বুদ্ধপূর্ণিমা, অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের একাদশ অধ্যায়ে ‘বুদ্ধপূর্ণিমা

বুদ্ধপূর্ণিমা
অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের একাদশ অধ্যায়ে ‘বুদ্ধপূর্ণিমা

বুদ্ধপূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা হলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্রতম উৎসব ও স্মরণীয় দিন। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। বৈশাখী পূর্ণিমা দিনটির সঙ্গে মহামানব গৌতম বুদ্ধের তিনটি স্মৃতি জড়িত। এই দিনে তাঁর জীবনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল বলে দিনটি ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’ নামে খ্যাত। খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দের এই দিনে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন, ৫৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই দিনে তিনি সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে জগতে বুদ্ধ নামে খ্যাত হন এবং ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই দিনে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।

বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে জানা যায়, দেবতাদের অনুরোধে জগতের মুক্তি ও মানুষের নির্বাণ পথের সন্ধান দানের জন্য মনুষ্যকুলে জন্ম নেন বুদ্ধ। তাঁর জন্ম হয় লুম্বিনী কাননের শালবৃক্ষ ছায়ায় উন্মুক্ত আকাশতলে। সব প্রাণসত্তার মধ্যেই যে কষ্টবোধ আছে তা তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতেন। তাই তিনি বলেছিলেন ‘সব্বে সত্তা ভবন্তু সুখীতত্তা’ জগতের সব প্রাণী সুখী হোক। এই মর্মচেতনা জাগ্রত করা এবং এই পরম সত্য জানার জন্য তিনি ২৯ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করেন। সত্যের সন্ধানে পরিভ্রমণ করতে করতে একসময় তিনি গয়ার উরুবেলায় (বুদ্ধগয়া) গিয়ে নিবিষ্টচিত্তে সাধনামগ্ন হন। দীর্ঘ ছয় বছর অবিরাম সাধনায় তিনি লাভ করেন সম্যক সম্বুদ্ধ বা বুদ্ধত্ব। সেদিনও ছিল বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথি। ৮০ বছর বয়সে হিরণ্যবতী নদীর তীরে কুশিনারার মল্লদের শালবনে জীবনের শেষনিঃশ্বাস ত্যাগপূর্বক তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এই মহাপরিনির্বাণ লাভের ক্ষণও ছিল বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিবছরই পালিত হয়। বৌদ্ধ ধর্মের উৎসব হলেও ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সর্বসাধারণের জন্য এই দিনে সরকারি ছুটি থাকে। এই দিনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা স্নান করে, শুচিবস্ত্র পরিধান করে প্যাগোডায় বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকে। ভক্তরা প্রতিটি প্যাগোডায় বহু প্রদীপ প্রজ্বালন করে, ফুলের মালা দিয়ে মন্দিরগৃহ সুশোভিত করে বুদ্ধের আরাধনায় নিমগ্ন হয়। এ ছাড়া বুদ্ধরা এই দিনে বুদ্ধপূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা করে থাকে।

প্যাগোডায় প্যাগোডায় চলতে থাকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দিবস উদযাপনের যাবতীয় কার্যক্রম। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রাম ও বিহারে এই দিনে মেলা বসে। সবচেয়ে বড় মেলাটি বসে চট্টগ্রামের বৈদ্যপাড়া গ্রামে, যা বোধিদ্রুম মেলা নামে সমধিক পরিচিত।

J.S.C

Leave a Comment