প্রশ্ন সমাধান: বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করুন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ,আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের দুই দশক
বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের। বিভিন্ন দেশে শান্তি রক্ষা করতে অন্য দেশের নিরাপত্তা বাহিনী পাঠায় জাতিসংঘ। এর প্রথম মিশন ছিল ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে ১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরতি পালন ও বজায় রাখা। তারপর থেকে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৩টি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে, ১৭টি আজও অব্যাহত রয়েছে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৯৮৮ সালে ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সে থেকে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল পথচলা ।
পরবর্তী কয়েক বছর বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী বেশ সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে গেছে। সে সময় অর্থাৎ ১৯৯৩-৯৪ সালে সবচেয়ে আলোচিত রুয়ান্ডা, সোমালিয়া ও বসনিয়া- এ তিনটি শান্তি মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলোচনার কেন্দ্রমূলে আসে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, ‘মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাদের ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মহিলা পুলিশ দল সোচ্চার রয়েছেন সামাজিক-সম্প্রীতি সুসংহত করতে। আমি কোনো মিশনে গেলেই উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের সেনাদের কথা বলি।’
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ এক গর্বিত সহযোগী। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অর্জন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থানটি ধরে রাখা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর মজ্জা বা সমকক্ষ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানের ৩৩ বছর ধরে সুনাম, ভালোবাসা, কৃতিত্ব ও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনী। আঘাত, সংঘাত, ভয়ভীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা শান্তির বার্তা নিয়ে বিশ্বমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর ।
আরো ও সাজেশন:-
১। শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার মাধ্যমে আয় বেড়েছে এবং সেই সাথে বেড়েছে দক্ষতাঃ
বর্তমানে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আট হাজারের বেশি সদস্য বিশ্বের ১২টি দেশ-আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, সুদান, কঙ্গো, দারফুর, ওয়েস্টার্ন সাহারা, মালি ও লেবাননে জাতিসংঘ শান্তি মিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। এসব দেশে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জামও ব্যবহৃত হচ্ছে। সেগুলোর ভাড়া বাবদ বাংলাদেশ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পাচ্ছে। বাংলাদেশের এমন অনেক সরঞ্জাম আছে যেগুলোর ভাড়া পেতে পেতে কেনা দাম অনেক আগেই উঠে গেছে। কোনো কোনো সামরিক সরঞ্জাম দুই-তিন বছর মিশনে থাকলেই কেনা দাম উঠে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম ইউএন শান্তি মিশনে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি ইউএন মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত প্রশিক্ষণটা হয়ে যাচ্ছে। সামরিক সরঞ্জামগুলো সচল থাকছে। দেশে এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ নিতে হলে কোটি কোটি টাকার জ্বালানি ব্যবহারের প্রয়োজন হতো। সরঞ্জামগুলো সচল রাখতে হলেও বিপুল পরিমাণ খরচের ব্যাপার ছিল। ইউএন এ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অন্তর্ভুক্তির ফলে বহুমাত্রিক সুবিধা লাভ করছে। বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষায় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বেতন-ভাতা ও সরঞ্জাম ভাড়া বাবদ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে বাংলাদেশ।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
২। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সামরিক শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে সর্বোচ্চ অবস্থানটি ধরে রেখেছেঃ
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সামরিক শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে সর্বোচ্চ অবস্থানটি ধরে রেখেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ৩৬ মাসের মধ্যে ২০ মাসই বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। এ সময় বাংলাদেশের আট হাজার ৬১৯ জন পুরুষ ও ২২৪ জন নারী মিলিয়ে আট হাজার ৮৪৩ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী প্রায় দুই যুগ ধরে বিশ্বের ৫৪টি মিশনে ৩৮টি দেশে শান্তিরক্ষায় অনন্য ভূমিকা রেখে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা দেশের গৌরব বাড়িয়েছেন। এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন এক লাখ ১৮ হাজার ৯৮৫ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। বর্তমানে ১২টি দেশ-আইভরিকোস্ট, লাইবেরিয়া, সুদান, ডিআর কঙ্গো,পশ্চিম সাহারা, হাইতি, দক্ষিণ সুদান এবং লেবাননে মোট আট হাজার ৯৩৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োজিত।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
৩। আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীঃ
পুরো দেশজুড়ে অস্ত্রধারী বিদ্রোহী। মরাণাস্ত্রগুলোও তাক করা মুখোমুখি। মানুষ মরে পাখির মতো। এরই মধ্যেই আবার শান্তির জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে একটি সামরিক বাহিনী। আর সেই সামরিক বাহিনীতে আছে, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জনহিতকর কাজও করে চলছে। চিকিৎসার ন্যুনতম কোন সুযোগ সুবিধা নেই এখানের স্থানীয় বসবাসকারীদের জন্য। চিকিৎসার মতো জরুরী প্রয়োজন মেটাতে না পারলে অস্ত্র দিয়ে শান্তি আসে না- এটা উপলব্ধি করেছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা । তাই এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা দেয়াকে একটা নিয়মিত কাজ হিসেবে নিয়েছে তারা। কঙ্গোর পাহাড়ে, জঙ্গলে প্রায় আদিমকালের মতো বসবাস করতে থাকা মানুষদের বিচিত্র সব রোগ হয়। ডাক্তার নিশ্চিত তারা জটিল রোগে আক্রান্ত। মৃত্যুও হয়তো নিশ্চিত। কিন্তু শেষ চেষ্টা করার সুযোগটাও তাদের আগে ছিল না। মেডিক্যাল কোরের সদস্যরা মিশনে নিয়োজিত সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তিবর্গের চিকিৎসা ছাড়াও ক্যাম্পের হাসপাতাল এবং বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে স্থানীয় জনসাধারণকে বিনামূল্যে এসব মানুষের চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধ প্রদান করে যাচ্ছে। তারা মরণব্যাধি এইডস ও ম্যালেরিয়া সম্পর্কেও স্থানীয়দের সচেতন করে তোলেন। জনকল্যাণমূলক আরও নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্থানীয়দের হৃদয় মন জয় করে নিয়েছে বাংলাদেশী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের সাফল্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীদের দ্বারা উচ্চ প্রশংসিত। এ প্রশংসা সশস্ত্র বাহিনী ও দেশের জন্য অত্যতম গৌরবের।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- ব্যবসায়িক ঝুকি বলতে কি বুঝায় উদাহরণ সহ আলোচনা করো
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy