ময়মনসিংহ বিভাগ সম্পর্কে প্রশ্ন
সর্বশেষ সংশোধিত ও জেলা সম্পর্কে প্রশ্ন ও সমাধান টি আপডেটের করা হয়েছে ২০২৪
বাংলাদেশের ৬৪ জেলা সম্পর্কে প্রশ্ন ও সমাধান ২০২৪
এক নজরে ময়মনসিংহ বিভাগ
১। ময়মনসিংহ বিভাগ সৃষ্টিঃ
ময়মনসিংহ অষ্টম প্রশাসনিক বিভাগ। ১৮২৯ সালে ঢাকা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল ঢাকা বিভাগের অংশ ছিল। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ঢাকা বিভাগ ভেঙ্গে নতুন ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতৈ ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত হয়।
২। ময়মনসিংহ নামকরণ:
শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সূতিকাগার বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিস্তীর্ণ জনপদ। এর ভৌগলিক পরিবেশ বিচিত্র হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের সামাজিক জীবন, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, জীবিকা ও সংস্কৃতি বৈচিত্র্যপূর্ণ। প্রবাদ আছে ‘হাওর, জঙ্গল, মহিষের শিং; এ নিয়ে ময়মনসিং’। জেলার নাম ময়মনসিংহ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ’র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন। সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। মহুয়া-মলুয়ার দেশ ময়মনসিংহের পূর্ব নাম ছিল নাসিরাবাদ। ১৭৭৯-তে প্রকাশিত রেনেল এর ম্যাপে মোমেসিং নামটি বর্তমান ’ময়মনসিংহ’ অঞ্চলকেই নির্দেশ করে। তার আগে আইন-ই-আকবরীতে ‘মিহমানশাহী’ এবং ‘মনমনিসিংহ’ সরকার বাজুহার পরগনা হিসাবে লিখিত আছে; যা বর্তমান ময়মনসিংহকেই ধরা যায়। মোগল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তাঁর নামেই মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী। কালের বিবর্তনে এটি ‘ময়মনসিংহ’ নামে পরিচিতি পায়।
ময়মনসিংহ
৩। ময়মনসিংহ বিভাগের ভৌগলিক অবস্থান ও সীমানাঃ
ময়মনসিংহ বিভাগ ২৪‘১০“ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০‘২৫“ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে ঢাকা বিভাগ, পূর্বে সিলেট বিভাগ, পশ্চিমে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ অবস্থিত। এ বিভাগের প্রধান নদ নদীগুলো হলো পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, সুতিয়া, কংশ, সোমেশ্বরী, নিতাই, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কংস, ভোগাই ইত্যাদি।
৪। প্রশাসনিক তথ্যঃ
জেলা | আয়তন(ব:কি:মি:) | উপজেলা | সিটি কর্পো/ পৌরসভা | ইউনিয়ন | জনসংখ্যা | ভোটার | সংসদীয় আসন | সংরক্ষিত মহিলা আসন |
ময়মনসিংহ | ৪৩৬৩.৪৮ | ১৩ | ১১ | ১৪৬ | ৫৩,১৩,১৬৩ | ৩৫,৯৪,৪৯৩ | ১১ | ০১ |
জামালপুর | ২০৩১ | ০৭ | ০৭ | ৬৭ | ২৩,৮৪৮১০ | ১৫,৯৭,২৫৫ | ০৫ | ০২ |
নেত্রকোণা | ২৭৯৪ | ১০ | ০৫ | ৮৬ | ২২,০৭,০০০ | ১৪,৬৬,১১৬ | ০৫ | ০০ |
শেরপুর | ১৩৬৩.৭৬ | ০৫ | ০৫ | ৫২ | ১৫,৪২,৬১০ | ৯,৯২,১৯১ | ০৩ | ০১ |
সর্বমোট | ১০,৫৫২ | ৩৫ | ২৭ | ৩৫১ | ১,১৪,৪৭,৫৮৩ | ৭৭,১২,৩৫৯ | ২৪ | ০৪ |
৫। মৌলিক তথ্যাবলীঃ
বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম | ০৩/১২/২০১৫ খ্রি. | |
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার | ১.৩৪ % (জাতীয়- ১.৩৭ %) | |
জনসংখ্যার ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কি.মি.) | ১২৭৩ জন | |
শিক্ষার হার | ৪০.৯১% | |
জনগোষ্ঠির প্রধান পেশা | কৃষি (৬৫.৭ %) | |
দারিদ্র্যের হার | ৩২.৭৭ % (জাতীয়- ২৪.৩৩ %)সর্বনিম্ন- ভালুকা, ১৫.৫ % এবং সর্বোচ্চ- দেওয়ানগঞ্জ, ৬৩.২ % | |
সীমান্তবর্তী উপজেলার সংখ্যা | ০৯ টি | |
ভারতের সাথে সীমান্তের দৈর্ঘ্য | ১৯২.১ কি.মি | |
বি.ও.পি’র সংখ্যা | ৩৪ টি | |
প্রাথমিক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার | ১১.৩১% | |
গড় তাপমাত্রা | ২৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস | |
নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি | ০৫ লাখের অধিক, গারো, হাজং, কোচ, বর্মণ, রাজবংশী (আনুমানিক ১৭ ধরনের নৃগোষ্ঠী) | |
অর্থনৈতিক অঞ্চল | ০২টি | |
শিল্প কারখানা | ৮২১৩ টি | |
মেডিক্যাল কলেজ | ০৪টি |
৬। রাজস্ব সম্পর্কিত তথ্যাবলীঃ
মৌজা | ৫১১৪টি |
খাস জমির পরিমাণ (কৃষি) | ১২১৬৯২.৬০ |
বন্দোবস্তযোগ্য খাস জমি (কৃষি) | ৫২৭৯৪.৮৭ |
বন্দোবস্তকৃত খাস জমি (কৃষি) | ৫৭৭৫.৪৯ |
খাস জমির পরিমাণ (অকৃষি) | ৮২৪৩৬.৬ |
বন্দোবস্তযোগ্য খাস জমি (অকৃষি) | ২০৯৫.২৭ |
বন্দোবস্তকৃত খাস জমি (অকৃষি) | ২৯,৬৫৭.৩৫৭ |
অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ | ২৪২৬৪.৪৩ |
হাট বাজার | ৯২৪ |
জলমহাল ও বালুমহাল | ২০ একরের উর্ধ্বে ২০১টি, ২০ একর পর্যন্ত ৫৫৩টি, বালুমহাল ১৪টি |
বীর নিবাস প্রকল্প | ৪১৩ টি |
৭। কৃষি সম্পর্কিতঃ
জেলার নাম | চাষযোগ্য ফসলি জমি(হেক্টর) | খাদ্যশস্য চাহিদা(মেট্রিক টন) | খাদ্যশস্য উৎপাদন(মেট্রিক টন) | কৃষক পরিবার সংখ্যা | প্রধান প্রধান ফসল |
ময়মনসিংহ | ৩,৩২,৭৩৭ | ৮,৭৮,৫০৫ | ১৭,৯৪,৩৬৪ | ৯,৬৭,১৬২ | ধান, আলু, পাট, বেগুন, ভূট্টা, গম, সবজি ইত্যাদি |
জামালপুর | ১,৬৩,০৩৪ | ৪,৪০,৯৯২ | ৯,৭৭,৩০৫ | ৫,১৮,৯৪৬ | |
নেত্রকোণা | ২,১৭,১৯৩ | ৩,৮১,৯১৪ | ১০,৭৪,১১০ | ৪,৫১,৭৬৫ | |
শেরপুর | ১,০৬,৫৪৪ | ২,৫৫,০৬২ | ৫,০৮,২২৪ | ৩,৬৯,৯৫০ | |
মোট | ৮,১৯,৫০৮ | ১৯,৫৬,৪৭৩ | ৪৩,৫৪,০০৩ | ২২,৬৫,৩৫০ |
৮। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিঃ
জেলার নাম | বয়স্ক ভাতা | বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা | মাতৃত্বকালীন ভাতা | ভিজিডি ভাতা | মা ও শিশু ভাতা | তৃতীয় লিঙ্গ ভাতা | প্রতিবন্ধী ভাতা |
ময়মনসিংহ | ২৩২৯৩৪ | ১০৩০১৫ | ১৫৫৭৩ | ৩৫০২৪ | ২০৭৩২ | ৭৭ | ৭২৮২৫ |
নেত্রকোণা | ১২৫৪৩০ | ৬৮৭১৬ | ১৬৪০২ | ১৬৬৩৬ | ২০৮১ | ৩৪ | ৩১২১৮ |
জামালপুর | ১২৩২২৩ | ৫৮৮৩৪ | ১০৯৫৫ | ২০৮৭১ | ২১৮২ | ৭৫ | ৩২৪২০ |
শেরপুর | ৭১৪৫১ | ৩৮২১২ | ৬৭৮০ | ১১৪৮৩ | ৪৮২৬ | ১৩ | ১৮৪৫৯ |
মোট | ৫,৫৩,০৩৮ | ২,৬৮,৭৭৭ | ৪৯,৭১০ | ৮৪,০১৪ | ২৯,৮২১ | ১৯৯ | ১,৫৪,৯২২ |
৯। শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য:
ক্রমিক | প্রতিষ্ঠানের নাম | ময়মনসিংহ | জামালপুর | নেত্রকোণা | শেরপুর | মোট |
০১ | বিশ্ববিদ্যালয় | ০২ | ০১ | ০১ | – | ৪ |
০২ | মেডিকেল কলেজ | ০2 | ০১ | ০১ | – | ৪ |
০৩ | পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট | 01 | 01 | – | 01 | 3 |
০৪ | ক্যাডেট কলেজ | 01 | – | – | – | 1 |
০৫ | কলেজ | 62 | 42 | 33 | 29 | 166 |
০৬ | সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | 02 | – | – | – | 2 |
০৭ | উচ্চ বিদ্যালয় | 573 | 355 | 261 | 181 | 1370 |
০৮ | মাদ্রাসা | 385 | 175 | 90 | 103 | 753 |
০৯ | প্রাথমিক বিদ্যালয় | ২১৪০ | ১১৬১ | ১৩১৪ | ৭৪১ | ৫৩৫৬ |
১০। উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য:
বিভাগের নাম | চলমান প্রকল্প সংখ্যা | টাকা (কোটি) |
গণপূর্ত অধিদপ্তর | ৪২ | ২২৫৭ |
সড়ক ও জনপথ সার্কেল | ২২ | ১০৩৭ |
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর | ৩৬ | ২৮৪ |
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর | ১৪ | ২৩২০ |
পানি উন্নয়ন বোর্ড | ০৬ | ৯৯৫ |
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর | ১৯ | ১৯১ |
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর | 17 | 320 |
মোট | ১৫৬ | ৭৪০৪ কোটি |
১১। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য:
জেলার নাম | ভাতাভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা |
ময়মনসিংহ | ৬৩৬৩ |
নেত্রকোণা | ৩৪১৪ |
জামালপুর | ২৫০১ |
শেরপুর | ১৬৫০ |
১২। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্থান:
ময়মনসিংহ | বড়বাজার কালিবাড়ী, ডাকবাংলো, কেওয়াটখালী রেলওয়ে কলোনী. নিউমার্কেট, কাচারিঘাট, সাহেবপাড়া |
জামালপুর | ধানুয়া কামালপুর, ব্রহ্মপুত্র নদের তীর শ্মশানঘাট, পৌর এলাকার ফৌতি গোরস্থান, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল, পিটিআই ওয়াপদা রেস্ট হাউস, জিল বাংলা চিনি কল, ইসলামপুরের কুলকান্দি খান পাড়া। |
নেত্রকোণা | ঘাঘটিয়া নদীর তীর, মগরা নদী সেতু, কলমাকান্দা নাজিরপুর, মোহনগঞ্জ বটতলী, নেত্রকোণা নাগরা কৃষি ফার্ম, মুক্তাপাড়া ব্রীজ, চল্লিশা রেল সেতু ইত্যাদি। |
শেরপুর | ঝিনাইগাতির আহমদ নগর, বগাডুবি ব্রীজ, জগৎপুর গ্রাম, নাকুগাঁও, নালিতাবাড়ী তন্তর, কাটাখালি ব্রীজ, সোহাগপুর, সূর্যদি গ্রাম, রামচন্দ্রকুড়া ফরেস্ট ক্যাম্প, শেরিব্রীজ ইত্যাদি। |
১৩। ময়মনসিংহ বিভাগের দর্শনীয় স্থানঃ
ময়মনসিংহঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আলেকজান্ডার ক্যাসেল, জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, কবি নজরুলের স্মৃতিময় ত্রিশালের দরিরামপুর, গোপালপুর জমিদারবাড়ি, বিপিন পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ব্রক্ষপুত্র নদ, গৌরীপুর রাজবাড়ি, কেল্লা তাজপুর ইত্যাদি।
জামালপুরঃ হয়রত শাহ জামাল (রাঃ) ও হয়রত শাহ কামাল (রাঃ) এঁর মাজার শরীফ, দয়াময়ী মন্দির, লাওচাপড়া পিকনিক স্পট, যমুনা ফার্টিলাইজার, লুইস পার্ক ইত্যাদি।
নেত্রকোণাঃ হয়রত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী (রাঃ) এঁর মাজার শরীফ, বিজয়পুর পাহাড়ে চিনামাটির নৈসর্গিক সৌর্ন্দয্য, টংক আন্দোলনের স্মৃতি সৌধ, রানীখং মিশন টিলাতে ক্যাথলিক গির্জা, বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি, কমলা রানীর দীঘি,রাশমনি স্মৃতি সৌধ,সাত শহীদের মাজার ইত্যাদি।
শেরপুরঃ গজনী অবকাশ কেন্দ্র, মধুটিলা ইকো পার্ক, অর্কিড পর্যটন কেন্দ্র, নাকুগাঁও স্হল বন্দর ইত্যাদি।
১৪। ময়মনসিংহ বিভাগের সম্ভাবনাঃ
- শেরপুর-মেঘালয় সীমান্তকে বাণিজ্যবান্ধব করে শিল্পকারখানা স্থাপন
- রেলপথবিহীন শেরপুরে রেল যোগাযোগ স্থাপন
- নেত্রকোনায় ইকো-ট্যুরিজম, গারো পাহাড় এবং ময়মনসিংহ গাবরাখালি পর্যটন শিল্প
- জামালপুরের নকশী কাঁথা
- হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া ও কড়ইতলী স্থল বন্দর সম্পূর্ণভাবে চালুকরণ
- নেত্রকোনার বিজয়পুরে চীনামাটির সর্বোত্তম ব্যবহারে সিরামিক শিল্প প্রতিষ্ঠা
- ময়মনসিংহে ইপিজেড প্রতিষ্ঠা ও শিল্প পার্ক স্থাপন
- ময়মনসিংহে সাংস্কৃতিক পল্লী স্থাপন
2016 – 2024 সালের সকল নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান পেতে ক্লিক করুন
ময়মনসিংহ বিভাগ দেশের উত্তর-মধ্য অংশে অবস্থিত এবং এর আয়তন প্রায় ১০,৪৮৫ বর্গ কিলোমিটার (৪,০৪৮ বর্গ মাইল)। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে বিভাগটির জনসংখ্যা ১২,২২৫,৪৯৮ জন। এর সদর দপ্তর ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত। ময়মনসিংহ বিভাগ একটি প্রধান কৃষি অঞ্চল এবং ধান, পাট ও গম উৎপাদনের জন্য পরিচিত। এই বিভাগটি চিনি, চা এবং কাগজ উৎপাদন সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের আবাসস্থল। ময়মনসিংহ বিভাগ একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে একটি প্রাণবন্ত এবং বৈচিত্র্যময় অঞ্চল।
ময়মনসিংহ বিভাগের ইতিহাস
ময়মনসিংহ বিভাগের ইতিহাস দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ, এই অঞ্চলটি প্রথম প্রস্তর যুগে মানুষের দ্বারা বসতি স্থাপন করেছিল। এই অঞ্চলটি পরবর্তীতে মৌর্য সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য, পাল সাম্রাজ্য এবং সেন সাম্রাজ্য সহ বিভিন্ন সাম্রাজ্য ও রাজ্য দ্বারা শাসিত হয়েছিল। ১৩ শতকে এই অঞ্চলটি বাংলার মুসলিম সালতানাত দ্বারা জয় করা হয়েছিল এবং পরবর্তী কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এটি মুসলিম শাসনের অধীনে ছিল।
১৮ শতকে এই অঞ্চলটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা জয় করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলে শাসন করেছিল এবং এই সময়ে ময়মনসিংহ ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা শিক্ষা ও শিক্ষার প্রচারে সাহায্য করেছিল।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে চলে যায় এবং এই অঞ্চলটি দুটি নতুন দেশে বিভক্ত হয়: ভারত ও পাকিস্তান। ময়মনসিংহ পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয় যা পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হয়।
স্বাধীনতার পর থেকে ময়মনসিংহের বিকাশ অব্যাহত রয়েছে। অঞ্চলটি এখন কৃষি, শিল্প এবং শিক্ষার একটি কেন্দ্র। এছাড়াও ময়মনসিংহে ময়মনসিংহ জাদুঘর, ময়মনসিংহ রাজবাড়ী এবং ময়মনসিংহ বোটানিক্যাল গার্ডেন সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান রয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা সমূহ
ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলা হল:
- ময়মনসিংহ জেলা,
- জামালপুর জেলা,
- শেরপুর জেলা,
- নেত্রকোনা জেলা।
ময়মনসিংহ জেলা
ময়মনসিংহ জেলা এই বিভাগের বৃহত্তম ও জনবহুল জেলা। এটি বিভাগের মধ্যভাগে অবস্থিত এবং উত্তরে জামালপুর জেলা, পূর্বে শেরপুর জেলা, দক্ষিণে নেত্রকোনা জেলা এবং পশ্চিমে টাঙ্গাইল জেলা দ্বারা সীমাবদ্ধ। জেলাটির আবাসস্থল ময়মনসিংহ শহরে, যা বিভাগীয় সদর দপ্তর।
জামালপুর জেলা
জামালপুর জেলাটি বিভাগের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। এটি দক্ষিণে ময়মনসিংহ জেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে নরসিংদী জেলা দ্বারা বেষ্টিত। জেলার সদর দপ্তর জামালপুর শহরে অবস্থিত।
শেরপুর জেলা
বিভাগের পূর্বাংশে শেরপুর জেলা অবস্থিত। এটি পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণে নেত্রকোনা জেলা এবং পূর্বে হবিগঞ্জ জেলা দ্বারা বেষ্টিত। জেলার সদর দপ্তর শেরপুর শহরে অবস্থিত।
নেত্রকোনা জেলা
নেত্রকোনা জেলাটি বিভাগের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। এটি উত্তরে ময়মনসিংহ জেলা, পশ্চিমে শেরপুর জেলা এবং দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা দ্বারা বেষ্টিত। জেলার সদর দপ্তর নেত্রকোনা শহরে অবস্থিত।
ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলো উর্বর জমি, বনাঞ্চল এবং নদী সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের আবাসস্থল। মহাস্থানগড়ের প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ সহ এই বিভাগটিতে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক স্থান রয়েছে।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ বিভাগের দর্শনীয় স্থান সমূহ
ময়মনসিংহ বিভাগের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে:
ময়মনসিংহ জাদুঘর
ময়মনসিংহ জাদুঘর বাংলাদেশের প্রাচীনতম জাদুঘরগুলির মধ্যে একটি। এটি ১৮৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং জীবাশ্ম, মৃৎশিল্প এবং অস্ত্র সহ এই অঞ্চলের শিল্পকর্মের একটি সংগ্রহ রয়েছে।
মুক্তাগাছা রাজবাড়ী
মুক্তাগাছা রাজবাড়ী হল ১৯ শতকের একটি প্রাসাদ কমপ্লেক্স যা একসময় মুক্তাগাছা জমিদারদের আবাসস্থল ছিল। কমপ্লেক্সটি এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এর সুন্দর বাগান ও স্থাপত্যের জন্য পরিচিত।
আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল
আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল হল ১৯ শতকের একটি দুর্গ যা ব্রিটিশদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। দুর্গটি এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং গথিক স্থাপত্য এবং সুন্দর বাগানের জন্য পরিচিত।
শশী লজ
শশী লজ হল ১৯ শতকের একটি প্রাসাদ যা একসময় ময়মনসিংহের মহারাজার বাড়ি ছিল। লজটি এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এটি তার সুন্দর বাগান এবং স্থাপত্যের জন্য পরিচিত।
হাসান মঞ্জিল
হাসান মঞ্জিল হল ১৯ শতকের একটি প্রাসাদ যা একসময় হাসান পরিবারের আবাসস্থল ছিল। প্রাসাদটি এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এটি তার সুন্দর বাগান এবং স্থাপত্যের জন্য পরিচিত।
গজনি অবকাশ কেন্দ্র
গজনি অবকাশ কেন্দ্র হল শেরপুর জেলায় অবস্থিত একটি বড় বিনোদন পার্ক। পার্কটি স্থানীয় এবং পর্যটকদের জন্য একইভাবে একটি জনপ্রিয় স্থান এবং এটি রাইড, গেম এবং খাবারের জন্য পরিচিত।
চায়না মাটির পাহাড়
চীন মাটির পাহাড় নেত্রকোনা জেলায় অবস্থিত একটি বড় পাহাড়। পাহাড়টি তার সাদা কাদামাটির জন্য পরিচিত, যেটির ঔষধি গুণ রয়েছে বলে কথিত আছে।
সোমেশ্বরী নদী
সোমেশ্বরী নদী নেত্রকোনা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি বৃহৎ নদী। নদীটি মাছ ধরা, সাঁতার কাটা এবং নৌকা চালানোর জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
ময়মনসিংহ বিভাগের অনেকগুলো পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে এগুলো কয়েকটি মাত্র।
ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে পার্ক সমূহ
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগে অনেকগুলো পার্ক আছে। কিছু জনপ্রিয় পার্কের মধ্যে রয়েছে:
বেপিন পার্ক
ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই পার্কটি পরিবার ও শিশুদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। এটিতে একটি খেলার মাঠ, একটি হ্রদ এবং বিভিন্ন ধরনের গাছ ও ফুল রয়েছে৷
মধুটিলা ইকো পার্ক
মধুটিলা ইকো পার্ক শেরপুর জেলায় অবস্থিত একটি বড় ইকো পার্ক। পার্কটি স্থানীয় এবং পর্যটকদের জন্য একইভাবে একটি জনপ্রিয় স্থান এবং এটি তার সুন্দর বন, হ্রদ এবং জলপ্রপাতের জন্য পরিচিত।
প্রিয়কুঞ্জ পার্ক
এই পার্কটি ময়মনসিংহের চুরখাইতে অবস্থিত এবং এটি পিকনিক এবং আউটডোর কার্যকলাপের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। এটিতে একটি বড় লন, একটি খেলার মাঠ এবং বিভিন্ন ধরণের গাছ এবং ফুল রয়েছে৷
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান
ভাওয়াল জঙ্গলে অবস্থিত এই পার্কটি পাখি দেখার এবং প্রকৃতিতে হাঁটার জন্য একটি জনপ্রিয় স্পট। এটিতে বিভিন্ন ধরণের গাছ এবং গাছপালা, সেইসাথে হরিণ, বানর এবং বাঘ সহ বেশ কয়েকটি প্রাণী রয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগের অনেকগুলো পার্কের মধ্যে এগুলো মাত্র কয়েকটি। এর সুন্দর দৃশ্য এবং সবুজ স্থানের প্রাচুর্যের সাথে, ময়মনসিংহ আউটডোর উপভোগ করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা।
যে কারণে ময়মনসিংহ বিভাগ বিখ্যাত
এখানে ময়মনসিংহ বিভাগ বিখ্যাত হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে:
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
ময়মনসিংহ বিভাগ ব্রহ্মপুত্র নদ, মধুপুর বন এবং ময়মনসিংহ হাওর সহ অনেকগুলি প্রাকৃতিক আকর্ষণের আবাসস্থল। ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদীগুলির মধ্যে একটি এবং মাছ ধরা এবং নৌকা চালানোর জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। মধুপুর বন হল একটি বৃহৎ বন যেখানে হাতি, বাঘ এবং হরিণ সহ বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। ময়মনসিংহ হাওর একটি বিশাল জলাভূমি এলাকা যেখানে বিভিন্ন ধরনের পাখি ও মাছের আবাসস্থল।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ময়মনসিংহ বিভাগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি এবং কৃষি ও সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম অফার করে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় হল একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যা ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম অফার করে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ একটি মেডিকেল কলেজ যা ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কলেজটি পাঁচ বছরের এমবিবিএস প্রোগ্রাম অফার করে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহ দুর্গ এবং ময়মনসিংহ জাদুঘর সহ অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। ময়মনসিংহ দুর্গটি ১৭ শতকে মুঘলদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। দুর্গটি এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ভবনের আবাসস্থল। ময়মনসিংহ জাদুঘরটি ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাদুঘরে জীবাশ্ম, মুদ্রা এবং অস্ত্র সহ এই অঞ্চলের নিদর্শনগুলির একটি সংগ্রহ রয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, ময়মনসিংহ বিভাগ একটি সুন্দর এবং ঐতিহাসিক স্থান যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য অনেক সুবিধা রয়েছে। এই বিভাগটি অনেকগুলি প্রাকৃতিক আকর্ষণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলির আবাসস্থল।