প্রশ্ন সমাধান: মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার গঠন ও তার কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা কর, মুজিবনগর সরকার ও এ সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা কর,মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লিখ, মুক্তিযুদ্ধের মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা আলোচনা কর
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার তথা মুজিবনগর সরকার গঠন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধকে গতিময় ও সুসংহত করা, বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায় ও মুক্তিযুদ্ধকে জাতীয় ও সমন্বিত রূপ দিতে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। বাঙালির মুক্তির প্রবল বাসনাকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমর্থনের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা ছিল মুজিবনগর সরকারের সাফল্য ও কৃতিত্ব।
মুজিবনগর সরকার গঠন : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়। ঐ দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার আদেশ এবং অনুমোদন করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ২৬ মার্চ ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণা। এ সরকারের প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তারই নামানুসারে এ সরকারের নামকরণ করা হয় মুজিবনগর সরকার। এ সরকার গঠিত হয় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায়, যার নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। প্রথম দিকে মুজিবনগর সরকারের সদর দপ্তর মুজিবনগরে স্থাপিত হলেও পরবর্তীকালে এর সদর দপ্তর কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে স্থানান্তরিত হয়।
মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলেও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয় ১৭ এপ্রিল। কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলার (মুজিবনগর) আম্রকাননে দেশি-বিদেশি ১২৭ জন সাংবাদিক ও কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তায় শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। শপথ বাক্য পাঠ করান জাতীয় পরিষদের সদস্য অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলী। শপথ অনুষ্ঠানে প্রবাসী সরকারকে উপদেশ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী) মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (মুজাফফর) অধ্যাপক মুজাফফ্ফর আহমেদ, কমিউনিস্ট পার্টির কমরেড মনি সিং, কংগ্রেসের শ্রীমনোরঞ্জন ধর এবং আওয়ামী লীগের ৫ জন প্রতিনিধি নিয়ে সর্বমোট ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। এ উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। প্রধানমন্ত্রীসহ মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ৭ জন।
আরো ও সাজেশন:-
মুজিবনগর সরকারের লক্ষ্য : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুজিবনগর সরকার গঠন নানা বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক লক্ষ্যে এ সরকার গঠিত হয়। যথা :
১. আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং তা বাস্তবায়নে সামরিক-বেসামরিক ও কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা।
২. মুক্তিযুদ্ধকে দক্ষতার সাথে সমন্বিতভাবে পরিচালনা।
৩. মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং অস্ত্র সরবরাহ।
৪. দেশে বিদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসলীলা, নির্যাতন-নিপীড়ন সম্পর্কে প্রচার চালানো।
৫. পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের অত্যাচারে ভারতে আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা।
৬. আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও বিদেশি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন।
৭. মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা মুক্তাঞ্চলে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা।
৮. বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিদানে বিশ্ব নেতাদের দ্বারা চাপ প্রয়োগ।
৯. ভারত,
সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সহমর্মী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রম : মুজিবনগর সরকারের মোট ১২টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ছিল। এ মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রমসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো :
১. প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় : প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। প্রধান সেনাপতি ছিলেন কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী, সেনাপ্রধান ছিলেন লে. কর্নেল আবদুর রব, উপ সেনাপ্রধান ও বিমানবাহিনীর প্রধান ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার। বাংলাদেশের সমস্ত যুদ্ধাঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে তিনটি ব্রিগেডও গঠিত হয়। এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই সার্বিক মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে।
২. পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। বিদেশে মিশন স্থাপন, বিদেশে কূটনৈতিক তৎপরতা পরিচালনা এ বিভাগের কাজ ছিল। এ মন্ত্রণালয়ের তৎপরতায় প্রবাসী বাঙালিরা সংঘবদ্ধ হয় এবং বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গড়ে উঠে।
৩. অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় : মুজিবনগর সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে সরকার বাজেট প্রণয়ন ও আয়ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত সম্পদের হিসাব প্রস্তুত, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গকে অর্থ প্রদানের দায়িত্ব পালন ও বিধিমালা প্রণয়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রবর্তন, রাজস্ব ও শুল্ক আদায়, আর্থিক অনিয়মের তদন্তের জন্য কমিটি গঠন প্রভৃতি দায়িত্ব প্রদান করে।
৪. মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয় : অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তার অধীনে অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠিত হয় মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়। এ সচিবালয়ের দায়িত্ব ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি মন্ত্রিপরিষদের নিকট পেশ করা, মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়সাধন প্রভৃতি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের দায়িত্ব পালন করতেন।
৫. সাধারণ প্রশাসন, সংস্থাপন বিভাগ : সংস্থাপন বিভাগ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কাজ করতেন। এ বিভাগটি সরকারের সংস্থাপনবিষয়ক কাজ যেমন- প্রবেশন, নিয়োগ, বদলি, পোস্টিং, শৃঙ্খলা, সরকারি নিয়োগের নীতিমালা বাস্তবায়ন, মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীর তালিকা সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজ ছিল সাধারণ প্রশাসনের দায়িত্ব।
দেশব্যাপী সুষ্ঠু প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জুলাই মাসে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করে সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণাকারী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের আঞ্চলিক প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। শরণার্থী সমস্যা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সামরিক বেসামরিক বিষয়াবলির সুষ্ঠু সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ ভার
এই প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোর উপর ন্যস্ত ছিল।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
৭. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একজন পূর্ণ সচিব নিযুক্ত ছিলেন। তথ্যসংগ্রহ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার নিকট সেগুলো প্রেরণ করা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রধান কাজ। এছাড়াও অবমুক্ত এলাকার প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠন, ভ্রমণ ডকুমেন্ট ইস্যু করা, তদন্ত পরিচালনা ইত্যাদি কার্যক্রম এ মন্ত্রণালয় পরিচালনা করত
৮. স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ : প্রাথমিকভাবে একজন মহাপরিচালকের অধীনে গঠন করা হয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ। পরবর্তীতে মহাপরিচালককে সরকারের সচিবের মর্যাদা প্রদান করা হয়। এ বিভাগ সামরিক বাহিনীর স্বাস্থ্য চিকিৎসা এবং বেসামরিক চিকিৎসা ও কল্যাণে নিয়োজিত ছিল।
৯. প্রকৌশল বিভাগ : মুজিবনগর সরকারের এ বিভাগে একজন প্রধান প্রকৌশলীর অধীনে জোনাল ইঞ্জিনিয়ারগণ সেক্টর কমান্ডারদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য নিয়োজিত ছিলেন। মুক্ত এলাকার প্রকৌশলবিষয়ক সমস্যাদি সমাধানেও তারা দায়িত্ব পালন করতেন।
১০. তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয় : স্বাধীন বাংলা বেতার সরকারের অধীনে সর্বপ্রথম সংস্থাসমূহের অন্যতম। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধের খবর এবং পাকবাহিনীর হত্যা ও অত্যাচারের কাহিনি প্রচার করার পাশাপাশি পাকবাহিনীকে ধিক্কার ও বিদ্রূপ করে এম. আর. আখতার মুকুল রচিত ও পঠিত ‘চরমপত্র’ প্রচার করত। এ বেতার অবরুদ্ধ দেশবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দারুণভাবে উৎসাহিত করত।
১১. ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ : এটি রিলিফ কমিশনের সংগঠিত একটি বিভাগ। এ বিভাগ সরাসরি স্বরারাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর অধীনে কাজ করত। এ বিভাগের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হচ্ছে ত্রাণের জন্য গৃহীত বিভিন্ন আবেদনপত্র পরীক্ষানিরীক্ষা করে বাংলাদেশি নাগরিকদের সাহায্য করা, বাংলাদেশ শিক্ষকমণ্ডলীর রিলিফের ব্যবস্থা করা ও উদ্বাস্তু শিবিরে রিলিফ বিতরণ প্রভৃতি।
১২. কৃষি বিভাগ : মুজিবনগর সরকারের কৃষি বিভাগটি পুরোপুরি সংগঠিত ছিল না। কেবল একজন সচিব নিয়োগ করা হয়েছিল, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের নকশা ও পরিকল্পনা তৈরি করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
উপসংহার : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের গঠন ও গঠন পরবর্তী এ সরকারের কার্যক্রম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি সোনালি অধ্যায়। কারণ এ সরকারের তৎপরতা বহির্বিশ্বকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকবাহিনীর ধর্ষণ, নির্যাতন ও গণহত্যা সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালির প্রতি বিশ্বব্যাপী যে সহানুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতারই ফল। তাছাড়াও এ সরকারের কারণে দেশের মধ্যে যুদ্ধকালীন শৃঙ্খলা বিরাজ করছিল।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- লিভারেজ ইজারার সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ লিখ
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট