বুড়িকে মা বলে ডাকত কে? ,‘স্নেহের দান এমন করা ঠিক হয়নি’-কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোন গ্রামে?,বুড়ি কেন দমে গেলেন? ,বুড়ি কী কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিল?

বিষয়: বুড়িকে মা বলে ডাকত কে? ,‘স্নেহের দান এমন করা ঠিক হয়নি’-কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোন গ্রামে?,বুড়ি কেন দমে গেলেন? ,বুড়ি কী কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিল?

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ 

কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন দিন মজুর কেরামত। হঠাৎ দেখতে পান মৃতপ্রায় একটি শিশু পথের ধারে পড়ে আছে। পরম যত্নে তিনি শিশুটিকে ঘরে তুলে আনেন। নিজের ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাবের সংসারে স্ত্রী প্রথমে খানিকটা আপত্তি করলেও শিশুটির অবস্থা দেখে তিনিও বুকে জড়িয়ে ধরেন-বড় করতে থাকেন নিজের সন্তান পরিচয়ে।

ক. বুড়িকে মা বলে ডাকত কে? 

খ. ‘স্নেহের দান এমন করা ঠিক হয়নি’-কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? 

গ. কেরামত দম্পতির মধ্য দিয়ে “আহবান” গল্পের কোন বিশেষ দিকটির ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. ‘মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন-সম্পদে নয়, নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে।’-উদ্দীপক ও  “আহবান” গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

ক. জ্ঞান

বুড়িকে মা বলে ডাকত হাজরা ব্যাটার বউ।

খ. অনুধাবন

লেখক খাঁটি দুধ খেতে পায় না শুনে বৃদ্ধা তাঁর জন্য দুধ নিয়ে এলে লেখক তাকে রূঢ় স্বরে দুধের দাম জিজ্ঞাসা করে টাকা দিলে বুড়ি বিব্রত হয়ে টাকা নিয়ে চলে যায়। তখন অনুশোচনায় লেখক উক্ত উক্তিটি করেন।

বুড়ি জানতে পারেন যে, ঘুঁটি গোয়ালিনীর জল মেশানো দুধ লেখক খান। তখন সন্তান স্নেহে লেখকের জন্য বুড়ি এক ঘটি দুধ হাজরা ব্যাটার বৌয়ের কাছ থেকে চেয়ে আনেন। লেখক তার দাম দিয়ে দিলে বুড়ি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে চলে যান। লেখক তখন ভাবেন স্নেহের দানের আর্থিক প্রতিদান দেয়া ঠিক হয়নি। এটা ভেবে লেখক উক্ত উক্তিটি করেন।

গ. প্রয়োগ

কেরামত দম্পতির মধ্যে ‘আহবান’ গল্পের সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং মানবিক চেতনার দিকটির প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।

মানুষের মন অত্যন্ত সংবেদনশীল। সন্তানের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা মানুষের একটা সহজাত ধর্ম। কিন্তু সন্তানতুল্য অপরের সন্তানের প্রতি অপরিসীম স্নেহ-ভালোবাসা মানুষের এই সংবেদনশীল মনের পরিচায়ক।

উদ্দীপকের কেরামত দম্পতির মধ্যে এমনই মনের পরিচয় পাওয়া যায়। যা ‘আহবান’ গল্পের স্নেহ-ভালোবাসা ও উদার মানবিকতার প্রতি ইঙ্গিত করে। কেরামত দম্পতি একটা পথে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুর প্রতি যে স্নেহ-ভালোবাসা প্রকাশ করেন তা সত্যিই বিরল। শিশুটির প্রতি তাঁদের এই মায়া বা স্নেহ-মমতা উদার মানবিকতার পরিচয় দেয়। যা ‘আহবান’ গল্পেও লক্ষ করা যায়। গল্পে দেখা যায়, লেখক ও দরিদ্র মুসলমান বৃদ্ধার মাঝে স্নেহ-ভালোবাসার উদার মানবিক সম্পর্ক। যেখানে শ্রেণি-বৈষম্য, জাতপাত বা ধর্মভেদ কোনো বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানবিকতাকে স্থান দেওয়া হয়েছে গল্পটিতে। সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত এই ভাবের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে উদ্দীপকটিতে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন-সম্পদে নয়, নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। উদ্দীপক এবং ‘আহবান’ গল্প অনুসারে মন্তব্যটি যথার্থ। মানুষ মানুষের জন্য সংবেদনশীলতার হাত বাড়িয়ে দেবে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। অথচ এটা এখন শুধুই একটা মানবিক বুলিমাত্র। সর্বত্রই মানুষের মাঝে স্বার্থান্বেষী চিন্তার প্রতিফলন দেখা যায়। সেখানে স্নেহ-মায়া-মমতা একটা বোকামিপূর্ণ আচরণ মনে হয়।

উদ্দীপকে রহমান দম্পত্তির মাঝে যে মানবিক আচরণ লক্ষ করা যায় তা সত্যিই বিরল। রহমান দিনমজুর হলেও পথের এক মৃত-প্রায় শিশুকে বুকে তুলে নিয়ে আসে। সন্তানদের ভরণ-পোষণ না দিতে পারলেও তার স্ত্রী তাকে সন্তান স্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরে। এখানে যে স্নেহ-মমতা-প্রীতির বাঁধন তা কোনো ধন-সম্পদের নয়, নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে উঠেছে। ‘আহবান’ গল্পেও এমন ভাবের পরিচয় পাওয়া যায় লেখক এবং বৃদ্ধার স্নেহ-ভালোবাসা আদান-প্রদানের সাথে।

‘আহবান’ গল্পে এক উদার মানবিক সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়। লেখক এবং বৃদ্ধার মাঝে যে মা-সন্তানের স্নেহের সম্পর্ক, তাতে কোনো ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, ধর্মের প্রভেদ কিংবা, জাতিভেদ বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। লেখকের প্রতি বুড়ির স্নেহের দাবি সকল বাধাকে অতিক্রম করে মানবতার জয় ঘোষণা করেছে। লেখকও তার হৃদয়ে মুসলমান বৃদ্ধার মাঝে মায়ের বা পিসিমার ছায়া দেখতে পেয়েছেন। তাঁকে মাতৃজ্ঞানে ভালোবেসেছেন। তাঁর শেষ আহবানে মনের অজান্তে তাঁর অন্তিম যাত্রায় উপস্থিত হয়েছেন।

এই যে আত্মিক বন্ধন এটা স্নেহ-মায়ামমতা প্রীতির বাঁধন, এটা শুধু নিবিড় আন্তরিকতায় গড়ে ওঠে। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ 

কাঙালির মা ছোটজাত, দুলের মেয়ে বলিয়া কাছে যাইতে সাহস পাইল না, তফাতে একটা উঁচু ঢিপির মধ্যে দাঁড়াইয়া সমস্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত উৎসুক আগ্রহে চোখ মেলিয়া দেখিতে লাগিল। প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত চিতার পরে যখন শব স্থাপিত করা হইল তখন তাহার রাঙ্গা পা-দুখানি দেখিয়া তাহার দু’চক্ষু জুড়াইয়া গেল, ইচ্ছা হইল ছুটিয়া গিয়া একবিন্দু আলতা মুছাইয়া লইয়া মাথায় দেয়। বহুকণ্ঠের হরিধ্বনির সহিত পুত্রহস্তের মন্ত্রপুত অগ্নি যখন সংযোজিত হইল তখন তাহার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল, মনে মনে বারংবার বলিতে লাগিল, ভাগ্যিমানী মা, তুমি সগ্যে যাচ্চো-আমাকেও আশীর্বাদ করে যাও, আমিও যেন এমনি কাঙালির হাতের আগুনটুকু পাই। ছেলের হাতের আগুন! সে ত সোজা কথা নয়!

