রংপুর অঞ্চলে রেশমকে স্থানীয় ভাষায় কী বলে?,“শিরে দিয়ে বাঁকা তাজ ঢেকে রাখে টাক” বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?,‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের কোন দিকটি শিল্পীর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা কর,‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখকের বর্ণিত দিক-নির্দেশনার আলোকে ব্যাখ্যা কর

বিষয়: রংপুর অঞ্চলে রেশমকে স্থানীয় ভাষায় কী বলে?,“শিরে দিয়ে বাঁকা তাজ ঢেকে রাখে টাক” বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?,‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের কোন দিকটি শিল্পীর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা কর,‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখকের বর্ণিত দিক-নির্দেশনার আলোকে ব্যাখ্যা কর

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

সোনাকুড়া গ্রামের শিল্পী ও সবুর কৃষক-দম্পতি। ঋণগ্রস্ত সবুর একে একে সব বন্ধক রেখে আজ নিঃস্ব। বাঁচার তাগিদে শিল্পী গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যান। সেখানে এক ধনী পরিবারে গৃহপরিচারিকার কাজ নেন তিনি। সেখানে তিনি দেখেন গ্রামের নারীদের তৈরি নকশি কাঁথার কদর অনেক বেশি। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর তীব্র আকাক্সক্ষা নিয়ে শিল্পী গ্রামে ফিরে আসেন। আরও কয়েকজন নারীকে নিয়ে তিনি একটি কর্মীদল গঠন করেন। তারা সবাই মিলে নকশি কাঁথা প্রস্তুত করে শহরে বিক্রির মাধ্যমে নিজেদের দারিদ্র্য মোচন করেন। শিল্পীও বন্ধক রাখা সব জমি পুনরুদ্ধার করেন। 

ক. রংপুর অঞ্চলে রেশমকে স্থানীয় ভাষায় কী বলে?

খ. “শিরে দিয়ে বাঁকা তাজ ঢেকে রাখে টাক” বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?

গ. ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের কোন দিকটি শিল্পীর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. শিল্পীর স্বাবলম্বন ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখকের বর্ণিত দিক-নির্দেশনার আলোকে ব্যাখ্যা কর।

ক. জ্ঞান

স্থানীয় ভাষায় ‘এন্ডি’ বলে।

খ. অনুধাবন

প্রাবন্ধিক বাংলার কৃষকদের বর্তমান অবস্থাকে বুঝিয়েছেন।

আমাদের দেশের কৃষকরা নিদারুণ কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে দিনযাপন করে। কিন্তু চরম দারিদ্র্যের মধ্যে অবস্থান করেও কোনো কোনো কৃষক বিলাসিতায় আক্রান্ত। আলোচ্য অংশে ‘বাঁকা তাজ’ তাদের সেই বিলাসিতাকে ইঙ্গিত করেছে। আর টাক তাদের চরম দারিদ্র্যের পরিচায়ক।

গ. প্রয়োগ

‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের দিকটি শিল্পীর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।

অতীতে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যাপক প্রচলন ছিল। এসব শিল্পের মাধ্যমে সংসারের অভাব অনেকাংশে ঘুচে যেত। কিন্তু মানুষের বিলাসিতা ও আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ কুটির শিল্প আজ ধ্বংসের সম্মুখীন। এর সাথে সাথে গ্রামের কৃষক-শ্রেণির দরিদ্রতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেছেন যে, একসময় কুটির শিল্পের মাধ্যমে এদেশের গ্রামগুলো স্বনির্ভরতা অর্জন করেছিল। ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর কারণে এই কুটির শিল্পগুলো একে একে ধ্বংস হয়ে গেছে। গ্রামীণ কুটির শিল্পের বিপর্যয় কৃষকদের জীবনে নিয়ে এসেছে চরম দারিদ্র্য। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রাবন্ধিক গ্রামীণ কুটির শিল্প পুনরুদ্ধারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। উদ্দীপকের কৃষকবধূ শিল্পী কুটির শিল্পের মাধ্যমেই তার ভাগ্যের চাকাকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। কুটির শিল্পের মাধ্যমে তিনি তার সংসারের দারিদ্র্য মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক গ্রামীণ কুটির শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

একসময় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রচলন ছিল। এ শিল্পের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল নারীরা। অবসর সময়ে বসে বসে তারা নকশিকাঁথা, বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা জিনিস, পাটের তৈরি দ্রব্যাদি তৈরি করত। কিন্তু সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষের বিলাসিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামীন হস্ত-শিল্পও কুটির শিল্প আজ ধ্বংসপ্রায়। অথচ এর সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের দারিদ্র্যও। তাই নারী শিল্পসমূহ পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নারীদের দারিদ্র্যবিমোচনের পথে অগ্রসর হতে হবে।

‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক খেদোক্তির সাথে বলেছেন যে, ভারতবর্ষের কৃষকদের দুরবস্থার অন্যতম কারণ তাদের বিলাসিতা। এ কারণেই কুটির শিল্পগুলো ক্রমশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি শিল্পসমূহ পুনরুদ্ধারের কথা বলেছেন। উদ্দীপকের শিল্পী যেন প্রাবন্ধিকের নির্দেশিত পথেই দারিদ্র্য ঘুচিয়েছেন। সংসারে তীব্র দারিদ্র্য দেখা দিলে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর তীব্র আকাক্সক্ষা নিয়ে নকশিকাঁথা তৈরিতে মনোযোগী হন। এতে সফলও হন তিনি।

‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কৃষকের দারিদ্র্য বিমোচনের উপায় হিসেবে গ্রামীণ হস্তশিল্পে ও কুটির শিল্পে নারীর সম্পৃক্ততা ও তার স্বাবলম্বনের কথা বলেছেন। উদ্দীপকের শিল্পী এ পথেই অগ্রসর হয়েছেন। গ্রামীণ কুটির শিল্পে সম্পৃক্ততার মাধ্যমেই তিনি সংসারের দারিদ্র্য ঘুচিয়েছেন।


আরো ও সাজেশন:-

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

সভ্যতা বলতে কেবল বস্তুগত উন্নতিকেই বোঝায় না। বর্তমান যুগের ভারতের বিজ্ঞানবল মহান সাধক গৌতম বুদ্ধের যুগের ভারতের চেয়ে অনেক বেশি। এখন ভারতে রেলগাড়ি ছুটছে, মোটর ছুটছে, বিমান ও স্টিমার চলছে। আগ্নেয়াস্ত্রকামান, কলকারখানা সবই আছে। আর প্রাচীন ভারতে এসবের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। এসব সত্তে¡ও মহাবীর, বুদ্ধের প্রাচীন ভারতকে আমরা বর্তমান ভারত অপেক্ষা বেশি সভ্য বলে মনে করি। কেননা, সভ্যতা হলো মানবজীবনের সার্বিক বিকাশ। 

ক. কত বছর পূর্বে ভারতবাসী অসভ্য বর্বর ছিল বলে জনশ্রুতি আছে?

খ. “এখন আমাদের সভ্যতা ও ঐশ্বর্য রাখিবার স্থান নাই।” লেখিকা একথা কেন বলেছেন?

গ. উদ্দীপকের বক্তব্যের সাথে ‘চাষার দুক্ষু’ রচনার বৈসাদৃশ্য তুলে ধর।

ঘ. উদ্দীপকে ‘চাষার দুক্ষু’ রচনার লেখিকার এ বিষয়ে ভাবনা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পরিবেশিত হয়েছে। মন্তব্যটির মূল্যায়ন কর।

ক. জ্ঞান

দেড়শ বছর পূর্বে ভারতবাসী অসভ্য ও বর্বর ছিল বলে জনশ্রুতি আছে। 

খ. অনুধাবন

নগর সভ্যতার অনুষঙ্গরূপে বিভিন্ন স্থাবর-অস্থাবর ও যান্ত্রিক সামগ্রীর প্রাচুর্যের প্রতি লক্ষ করে লেখিকা উপর্যুক্ত কথা বলেছেন।

সভ্যতার একাংশ বস্তুগত সামগ্রী তথা আকাশছোঁয়া পাকা বাড়ি, রেল, স্টিমার, এ্যারোপ্লেন, মোটরলরি, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, পোস্ট অফিস, নানা কলকারখানা, ডাক্তারের প্রাচুর্য, ওষুধ-পথ্যের ছড়াছড়ি, অপারেশন থিয়েটার, ইলেকট্রিক যান ইত্যাদি। এসবের প্রাচুর্যকেই ব্যঙ্গ করে লেখিকা বলেন, “এখন আমাদের সভ্যতা ও ঐশ্বর্য রাখিবার স্থান নাই।”

গ. প্রয়োগ

শুধু বস্তুগত উন্নতিকেই সভ্যতা বলা সম্পর্কে উদ্দীপকের বক্তব্যের সাথে ‘চাষার দুক্ষু’ রচনার বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ইংরেজি Civilization-এর বাংলা প্রতিশব্দ সভ্যতা। সভ্যতা মূলত অগ্রসরমান জটিল সংস্কৃতির একটি পর্যায় বা অবস্থান। এ অর্থে সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। সভ্যতা বলতে মানব প্রয়াসের ফলে অর্জিত এমন এক সার্বিক সাফল্য যার বস্তুগত রূপ-প্রকৃতি সংস্কৃতির একটি চরম উন্নতির পর্যায়কে বোঝায়।

উদ্দীপকে বলা হয়েছে, সভ্যতা বলতে কেবল বস্তুগত উন্নতিকেই বোঝায় না। বক্তব্যের সপক্ষে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে- বর্তমানে ভারতে রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি, স্টিমার, বিমান, তোপ, কামান, কলকারখানার মতো বস্তুগত উন্নয়নের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, যা মহাবীর ও গৌতম বুদ্ধের ভারতে ছিল না। তারপরও আমরা প্রাচীন ভারতকে বর্তমান ভারত অপেক্ষা বেশি সভ্য বলে মনে করি। কেননা, সভ্যতা হলো মানবজীবনের সার্বিক বিকাশ। উদ্দীপকের এ বক্তব্য বিষয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে দৃশ্যমান। প্রবন্ধের শুরুতেই লেখিকা দেড়শ বছর আগেকার ভারতবাসীকে অসভ্য বর্বর অনুমান করছেন আর বর্তমান ভারতকে সভ্য জ্ঞান করছেন। আর সভ্যতার প্রমাণস্বরূপ লেখিকা আকাশছোঁয়া পাঁচতলা পাকা বাড়ি, রেল, স্টিমার, এ্যারোপ্লেন, মোটরগাড়ি, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, পোস্ট অফিস, অপারেশন থিয়েটার, এবং ইলেকট্রিক ফ্যানের মতো নানা বস্তুগত প্রযুক্তি-সামগ্রীর উপস্থিতিকে উপস্থাপন করেছেন, যা প্রদত্ত উদ্দীপকের  বিপরীত ধ্যানধারণা ও আদর্শের ফল। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

বস্তুগত উন্নতি সভ্যতার অন্যতম নির্ণায়ক হলেও শুধু বস্তুগত উন্নতিই যে সভ্যতা নয় এ বিষয়টি উদ্দীপক ও ‘চাষার দুক্ষু’ রচনায় পরিলক্ষিত হয়।

শুধু মুষ্টিমেয় কিছু লোকের বৈষয়িক অসাধারণ উন্নতিই সভ্যতার মানদণ্ড নয়। বরং মানবজীবনের সার্বিক বিকাশই সভ্যতার ভিত্তি। সভ্যতার সম্বন্ধ বাহ্যিক সম্পদ কিংবা শক্তির দম্ভের সাথে নয়; বরং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের সাথে। তাই সভ্যতার জন্য প্রয়োজন সব মানুষের বস্তুগত, নৈতিক ও মনোজাগতিক উৎকর্ষ সাধন।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, উদ্দীপক ও ‘চাষার দুক্ষু’ রচনায় সভ্যতা সম্পর্কে বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। উদ্দীপকে যেখানে বলা হয়েছে, সভ্যতা বলতে শুধু বস্তুগত উন্নতিকেই বোঝায় না এবং বস্তুগত ও প্রযুক্তি জ্ঞান ও সম্ভারে সমৃদ্ধ বর্তমান ভারত অপেক্ষা প্রাচীন ভারতই বেশি সভ্য, সেক্ষেত্রে ‘চাষার দুক্ষু’ রচনায় লেখিকা মাত্র দেড়শ বছর পূর্বের ভারতকে অসভ্য বর্বর অনুমান করেছেন। সেই সাথে আকাশছোঁয়া অট্টালিকা, রেল, স্টিমার, এ্যারোপ্লেন, মোটরগাড়ি, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, পোস্ট অফিস, ডাক্তার, অপারেশন থিয়েটার এবং ইলেকট্রিক ফ্যান সমৃদ্ধ ভারতকে সভ্য-ভারত প্রমাণে সচেষ্ট হয়েছেন।

‘চাষার দুক্ষু’ রচনার শুরুতে বস্তুগত উন্নতিকে সভ্যতার মাপকাঠি দেখালেও সেটি ছিল লেখিকার ধান ভানতে শিবের গান।

পরিশেষে উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকে ‘চাষার দুক্ষু’ রচনার লেখিকার এ বিষয়ে ভাবনা এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পরিবেশিত হয়েছে। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি তাই যথার্থ।



নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

বৃহত্তর রংপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে লাখ লাখ মণ আলু ওঠে। আলুচাষিরা সারাদিন রোদে পুড়ে মাঠে আলু তোলে। কিন্তু সন্ধ্যায় খালি হাতে বাড়ি ফেরে। ট্রাকে ট্রাকে আলু সোজা হিমাগারে ঢোকে। ঢাকা থেকে আসা মহাজনেরা সেখানে আলু নিয়ে নানা কাজ-কারবারে লিপ্ত থাকে। এর কারণ অনুসন্ধানে নেমে তরুণ সাংবাদিক সাকিব দেখতে পেলেন, দুর্যোগ ও আকালের সময়ে নামমাত্র মূল্যে এসব মহাজন আলু রোপণের পূর্বেই খেতের সব আলু কিনে নিয়েছে। রাকিব স্বগতোক্তি করলেন, ‘আলু তার বসুন্ধরা যার’।

ক. সমাজের মেরুদণ্ড কে?

খ. লেখিকার ধান ভানতে শিবের গান গাওয়ার কারণ কী?

গ. উদ্দীপকটিতে ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের যে বিষয়ের প্রতি আলেঅকপাত করা হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘উদ্দীপকের ‘আলু তার বসুন্ধরা যার’ আর ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের ‘ধান্য তার বসুন্ধরা যার’ মূলত চাষার একান্ত দুঃখগাঁথা।’ -মূল্যায়ন কর।

ক. জ্ঞান

সমাজের মেরুদণ্ড চাষা।

খ. অনুধাবন

বক্তব্য বিষয় উত্থাপনের পূর্বে বক্তব্য-বিষয়ের প্রতি উত্থাপিত বাধা সরাতেই লেখিকা ধান ভানতে শিবের গান গেয়েছেন।

লেখিকা যদি প্রথমেই পলি­গাঁয়ের চাষার দারিদ্র্য, তার সভ্যতাবর্জিত জীবন নিয়ে হা-হুতাশ করতেন, তখন কেউ হয়তো শহুরে জীবনের মেকি সভ্যতাকে দেখিয়ে বলতেন যে, ভারতে মোটরকার আছে, গ্রামোফোন, ইলেকট্রিক ফ্যান ইত্যাদি আছে। ভালোর দিক ছেড়ে কেবল মন্দের দিকটা লেখিকা দেখছেন কেন? সেজন্যই লেখিকা ধান ভানতে শিবের গানের মতো প্রথমেই শহুরে সভ্যতার আলোচনা করেছেন। 

গ. প্রয়োগ

উদ্দীপকটিতে ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের ধান-পাট উৎপাদনকারী চাষার অন্নহীন, বস্ত্রহীন থাকা বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৮০ জন লোক কৃষিজীবী, অর্থাৎ কৃষক। বাকি ২০ জনও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এজন্য এদেশের অর্থনীতির ভিত্তি কৃষিকেন্দ্রিক। কৃষিব্যবস্থার উন্নতি-অবনতির সাথে দেশবাসীর ভাগ্য জড়িত। এ কৃষিব্যবস্থার কান্ডারি যারা, সেই কৃষক সমাজ আজ অনাদৃত, উপেক্ষিত ও অবহেলিত।

উদ্দীপকে দেখা যায়, আলুচাষিরা সারাদিন রোদে পুড়ে ঘামে ভিজে মাঠে আলু তোলে। কিন্তু সন্ধ্যায় খালি হাতে বাড়ি ফেরে। ট্রাকে ট্রাকে উত্তোলিত আলু ঢাকা থেকে আসা মহাজনদের ঠিক করা হিমাগারে ঢুকে পড়ে। অনুসন্ধানে জানা যায়, আকালের সময়ে এসব মহাজন নামমাত্র মূল্যে রোপণের পূর্বেই খেতের সব আলুর মালিক হয়ে গেছে। তাই তো উৎপাদনকারী চাষি খালি হাতে বাড়ি ফেরে। উদ্দীপকের এ বিষয়টি ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বিশেষ গুরুত্বের সাথে আলোকপাত করেছেন। লেখিকা বলেন যে, “চাষা কেবল ‘ক্ষেতে ক্ষেতে পুড়িয়া মরিবে’, হাল বহন করিবে, আর পাট উৎপাদন করিবে। যখন টাকায় ২৫ সের চাউল ছিল, তখনো তাহারা পেট ভরিয়া খাইতে পায় নাই- এখন টাকায় ৩/৪ সের চাউল হওয়ায়ও তাহারা অর্ধানশনে থাকে।”

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকের ‘আলু তার বসুন্ধরা যার’ আর ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের ‘ধান্য তার বসুন্ধরা যার’ মূলত চাষার একান্ত দুঃখগাঁথা।”- প্রশ্নোলি­খিত এ মন্তব্যটি যথার্থ ও সঠিক।

দারিদ্র্য আর রোগ-শোক বাংলার কৃষকের নিত্যসঙ্গী। তারা দুবেলা পেট ভরে খেতে পায় না। রোগে ওষুধ নেই, এমনকি মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও তাদের নেই। একবেলা খেয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে তারা আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোকে পোক্ত করে। বাংলার কৃষকের এ দুরবস্থার চিত্র প্রদত্ত উদ্দীপক ও ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে উঠে এসেছে।

সম্প্রতি উদ্দীপকে রংপুর অঞ্চলের আলুচাষিরা সারাদিন রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে মাঠে আলু তোলে। কিন্তু সন্ধ্যায় খালি হাতে বাড়ি ফেরে। ট্রাকে ট্রাকে আলু ঢাকা থেকে আসা মহাজনদের মালিকানায় হিমাগারে ঢুকে যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, আকালের সময় নিতান্ত স্বল্পমূল্যে এসব মহাজন রোপণের পূর্বেই সব আলু কিনে নিয়েছে। উদ্দীপকের শেষে রাকিব নামের এক সাংবাদিক কর্তৃক পরিহাসছলে উচ্চারিত হয়েছে, ‘আলু তার বসুন্ধরা যার’। এমনই বসুন্ধরার মালিকেরা যে এক মুঠো ধান উৎপাদন না করেও ধানের মালিক হতে পারে তা ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখিকা তুলে ধরেছেন।

‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখিকা সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশে চাষার উদরে অন্ন না থাকার কারণ উলে­খ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রণিধানযোগ্য একটি উক্তি উচ্চারণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘ধান্য তার বসুন্ধরা যার’। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের আলুচাষি আর ‘চাষার দুক্ষু’ রচনা চাষার দুঃখগাঁথা একই সূত্রে গাঁথা।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment