বিনিময় বিল কাকে বলে? বিনিময় বিল কত প্রকার ও কি কি? বিনিময় বিলের সুবিধা ও অসুবিধা? বিনিময় বিলের গুরুত্ব
বিনিময় বিল কাকে বলে? বিনিময় বিল কত প্রকার ও কি কি? বিনিময় বিলের সুবিধা ও অসুবিধা? বিনিময় বিলের গুরুত্ব
বিনিময় বিল কাকে বলে :-
যে দলিলে কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে ভবিষ্যত কোন তারিখে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য শর্তহীন আদেশ প্রদান করে এবং অপরপক্ষ এতে স্বীকৃতি প্রদান করে ও মেয়াদ শেষে উল্লেখিত অর্থ প্রদান করে তাকে বিনিময় বিল বলে।
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে শিল্প ও বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের ফলে ব্যবসায় জগতে নগদের চেয়ে বাকীতে লেনদেন বেশী সংঘটিত হচ্ছে। এ সমস্ত বাকীতে ক্রয়-বিক্রয় ও আমদানি-রপ্তানি দেনা-পাওনা নিম্পর জন্য এ পারস্পরিক অর্থ সংস্থানের উদ্দেশ্যে বহুল ব্যবহৃত যোগ্য দলিল হচ্ছে বিনিময় বিল।
সুতরাং নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অথবা তার নির্দেশিত কাউকে অথবা বাহককে চাহিবামাত্র বা ভবিষ্যত কোন তারিখে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রেরিত প্রস্তুতকারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও স্ট্যাম্প যুক্ত একটি লিখিত শর্তহীন আদেশ নামাকে বিনিময় বিল বলে।
বিনিময় বিল কত প্রকার ও কি কি :-
উদ্দেশ্য ও প্রকৃতির দিক থেকে সকল প্রকার বিনিময় বিল এক ও অভিন্ন। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের সাথে বিভিন্ন প্রকার বিনিময় বিলের প্রচলন ঘটেছে। ব্যবসায়ীরা তাদের প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতি রেখে ঐ সকল বিল প্রস্তুত ও ব্যবহার শুরু করেছে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিনিময় বিলের শ্রেণী বিভাগ নিয়ে দেয়া হল
(ক) ভৌগোলিক অবস্থান ভিত্তিতে বিনিময় বিলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা :
১) অভ্যন্তরীণ বিনিময় বিল এবং
2) বৈদেশিক বিনিময় বিল।
১. অভ্যন্তরীণ বিনিময় বিল :
যদি কোন দেশে অবস্থানরত ব্যবসায়ী অন্য কোন ব্যবসায়ীর উপর বিল প্রস্তত করে এবং এ দেশেই বিলটি পরিশোধিত হয় তাহলে উক্ত নিলকে অভ্যন্তরীণ বিনিময় বিল বলে।
২. বৈদেশিক বিনিময় বিল :
যে বিনিময় বিল এক দেশের নাগরিক কর্তৃক অপর দেশের নাগরিকের উপর প্রস্তুত করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট স্বীকৃতিকারীর দেশে পরিশোধ করা হয় তাকে বৈদেশিক বিনিময় বিগ বলে।
(খ) মেয়ানভিত্তিক বিল : মেয়াদের ভিত্তিতে বিনিময় বিলকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়।
১) মেয়াদী বিল।
২) চাহিবামাত্র দেয় বিল এবং
৩) দর্শনী বিল।
১. মেয়াদী বিল (Time Bill):
যে বিলের টাকা নির্দিষ্ট সময় পর পরিশোধ করতে হয় তাকে মেয়াদী বিগ বলে।
২. চাহিবামাত্র দেয় বিল (Demand Bill) :
যে বিনিময় বিলের টাকা চাহিবামাত্র আদিষ্ট বা স্বীকৃতিকারী কর্তৃক সংশ্লিষ্ট প্রাপককে পরিশোধ করা হয় তাকে বিল বলে।
৩. দর্শনী বিল (Bill of Sight) :
যে বিনিময় বিল দেখা মাত্র এর আদিষ্ট বা স্বীকৃতিকারী সংশ্লিষ্ট প্রাপককে বিলের টাকা পরিশোধে বাধা থাকে তাকে দর্শনী বিল বলে।
(গ) হিসাবভিত্তিক বিল : হিসাবের ভিত্তিতে বিনিময় বিল দু’প্রকার
১) প্রাপ্য বিল এবং
২) প্রদেয় বিল।
১. প্রাপ্য বিল (Bills Receivable):
যে বিনিময় বিলের টাকা মেয়াদ শেষে পাওয়া যায় তাকে প্রাপ্য বিল বলে।
২. প্রদেয় বিল (Bills Payable) :
যে বিনিময় বিলের মেয়াদ শেষে টাকা প্রদান করতে হয় তাকে প্রদেয় বিল বলে।
(ঘ) প্রতভিত্তিক বিল প্রস্তুত প্রণালীর ভিত্তিতে বিনিময় বিল দুভাগ করা যায়।
১) সম্পূর্ণ বিল এবং
২) অসম্পূর্ণ বিল।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
১. সম্পূর্ণ বিল (Complete Bill) :
বিনিময় বিল তৈরীর যাবতীয় নিয়ম মেনে যথাযথভাবে যে বিল প্রস্তুত করা হয় তাকে সম্পূর্ণ বিল বলে।
২. অসম্পূর্ণ বিল (Incomplete Bill) :
যে বিল প্রস্তুতের সময় এর এক অথবা একাধিক অপরিহার্য উপাদান অন্তর্ভুক্ত হতে বাদ পড়ে যায় তাকে অসম্পূর্ণ বিগ বলে।
বিনিময় বিলের গুরুত্ব :-
আধুনিক বিশ্বে শিল্প ও বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সেই সাথে বাকীতে ক্রয় বিক্রয়ের পরিমাণ ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাকীতে ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের দেনা পাওনা নিষ্পত্তিতে বিনিময় বিলের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া, ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থ সংস্থানে ও ঋণের দলিল হিসাবেও বিনিময় বিনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিনিময় বিলের গুরুত্ব বর্ণনা করা হল।
১. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে (In Inland Business) :
একটি দেশের অভ্যন্তরে বাকীতে ক্রয়-বিক্র সংক্রান্ত পাওনা-দেনা নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে নগদ লেনদেন ও নগদ অর্থ স্থানান্তরের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
২. বৈদেশিক বাণিজ্যে (In Foreign Trade) :
কোন দেশ তার প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করতে পারে না তাই বৈদেশিক বাণিজ্যে অংশ গ্রহণ করে। বৈদেশিক বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানি পাওনা নগদে পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। কেননা বিভিন্ন দেশের মুদ্রা স্বতন্ত্র পৃথক। যেমন বাংলাদেশে টাকা, জাপানে ইয়েন, কুয়েত্তের দিনার ইত্যাদি। তাই বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেনা পাওনা নিষ্পত্তিতে বিনিময় নিন ব্যবহৃত হয়।
৩. অর্থ সংস্থান (In Financing) :
সৃজন ব্যবসায়ী যে কোন সময় অর্থ সংস্থানকারী বিনিময় বিল প্রস্তুত করে পরস্পর নিজেদের চলতি মূলধনের জন্য অর্থ সংস্থান করতে পারে। যা ব্যবসা কার্যক্রম প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. অর্থ প্রেরণের ঝুঁকি ও ব্যয় হ্রাসে :
এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণ ঝুঁকি পূর্ণ ও ব্যয় বহুল বিনিময় বিল ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করা যায় ফলে অর্থ প্রেরণের ঝুঁকি ও বাধা হ্রাস পায়।
৫. মাথা পিছু আয় জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে :
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটলে কর্মসংস্থান ও মানুষের আয় বৃদ্ধি পায় ফলে মাথা পিছু আয় ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ঘটে। বিনিময় বিল ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয় ও জীবন যাত্রার উন্নয়নে সাহায্য করে।
বিনিময় বিলের সুবিধা :-
আধুনিক বিশ্বে জটিল, বিস্তৃত ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে বিনিময় বিল ব্যবহারে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। নীচে বিনিময় বিলের সুবিধা বর্ণনা করা হল
১. বাকীতে ক্রয়-বিক্রয় :
বিনিময় বিল ব্যবহারের ফলে বাকীতে লেনদেনের ঝুঁকি অনেক হ্রাস পায়। এতে সামগ্রিক ব্যবসা কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়।
২. অর্থ স্থানান্তর :
বিনিময় বিল প্রচলন হওয়ায় ব্যবসায়ীগণকে দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নগদ অর্থ প্রেরণ করতে হয় না। অতি সহজেই বিনিময় বিলের মাধ্যমে দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করা যায় ফলে অর্থ স্থানান্তরের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
৩. অর্থ সংস্থান :
বাস্তব লেনদেন ছাড়াই অর্থ সংস্থানকারী বিলের মাধ্যমে আদেষ্টা ও আদিষ্ট একে অপরের অর্থ সংস্থান করতে পারে। অনেক সময় একই বিলের অর্থ ভাগাভাগি করেও পারস্পরিক অর্থ সংস্থান করতে পারে।
৪. অল্প মূলধনে ব্যবসা :
বিনিময় বিলের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করার সুবিধা থাকলে ব্যবসায়ী নগদ অর্থ ছাড়াই পণ্য ক্রয় করতে পারে এবং মূল্য পরিশোধের জন্য সময় পায়। ফলে ব্যবসা পরিচালনায় বেশী কার্যকর মূলধনের প্রয়োজন পড়ে না।
৫. বৈদেশিক বাণিজ্য :
একদেশের মুদ্রা অন্য দেশে অচল। বিনিময় বিল বৈদেশিক বাণিজ্যেরত দুটি ভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীগণের মধ্যস্থিত আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত দেনা-পাওনা অতি সহজে নিষ্পত্তি করতে সাহায্যে করে।
৬. ঋণ পরিশোধ :
বিল ধারক অতি সহজে তার পাওনাদারের স্বপক্ষে বিলের স্বল্প অনুমোদন বলে হস্তান্তর করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।