[তথ্যসূত্র : অভাগীর স্বর্গ-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]

ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোন গ্রামে?

খ. বুড়ি কেন দমে গেলেন? 

গ. উদ্দীপকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সাথে ‘আহবান’ গল্পের বুড়ি অন্তিম শয়নের বিষয়ের বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর। 

ঘ. “উদ্দীপকের কাঙালির মা এবং ‘আহবান’ গল্পের বৃদ্ধার প্রত্যাশার ধরন এক।”-মন্তব্যটি যাচাই কর।

ক. জ্ঞান

বিভূতিভূষণের পৈতৃক নিবাস ব্যারাকপুর গ্রামে। 

খ. অনুধাবন

লেখক রুক্ষ স্বরে দুধের দাম জিজ্ঞাসা করায় বুড়ি প্রথমে খুব দমে গেলেন।

লেখকের দুধের জোগান দেয় ঘুঁটি গোয়ালিনী। একথা শুনে বুড়ি বলেন ‘এর তো অর্ধেক জল’। এজন্য তিনি তাঁর পাতানো মেয়ের কাছ থেকে খাঁটি দুধ চেয়ে লেখকের জন্য নিয়ে আসেন। তখন লেখক বুড়িকে দাম দিয়ে তাড়াতাড়ি বিদায় করার জন্য বেশ রুক্ষ স্বরে তার দাম জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু স্নেহের দানের আর্থিক প্রতিদান দিতে গেলে বুড়ি অপ্রস্তুত হন এবং লেখকের রুক্ষ স্বরে তিনি দমে যান।

গ. প্রয়োগ

উদ্দীপকের সাথে ‘আহবান’ গল্পের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বা অন্তিম শয়ানের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

এ পৃথিবী থেকে সকলেরই এক সময় বিদায় নিতে হয় । কারো আগে, কারো পরে। কেউ বা রাজকীয়ভাবে অন্তিম যাত্রা করে, কেউ বা দীনহীনভাবে অন্তিম শয়ানে শায়িত হয়।

উদ্দীপকে দেখা যায়, কর্তা গিন্নি বা ভাগ্যিমানী মার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত চিতার পরে বা তার শব বা মৃতদেহ শায়িত। তার রাঙা দুখানি গায়ে আলতা মাখা। সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহিণী হওয়ায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও আড়ম্বরের সাথে সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু ‘আহবান’ গল্পে বুড়ির শব যাত্রা বা কবর দেওয়ার বিষয়টি নিতান্ত সাদামাটা। প্রাচীন একটা বৃক্ষের নিচে বৃদ্ধাকে কবর দেওয়া হবে। দুজন লোক তার কবর খুঁড়ছে। সেখানেই বৃদ্ধাকে চিরদিনের মতো শোয়ানো হবে। বিষয়ের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকের কাঙালির মা এবং ‘আহবান’ গল্পের বৃদ্ধার প্রত্যাশার ধরন এক।”মন্তব্যটি যথার্থ।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষের কিছু অন্তিম ব্যবস্থা থাকে। তারা মনে করে সেটা পেলে মরেও শান্তি পাবে। যেমন কাঙালির মা মৃত্যুর পর তাঁর ছেলের হাতের মুখাগ্নির প্রত্যাশা করে স্বর্গে যাওয়ার জন্য এবং ‘আহবান’ গল্পে বৃদ্ধা লেখকের কাছে কাফনের কাপড় প্রত্যাশা করে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, ছোট জাতের মেয়ে কাঙালির মা ও বাড়ির কর্তা গিন্নির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখে ভাবে তার মৃত্যুর পর যদি তার ছেলে কাঙালির হাতের আগুন পায় তবে তিনি স্বর্গে যেতে পারেন। কাঙালির মায়ের এই প্রত্যাশার চিত্র দেখা যায় ‘আহবান’ গল্পের বৃদ্ধার মাঝে। তিনিও লেখকের কাছে কাফনের কাপড় প্রত্যাশা করেছেন।

‘আহবান’ গল্পে দেখা যায় বৃদ্ধ লেখককে সন্তানের মতো ভালোবাসেন। তিনি আম, শসা, দুধ ইত্যাদি দিয়ে তাঁর মাতৃস্নেহের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। লেখক প্রথমে সংকোচ বোধ করলেও পরে এটাকে স্বাভাবিকভাবে ও শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করেন। তখন নিঃসন্তান বৃদ্ধা লেখকের কাছে বলেন, ‘আমার কাফনের কাপড় তুই কিনে দিস বাবা।’ বুড়ির এই প্রত্যাশার মাঝে প্রকাশিত হয়েছে সন্তানের কাছে বৃদ্ধা মায়ের দাবি বা আবদার। যা কাঙালির মায়ের প্রত্যাশায় প্রকাশিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”

কহিলাম, “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”

কহিল সে কাছে সরে আসি-

“কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-

গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে

রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।”

ক. বুড়ি কী কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিল?

খ. বুড়ির আগে এ পাড়া ও পাড়া আসা-যাওয়া করতে হতো না কেন?

গ. উদ্দীপকের কবি ‘আহবান’ গল্পের কোন চরিত্রকে নির্দেশ করে?-ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।’ ‘আহবান’ গল্পের লেখকের চেতনার ক্ষেত্রে চরণটির মর্মার্থ সম্পূর্ণভাবে যথার্থ নয়।-মন্তব্যটি বিচার কর।

ক. জ্ঞান

বুড়ি নুন কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিল।

খ. অনুধাবন

বৃদ্ধার স্বামী বেঁচে থাকতে তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ সচ্ছল ছিল তাই ভিক্ষা করার জন্য তাঁর এপাড়া ওপাড়া যাতায়াত করতে হতো না।

বৃদ্ধার স্বামী জমির করাতির বেশ সচ্ছল অবস্থা ছিল। গোলাভরা ধান। আর গোয়ালভরা গরু নিয়ে ছিল বুড়ির সোনার সংসার। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর সংসারের দায়িত্ব নেয়ার মতো কেউ ছিল না, তাই তিনি এখন পথের ভিখারিনি। এজন্য তাঁকে এপাড়া ওপাড়া করতে হয়, যা স্বামী বেঁচে থাকতে করতে হতো না।

গ. প্রয়োগ

উদ্দীপকের কবি ‘আহবান’ গল্পের লেখক চরিত্রকে নির্দেশ করে।

প্রিয় হারানোর বেদনায় সবাই আহত হয়। কেউ চায় না তার প্রিয় কেউ চিরদিনের মতো পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাক। কিন্তু নিয়তির বিধানে সবাইকেই চলে যেতে হয়। কেউ আগে যায়, কেউ বা পরে। যারা আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় তাদের কাছের মানুষের কাছে সে শূন্যতার বেদনা অসহনীয়।

উদ্দীপকে কবির অন্তরে দেখা যায় প্রিয় জনকে হারানোর বেদনা। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে কবি শোকে মুহ্যমান। তার প্রিয় যে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে হারিয়ে গেছে এ কথা তিনি কোনোমতেই ভুলতে পারছেন না। বার বার তাকে মনে পড়ছে। এমনই প্রিয় হারানোর বেদনা অনুভব করেছেন ‘আহবান’ গল্পের লেখক মাতৃস্থানীয়া বৃদ্ধার মৃত্যুতে। বৃদ্ধা তাঁকে মায়ের মতোই স্নেহ করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর লেখক সেখানে উপস্থিত হন অজানা আহবানে সাড়া দিয়ে। লেখকের হৃদয়ও শোকে মুহ্যমান। এক্ষেত্রে উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

