প্রশ্ন সমাধান: বেতন ও মজুরি কাকে বলে?, বেতন ও মজুরি কত প্রকার ও কি কি?,বেতন ও মজুরির উপাদানসমূহ ব্যাখ্যা কর?
বেতন ও মজুরী কাকে বলে :-
আপনি নিশ্চয়ই কোন উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে দেখেছেন, কেউ কেউ শারীরিক শ্রম দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ অফিসিয়াল কাজ করছে। উভয়শ্রেণীকে প্রদত্ত অর্থ উৎপাদন ব্যয়ের সাথে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে যারা কায়িক শ্রম দিচ্ছে তাদেরকে বলা হচ্ছে শ্রমিক (Labour) আর যারা মানসিক শ্রম দিচ্ছে বা অফিসে কাজ করছে তাদেরকে কর্মচারী বা কর্মকর্তা বলা হচ্ছে।
অন্যদিকে শ্রমিকের মজুরী সাধারণতঃ দৈনিক সপ্তাহ বা মাস ভিত্তিতে দেয়া হয়, আর কর্মচারী বা কর্মকর্তাদেরকে সাধারণতঃ মাসিক ভিত্তিতে বেতন দেয়া হয়।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, শারীরিক পরিশ্রমের বিনিময়ে দৈনিক বা সপ্তাহ শেষে যে পারিশ্রমিক দেয়া হয় তাকে মঞ্জুরী (Wages) বলে।
অন্যদিকে, মানসিক পরিশ্রমের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর যে পারিশ্রামিক দেয়া হয় তাকে বেতন (Salary) বলে।
অন্যভাবে বলা যায় কাঁচামালের পরিবর্তন ঘটিয়ে পণ্য বা সেবার উপযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টার বিনিময়ে শ্রমিকদেরকে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে মজুরী বলে। আর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজের বিনিময়ে প্রদত্ত পারিশ্রামিকে বেতন বলে।
উৎপাদন ক্ষেত্রে সাদা-কালো বৈষম্য যেখানে সে সব দেশে কালোদের উপানিতে মজুরী এবং সাদাদের উপার্জনকে বেতন বলে। কিন্তু মুলত: উৎপাদন ব্যয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হিসাব ভুক্তির স্থানগত কিছু পার্থক্য ছাড়া তেমন কোন গুরুত্ব এ পার্থক্যের মধ্যে নেই।
যদি কোন ব্যক্তি সরাসরি উৎপাদনকাজে জড়িত থাকে তাহলে তাকে প্রদত্ত বেতন বা মজুরী প্রত্যক্ষ মঞ্জুরী হিসেবে মূখ্য ব্যয়ের অন্তর্ভূক্ত হয়। আর যদি সে ব্যক্তি সরাসরি উৎপাদ কাজে জড়িত না থেকে অন্যান্য সেবা দান করে তবে তাকে প্রদত্ত অর্থ পরোক্ষ মজুরী হিসেবে উপরিবারের অন্তর্ভূক্ত হয়।
তাই উৎপাদন ব্যয়ের ক্ষেত্রে বলা যায় একজন কর্মচারী বা শ্রমিক তার শারীরিক বা মানসিক শ্রমের বিনিময়ে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে যে অর্থ পেয়ে থাকে তাকে বেতন বা মজুরী বলে। এটা একই অর্থে বেতন ও মজুরী হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
আরো ও সাজেশন:-
বেতন ও মজুরী কত প্রকার ও কি কি :-
বেতন ও মাধুরীকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যা মোট বেতন ও মজুরী এবং নীট বেতন ও মজুরী।
মোট বেতন ও মজুরীর ভেতর রয়েছে, মূল বেতন ও মজুরী, অতিরিক্ত সময়ের মজুরী, ভাতাদি এবং প্রান্তিক সুবিধানি। এসব থেকে যখন বিভিন্ন কর্তনসমূহ কেটে রাখা হয় তখন প্রাপ্ত প্রাপ্য অর্থকে নীঠ বেতন ও মজুরী বলা হয়।
নিন্মে এদের আলোচনা করা হলো।
ক. মূল বেতন ও মজুরী (Basic Salaries and Wages) :
একজন শ্রমিক বা কর্মচারী বর্তমানে দৈনিক ৮ ঘন্টা হিসেবে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য। এজন্য সরকার বা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট বেতন ক্রম থাকে। এ বেতন ক্রমের ধাপ অনুযায়ী কোন কর্মী যে অর্থ পেয়ে থাকেন তাকে মূল বেতন বা মজুরী বলে।
আজকাল সরকারী নির্দেশে, যৌথ দরকষাকষির মাধ্যমে বা বিভিন্ন শ্রমিক কল্যাণের বদৌলতে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই একটা বেতন কাঠামো তৈরী আছে। সাথে সাথে আছে আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি। এজন্য মূল বেতনকে এখন স্থায়ী ব্যয় হিসেবে ধরা হয়।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
খ. অতিরিক্ত কর্মময় মজুর ( Overtime Wages) :
পূর্বেই পড়েছেন, সাধারণতঃ একজন শ্রমিক দৈনিক বা সপ্তাহে যথাক্রমে ৮ এবং ৪৮ ঘণ্টা সেবা দিতে বাধ্য। যদি কোন প্রতিষ্ঠান সময়ের বাইরে কেনো শ্রমিককে দিয়ে কাজ করায় তাহলে এ অতিরিক্ত সময়ের জন্য উক্ত শ্রমিককে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে অতিরিক্ত কর্মসময় মজুরী বলে।
গ. বোনাস ( Bonus) :
শ্রমিকদের কর্ম উদ্দিপনা বৃদ্ধির জন্য শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত মজুরী বা বেতন দেয়া হয়ে থাকে। এ অর্থ কারখানার ক্ষেত্রে কারখানার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সাপেক্ষে দেয় হয়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন উৎসব পালনের জন্য নির্দিষ্ট হারে অর্থ প্রদান করা হয়।
সুতরাং আমরা বলতে পারে, শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্ম প্রেরণা সৃষ্টির লক্ষ্যে শ্রমিকদেরকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সাপেক্ষে নির্ধারিত হারে যে অতিরিক্ত মজুরী প্রদান করা হয় তাকে বোনাস বলে। যেমন, বাৎসরিক বোনাস, ঈদ বোনাস ইত্যাদি।
ঘ. মহার্ঘভাতা (Dearness Allowance) :
এটা মূলতঃ বেতনের স্বাভাবিক কোন উপাদান নয়। কখনো উপাদান হিসেবে সাথে যুক্ত হয়। মুদ্রানীতির কারণে নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো বেশীদিন চললে কর্মীদের যাত্রার মান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময়ে সরকার বা মালিক নির্দিষ্ট হারে বেতন বা মজুরী বাড়িয়ে দেয় যা বেতন হিসেবে ধরা হয় না। এ অতিরিক্ত বেতনকে মহার্ঘভাতা বলা হয়।
পরিপুরক বা প্রান্তিক সুবিধাদি (Fringe Benefit) :
সরকার বা সরকারী প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব নিয়মানুযায়ী বা চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিক কর্মচারীদেরকে মূল বেতনের পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে থাকে। উৎপাদন সেবার পরিমাণের সাথে সম্পর্কহীন এ সুবিধাকে প্রান্তিক সুবিধা বলে।
যেমন, যাতায়াত ভাতা, যানবাহন বা যানবাহন ভাতা, বিনামূল্যে বাড়ী ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, মধ্যাহ্ন ভোজ সুবিধা, পরিবারের শিক্ষা খরচ, ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তার শ্রান্তি-বিনোদন ভাতা ইত্যাদি ।
এ সমস্ত বেতন উপাদানের ভেতর থেকে যেসব সুবিধা ও অর্থ শ্রমিক কর্মচারী পেয়ে থাকে তার যোগফলকে মোট মজুরী বা বেতন বলে।
প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী বা কর্মীর ইচ্ছার সাথে একমত পোষণ করে মোট বেতন বা মজুরী থেকে এক বা একাধিক খাত বাবদ কিছু কিছু অর্থ বাদ দিয়ে বেতন বা মজুরী প্রদান করা হয়। বাদ দেওয়া অর্থ পরবর্তীতে শ্রমিকদেরকে প্রদান হয় বা সরকারী কোষাগারে জমা হয়। এ বাদ দেওয়া অর্থে রয়েছে, আয়কর ফান্ড, বেনেভোলেন্ট ফান্ড, বা কিস্তি ইত্যাদি। এসব অর্থ বাদ দেওয়ার পর যে বেতন কর্মীকে দেয়া হয় তাকে নীট বেতন বলা হয়।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।