বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতি সাধনে মিশরীয় ও সিন্ধুসভ্যতার অবদান সংক্রান্ত তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করে উভয় সভ্যতার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।
মিশরীয় সভ্যতার অবিশ্বাস্য অবদান
পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় মহাদেশের নাম আফ্রিকা। এই আফ্রিকাতেই এমন একটি দেশ আছে যেখানে রচিত হয়েছিলো অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা। মিশরীয় সভ্যতা।
মজার ব্যাপার হলো, মিশরীয় সভ্যতার টুকটাক বিষয়গুলো আমরা ছোটবেলা থেকেই জানি। যেমন- কারো লেখার ভাষা খুব কঠিন মনে হলে আমরা বলি, এটা কি হায়ারোগ্লিফিক ভাষা নাকি!
তেমনি এক্স-মেন এবং আরও অন্যান্য বিখ্যাত মুভির কল্যাণে পিরামিড, মমির ব্যাপারেও সবারই কিছুটা ধারণা আছে। আবার মুসা (আ) ও ফেরাউনের ঘটনা থেকে ফারাওদের কথাও আমরা কমবেশি জানি।
তাহলে মিশরীয় সভ্যতা নিয়ে কংক্রিট ধারণা পেতে হলে আমাদের জানা, এই বিচ্ছিন্ন বিষয়গুলোকে জোড়া দিলেই চলবে।
মিশরীয় সভ্যতায় নীল নদের অবদান
মধ্য আফ্রিকার পাহাড় থেকে জন্ম হলো নীল নদের। এই পাহাড়ী নদ এঁকেবেঁকে নেমেছে উত্তরে, মিশেছে ভূমধ্যসাগরে। ভালো ক্রিকেট খেলা দল হিসেবে সাউথ আফ্রিকাকে তো আমরা চিনি। মিশরকেও এমনিভাবে সাউথ ও নর্থে ভাগ করা হয়েছিলো। নীল নদের উৎস হলো সাউথ বা দক্ষিণ মিশরে।
প্রাচীন মিশরে নগররাষ্ট্রের উদ্ভব ও ফারাওয়ের যুগের সূচনা
মিশরের এই রাজাদের বলা হতো ফারাও। ‘পের-অ’ শব্দটি থেকে ফারাও শব্দটি এসেছে। ‘পের-অ’ শব্দের অর্থ ‘বড় বাড়ি’ বা ’রাজার বাড়ি’। ফারাও নির্বাচন হতো বংশ পরম্পরায়। অর্থাৎ রাজা মারা গেলে রাজার ছেলে হতেন নতুন রাজা।
ফারাওদের সময়ে মিশর বেশ উন্নত হয়ে উঠে। মিশরের উর্বর জমিতে পেঁয়াজ, গমসহ প্রচুর ফসল উৎপন্ন হতো। ব্যবসায়ীরা আমদানী -রপ্তানী করতেন, বণিকেরা নানা দেশের সাথে বাণিজ্য করতেন। মিশরের বিখ্যাত ফারাওরা হলেন খুফু, তুতেনখামেন, রামেসেস, নেফারতিতি প্রমুখ।
মমি ও পিরামিডের কথা
পিরামিড তৈরির অনেক আগেই মমি বানানো শিখেছিলো মিশরীয়রা। মৃতদেহ যাতে না পচে যায় সে কারণে মিশরের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বেরিয়ে এল নতুন পদ্ধতি।
মৃতদেহের পচন ঠেকানোর জন্য শরীরের পচনশীল অংশ সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রথমে মাথার খুলি অপারেশন করে ভেতর থেকে মগজ বের করে আনা হতাে। একইভাবে পেট কেটে বের করা হতাে নাড়িভুড়ি। সব পচনশীল অংশ সরিয়ে বাকি থাকতো হাড়, মাংস আর চামড়া পেঁচানাে দেহ। এর ভেতরে ভরে দেওয়া হতাে কাঠের গুঁড়াে বা পাতলা কাপড়। এরপরে মৃতদেহটি এক ধরণের তরল ওষুধে ভিজিয়ে রাখা হতো।
প্রাচীন মিশরের ধর্ম
প্রাচীনকালে ধর্ম ছিলো মিশরীয়দের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা বিশাল আকারের পিরামিড বানিয়েছে,, মমি বানিয়েছে, ভাস্কর্য গড়েছে,পিরামিডের দেয়ালে ছবি এঁকেছে , ছবি এঁকে এঁকে এক ধরনের লেখা উদ্ভব করেছে- এ সবকিছুই করেছে ধর্মের অনুপ্রেরণায় ।
লেখালেখির সূচনা
প্রথম দিকে মিশরের মানুষেরা পাথর আর কাঠ খােদাই করে লিখত। এসবের গায়ে অতি প্রয়ােজনীয় দলিলপত্রই শুধু লেখা হতাে। কবিতা, গান, ধর্মকথা—এসব লেখার জন্য মিশরীয়রা খুঁজতে থাকে লেখার জন্য সহজ কোনাে উপাদান। নীল নদের তীরে জলাভূমিতে সাইপেরাস প্যাপিরাস নামে একধরনের নলখাগড়া-জাতীয় উদ্ভিদ জন্মাত। এই গাছ থেকেই কাগজ তৈরি করলো মিশরের মানুষেরা।
বিজ্ঞান চর্চায় মিশরীয়দের অবিশ্বাস্য অবদান
মিশরীয়রাই প্রথম পাটিগণিত ও জ্যামিতির উদ্ভাবন করেছিল। তবে তারা দশমিকের হিসাব জানলেও শূন্যের ব্যবহার তখনাে করতে শেখেনি। পিরামিড নির্মাণ করতে গিয়ে জ্যামিতিচর্চার দরকার পড়ে।
মিশরের প্রাচীনতম চিকিৎসকের নাম ইমহােতেপ। তিনি ছিলেন ফারাও জোসারের মন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও স্থপতিও ছিলেন। এক সমাধিক্ষেত্রে একটি কঙ্কালের চোয়ালের হাড় ও দাঁত পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সে যুগের দাঁতের চিকিৎসক এখানে অপারেশন করেছিলেন।
সিন্ধু সভ্যতার অবিশ্বাস্য অবদান
নগর পরিকল্পনা
হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো প্রায় একই পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছিলো। এ সভ্যতায় নগররাষ্ট্র দুটি অংশে বিভক্ত ছিলো। এক অংশে সাধারণ নাগরিকরা বসবাস করতো এবং অন্য অংশতি ছিলো দেয়াল দিয়ে ঘেরা। এ অংশটি সমতল ক্ষেত্র থেকে কিছুটা উঁচুতে ছিলো। ধারণা করা হয়, সম্ভ্রান্ত রাজপুরুষ এবং পুরোহিতরা এ অংশটিতে বসবাস করতেন। নগরীর বাড়িগুলো ছিলো পোড়ামাটির ইট দিয়ে তৈরি। নগরীর ভেতর ছিলো পাকা রাস্তা। প্রধান রাস্তাটি ছিলো ৩৫ ফুট প্রশস্ত। রাস্তার ধারে ছিলো সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্ট। ময়লা ও পানি নিষ্কাশনের জন্য মাটির নিচে ড্রেন বসানো হয়েছিলো। সিন্ধু সভ্যতায় যে আধুনিক নগরব্যবস্থা ছিলো অন্য কোনো অন্য কোনো প্রাচীন সভ্যতায় তেমনটা দেখা যায়নি।
স্থাপত্য
সিন্ধু সভ্যতায় চমৎকার সব নিদর্শন রয়েছে। মহেঞ্জোদারোর বৃহৎ মিলনায়তন ছিলো একটি চমৎকার স্থাপত্য। ধারণা করা হয়, এটি ছিলো একটি সভাগৃহ। ৮০ ফুট যায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছিলো এ মিলনায়তনটি। এতে ছিলো সারিবাঁধা বেঞ্চ আর সামনে মঞ্চ। এছাড়াও ২৩০*৭৮ ফুট আয়তনের একটি প্রাসাদ পাওয়া গেছে মহেঞ্জোদারোতে। ধারণা করা হয় এ প্রাশাদে প্রশাসক শ্রেণির বসবাস ছিলো। মহেঞ্জোদারোর আরেকটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য তাদের বৃহৎ স্নানাগার। বর্গাকার এই ঘরটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছিলো ১৮০ ফুট করে। ঘরের কেন্দ্রে ছিলো সাঁতার কাটার উপযোগী প্রকাণ্ড চৌবাচ্চা। স্নানাগারের চারপাশে ছিলো ঘোরানো বারান্দা। স্নানাগারের মূল কক্ষটি ছিলো দোতলা।
ধর্ম
ধারণা করা হয়, সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অনুসারী ছিলেন। এ সভ্যতায় কোনো ধর্মীয় মন্দির বা ভবন ছিলো না। যদি সেখানে কোনো মন্দির থেকেও থাকে তা এখনো পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। ঐতিহাসিকদের মতে, সিন্ধু সভ্যতায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিসহ ষাঁড়, কুমির, সাপ ও গাছের পূজা করা হতো।
ভাস্কর্য
সিন্ধু সভ্যতায় দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য হতো। পাথর ও ব্রোঞ্জের প্রচুর ভাস্কর্য পাওয়া গেছে এ সভ্যতায়। চুনাপাথরের তৈরি একটি মাথা ও মুখমণ্ডল পাওয়া গেছে। পাথর কেটে চমৎকার ঢেউ খেলানো চুল তৈরি করা হয়েছে সেটিতে। ঠোঁট আর কান তৈরি করা হয়েছে অত্যান্ত নিখুঁতভাবে। মানুষের ভাস্কর্য ছাড়াও বেশ কিছু পশুর ভাস্কর্য পাওয়া গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, সে সময়কার ভাস্করগণ অত্যান্ত দক্ষতার সাথে নিপুণ হাতে ভাস্কর্য তৈরি করতে পারতেন।
পরিমাপ পদ্ধতি
পরিমাপ পদ্ধতি উদ্ভাবন সিন্ধু সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। পণ্য ওজনের জন্য নগরবাসীরা বিভিন্ন বাটখারা ব্যাবহার করতো। এসব বাটখারা শক্ত পাথর দিয়ে তৈরি করা হতো। বড় বড় দ্রব্য ওজনের জন্য ব্রোঞ্জের দাঁড়িপাল্লা ব্যবহৃত হতো। দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য তারা স্কেল ব্যবহার করতো। ব্যাবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ সভ্যতার অধিবাসীরা এসব উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করতো।
সিলমোহর ও লিপি
সিন্ধু সভ্যতায় সিলমোহরের ব্যাপক ব্যাবহার ছিলো। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে ২,৫০০টি সিলমোহর পাওয়া গেছে। বাণিজ্য ও ধর্মীয় কাজে এ সমস্ত সিলমোহর ব্যাবহার করা হতো বলে ধারণা করা হয়। পাথরের তৈরি এ সিলমোহরগুলোর অধিকাংশই চারকোণাকৃতির। সিলমোহরগুলোতে ষাঁড়, মহিষ ইত্যাদি পশুর প্রতিকৃতি ছিলো। তাছাড়া ছিলো বিভিন্ন ধরনের চিহ্ন। এ চিহ্নগুলোকে একধরনের লিপি বলে মনে করা হয়। কিন্তু সিন্ধু সভ্যতায় যে লিপি ব্যবহৃত হতো তা আজও পড়া সম্ভব হয়নি।
অর্থনীতি
কৃষি ছিলো সিন্ধু সভ্যতার মানুষদের প্রধান জীবিকা। গম ও যব ছিলো তাদের প্রধান শস্য। এছাড়া খেজুর, বদরী, আঙ্গুর এবং আনারসও উৎপাদিত হতো। পাশাপাশি কার্পাসের চাষ ভালো করা হতো। এ অঞ্চলের মাটি খুবই উর্বর ছিলো এবং সেচ ব্যবস্থজা ছিলো দেশ উন্নত। কৃষিক্ষেত্রে সিন্ধু সভ্যতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছিলো সে সময়কার কৃষি যন্ত্রপাতি। লাঙল আবিষ্কারের ফলে উৎপাদন ক্ষমতার ব্যপক উন্নতি সাধিত হয়।সিন্ধু সভ্যতার মানুষরা বাণিজ্য ক্ষেত্রেও বেশ অগ্রসর ছিলো। সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশের সাথে তাদের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিলো। তারা কাঠ, হাতির দাঁত ও দাঁতের তৈরি চিরুনি, সুতিবস্ত্র, তামা ইত্যাদি রপ্তানি করতো।
শিল্পকর্ম
সিন্ধু সভ্যতার সময়ের শিল্পকর্মের মধ্যে হাতির দাঁত ও হাড়ের তৈরি চিরুনি ও সুচ, তামা ও ব্রোঞ্জের তৈরি ছুরি, ক্ষুর, কুঠার, কাস্তে ইত্যাদি পাওয়া গেছে পোড়ামাটির তৈরি মানুষের মূর্তি, পুতুল, গরু, মহিষ, কুকুর, ভেড়া, কুমোরের চাক ইত্যাদি।
- ইসলামিক স্টাডিজ ৫ম পত্র সাজেশন ডিগ্রি ৩য় বর্ষ , degree 3rd year islamic studies 5th paper suggestion,ডিগ্রি ৩য় বর্ষ ইসলামিক স্টাডিজ ৫ম পত্র সাজেশন, ডিগ্রী ৩য় বর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ ৫ম পত্র সাজেশন PDF Download
- মাধ্যমিক ৯ম/নবম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২,৯ম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২, class 9 politics and citizenship solution (6th week) 2022, class 9 answer 2022 [6th week politics and citizenship solution 2022]
- মাধ্যমিক ৯ম/নবম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২,৯ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২, class 9 bangladesh and world identity solution (6th week) 2022
- মাধ্যমিক ৯ম/নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২,৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২, class 9 science solution (6th week) 2022, class 9 answer 2022 [6th week science solution 2022]
- মাধ্যমিক ৯ম/নবম শ্রেণির ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২,৯ম শ্রেণির ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২, class 9 finance and banking solution (6th week) 2022
- মাধ্যমিক ৯ম/নবম শ্রেণির জীববিজ্ঞান ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২,৯ম শ্রেণির জীববিজ্ঞান ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২, class 9 biology solution (6th week) 2022, class 9 answer 2022 [6th week biology solution 2022]