বিভাগ অর্থনীতি, কোভিড ১৯ কী লিখবে, কোভিড ১৯ আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে কি প্রভাব ফেলেছে তা লিখবে

বি এম- ০৬ (ক)
ক বিভাগ অর্থনীতি

২। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে।
কোভিড-১৯ আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলেছে তা আলােচনা কর।
নির্দেশনাঃ

(ক) কোভিড ১৯ কী লিখবে।

উত্তর:

করোনা ভাইরাস সমগোত্রীয় ভাইরাসের একটি বড় পরিবার, যেগুলি সাধারণ সর্দিজ্বর থেকে শুরু করে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মার্স) ও সিভিয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোমের (সার্স) মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে।

২০১৯ সালে চীনের উহান প্রদেশে একটি নতুন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সনাক্ত করা হয়েছিল। এটি একটি নতুন করোনা ভাইরাস যা আগে কখনো মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি।

এই কোর্সটিতে কোভিড-১৯ এবং নবআবির্ভূত শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের সাধারণ পরিচিতি দেয়া হয়েছে এবং এটি জনস্বাস্থ্য কর্মী, ইনসিডেন্ট ম্যানেজার এবং জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এনজিওগুলিতে কর্মরত কর্মীদের জন্য রচনা করা হয়েছে।

(খ) কোভিড ১৯ আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে কি প্রভাব ফেলেছে তা লিখবে।

উত্তর:

পৃথিবী দুটি বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে, কোভিড-১৯ মহামারীর আগে তিনটি মহামারীরও অসহায় সাক্ষী। এতে জীবন ধ্বংস হয়েছে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে আর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি। কিন্তু আমরা কি এই জীবন আর অর্থনীতির ধ্বংসযজ্ঞ থেকে কোনো শিক্ষা নিয়েছি? আমরা কোনো শিক্ষাই নিতে পারিনি।

শিক্ষা নিলে বিশ্বকে আজ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য সেবামূলক খাতের এমন দুরবস্থা আর জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা না হয়ে কোটারি স্বার্থের রক্ষক হিসেবে গড়ে ওঠা রাষ্ট্র দেখতে হতো না। বিশ্বের ক্ষমতাধররা সমাজকল্যাণের বোধ ও মানবিক মূল্যবোধ হারিয়েছে এবং তাদের মানবতা ও মমত্ববোধের অনুভূতির দৈন্যও ফুটে উঠেছে।

ক্ষমতার লোভে ও ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে ক্ষমতাধররা অকল্যাণমুখী খাতগুলোতেই অর্থ ব্যয় করে থাকে। বিশ্বের পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো সামরিক খাতে জনসাধারণের ট্যাক্সের অর্থের সিংহভাগ ব্যয় করে।

আমরা যদি ইতিহাসে উঁকি দেই, দেখতে পাব সমাজকর্মী, কবি-সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী আর বুদ্ধিজীবীরা অনাচার, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় ১৯৩৭ সালের ২৬ এপ্রিল গোর্য়েনিকা শহরটি আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণে ধ্বংস হয়ে যায়।

স্প্যানিশ চিত্রকর পিকাসো শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সৃষ্টি করলেন বিশ্বনন্দিত তৈলচিত্র ‘গোর্য়েনিকা’। চিত্রকর্মটিতে মানবতা ও মমত্ববোধের অনুভূতিও প্রকাশ পেয়েছে। ১৯১১ সালে ইংরেজ শাসনামলে ভারতের অমৃতসরে গণহত্যা-বিরোধিতার প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার নাইটহুড উপাধি ফিরিয়ে দেন।

ফরাসি দার্শনিক, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী জা পল সাঁত্রেকে ১৯৬৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছিল, যদিও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি মনে করতেন, একজন লেখকের নিজেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে দেয়া উচিত নয়।

বর্তমান সময়ে দার্শনিক, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মীরা জা পল সাঁত্রের মতো ভাবেন না, তাদের মানবতা ও মমত্ববোধের অনুভূতি প্রকাশ করতে সংকোচ থাকে এবং অন্যায় ও অবিচারের প্রতিবাদও করতে চান না। আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় অতিক্রম করছি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্টতই বলা হয়েছে, উন্নত দেশগুলো মারাত্মক ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী বা এরকম কোনো জনস্বাস্থ্যের হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত নয়। বিশ্বনেতারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেনি এবং জনস্বাস্থ্যের হুমকি মোকাবেলায় কোনো ধরনের প্রস্তুতিও নেয়নি।

তাই আজ কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই মৃতের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস আদালত ও দোকানপাট বন্ধ রাখতে তারা বাধ্য হচ্ছে।

প্রযুক্তির উন্নতির কারণে অনলাইনে পড়াশোনা ও কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য ঘরে বসে করা সম্ভব হচ্ছে। তবে এ প্রসঙ্গে সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেছিলেন, দূরবর্তী শিক্ষার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

অনেক অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় দুর্বল আইটি পরিকাঠামো ব্যবহার করে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যেসব বড় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে- ১. দুর্বল বা বিঘ্ন ঘটায় এমন ইন্টারনেট সংযোগ; ২. নিম্নমানের ডিভাইস; ৩. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের মূল্য পরিশোধের অতিরিক্ত বোঝা বহন।

বাংলাদেশে প্রাইমারি স্কুলে ২ কোটি ছাত্র, ১ কোটির অধিক সেকেন্ডারি স্কুলে, উচ্চ সেকেন্ডারি কলেজে প্রায় ৪০ লাখ এবং মাদ্রাসায় ৩৫ লাখ ছাত্র পড়াশোনা করে। এসব ছাত্রের অনেকের ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন বা আইফোন অথবা কোনোটাই নেই। কাজেই সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসব ছাত্রের অনলাইনে শিক্ষাদান সম্ভবপর হচ্ছে না। ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী দুই বছর স্থায়ী ছিল।

বিজ্ঞান ও চিকিৎসা শাস্ত্রে অভাবনীয় উন্নতি হলেও নিশ্চিত করে বলা যাবে না ভ্যাকসিন কবে উদ্ভাবন করা হবে এবং বাজারে আসবে। আমাদের পক্ষে বলা সম্ভবও নয় কত বছর এই মহামারীর স্থায়িত্বকাল। কাজেই এ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা ঠিক হবে না। অনলাইন শিক্ষায় তাদের কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তা বিবেচনার সময় এসেছে।

বিদ্যালয়গুলো বন্ধ এবং করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিকীকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্বকে তীব্র করে তুলেছে। অন্যদিকে চাকরি হারিয়ে বা হারানোর ভয়ে অনেকেই মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। পাশ্চাত্যের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, হারানো প্রতি পাঁচটি কাজের মধ্যে দুটি আর ফিরে আসবে না।

বিশ্বজুড়ে নতুন স্নাতক ডিগ্রি, ডিপ্লোমা এবং পেশাদার ডিগ্রিপ্রাপ্ত যুবকরা মহামারীটি বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দেয়ার কারণে চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য লড়াই করছে। একটি বৈরী চাকরির বাজার শিক্ষাক্ষেত্রে যে বিঘ্ন ঘটেছে তার সঙ্গে মিলিত হয়েছে, যা ১০০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে প্রভাবিত করেছে।

এর ফলে শিক্ষিত তরুণদের সম্ভাবনার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। কোভিড-১৯ প্রথম চাকরিপ্রাপ্ত যুবকদের চাকরিতে উন্নতি করার আশা ব্যর্থ করে দিয়েছে। আস্তে আস্তে এসব সমস্যা একটি বড় সামাজিক অশান্তির রূপ নিতে পারে।

কোভিড-১৯ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থায়, শিক্ষা পদ্ধতিতে এবং ব্যবসার ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে। সর্বোপরি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থাই হবে আগামীর দুর্যোগ মোকাবেলার কার্যকর পন্থা। আশা করি বিশ্বের রাজনৈতিক নেতারা কোভিড-১৯ থেকে এ শিক্ষাই নেবেন।

H.S.C

3 thoughts on “বিভাগ অর্থনীতি, কোভিড ১৯ কী লিখবে, কোভিড ১৯ আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে কি প্রভাব ফেলেছে তা লিখবে”

Leave a Comment