যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্সের বিধি এবং গাইডলাইন সম্পর্কে আলোচনা কর

যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্সের বিধি এবং গাইডলাইন

যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্সের বিধি এবং গাইডলাইন সম্পর্কে আলোচনা কর

যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্সের মূল লক্ষ্য হলো কোম্পানিগুলির কার্যক্রমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, যাতে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করা যায় এবং কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়।

যুক্তরাজ্য কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড (UK Corporate Governance Code) বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট সুশাসনের মান নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিশেষত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলির জন্য প্রযোজ্য, যা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত।


যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড: একটি সারসংক্ষেপ

১. পটভূমি:

  • প্রথম প্রকাশ: যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড প্রথমে ১৯৯২ সালে ক্যাডবারি রিপোর্ট থেকে উদ্ভূত হয়।
  • সংশোধন: কোডটি বিভিন্ন সময়ে সংশোধিত হয়েছে, যার সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালে।
  • এটি যুক্তরাজ্যের ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (FRC) দ্বারা পরিচালিত হয়।

আরো ও সাজেশন:-

Honors Suggestion Linksপ্রশ্ন সমাধান সমূহ
Degree Suggestion LinksBCS Exan Solution
HSC Suggestion Links2016 সাল থেকে সকল জব পরীক্ষার প্রশ্ন উত্তর
SSC ‍& JSC Suggestion Linksবিষয় ভিত্তিক জব পরিক্ষার সাজেশন

২. প্রধান নীতিমালা:

কোডটি পাঁচটি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে তৈরি:

  1. নেতৃত্ব (Leadership):
    • একটি কোম্পানির বোর্ডের মূল দায়িত্ব হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নিশ্চিত করা।
    • বোর্ডের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদকে কোম্পানির দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করতে হবে।
  2. দায়বদ্ধতা (Accountability):
    • কোম্পানির আর্থিক কার্যক্রম এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য বোর্ড দায়বদ্ধ।
    • কোম্পানির বার্ষিক রিপোর্টে স্বচ্ছভাবে আর্থিক বিবরণী এবং ঝুঁকির মূল্যায়ন প্রকাশ করতে হবে।
  3. বিভিন্নতা এবং স্বাধীনতা (Board Composition and Independence):
    • পরিচালনা পর্ষদে বিভিন্নতার (diversity) উপস্থিতি এবং উপযুক্ত দক্ষতার ভারসাম্য থাকতে হবে।
    • বোর্ডের কিছু সদস্যকে স্বাধীন এবং অ-নির্বাহী (Non-Executive Directors) হতে হবে, যাতে পরিচালনা কার্যক্রমে নিরপেক্ষতা বজায় থাকে।
  4. শেয়ারহোল্ডারদের সাথে সম্পর্ক (Relations with Shareholders):
    • শেয়ারহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ করা এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করা বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
    • বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM)-তে শেয়ারহোল্ডারদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা উচিত।
  5. পুরস্কার এবং বেতন (Remuneration):
    • বোর্ডের সদস্যদের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
    • একটি স্বাধীন Remuneration Committee বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে।

গাইডলাইন এবং প্রয়োগ পদ্ধতি

১. “Comply or Explain” পদ্ধতি:

যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড অনুসরণে বাধ্যবাধকতা নেই, তবে কোম্পানিগুলোকে এই নীতি মেনে চলতে উৎসাহিত করা হয়।

  • যদি কোনো কোম্পানি কোড মেনে না চলে, তবে তাদের কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে (Explain)।
  • এই পদ্ধতি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে নমনীয়তা এবং স্বচ্ছতা প্রদান করে।

২. স্বাধীন অডিট কমিটি:

  • কোম্পানির আর্থিক কর্মকাণ্ড এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি স্বাধীন অডিট কমিটি থাকতে হবে।
  • এই কমিটি নিশ্চিত করে যে আর্থিক রিপোর্ট সঠিকভাবে প্রস্তুত এবং প্রকাশিত হচ্ছে।

৩. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ:

  • বোর্ডকে ঝুঁকি নির্ধারণ এবং তা মোকাবিলার জন্য কার্যকর ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন করতে হবে।
  • কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে।

৪. শেয়ারহোল্ডার এবং স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা:

  • শেয়ারহোল্ডার এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মতামত বোর্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্স কোডের গুরুত্ব

১. কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য:

  • সুশাসনের মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়।

২. শেয়ারহোল্ডারদের আস্থা:

  • কোড অনুসরণ করে কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে এবং তাদের আস্থা অর্জন করে।

৩. আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা:

  • যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে, যা দেশটির কোম্পানিগুলোকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখে।

৪. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা:

  • কোম্পানিগুলোকে ঝুঁকি চিহ্নিত করতে এবং তা মোকাবিলার কৌশল তৈরি করতে সহায়তা করে।

কোডের সীমাবদ্ধতা

  • “Comply or Explain” পদ্ধতির কারণে অনেক কোম্পানি কোড অনুসরণ না করে শুধু ব্যাখ্যা প্রদান করে এড়িয়ে যেতে পারে।
  • ছোট কোম্পানিগুলোর জন্য কোড প্রয়োগে ব্যয়বহুল হতে পারে।

উপসংহার : যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড কর্পোরেট সুশাসনের একটি মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

এটি কোম্পানির আর্থিক স্বচ্ছতা, শেয়ারহোল্ডারদের আস্থা, এবং দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নিশ্চিত করার একটি কার্যকরী কাঠামো প্রদান করে।

যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এটি কোম্পানিগুলোর সুশাসন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্সের বিধি এবং গাইডলাইন সম্পর্কে আলোচনা কর

আরো পড়ুন:

Leave a Comment