির পরিবর্তে হুঁকা দিলেও আপত্তি করবে না। বউ ও বেয়াই হবে তাদের বাড়ির সম্পূর্ণ অনুগত।

১১। “মামার একমাত্র লক্ষ্য ছিল, তিনি কোনমতেই কারও কাছে ঠকিবেন না।”
উত্তর : আড়ম্বরহীন বিয়ে বাড়িতে ঢুকে মামা খুশি হলেন না। তার ওপর কনের বাবার টানাটানির যে কথা শুনেছিলেন, তাতে তার ধারণা হলো লোকটা ঠকাতে পারেন। তাই তিনি বেয়াই মহাশয়কে বিয়ে শুরুর আগেই গহনার মান ও মাপ যাচাই করার সুযোগ দিতে অনুরোধ করলেন। কারণ তার মতে বিয়ের পরে আর কোন কথা তোলা যায় না। তার লক্ষ্য ছিল, তিনি কারও কাছে কোনাভাবেই ঠকবেন না।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment