প্রশ্ন সমাধান: মাল্টিমিডিয়া কি?, মাল্টিমিডিয়ার প্রকারভেদ, মাল্টিমিডিয়ার বৈশিষ্ট্য, মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার
What is Multimedia?
মাল্টি (Multi) শব্দের অর্থ হলো বহু এবং মিডিয়া (Media) শব্দের অর্থ মাধ্যম। অর্থাৎ, মাল্টিমিডিয়া (Multimedia) শব্দের অর্থ হলো বহুমাধ্যম। কম্পিউটার প্রযুক্তিতে যে প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় লেখালেখি, গ্রাফিক্স, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি সহ আরো বহুমাধ্যমে কাজ করা যায়, তাকে মাল্টিমিডিয়া বলে। মাল্টিমিডিয়া এমন একটি মাধ্যম যাতে বিভিন্ন ধরনের তথ্যকে (যেমন লিপি, শব্দ, চিত্র, এনিমেশন, ভিডিও প্রভৃতি) একসাথে ব্যবহারকারীদের কাছে তুলে ধরা হয়। সাধারণত কম্পিউটারের সাথে অতিরিক্ত কিছু হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার যুক্ত করে কম্পিউটারে কাজ করার পাশাপাশি ছবি দেখা, গান শোনা ইত্যাদি কাজ করা যায়। একই যন্ত্র দিয়ে এমন বহু ধরনের কাজ করা যায় বলেই একে মাল্টিমিডিয়া বলা হয়।
মাল্টিমিডিয়ার প্রকারভেদ (Classification of Multimedia)
মাল্টিমিডিয়াকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা–
- লিনিয়ার
- নন-লিনিয়ার
১. লিনিয়ার : যেসব মাল্টিমিডিয়া সময়ের উপর নির্ভরশীল তাদেরকে লিনিয়ার মাল্টিমিডিয়া বলে। লিনিয়ার মাল্টিমিডিয়া সময়কে অতিক্রম করে এবং ধারাবাহিক বা পর্যায়ক্রমিকভাবে চলতে থাকে। এ ধরনের মাল্টিমিডিয়ায় ব্যবহারকারী টেক্সট, গ্রাফিক্স ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রনের তেমন সুযোগ পান না। যেমনঃ অডিও, ভিডিও ইত্যাদি।
২. নন-লিনিয়ার : যেসব মাল্টিমিডিয়া সময়ের উপর নির্ভরশীল নন তাদেরকে নন-লিনিয়ার মাল্টিমিডিয়া বলে। নন-লিনিয়ার মাল্টিমিডিয়াকে ডিস্ক্রিট মিডিয়াও বলা হয়। নন-লিনিয়ার মাল্টিমিডিয়া পর্যায়ক্রমিক না হয়ে তাৎক্ষনিকভাবে পরিবর্তনশীল হয়ে থাকে। যেমন: লেখা বা টেক্সট ইমেজ ইত্যাদি। নন-লিনিয়ার মাল্টিমিডিয়া আবার দুই প্রকার।
- হাইপার মিডিয়া (Hyper Media) : হাইপারমিডিয়ার ব্যবহার মূলত ইন্টারনেট ওয়েবসাইটগুলোতে হয়ে থাকে। ইন্টারনেট ওয়েবসাইটগুলোতে বিপুল পরিমাণ তথ্য উপস্থাপনের ব্যবস্থা করা হয় ব্যবহারকারী প্রয়োজন অনুযায়ী কোন বিষয়কে নির্বাচন করতে পারে।
- ইন্টার অ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া (Interactive Multimedia) : ইন্টারএ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারই বর্তমান সবচেয়ে বেশি। এ ধরনের মাল্টিমিডিয়ায় একজন ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ থাকে সর্বাধিক। কোনো ছবি, ভিডিও ইমেজ বা শব্দ নিজের ইচ্ছা মতো নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজেই।
আরো ও সাজেশন:-
মাল্টিমিডিয়ার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Multimedia)
মাল্টিমিডিয়া একটি সম্বলিত ব্যবস্থা যাতে একাধিক মিডিয়া (যেমন- লেখা বা টেক্সট, অডিও, ভিডিও, ইমেজ ইত্যাদি) ব্যবহারের মাধ্যমে সচল, সজীব ও আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করা যায়।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সুবিধা
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহারের অনেকগুলো সুফল রয়েছে। যেমন-
• অল্প সময়ে অনেকগুলো মাধ্যম ব্যবহার করে অনেক তথ্য উপস্থাপন করা যায়।
• বিভিন্ন শিখন চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর শিখন চাহিদা একই শ্রেণিকক্ষে মেটানো সম্ভব হয়।
• পাঠকে বাস্তবতার নিরিখে উপস্থাপন করা যায়।
• বিমূর্ত বিষয়কে বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপন করা যায়। ফলে শিখন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়।
• শিক্ষার্থীদের শিখন স্থায়ী হয়।
• একই সাথে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করার সুযোগ থাকে।
• সকল শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
• শিখন শেখানো কার্যক্রমকে আনন্দময় করা যায়।
• পাঠে বৈচিত্র্য আনা যায়।
• একই তথ্য বারবার দেখানো যায়। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা পাঠটি অনুধাবনে সুযোগ পায়।
• একই উপকরণ বিভিন্ন ক্লাসে ব্যবহার করা যায়। এতে শিক্ষকের পরিশ্রম কমে আসে।
• সর্বাধুনিক তথ্য ও ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা যায়।
মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট ব্যবহার করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করলে শিক্ষার্থীরা ইন্দ্রিয়সমূহ ব্যবহার করে শিখে তাই তাদের শিখন স্থায়ী হয়। একীভূত শিক্ষায় বিভিন্ন চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা একই শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষা লাভ করে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউবা খুব দ্রুত শিখে, কেউবা কানে একটু কম শোনে, কেউবা চোখে কম দেখে, কেউবা বুঝতে একটু সময় নেয়, কেউবা ধনী আবার কেউবা গরীব, কেউবা কাজ করে শিখতে ভালোবাসে। এই ভিন্ন ভিন্ন শিখন চাহিদার শিক্ষার্থীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মিডিয়া জরুরি। এছাড়া ধনী বা গরীব শিক্ষার্থী, শহর বা গ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতেও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার করে একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়ন সহজ হয়।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের অসুবিধা :
ধারণা করা হয় যে, মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নিলেই শিক্ষার্থীদের জানার গতি ও শক্তি দুইই বাড়বে এবং তারা আধুনিক প্রযুক্তিতে অভ্যস্থ ও দক্ষ হয়ে উঠবে। শেষের কথাটি ঠিক হ’লেও প্রথম কথাটি সর্বাংশে ঠিক হচ্ছে না। তার কিছু কারণ এখানে তুলে ধরা হ’ল :
১. স্থায়ী ক্লাসরুম না থাকলে প্রজেক্টর, ল্যাপটপ ও পর্দা ফিট করতে ক্লাসের অনেকখানি সময় নষ্ট হয়ে যায়।
২. অনেকে শুধু মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করেন; পাঠ্য বই খুব একটা হাতে নেন না। এতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বই বিমুখ হয়ে পড়ছে। অথচ তাদের জানা ও পরীক্ষায় ভালো করা নির্ভর করে পাঠ্য বইয়ের উপর। আসলে পড়াতে হবে বই এবং মাল্টিমিডিয়া হবে তার একটি বড় উপকরণ।
৩. অনেকে শিখনফল ঠিক না করে মাল্টিমিডিয়ার সলাইডে পাঠ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি/ভিডিও তুলে ধরেন। সেখানে ছবি প্রদর্শনী বেশি হয়। শিক্ষকের উপস্থাপন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একক, জোড়ায় কিংবা দলগত কাজ তেমন একটা থাকে না। ফলে শিক্ষণ-শিখন ফলপ্রসূ হয় না।
৪. অনেকে মাত্রাতিরিক্ত ছবি দেখান। শিক্ষার্থীরাও মনে করে এটি সলাইডশোর ক্লাস। তারা ক্লাস উপভোগ করে বটে কিন্তু জ্ঞান অর্জন করে না। আসলে প্রতিটি কাজের ভিত্তিতে ১টি/২টি ছবিই যথেষ্ট ভাবতে হবে এবং শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করছে কিনা তা নিশ্চিত হ’তে হবে।
৫. মাত্রাতিরিক্ত এনিমেশন আরেকটি সমস্যা। অনেক এনিমেশনে দেখা যায় এক একটা বর্ণ উড়ে এসে শব্দ ও বাক্য গঠন করে। অনেক সময় অক্ষর ও ছবিগুলো লাফায়-ঝাঁপায়। এতে যেমন সময় বেশি লাগে তেমনি চোখেও লাগে। অথচ হাল্কা ও সাধারণ এনিমেশন দিলে এরূপ সমস্যা সহজেই এড়ান যায়।
৬. শিক্ষক বাতায়নের কন্টেন্ট ডাউনলোড করে অনেকে পড়ান। বাতায়নে যেমন অনেক ভালো কন্টেন্ট আছে তেমনি অনেক নিম্ন মানের কন্টেন্টও আছে। বাছবিচার না করে বাতায়ন থেকে সহায়তা নিয়ে পাঠ দান করলে সুফল পাওয়া অনিশ্চিত। নিজে কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে অথবা বাতায়নের কন্টেন্ট থেকে নিজের সুবিধা মত এডিট করে নতুন কন্টেন্ট বানাতে পারলে এ অসুবিধা থাকবে না।
শিক্ষণ-শিখন আসলে অজানাকে স্থায়ীভাবে জানা এবং তাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিজীবনসহ বৃহত্তর পরিসরে মানবমন্ডলীর ইহজাগতিক ও পারলৌকিক মঙ্গল সাধন করা। আমাদের সৃজনশীল প্রশ্নসহ পঠন-পাঠনের সকল নিয়ম-নীতি এ লক্ষ্যে পরিচালিত হওয়া উচিত। মহান ঈশ্বর আমাদের সকল কাজে সহায় হোক।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার (Use of Multimedia)
তথ্য প্রযুক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সব জায়গায় মাল্টিমিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। নিচে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো–
- বিজ্ঞাপন : বড় শিল্পকারখানাগুলাে তাদের পণ্যের তথ্য প্রচারের জন্য বিভিন্ন প্রকার মাল্টিমিডিয়ার সহায়তা নিয়ে থাকে। যেমন বিলবাের্ড, দেওয়ালে লেখার মাধ্যমে।
- বিনোদনে : মাল্টিমিডিয়া বিনোদনে এনেছে নতুন দিগন্ত। এক্ষেত্রে বিশেষ করে কম্পিউটার গেইমস, কম্পিউটারের সাহায্যে গান শোনা বা ছবি দেখা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিনােদন শিল্পে বিভিন্ন প্রকার চলচ্চিত্র এবং অ্যানিমেশনে স্পেশাল ইফেক্ট তৈরির কাজে মাল্টিমিডিয়া অনেক ভাবে ব্যবহৃত হয়।
- শিক্ষা ক্ষেত্র : শব্দ, বর্ণ, চিত্র ইত্যাদির সমন্বয়ে এক বর্ণিল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রশিক্ষণে এবং অন লাইনের সাহায্যে শিক্ষা গ্রহণ বা কোর্স চালু ইত্যাদি কাজে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার এনে দিয়েছে এক নতুন দিগন্ত। কম্পিউটার এইডেড লার্নিং মাল্টিমিডিয়ারই প্রয়োগ।
- ইন্টারনেট : ইন্টারনেটে মাল্টিমডিয়ার বিকল্প নেই- একথা ইন্টারনেটে ব্রাউজ করলে যে কেউ বােঝতে পারবে।
- বাণিজ্য : কোনাে পণ্য সম্পর্কে বিজ্ঞাপন কিংবা বিস্তারিত তথ্য এখন মাল্টিমিডয়া সফটওয়্যারেই প্রকাশ করা হয়, যাতে যে কেউ পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে। এছাড়া ই-কমার্সের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান তার পন্যের সরবরাহের অর্ডার দিতে এবং নিতে পারে।
- প্রকাশনায় : বই প্রস্তুত কিংবা কোনাে ডকুমেন্ট এখন পেপারব্যাকের পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়াতেও প্রকাশ করা হয় ফলে বিশাল আকারের বইপত্র ব্যবহার না করে মাল্টিমিডিয়া সিডিতে একই জিনিস অনেক বেশি সুবিধাসহ ব্যবহার করা যায়।
- মেডিকেল : মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার বর্ণনাতীত। রােগ ও রােগের প্রতিকার কিংবা ডায়াগােনসিস করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রচুর মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার পাওয়া যায়।
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি : মাল্টিমিডিয়ার কল্যাণে এখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি জগতে ভ্রমণ করা সম্ভব হচ্ছে।বর্তমানে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার এতই ব্যাপক পর্যায়ে হচ্ছে যে সংক্ষেপে এদের বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনের সব জায়গাতেই মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার হচ্ছে।
বর্তমানে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার এতই ব্যাপক পর্যায়ে হচ্ছে যে সংক্ষেপে এদের বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনের সব জায়গাতেই মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার হচ্ছে।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- লিভারেজ ইজারার সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ লিখ
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট