ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ শীর্ষক প্রবন্ধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ এবং পূর্ববাংলার স্বাধিকার আন্দোলনে (৫২ – ৭১) ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ

শ্রেণি: SSC -2021 বিষয়: বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এসাইনমেন্টেরের উত্তর 2021
এসাইনমেন্টের ক্রমিক নংঃ 05 বিষয় কোডঃ 153
বিভাগ: মানবিক শাখা

এসাইনমেন্ট শিরোনামঃ ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ শীর্ষক প্রবন্ধ।

বিষয়বস্তু

  • ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে পারবে
  • একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতির প্রেক্ষাপট এবং এর মর্যাদা বর্ণনা করতে পারবে
  • ভাষা আন্দোলনের প্রতি সম্মান প্রদর্শণের মাধ্যমে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে আগ্রহী হবে

নির্দেশনা

  • ক. ভাষা আন্দোলনের পটভূমি বর্ণনা
  • খ. ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু, অন্যান্য নেতৃত্ব এবং নারীদের ভূমিকা নিরূপণ
  • গ. বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ এবং পূর্ববাংলার স্বাধিকার আন্দোলনে (৫২ – ৭১) ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ
  • ঘ. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি অর্জন (পটভূমি ও তাৎপর্য

এসাইনমেন্ট সম্পর্কে প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে Google News <>YouTube : Like Page ইমেল : assignment@banglanewsexpress.com

ভাষা আন্দোলনের পটভূমিঃ

১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। ভাষা, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাসসহ সকল ক্ষেত্রে বিস্তর ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও কেবল ধর্মের ভিত্তিতে এক হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করে এই অসম রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়। এই রাষ্ট্রের কর্ণধাররা প্রথমই শোষণ ও বৈষম্যের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয় বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলাকে।

অথচ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় পাকিস্তানের ভাষাগত জনসংখ্যার একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, মোট জনসংখ্যার ৫৪.৬০% বাংলা, ২৮.০৪% পাঞ্জাবি, ৫.৮% সিন্ধি, ৭.১% পশতু, ৭.২% উর্দু এবং বাকি অন্যান্য ভাষাভাষী নাগরিক।

ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ শীর্ষক প্রবন্ধ

এর থেকে দেখা যায় উর্দু ছিল পাকিস্তানি ভাষাভাষির দিক থেকে ৩য় স্থানে। অন্যদিকে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গের জনসংখ্যার ৪.৪০ কোটির মধ্যে ৪.১৩ কোটি ছিল বাংলা ভাষাভাষী। এখানে ৯৮% বাংলা এবং মাত্র ১.১% ছিল উর্দু ভাষী।

অথচ বাংলা ভাষাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বেশ কিছু পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু সংগ্রামের ঐতিহ্যে লালিত বাঙালি জাতি মাতৃভাষার ওপর এ আঘাতের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। পাকিস্তান সৃষ্টির ছমাস পেরুতে না পেরুতে তারা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রাজপথে নামে যা ১৯৫২ সালে দ্বিতীয় পর্বের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সাফল্য লাভ করে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

ক. উর্দু বনাম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে উদ্দেশ্য ও যুক্তি

পাকিস্তানের মতো বহু ভাষাভাষী রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে ঐক্য বন্ধন সৃষ্টির জন্য একটি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রয়োজনীয়তা প্রথম থেকেই শাসকগোষ্ঠী অনুভব করেন। পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা থেকে শুরু করে প্রভাবশালীদের বড় অংশ ছিলেন উত্তর ভারত থেকে আগত উর্দুভাষী। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান থেকে শুরু করে পাকিস্তানের উচ্চ পদবীধারীরা ছিলেন উর্দুভাষী মোহাজের। জিন্নাহ ও তাঁর উত্তরসূরি লিয়াকত আলীর মন্ত্রিসভাকে তাই ‘মোহাজের মন্ত্রিসভা’ বলা হতো।

এক হিসেবে দেখা যায় ১৯৪৭-৫৮ পর্যন্ত পাকিস্তানের মোট ২৭ জন গভর্নর জেনারেল/প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, প্রাদেশিক গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ১৮ জন ছিলেন মোহাজের। এদের আবার অধিকাংশের ভাষা ছিল উর্দু। যে কারণে প্রথমে থেকেই শ্রেণী স্বার্থে তাঁরা উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে ছিলেন। এমন কি নাজিমুদ্দিন যিনি পূর্ববাংলার উচ্চপদে আসীন হয়েছিলেন তিনি ছিলেন উর্দুভাষী। স্বভাবতই তারা ও পশ্চিম পাকিস্তানি জনগোষ্ঠী রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সর্বত্র নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য এ ভাষাকে বেছে নেয়। পশ্চিম পাকিস্তানিরা বহুদিন থেকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে উর্দুকে চর্চা করায় তারা উর্দুর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করেনি। মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রভাবশালী অংশ পশ্চিম পাকিস্তানি হওয়ায় তারা সকলে এ ভাষার পক্ষে ছিলেন।

তবে পূর্ববাংলায় এর প্রতিবাদ ওঠে। কারণ পূর্ববাংলায় কখনোই উর্দু চর্চা হয়নি। বাঙালিরা গণতন্ত্র, জনসংখ্যাধিক্য ইত্যাদি কারণে ৫৬% বাংলাভাষীদের ভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা দাবি করেছে। এর সাথে জড়িত ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ। সব যুক্তি উপেক্ষা করে প্রশাসন, অর্থনীতির কেন্দ্রসহ পশ্চিম পাকিস্তান ও কেন্দ্রের রাজধানী স্থাপিত হয় করাচিতে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী অংশের সেখানে অবস্থানের ফলে স্বাভাবিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তান সমৃদ্ধ এলাকা এবং পূর্ববঙ্গ অবহেলিত এলাকায় পরিণত হয়।

বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগের ব্যবহার, উন্নয়ন কর্মকান্ডের বড় অংশ পশ্চিমে সম্পাদনের ফলে বঞ্চিত পূর্ববঙ্গবাসীদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে পাকিস্তান সৃষ্টির ফলে শুধু শাসকের বদল হয়েছে। ব্রিটিশ শোষণের বদলে পাকিস্তানি শোষকের আবির্ভাব হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনীতি, প্রশাসনসহ চাকরি ও পদের ক্ষেত্রে বাঙালিদের বঞ্চিত করার নীতি।

উর্দুকে সরকারি ভাষা ঘোষণা, গণমাধ্যমে ব্যাপক উর্দুর ব্যবহার, সরকারি কর্মকান্ডে যেমন মানি অর্ডার ফর্ম, টেলিগ্রাম ফর্ম, ডাকটিকেট, মুদ্রায় উর্দু ব্যবহার শুরু এবং সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উর্দু ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হলে শিক্ষিত বাঙালিরা এর প্রতিবাদ জানায়। প্রথম থেকেই তাই বাঙালি ছাত্র ও নেতৃবৃন্দের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, দাবি দাওয়াতে বাংলা ভাষাকেও সরকারি মর্যাদা দানের দাবি তোলা হয়। এভাবে বাংলা ভাষার দাবি পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

খ) ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু, অন্যান্য নেতৃত্ব ও নারী সমাজঃ 

বঙ্গবন্ধুর অবদান:

রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহবায়কসহ অনেকেই তখন দোদুল্যমানতায় ভুগছে, আপস করতে চাইছে সরকারের সঙ্গে। একটা বজ্রকণ্ঠ সচকিত হয়ে উঠলো সরকার কি আপস প্রস্তাব দিয়েছে? নাজিমুদ্দিন সরকার কি বাংলা ভাষার দাবি মেনে নিয়েছে? যদি তা না হয় তবে আগামীকাল ধর্মঘট হবে। সেক্রেটারিয়েটের সামনে পিকেটিং হবে। এই বজ্রকণ্ঠ ছিলো শেখ মুজিবের। ছাত্রনেতা শেখ মুজিবকে সমর্থন দিলেন অলি আহাদ, তোয়াহা, শওকত সাহেব, শামসুল হক। অলি আহাদ উল্লেখ করেছেন “সেদিন সন্ধ্যায় যদি মুজিব ভাই ঢাকায় না পৌঁছাতেন তা হলে ১১ মার্চের হরতাল, পিকেটিং কিছুই হতো না। তরুণ শেখ মুজিব সেই রাতে গোপালগঞ্জ থেকে এসে ফজলুল হক হলে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদান করেন। ১১ মার্চে সচিবালয়ের পিকেটিং করার সময় শেখ মুজিব গ্রেফতার হন। 

শেখ মুজিবসহ অন্য ছাত্রদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ১৩ মার্চ ছাত্র ধর্মঘট এবং ১৪ মার্চ প্রদেশব্যাপী দ্বিতীয় হরতাল পালিত হয়। ১৫ মার্চ শেখ মুজিব এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ জেল থেকে মুক্তি লাভ করে। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে পুকুর ধারে একটি ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন সদস্য কারামুক্ত ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে অ্যাসেম্বলি হাউস অভিমুখে ছাত্রদের একটি বিক্ষোভ মিছিল পরিচালিত হলো এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করলো।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বে অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে পল্টনে জনসভায় ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তবে এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়া ১৯৪৮ সাালের চাইতেই ব্যাপকতর ছিলো।

খাজা নাজিমউদ্দীনের ঘোষণায় জেলের অভ্যন্তরে তরুণ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। শেখ মুজিব এবং মহিউদ্দিন আহমদ তখন ঢাকা জেলে বন্দি ছিলেন। মহিউদ্দিন আহমদের ভাষ্যমতে শেখ মুজিব অসুস্থতার ভান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল ডেকে অ্যাসেম্বলি ঘেরাও কর্মসূচির পরামর্শ দেন শেখ মুজিব।  শেখ মুজিবকে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে আবারও জেলে ফেরত পাঠানো হয়। 

১৮ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হয়। নারায়গঞ্জ স্টিমার ঘাটে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রনেতা শামসুদ্দোহাসহ কয়েকজন ছাত্রনেতার সঙ্গে কথা হয়। শেখ মুজিব পুনরায় অনুরোধ করলেন ২১ ফেব্রুয়ারিতে হরতাল মিশিল শেষে আইনসভা যেন ঘেরাও করা হয় এবং বাংলা ভাষার সমর্থনে আইনসভার সদস্যদের স্বাক্ষর আদায় করা হয়। শেখ মুজিব কারাগারে থাকা অবস্থায় বাংলা ভাষার সমর্থনে ১৮ ফেব্রুয়ারি অনশন শুরু করেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি অনশন ভঙ্গ করেন। 

ভাষা আন্দোলনে নারী:

আটচল্লিশ ও বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনে তকালীন এদেশের নারী সমাজের প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। মিছিল, স্লোগান, সভা-সমিতিতে তারাও পুরুষের পাশাপাশি সগ্রাম করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশেষ করে কামরুন্নেসা স্কুল এবং ইডেন কলেজের ছাত্রীদের ভূমিকা ছিল সংগ্রামী। মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে নাদিরা চৌধুরীসহ আরও অনেকে পােস্টার, ফেস্টুন লিখন এবং নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ঢাকার বাইরেও নারী সমাজের ভূমিকা ছিল সক্রিয় এবং প্রতিবাদী। যশােরে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন হামিদা রহমান। 

বগুড়ার বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন রহিমা খাতুন, সালেহা খাতুনসহ অনেকে। ভাষা আন্দোলনে সিলেটের নারীদেরও ব্যাপক ভূমিকা ছিল। এ আন্দোলনে সংগ্রামী ভূমিকা রাখেন হাজেরা মাহমুদ, যােবেদা খাতুন চৌধুরী, শাহেরা বানু, সৈয়দা লুফুন্নেছা খাতুন, সৈয়দা নাজিরুন্নেছা খাতুন, রাবেয়া খাতুনসহ আরও অনেকে। পােস্টার ও প্রচার পত্রের মাধ্যমে আন্দোলন সচল রাখার তৎপরতা চালানোর সময় ১৯৪৯ সালের ১৩ই আগস্ট গ্রেফতার হন লিলি চক্রবর্তী । এসব সংগ্রামী ভূমিকার পাশাপাশি ঐ সময় বিভিন্ন স্থানে নারীরা ভাষা আন্দোলনকারীদের সহযােগিতা করেন। তাঁদের মধ্যে নিবেদিতা নাগ, সারা তৈফুর মাহমুদ, সাহেরা বানু উল্লেখযােগ্য।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি যারা পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের অধিবেশন বর্জন করেন, তাঁদের মধ্যে আনােয়ারা খাতুন ছিলেন অন্যতম। তিনি ব্যবস্থাপক সভায় বাংলা ভাষার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে ছাত্রীরাও দুঃসাহসী ভূমিকা রাখেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙ্গায় যারা সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, তারা হলেন শামসুন্নাহার, রওশন আরা, সুফিয়া ইব্রাহিম সহ অনেকে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলনের নেত্রী মমতাজ বেগম গ্রেফতার হলে পুলিশ জনতার মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়েছিল।

ভাষা আন্দোলনে অন্যান্য নেতৃত্ব:

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। এছাড়া ১৭ জন ছাত্র-যুবক আহত হয়। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। [সকল বিষয়ের এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে প্রথমে পেতে ভিজিট করুন NewResultBD.Com] শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।

২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রা সহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং অলিউল্লাহ নামক এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক, পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে সেদিনই পদত্যাগ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে রাতারাতি ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহীদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

গ) জাতীয়তাবাদ বিকাশে ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য 

১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে । পাকিস্তান রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে এটি ছিল বাঙালি জাতির প্রথম বিদ্রোহ । ভাষা আন্দোলন তঙ্কালীন রাজনীতি , সমাজ , অর্থনীতি , সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয় ।  

১. বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ : ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার মর্যাদার জন্যই গড়ে ওঠেনি । পাকিস্তানের মাত্র ৭.২ % জনগণ ছিল উর্দু ভাষাভাষী । পক্ষান্তরে ৫৪.৬ % জনগণের ভাষা বাংলাকে উপেক্ষা বাঙালি স্বভাবতই মেনে নিতে চায় নি।এর সাথে তাদের জীবিকার্জনের প্রশ্নও জড়িত ছিল।অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্যায় হিসেবে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠাকে তারা বেছে নেয় । এই বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাই ষাটের দশকে স্বৈরশাসন বিরােধী ও স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে আন্দোলনে প্রেরণা জোগায় ।

২. অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ : ভাষা আন্দোলনের ফলে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ঘটে । দ্বিজাতিতত্ত্বের ধর্মীয় চেতনার মূলে সংশয় দেখা দেয় । পাকিস্তান সৃষ্টির সাম্প্রদায়িক ভিত্তি ভেঙ্গেবাঙালিরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার আন্দোলন শুরু করে । ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলা ভাষার পক্ষে বক্তব্যের সমর্থনে ১৯৪৮ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । গণপরিষদে হিন্দু সদস্যদের ভাষার পক্ষে যে কোন প্রস্তাব – বক্তব্যের বিরােধিতা করেন মুসলিম সদস্যরা । মুসলিম লীগ ও শাসকচক্র চিরাচরিত ঐতিহ্যানুযায়ী ধর্মকে ব্যবহার করে ভাষা আন্দোলনকারী ও সমর্থকদের ভারতের দালাল ‘ , ‘ অমুসলিম ‘ , ‘ কাফের ‘ বলে চিহ্নিত করেও আন্দোলন থামাতে পারেনি । ফলে ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই তোরওয়ামী দীর্ঘদিন পর হিন্দু – মুসলিম সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায় । মুসলিম লীগ নামক বৃহৎ রাজনৈতিক দল তাদের দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামকরণ করে ।

৩.রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির সময় ৪ টি পৃথক ভাবাদর্শ  ভিত্তিক রাজনৈতিক ধারা লক্ষণীয় ছিল- 

১. মুসলিম জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শের প্রতিনিধিত্বকারী মুসলিম লীগ । মুসলিম লীগ আবার চারটি উপদলে বিভক্ত ছিল ক . নাজিমুদ্দিন – আকরাম খ গ্রুপ ; খ . সােহরাওয়ার্দীহাশিম গ্রুপ ; গ . এ.কে. ফজলুল হক গ্রুপ ; ঘ . মাওলানা ভাসানী গ্রুপ । প্রথম উপদলটি ছিল কট্টর ও উর্দুর পক্ষে । বাকি উপদলগুলাে | ছিল বাংলার পক্ষে । ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এই বাকি তিনটি উপদলই মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে । 

২. আংশিক ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক ধারার প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় কংগ্রেস , এদের তেমন প্রভাব না থাকলেও এরা ছিল বাংলার পক্ষে । 

৩. বিপ্লবী সাম্যবাদী ভাবধারার প্রতিনিধিত্বকারী কমিউনিস্ট পার্টি । 

৪. মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা প্রগতিশীল গণআজাদী লীগ । এরূপ রাজনৈতিক বিভাজন রাজনীতিতে ভাষা আন্দোলনভিত্তিক মেরুকরণ ঘটায় ।

৪. রাজনীতি থেকে মুসলিম লীগের চির বিদায় : 

ভাষা আন্দোলনে বিরােধিতা , স্বৈরশাসন , বাঙালির অধিকারের প্রতি উপেক্ষা সর্বোপরি দলের নেতাদের শ্রেণী চরিত্রের কারণে এ দলটি জনবিচ্ছিন্ন হতে সময় লাগে নি ।১৯৫২ সালেই আওয়ামী লীগ , গণতান্ত্রিক দল , ছাত্র ইউনিয়ন , পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন মুসলিম লীগ বিরােধী জোট গঠনের সূচনা করে । ১৯৫৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী মুসলিম গীগ , কৃষক – শ্রমিক পার্টি , নেজামী ইসলামী মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে । কমিউনিস্ট পার্টি ফ্রন্টে যােগ না দিলেও কেউ কেউ আওয়ামী মুসলিম লীগের টিকেটে প্রার্থী হন । সমাজবিজ্ঞানী রঙ্গলাল সেন লিখেছেন যে , ১০ জন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আওয়ামী মুসলিম লীগের পরিচয়ে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন । নির্বাচনে ভাষা আন্দোলনের সমর্থক যুক্তফ্রন্ট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়যুক্ত হয় । ৩০৯ টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মাত্র ১০ টি আসন লাভ করে মুসলিম লীগের মুখপত্র দৈনিক আজাদ ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবির জন্য যে ১০ টি কারণ চিহ্নিত করে তার প্রথমটি ছিল “ বাংলা ভাষার দাবির প্রতি অবিচার , ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে নুরুল আমীন সরকারের দমননীতি । ”

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৫. জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা : ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন শুধু শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী মহলে সীমাবদ্ধ থাকলেও ১৯৫২ সালের আন্দোলন ব্যাপক জনগণের মধ্যে প্রভাব ফেলে । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিস্থিতি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনায় তা অকার্যকর হয়ে পড়ে । স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে পরের দিনের গায়েবানা জানাজার পর ঢাকা শহরের পরিস্থিতির ওপর কারাে নিয়ন্ত্রণ ছিল না । কারাে নির্দেশ ছাড়াই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মহল্লা , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল রাজপথে নেমে পড়ে । পুলিশের সাথে জনতার বহু স্থানে সংঘর্ষ হয় । সারা ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহর ছিল প্রতিবাদ মিছিল আর হরতালের শহর । ঢাকায় পুলিশের গুলিবর্ষণের খবর মফস্বলে ছড়িয়ে পড়লে সেখানেও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ , সমাবেশ হয় ।

৬. কুসংস্কার ও গোড়ামিতে আঘাত : তখন সমাজ অত্যন্ত রক্ষণশীল হওয়া সত্ত্বেও মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মেয়েরা রক্ষণশীলতার প্রাচীর পেরিয়ে রাস্তায় নামে । ভাষার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে অনেক ছাত্রীই প্রথমে গােপনে পোেস্টার লিখে , চাদা দিয়ে সহযােগিতা করতাে । অবশ্য ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অনেক মেয়ে সরাসরি মিছিল , মিটিং – এ ছেলেদের সঙ্গে অংশ নেন । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রথম শােভাযাত্রায় মেয়েরাই প্রথম ছিলেন । ১৯৪৮ সালে যশাের ভাষা সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন হামিদা রহমান । নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের অগ্নিকন্যা ছিলেন মর্গান বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম । মিছিলে , সমাবেশে তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে । এছাড়া চট্টগ্রাম , সিলেট , কুমিল্লা , দিনাজপুর , সৈয়দপুরে নারী সমাজের ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল । ভাষা আন্দোলনের ফলে এমনিভাবে প্রকাশ্যে মহিলাদের সভাসমিতিতে , মিছিলে যােগদান সমাজে নতুন চিন্তাধারার সৃষ্টি করে । ভাষা আন্দোলনের পর পর রাজনীতি , শিক্ষা ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায় ।

৭. বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি : ভাষা আন্দোলনের তীব্রতা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারকে ভাবিয়ে তােলে । ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ পাকিস্তান গণপরিষদের বিবেচনার জন্য প্রেরণের একটি প্রস্তাব স্বয়ং মুসলিম লীগ পাস করে । যদিও গণপরিষদে তা বাধার সম্মুখীন হয় । ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের আগে এ বিষয় কোন অগ্রগতি হয়নি । যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মােতাবেক ২১ ফেব্রুয়ারি শােক দিবস হিসেবে ছুটি ও শহীদ দিবস ঘােষণা করে । এছাড়া একই বছর গণপরিষদ পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে উর্দু ও বাংলা এবং পার্লামেন্টেই ইংরেজী ছাড়াও উর্দু ও বাংলায় বক্তব্য রাখার বিধান করা হয়।অন্যদিকে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। 

৮. বাংলা ভাষা চর্চা ও বিকাশ : 

রাষ্ট্রভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার ফলে সাহিত্য ও সাংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির সম্ভাবনা নিশ্চিত হয় । এই পথ ধরেই ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশের পথ উন্মুক্ত হয় । সম্ভব হয় সাংস্কৃতিক খন্ডিত ও বিকৃত করার চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন সংগঠিত করে তােলার শক্তি ও সাহস।এতােদিন বাংলা সাহিত্যিকে সংস্কৃত ও হিন্দু প্রভাবিত বলার প্রয়াসের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলন ছিল জোরালাে প্রতিবাদ । কবি , সাহিত্যিক , সাংস্কৃতিক কর্মীরা নতুনভাবে অনুপ্রাণিত হন । হাসান হাফিজুর রহমান , শামসুর রহমান , আলাউদ্দিন আল আজাদ , আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ , সৈয়দ শাসসুল হক ও আলাে অনেকে কাব্য ও সাহিত্য , ভাষা আন্দোলন অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করে।

৯. শহীদ স্মৃতির প্রতীক ও আন্দোলনের উৎস শহীদ মিনার তৈরি : 

১৯৫২ সালেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায় শহীদ মিনার । শুধু ঢাকায় নয় ঢাকার বাইরে রাজশাহী , চট্টগ্রাম , মানিকগঞ্জ , ময়মনসিংহ , গােপালগঞ্জ , দিনাজপুর , পাবনার শহীদ মিনার গড়ে ওঠে । এই শহীদ মিনার শুধু শহীদদের স্মৃতিকেই অমরত্ব দেয়নি , প্রতিষ্ঠিত করেছে এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য এক উদ্দীপনা।শহীদ মিনারই পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদ , বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা ও আন্দোলনেরকেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরেই পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সহ দেশের প্রায় সকল শহীদ মিনার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় । 

১০. স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা : 

ভাষা আন্দোলন ভাষার দাবিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও ক্রমে এর সাথে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন জড়িত হয়ে পড়ে । ভাষা আন্দোলনকালে ও পরে বিভিন্ন লেখনি ও দাবিদাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু বাংলাভাষা নয় বরং বাঙালিদের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপিত হয় । গণপরিষদে পূর্ববাংলার জনসংখ্যানুপাতিক আসন , প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন , কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঙালি নিয়ােগ , পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসান ঘটানাের দাবি করা হয় । যুক্তফ্রন্ট এসব দাবিকে প্রথম জনসমক্ষে নিয়ে আসে । যা ষাটের দশকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ৬ দফা দাবিতে পরিস্ফুটিত হয় । এরপর ধারাবাহিকভাবে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে রূপ নেয় । স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে যা চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করে । তাই বলা যায় যে , ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি স্তরে প্রেরণা যুগিয়েছে ভাষা আন্দোলন। 

ঘ) বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকায়নের পটভুমি তাৎপর্য  

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরের বছর থেকে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির একুশে দিনটি বাঙালির শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে । বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারি রাত ১২ টা এক মিনিটে রাষ্ট্রপতি , প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে ভাষাশহিদদের প্রতি পুস্পার্ঘ্য নিবেদন করেন । একুশের  প্রভাতফেরি ও প্রভাতফেরির গান বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে ।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২১ শে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন ঘােষণা করা হয় । এদিন শহিদ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন  অনুষ্ঠান আয়ােজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি চেতনাকে লালন করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয় । ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতি রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করে । বিশ্বের ইতিহাসে অনন্যসাধারণ ঘটনা হিসেবে আমাদের ভাষা ও শহিদ দিবস আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ মাতৃভাষা দিবস ‘ হিসেবে ঘােষণা করা হয় । ২০০০ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি থেকে এই দিনটি সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। 

ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্যসাধারণ ঘটনা । পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এটি ছিল বাঙালি জাতির প্রথম প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ , বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রেরণা । ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতি পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের অবহেলা , বঞ্চনা , শশাষণের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল । মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবমাননা বাঙালির মনকে প্রবল নাড়া দিয়েছিল । তারা বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানিদের হাতে তাদের ভাষা , সংস্কৃতি , অর্থনীতি কিছুই নিরাপদ নয় । এভাবেই বাঙালির মাঝে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপিত হয় ।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

সবার আগে Assignment আপডেট পেতে Follower ক্লিক করুন

এসাইনমেন্ট সম্পর্কে প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে Google News <>YouTube : Like Page ইমেল : assignment@banglanewsexpress.com

অন্য সকল ক্লাস এর অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর সমূহ :-

  • ২০২১ সালের SSC / দাখিলা পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
  • ২০২১ সালের HSC / আলিম পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
  • ভোকেশনাল: ৯ম/১০ শ্রেণি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
  • HSC (বিএম-ভোকে- ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স) ১১শ ও ১২শ শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
  • ২০২২ সালের ১০ম শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের SSC ও দাখিল এসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
  • ২০২২ সালের ১১ম -১২ম শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের HSC ও Alim এসাইনমেন্ট উত্তর লিংক

৬ষ্ঠ শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ , ৭ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ ,

৮ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ , ৯ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় SSC এসাইনমেন্ট :

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় HSC এসাইনমেন্ট :

Leave a Comment