‘তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।’ এ চরণটির ভাব ‘আহবান’ গল্পের লেখকের চেতনার ক্ষেত্রে পুরোপুরি যথার্থ নয়।

বিচ্ছেদ ব্যথায় সকলেই কাতর হন। উদ্দীপকের কবিও বিচ্ছেদ ব্যথায় কাতর। প্রিয়জন তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে বহুদূরে। সেই শোকে তিনি মুহ্যমান। তাইতো তিনি ঋতুরাজকেও উপেক্ষা করেন। কিন্তু সকলের বিচ্ছেদ-ব্যথা এই রকম গভীর নাও হতে পারে।

উদ্দীপকের কবি প্রিয়জন হারানোর শোকে কাতর। পৃথিবীর কোনোকিছুই তার ভালো লাগে না। তাইতো এ পৃথিবীতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন তিনি টের পান না। যে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে চলে গেছে শূন্য হাতে, তাকে তিনি কোনোভাবেই ভুলতে পারেন না। উদ্দীপকের এই চরণটির মর্মার্থ ‘আহবান’ গল্পের লেখকের চেতনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে যথার্থ নয়।

‘আহবান’ গল্পের লেখকের বিচ্ছেদ-ব্যথা বা প্রিয় হারানোর ব্যথা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গল্পে দেখি মাতৃস্থানীয়া এক বৃদ্ধা লেখককে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। স্নেহ করতেন। লেখককে তিনি নানারকম খাদ্যদ্রব্য খাইয়ে শান্তি পেতেন। তাঁর আপত্য স্নেহে লেখক সিক্ত হয়েছিলেন এবং বৃদ্ধাকে মায়ের মতো ভালোও বেসেছিলেন। সেই বৃদ্ধার মৃত্যুতে তিনিও মর্মাহত। কিন্তু উদ্দীপকের কবির মতো তীব্র নয় তাঁর বেদনার রং। তাকে যে কোনো মতে ভুলতে পারেন না, এমনটি নয়। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

মানুষের লোভ ও ধর্মান্ধতার যূপকাষ্ঠে সৌদামিনীর মাতৃহৃদয় বলিপ্রাপ্ত হলেও তার মাতৃহৃদয়ের হাহাকারের মধ্যেও ধ্বনিত হতে থাকে মানবতার জয়গান; তার মাতৃত্বের কাছে ধর্ম, অর্থ ও অপর সকলের পরাভব ঘটে।

ক. লেখকের বাবার বন্ধু কে?

খ. লেখক বুড়িকে কেন পয়সা দিলেন?

গ. উদ্দীপকে সৌদামিনী ‘আহবান’ গল্পের বুড়ির কোন বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘আহবান’ গল্পে গাওয়া হয়েছে মানবতার জয়গান।”- ব্যাখ্যা কর।

ক. জ্ঞান

লেখকের বাবার বন্ধু হলেন চক্কোত্তি মশায়।

খ. অনুধাবন

বৃদ্ধার কষ্ট ও অসহায়ত্ব দেখে লেখকের মায়া হওয়ায় তিনি পয়সা দিলেন।

গ্রামে ফিরে একদিন লেখকের সাথে এক বৃদ্ধার দেখা হয়। তিনি তখন বাজারে চলছিলেন তিন পয়সার লবণ কিনতে। তখন বৃদ্ধার মুখে তার অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্যের কথা শুনে লেখকের মায়া হয়। তখন তিনি পকেট থেকে কিছু পয়সা বের করে বৃদ্ধাকে দেন।

গ. প্রয়োগ

উদ্দীপকের সৌদামিনী ‘আহবান’ গল্পের বুড়ির মাতৃস্নেহের বা মাতৃত্বের বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে।

প্রতিটি মায়ের কাছে স্নেহের ধন হলো তার সন্তান। নিজের চেয়েও তিনি সন্তানকে বেশি ভালোবাসেন। সন্তানের প্রতি ভালোবাসা একেবারে অকৃত্রিম। সেখানে কোনো ব্যক্তিস্বার্থ থাকতে পারে না।

উদ্দীপকে সৌদামিনীর মাতৃহৃদয়ের কথা বলা হয়েছে। সন্তানের জন্য তাঁর মাতৃহৃদয়ের হাহাকার ধ্বনিত হয়েছে। তবু তার ভিতরে লক্ষ করা যায় মানবিকতার জয়গান। তার মাতৃত্বের কাছে ধর্ম, অর্থ স্থান পায়নি। ‘আহবান’ গল্পেও এ ভাবটি লক্ষ করা যায় বৃদ্ধার মাঝে। তিনি মুসলমান হয়েও হিন্দুর ছেলে লেখকের প্রতি মাতৃস্নেহে বিগলিত হন। মায়ের মতো স্নেহের সম্বোধন, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য খাইয়ে প্রশান্তি অনুভব-এ সবই মানবিকতার জয়গান ঘোষণা করে। উভয় চরিত্রে এখানেই সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপক এবং ‘আহবান’ গল্পের গাওয়া হয়েছে মানবতার জয়গান।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

মানবিকতার কাছে সবকিছু হার মানে। শত বাধা-বিপত্তি প্রতিক‚লতা ধুয়ে-মুছে যায় এর মহাশক্তির কাছে। ধর্ম-জাতি-শ্রেণি সকল ভেদ এখানে এসে একাকার হয়ে যায়।

উদ্দীপকে দেখা যায়, মানবিকতার জয়গান গাওয়া হয়েছে। মানুষের লোভ ও ধর্মান্ধতার যূপকাষ্ঠে সৌদামিনীর মাতৃহৃদয় বলি প্রাপ্ত হয়েছে। তবু তা অকৃত্রিম অম্লান রয়েছে। তার মাতৃহৃদয়ের হাহাকারের মধ্যেও ধ্বনিত হয়েছে মানবতার জয়গান। তার মাতৃত্বের কাছে ধর্ম, অর্থ সকল কিছুর পরাভব ঘটেছে। এমনই মানবতার জয়গান গাওয়া হয়েছে ‘আহবান’ গল্পে।

‘আহবান’ গল্পটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। মানুষের স্নেহ-মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যা পাওয়া যায় তা ধন-সম্পদের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার মাধ্যমে সে বাঁধন পোক্ত হয়। ধনী-দরিদ্র, ধর্ম-জাতি সবকিছুর ব্যবধান ঘুচে যায় উদার হৃদয়ের আন্তরিকতা ও মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গির ফলে। এ গল্পে লেখক দুটি ভিন্ন ধর্ম ও আর্থিক অবস্থানে থাকা চরিত্রের মধ্যে সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। যা মানবিক, তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

জরিনা যৌবনে বিধবা হয়। তার স্বামী আফজাল মিয়া মারা যায় এক দুর্ঘটনায়। তার সম্বল একমাত্র ছেলে রহিমকে অনেক কষ্ট করে লালন পালন করে সৌদি আরবে পাঠায় টাকা কামাইয়ের জন্য। ছয় মাসের মাথায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মরার সময় সে তার একমাত্র ছেলেকে দেখার আকুলতা প্রকাশ করে। মৃত্যুশয্যায় শায়িত হয়ে সে বলে আমার রহিমকে বলিও আমার কবরে পাশে যেন একটি মসজিদ বানায়।

ক. জরিনার স্বামীর নাম কী? 

খ. ‘দুধ খেতি পাচ্ছ না ভালো সে বুঝেচি’-কে, কেন কথাটি বলেছেন? 

গ. উদ্দীপকটি ‘আহবান’ গল্পের কোন বিষয়টি তুলে ধরেছে? ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. “উদ্দীপকের শেষের দুই বাক্যে ‘আহবান’ গল্পের মর্মার্থ লুকিয়ে আছে।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

ক. জ্ঞান

জরিনার স্বামীর নাম আফজাল মিয়া।

খ. অনুধাবন

ঘুঁটি গোয়ালিনী লেখককে দুধের জোগান দেয় শুনতে পেয়ে বুড়ি কথাটি বলেছেন।

বুড়ি লেখককে জিজ্ঞাসা করেন কোথায় তার খাওয়া-দাওয়া হয়। লেখক বলেন, তার জ্ঞাতি খুড়োর বাড়ি। তখন বুড়ি জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে, ঘুঁটি গোয়ালিনীর কাছ থেকে দুধ রাখা হয়। তখন বুড়ি বলেন, ওর দুধ! অর্ধেক জল। তাই বুড়ি উক্ত কথাটি বলেন।

গ. প্রয়োগ

উদ্দীপকটি ‘আহবান’ গল্পের বৃদ্ধার মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরেছে।

দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পর বৃদ্ধার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর আগে তিনি অনেকবার গোপালের কথা অর্থাৎ লেখকের কথা বলেছিলেন গোপালকে দেখতে চেয়েছিলেন মাতৃহৃদয়ের দাবি থেকে। অবশেষে বাসনাকে অপূর্ণ রেখে পরপারে পাড়ি জমালেন।

উদ্দীপকে সেই খবরই লেখককে দেয় পরশু সরদারের স্ত্রী দিগম্বরী। সে লেখককে জানায় যে, বুড়ি কাল রাতে মারা গিয়েছে। মৃত্যুর আগে তার নাম করেছেন কিন্তু আল­াহ বা ঈশ্বর তার ডাক শোনেনি। গোপালকে দেখার বাসনা নিয়েই তাঁর পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে। এটি ‘আহবান’ গল্পের শেষ দিকের চিত্র। সেখানে লেখক তার নাত-জামাইয়ের হাতে বুড়ির শেষ অনুরোধ অনুযায়ী কাফনের কাপড় কেনার জন্য টাকা তুলে দেন। উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি গল্পের বৃদ্ধার মৃত্যু ও তার পরবর্তী দৃশ্যগুলো আমাদের চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকের শেষ দুই বাক্যে ‘আহবান’ গল্পের মর্মার্থ লুকিয়ে আছে”-মন্তব্যটি যথার্থ।

‘আহবান’ গল্পটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন-সম্পদে নয়, হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। এ কথাটিই গল্পের মাঝে বিশেষভাবে প্রতিধ্বনিত হয়।

উদ্দীপকের শেষ দুই বাক্যে গল্পের মর্মার্থ লুকিয়ে আছে। এখানে বলা হয়েছে, “ওর স্নেহাতুর আত্মা বহুদূর থেকে আমায় আহবান করে এনেছে। আমার মন হয়তো ওর ডাক এবার তাচ্ছিল্য করতে পারেনি” উক্ত বাক্য দুটিতে ‘আহবান’ গল্পের মর্মার্থ পরিলক্ষিত হয়।

‘আহবান’ গল্পটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ঘুচিয়ে কুসংস্কার আর ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করে উদার হৃদয়ের আন্তরিকতা ও মানবীয় গুণাবলির বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। গল্পের লেখক হিন্দু জেনেও মুসলমান বৃদ্ধার মাতৃস্নেহের প্রকাশ গল্পটিকে আরও মানবিক করে তুলেছে। লেখকও তাকে মায়ের আসনে বসিয়েছেন। শ্রদ্ধার সাথে তার সকল দান গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর ‘অ-মোর গোপাল আমার, কাফনের কাপড় তুই কিনে দিসি বাবা’ অনুরোধকে অনিবার্য আহবান হিসেবে উপলব্ধি করেছেন, যা সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত উদার হৃদয়ের পরিচায়ক। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।


আরো ও সাজেশন:-



প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment