বিভিন্ন গবেষণার তথ্য মতে ৪৩ শতাংশ নারী ও ৩১ শতাংশ পুরুষ কোনো না কোনো মাত্রার যৌন অক্ষমতায় ভোগেন। এ বিষয়টি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে আলোচনা করতে অনেকেই বিব্রত বোধ করেন।
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ সমস্যা চিকিৎসায় সেরে যায়। তাই যারা এমন সমস্যায় ভোগেন তাদের উচিত খোলামেলাভাবে বিষয়টি নিয়ে সঙ্গী বা ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করা।
যৌন অক্ষমতা কি? এই অবস্থা হলে কী করণীয়?, যৌন অক্ষমতা কীভাবে দূর করা যাবে?,যৌন অক্ষমতার কারণ কী?
কেন পুরুষের যৌন সমস্যা হয়
পুরুষের শারীরিক বা মানসিক সমস্যার ফল হিসাবে যৌন সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।
শারীরিক কারণ : অনেক ধরনের শারীরিক কারণে যৌন সমস্যা তৈরি হতে পারে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, রক্তনালিসংক্রান্ত রোগ, স্নায়ু রোগ, হরমোন ভারসাম্যহীনতা, দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন কিডনি বা লিভারের রোগ এবং অতিরিক্ত মদ্যপান, নিয়মিত মাদক নেওয়া ও ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ইত্যাদি। এছাড়া কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ড্রাগসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যৌন ইচ্ছা এবং ক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
আরো পড়ুন: পায়খানা রাস্তায় সহবাস করলে কি হয়?,
মানসিক কারণ : কর্মস্থলে চাপ ও অস্থিরতা, যৌন সক্ষমতা নিয়ে অতিমাত্রায় উদ্বিগ্ন বা দুশ্চিন্তায় থাকা, সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা, ডিপ্রেশন, অপরাধবোধ এবং অতীতের কোনো ঘটনা বা সেক্সুয়াল ট্রমার প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি মানসিক কারণে যৌন সমস্যায় ভুগতে পারেন যে কোনো পুরুষ।
কীভাবে পুরুষদের ভোগায়
পুরুষদের সাধারণত যেসব যৌন সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে সেগুলো হলো অনিয়ন্ত্রিত বীর্যপাত, লিঙ্গ উত্থিত না হওয়া এবং যৌন ইচ্ছা না জাগা (আইএসডি)।
লিঙ্গ উত্থিত না হওয়ার সমস্যা :
ইরেকটাল ডিসফাংশনকে সরাসরি যৌন অক্ষমতা বলা হয়। যৌন মিলনের জন্য পুরুষের লিঙ্গ উত্থিত না হওয়া বা উত্থান হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী না হওয়াকে ইরেকটাল ডিসফাংশন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
রক্ত সঞ্চালনের সমস্যাজনিত রোগ, স্নায়বিক সমস্যা, মানসিক কারণ যেমন চাপ, অবসাদ এবং যৌন সক্ষমতা নিয়ে দুশ্চিন্তা, লিঙ্গে কোনো ধরনের আঘাতের কারণে, দুরারোগ্য কোনো ব্যাধি, নির্দিষ্ট কিছু ড্রাগ নেওয়াসহ ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকে পুরুষের।
এছাড়া পিরোনির রোগের (লিঙ্গে ত্রুটিযুক্ত টিস্যুর কারণে সমস্যা) কারণে ইরেকটাল ডিসফাংশন হতে পারে
আরো পড়ুন: পুরুষাঙ্গের বড় করার ব্যায়াম
* চিকিৎসা
পুরুষের শারীরিক কোনো সমস্যার কারণে যদি যৌন অক্ষমতার সমস্যা ঘটে তবে চিকিৎসার মাধ্যমে তা সারিয়ে তোলা হয়। ট্রিটমেন্ট সলিউশনে চিকিৎসকরা ইউরোপীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্যকরী ইরেটাল ডিসফাংশন চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, যেখানে, অন্যান্য পদ্ধতি ব্যর্থ হয়। চিকিৎসকরা নির্ভরযোগ্য এবং সন্তোষজনক যৌন জীবনে সজ্জিত করতে এক্সট্রাকরপোরিয়াল শক ওয়েভ থেরাপি (ESWT) ব্যবহার করে সফলভাবে চিকিৎসা করেন।
আরো পড়ুন: মাসিকের কতদিন পর সহবাস করা যায়
* এক্সট্রাকোরপোরিয়াল শক ওয়েভ থেরাপি
এক্সট্রাকোরপোরিয়াল শক ওয়েভ থেরাপি (ESWT) অত্যন্ত কার্যকর, নন-ইনভেসিভ প্রক্রিয়া ইরেকটাল ডিসফাংশনের সঙ্গে জড়িত ভাস্কুলার রোগের চিকিৎসার জন্য একটি যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি চিকিৎসাগতভাবে প্রমাণিত এবং এতে কোনো রকম পিল, কোনো ইনজেকশন এবং অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি, জটিলতা এবং অস্বস্তি নেই। এ পদ্ধতিতে আধুনিক ক্লিনিকে চিকিৎসা করা হয়, প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় নেয় এবং অ্যানেসথেসিয়া বা অন্য ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে অবিলম্বে রোগীরা স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে আসতে পারেন।
* কার্যকর ইরেকটাল ডিসফাংশন (ইডি) চিকিৎসা নিচের সমাধানগুলো দিতে পারে
- ইরেকটাল ফাংশন উন্নত করা
- ইরেকশনকে দীর্ঘমেয়াদি করা
- সর্বোচ্চ প্লেজার এবং ইনটেনসিফাইড অর্গাজম
- সেক্স ড্রাইভ এবং অ্যানার্জি বৃদ্ধি করা
- যৌন আস্থা বৃদ্ধি করা
- অসাধারণ পারফরম্যান্সের অভিজ্ঞতা অর্জন করা।
আরো পড়ুন: সন্তান জন্মদানের পর সহবাস
কী করবেন না?
-অতিরিক্ত মাস্টারবেট করার অভ্যাস অবিলম্বে ত্যাগ করুন। মাঝে মাঝে মাস্টারবেট অবিবাহিত পুরুষদের জন্য খারাপ কিছু নয়, তবে সেটা মাঝে মাঝেই ভালো। আর যাদের স্ত্রী আছে তাঁরা স্ত্রীর সাথেই যৌনজীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন।
-যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য হাতুড়ে ডাক্তারদের শরণাপন্ন হবেন না বা কোন টোটকা ব্যবহার করবেন না। কোন তেল বা ওষুধ কিছুই ব্যবহার করবেন না হাতুড়েদের কথায় প্রভাবিত হয়ে।
-বাজারে সাময়িকভাবে যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর কিছু ওষুধ পাওয়া যায়, যেগুলো সেবনে ২৪ ঘণ্টার জন্য যৌন ক্ষমতা বাড়ে। এইধরনের ওষুধ মোটেও ব্যবহার করবেন না। এতে সাময়িক ক্ষমতা বাড়লেও, ক্রমশ আসলে ক্ষমতা কমতেই থাকবে।
আরো পড়ুন: মাথা ব্যথার দোয়া,মাথা ব্যথা দূর করার দোয়া
যৌন অক্ষমতা কি? এই অবস্থা হলে কী করণীয়?
স্ত্রী সহবাসের সময় একজন পুরুষের লিঙ্গ যদি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে শক্ত ও খাড়া না হয় তাহলে তাকে যৌন অক্ষম বা পুরুষত্বহীন বলা হয়। কেউ কেউ জন্মগতভাবে যৌন অক্ষম হতে পারে। যৌন অক্ষমতা দুই রকম হতে পারে- স্থায়ী ও সাময়িক। কেউ কেউ স্থায়ীভাবে যৌন অক্ষম হতে পারে।
এছাড়া কোনো কোনো সময় বিভিন্ন মানসিক সমস্যার কারণে সাময়িক যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। যেমন- যৌন বিষয়ে অজ্ঞতা, ভয়, দুর্ভাবনা, হতাশা, কাজের চাপ ইত্যাদি। মাদকাসক্তি এবং ডায়াবেটিসের কারণেও একজন পুরুষ সাময়িকভাবে যৌন অক্ষম হতে পারে। কোনো কোনো সময় মেয়েদের মধ্যেও যৌন অক্ষমতা, যৌনসম্পর্কের প্রতি অনীহা বা কামশীতলতা দেখা যায়। এর কারণও অনেক রকম হতে পারে। দৈহিক কারণ ছাড়া মানসিক কারণেও (যেমন: ভুল-বোঝাবুঝি ও মনের অমিল) এ রকম সমস্যা হতে পারে।
পুরুষ বা মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে এরকম সমস্যা হলে নিরাশ না হয়ে প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে হাতুড়ে ডাক্তার, হকার বা কবিরাজের পরামর্শ নেয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয় বরং এতে বিপদ বাড়তে পারে।
যৌন অক্ষমতা কীভাবে দূর করা যাবে?
যৌন অক্ষমতা দূর করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। যদি কেউ এ সমস্যায় ভোগে তবে তাকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে হাতুড়ে ডাক্তার, হকার বা কবিরাজের পরামর্শ নেয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়, বরং এতে বিপদ বাড়তে পারে।
যৌন অক্ষমতার কারণ কী?
অনেক ক্ষেত্রে নতুন বিয়ের পর অতিরিক্ত উত্তেজনা বা নার্ভাস হওয়ার কারণে তাড়াতাড়ি বীর্যপাত হতে পারে। এ অবস্থায় কিছু দিন চলতে থাকলে স্বামী নিজেকে বা স্ত্রী স্বামীকে যৌন অক্ষম ভাবতে পারে এবং বিবাহিত জীবনে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হতে পারে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী দুজনের আন্তরিক সহযোগিতা ও সমঝোতার মাধ্যমে সহজেই এর সমাধান সম্ভব।
মেয়েদেরও যৌনবিষয়ক কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন- সহবাস ভীতি, মানসিক বা শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে সহবাসের সময় মেয়েরা ব্যথা পেতে পারে এবং এর কারণে বিষয়টি সহজভাবে গ্রহণ করতে নাও পারে।
এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সমঝোতা ও আন্তরিক ভালোবাসা। তবে সমস্যা চলতে থাকলে অবশ্যই ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নেয়া উচিত। এর ফলে সুস্থ ও স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনযাপন এবং সন্তান লাভ করা যায়।
যৌন অক্ষমতা হলে কী বিয়ে করা উচিত?
কারো যদি মনে হয় সে যৌন অক্ষম তবে বিয়ে করার আগে পাশ করা অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে তার খোলাখুলি পরামর্শ করে নেয়া উচিত। কারণ ডাক্তারের পরীক্ষা ছাড়া যৌন অক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
এক্ষেত্রে কোনোভাবেই ক্যানভাসার বা হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে পরামর্শের জন্য যাওয়া উচিত নয়।
একজন ছেলের যদি যৌন ক্ষমতা না থাকে তাহলে সে কীভাবে জানতে পারবে?
খুব কম ক্ষেত্রেই এরকম হয়ে থাকে। যৌনমিলন করতে গিয়ে যদি কোনো পুরুষ অনুমান করে যে, সে যৌন অক্ষম, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সে এ অক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। নিজের ধারণা বা অনুমান সত্যি নাও হতে পারে।
পরিশেষে : মিলনে পুরুষের অক্ষমতা কারণ ও করনীয়, যৌন অক্ষমতা শারীরিক নাকি মানসিক?
আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট