প্রশ্ন সমাধান: মুশারাকা প্রকার গুলি উল্লেখ করো, মুশারাকা শিরকাত কত প্রকার কি কি
বহু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যবসা পদ্ধতিকেই ইসলামে মুশারাকা বলা হয়। ইসলাম এ ধরনের ব্যবসাকে হালাল ঘােষণা করেছেন। অংশীদারগণ শর্তানুযায়ী মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থার শেয়ার খরিদ ও বিভিন্ন বিনিয়ােগ করতে পারবে। এ ধরনের বাণিজ্যিক পদ্ধতিকে ইসলামে মুশারাকা বা অংশীদারিত্বভিত্তিক পদ্ধতি বলা হয় । বিনিয়ােগকারী ব্যাংক বা সংস্থা মূলধনের চুক্তিতে নির্ধারিত সিংহভাগ বিনিয়ােগ করবেন। নিম্নে প্রশ্নের আলােকে এ সম্পর্কে আলােচনা উপস্থাপন করা হলাে মুশারাকার প্রকারভেদ :
ইসলামি অর্থনীতি অনুযায়ী মুশারাকা পদ্ধতিতে চারভাগে ভাগ করা যায়। যথা
(ক) শিরকাত আল-মুফাদা,
(খ) শিরকাত আল-ইনান
(গ) শিরকাত আল-আবদান ও
(ঘ) শিরকাত আল-ওয়াজুহ |
১. শিরকাত আল মুফাওয়াদা : যে কারবারের অংশীদারগণ সমপরিমাণ পুঁজি যযাগান দেয়, কারবারে সমপরিমাণভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং লাভ-লােকসান সমানভাবে ভাগ করে নেন, তাকে শিরকাতুল মুফাওয়াদা বা সম-অংশীদারি কারবার বলে। এ ধরনের শিকাতে অংশীদারগণ পরস্পর পরস্পরের এবং প্রত্যেকে অন্য সকলের আমানতদার ও প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। এরূপ কারবারে অংশীদারগণ তৃতীয়পক্ষের নিকট ব্যক্তিগতভাবে এবং যৌথভাবে দায়ী থাকেন। |
২. শিরকাত আল-ইনান : কোনাে অংশীদারি প্রত্যেক অংশীদারের মূলধন, লাভ ব্যবসায়ে সময়দান ও দায়িত্ব-কর্তব্য যদি অসমান হয়, সে অংশীদারি কারবারকে শিরকাতুল ইনান বা অসম অংশীদারিত্ব কারবার বলে। এক্ষেত্রে কারবারে লাভ হলে অংশীদারগণ অসমান লাভ নেয় এবং লােকসান হলে পুঁজির অনুপাতে তা বহন করে। শিরকাতুল ইনান কারবারের অংশীদারদের প্রত্যেককেই প্রত্যেকের এবং অপরের সকলের প্রতিনিধি, কিন্তু জামিনদার নন। সুতরাং, এ কারবারে তৃতীয় পক্ষের নিকট অংশীদারদের দায়িত্ব ব্যক্তিগত, যৌথ নয়।।
৩, শিৱকাত আল-আবদান : যে কারবারে অংশীদারগণ শ্রম | ও তাকে পুঁজি করে যৌথভাবে গ্রাহকদেরকে বিভিন্ন সেবা প্রদান করার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং গ্রাহক থেকে অর্জিত পারিশ্রমিক পৰ-নির্ধারিত হারে পরস্পরের মাঝে বন্টিত হয়, তাকে শিরকাতুল আমাল বা আবদীন বলে। একই পেশার দুই বা ততােধিক ব্যক্তি যখন কোনাে অংশীদারি পেশাভিত্তিক কারবার শুরু করে এবং পেশা বা কাজ থেকে প্রাপ্ত আয় চুক্তি অনুসারে ভাগ করে নেয়, তাকে শিৱকাতুল সানাই বা অবদান বলে । এ অংশীদারি কাবারে অংশীদারগণ পুঁজি বিনিয়োগ করে না; বরং তাদের দক্ষতা ও শ্রম দিয়ে কারবারে অংশগ্রহণ করে।
৪. শিরকাত আল-ওয়াঙ্গুহ : ওয়াজুহ অর্থ সততা, সুনাম, মর্যাদা ইত্যাদি। সুনাম, সুখ্যাতি ও সততাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে যে অংশীদারি কারবার পরিচালিত হয় তাকে শিরকাতুল ওয়াজুহ বলে। এটিকে আবার সুনামভিত্তিক অংশীদারি কারবারও বলে। যে কারবারে অংশীদারগণ পুঁজি বিনিয়ােগ করে ; বরং স্বীয় পরিচিতি ও বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে ব্যবসায় পণ্য বাকিতে ক্রয় নগদ বিক্রি করে, এতে যে লাভ হয় তা পূর্ব নির্ধারিত হারে অংশীদারগণ ভাগ করে নেয়।
ইসলামি ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে আরাে দু’ধরনের মুশারাকা আছে। যথা :
১. স্থায়ী মুশারাকা : স্থায়ী মুশারাকা পদ্ধতিতে ব্যাংক গ্রাহকদের সাথে সম অথবা অসম পরিমাণ মূলধন যােগান দিয়ে বাৎসরিক মুনাফা চুক্তি অনুসারে ভাগ করে নেয়। আবার লােকসান হলে তা মূলধন অনুপাতে বহন করে। এ ধরনের ব্যবসায় কোনাে অংশীদার ইচ্ছা করলে তার অংশ বিলুপ্তির আগেও হস্তান্তর করতে পারে।
২. ক্রমহ্রাসমান মুশারাকা : এ ধরনের ব্যবসায় চুক্তি মােতাবেক গ্রাহক ব্যাংকের অংশ ও মুনাফা পর্যায়ক্রমে পরিশােধ করার ফলে সম্পদের উপর ধীরে ধীরে ব্যাংকের মালিকানা কমতে থাকে এবং গ্রাহকের মালিকানা বাড়তে থাকে। এভাবে মেয়াদান্তে গ্রাহক ব্যবসার সম্পূর্ণ মালিকানা লাভ করে। উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অনেকের অংশগ্রহণে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাই হচ্ছে মুশারকা বা অংশীদারিত্বমূলক ব্যবসা। ইসলাম এ ধরনের ব্যবসাকে সম্পূর্ণ হালাল ঘােষণা করেছে। যে সম্পদ থেকে নিয়মিত আয় হওয়া সম্ভব সে সমস্ত ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি উপযােগী। এ পদ্ধতিতে সম্পদের ওপর গ্রাহকের পূর্ণ মালিকানা অর্জন সম্ভব বিধায় এটা গ্রাহককে উৎসাহিত করে।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট
- ইজারা সম্পদ বিক্রয়ের উপর করের প্রভাব বিস্তারিত আলোচনা কর