মাহাথির বিন মোহাম্মদ জীবনী বাংলা, এক নজরে মাহাথির বিন মোহাম্মদ জীবনী,একনজরে মাহাথির বিন মোহাম্মদ বর্ণাঢ্য সংক্ষিপ্ত জীবনী, মাহাথির বিন মোহাম্মদ আত্মজীবনী, জানা-অজানা মাহাথির বিন মোহাম্মদ ,মাহাথির বিন মোহাম্মদ জানা-অজানা অধ্যায়

আজকের বিষয়: মাহাথির বিন মোহাম্মদ জীবনী বাংলা, এক নজরে মাহাথির বিন মোহাম্মদ জীবনী,একনজরে মাহাথির বিন মোহাম্মদ বর্ণাঢ্য সংক্ষিপ্ত জীবনী, মাহাথির বিন মোহাম্মদ আত্মজীবনী

এশিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার এবং মুসলিম বিশ্বের বিবেক ডা. মাহাথির মোহাম্মদ ছিলেন তার দেশের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী। সত্য কখনো চাপা দিয়ে রাখা যায় না। এ কথাটাই তার কাজে এবং কথায় ফুটে উঠেছে। জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে নেলসন ম্যান্ডেলাকে শীর্ষস্থান দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ডা. মাহাথিরও কোনো অংশে কম নন, তাকেও শীর্ষস্থান দেওয়া যেতে পারে। ডা. মাহাথির মোহাম্মদের জন্ম ১৯২৫ সালের ২০ ডিসেম্বর। তিনি ছিলেন মাতা-পিতার ৯ সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ। তার পিতা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক।

মেধাবী ছাত্র হিসেবে তার পছন্দের বিষয় ছিল আইনবিদ্যা; কিন্তু সরকার তাকে পরামর্শ দেয় ডাক্তার হওয়ার। তাই তিনি সিঙ্গাপুরের কিং অ্যাডওয়ার্ড সেভেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। স্কুলে এবং মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় তিনি একটি ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতেন এবং পত্রিকায় লিখতেন। ১৯৫৬ সালের ৫ আগস্ট তিনি বিয়ে করেন।

তখন তার বয়স ছিল ৩৩ বছর এবং তার স্ত্রী ডা. সিথি হাসমাহর বয়স ছিল ২২ বছর। কিছুদিন সরকারি হাসপাতালে চাকরি করার পর তা ছেড়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে তার নিজ জন্মস্থান আলোর সেতার এলাকায় চলে আসেন। এখানে এসে তিনি বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। ওই এলাকায় তিনি একটি প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে তোলেন। এটাই ছিল এ এলাকায় কোনো মালয় পরিচালিত প্রথম প্রাইভেট ক্লিনিক। মাহাথিরের রক্তে মিশে ছিল দেশাত্দবোধ আর রাজনীতি। তিনি ১৯৬৪ সালে কোটা সেতার দক্ষিণ এলাকা থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হলে কি হবে? তিনি তার দলের অনেক নীতির সঙ্গে একমত হতে পারেননি। ১৯৬৯ সালে তিনি একখানা বই লেখেন, যার নাম ঞযব সধষড়ু ফরষরসধ বা মালয়ীদের উভয় সংকট। বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর তিনি তার পার্টির ভুলত্রুটির সমালোচনা করে দলীয় প্রেসিডেন্ট টেংকু আব্দুর রহমানের কাছে একটি চিঠি লেখেন। এর ফলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তিনি তখন আবার তার পেশায় ফিরে গেলেও অনেক ঘটনার পর ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ পার্টিতে আবার ফিরে আসেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী হন। শিক্ষামন্ত্রী হয়ে তিনি ঘোষণা দেন তার নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা যাবে না। এই ধারা তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েও অব্যাহত রাখেন। তার কোনো ছবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা সরকারি অফিসে টাঙানো যাবে না বলেও তিনি নির্দেশ দেন।

মালয়েশিয়াকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা সংস্কার হচ্ছে মাহাথিরের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। ১৯৭৫ সালে মাহাথির পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তুন হোসেন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তিনি দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথকেও সুগম করেন। ১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই ৫৫ বছর বয়সে ডা. মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং একটানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ও রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। তার সফল নেতৃত্ব, নির্ভেজাল দেশাত্দবোধ আর দূরদৃষ্টি পশ্চাৎপদ মালয়েশিয়াকে একটি আধুনিক উন্নত ও সমৃদ্ধ মালয়েশিয়ায় পরিণত করেছে। সে সঙ্গে তার প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব আর সাহস তাকে বিশ্ব নেতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। কারণ তিনি সর্বদা সত্য উচ্চারণে ছিলেন নির্ভীক ও আপসহীন।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ (জন্ম জুলাই ১০, ১৯২৫) মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি। তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দল পর পর পাঁচবার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তিনি এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৩ সালের ৩০শে অক্টোবর তিনি স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন। অবসর গ্রহণের দীর্ঘ পনের বছর পর ৯২ বছর বয়েসে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ব্যাপক দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতার কারণে মাহাথির মোহাম্মদ আবারও আসেন রাজনীতিতে। ২০১৮ সালের ৯ মে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে জয়ের পরদিন ১০ মে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।

জন্ম

ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ ১৯২৫ সালে মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এ্যালোর সেটর-এ এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা-মাতার নয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম। তার পিতা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন এবং পরবর্তীকালে একজন সরকারি অডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। তার মা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন এবং মাহাথিরকে বাসায় পবিত্র কোরআন শিক্ষা দিতেন।

শিক্ষা

মাহাথির শৈশবে প্রথমে মালয় ও পরে শহরের একমাত্র ইংরেজি স্কুলে শিক্ষা লাভ করেন। বাসায় তাদের একজন ধর্ম শিক্ষক ছিলেন যিনি প্রতিদিন বাড়িতে এসে পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্মের উপর বিশ্বাস এবং ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান শেখাতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালে জাপান মালয়েশিয়া আক্রমণ করে। তারা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বন্ধ করে দেয় এবং একটি জাপানি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। মাহাথিরের বয়স তখন ষোল। প্রথমে তিনি জাপানি স্কুলে যেতে চান নি। ঐ সময় মাহাথির একটি স্থানীয় ছোট বাজারে কলা বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু পিতার চাপে তিনি পরবর্তীতে ঐ জাপানি স্কুলে ভর্তি হন। মালয়েশিয়ায় জাপানি শাসন প্রায় তিন বছর স্থায়ী ছিল। [

১৯৪৭ সালে তিনি সিঙ্গাপুরের কিং এডয়ার্ড মেডিসিন কলেজে ভর্তি হন এবং চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া ফিরে আসেন।

পরিবার

সিঙ্গাপুরে পড়ার সময় মাহাথিরের সিথি হাসমা মোঃ আলীর সাথে সাক্ষাৎ হয়। সিথি হাসমা তখন দ্বিতীয় মালয় মহিলা হিসেবে সিঙ্গাপুরে বৃত্তি নিয়ে একই কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ছিলেন। পরবর্তীতে মাহাথির ও সিথি হাসমা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের মোট সাত জন সন্তান আছে, যার মধ্যে তিন জনকে তারা দত্তক নিয়েছিলেন। পরিবার সম্পর্কে মাহাথির বলেন, ” প্রত্যেকের নিজ পরিবার একটি নিরাপদ জায়গা – যা আমাদের এই জটিল সমাজে স্থিরতা আনে।”

কর্মজীবন

১৯৫৩ সালে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এসে মাহাথির একজন চিকিৎসক হিসেবে চাকুরীতে যোগ দেন। মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার ঠিক পূর্বে তিনি সরকারি চাকুরী ছেড়ে নিজ শহর এ্যালোর সেটরে মাহা-ক্লিনিক নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক শুরু করেন। শহরের পাঁচটি প্রাইভেট ক্লিনিকের মধ্যে এটি একমাত্র মালয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক ছিল। তিনি রোগীদের বাড়িতে যেতেন এবং মাঝে মাঝে ছোট খাট অস্ত্রোপচার করতেন। মাহাথিরের মতে চিকিৎসক হিসেবে তার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন তার মধ্যে স্থিরতা এনেছিল ও তাকে যে কোন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে সক্ষম করেছিল। তিনি একবার ‘দ্যা ইকোনমিষ্ট’ পত্রিকাতে বলেছিলেন, “চিকিৎসা বিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের জন্য রাজনীতি একটি ভাল পেশা। একজন ডাক্তার রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন, স্বাস্থ্যগত ইতিহাস রেকর্ড করেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন, ল্যাব পরীক্ষা করেন এবং চূড়ান্তভাবে রোগ নির্ণয় করেন। এ প্রক্রিয়াটি রাজনীতির মতই।” ১৯৭৪ সালে মন্ত্রী হবার আগ পর্যন্ত তিনি চিকিৎসা পেশা অব্যাহত রেখেছিলেন।

রাজনীতি

কিশোর বয়সে রাজনীতি

মাহাথিরের বয়স যখন কুড়ি বছরের একটু বেশি তখন তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। সহপাঠীদের একত্র করে তিনি গোপনে ‘মালয়ান ইউনিয়ন’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধচারণ শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জাপানীরা চলে যাবার পূর্বে তৎকালীন মালয়েশিয়াকে তারা থাই সরকারের শাসনাধীনে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা আবার ফিরে আসে এবং ‘মালয়ান ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করে। মালয়ান ইউনিয়ন সত্যিকার অর্থে সম্পূর্ণ উপনিবেশ ছিল। মাহাথির ও তার বন্ধুরা তখন রাতের অন্ধকারে সারা শহরে রাজনৈতিক বাণী সংবলিত পোষ্টার লাগাতেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সীমিত, ‘মালয়ান ইউনিয়ন’ প্রস্তাবের সমাপ্তি এবং প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা ফিরে পাওয়া। সাইকেল চালিয়ে তারা সমগ্র প্রদেশ ঘুরে ঘুরে জনগনকে ব্রিটিশ বিরোধী হিসেবে সংঘটিত ও সক্রিয় করার কাজে ব্যস্ত থাকতেন। সংগঠনে মাহাথির সাধারণত সম্পাদক বা দ্বিতীয় অবস্থানটা বেছে নিতেন, কারণ দ্বিতীয় ব্যক্তিকেই বেশি সাংগঠনিক কাজ করতে হয় ও অন্য দলগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়।

মাহাথির প্রথম কেদাহ মালয় যুব ইউনিয়ন এবং পরে কেদাহ মালয় ইউনিয়ন নামে রাজনৈতিক দল সংগঠিত করেন যা পরবর্তিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন বা ইউএমএনও (UMNO) হিসেবে পরিচিত হয়।

সিঙ্গাপুরে মাহাথির

সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন মাহাথির সেখানের কলেজের মালয় ছাত্রদের নিয়ে ‘মালয় ছাত্র সংগঠন’ গঠন করেন। তবে এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদের শিক্ষার মান ও ফলাফল উন্নয়ন করা। এর কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।

জাতীয় রাজনীতি

সরকারি চাকুরীতে থাকাকালীন তিনি সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে পারেন নি। নিজ ক্লিনিক চালু করার পর তার জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। ইউএমএনও-এর প্রাদেশিক শাখার ঊর্ধ্বতন পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৬৪ সালে ৩৯ বছর বয়সে মাহাথির প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপরও এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাহায্যে তিনি ডাক্তারি প্রাকটিস অব্যাহত রাখেন। ১৯৭৪ সাল নাগাদ তিনি এই পেশা ধরে রেখেছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বার নির্বাচনে প্রার্থী হন। সেই বছর ইউএমএনও এর নেতৃত্বে জোটবদ্ধ সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। ইউএমএনও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। কয়েকটি প্রদেশে তারা সরকার গঠন করতেও সক্ষম হয়নি। ১৯৬৯ সালের ৩০শে মে কুয়ালালামপুরে যখন চীনা ও মালয় জাতির মধ্যে তুমুল-দাঙ্গা শুরু হয় তখন রাজনৈতিক সংকট চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে। এই দাঙ্গার জন্য মাহাথির ইউএমএনও নেতৃত্বকে দোষারোপ করে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আব্দুর রহমানকে কড়া ভাষায় চিঠি লেখেন ও পদত্যাগের পরামর্শ দেন। এ সমালোচনা পার্টি নেতৃবৃন্দের সহ্য করলেন না, তার মাহাথিরকে দল থেকে বহিষ্কার করলেন। পরবর্তী তিন বছর তিনি নিজ দেশেই রাজনীতি থেকে নির্বাসনে ছিলেন। ১৯৭২ সালে মাহাথিরকে আবার দলের সদস্য ও সিনেটর হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়।

রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহণ

১৯৭৪ সালে দল নির্বাচনে জয়ী হবার পর তাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। মাত্র দুই বছর পর মাহাথির ১৯৭৬ এ উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতে তিনি সফল হন। উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের জন্য অনেক কিছু করার পরিকল্পনা থাকলেও মাহাথির স্বাধীনভাবে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে সক্ষম ছিলেন না। ১৬ই জুলাই, ১৯৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী হবার পর তিনি তার সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ মুক্ত হন। সেই থেকে টানা ২২ বছর মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এর মধ্যে প্রতিবার তিনি ও তার দল নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। মাহাথির মোহাম্মদ এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় যাবৎ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩ সালের ওআইসি সম্মেলনের সফল সমাপ্তির পর ৩০শে অক্টোবর তিনি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন

মাহাথির বারবার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ১মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বারহাদ (1MDB) দুর্নীতি কেলেঙ্কারির জন্য পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ৩০ আগস্ট ২০১৫-এ, তিনি এবং তার স্ত্রী, সিতি হাসমাহ, বেরসিহ ৪টি সমাবেশে যোগদান করেছিলেন, যেখানে হাজার হাজার লোক নাজিবের পদত্যাগের জন্য বিক্ষোভ দেখায়।[৪] ২০১৬ সালে, মাহাথির নাজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য পাকাতান হারাপান এবং এনজিও-র সহায়তায় মালয়েশিয়ার নাগরিক ঘোষণায় নিজেরাই বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ করেছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে নাজিবের প্রতিক্রিয়া হল উপ-প্রধানমন্ত্রীকে স্থলাভিষিক্ত করে, দুটি সংবাদপত্র স্থগিত করে এবং প্রধানমন্ত্রীকে অভূতপূর্ব ক্ষমতা প্রদান করে এমন একটি বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বিল সংসদের মাধ্যমে পাশ করে ক্ষমতায় তার দখল শক্ত করা।

আধুনিক মালয়েশিয়া

ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ বিশ্বময় আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রধান রূপকার হিসেবে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী হবার পর তিনি সকল বিষয় পুনঃপরীক্ষা করেন। সকল নীতি, পদ্ধতি, সরকার চালাতে প্রাত্যহিক সকল কাজ, আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়। তার সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ওয়ার্ক-ফ্লো চার্ট আর অফিস ম্যানুয়েল প্রবর্তন করেন। মাহাথির ও তার সরকার দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি তৈরি করেন যার মাধ্যমে প্রত্যেকে তার নিজ নিজ ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হয়। ব্যবসা এবং রাজনীতিতে ফুটপাতের লোক থেকে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব পর্যন্ত দেশের জন্য নিজের জন্য কাজ করবে।

১৯৯০ সালে মালয়েশিয়া বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৮% ছাড়িয়ে যায়। মাহাথির ১৯৭১ সালে প্রনিত নিউ ইকোনমিক পলিসি (এনইপি) সফল ভাবে বাস্তবায়নে সচেষ্ট হন। এনইপির উদ্দেশ্য ছিল জাতি নির্বিশেষে দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাতি পরিচয় মুছে ফেলা। নতুন সম্পদ সৃষ্টি করা এবং এর বৃহত্তর অংশ দরিদ্রদের জন্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে সম্পদের পুনঃবণ্টনের চেষ্টা করা হয়। ১৯৯১ সালে বিশ বছর মেয়াদি এনইপি শেষ হয়। দারিদ্র্য বিমোচন বহুলাংশে অর্জিত হয়। সমৃদ্ধির একটি পর্যায়ে পৌছে মালয়েশিয়া বিভিন্ন জাতির সুসম্পর্কসহ একটি জাতিতে পরিনত হয় যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঈর্ষনীয়। বিশ বছর মেয়াদি এনইপি শেষ হবার পর দশ বছর মেয়াদি ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি (এনডিপি) প্রনয়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একজন মাহাথির ও আধুনিক মালয়েশিয়া

৯৩ বছর বয়সী মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক রাজনীতিবিদ। চলতি বছরের মে মাসে তিনি দেশটির ক্ষমতায় আবারো ফিরে আসেন এবং তার এ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে বলেন, খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার পূর্বেই দুর্নীতিতে জর্জরিত তার দেশকে রক্ষা করতে আবারও ফিরে এসেছেন।

বিশ্বজুড়ে আবারও তুমুল আগ্রহের সঞ্চার হয়েছে মালয়েশিয়ার রাজনীতির এই প্রবাদ পুরুষকে ঘিরে।

১৯২৫ সালের ১০ জুলাই ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত মালয়ের কেদাহ অঞ্চলের সেতার নামক গ্রামে সাধারণ এক স্কুলশিক্ষকের ঘরে জন্ম নেন মাহাথির। তার আগে যে তিনজন প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়া শাসন করেছেন তারা সবাই ছিলেন সমাজের অভিজাত শ্রেণির। সেই হিসেবে মাহাথির বেশ সাধারণ ঘর থেকেই উঠে এসেছেন।

শিক্ষাজীবনের শুরুতে মালয়ের একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে ভর্তি হন তিনি। বরবরই প্রথম স্থান অধিকার করে এগিয়ে নেন শিক্ষাজীবন। ইংরেজির শিক্ষক বাবার সংস্পর্শে থেকেই কিনা এই ভাষায় জাদুকরি দক্ষতা অর্জন করেছেন তিনি।

স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন মেডিকেল কলেজে। ১৯৪৭ তিনি সিঙ্গাপুরের কিং অ্যাডওয়ার্ড সেভেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। মাহাথিরসহ মাত্র ৭ জন মালয় শিক্ষার্থী তখন সেখানে পড়াশোনা করছিলেন।

এমবিবিএস পাসের পর মালয়েশিয়ার একটি সরকারি হাসপাতালে যোগ দেন মাহাথির। সরকারি বিধিনিষেধের ওপর বিরক্ত হয়েই কিনা, কিছুদিন পর নিজেই খুলে বসেন প্রাইভেট ক্লিনিক। মালয় বংশোদ্ভূত কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন একমাত্র হাসপাতাল ছিল এটি।

অনেকে মনে করেন, শুধু রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যই সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন মাহাথির। রাজনৈতিক দল ইউএমএনও থেকে মালয় প্রাদেশিক রাজ্যের শীর্ষ পদে নিয়োগ পান।

চিকিৎসক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান মাহাথির। বাড়তে থাকে তার গণসম্পৃক্ততা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও সাধারণ মানুষের একদম কাছাকাছি থাকতেন এই নেতা। এই বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই কিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পরও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি।

১৯৬৪ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাহাথির। পুনরায় নির্বাচিত হন ১৯৬৯ সালেও। নিজ দলের প্রধান এবং মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেংকু আবদুর রহমানের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে ৩ বছর রাজনীতি থেকে অবসরে ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ৩০ মে সংঘটিত চীনা ও মালয়ীদের মধ্যকার দাঙ্গার জন্য টেংকু আবদুর রহমানকে দায়ি করেছিলেন মাহাথির।

অবশেষে ১৯৭২ সালে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন মাহাথির। সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তুন হোসেন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৭৬ সালে।

১৯৮১ সালের নির্বাচনে দেশটির চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন মাহাথির বিন মোহাম্মদ। দীর্ঘ ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে আসেন মাহাথির বিন মোহাম্মদ।

তার মেধা, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। উন্নয়নমূলক নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে বদলে দেন মালয়েশিয়াকে। তাই তাকে বলা হয়, আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক।

ক্ষমতায় আসার পর একের পর পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি বাস্তবায়নও করেছেন সেগুলো। দেশটির ২০২০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মসূচিও তার ঘোষণা করা ছিল। মাহাথির শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ দিক। মালয়েশিয়ার সব মুসলিমের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন তিনি।

মালয়েশিয়ানদের শিক্ষার ৯৫ শতাংশ খরচ সরকার বহন করে। এই নীতি চালু হয় মাহাথিরের আমল থেকে। আশির দশকে গৃহীত ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি বাস্তবায়ন করা শুরু করেন তিনি। ফলাফলে, ১৯৯২ সালে নিজ দেশের সবাইকে কর্মসংস্থান দিয়ে উলটো আরও ৮ লাখ বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেয় মালয়েশিয়া।

একই বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতেই ৬৫০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রফতানি করে।
পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার নির্মাণ, সমুদ্র থেকে ৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি উদ্ধার, অত্যাধুনিক এয়ারপোর্ট তৈরি, একাধিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, হাইওয়ে নির্মাণসহ তার অসংখ্য উদ্যোগ সফল হয়েছে।

১৯৯০ সালেই বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছাড়িয়ে যায় ৮ শতাংশের বেশি।

১৯৮২ সালে থাকা মালয়েশিয়ার ২৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ জিডিপি ২০০২ সালে এসে দাঁড়ায় ৯৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর তালিকায় তলানিতে থাকা মালয়েশিয়াকে নিয়ে আসেন ১৪তম স্থানে।

মাহাথির ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। কর্মীদের যা বলেছেন, তা নিজে করেও দেখিয়েছেন। সরকারি কর্মীরা যেন ঠিক সময়ে অফিসে আসেন সে জন্য নিজেও ঠিক সময়ে অফিসে আসতেন। টাইম ম্যাগাজিন একবার তার অফিসে আসার সময় রেকর্ড করেছিল। পরপর পাঁচ দিন মাহাথিরের অফিসে প্রবেশের সময় ছিল সকাল ৭:৫৭, ৭:৫৬, ৭:৫৭, ৭:৫৯, ৭:৫৭ মিনিটে।

সিঙ্গাপুরে মেডিকেলে পড়ার সময় মাহাথিরের সহপাঠী ছিলেন সিতি হাসমাহ। এই সিতিকেই নিজের জীবনসঙ্গী করে এতটা পথ হেঁটেছেন।

রাজনীতিতে ফিরে এসে মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিতের পর, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিলেন মাহাথির মোহাম্মদ।

বিগত দিনে মাহাথিরের রাষ্ট্র পরিচালনা এবং উন্নয়নের মন্ত্র কেবল নিজের দেশের ক্ষেত্রেই নয়, সমগ্র বিশ্বেই রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। ‘আমাকে ১০ জন যুবক দাও, আমি মালয়ীদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্বজয় করে ফেলব’- এমনি আদর্শিক চেতনা নিয়ে দারিদ্র্যের তলানিতে অবস্থান করা মালয়েশিয়াকে তুলে এনেছেন উন্নয়ন আর আধুনিকতার শীর্ষে।

আপাদমস্তক বাস্তববাদী এবং দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ডা. মাহাথির মোহাম্মদ আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবীর তাবত শাসকদের জন্য একটি অনুকরণীয় আদর্শ।

১৯৬৯ সালে তিনি একটি বই লেখেন, যার নাম মালয়ীদের উভয় সংকট। বইটি নিষিদ্ধ করা হয়।

১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই ৫৫ বছর বয়সে ডা. মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং একটানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ও রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।

সম্প্রতি সি এন এনের একটি সাক্ষাৎকারে উঠে আসে তার দেশ গড়ার গল্প। সেখানে মাহাথির বলেন, যখন আমি স্বেচ্ছায় অবসরে গেলাম আমি চিন্তা করেছিলাম আমি আমার চারপাশ এবং আমার পরিবারকে নিয়ে একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় সময় কাটাতে পারব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার অবসরে যাওয়ার পরেই আমার পরবর্তী জন নতুন পরিকল্পনা করেন, যেটাকে আমার ভালো মনে হয়নি সে জন্যই আবার ফিরে আসা। বিশেষ করে বলতে গেলে আমার শুরু করা সব কিছুকেই তারা এড়িয়ে যেতে লাগল। এ কারণে অনেকেই অখুশি হয়েছিল। তারা প্রায়ই আমার কাছে আসত এবং বলত ‘দয়া করে কিছু একটা করুন, কিছু একটা করুন।’

মাহাথির বলেন, আমরা ছিলাম ব্রিটিশ শাসনের অধীন। তারপর জাপানিরা আসল, তারা আমাদের থাইদের কাছে ছেড়ে দিল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল যে, আমরা একটা ফুটবলের মতো যে কেউ আমাদেরকে এদিক সেদিক লাথি মারতে থাকল। আমার এ রকমটি পছন্দ হয়নি। আমি অনুভব করতে থাকি যে, মানুষজন আমাদের সম্মান করত না। আমার মনে হয়েছিল- অন্যদের মতো আমাদের কেউ সমানভাবে দেখা উচিত।

তিনি বলেন, এই ব্যাপারটিই আমাকে সামনে আসতে উৎসাহ দেয় যে, মালয়েশিয়া অন্য দেশগুলোর মতোই একটি ভালো দেশে পরিণত হতে পারে। আমি এখানেই জন্ম নিয়েছি, বড় হয়েছি এবং আমার আশপাশের এসব লোকজন যাদের সঙ্গে আমি আমার সময় কাটিয়েছি এবং আমরা একটি সুন্দর সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি।

ডা. মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, আমি স্বৈরশাসক ছিলাম না। আমি জনগণ দ্বারা পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছিলাম, এবং সবচেয়ে বড় কথা কোনো স্বৈরশাসকই কখনো স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে না, অন্যদিকে আমি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি- দেশের জন্য কাজ করা এবং একে ভালো কিছু দেয়ার সুযোগ গ্রহণ করাটা খুবই স্বস্তিদায়ক। এটা এ জন্য নয় যে আপনি টাকা কামাচ্ছেন বরং এটা এ জন্য যে আপনাকে আপনার কাজে সন্তুষ্ট রাখছে।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছি এবং দেখেছি তারা খুবই ভালো করছে। তবে মালায়শিয়া কেন নয়? সে জন্য এটা একটি বিবেচ্য বিষয় যে, আমাদের বিবেচনা করতে হবে আমাদের সম্পদকে, আমাদের সামর্থ্যকে, আমাদের অবস্থাকে এবং সামনে আসন্ন পরিবর্তনকে যাতে আমরা আমাদের দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবদান রাখতে পারি।

আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক বলেন, এতটা অনুশোচনা নেই কিন্তু আমি অনুভব করি যে, এই দেশটি বিভিন্ন বর্ণের জাতির সমষ্টি। আপনি এটাকে পরিবর্তন করতে পারবেন না, ধনী-গরিবের মধ্যে, বিভিন্ন বর্ণের মধ্যে কোনো তফাত থাকাকে আমি পছন্দ করি না কারণ এটা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।

এটা নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে এ রকম বৈষম্য বিলুপ্ত হয় এবং এক হয়ে দেশটির সব গোত্রই এ দেশের সব সম্পদ সমানভাবে ভোগ করতে পারবে। আমার কিছুটা সফলতা রয়েছে কিন্তু বৃহৎ অর্থে আমি ব্যর্থ।

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর যে পরিস্থিতি দেখছি তাতে বিশ্বস্ত কোনো কর্মকর্তা পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। বাইরে থেকে আমরা বুঝতে পারছিলাম, দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে গোটা প্রশাসন। কিন্তু পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ তা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার আগে বুঝতে পারিনি। সরকার যাদের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেবে, সেই শীর্ষ কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই দুর্নীতিগ্রস্ত।’

মাহাথিরের পূর্বসূরি নাজিব রাজাক জনগণের বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাকে এমন লোকজনকে নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে যারা দুর্নীতির কারণে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার যোগ্য। এটা ভীষণ কঠিন একটা কাজ। কারণ যাদের আপনি বিশ্বাস করতে পারেন না, তাদের যে দায়িত্ব দেবেন তা তারা আদৌ ঠিকভাবে করবে কি না সেই সংশয় থেকে বের হওয়া কঠিন।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ সূচক অনুসারে মালয়েশিয়া বিশ্বের ৬২তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।

মাহাথির বলেন, ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা তাদের অর্জিত বিপুল অর্থ নিজেরা এবং স্ত্রী-সন্তানদের বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ, কিংবা দেশের বাইরের ব্যাংকে জমা করার সুযোগ পেয়েছেন। সরকার তাদের বিন্দুমাত্র বাধা দেয়নি।’

মার্কিন এই গণমাধ্যমকে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যত দিন সুযোগ পাই জনগণের সেবা করে যাব। আমার ইচ্ছা যেন আমি আরও বেশি কিছু করতে পারি।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment