মনে কর তােমার ঘনিষ্ঠ একজন সহপাঠীর আচরণে মুনাফিকের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, তাকে প্রকৃত মুমিন বান্দা হতে সহায়তা করার জন্য তুমি কী কী উদ্যোগ নিতে পারাে- এ সম্পর্কিত একটি কর্মপরিকলপনা তৈরি করাে।

এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজঃ

মনে কর তােমার ঘনিষ্ঠ একজন সহপাঠীর আচরণে মুনাফিকের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, তাকে প্রকৃত মুমিন বান্দা হতে সহায়তা করার জন্য তুমি কী কী উদ্যোগ নিতে পারাে- এ সম্পর্কিত একটি কর্মপরিকলপনা তৈরি করাে।

১। সহপাঠীর কোন কোন আচরণে মুনাফিকের লক্ষণ তার উল্লেখ;
২। উক্ত আচরণগুলাে কেন ক্ষতিকর তার ব্যাখ্যা;
৩। উক্ত বিষয়ের কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি;
৪। সহপাঠীর মুনাফিকী আচরণ দূর করার উপায়;
৫। সহপাঠীকে মুমিন হওয়ার জন্য তােমার পদক্ষেপ;

উত্তর সমূহ:

১। সহপাঠীর কোন কোন আচরণে মুনাফিকের লক্ষণ তার উল্লেখ;

উত্তর :

মুনাফিকের লক্ষণ হচ্ছে তিনটি- (১) কথা বললে মিথ্যা বলে (২) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে (৩) আর তার কাছে কোন আমানত রাখলে তা খেয়ানত করে

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


২। উক্ত আচরণগুলাে কেন ক্ষতিকর তার ব্যাখ্যা;

উত্তর :

‘মুনাফিক’ শব্দটি ‘নিফাক’ শব্দমূল থেকে এসেছে, যার অর্থ কোনো কিছুকে গোপন রেখে এর বিপরীত কথা বা কাজ প্রকাশ করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যে অন্তরে কুফরি ও ইসলামবিরোধিতা রেখে মুখে ও প্রকাশ্যে ইসলাম প্রকাশ করে এবং মুসলমান হওয়ার দাবি করে। এরা কেন এ কাজ করে, এর ব্যাখ্যায় কোরআনের এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোঁকা দিতে চায়, আসলে তারা নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা করছে, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারছে না’ (সুরা বাকারা : ৯)। অপর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা মূলত কাফিরদের কাছ থেকে মান-মর্যাদা পেতে চায়’ (সুরা আন-নিসা : ১৩৯)।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

কারো মতে, ‘নাফেকুল ইয়ারবু’ (পাহাড়ি ইঁদুর) থেকে মুনাফিক শব্দটি গঠিত।
পাহাড়ি ইঁদুরকে ‘নাফেকুল ইয়ারবু’ বলা হয়। কারণ পাহাড়ি ইঁদুর অত্যন্ত ধূর্ত হয়, এরা পাহাড়ে অনেক গর্ত খনন করে। এদের মারার জন্য এক গর্তে পানি বা অন্য কিছু দিলে অন্য গর্ত দিয়ে বের হয়ে পালিয়ে যায়, ফলে এদের সহজে মারা যায় না। মুনাফিকও অনুরূপ ধূর্ত। তাদের সহজে চেনা যায় না।

ইসলামের ইতিহাসে মুনাফিকের সর্দার হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেছে আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল। মুনাফিকদের অন্যতম নিকৃষ্ট কাজ হলো মুমিনদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদকা দেয়, আর যারা নিজ অর্জিত শ্রম ছাড়া আর কিছুই (দান করতে) পায় না, তাদের যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রুপ করে, আল্লাহও তাদের নিয়ে বিদ্রুপ করেন। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (সুরা তওবা : ৭৯)।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


৩। উক্ত বিষয়ের কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি;

উত্তর :

যার ভেতরের অবস্থা বাহ্যিক প্রকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় সেই মুনাফিক। মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আমানত খেয়ানত করা হলো মুনাফিকের পরিচয়।

মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : ‘তারা যখন ঈমানদার লোকদের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। কিন্তু নিরিবিলিতে যখন তারা তাদের শয়তানদের সঙ্গে একত্রিত হয়, তখন তারা বলেন, আসলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই রয়েছি, আর উহাদের সঙ্গে আমরা শুধু ঠাট্টাই করি মাত্র।’ (বাকারা ১৪)

‘তাদেরকে যখন বলা হয় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেইদিকে এসো ও রাসূলের নীতি গ্রহণ কর, তখন এ মুনাফিকদেরকে আপনি দেখতে পাবেন যে, তারা আপনার নিকট আসতে ইতস্তত করছে ও পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।’ (নিসা ৬১)

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

‘যেসব মুনাফিক ঈমানদার লোকদের বাদ দিয়ে কাফের লোকদেরকে নিজেদের বন্ধু ও সঙ্গীরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে। উহারা কি সম্মান লাভের সন্ধানে তাদের নিকটে যায়? অথচ সম্মানতো একমাত্র আল্লাহরই জন্য।’ (নিসা ১৩৮-১৩৯)

‘নিশ্চয় মুনাফিকগণ জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে, আর আপনি তাদের সাহায্যকারী হিসেবে কখনও কাউকে পাবেন না।’ (নিসা ১৪৫)

‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক মহিলা সকলেই পরস্পর অনুরূপ ভাবাপন্ন, তারা অন্যায় কাজের প্ররোচনা দেয় এবং ভাল ও ন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে এবং কল্যাণকর কাজ হতে নিজেদের হস্ত ফিরিয়ে রাখে। এরা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহও তাদের ভুলে গেছেন। এ মুনাফিকরাই হল ফাসেক।’ (তওবা ৬৭)

‘এই মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং কাফেরদের জন্য আল্লাহতায়ালা দোযখের আগুনের ওয়াদা করেছেন, যাতে তারা চিরদিন থাকবে, ইহাই তাদের উপযুক্ত। তাদের উপর আল্লাহর অভিসাপ এবং তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী আযাব।’ (তওবা ৬৮)

‘হে নবী! কাফির ও মুনাফিক উভয়ের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে জিহাদ করো এবং তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন কর। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম, আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান।’ (তওবা ৭৩)

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

মুনাফিক সম্পর্কে হাদীস : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। নবী করীম (সা.) বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি- কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে, আর তার কাছে কোন আমানত রাখলে তার খেয়ানত করে। (বুখারী)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত নবী (সা.) বলেন, চারটি দোষ যার মধ্যে থাকে সে খাটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে উক্ত দোষগুলোর কোন একটি থাকে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকীর একটি স্বভাব থেকে যায়। যথা- তার কাছে কোন আমানত রাখলে সে তার খেয়ানত করে, সে কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং সে ঝগড়া করলে গালাগালি দেয়। (বুখারী)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন, এমন দুটি গুণ আছে যা মুনাফিকের মধ্যে একত্র হতে পারে না। যথা- সুস্বভাব এবং দ্বীনের যথার্থ জ্ঞান। (মিকাত)

হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) নবী করীম (সা.) হতে শুনে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, এ উম্মতের ব্যাপারে এমন সব মুনাফিক সম্পর্কে আমার আশংকা হয়, যারা কথা বলে সুকৌশলে, আর কাজ করে জুলুমের সঙ্গে। (বায়হাকী)

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


৪। সহপাঠীর মুনাফিকী আচরণ দূর করার উপায়;

উত্তর :

মুখে মধু মনে বিষ, গিরগিটির মতো ক্ষণে ক্ষণে রং বদলানো মানুষগুলোকে আমরা মুনাফিক বলে থাকি। এরা খুব চালাক প্রকৃতির হয়। ফলে এদের জালে আটকা পড়ে থাকতে হয় সরলমনা মুমিনদের। এরা সব সময় মানুষকে ব্যবহার করে, কিন্তু কখনো কারো কল্যাণে কাজ করে না। উপরন্তু সুযোগ পেলেই মানুষের ক্ষতি করে বসে। মহান আল্লাহ এ ধরনের লোকদের পছন্দ করেন না। এদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনো তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী পাবে না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪৫)

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

এ ছাড়া এমন অনেক অভ্যাস আছে, যেগুলোকে পবিত্র কোরআন-হাদিসে মুনাফিকদের অভ্যাস বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে নিম্নে সে রকম কিছু অভ্যাস তুলে ধরা হলো।

নামাজে অলসতা : নামাজে অলসতা ও লোক দেখানো নামাজ—এ দুটিকেই কোরআনের ভাষায় মুনাফিকের অভ্যাস বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। আর (আল্লাহ) তিনি তাদের ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা লোকদের দেখায় এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪২)

জামাতে অংশগ্রহণ না করা : যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া জামাত তরক করাকেও সাহাবায়ে কেরাম মুনাফিকের আলামত বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা মনে করি যার মুনাফিকি সর্বজনবিদিত এমন মুনাফিক ছাড়া কেউ-ই জামাতে নামাজ আদায় করা ছেড়ে দেয় না। অথচ রাসুল (সা.)-এর যুগে এমন ব্যক্তি জামাতে উপস্থিত হতো যাকে দুজন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে এসে নামাজের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হতো। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৪)

দ্বিমুখী আচরণ : আমাদের সমাজে মানুষের মতো দেখতে এমন কিছু প্রাণী আছে, যারা সব মহলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ঘন ঘন রং বদলায়। সবার কাছে মহৎ সাজতে চায়। মূলত তারা এভাবেই মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে। রাসুল (সা.)-এর যুগেও এমন মুনাফিক ছিল। মহান আল্লাহ বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তারা তোমাদের নিকট আসে, তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি। অথচ অবশ্যই তারা কুফরি নিয়ে প্রবেশ করেছে এবং তারা তা নিয়েই বেরিয়ে গেছে। আর আল্লাহ সে সম্পর্কে জ্ঞাত, যা তারা গোপন করত।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৬১)

বাচাল হওয়া : বাকপটু লোকদের সব কথা বিশ্বাস করতে নেই। এটি নিফাকের একটি শাখা মাত্র। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জা, সম্ভ্রম ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুটি শাখা। অশ্লীলতা ও বাকপটুতা (বাচালতা) নিফাকের (মুনাফিকির) দুটি শাখা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০২৭)

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

অশ্লীলতা পছন্দ করা : বর্তমান যুগে আমরা নিজেরাই অনেক অশ্লীল কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছি। কিছু কিছু বিষয় এমন হয়ে পড়ছে যে আমরা সেগুলোকে গুনাহই মনে করছি না। অথচ অশ্লীলতা পছন্দ করা মুনাফিকের অভ্যাস। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা একে অপরের অংশ, তারা মন্দ কাজের আদেশ দেয় আর ভালো কাজ থেকে নিষেধ করে, তারা নিজেদের হাতগুলোকে সংকুচিত করে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে; ফলে তিনিও তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই মুনাফিকরা হচ্ছে ফাসিক।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৬৭)

মিথ্যা বলা : গুছিয়ে মিথ্যা বলা মানুষগুলো সবার প্রিয় হয়, আস্থাভাজন হয়। কিন্তু পবিত্র কোরআনে এদের মুনাফিক বলা হয়েছে, এদের থেকে সাবধান থাকা উচিত। এ রকম লোকদের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সাবধান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমার কাছে মুনাফিকরা আসে, তখন বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসুল এবং আল্লাহ জানেন যে অবশ্যই তুমি তাঁর রাসুল। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে অবশ্যই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী।’ (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত : ১)

ধোঁকা দেওয়া : ধোঁকা মুনাফিকদের অভ্যাস। তারা সব সময় মানুষকে ধোঁকা দেবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘…তারা আল্লাহকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের ধোঁকা দিচ্ছে। অথচ তারা নিজেদেরই ধোঁকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮-১০)

ওয়াদা ভঙ্গ করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি : যখন সে কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে, যখন সে ওয়াদা করে, তখন তা ভঙ্গ করে, আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় সে তা খিয়ানত করে। (বুখারি, হাদিস : ৬০৯৫)

আমানতের খিয়ানত : মুনাফিক লোকদের কাছে আমানত রাখা হলে তারা তা রক্ষা করে না। রাসুল (সা.) এই অভ্যাসকে মুনাফিকের চিহ্ন বলেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০৯৫)

গান-বাজনায় মগ্ন থাকা : গান-বাজনা মানুষের অন্তরে মুনাফিকি সৃষ্টি করে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে। (ইগাসাতুল লাহফান (১/১৯৩, আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯২৭, তাফসিরে কুরতুবি : ১৪/৫২)। অনেকে বলেন, শর্তসাপেক্ষে গান গাওয়া জায়েজ। তাদের উদ্দেশে সবিনয়ে বলতে চাই, যেসব শর্তে গান জায়েজ সেসব শর্ত পালন করলে তাকে আমাদের পরিভাষায় গান বলে না, গজল, হামদ বা নাত ইত্যাদি বলে। ইদানীং কিছু কিছু গজলেও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলোকে শরিয়তের পরিভাষায় গজল বলে না, গানই বলে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

যে সুর মানুষের মনে অন্য রকম প্রভাব বিস্তার করে, মানুষকে আল্লাহর জিকির থেকে অমনোযোগী করে।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতবিষয়ক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লরেন স্টুয়ার্ট বলেন, যেসব গানের মেলোডি বা সুরের গঠন খুব সহজ-সরল, অর্থাৎ যে গানগুলোর তাল-লয় অথবা সুরের উত্থান-পতনের একটি সাধারণ প্যাটার্ন থাকে, সেগুলো আমাদের মস্তিষ্ক সহজেই গেঁথে নেয়। এই বিষয়টিকে সংগীতের ভাষায় বলা হয় ‘মেলোডিক আর্কস’। অর্থাৎ একটা সুরের বৃত্তে বাঁধা পড়া। (বিবিসি)

যাঁরা গান শোনেন, তাঁরা হরহামেশাই এর সম্মুখীন হন। অনেক সময় নিজের অজান্তে গুনগুন করে নিজেই সে গান গাইতে থাকেন। এভাবেই একজন মানুষ নিজের অজান্তেই সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে সৃষ্টির প্রেমে ডুবে যায়। তার কল্পনায় বাসা বাঁধে দুনিয়ার রঙিন স্বপ্ন। গানের কথা অশ্লীল হলে মনও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত হয়।

আল্লাহ এ ধরনের কাজ থেকে আমাদের বিরত রাখুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত নসিব করুন।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


৫। সহপাঠীকে মুমিন হওয়ার জন্য তােমার পদক্ষেপ;

উত্তর :

নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহর কাছে মনোনীত জীবন ব্যবস্থা। এ জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে একমত, তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ের ওপর বিনা সন্দেহে বিশ্বাস থাকতে হবে। তবেই সে হবে ঈমানদার। আর তখনই তার জন্য ইসলাম হবে মনোনীত জীবন ব্যবস্থা।

যে বিষয়গুলোর প্রতি আল্লাহ তাআলা পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। সে বিষয়গুলো হলো-

  • আল্লাহর জাত ও সব সিফাতের ওপর বিনা শর্তে বিশ্বাস স্থাপন করা।
  • আল্লাহর ফেরেশতাদের ওপর বিশ্বাস পূর্ণ স্থাপন করা।
  • আসমানি কিতাবসমূহের ওপর বিশ্বাস পূর্ণ স্থাপন করা।
  • দুনিয়াতে আসা সব রাসুলদের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা।
  • পরকালের (মৃত্যু পরবর্তী জীবনের) ওপর বিনা সন্দেহে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা।
  • আল্লাহ তাআলা কর্তৃক সুনির্ধারিত ভাগ্যের ভালো ও মন্দের ওপর বিশ্বাস রাখা।

উল্লেখিত বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথম পাঁচটির ব্যাপারে পবিত্র কুরআনুল কারিমে রয়েছে সুস্পষ্ট ঘোষণা। আর উপরের বিষয়গুলোসহ শেষটির ব্যাপারে রয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুস্পষ্ট ঘোষণা।
আল্লাহ তাআলা ঈমানদার বান্দার জন্য কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট ভাষায় এ নির্দেশগুলোর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের কথা বলেছেন। যারা এগুলোর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই মুমিন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘রাসুল বিশ্বাস স্থাপন করেছেন ওইসব বিষয়ের প্রতি যা তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে (ওহি হিসেবে) অবতীর্ণ হয়েছে আর মুমিনরাও (তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে)। সবাই বিশ্বাস করেছেন আল্লাহর ওপর, তার ফেরেশতাদের ওপর, তার (আসমানি) কিতাবসমূহের ওপর এবং তার (বার্তাবহক হিসেবে পাঠানো) রাসুলদের ওপর। তারা বলে, আমরা তার রাসুলদের একজনকে আরেকজন থেকে আলাদা করি না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮৫)

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়গুলোর প্রতি ঈমান আনার কথা বলার পাশাপাশি যারা তা অস্বীকার করবে তাদের ব্যাপারে ঘোষণা করেন-
‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহ, তার রাসুল এবং তার রাসুলের ওপর অবতীর্ণ কিতাবসমূহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন কর। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ, তার ফেরেশতা, তার কিতাব, তার রাসুল ও শেষ দিনকে (পরকাল) অস্বীকার করে, সে চরম পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৩৬)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়গুলোর ব্যাপারেও দিয়েছেন সুস্পষ্ট ঘোষণা। তিনি বলেছেন-
‘ঈমান হলো তুমি আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার (আসমানি) কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলদের প্রতি এবং শেষ দিনের (পরকালের) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। আর আরও বিশ্বাস স্থাপন করবে ভাগ্যের ভালো ও মন্দের প্রতি।’ (বুখারি ও মুসলিম)

হাদিসের অন্য বর্ণনা এসেছে, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘ঈমান হলো তুমি আল্লাহ, তার সব ফেরেশতা, তার কিতাব, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত এবং তার রাসুলদের প্রতি (পূর্ণ) বিশ্বাস রাখা। আর পরকালে পুনরুত্থানের দিন (কেয়ামতের দিন) ও তকদিরের সবকিছুর (ভালো-মন্দ) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।’ (মুসলিম)

সুতরাং যারা নিজেদের ইসলামের অনুসারী হিসেবে দাবি করে কিংবা মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয়, তাদের জন্য এ ৬টি বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন জরুরি। যতক্ষণ না তারা বিনা সন্দেহে ও শর্তে এ ৬টি বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈমানদার বা মুমিন হতে পারবে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানদার হতে এ বিষয়গুলোর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার সার্বিক স্বচ্ছলতা ও পরকালের চিরস্থায়ী সফলতা দান করুন। আমিন।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

J.S.C

4 thoughts on “মনে কর তােমার ঘনিষ্ঠ একজন সহপাঠীর আচরণে মুনাফিকের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, তাকে প্রকৃত মুমিন বান্দা হতে সহায়তা করার জন্য তুমি কী কী উদ্যোগ নিতে পারাে- এ সম্পর্কিত একটি কর্মপরিকলপনা তৈরি করাে।”

Leave a Comment