বিড়াল গদ্যের মূল ভাব, ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের মূল ভাব আলোচনা কর, বিড়াল প্রবন্ধের মূলভাব কী?, বিড়াল প্রবন্ধের সারমর্ম, মূল ভাব আলোচনা ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের,এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের মূল ভাব, hsc বাংলা ১ম পত্রের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের মূল ভাব নোট, এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র বিড়াল মূল ভাব সার সংক্ষেপ ও মূলভাব,বিড়াল প্রবন্ধের ব্যাখ্যা

বিষয়: বিড়াল গদ্যের মূল ভাব, ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের মূল ভাব আলোচনা কর, বিড়াল প্রবন্ধের মূলভাব কী?, বিড়াল প্রবন্ধের সারমর্ম, মূল ভাব আলোচনা ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের,এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের মূল ভাব, hsc বাংলা ১ম পত্রের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের মূল ভাব নোট, এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র বিড়াল মূল ভাব সার সংক্ষেপ ও মূলভাব,বিড়াল প্রবন্ধের ব্যাখ্যা

লেখক এখানে নিজেই কমলাকান্ত। চরিত্রটির মুখ দিয়ে বস্তুত লেখক নিজেই তাঁর মনের ভাব ব্যক্ত করেছেন। বিড়াল নিরীহ প্রাণী। সুযোগ পেলেই দুধ চুরি করে খায়। সমাজে ধনী ও দরিদ্রের যে ব্যবধান তা যে মানুষেরই সৃষ্টি এ কথাই লেখক কমলাকান্ত সেজে বলেছেন। তাঁর মতে যারা দরিদ্র অসহায় তারা অনেক সময় বাধ্য হয়ে অন্যায় করে। তখন ধনীরা তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে। কেন তারা অন্যায় করল তার কারণ কখনো খোঁজা হয় না। বিড়ালকে দরিদ্র সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে এখানে দেখানো হয়েছে। কমলাকান্তের সমস্ত কথাবার্তা হচ্ছে রূপকের আশ্রয়ে। আজ সমাজে ধনী ও দরিদ্রের যে পার্থক্য বা বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য দায়ী ধনী মানুষগুলোই। সুতরাং এহেন কাজের জন্য দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে শাস্তি দেওয়া অন্যায়।


আরো ও সাজেশন:-

বিড়াল তার চুরি করে দুধ খাওয়ার কারণ বলতে গিয়ে আমাদের সমাজ-ব্যবস্থার অনিয়মের কথা বলেছে। তার ব্যাখ্যায় ধনী কৃপণদের জন্যই গরিবরা চোর হয়। তাই চোরের শাস্তি হলে যারা চোর তৈরি করে, তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিত। বিড়াল তার অভিজ্ঞতা থেকেই বলেছে যে, মানুষ তেলা মাথায় তেল ঢালেÑ এটা তাদের সবচেয়ে বড় দোষ। যাদের খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, তাদের জন্য মানুষ ভোজের আয়োজন করে। আর শুধু বেঁচে থাকার জন্য যাদের একটু খাবার প্রয়োজন, তাদেরকে কেউ খেতে দেয় না। ভোজের আসরে খেতেও ডাকে না। বরং খাবার বেঁচে গেলে তা ফেলে দেয়া হয়, তবু ক্ষুধার্তদের জন্য রাখা হয় না। ধনীদের এমন নির্দয় আচরণের জন্যই দরিদ্র অসহায়রা চুরি করে। তাই চুরির জন্য দরিদ্রকে শাস্তি দেয়ার কোনো অধিকার নেই ধনীর। বিড়াল বলতে চায় যে, কৃপণ ধনীরাই চোর সৃষ্টি করে। কারণ তারাই ক্ষুধার্তকে চুরি করতে বাধ্য করে। ধনীরা একাই পাঁচশ জনের সম্পদ ভোগ করে, তবু একটু উচ্ছিষ্ট গরিবদের জন্য রাখে না। এসবই সমাজিক অন্যায়। তাই বিড়ালের মতে, চোরের শাস্তি হলে ধন কুক্ষিগত করার অপরাধে ধনীরও শাস্তি হওয়া উচিত।

বিজ্ঞ বিড়ালের কথায় সমাজতান্ত্রিক চেতনার প্রতিফলন লক্ষ করে কমলাকান্ত কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেন। যে মতবাদে ধনী এবং নির্ধন সমান। কমলাকান্তের যুক্তি হলো ধনী যদি ধন সঞ্চয় না করে তাহলে সমাজের উন্নতি হবে না। আর বিড়াল মনে করে নির্ধন যদি খেতেই না পায় তাহলে সমাজের উন্নতিতে তার লাভ কী? বিড়ালের মতে, চোরকে শাস্তি দেয়ার আগে একটা নিয়ম করা প্রয়োজন। সেটা হলো, বিচারককে তিন দিন না খেয়ে থাকতে হবে। তখন যদি বিচারকের চুরি করে খেতে ইচ্ছে না করে, তবেই তিনি চোরকে শাস্তি দিতে পারবেন। কমলাকান্ত বিড়ালের সঙ্গে তর্কে না পেরে উপদেশ দিতে চাইলেন। বিড়ালকে ধর্মকর্মে মন দিতে বললেন। জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য কিছু বইও দিতে চাইলেন। অবশেষে খাবারের ভাগ দিবেন বলে তার্কিক বিড়ালকে চলে যেতে বললেন। খুব খিদে পেলে সর্ষে পরিমাণ আফিমও দিতে চাইলেন। আপোসের কথা শুনে একটু খুশি হয়ে বিদায় নিলো বিড়াল। কমলাকান্ত বিড়ালকে জ্ঞান দিতে পেরেছেন ভেবে আনন্দিত হলেন।



পাঠ বিশ্লেষণ

“ বিশেষ অপরিমিত লোভ ভালো নহে।”

কোন কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা থাকা স্বাভাবিক, তবে অপরিচিত চাওয়া হলো লোভ যা মেনে নেওয়া যায় না। আফিংয়ে বুঁদ কমলাকান্ত যখন ওয়াটারলুর যুদ্ধে জেতার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাময় তখন হঠাৎ ‘মেও’ শব্দ হয়। প্রথমে তিনি ভাবেন ওয়েলিংটন হয়তো বিড়ালরূপে তার কাছে আফিং চাইতে এসেছে। তার মনে পড়ল ডিউককে যথোচিত পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, আর অতিরিক্ত দেওয়া যায় না। কারণ বিশেষ অপরিমিত লোভ ভালো নয়। কাজেই সবকিছুতেই পরিমিতি রক্ষা করা দরকার।

“আমি তখন ওয়াটার্লূর মাঠে ব্যুহ রচনায় ব্যস্ত।”

কমলাকান্ত নেপোলিয়ন হলে কীভাবে ওয়াটারলু যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারতেন আফিমের নেশায় বুঁদ হয় তারই ছক তৈরিতে তিনি ব্যস্ত। তিনি যখন যুদ্ধের মাঠে ব্যূহ রচনা করছেন, বিড়াল তখন তার জন্য রেখে যাওয়া দুধ পান করে নিঃশেষ করছে। অন্যদিকে মনোযোগ থাকায় কমলাকান্ত তা টের পাননি।

“কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।”

নিজের পরিশ্রমের ফসল অন্য কেউ বিনা পরিশ্রমে আত্মসাৎ করলে যে অবস্থা দাঁড়ায়, কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ বিড়াল এসে খেয়ে ফেলায় তারও তখন সেই অবস্থা। প্রসন্নকে দিয়ে অনেক কষ্টে তিনি দুধ আনিয়েছিলেন। অথচ বিড়াল তা নিঃশেষ করেছে। এখন বিড়াল তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসছে আর হয়তো ভাবছে, কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।

“সে দুগ্ধে আমারও যে অধিকার, বিড়ালেরও তাই।”

কমলাকান্তের মাথায় হঠাৎ সাম্যচিন্তা ঢুকেছে। তিনি হঠাৎ তার আর বিড়ালের সম অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। কারণ দুধ কমলাকান্তের বাবার নয়। দুধ মঙ্গলা গাভীর, দোহন করেছে প্রসন্ন গোয়ালিনী। কাজেই সেই দুধে কমলাকান্তেরও যে অধিকার, বিড়ালেরও সেই অধিকার।

“অতএব পুরুষের ন্যায় আচরণ করাই বিধেয়।”

বাংলায় একটা প্রথা প্রচলিত আছে যে, বিড়াল দুধ খেয়ে গেল তাকে তাড়া করে মারতে হয়। সেই প্রথা না মানলে কমলাকান্ত মানুষের কাছে পরিচিত হবেন। কাজেই বিড়ালকে তাড়া করে মেরে পুরুষের মতো আচরণ করাকেই তিনি সঙ্গত মনে করলেন।

“অতএব তুমি সেই পরম ধর্মের ফলভাগী।”

মানুষের পরম ধর্ম হলো পরোপকার করা। কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে বিড়ালের ক্ষুধা মিটেছে, সে উপকৃত হয়েছে। আর পরোপকার কাজটি করেছে কমলাকান্ত। এই যুক্তিতে কমলাকান্ত সেই পরম ধর্মের ফলভাগী।

“চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী।”

চোর যেমন দোষী, কৃপণ ধনী তেমনই দোষী। কারণ দরিদ্র সাধ করে চুরি করে না। গরিব যখন খাদ্য বস্ত জোগাড় করতে পারে না, তখন সে চুরি করে। অথচ ধনীরা গরিব বা দুস্থদের কোন রকম সাহায্য করে না, বরং বিরক্তিতে মুখ ঘুরিয়ে থাকে। এদিক থেকে চুরির দায়ে চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী নানা কারণে তার চেয়ে শত গুণে দোষী।

“ যে খাইতে বলিলে বিরক্ত হয়, তাহার জন্য ভোজের আয়োজন কর- আর যে ক্ষুধার জ্বালায় বিনা আহŸানেই তোমার অন্ন খাইয়া ফেলে, চোর বলিয়া তাহার দন্ড কর – ছি! ছি!”

নিমন্ত্রণ করলে যে বিরক্ত হয় তার জন্য ভোজের আয়োজন করা হয় এবং তাকেই খাওয়ার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়। অথচ যে ক্ষুধার্ত তাকে নিমন্ত্রণ করা হয় না। আবার সে যদি বিনা নিমন্ত্রণেই ক্ষুধার জ্বালায় খাদ্য খেয়ে ফেলে তাহলে তাকে চোর বলে শাস্তি দেওয়া হয়। এটা উচিত নয়।

“খাইতে দাও- নহিলে চুরি করিব।”

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের প্রধান ও সর্বপ্রথম চাহিদা হলো খাদ্য। স্বাভাবিক উপায়ে খাদ্য জোগাড় করতে না পারলে মানুষকে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হয়। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে বিড়াল যেমন কমলাকান্তের  জন্য  রেখে দেওয়া দুধ চুরি করে খায়, মানুষও তেমনি উপায়ন্তর না দেখে চুরি করে। তাছাড়া এ পৃথিবীর মাছ মাংসে সবারই অধিকার আছে। তার বত্যয় ঘটলে দাবি উঠতেই পারে. খাইতে দাও- নহিল চুরি করিব।

“যে বিচারক চোরকে সাজা দিবেন, তিনি আগে  তিন দিবস উপবাস করিবেন।”

সৎ উপায়ে যখন কেউ অন্নসংস্থান করতে ব্যর্থ হয়, তখনই সে অসুদপায় অবলম্বন করে। যার জন্য তাকে অপরাধী ভাবা হয়। অথচ বিচারকরা তার কার্যকারণ অনুধাবন করেন না। কাজেই যে বিচারক চোরকে সাজা দেবেন, তিনি আগে তিন দিন না খেয়ে থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণাটা উপলদ্ধি করবেন। তারপর চোরের বিচার করবেন।

“বিজ্ঞ লোকের মত এই যে, যখন বিচারে পরাস্ত হইবে, তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে।”

পরাজিত হয়েও পরাজয় না মানার বিকল্প অভিনয় করতে হবে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে, সে পরাজিত হয়েছে-এ হলো বিজ্ঞ লোকের অভিমত। প্রসঙ্গত, কমলাকান্ত দরিদ্র বিড়ালের যুুক্তিতে পরাজিত হয়ে গম্ভীর ভাব ধারণ করে উপদেশ প্রদানে মনোযোগ দেন। বিড়ালের কথাগুলো নীতিবিরূদ্ধ, এতে পাপ হবে। আর তা থেকে মুক্তির জন্য ধর্মাচরণে মন নিতে হবে। বিড়াল এসব উপদেশ ক্ষুধানুসারে বিবেচনা করবে বলে জানিয়ে দেয়।

“একটা পতিত আত্মাকে অন্ধকার হইতে আলোকে আনিয়াছি, ভাবিয়া কমলাকান্তের বড় আনন্দ হইল।”

পতিত আত্মা আসলে পতিত নয়- সে সচেতন ও বিদ্রোহী। আর তা অন্ধকারেও অবস্থান করে না, সে আলোকিত। তবে তথাকথিত ধনীরা দরিদ্র দুস্থদের অবহেলা ও অবজ্ঞা করে পণ্ডিত হিসেবে বিবেচনা করে। পতিত আত্মা ক্ষুধার্ত থাকলে নীতিজ্ঞান আর ধর্মজ্ঞান মানে না। কিন্তু বিড়াল এটাকে ক্ষুধার্তের অধিকার বলে যুক্তি দেখাও। কমলাকান্তও নানা যুক্তি দিয়ে, উপদেশ দিয়ে এসব নীতিবিরুদ্ধ কাজ থেকে বিড়ালকে বিরত থাকার সম্মতি আদায় করতে পেরেছেন। তাই এটি পতিত আত্মাকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনতে পেরেছেন মনে করে কমলাকান্তের বড় আনন্দ হলো।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment