মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিগুলোর ভূমিকা কী ছিল
২৬ মার্চ ১৯৭১ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়ারলেস যোগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী কাছে একটি বার্তা বা বাণী প্রেরণ করেন তিনি সেখানে উল্লেখ করেছিলেন “This may be last message to you from today Bangladesh is independent” এটাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঐ মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।
অতপর ৪ এপ্রিল ১৯৭১সিলেটের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে (বর্তমান হবিগঞ্জ ) এমএজি ওসমানের নেতৃত্বে ৫০০০সামরিক ও ৮০০০বেসামরিক মোট ১৩ হাজার যোদ্ধা নিয়ে মুক্তিফৌজ নামে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়েছিল। ১২ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মুক্তিফৌজ নাম পরিবর্তন করে বাহিনীটির নামকরণ করা হয় মুক্তিবাহিনী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তির ভূমিকা ছিল অবস্মরণীয়।
পরবর্তীতে বিদেশে অর্থাৎ প্রবাসী সরকার গঠন করা হয় এবং এই সরকার মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করে এবং বাংলাদেশের প্রথম সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের নির্দেশে প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ
ক্রম | পরাশক্তির নাম | তৎকালীন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীন নেতা |
1 . | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) | প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন |
3. | সোভিয়েত ইউনিয়ন (USSR) | প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই পদগর্নি |
4. | গণচীন (PRC) | প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই |
5. | ভারত | ইন্দিরা গান্ধী |
6. | জাতিসংঘ (বিশ্ব সংস্থা) | মহাসচিব, উথান্ট (মায়ানমার) |
বাংলদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তির ভূমিকা আলোচনা কর
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ছিল তার ব্লকের রাষ্ট্র পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করা। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয় এবং রাশিয়ার কূটনৈতিক বিজয় ঘটেছিল।
তাই এখানে যেন আরেকটি পরাজয় না ঘটে সেজন্য বাংলাদেশ ইস্যুতে স্নায়ুযুদ্ধের অংশ হিসেবেই পাকিস্তানের পক্ষ নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেহেতু ভারত-রাশিয়ার ব্লকে আছে তাই বাংলাদেশ ইস্যুতে রাশিয়ার কাছে হারতে চাইল না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে বিভিন্ন সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। ফলে রাজনৈতিক মিত্র এর পাশাপাশি সামরিক মিত্র হিসেবে পাকিস্তানকে সহায়তা করা তারা দায়িত্ব মনে করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা
রাশিয়ার উদ্দেশ্য:
রাশিয়ার উদ্দেশ্য ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর আরেকটি যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করা। বাংলাদেশ ইস্যু রাশিয়ার হাতে চলে আসে। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করছে, আর ভারত-রাশিয়ার অন্যতম মিত্র। ভারতের পরাজয় মানে রাশিয়ার পরাজয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে জয়ী হলে এখানে মার্কিন আধিপত্য বিস্তার ঘটবে যা রাশিয়ার জন্য ছিল হুমকিস্বরূপ। তাই ভারতের মাধ্যমে রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করে।
চীনের উদ্দেশ্য:
চীন তখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ লাভের দ্বারপ্রান্তে ছিল। চীন-আমেরিকান ব্লকে থাকায় পাকিস্তান তার অন্যতম মিত্র ছিল। তাছাড়া রাশিয়া ও ভারতের সাথে তার সম্পর্কের পটভূমির কারণেই চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করে এবং যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে থেকে ছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও তিন পরাশক্তি
ভারতের উদ্দেশ্য:
ভারত পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর।মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের পর থেকে ভারতীয় কোন হিন্দু নেতৃত্ব ক্ষমতাশীল মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেনি।স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধও ছিল অমীমাংসিত।
তাই 1971 সালের যুদ্ধের মাধ্যমে ভারত সে সুযোগ কাজে লাগাতে চাইল।বল ছিল ভারতের কোর্টে। ভারতের দুই দিকে পাকিস্তান থাকায় এটা ছিল ভারতের জন্য একটা বড় ধরনের অস্বস্তির কারণ ।
পাকিস্তানের এইরকম ভৌগলিক অবস্থানের ফলে ভারত তেমন শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি পাকিস্তানের বিপক্ষে। তাই ভারতের মূল উদ্দেশ্য ছিল বহুকাল পর একটি যুদ্ধে জয়লাভ করা।
পাকিস্তানকে একটি সমুচিত শিক্ষা দেওয়া এবং পাকিস্তানের একটি হাত তথা পূর্ব পাকিস্তানকে স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।