বিজ্ঞানের কী কী বলার আছে হস্তমৈথুন সম্পর্কে?

বিজ্ঞানের কী কী বলার আছে হস্তমৈথুন সম্পর্কে?

অনেকে এই হস্তমৈথুনে আসক্ত!যাদের অধিকাংশই এর ক্ষতি সম্পর্কে জানে না।
এই পোস্টে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুনের ক্ষতিগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো…
বিজ্ঞানের কী কী বলার আছে হস্তমৈথুন সম্পর্কে?


হস্তমৈথুন তৈরি করবে নানা ধরনের যৌন জটিলতা
আপনার যৌনজীবনকে বিষিয়ে তােলার জন্য এই এক হস্তমৈথুনই যথেষ্ট। আর যদি তার সাথে যােগ হয় পর্নোগ্রাফি, তাহলে তাে সােনায় সােহাগা। পাশাপাশি হাত ধরে চলা এই দুভাই আপনার জীবনকে লন্ডভন্ড করে দেবে, বুকের জমিনে সুখস্বপ্নের যে খেত আপনি বহু যত্নে গড়ে তুলেছিলেন তা নিমিষেই পুড়িয়ে দেবে চৈত্রের খরতাপের মতােই।
অকাল বীর্যপাত বা Premature Ejaculation এর অন্যতম কারণ হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুন করার সময় আপনি চেষ্টা করতে থাকেন কত তাড়াতাড়ি চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছানাে যায়, পাওয়া যায় শীর্ষসুখ। দেরি হলে ভালাে লাগে না, অসহ্য বিরক্তি এসে ভর করে। এভাবে কিছুদিন হস্তমৈথুন করার পর আপনার মস্তিষ্ক বুঝে ফেলবে খুব তাড়াতাড়ি আপনি চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছাতে চাচ্ছেন। সে তখন এভাবেই নিজেকে প্রােগ্রাম করে নেবে। অল্প সময়েই আপনি শীর্ষসুখ। পয়ে যাবেন। স্ত্রীর সঙ্গে স্বাভাবিক অন্তরঙ্গতার সময়েও আপনার প্রােগ্রামড ব্রেইন অল্প সময়েই আপনাকে চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছে দেবে। আপনার স্ত্রী থাকবেন অতৃপ্ত।


হস্তমৈথুন আপনাকে যৌনমিলনের জন্য অযােগ্য, অক্ষম বানিয়ে দেবে। মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় একে বলা হয় লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যা বা Erectile Dysfunction (ED) European Federation of Sexology এর প্রেসিডেন্টসহ আরও অনেক বিশেষজ্ঞের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে পর্ন-আসক্তি এবং হস্তমৈথুনের যুগলবন্দী লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যার অন্যতম কারণ। লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যার ফলে যৌনমিলনের সময় আপনার লিঙ্গ (Penis) উথিত হবে না, যতটুকু কাঠিন্য দরকার ততটুকু থাকবে না, অথবা যত সময় ধরে শক্ত থাকা প্রয়ােজন তত সময় ধরে থাকবে না। ফলে আপনি হারাবেন স্বাভাবিক যৌনমিলনের সক্ষমতা।

হস্তমৈথুনের কারণে আপনি স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকবেন। ২০১৫ সালের একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী হস্তমৈথুন এবং পর্ন দেখার ফলে বিবাহিত পুরুষেরা, তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা তাদের কাছে একঘেয়ে লাগে। হস্তমৈথুনের কারণে। Chronic Penile Lymphedema নামের ঘিনঘিনে একটি রােগে আক্রান্ত হবারও আশঙ্কা থাকে। যার ফলে লিঙ্গ কুৎসিত আকার ধারণ করে।
দাম্পত্যজীবনে অশান্তি
স্বাভাবিক যৌনমিলন যেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন উপহার দেয়, ধুলাে কাদামাটির এ পৃথিবীর বুকে জান্নাতী সুখের এক পশলা বৃষ্টি নামায় সেখানে, হস্তমৈথুন, অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্স দাম্পত্যজীবনে মিশিয়ে দেয় জাহান্নামের ফ্লেভার। হতাশা, অতৃপ্তি, অশান্তি, ঝগড়াঝাঁটির অন্যতম প্রভাবক এই বিকৃত যৌনাচারগুলাে। কর্নেল ইউনিভার্সিটির ইউরােলজি এবং রিপ্রােডাক্টিভ মেডিসিনের ক্লিনিকাল প্রফেসর ড. হ্যারি ফিশ হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বলেন, “ঘন ঘন হস্তমৈথুনের কারণে একজন মানুষ লিঙ্গোত্থানজনিত (erection) সমস্যায় ভুগতে শুরু করবে। হস্তমৈথুনের সাথে সাথে পর্নোগ্রাফি দেখতে থাকলে একসময় যৌনমিলনের ক্ষমতাই সে হারিয়ে ফেলবে।


হস্তমৈথুনের ফলে টেস্টোস্টেরােনের (Testosterone) পরিমাণ কমে যেতে পারে।
প্রথমে আমাদের জানতে হবে যে টেস্টোস্টেরােন আসলে কী?২৬ এর প্রয়ােজনীয়তাই বা কী? টেস্টোস্টেরােন পুরুষের জন্য খুবই প্রয়ােজনীয় একটি হরমােন। সহজ ভাষায় এটা হলাে ওই হরমােন যা পুরুষকে পুরুষ বানায়। মানবদেহে টেস্টোস্টেরনের ভূমিকাগুলাে কী কী? দেখা যাক :


১) এনার্জি
২) স্মৃতিশক্তি
৩) মনােযােগ
৪) আত্মমর্যাদাবােধ
৫) আত্মনিয়ন্ত্রণ
৬) সুগঠিত পেশি
৭) দৈহিক শক্তি
৮) কাজ করার সক্ষমতা
৯) গলার স্বরের গম্ভীরতা
১০) মানসিক প্রশান্তি
১১) পুরুষালি আচরণ
১২) প্রভাবশালী আচরণ

১৩) লােহিত রক্তকণিকা উৎপাদন
১৪) হাড়ের স্বাভাবিক গঠন
১৫) যৌনক্রিয়ার জন্য পর্যাপ্ত আমিষ সরবরাহ করা
১৬) দীর্ঘস্থায়ী যৌনক্রিয়াতে সক্ষম করা
১৭) স্বাস্থ্যকর মেটাবলিম উৎপাদন
১৮) লিভারের কার্যাবলি
১৯) সুগঠিত প্রস্টেট গ্রন্থি গঠন।
শরীরে যদি টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে যায়, তাহলে কী হতে পারে?

১) ক্লান্তিভাব
২) বিষন্নতা
৩) দুর্বল স্মৃতিশক্তি
৪) মনােযােগ কমে যাওয়া
৫) অতিরিক্ত অস্থিরতা
৬) কম শারীরিক সক্ষমতা
৭) আত্মনিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া
৮) পুরুষালি আচরণ কমে যাওয়া
৯) আচরণে মিনমিনে ভাব আসা
১০) স্বাভাবিক যৌনক্রিয়াতে আগ্রহ না থাকা
১১) দ্রুত বীর্যপাত
১২)দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
১৩) মেরুদণ্ডে ব্যথা
১৪) পেশি সুগঠিত না হওয়া
১৫) শরীরে চর্বি জমে যাওয়া
১৬) হাড় ক্ষয়ে যাওয়া
১৭) চুল পড়ে যাওয়া।

হস্তমৈথুন করে করে আপনি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই টেস্টোস্টোরােন শেষ করে ফেলছেন। আফসােস!

বড়ই আফসােস! এখন তর্কের মেজাজে থাকলে আপনি বলতে পারেন যে, “হস্তমৈথুন করলে যদি টেস্টোস্টেরােন কমে যায়, তাহলে তাে স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার কারণেও তা কমে যাবে? তাহলে কী মানুষ স্বাভাবিক যৌনক্রিয়াও বাদ দিয়ে থাকবে?” আসলে হস্তমৈথুন আর স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এটা শুধু মুখের কথা না, বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত।

হস্তমৈথুন আর স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার সময় আমাদের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়। স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার কারণে শরীরে টেস্টোস্টেরােন তাে কমেই না, বরং উল্টোটা হয়। শরীরে টেস্টোস্টেরােনের পরিমাণ বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে স্বাভাবিক যৌনক্রিয়া। ১৯৯২ সালে ৪ জোড়া দম্পতির ওপর একটি পরীক্ষা করা হয়েছিল।

তাদের দাম্পত্যকালীন স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার দিন এবং তাদের মাঝে যেদিন কোনাে যৌনক্রিয়া হয়নি, এ দু-ধরনের দিনে তাদের টেস্টোস্টেরােনের পরিমাণ কী অবস্থায় থাকে সেটা দেখার জন্য।

দেখা গেল, যে রাতে তারা স্বাভাবিক যৌনক্রিয়া করেছেন, তার পরদিন তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরােনের পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে যে রাতে তাদের মধ্যে কোনাে যৌনক্রিয়া হয়নি, তার পরের দিন তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরােনের পরিমাণ বাড়েনি।

২০০৩ সালে, হস্তমৈথুন বন্ধ রাখলে শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণের ওপর কী। প্রভাব পড়ে তা নিয়ে একটি পরীক্ষা চালানাে হয়। ফলাফলে দেখা যায়, হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকার প্রথম ১ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে।

৬ষ্ঠ আর ৭ম দিনে এই বৃদ্ধির হার হয়ে যায় ১৪৭%! এ ৭ দিন পরে, টেস্টোস্টেরােনের পরিমাণ স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। প্রস্টেট (মুত্রথলির) ক্যান্সারের ঝুঁকি
প্রস্টেট ক্যান্সার বা প্রস্টেটগ্রন্থিতে নানা রকম সমস্যা হয়েছে এমন রােগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ জন্য দায়ী মূলত হস্তমৈথুন। অথচ আমরা আবার অনেকেই উল্টো ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আছি যে, হস্তমৈথুনই প্রস্টেট ক্যান্সার রােধ করে। আচ্ছা এ ব্যাপারে তর্কবিতর্ক বাদ দিয়ে দেখা যাক, গবেষণার ফলাফল কী। পলিক্সেনি দিমিত্রোপুলু (পিএইচডি), রােসালিন্ড ঈলস (পিএইচডি, এফআরসিপি) এবং কেনেথ আর মিওয়ার (পিএইচডি) ৮৪০ জন মানুষের ওপর গবেষণা করেন। তারা এ ৮৪০ জনের যাবতীয় যৌনতথ্য সংগ্রহ করেন।

এদের মধ্যে অর্ধেক ৬০ বছর বয়স হবার আগেই প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, বাকি অর্ধেক হয়নি। তাদের এই গবেষণার ফলাফল ছিল বিস্ময়কর। “স্বাভাবিক যৌনক্রিয়া প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে না, কিন্তু হস্তমৈথুন করে।

২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মাঝে হস্তমৈথুন প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়। যারা মাসে একবারেরও কম হস্তমৈথুন করে তাদের তুলনায়, এ বয়সে যারা সপ্তাহে ২-৭ বার হস্তমৈথুন করে তাদের ৬০ বছর বয়সে প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ৭৯% বেশি। আবার এই ২০-৩০ বয়সের মাঝে যারা হস্তমৈথুন থেকে দূরে থাকে, তাদের প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ৭০% কম।”৩১ হস্তমৈথুন নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

হস্তমৈথুন আপনার পেশিগুলােকে দুর্বল করে ফেলবে
টেস্টোস্টেরােন হরমােন সুগঠিত মাংসপেশির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই হরমােন যদি আপনি হস্তমৈথুন করে ক্রমশ শেষ করে ফেলেন, তাহলে আপনার শরীর কীভাবে সুগঠিত থাকবে? একজন পুরুষের শরীর হবে সুগঠিত, স্টিলের মতাে পেটানাে, কঠিন; মেয়েদের মতাে লতানাে নরম, নমনীয় না।

হস্তমৈথুন আপনাকে করে তুলবে চরম অমনােযােগী
২০০১ সালের একটি গবেষণার দেখা গেছে, হস্তমৈথুন করার ৩০ মিনিটের মধ্যে হস্তমৈথুনকারীর শরীরে Noradrenaline এর পরিমাণ অনেক কমে যায়। শরীরে Noradrenaline কমে যাবার ফলাফল কী? Noradrenaline৩৪ হলাে এমন একটি হরমােন, যা কোনাে কিছুর প্রতি অখণ্ড মনােযােগ ধরে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ হরমােন আপনি হস্তমৈথুন করে কমিয়ে ফেলছেন! তাহলে মনােযােগ থাকবে কীভাবে!

চিন্তা করে দেখুন, হস্তমৈথুন করার দিনটাতে আপনি ক্লাসে, পড়ার টেবিলে বা অন্যকোনাে কাজে কি মনােযােগ দিতে পারেন, না সব সময় মাথার মধ্যে লাগামছাড়া চিন্তাভাবনা ঘােরাফেরা করে?

Leave a Comment