মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আলােচনা কর
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। সকাল থেকেই সাজ সাজ রব মেহেরপুরের প্রত্যন্ত এলাকা বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে। আম গাছের ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা যায় না, এতোটাই ঘন পাতার বিস্তার। মাঝেমাঝে কেবল রোদ উঁকি দিচ্ছে পাতার মাঝখান দিয়ে।
প্রচণ্ড রোদ, অথচ কী ছায়া সুনিবিড় চারপাশ! যেন উৎসব চলছে চারপাশে। উপস্থিত সবার মধ্যে চাপা উচ্ছ্বাস, উত্তেজনা।
স্থানীয় ভবেরপাড়ার একটি মিশনারি হাসপাতাল থেকে কিছু চেয়ার টেবিল ধার করে আনা হয়েছে। মঞ্চে সাত থেকে আটটি চেয়ারের মধ্যে একটি খালি। দেবদারু গাছের পাতা দিয়ে তৈরি দুটি তোরণ।
তার মধ্যে হাতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি। একটু দূরে ভারতীয় বাহিনীর ৩০টিরও বেশি এন্টি এয়ার ক্রাফট পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাছাকাছি কয়েকটি ট্যাংক।
উপস্থিতদের মধ্যে কেউ মাটিতে বসে, আবার কেউ দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। চারপাশে আনসার সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন।
একপাশে মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, একপাশে হয়তো কারও কারও গুঞ্জন। উপস্থিত আছেন ১২৭ জন সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ পর্যায়ের সংগঠক, ভারতীয় বাহিনীর কর্মকর্তাসহ কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ।
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠান সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর
এতো আয়োজন করে ভারতীয় সীমান্তবর্তী অখ্যাত অজপাড়াগাঁয়ের এই আমবাগানে আসলে কী হচ্ছে? বলি তবে- আজ হচ্ছে এক সপ্তাহ আগে গড়া প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ।
প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ কেন এই অখ্যাত পাড়াগাঁয়ের আম বাগানে?
১০ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের পর ১৪ এপ্রিল এর আনুষ্ঠানিক শপথের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গা। কিন্তু, আওয়ামী লীগের সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আসহাবুল হক এমপি এক সংবাদ সম্মেলনে উচ্ছ্বসিত হয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলে ফেলেছিলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে চুয়াডাঙ্গাকে নির্বাচন করেছে।’
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এই খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচারও করে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পাশাপাশি আকাশবাণীও এই তথ্য ফলাও করে প্রচার করে। ফলে পাকিস্তান সরকার স্পষ্টই বুঝতে পারে কী হতে যাচ্ছে। ১৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় বিমান হামলা চালায় তারা।
একইসঙ্গে আর্টিলারি থেকে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। অবস্থা খারাপ দেখে আট নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুরে স্থানান্তর করেন।
একইসঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়, চুয়াডাঙ্গার বদলে শপথ অনুষ্ঠান হবে মেহেরপুরের ভারত সীমান্তবর্তী কোনো এক নির্জন জায়গায়। পুরো কাজটি চলে গোপনে।
মুজিবনগর সরকার কখন ও কোথায় গঠিত হয়েছিল?
১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সহযোগী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের জানান, ‘আগামীকাল বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান আছে। যারা অনুষ্ঠানে যেতে চান, তাদের অবশ্যই ভোরে প্রেসক্লাবে উপস্থিত থাকতে হবে।
সেখান থেকে বাংলাদেশ সরকার তাদের গাড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে।’
১৩ এপ্রিল বিমান হামলার পর অবস্থা দেখে ভারত সরকার তাজউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে ১৭ই এপ্রিল শপথের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে।
মজার বিষয় হলো, সেই সিদ্ধান্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামও আগে থেকে জানতেন না। তাজউদ্দীন আহমেদ ১৫ এপ্রিল গভীর রাতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে পুরো সিদ্ধান্তের কথা খুলে বলেন।
আর ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, খোন্দকার মোশতাক আহমেদ ও অধ্যাপক ইউসুফ আলী জানতে পারেন বাংলাদেশের উদ্দেশে গাড়িতে ওঠার মাত্র ৩০ মিনিট আগে।
বাঙালির প্রথম সরকারের শপথ: স্বাধীনতার পথে বড় এক ধাপ
মেহেরপুরের তখনকার সাব ডিভিশনাল অফিসার তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা), ঝিনাইদহ মহকুমার এসডিও মাহবুব ও তাজউদ্দীন আহমেদ একসঙ্গে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমেদ সেখান থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি চলে গেলেও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে ফিরে আসতে হয়েছিল। কিন্তু, কলকাতার সঙ্গে মেহেরপুরের সংযোগ ছিল।
আর তৌফিক- ই- ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাজউদ্দীন আহমেদের। সেই সুবাদে প্রবাসী সরকার গঠনের প্রয়োজন দেখা দেওয়া মাত্রই তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে বলা হলো, ‘শিগগিরই সরকার গঠন করা হবে। আপনার দিক থেকে প্রস্তুতি নিন। কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার আশপাশের এলাকায় এটি হতে পারে।’
এদিকে চুয়াডাঙ্গার রাজধানী হওয়ার খবর ফাঁস হওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যশোর থেকে আক্রমণ চালানো শুরু করে। চুয়াডাঙ্গায় একের পর এক বোমা ফেলতে থাকে তারা। আর্টিলারি থেকে অবিরাম চলে গোলাবর্ষণ। এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে কিছুটা দমে যান তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। যদিও তিনি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
১৫ এপ্রিল তিনি যখন মেহেরপুরে এলেন, তখন তাকে খবর দেওয়া হলো। বলা হলো, ‘আপনারা একটি জায়গা বাছাই করেন। যেটি বাংলাদেশের ভেতর হলেও দুর্গম এবং যেখান থেকে সহজে ভারতে ঢোকা যায়।’ নিজের চারপাশের ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে খোঁজ নিলেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
যাচাই-বাছাইয়ের পর পাওয়া গেল অখ্যাত পাড়াগাঁয়ের বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগান। এই আমবাগান নির্বাচনের একটি কারণ হচ্ছে, পাতায় আচ্ছাদিত হওয়ায় সেখান থেকে ওপরের আকাশ দেখা যায় না। এছাড়া, এখান থেকে খুব সহজেই ভারতে প্রবেশ করা যায়। পাশাপাশি এই বৈদ্যনাথতলা অনেকটাই দুর্গম।
১৬ এপ্রিল সীমান্ত এলাকায় তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ইপিআরের বেশ কয়েকজন সদস্য ও আনসারের একটি কন্টিনজেন্ট রাখেন প্রতীকী সীমান্তে নিরাপত্তার জন্য।
এ সময় তিনি বিএসএফের কর্মকর্তাদের বলেন, ‘ভারতের দিক থেকে কিছু মানুষ আসবে। সাংবাদিকরাও আসতে পারেন। একটা অনুষ্ঠান হতে পারে। আপনারা আপনাদের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন।’
রাতে বিএসএফের সদর দপ্তর থেকে স্থানীয় বিএসএফ ঘাঁটিতে টেলিফোনে বলা হলো, ‘আগামীকাল সকালের জন্য ২০-২৫ জনের একটি দল করে আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। সকালে একটি প্রোগ্রাম আছে’। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা হয়ে নদীয়ার কৃষ্ণনগরে চলে গিয়েছিলেন মাগুরা মহকুমার প্রশাসক ওয়ালিউল ইসলাম ও পাবনা জেলার প্রশাসক নুরুল কাদের।
এর মধ্যে তাদের কাছেও খবর পৌঁছে যায় শপথ অনুষ্ঠানের। ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওয়ালিউল ইসলামকে খবর দেন নুরুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চলে এসো। কিছু কাজ আছে আমাদের।’ পরে নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ফোনে বললেন, ‘আমাদের কাছে খবর এসেছে যে, আমাদের জেলার কাছাকাছি বাংলাদেশের ভেতরে আপনাদের সরকার শপথ নেবে। শপথ অনুষ্ঠান হবে সকালে। আপনারা যারা এখানে আছেন তাদের সবাইকে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।’
পরদিন ভোরে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীরা ছোট্ট একটি মঞ্চের ব্যবস্থা করলেন। রাতেই খবর দেওয়া হলো ভারতীয় বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর আর্টিলারিকে। এ ছাড়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেন হঠাৎ বিমান হামলা চালাতে না পারে সে জন্য মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারাও ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠান সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর
অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল সীমিত, সংক্ষিপ্ত। সকাল ৯টা থেকে আমন্ত্রিত অতিথি ও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা পৌঁছাতে শুরু করলেন। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয়দের জিপে করে ভারত থেকে অতিথিরা গিয়েছিলেন। মঞ্চ তৈরির দায়িত্ব ছিল স্থানীয় সংগ্রাম কমিটির। মোমিন, জজ মাস্টার, আইয়ুব ডাক্তার, সৈয়দ মাস্টার, রফিক মাস্টার, রুস্তম উকিল, জামাত মাস্টার, সুশীল কুমার বিশ্বাসসহ বেশ কয়েকজন তৌফিক-ই-ইলাহীর নির্দেশনায় মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করেন ১৬ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে। মাটির ওপর চৌকি, কাপড়, বাঁশ আর দেবদারু গাছের পাতা দিয়ে সাজানো হয় সবকিছু। চেয়ার, টেবিল মিশনারি হাসপাতাল থেকে ধার করে আনা হলেও মাইক এসেছিল ভারত থেকে। মঞ্চের আটটি চেয়ারের একটি খালি রাখা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে। সকাল ১১টায় শুরু হলো অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান। প্রথমেই কোরআন তেলাওয়াত করেন কলেজ শিক্ষার্থী বাকের আলী। এরপর শাহাবুদ্দিন আহমেদ, সেন্টু বিশ্বাস, আসাদুল হকসহ বেশ কয়েকজনের কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
একটি বিষয় না বললেই নয়। বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে যে কিছু হতে যাচ্ছে তা অনুমান করতে পেরেছিল রাজাকাররা। শেষ রাতে আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে ভারতীয় যুদ্ধ বিমান, এন্টি এয়ার ক্রাফট এবং কয়েক ডজন ট্যাংকের শব্দ শুনে তারা মেহেরপুর ছেড়ে চলে যায়। এর আগে, তারা রটিয়ে দেয় যে- আমবাগানে হিন্দুদের পূজা হবে। সেই পূজায় যাওয়া মুসলমানের জন্য হারাম। কেউ গেলে তার তালাক হয়ে যাবে। তিনি ইমানহারা হয়ে যাবেন। এই ফতোয়া শুনে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, হাফেজ, মাওলানা, আলেম- সবাই সকাল সকাল এলাকা ছেড়ে চলে গেলেন। এদিকে শপথ অনুষ্ঠান শুরুর সময় দেখা দিল সংকট। কারণ, কোরআন তেলাওয়াত করার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন অধ্যাপক ইউসুফ আলীর নির্দেশে স্বাধীন বাংলা বেতারের এক সাংবাদিক খুঁজে বের করলেন এক কলেজ শিক্ষার্থীকে। নিখুঁত গলায় দারুণ তেলাওয়াত করেন তিনি। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি। সকালে পূজার কথা শুনে কৌতূহলবশত ঘটনা দেখতে এসেছিলেন। অধ্যাপক ইউসুফ আলী তাকে নিয়ে মাইকের সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘বাবা, তুমি ভীষণ সৌভাগ্যবান। আল্লাহ তোমাকে পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের জন্মের অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য। তুমি আল্লাহর নাম করে তেলাওয়াত শুরু করো।’
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন গণপরিষদের স্পিকার ইউসুফ আলী। তারপর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান তিনি। এরপরই ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি ও মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্নেল আতাউল গণি ওসমানীর নাম। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এমএনএ। ১৭ এপ্রিল শপথ অনুষ্ঠিত হলেও মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন হয় ১৮ এপ্রিল। মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীন থাকে।
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের বক্তব্য
শপথ গ্রহণের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজ এই আম্রকাননে একটি নতুন জাতি জন্ম নিলো। বিগত বহু বছর যাবত বাংলার মানুষ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব ঐতিহ্য, নিজস্ব নেতাদের নিয়ে এগুতে চেয়েছেন। কিন্তু, পাকিস্তানি কায়েমি স্বার্থ কখনই তা হতে দিলো না। ওরা আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিক পথে এগুতে চেয়েছিলাম। ওরা তা দিল না। ওরা আমাদের ওপর বর্বর আক্রমণ চালালো। তাই আজ আমরা লড়াইয়ে নেমেছি। এ লড়াইয়ে আমাদের জয় অনিবার্য। আমরা পাকিস্তানি হানাদারদেরকে বিতাড়িত করবই। আজ না জিতি, কাল জিতব। কাল না জিতি, পরশু জিতবই। আমরা বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান চাই। পরস্পরের ভাই হিসেবে বসবাস করতে চাই। মানবতার, গণতন্ত্রের এবং স্বাধীনতার জয় চাই। আপনারা জানেন, পাকিস্তানের শোষণ ও শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গত ২৩ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু সব স্বার্থ পরিত্যাগ করে আন্দোলন করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার। আমি জোর দিয়ে বলছি তিনি আমাদের মধ্যে আছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির সংকটের সময় আমরা তার নেতৃত্ব পেয়েছি। তাই বলছি পৃথিবীর মানচিত্রে আজ যে নতুন রাষ্ট্রের সূচনা হল তা চিরদিন থাকবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি তা মুছে দিতে পারবে না। আপনারা জেনে রাখুন, গত ২৩ বছর ধরে বাংলার সংগ্রামকে পদে পদে আঘাত করেছে পাকিস্তানের স্বার্থবাদী শিল্পপতি, পুঁজিবাদী ও সামরিক কুচক্রীরা। আমরা চেয়েছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের অধিকার আদায় করতে। লজ্জার কথা, দুঃখের কথা ঐ পশ্চিমারা শেরে বাংলাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছিল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে কারাগারে পাঠিয়েছিল। তাই ওদের সঙ্গে আপোষ নেই, ক্ষমা নেই। আমাদের রাষ্ট্রপতি জনগণনন্দিত, ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, নির্যাতিত মানুষের মূর্ত প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলার মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আজ বন্দী। তার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম জয়ী হবেই।’
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণের সময় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম এরপর তাজউদ্দীন আহমেদকে উপস্থিত সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘সমাবেত সাংবাদিক বন্ধুরা ও উপস্থিত জনসাধারণ, আপনাদের সামনে আমার মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রীকে উপস্থিত করছি। এখন আপনাদের সামনে বক্তব্য দিবেন জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ। সবাই হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান।’
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের বক্তব্য
তাজউদ্দীন আহমদ দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এবং মূহুর্মূহু ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনির মধ্যে তার ভাষণে বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ জন্য যে, তারা আমাদের আমন্ত্রণে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি দেখে যাওয়ার জন্য বহু কষ্ট করে, বহু দূর দূরান্ত থেকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন।
বাংলাদেশ এখন যুদ্ধে লিপ্ত। পাকিস্তানের উপনিবেশবাদী নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জন ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে গণহত্যার আসল ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকারের অপপ্রচারের মুখে বিশ্ববাসীকে অবশ্যই জানাতে হবে, কীভাবে বাংলার শান্তিকামী মানুষ সশস্ত্র সংগ্রামের পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতিকেই বেছে নিয়েছিল। তবেই তারা বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সত্যিকারভাবে উপলদ্ধি করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আজ মৃত এবং অসংখ্য আদম সন্তানের লাশের তলায় তার কবর রচিত হয়েছে। বাংলাদেশে যে শত সহস্র মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে একটা প্রাচীর হিসেবে বিরাজ করছে। পূর্ব পরিকল্পিত গণহত্যায় মত্ত হয়ে ওঠার আগে ইয়াহিয়ার ভাবা উচিত ছিল তিনি নিজেই পাকিস্তানের কবর রচনা করছেন।
তারই নির্দেশে তার লাইসেন্সধারী কসাইরা জনগণের ওপর যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, তা কোনো মতেই একটা জাতীয় ঐক্যের অনুকূল ছিল না। বর্ণগত বিদ্বেষ এবং একটা জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়াই ছিল এর লক্ষ্য। মানবতার লেশমাত্র এদের মধ্যে নেই। উপরওয়ালাদের নির্দেশে পেশাদার সৈনিকরা লঙ্ঘন করেছে তাদের সামরিক নীতিমালা এবং ব্যবহার করেছে শিকারি পশুর মতো। তারা চালিয়েছে হত্যাযজ্ঞ, নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও নির্বিচার ধ্বংসলীলা। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে এর নজির নেই।
এসব কার্যকলাপ থেকে এ কথারই আভাস মেলে যে, ইয়াহিয়া খান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের মনে দুই পাকিস্তানের ধারণা দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়ে গেছে। যদি না হতো, তাহলে তারা একই দেশের মানুষের ওপর এমন নির্মম বর্বরতা চালাতে পারতো না। ইয়াহিয়ার এ নির্বিচার গণহত্যা আমাদের জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে অর্থহীন নয়। তার এ কাজ পাকিস্তানে এই মর্মান্তিক ইতিহাসের শেষ অধ্যায়, যা ইয়াহিয়া রচনা করেছেন বাঙালির রক্ত দিয়ে। বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হওয়া বা নির্মূল হওয়ার আগে তারা গণহত্যা ও পোড়া মাটি নীতির মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে শেষ করে দিয়ে যেতে চায়।’
তাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘হিটলারের পর গণহত্যার এমন জঘন্যতম ঘটনা আর ঘটেনি। অথচ বড় শক্তিরা বাংলাদেশের ঘটনার ব্যাপারে উটপাখির নীতি অনুসরণ করেছিল। তারা যদি মনে করে থাকে যে, এর মাধ্যমে তারা পাকিস্তানের ঐক্য বজায় রাখার ব্যাপারে সহায়তা করেছে, তাহলে তারা ভুল করেছে। কারণ পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইয়াহিয়া খান নিজেও মোহমুক্ত।
তাদের বোঝা উচিত যে, পাকিস্তান আজ মৃত এবং ইয়াহিয়া নিজেই পাকিস্তানের হত্যাকারী। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ একটা বাস্তব সত্য। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি অজেয় মনোবল ও সাহসের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার বাঙালি সন্তান রক্ত দিয়ে এই নতুন শিশু রাষ্ট্রকে লালন পালন করছে। দুনিয়ার কোনো জাতি এ নতুন শক্তিকে ধ্বংস করতে পারবে না।
আজ হোক, কাল হোক দুনিয়ার ছোট-বড় প্রতিটি রাষ্ট্রকেই গ্রহণ করতে হবে এ নতুন জাতিকে। স্থান দিতে হবে বিশ্ব রাষ্ট্রপুঞ্জে। সুতরাং রাজনীতি এবং মানবতার স্বার্থেই আজ বড় শক্তিগুলোর উচিত ইয়াহিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করা, তার লাইসেন্সধারী হত্যাকারীদের খাঁচায় আবদ্ধ করা এবং তাদের পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংগ্রামকে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ যে সমর্থন দিয়েছেন তা আমরা চিরকাল কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবো। গণচীন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন ও অন্যান্য দেশের কাছ থেকেও আমরা এমন সমর্থন আশা করি এবং তা পেলে তাদেরকে অভিনন্দন জানাব। প্রতিটি রাষ্ট্রের উচিত তাদের নিজ নিজ পর্যায়ে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং তারা যদি তা করেন তাহলে ইয়াহিয়ার পক্ষে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আর একদিনও হামলা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।’
জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ রাষ্ট্র হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হবে ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনীর সৃষ্ট ভস্ম ধ্বংসস্তূপের ওপর একটা নতুন দেশ গড়ে তোলা। এ এক বিরাট দায়িত্ব। কারণ আগে থেকেই আমরা বিশ্বের দরিদ্রতম জাতিগুলোর অন্যতম। এ ছাড়া একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য মানুষ এক ঐতিহাসিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে।
তারা প্রাণপণে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে। তারা প্রাণ দিচ্ছে অকাতরে। সুতরাং তাদের আশা আমরা ব্যর্থ করতে পারি না। তাদের ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করতেই হবে। আমার বিশ্বাস- যে জাতি নিজে প্রাণ ও রক্ত দিতে পারে, এতো ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, সে জাতি তার দায়িত্ব সম্পাদনে বিফল হবে না। এ জাতির অটুট ঐক্য স্থাপনের ব্যাপারে কোনো বাধা-বিপত্তি টিকতে পারে না।’
তাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এই অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে আমরা কামনা করি বিশ্বের প্রতিটি ছোট-বড় জাতির বন্ধুত্ব। আমরা কোনো শক্তি বা সামরিক জোটভুক্ত হতে চাই না। আমরা আশা করি শুধুমাত্র শুভেচ্ছার মনোভাব নিয়ে সবাই নিঃসংকোচে আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসবেন। কারো তাবেদারে পরিণত হওয়ার জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণের দীর্ঘ সংগ্রামে আমাদের মানুষ এতো রক্ত দেয়নি।
আমাদের এই জাতীয় সংগ্রামে তাই আমরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং বৈষয়িক ও নৈতিক সমর্থনের জন্য বিশ্বের জাতিগুলোর প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে প্রতিটি দিনের বিলম্ব ডেকে আনছে সহস্র মানুষের অকালমৃত্যু এবং বাংলাদেশের মূল সম্পদের বিরাট ধ্বংস। তাই বিশ্ববাসীর প্রতি আমাদের আবেদন, আর বিলম্ব করবেন না, এই মুহূর্তে এগিয়ে আসুন। বিশ্ববাসীর কাছে আমরা আমাদের বক্তব্য পেশ করলাম, বিশ্বের আর কোনো জাতি আমাদের চেয়ে স্বীকৃতির বেশি দাবিদার হতে পারে না। কারণ আর কোনো জাতি আমাদের চেয়ে কঠোরতর সংগ্রাম করেনি, অধিকতর ত্যাগ স্বীকার করেনি। জয় বাংলা।’
অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদান
শপথ গ্রহণ ও বক্তব্যের পর মুজিবনগর সরকারকে ঝিনাইদহ মহকুমার পুলিশ প্রশাসক মাহবুব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে আনসার বাহিনীর একটি দল গার্ড অব অনার দেন। মূলত গার্ড অব অনার দেওয়ার কথা ছিল ইপিআর ও আট নম্বর সেক্টরের কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরীর।
কিন্তু, তখনো তিনিসহ ইপিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শপথ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। ফলে বিকল্প সমাধান খুঁজতে হলো তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে। মাহবুব উদ্দিন আহমেদ তাকে বললেন, ‘তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি একজন পুলিশ অফিসার। জীবনে বহুবার গার্ড অব অনার নিয়েছি, দিয়েছি। আমি এখনই ব্যবস্থা করছি।’
তারপর গাড়িতে থাকা তিন-চারজন পুলিশ কনস্টবল এবং আশেপাশের কয়েকজন আনসারকে কয়েক মিনিট প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করে ফেললেন তিনি। কিছুক্ষণ পরেই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন। পেছনে দাঁড়ালেন সরকারের প্রধান সেনাপতি ওসমানী। অন্যদিকে মঞ্চের বাঁ দিকে মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। সৈনিকরা যখন রাইফেল ঊর্ধ্বমুখী করে দাঁড়ালেন, মাহবুবউদ্দিন আহমেদ তখন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিকে সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার দিলেন। তারপর হাত তুলে স্যালুট দিলেন তাকে। তিনি স্যালুট গ্রহণ করার পর মঞ্চে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বেজে ওঠে। এরপরই মঞ্চের পাশে পতাকা উত্তোলন করলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। উত্তোলন শেষে আবার মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। ততক্ষণে জাতীয় সংগীত গাওয়া শেষ। কমান্ড দিয়ে সালাম শেষ হলো। রাইফেলধারীদের অন্ত্র নেমে এলো ঘাড়ে।
মাহবুব আহমেদ হাত নামালেন এবং কুইক মার্চ করে সামনে গিয়ে তাকে আবার সালাম জানিয়ে বললেন ‘স্যার, আমাদের দল আপনার পরিদর্শনের অপেক্ষায়।’ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ধীর পদক্ষেপে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। এরপর তাকে সঙ্গে নিয়ে গার্ড অব অনার পরিদর্শন করলেন মাহবুব উদ্দিন। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে।
অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠান ও যাবতীয় অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শেষ হয়ে যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। ১৭ এপ্রিল দুপুরেই আকাশবাণীতে প্রথম প্রচারিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানের খবর। এরপর বিবিসি, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রসহ রেডিওগুলো একাধারে এ খবর প্রচার শুরু করলো। পরদিন পুরো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলো শপথ অনুষ্ঠানের খবর।