আজকের বিষয়: রমজানের ৩০ দিনের আমল ও ফজিলত,রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত,শাওয়াল মাসের আমল ও ছয় রোজার ফজিলত, আল্লাহর কাছে রোজার গুরুত্ব বেশি কেন?
প্রধান প্রধান ইবাদত ছাড়াও, রমজানের ৩০ দিনের আমল ও ফজিলত মুসলমানদের আল্লাহ আশীর্বাদ এবং রহমত পাওয়ার আরেকটি উপায়। মুসলমানদের প্রতিদিন ইবাদতের পাশাপাশি, রমজান মাস এমন একটি উপলক্ষ যেখানে মুসলমানেরা রমজানের আমল করে। রমজান মাস মুসলমানদের বিভিন্ন ধরনের দোয়া ও আমলের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। রমজান মাসের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মুসলমানদের রোজা করার পাশাপাশি এই পবিত্র মাসে বেশি বেশি ইবাদত করতে হয় যাতে আরো বেশি পুরস্কার পাওয়া যায়।
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.) বলেন, ‘রমজানকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দশদিন আল্লাহর রহমত নাজিলের, দ্বিতীয় দশদিন গোনাহ মাফ তথা মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশদিন আল্লাহর আজাব থেকে নাজাতের জন্য নির্ধারিত।’
রমজানের রহমতের ১০ দিন
পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ মাহে রমজানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বিবৃত করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এটা এমন এক মাস যে প্রথম দশ দিন রহমতের বারিধারায় পরিপূর্ণ।এই দশদিন আল্লাহর রহমত নাজিলের।প্রথম দশকে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে রহমতের বারিধারা বর্ষণ করে মাগফিরাত ও ক্ষমার উপযোগী করেন।
রমজানের মাগফিরাতের ১০ দিন
মাহে রমজানের দ্বিতীয় দশক শুরু হলো। হাদিস শরিফে উল্লিখিত হয়েছে- ক্ষমা ও মার্জনা প্রার্থনার জন্য এই ১০ দিন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত যে, মাহে রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ ১০ দিন নাজাতের অর্থাৎ দোজখের আগুন তথা যাবতীয় ঐহিক পারত্রিক দাবদাহ বা যন্ত্রণা হতে মুক্তি প্রার্থনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত রমজান মাসে চারটি কাজ গুরুত্বসহকারে করা আবশ্যক। আল্লাহর একত্ব ও তার বান্দা হওয়ার কথা বার বার আন্তরিকতার সঙ্গে স্বীকার ও ঘোষণা করা অর্থাৎ কলেমা তৈয়েবা ও কলেমা শাহাদাত বেশি বেশি পাঠ করা, তার কাছে ক্ষমা ও মাগফিরাতের প্রার্থনা করা।
রমজানের নাজাতের ১০ দিন
রমজানের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের, তৃতীয় দশক নাজাতের। প্রথম দশকে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে রহমতের বারিধারা বর্ষণ করে মাগফিরাত ও ক্ষমার উপযোগী করেন। দ্বিতীয় দশকে ক্ষমা করে তৃতীয় দশকে বান্দার জন্য নাজাতের ফায়সালা করেন। হাদিস শরিফে এই দশককে ‘ইতক্বুম মিনান নার’ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক বলা হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১০৫৩)
তাই রমজানের বিগত দিনগুলো যাদের অবহেলায় কেটে গেছে, এখনো সময় আছে তাদের নিজেকে শুধরে নেওয়ার। মুক্তির অবারিত সুযোগ পেয়েও যারা নিজেদের মুক্ত করে নিতে পারল না, তাদের চেয়ে হতভাগা আর কে?
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
পবিত্র রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসের কিতাবগুলোতে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর ভেতর থেকে কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো- প্রিয় নবীজি (সা.) এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)
অপর হাদিসে এসেছে, হযরত শাহ্ ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)
১ম রমজানে = রোজাদারকে নবজাতকের মত নিষ্পাপ করে দেওয়া হয়।
২য় রমজানে = রোজাদারের মা -বাবাকে মাফ করে দেওয়া হয়।
৩য় রমজানে = একজন ফেরেশতা আবারও রোজাদারের ক্ষমার ঘোষনা দেয়।
৪র্থ রমজানে = রোজাদারকে আসমানী বড় বড় চার কিতাবের বর্ণ সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়।
৫ম রমজানে= মক্কা নগরীর মসজিদে হারামে নামাজ আদায়ের সাওয়াব দেওয়া হয়।
৬ষ্ঠ রমজানে= ফেরেশতাদের সাথে ৭ম আকাশে অবস্থিত বাইতুল মামূর তাওয়াফের সাওয়াব প্রদান করা হয়।
৭ম রমজানে= ফিরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আঃ এর পক্ষে সহযোগিতা করার সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়।
৮ম রমজানে =রোজাদারের উপর হযরত ইবরাহীম আঃ এর মতো রহমত- বর্ষিত হয়।
৯ম রমজানে= নবী-রাসূলদের সাথে দাড়িয়ে ইবাদতের সমান সওয়াব দেওয়া হয়।
১০ম রমজানে= রোজাদারকে উভয় জাহানের কল্যাণ দান করা হয়।
১১তম রমজানে=রোজাদারের মৃত্যু নবজাতকের ন্যায় নিষ্পাপ নিশ্চিত হয়।
১২তম রমজানে= হাশরের ময়দানে রোজাদারের চেহারা পূর্ণিমা চাদের মতো উজ্জল করা হবে।
১৩তম রমজানে=হাশরের ময়দানের সকল বিপদ থেকে নিরাপদ করা হবে।
১৪তম রমজানে= হাশরের ময়দানে হিসাব- নিকাশ সহজ করা হবে।
১৫তম রমজানে = সমস্ত ফিরিস্তারা রোজাদারের জন্য দোয়া করে।
১৬তম রমজানে= আল্লাহপাক রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করেন ।
১৭তম রমজানে= একদিনের জন্য নবীগনের সমান সাওয়াব দেওয়া হবে।
১৮তম রমজানে = রোজাদার এবং তার মা-বাবার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির সংবাদ দেওয়া হয়।
১৯তম রমজানে= পৃথিবীর সকল পাথর-কংকর টিলা- টংকর রোজাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে।
২০তম রমজানে =আল্লাহরপথে জীবন দানকারী শহীদের সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়।
২১তম রমজানে = রোজাদারের জন্য জান্নাতে একটি উজ্জল প্রাসাদ নির্মান করা হয়।
২২তম রমজানে= হাশরের ময়দানের সকল চিন্তা থেকে মুক্ত করা হয়।
২৩তম রমজানে= জান্নাতে রোজাদারের জন্য একটি শহর নির্মান করা হয়।
২৪তম রমজানে = রোজাদারের যে কোন ২৪ টি দোয়া কবুল করা হয়।
২৫তম রমজানে= কবরের শাস্তি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২৬তম রমজানে =40 বছর ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হয়।
২৭তম রমজানে= চোখের পলকে পুলসিরাত পার করে দেওয়া হয়।
২৮তম রমজানে= জান্নাতের নেয়ামত দ্বিগুন করা হয়।
২৯তম রমজানে= এক হাজার কবুল হজ্জের সাওয়াব প্রদান করা হয়।
৩০তম রমজানে= পুরো রমজানের ফজিলত দ্বিগুন|
- “লা আদওয়া” সংক্রমন নেই!হাদীসটি কী বুঝায়?
- রমজানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যত পরামর্শ
- ডায়াবেটিস রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন
- আজহারী: কোন ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙে
- রমজান মাসের ৯টি ফজিলত
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
হিজরি সনের সেরা মাস রমজান। এ মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রোজা। রোজা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় ইবাদত। এর প্রতিদান তিনি নিজ হাতেই দেবেন। রোজার ফজিলত-মর্যাদা সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এখানে এ সম্পর্কিত ৮টি হাদিস তুলে ধরা হলো—
১। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হাদিসে কুদসিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার নিজের জন্য—রোজা ব্যতীত। কারণ, রোজা আমার জন্যই এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব।’ (মহানবী সা. আরও বলেন) ‘রোজা ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার। যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ! অবশ্যই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধের চেয়েও সুগন্ধময়। রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি খুশির মুহূর্ত আছে, যা তাকে আনন্দিত করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং যখন সে তার পালনকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৯০৪)
২। হজরত হুজায়ফা (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের পরিবার, ধন-সম্পদ ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে ঘটিত বিভিন্ন ফেতনা ও গুনাহর কাফফারা হলো নামাজ, রোজা ও সদকা।’ (বুখারি, হাদিস: ১৮৯৫)
৩। হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘জান্নাতের এক প্রবেশদ্বার রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন ওই প্রবেশদ্বার দিয়ে রোজাদারগণ প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউই ও দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। বলা হবে, ‘কোথায় রোজাদারগণ?’ সুতরাং তারা ওই দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। এর পর যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে, তখন সেই দরজা বন্ধ করা হবে। ফলে তা দিয়ে আর কেউই প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস: ১৮৯৬)
৪। হজরত আবু সাইদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে বান্দা আল্লাহর পথে একদিন মাত্র রোজা রাখবে, সেই বান্দাকে আল্লাহ বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে ৭০ বছরের পথ পরিমাণ দূরত্বে রাখবেন।’ (বুখারি, হাদিস: ২৮৪০)
৫। হজরত উসমান বিন আবুল আস থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ঢালস্বরূপ; যেমন যুদ্ধের সময় নিজেকে রক্ষা করার জন্য তোমাদের ঢাল থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ, সহিহুল জামিউস সাগির, হাদিস: ৩৮৭৯)
৬। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি তাকে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ কোরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘অতএব উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, সহিহ তারগিব, হাদিস: ৯৬৯)
৭। হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে এমন কোনো আমলের আজ্ঞা করুন; যার বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন।’ (অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যার মাধ্যমে আমি জান্নাত যেতে পারব’) তিনি বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কারণ, এর সমতুল্য কিছু নেই।’ পুনরায় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে কোনো আমলের আদেশ করুন।’ তিনি পুনরায় একই কথা বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কারণ, এর সমতুল্য কিছু নেই।’ (নাসায়ি, সহিহ্ তারগিব, হাদিস: ৯৭৩)
৮। হজরত হুজায়ফা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) আমার বুকে হেলান দিয়ে ছিলেন। তখন তিনি বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কিছু সদকা করার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সেও জান্নাত প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, সহিহ্ তারগিব, হাদিস: ৯৭২)
- নামাজে আমরা যা বলি তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা !!
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
রোজা শব্দের অর্থ হল “বিরত থাকা”। অন্যান মাসের তুলনায় রমজান মাসের ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অত্যন্ত মর্যাদাবান। আরবি ১২ টি মাসের মধ্যে রমজান মাস হল
রমজান মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস। রহমত এবং ক্ষমা পাওয়ার মাস হল পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসেই আল্লহপাক পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন। রোজা মুলসিমদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।
রোজা কি
রোজা শব্দের অর্থ হল “বিরত থাকা”। আরবিতে রোজাকে “সাওম” বলা হয়। যার বহুবচন হল “সিয়াম”। সিয়াম অর্থ হল উপবাস থাকা, রক্ষা করা। রমজন মাস সিয়াম সাধনার মাস। ইইসলামি শরীয়াতের পরিভাষায় আল্লাহপাকের হুকুম পালনার্থে এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, সঙ্গম,পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে সিয়াম।
পবিত্র কুরআনে আল্লহপাক শুধুমাত্র একটি আয়াতে রোজার কথা বলেছেন। দ্বিতীয়বার এর পুনরাবৃত্তি করেননি। সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَহে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।
রমজান মাস কেন ফজিলতপূর্ণ
অন্যান মাসের তুলনায় রমজান মাসের ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অত্যন্ত মর্যাদাবান। আরবি ১২ টি মাসের মধ্যে রমজান মাস হল শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাস শ্রেষ্টত্বের পিছনে অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে সর্বশ্রেঠ যে কারণ তা হল – আল্লাহপাক এই পবিত্র মাসে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ ছিল। সেখান থেকে আল্লাহপাক রমজানুল মোবারকের কোন একটি রজনীতে বাইতুল ইজ্জাতে (যেটি প্রথম আসমানে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত জায়গা) সম্পূর্ণ কুরআন ট্রান্সফার করেন। এরপর গোটা ২৩ বছর ধরে সময়ের প্রেক্ষিতে ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহপাক নবীজির (স) উপর কখনো এক আয়াত, এখনো পাঁচ আয়াত আবার কখনো একটি সূরা নিযিল করতে থাকেন। কুরআনুল কারীম নাযিল হওয়ার কারণে এই মাসটির মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। কুরআন হল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান কিতাব। মানবজাতির জন্য এটি একটি বড় নিয়ামত। অন্য মাসে একটি নফল আদায় করলে যে সওয়াব পাওয়া যাবে রমজান মাসে সে নফল ফরজের সমতুল্য। আবার একটি ফরজ পালন করলে আল্লাহ্পাক ৭০ গুন সওয়াব তার আমলনায় নিলে দিবেন (সুবাহানাল্লাহ)। মুমিনদের উচিত হল রমজান মাসের জন্য অপেক্ষা করা। এ মাসে যত বেশি আমল করা যায় ততবেশি নেকীর ভাগিদার হয় যায়। এ মাসের আরও মর্যাদা হল আল্লাহ্পাক তার বান্দাদের জন্য আকাশের দরজাগুলোকে খুলে দেওয়া হয় এবং শয়তাকে শৃখল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। যার কারণে মুমিনেরা গুন্নাহমুক্তভাবে জীবন পাড় করতে পারেন। এ মাসে আল্লাহ্পাক জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেন এবং সমস্ত কবরের আজাবকে আল্লাহ্পাক বন্ধ করে দেন। এক হাদিসে আল্লাহর নবী (স) বলেছেন:
রমজান মাসে আল্লাহ্পাক তার বান্দাদের জন্য সমস্ত রহমতের দরজা খুলে দেন। এবং জান্নাতের সকল দরজা তার বান্দাদের জন্য খুলে দেন।
অন্য এক হাদিসে এসেছে, রমজান মাসের প্রতিটি রাতে এবং দিনে আল্লাহ্পাক অসংখ্য মুমিন বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে তাদেরকে মুক্ত করেন।
রোজার ফজিলত
হাদিসে কুদসীর মধ্যে আল্লাহ্পাক বলেছেন: রোজা আমার, এর পুরষ্কার আমি আল্লাহ নিজেই দিব।
অন্য রেওয়াতে হাদিসে কুদসীর মধ্যে আল্লাহ্পাক বলেনঃ
রোজা আমার জন্যে, এর প্রতিদান আমি আল্লাহ নিজেই হয়ে যাব।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হল আল্লাহ্পাক বলেছেন, রোজা আমার জন্য। অথচ আমরা যে নামাজ পড়ি, যাকাত দেই , হজ্জ্ব করি আল্লাহর জন্যই করি। কিন্তু আল্লাহপাক কোথাও বলেননি নামাজ, যাকাত, হজ্জ্ব আমার জন্যে। শুধু রোজার ক্ষেত্রে বলেছেন রোজা আমার জন্যে। সুতরাং রোজার ফজিলত অনেক।
রোজাদারদের জন্য আল্লাহ্পাক ৫টি পুরুষ্কারের কথা বলেছেন। যা শুধু উম্মতে মুহাম্মদের (স.) জন্য।
- রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্পাকের কাছে মিসক আম্বরের চাইতে অধিক সুঘ্রাণযুক্ত।
- রোজাদার ব্যক্তি যখন রোজা রাখে ইফতার করার আগ পর্যন্ত সে যত দোয়া করবে আল্লাহ্পাক সমস্ত দোয়াকে কবুল করে নিবেন। এমনকি ইফতার করার আগ পর্যন্ত রোজাদার ব্যক্তির জন্য সমুদ্রের মাছ আল্লাহ্পাকের কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে।
- রোজাদারদের জন্য আল্লাহ্পাক বেহেস্তকে সুসজ্জিত করেন। এবং জান্নাতকে বলতে থাকেন আমার বান্দরা পৃথিবীতে কষ্ট করে আমল করছে তারা অচিরেই দুনিয়ার কষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে তোমার ভিতর চলে আসবে।
- রমজানের শেষ রাত্রিতে আল্লাহ্পাক বান্দার গুন্নাহগুলোকে মাফ করে দেন।
- উশৃখল শয়তানকে আল্লাহ্পাক বাঁধার কারণে গুন্নাহমুক্তভাবে জীবন-যাপন করতে পারা যায়।
এক হাদিসে রাসূল (স.) বলছেন:তিন প্রকার ব্যক্তির দোয়া কখনো বৃথা যাবে না। অবশ্যই তাদের দোয়া আল্লাহর কাছে গৃহিত হবে। (১) রোজাদার ব্যক্তি। (২) ন্যায়পরায়ণ শাসক ও (৩) নির্যাতিত ব্যক্তি
আল্লাহর হাবিব (স.) বলেছেন: যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে আল্লাহ্পাকের সন্তুষ্টির জন্য রোজা আদায় করবে আল্লাহ্পাক তার জিন্দেগীর সমস্ত গুন্নাহ মাফ করে দিবেন। (সুবাহানাল্লাহ)। এর চাইতে বড় পুরষ্কার আর কি হতে পারে।
হাদিসের মধ্যে এসেছে “রোজা ঢাল স্বরূপ” ঢাল যেমন মানুষকে আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করে, ঠিক রোজা হল মুমিনদের জন্য ঢাল স্বরূপ। রোজার দ্বারা মুমিনেরা গুন্নাহ থেকে বেঁচে থাকবে। রোজাদার ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলতে পারবে না, সুদ গ্রহণ করতে পারবে না, ঘুষ দিতে পারবে না, ধোঁকা প্রতারণা করতে পারবে না। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে সে বলবে আমি রোজাদার।
নবী করিম (স.) বলেছেন: জান্নাতের ৮টি দরজা আছে। তার মধ্যে একটি দরজার নাম হল রাইয়ান। যা শধুমাত্র রোজাদারদের জন্য আল্লাহ্পাক নির্ধারণ করেন। রোজাদার ব্যক্তিরা এই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
বুখারী মুসলিম শরীফে এক হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূল (স.) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্পাকের সন্তুষ্টির জন্যে একটি রোজা রাখবে, আল্লাহ্পাক কিয়ামতের দিন তার মুখমন্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ হাজার বছরের দূরে রাখবেন।
রোজা আমাদেরকে তাকওয়া অর্জনের শিক্ষা দেয়। আমাদের উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখা। অবশ্যই তা হতে হবে ইখলাসের সাথে।
নবীজি (স.) এর একটি হাদিস দিয়ে লিখাটি শেষ করব। হাদীসটি হল:ওই ব্যক্তি ধ্বংস হয়ে যাক। যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় একটি রমজান পেলো কিন্তু রমজান পাওয়ার পরেও আল্লাহ্পাকের কাছ থেকে সে তওবা করে গুন্নাহমুক্ত হতে পারলো না।
আমরা ধ্বংসহতে চাই না বরং আমরা আল্লাহ্পাকের কাছে তওবা করে গুনাহমুক্ত জীবন পরিচালনা করতে চাই। আল্লাহ্পাক আমাদেরকে তৌফিক দেন করুন। আমিন।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও
- নামাজে আমরা যা বলি তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা !!
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
- ইসলামে কুরবানীর গুরুত্ব ও বিধান,ইসলামে কোরবানির যত ফজিলত গুরুত্ব ও শিক্ষা
- বৃষ্টির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, বৃষ্টির নামাজের পর আমল
- ইসতিসকার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, ইসতিসকার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইসতিসকার নামাজের পর আমল
- বাসর রাত সম্পর্কে ইসলামের বিধান,বাসর রাতের নামাজ
- তাসবিহ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, তাসবিহ সালাতের ফজিলত