বিয়ে করার সেরা সময় কখন?, সঠিক বয়সে বিয়ে নিয়ে যা বলছে ইসলাম, সমবয়সীকে বিয়ে করলে হাজারও সুবিধা,সমবয়সী বিয়ের যত সমস্যা, সমবয়সী মেয়েকে বিয়ে করলে যা হয়

বিষয়: বিয়ে করার সেরা সময় কখন?,সঠিক বয়সে বিয়ে নিয়ে যা বলছে ইসলাম,সমবয়সীকে বিয়ে করলে হাজারও সুবিধা,সমবয়সী বিয়ের যত সমস্যা,সমবয়সী মেয়েকে বিয়ে করলে যা হয়,সমবয়সী ছেলে মেয়ে বিয়ে করলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়?

সমবয়সী ছেলে মেয়ে বিয়ে করলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়?

একটি ৩৫ বছরের পুরুষ যদি ২৫ বছরের নারীকে বিয়ে করে, তাতে যেমন সমাজের অন্যদের নাক গলানো উচিৎ নয়, তেমনি একটি ৩৫ বছরের নারীও যদি ২৫ বছরের কোন পুরুষকে বিয়ে করতে চায়, তাতেও আমাদের বাধা দেয়া তো নয়ই, এমনকি টিটকারি-মশকরা করাও গ্রহণযোগ্য নয়।

বিয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে আবির্ভূত হয় যে বিষয়টি, তা হলো বয়স। অনেককেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে দেখা যায় যে সমবয়সী কাউকে বিয়ে করাটা ঠিক হবে নাকি দুইজনের মধ্যে বয়সের কিছুটা হলেও ব্যবধান রাখা উচিৎ হবে। এক্ষেত্রে ব্যবধান বলতে শুধু আমাদের দেশেই নয়, এমনকি পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও স্বামীর বয়স স্ত্রীর থেকে বেশি হবে এমনটিই স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়।

স্ত্রী যদি কোনভাবে স্বামীর চেয়ে একদিনেরও বড় হয়, প্রতিবেশে সেটি একটি চাঞ্চল্যকর, রসালো আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়। এই যেমন বর্তমান প্রেক্ষাপটের কথাই চিন্তা করে দেখুন। সাবেক বিশ্বসুন্দরী ও বর্তমানে সমানতালে বলিউড-হলিউড দাপিয়ে বেড়ানো প্রিয়াঙ্কা চোপড়া যেই না ঘোষণা দিলেন যে তিনি গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছেন নিজের চেয়ে বছর দশেকের ছোট নিক জোনাসের সাথে, তখন থেকেই ঢি ঢি পড়ে গেল চতুর্দিকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মানুষের হাসি-তামাশা ও টিটকারিতে টেকা একপ্রকার দায় হয়ে পড়েছে। আজকের দিনে স্বামীর বয়স যে স্ত্রীর চেয়ে কম হতেই পারে, এই অতি স্বাভাবিক বাস্তবতাটিও তারা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু কী আর করা, এই সব মানুষের রসবোধ যে কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তা তো আমরা তাদেরকে অস্ট্রিয়া প্রবাসী সিফাতউল্লাহ সেফুদা, ক্রিকেটার নাসির হোসেনের কথিত প্রেমিকা সুবাহ প্রভৃতিকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মাতামাতি থেকেই আন্দাজ করে নিতে পারি।

তাই সে-সব কথা না হয় বাদই দিলাম। বরং আলাপ করা যাক বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর বয়স আসলেই খুব বড় কোন ভূমিকা রাখে কি না সে ব্যাপারে। অনেকেই হয়ত জেনে অবাক হবেন যে, বয়সের বিষয়টি আসলেই বিয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। আর যে ক্ষেত্রে সেটি সবচেয়ে বেশি তাৎপর্য বহন করে তা হলো গড় আয়ু নির্ধারণে।

প্রথমেই একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে, বিয়ে কিন্তু নারী-পুরুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ কথা বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত যে যেইসব নারী-পুরুষ বিয়ে না করে আজীবন সিঙ্গেল কাটিয়ে দেয়, তাদের চেয়ে বিবাহিত নারী-পুরুষের জীবন বেশ খানিকটা দীর্ঘ হয়ে থাকে। মূলত একাকীত্বই অবিবাহিত নারী-পুরুষকে দ্রুত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। তবে এবার আসা যাক বয়সের বিষয়টিতে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল বলছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি বেশ বড় একটা বয়সের ব্যবধান থাকে, তবে তা তাদের গড় আয়ুর ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে। একটি নারী যদি তার চেয়ে বয়সে ছোট কোন পুরুষকে বিয়ে করে এবং তাদের মধ্যকার বয়সের ব্যবধান অন্তত সাত বছর হয়ে থাকে, তবে ওই নারীর মৃত্যুহার শতকরা ২০ ভাগ বেড়ে যায়।

তবে শুধুমাত্র এই একটি তথ্য থেকেই যেন কেউ সিদ্ধান্তে পৌঁছে না যান যে তবে নারীদের উচিৎ বয়সে বড় পুরুষকেই বিয়ে করা। কারণ সেখানেও বিপদ আছে। স্বামীর বয়স যদি স্ত্রীর চেয়ে অন্তত পাঁচ বছর বেশি হয়, তাহলেও স্ত্রীর আয়ু উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। প্রায় বিশ লক্ষ ড্যানিশ দম্পতির উপর পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়ে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, একজন নারীর পক্ষে সবচেয়ে ভালো হয় যদি তিনি তার সমবয়সী কোন পুরুষকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। পুরুষদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রায় একই। কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীর চেয়ে সাত থেকে নয় বছরের বড় হয়ে থাকে, তবে তার মৃত্যুর হার, যে স্বামীর বয়স তার স্ত্রীর সমান, তার থেকে অন্তত ১১ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে।

একজন নারীর পক্ষে সবচেয়ে ভালো হয় যদি তিনি তার সমবয়সী কোন পুরুষকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় এখানে আরেকটি বিশেষ ব্যাপারে নজর এড়িয়ে গেলে চলবে না যে, কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় হয়, তাহলে সে স্বামীর চেয়ে বয়সে ছোট নারীদের থেকে কম দিন বাঁচে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গবেষকরা বলেছেন, কম বয়সী স্ত্রীদের জীবনে তার স্বামী ছাড়াও বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকে, যাদের সাথে তারা ভালো সময় কাটাতে পারে এবং নিজেদের মনের কথা শেয়ার করতে পারে।

যেমন আমাদের দেশে কোন নারী যদি যৌথ পরিবারে বিয়ে করে, তবে বিয়ের পর সে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ননদ বা সমবয়সী জা-দের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতে পারে। এছাড়া তার বিবাহ-পূর্ব জীবনেরও অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকে যাদের কাছে সে তার সব সুখ-দুঃখের কথা নির্দ্বিধায় খুলে বলতে পারে। কিন্তু স্ত্রীর বয়স যদি স্বামীর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে সাধারণ শ্বশুরবাড়িতে সমবয়সী বন্ধু কাউকে পাওয়ার সুযোগ সে হারায়। বিবাহ-পূর্ব তেমন কোন বন্ধুও তার জীবনে থাকে না।

তাই স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় স্ত্রীরা প্রবল একাকীত্ব ও মানসিক চাপের কারণে দ্রুত মারা যেতে পারে। এতক্ষণ তো কেবল আয়ুষ্কাল নিয়ে কথা বললাম। এবার দাম্পত্যজীবনের সুখ নিয়েও কথা বলা জরুরি, যার অভাবে সম্পর্কে বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রেও সমবয়সী স্বামী-স্ত্রীরাই সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করে থাকে।

গবেষণার ফলাফল জানাচ্ছে, সমবয়সী স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে ডিভোর্সের প্রবণতা সবচেয়ে কম দেখা যায়। স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য যদি এক বছর হয়, তাহলে তাদের মধ্যে ডিভোর্সের হার ১ শতাংশ বেড়ে যায় (সমবয়সী স্বামী-স্ত্রীদের তুলনায়)। যদি তাদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য পাঁচ বছর হয়, তাহলে ডিভোর্সের হার বেড়ে যায় ১৮ শতাংশ। আর তাদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য যদি ১০ বছরের হয়, তাহলে ডিভোর্সের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ শতাংশ। এছাড়াও বয়সের ব্যবধান ২০ বছর হলে ডিভোর্সের হার হয় ৯৫ শতাংশ, আর বয়সের ব্যবধান ৩০ বছর হলে তো ডিভোর্সের হার ১০০ শতাংশই ছাড়িয়ে যায়।

এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা প্রফেসর টেরা ম্যাককিনিশ বলেন, “যেসব পুরুষ তাদের চেয়ে বয়সে ছোট নারীকে বিয়ে করে তারা সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট থাকে, আর যেসব পুরুষ তাদের চেয়ে বয়সে বড় নারীকে বিয়ে করে তারা সবচেয়ে কম সন্তুষ্ট থাকে। এদিকে যেসব নারী তাদের চেয়ে বয়সে বড় পুরুষকে বিয়ে করে তারা কিছুটা কম অসন্তুষ্ট থাকে, আর যেসব নারী তাদের চেয়ে বয়সে ছোট পুরুষকে বিয়ে করে তারা বেশি অসন্তুষ্ট থাকে।”

তাহলে এমন কী উপায় রয়েছে যাতে করে স্বামী-স্ত্রী দুজনের পক্ষেই সমান সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব? এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ওয়াং শেং লি। তিনি বলেন, “সমবয়সী দম্পতিরাই পারে সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হতে। যেহেতু তারা উভয়েই নিজেদের ক্যারিয়ার ও সামগ্রিক জীবনের একই পর্যায়ে অবস্থান করে, তাই তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোও একই রকম হয়ে থাকে।”

সুতরাং একটি বিষয় এখানে দিনের আলোর মত পরিষ্কার, স্বামী বয়সে বড় হোক কিংবা স্ত্রী, দুইটির কোনটিতেই দাম্পত্যজীবন পুরোপুরি সুখী হতে পারে না, যেটি কেবল সমবয়সী স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্যজীবনেই দেখা যায়। তাই এতদিন ধরে যারা ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে ছিলেন যে সমবয়সী বিয়ে কখনও সুখের হয় না, এবার নিশ্চয়ই তাদের ভুল ধারণা ভাঙবে।

তবে দিনশেষে সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিয়ে এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেখানে অংশগ্রহণকারী নারী ও পুরুষের সিদ্ধান্তই মুখ্য ও চূড়ান্ত হওয়া উচিৎ। একটি ৩৫ বছরের পুরুষ যদি ২৫ বছরের নারীকে বিয়ে করে, তাতে যেমন সমাজের অন্যদের নাক গলানো উচিৎ নয়, তেমনি একটি ৩৫ বছরের নারীও যদি ২৫ বছরের কোন পুরুষকে বিয়ে করতে চায়, তাতেও আমাদের বাধা দেয়া তো নয়ই, এমনকি টিটকারি-মশকরা করাও গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যের সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখাতে শিখুন। সব বিষয় নিয়ে মজা করতে গিয়ে নিজেদেরকেই ছোট করবেন না।

সঠিক বয়সে বিয়ে নিয়ে যা বলছে ইসলাম

আমাদের সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, ছেলে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বিয়ে করতে পারবে না। আর মেয়ের বয়সও হতে হবে ১৮। যদিও আমাদের দেশের আইনানুযায়ী বিয়ের বয়স মেয়ে ১৮, ছেলে ২১ বছর। তবে বিবাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো বয়সের কথা ইসলাম বলে নি। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

ﻳَﺎﻣَﻌْﺸَﺮَ ﺍﻟﺸَّﺒَﺎﺏِ ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﻣِﻨْﻜُﻢُ ﺍﻟْﺒَﺎﺀَﺓَ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺰَﻭَّﺝْ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُﺃَﻏَﺾُّ ﻟِﻠْﺒَﺼَﺮِ ﻭَﺃَﺣْﺼَﻦُ ﻟِﻠْﻔَﺮْﺝِ ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻪِﺑِﺎﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻭِﺟَﺎﺀٌ

হে যুবসমাজ! তোমাদেরমধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহ হয় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা পালন করে। কেননা রোজা হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম। (বুখারী ৫০৬৫; মুসলিম ১৪০০)

উক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায়, কোনো ব্যক্তি সামর্থ্যবান হলেই বিয়ে করে নেয়া উচিত। আর যেহেতু ব্যক্তি হিসেবে শক্তি সামর্থ্য ভিন্ন হয়ে থাকে; অনেকে অল্প বয়সেই সামর্থ্যবান হয়ে যায়, অনেকের একটু সময় লাগে, তাই যৌক্তিকতার দাবী হল, এর জন্য বয়স ঠিক না করা। এজন্য ইসলামে বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা হয় নি।

তবে হ্যাঁ, ছেলে মেয়ে বিয়ের ক্ষেত্রে দেরি করা ঠিক নয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

من وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَلْيُحْسِنِ اسْمَهُ وَأَدَبَهُ فَإِذَا بَلَغَ فَلْيُزَوِّجْهُ فَإِنْ بَلَغَ وَلَمْ يُزَوِّجْهُ فَأَصَابَ إِثْمًا فَإِنَّمَا إثمه على أَبِيه

তোমাদের মাঝে যার কোনো (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়; যখন সে বালেগ অর্থাৎ সাবালক/সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিয়ে দেয়; যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয় তাহলে, সে কোনো পাপ করলে উক্ত পাপের দায়ভার তার পিতার উপর বর্তাবে। (বাইহাকি ৮১৪৫)

আর ছেলে মেয়ের বয়সের মাঝে বেশি পার্থক্য থাকা উচিত নয়; বরং বয়সের পার্থক্য কম থাকা উত্তম। এটা বুঝা যায় হজরত ফাতিমা (রাযি.) এর বিয়ের দিকে তাকালে। তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব হজরত আবু বকর (রাযি.) এবং হজরত উমর (রাযি.)-ও দিয়েছিলেন। যাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা ছিলেন উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের কাছে কম বয়সী ফাতিমা (রাযি.)-কে বিবাহ দেন নি। দিয়েছেন কাছাকাছি বয়স্ক হজরত আলী (রাযি.)-এর সঙ্গে। (মওসূআতু হায়াতুস সাহাবিয়্যাত ৬২১)

আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, হে যুব সম্প্রদায় তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে নেয়, কেননা তা চক্ষুকে আনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজতে রাখে। বোখারী, মুসলিম) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেন, যে যখন বান্দা বিবাহ করল,নিশ্চই সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করল এবং বাকি অর্ধেক সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করবে। মেশকাত শরীফ

আল্লাহ বলেন- وَأَنكِحُوا الْأَيَامَى مِنكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِن يَكُونُوا فُقَرَاء يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

বিয়ে করো,তোমায় প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আমি আল্লাহর। অভাবে আছো অভাব দূর করে দেব। আল্লাহ বলেন ধনী হতে চাও বিয়ে করো।

তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তায়ালার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়।

১। আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদকারী,

২। চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায়

৩। ওই বিবাহিত ব্যক্তি যে (বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়।

অল্প বয়সে বিয়ে করলে যে উপকারগুলো পাবেন-

১. যেনা ব্যাভিচার থেকে ফিরে থাকা যায়, যুবক বয়সেই আল্লাহ পাকের খুব প্রিয় হওয়া যায় এবং ইবাদতে স্বাদ পাওয়া যায় আজে বাজে চিন্তা থাকে না।

২. আপনি যদি বয়স ৩০ পার করে বিয়ে করেন, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার বয়সের কারণে আপনার মধ্যে যে গাম্ভীর্য চলে আসবে তার জন্য সম্পর্ক খুব বেশি ঘনিষ্ঠ ও মধুর হবে না, বরং ব্যাপারটি তখন এমন হবে যে বিয়ে করার কথা ছিল তাই বিয়ে করেছি, এ কারণেই আবেগ থাকতেই বিয়ে করা উত্তম।

৩. বেশি বয়সে বিয়ে করলে স্বামী স্ত্রী নিজেদের জন্য খুব বেশি সময় পান না। বরং বছর ঘুরতেই সন্তান দায়িত্ব এসে কাঁধে এসে পরে, আর একবার সন্তান হয়ে গেল দু’জনে একান্তে কাটানোর মতো সময় হয়ে উঠে না, তাই অল্প বয়সে বিয়ে করলে সঙ্গীর সঙ্গে একান্ত কাটানোর মতো অনেকটা সময় পাওয়া যায়, যার ফলে সম্পর্ক ভালো ও মধুর থাকে।

৪. অল্প বয়সে বিয়ে করলে স্বামী স্ত্রী ২ জনে মিলে জীবনের সবকিছু ভাগাভাগি করে নেয়া যায় এবং প্রত্যেকের মানসিক ও কম অনুবভ হয়।

৫. মানুষের গড় আয়ু কিন্তু কমছে, আর আপনি দেরীতে বিয়ে করলে সন্তান মানুষ করার বিষয়টাও পিছিয়ে যাবে এবং আপনার মানসিকতা ও কিন্তু দিন দিন নষ্ট হতে থাকবে, তাই একটু কম বয়সে বিয়ে করলে সন্তানের জন্য খুব ভালো পিতা উদাহরণ হতে পারবেন।

সফল বিয়ের জন্য স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য কত হবে?

বিয়ের জন্য বয়সের নারী-পুরুষের বয়সের ব্যবধানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেকের ক্ষেত্রে দুই বছরের ব্যবধানে সম্পর্ক মধুর হয় আবার অনেকের তা হয় ১০ বছরের ব্যবধানে। বেশিরভাগ নারীর পছন্দ তার জীবনসঙ্গী তার চেয়ে অল্প কয়েক বছরের বড় হোক। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বয়সের উপযুক্ত ব্যবধান সম্পর্ক ভালো করে তোলে।

আবার কয়েকজনের  ক্ষেত্রে তা অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নারী-পুরুষের জন্য বয়সের ব্যবধানটা কত হওয়া জরুরি চলুন জেনে নেওয়া যাক।

৫-৭ বছরের ব্যবধান:

বয়সের এমন  ব্যবধান থাকলে দম্পতিদের মধ্যে ঝগড়া, বিবাদ,ভুল বোঝাবুঝি কম হয়। দুজনের মধ্যে একজন যদি পরিণত বয়সের হয় তবে সে সম্পর্ককে অটুটভাবে ধরে রাখে। বয়সের এই ব্যবধানকে বিয়ের জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়। কারণ এতে করে একে অপরকে খুব কাছে থেকে বোঝা সম্ভব হয়।  

১০ বছরের ব্যবধান:

অনেক ক্ষেত্রে ১০ বছর বয়সের ব্যবধানকে আদর্শ মনে করা হয় যদি দুজনের মধ্যে ভালোবাসা থাকে। যখন তারা নিজেদের জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ঠিক করে নেবে তখন এই ১০ বছরের ব্যবধান কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবে না।   তবে অনেক ক্ষেত্রে এমন বয়সের ব্যবধানে স্ত্রী স্বামীর ওপরে কোন কথা বলতে পারে না। সেক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।

২০ বছরের ব্যবধান:

আপাতদৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই বয়সের ব্যবধান আদর্শ নয়। যদিও অনেক বিখ্যাত দম্পতি আছেন যাদের বয়সের ব্যবধান ২০ বছরের বেশি। এই ব্যবধানে  লক্ষ্য, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং মতামতের ব্যাপক পরিবর্তন হবে। সব থেকে বড় সমস্যা হতে পারে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে। বয়স্ক সঙ্গী দ্রুত সন্তান নিতে চাইবে তবে সেক্ষেত্রে বয়সে কম সঙ্গী আগ্রহী হবে না। তাদের চিন্তাধারার পার্থক্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

বয়সের ব্যবধান কতটা প্রভাব ফেলে:

বয়সের ব্যবধান অনেকটাই প্রভাব ফেলে। কারণ এতে মতামতের বিশাল পার্থক্য থাকে। তবে বর্তমান বিশ্ব প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। বিবাহ হয়ে গেছে ক্ষণস্থায়ী। সাধারণভাবে বয়সের ব্যবধান যত বেশি হয় দম্পতিরা ততো বেশি সমস্যার মুখোমুখি হয়। এজন্য বয়সের ব্যবধান কম হলেই তাকে আদর্শ ধরা হয়।  

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment