বীমা কেন গুরুত্বপূর্ণ?, বীমা কি?,বীমার সুবিধাগুলি কীভাবে কাজ করে?,আপনার কী পরিমাণ বীমা নিরাপত্তা প্রয়োজন?,বাংলাদেশে কী কী ধরণের বীমা প্রকল্প রয়েছে?
আপনার জীবন ও জীবিকা নির্বাহের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। অতএব, সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটির জন্য, অর্থাৎ আপনার জীবনের জন্য একটি বীমা নিরাপত্তা নিয়ে রাখাই বিচক্ষণতার কাজ। বিয়ে করা, পরিবার গড়ে তোলা বা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের যত্ন নেওয়ার মতো বড় বড় দায়িত্বগুলো যতই বাড়তে থাকবে, আপনার বীমা করার প্রয়োজনীয়তাও ততই বৃদ্ধি পাবে। কারণ, বীমা আপনার প্রিয়জনদের জন্য এমন একটি আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে, যা প্রয়োজনের সময়ে আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের সহায়ক হয়ে দাঁড়ায়।
বীমা কি?
সাধারণ ধারণা অনুযায়ী, বীমা একটি সহজ পদ্ধতি যাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে সহজ ভাষায় বীমা মানে কোন সংস্থার সাথে এমন একটি চুক্তি, যা আপনার অসুস্থতা বা অকাল মৃত্যুতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থাকে। কিছু বীমা পলিসি যেমন, আপনাকে জীবিত থাকাকালীন সুবিধাও প্রদান করে। এক্ষেত্রে, আপনি দুইভাবে আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন; আপনার জীবনে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনায় অথবা আপনার অবসর জীবনের আয় হিসেবে।
সাধারণত, পলিসিগ্রাহককে তার কোন নির্দিষ্ট ঝুঁকি থেকে সুরক্ষার বিনিময় হিসেবে বীমা কোম্পানিকে একটি ফি প্রদান করতে হয়, যা প্রিমিয়াম নামে পরিচিত। গ্রাহকের প্রয়োজন অনুসারে এই ফি বিভিন্ন মেয়াদে প্রদান করা যেতে পারে , যেমন- বার্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক, ত্রৈমাসিক বা মাসিক । কিছু পলিসিতে আপনি কেবল একবার প্রিমিয়াম প্রদান করেই জীবনবিমা সুবিধা পাবেন। যেমন, মেটলাইফের প্রিমিয়ামের পরিমাণগুলো বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন, বয়স, লিঙ্গ, পূর্ববর্তী চিকিৎসা ইতিহাস , অথবা বেছে নেয়া পলিসিটির শর্তাবলি ইত্যাদি।
বীমার সুবিধাগুলি কীভাবে কাজ করে?
কোন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অপ্রত্যাশিত মৃত্যু হলে যে আর্থিক ক্ষতি সাধন হয় তা একটি বীমা পরিকল্পনার দ্বারা অনেকাংশে পূরণ করা যায়। পরিবারের বাকি সদস্যরা বীমার এই অর্থ দিয়ে তাদের হোম লোন বা অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন অথবা সন্তানের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে পারবেন। কিছু বীমা পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সংরক্ষণেও সহায়তা করে থাকে যা আপনার অবসরকালীন সময়ের চাহিদাগুলো পূরণে নিয়মিত আয়ের সুবিধা প্রদান করবে। অর্থাৎ, যে সকল বাংলাদেশীরা তাদের ভবিষ্যতের আর্থিক অবস্থা সুরক্ষিত রাখতে চান, বীমা তাদের জন্যে অনেক চমকপ্রদ সুবিধা প্রদান করতে পারে।
আপনার কী পরিমাণ বীমা নিরাপত্তা প্রয়োজন?
আপনি কোন ধরণের বীমা পলিসি বাছাই করবেন তা অনেকটাই নির্ভর করে আপনার পরিজনদের কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে তার উপর। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে যৌক্তিক প্রশ্নটি হচ্ছে- আপনার কত টাকার বীমা নিরাপত্তা প্রয়োজন হতে পারে? এই সংখ্যাটি নির্ধারণের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি চলিত নিয়মটি হল- আপনার বর্তমান বার্ষিক আয়ের কমপক্ষে ১০ গুণ পরিমাণের বীমা নিরাপত্তা নেওয়া। ভিন্ন ভিন্ন পলিসির জটিলতা বুঝতে পারা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা পলিসিটি বাছাই করার কাজটি বেশ কষ্টসাধ্য হতে পারে। বাংলাদেশে আপনি যে সকল বীমা প্রকল্প কিনতে পারেন, তার একটি বিস্তারিত ধারণা নিচে দেওয়া হলো।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
বাংলাদেশে কী কী ধরণের বীমা প্রকল্প রয়েছে?
- সঞ্চয় ও বিনিয়োগ: কিছু নির্দিষ্ট জীবনবীমা পলিসি সুরক্ষা এবং বিনিয়োগের দ্বিমুখী সুবিধা দেয়। আপনার প্রিমিয়ামের একটি অংশ বীমা নিরাপত্তা হিসাবে ব্যবহৃত হয়, বাকি অংশটি ইক্যুইটি, ঋণ বা দুটির সংমিশ্রণে বিনিয়োগ করা হয়। এই ব্যবস্থা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এবং আকস্মিক অসুস্থতায় আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে। আপনার বিনিয়োগের উদ্দেশ্য এবং ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে তহবিলগুলিতে বিনিয়োগ করলে, এ থেকে আপনি সর্বোচ্চ উপার্জন করতে পারবেন। আপনার প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে মেটলাইফে এরূপ অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। এসকল
- তাকাফুলঃ তাকফুল বীমা হলো ইসলামী শরিয়াহ এবং পারস্পরিক সহায়তা ভিত্তিক একটি প্রকল্প যা নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণকারীদের আর্থিক সহায়তা এবং সহযোগিতা প্রদান করে। এজন্য, অংশগ্রহনকারীরা নিজেদের সম্মতিতে এই সাধারণ তহবিলে অনুদান প্রদান করেন। এই ধরনের বীমার ক্ষেত্রে, বীমা কোম্পানি শুধুমাত্র শরিয়াহসম্মত মাধ্যমেই অবদানসমূহ বিনিয়োগ করে থাকে।যেমন, মেটলাইফের
- স্বাস্থ্য বীমাঃ এই পরিকল্পনাগুলি জরুরী চিকিৎসার সময়ে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে আর্থিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে। স্বাস্থ্য বীমা নিরাপত্তা থাকলে আপনি আপনার সঞ্চয় না ভেঙেই সবচেয়ে ভালো মানের চিকিৎসা সেবাটি নিশ্চিত করতে পারবেন। আপনার হয়ে বীমা কোম্পানি হয় আপনাকে ক্যাশলেস চিকিৎসা গ্রহণে সহায়তা করবে অথবা আপনার কোন অসুস্থতায় হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ পরিশোধ করবে।
- শিক্ষাঃ শিক্ষার ব্যয় প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। তবে আগে থেকেই আপনার সন্তানের শিক্ষার জন্য একটি ব্যয়-পরিকল্পনা করে রেখে, তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে পারেন। শিক্ষা বীমা পলিসি তাদের উচ্চশিক্ষার ব্যয় নিরসনে একটি এককালীন অর্থ প্রদান করে। আপনার সন্তান চাইলে, মেয়াদপূর্তির পর এই অর্থ শিক্ষা ব্যতীত অন্যান্য খাতেও ব্যবহার করতে পারবে। মেটলাইফের – এই পলিসির আরেকটি মূল সুবিধা হল, পলিসির মেয়াদকালীন সময়ে আপনার মৃত্যু হলে, আপনার সন্তান পলিসি থেকে একটি মাসিক অর্থ গ্রহণ করবে এবং ভবিষ্যতের সমস্ত প্রিমিয়াম প্রদান মওকুফ করে দেয়া হবে।
- অবসর জীবন পরিকল্পনাঃ এই বীমা পরিকল্পনায় আপনি দীর্ঘ সময় ধরে সঞ্চয় জমা করতে পারবেন, যা আপনার জীবনের সোনালী দিনগুলিতে আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রদান করবে। অবসর জীবন পরিকল্পনায়, বীমাকারীকে অবসর গ্রহণের পূর্বে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অবদান প্রদান করতে হয়। পরবর্তীতে, জমানো এই অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর বীমাকারীকে পেনশন বা অ্যানুইটি হিসেবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
- গ্রূপ বীমা : ব্যাংকাস্যুরেন্স পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এই ধরণের বীমা পলিসিতে কর্মকর্তা বা গ্রাহকদের অফার দেওয়ার জন্য নিয়োগকারীদেরকে প্রমিত নিরাপত্তা ও প্রতিযোগিতামূলক প্রিমিয়াম রেট প্রদান করা হয়। নিয়োগকর্তারা সাধারণত কর্মকর্তাদের দুটি বীমার অপশন প্রস্তাব করতে পারেন। একটি হচ্ছে- কর্মকর্তাদের বেনিফিট প্যাকেজে বিনামূল্যে অন্তর্ভুক্ত করা অথবা, গ্রূপ জীবনবিমা প্যাকেজ যা একজন কর্মকর্তা নিজেই কিনতে পারেন। মেটলাইফের -এর মতো গ্রূপ বীমাগুলো যে সকল সুবিধা যে প্রদান করে, তা হল :- মৃত্যু ও দুর্ঘটনাজনিত অক্ষমতায় কর্মকর্তা ও তার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা এবং স্বাস্থ্য বীমা ও জীবন বীমা প্রদান করা।
জীবন এতটাই অনিশ্চিত যে ভবিষ্যতে হতে পারে এমন কিছু আগে থেকেই আন্দাজ করে রাখা প্রায় অসম্ভব। বীমা এমন একটি পদ্ধতি যা আপনাকে আস্থার সাথে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করে। যত কম বয়সে আপনি পলিসি ক্রয় করবেন, আপনাকে তত কম প্রিমিয়াম প্রদান করতে হবে। একটি ছোট পলিসিও কঠিন সময়ে আপনার প্রিয়জনদেরকে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। এমনকি ঋণ পরিশোধ করা, চলমান জীবনমানের ব্যয় বহন করা এবং আপনার সন্তানের জন্য উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে সঞ্চয় করাও সম্ভব হয়ে উঠে। সঠিক বীমা নিরাপত্তাটি করা থাকলে কঠিন সময়গুলোতে আপনার আর্থিক অনিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তিত হতে হয় না। ফলে আপনি তখন দরকারী বিষয়গুলোতে ঠিকমতো মনোনিবেশ করতে পারবেন।