শবে কদর নামাজের নিয়ম, শবে কদরের জিকির ও দোয়া, লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম,শবে কদরের নামাজের নিয়ত-নিয়ম এবং আমাদের করণীয়,শবে কদরের নামাজ আদায়ের নিয়ম, শবে কদরের জিকির ও দোয়া, শবে কদর নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

সূরা ক্বদর এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর 
আরবি উচ্চারন বাংলায় অনেক সময় ভুল থাকে।তাই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, যখন বাংলায় উচ্চারন শিখবেন তখন অবশ্যই আরবির সাথে মিলিয়ে নিবেন। আর যদি কেউ আরবি দেখে পড়তে না পারেন তাহলে অবশ্যই অডিও শোনে বাংলার সাথে মিলিয়ে নিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে


بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰہُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ ۚ﴿ۖ۱﴾ وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ ؕ﴿۲﴾ لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ ۬ۙ خَیۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَہۡرٍ ؕ﴿ؔ۳﴾ تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ الرُّوۡحُ فِیۡہَا بِاِذۡنِ رَبِّہِمۡ ۚ مِنۡ کُلِّ اَمۡرٍ ۙ﴿ۛ۴﴾ سَلٰمٌ ۟ۛ ہِیَ حَتّٰی مَطۡلَعِ الۡفَجۡرِ ٪﴿۵﴾


বাংলা উচ্চারণঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কাদর। অমা আদরা কামা লাইলাতুল কাদর। লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর। তানাযযালুল মালায়িকাতু অররূহু ফীহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরি। সালামুন হিয়া হাত্তামাত্ব লাই’ল ফাজ্বর।

বাংলা অর্থঃ


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
নিশ্চই আমি এটা (কুরআন) ক্বদর রাতে নাযীল করলাম। আর আপনি কি জানেন, মহিমান্বিত রাত কি? ক্বদর (মহিমান্বিত) রাত, হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতা ও রূহ (জিব্রাঈল) (দুনিয়াতে) অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। সে রাতে সম্পূর্ণ শান্তি, ফজর পর্যন্ত বিরাজিত থাকে।


তাফসীরঃ

আয়াতঃ ১
২৩শে, ২৫শে ও ২৭শে রমজানের রাত্রিকে শবে কদরের রাত্রি বলে অভিহিত করা হয় অবশ্য অনেকে রমজানের শেষ দশদিনের যে কোন বেজোড় রাত্রিকে এই নামে অভিহিত করেন। দেখুন এই সূরার ভূমিকা। ৩নং আয়াতে এই রাত্রির বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে। এই রাতের এবাদত সহস্র মাসের এবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এই রাত সময়ের সীমানাকে অতিক্রম করে যায়। আল্লাহ্‌র অসীম ক্ষমতায় তাঁর প্রত্যাদেশের সত্যের আলো অজ্ঞতার অন্ধকারকে দূর করে দেয় এই রাত্রিতে।

আয়াতঃ ২ ও ৩
এই আয়াতের সহস্র মাস শব্দটি আক্ষরিক ভাবে অর্থ করার কোন অবকাশ নাই। ‘সহস্র মাস’ শব্দটি দ্বারা সীমাহীন সময়কে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ্‌র হেদায়েতের আলোতে এক মূর্হুতের জন্য আলোকিত হওয়া হাজার হাজার বছর ব্যপী পশু জীবন যাপন অপেক্ষা শ্রেয়। মানুষের জীবনে যখন এরূপ কোন মূহুর্ত আসে তবে সেই মূহুর্তে আত্মিক অন্ধকার কেটে যায় এবং আত্মা সৌন্দর্য মন্ডিত হয়ে দ্যুতি বিকিরণ করে।

আয়াতঃ ৪
‘রূহু‘ শব্দটি দ্বারা সাধারণতঃ জিব্রাইল ফেরেশতাকে বুঝানো হয়।

আয়াতঃ ৫
আত্মিক অন্ধকার মানুষকে করে ভয়ে শঙ্কিত,ভীত, অস্থির ও অশান্ত। কিন্তু যখন আধ্যাত্মিক জগতের এই অন্ধকার দূরীভূত হয় এবং আল্লাহ্‌র নূরে হৃদয় হয় আলোকিত, তখন হৃদয়ের মাঝে এক বিরল প্রশান্তি নেমে আসে। মোমেন বান্দার এই আধ্যাত্মিক শান্তি আমৃত্যু বিরাজ করে। এর পরে মৃত্যুর সিংহ দুয়ার পেরিয়ে সে যখন পরলোকের জীবনে প্রবেশ করে, সে পৃথিবী হবে নূতন পৃথিবী নূতন আঙ্গিকে। যে পৃথিবীর তুলনায় বর্তমান পৃথিবীর দিন ও রাত্রিকে মনে হবে খুবই ক্ষণস্থায়ী -ক্ষণিকের স্বপ্নের ন্যায়।

আয়াত উচ্চারণঅর্থ
○إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى لَيْلَةِ ٱلْقَدْرِইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর।নিঃসন্দেহ আমি এটি অবতারণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে।
○وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর।শবে-কদর (মহিমান্বিত রাত) সমন্ধে আপনি কি জানেন?
○لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍলাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর।শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
○تَنَزَّلُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍতানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর।এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।
○سَلَٰمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ ٱلْفَجْرِছালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলা‘ইল ফাজর।এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

    ‘লাইলাতুল কদর’ মানে হচ্ছে, ‘কদর’-এর রাত’। আর ‘কদর’মানে হচ্ছে, মাহাত্ম ও সম্মান। অর্থাৎ মাহাত্মপূর্ণ রাত্রি ও ‘সম্মানিত রাত্রি’। এ রাতের বিরাট মাহাত্ম ও অপরিসীম মর্যাদার কারণে রাতটিকে ‘লাইলাতুল কদর’ তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির মেয়াদ ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করে তা সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেওয়া হয়।

    মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মার জন্য হাজার মাসের চেয়েও উত্তম করেছেন লাইলাতুল কদরকে। এ রজনী এত সম্মানিত যে, এক হাজার মাস ইবাদত করলেও যে সওয়াব হতে পারে তার চেয়ে লাইলাতুল কদরের ইবাদতে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই এই রজনীকে পাওয়ার জন্য মন ও দেহের প্রস্তুতির দরকার রয়েছে। রমজানের শেষ দশক লাইলাতুল কদর তালাশের।

    রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য ইবাদতের কথা বলেছেন। তাই শবেকদর পাওয়ার জন্য আমাদের সর্বচেষ্টা করা উচিত। মুমিন বান্দারা এই রাতটিকে পাওয়ার আশায় মুখিয়ে থাকেন। রমজানের শেষ দশকে তারা ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। প্রথম দুই দশকের চেয়েও শেষ দশকে ইবাদতে মশগুল থাকেন বেশি করে।

    লাইলাতুল কদরের ফজিলত অপরিসীম। তাই সারা রাত জাগরণ করে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগীতে মনোনিবেশ করা কর্তব্য। বেশি বেশি নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবিহ, কাজা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সাদকা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার, দুয়া-দুরূদসহ নফল আমলের প্রতি মনযোগী হওয়া একান্ত জরুরি।

    কোরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি একে নাযিল করেছি শবে কদরে। শবে কদর সম্পর্কে আপনি কি জানেন? শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা আল কাদর : ১-৫)।

    কদর নামকরণের কারণ: যেহেতু এ রজনী অত্যন্ত মহিমান্বিত ও সম্মানিত তাই এ রজনীকে লাইলাতুল কদর বলা হয়ে থাকে। আবার এ রাত্রে যেহেতু পরবর্তী এক বৎসরের অবধারিত বিধিলিপি ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় সে কারণেও এ রজনীকে কদরের রজনী বলা হয়।

    সূরা কদর অবতীর্ণ হওয়ার পটভূমি: ইবনে আবি হাতেম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের সম্মুখে বনী ইসরাঈলের জনৈক চারজন লোক সম্পর্কে আলোচনা করলেন যে, তারা দীর্ঘ হায়াত লাভ করে অধিককাল যাবত ইবাদত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা একটিও নাফরমানি করেননি। রাসুলুল্লাহর (সা.) যবান মোবারক থেকে এ কথা শুনতে পেরে সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত বিস্মিত হলেন এবং নিজেদের ব্যাপারে আফসোস করতে লাগলেন।

    সাহাবায়ে কেরামের এ আফসোসের পরিপ্রেক্ষিতে মহান রাব্বুল আলামিন হজরত জিবরাঈলের (আ.) মাধ্যমে রাসুলের (সা.) নিকট এমন সময় এই সুরায়ে ‘কদর’ অবতীর্ণ করেন। (তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন ও তাফসিরে মাজহারি)।

    লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব: কদরের ফজিলত বোঝানোর জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ‘কদর’ নামে আলাদা একটি সূরা অবতীর্ণ করেন। কেবল কোরআন নয় বরং হাদিসেও কদরের ফজিলত রয়েছে বলে প্রমাণ রয়েছে।

    কদরের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরায়ে কদরে এরশাদ করেন-নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কোরআনুল কারীমকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। উক্ত রজনীতে ফেরেশতাগণ ও জিবরাঈল (আ.) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে প্রত্যেক বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হন এটা শান্তিময় রজনী যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা আল কদর : ১-৫)।

    আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয় আমি তা (কোরআন) এক মোবারক রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। (সূরা আদ দুখান : ১-৪)।

    হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, শবে কদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (তাফসিরে মাজহারি)।

    মিশকাত শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারি, হাদিস নং : ৬৭২)।

    লাইলাতুল কদর কবে: লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট কোনও তারিখ নেই। অনেকেই মনে করেন ২৭ রমজানই লাইলাতুল কদরের রাত। আসলে এ ধারণাটি সঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনও বলেন নি যে, ২৭ রমজানের রাত কদরের রাত। তবে ২১ রমজান থেকে নিয়ে ২৯ রমজন পর্যন্ত বেজোড় যে কোন রাতই শবে কদর হতে পারে। লাইলাতুল কদরের তারিখের ব্যাপারে নবী করীম (সা.) এরশাদ করেন, আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতসমুহে তা খোঁজ করবে। (বুখারি, হাদিস নং :৭০৯)।

    রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর। (মুসলিম, হাদিস নং: ১১৬৯)।

    একদা হযরত উবায়দা (রা.) নবী করীম (সা.) কে লাইলাতুল কদরের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তখন নবীজী সেই সাহাবিকে বললেন রমজানের বেজোড় শেষের দশ দিনের রাতগুলোকে তালাশ করো। (বুখারি, হাদিস নং: ২০১৭)।

    হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি কেউ লাইলাতুল কদর খুঁজতে চায় তবে সে যেন তা রমজনের শেষ দশ রাত্রিতে খোঁজ করে। (মুসলিম, হাদিস নং : ৮২৩)। তাই ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রমজানের রাতগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

    ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) বলেন, যে লোক শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয় সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হল। আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেলো কিন্তু ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে পারলো না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৭)।

    শবে কদরে কী করব: রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে ‘লাইলাতুল কদর’ লাভ করার জন্য রমজানের শেষ দশরাত জাগ্রত থেকে ইবাদতে কাটিয়েছেন এবং উম্মতে মুহাম্মাদীকেও সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করার নির্দেশ দিয়েছেন।

    রাসূল (সা.) বলেন, শবে কদরকে নির্দিষ্ট না করার কারণ হচ্ছে যাতে বান্দা কেবল একটি রাত জাগরণ ও কিয়াম করেই যেন ক্ষ্যান্ত না হয়ে যায় এবং সেই রাতের ফজিলতের উপর নির্ভর করে অন্য রাতের ইবাদত ত্যাগ করে না বসে। তাই বান্দার উচিত শেষ দশকের কোন রাতকেই কম গুরুত্ব না দেয়া এবং পুরোটাই ইবাদাতের মাধ্যমে শবে কদর অন্বেষণ করা।

    হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহর রাসূল আমি যদি কদরের রাত সম্পর্কে অবহিত হতে পারি তবে আমি কি করব? তখন রাসূল (সা.) আমাকে এই দুয়া পাঠ করার জন্য বললেন। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৫১)।

    বরকতময় মাস রমজান আর এই রমজান মাসের একটি রাতকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মহামান্বিতরাত এবং অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ করেছেন যা আমরা শবে কদরের রাত বলে জানি।  ‘শবে কদর’ ফারসি ভাষা আর কোরআনের ভাষায় এ রাতের নাম ‘লাইলাতুল কদর’ অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী।

    আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা বা মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা।

    এই রাতের ইবাদত-বন্দেগিতে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব লাভ করা যায়। মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় মহিমান্বিত এই শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ কোরআন কারিমে ‘সুরা কদর’ নামে একটি সুরা নাজিল করেছেন। তাতে  মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি কদর (মর্যাদাপূর্ণ) রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাঈল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষার উদয় পর্যন্ত।’ (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)। 

    শবে কদরের রাত সর্ম্পকে হাদিস শরীফেও রয়েছে অসংখ্য বর্ণনা। এই শবে কদরের রাতেই মহানবী হযরত মুহাম্মদের সঃ নিকট সর্বপ্রথম কোরআন নাজিল হয় যা এই রাতকে করেছে আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। এই রাতে জিবরাঈল ও ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবতরণ করে ইবাদতরত সব মানুষের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করতে থাকেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, শবে কদরে হজরত জিবরাঈল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট একদল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে তাঁদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মাযহারি)

    আমাদের সামাজে ‘লাইলাতুল কদর’ বা ‘শবে কদর’ ২৭ রমজানে পালন করা হলেও ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া আছে। এ রাতটি পাওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে ইতেকাফে অতিবাহিত করতেন। যাতে কোনোভাবে শবে কদর থেকে বঞ্চিত হতে না হয়।

    হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত  রাসুল (সা:) বলেন, যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে, তবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করা হবে। (বুখারী)

    লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাতে করণীয়:

    রমজান মাসে রাসুল (সা.) এর ইবাদতের পরিমাণ বেড়ে যেত, এমনকি শেষ দশকে প্রায় সারা রাত্রি জেগে ইবাদত করতেন।

    হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, যখন রমজানের শেষ ১০ রাত এসে যেত তখন রাসূল রাত জাগরিত থাকতেন, তার পরিবারের সদস্যদের কে জাগিয়ে দিতেন, তিনি অত্যন্ত উদ্দীপনার সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগিতে রত থাকতেন এবং সাংসারিক পারিবারিক বা দাম্পত্য কাজকর্ম বন্ধ করে দিতেন। (বুখারী ও মুসলিম)

    এ রাতের জন্য রাসূল (সা.) হযরত আয়েশা (রা.)-কে বিশেষ একটি দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়াটি হল, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’। (তিরমিজি)

    এই রাতে যে ব্যক্তি মাগরিব এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পরে সে শবে কদরের একটি অংশ পাবে। যে ব্যক্তি এ রাত থেকে বঞ্চিত সে হাজারো কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত। (ইবনে মাজাহ)

    লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের নামাজ যেভাবে পড়বেন:

    শবে কদরের নফল নামাজ দু‘রাকাত করে যত বেশী পড়া যায় তত বেশি ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এই ভাবে কম্পক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই ভালো।

    কেউ যদি উপরে উল্লেখিত সূরাগুলো না পারেন তাহলে সূরা ফাতিহা পড়ার পর যে সূরাগুলো আপনি পারেন তার মধ্য থেকে প্রতি রাকাতে একটি করে সূরা মিলিয়ে নিতে হবে। এছাড়া সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। পাশাপাশি রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার অবশ্যই চেষ্টা করবেন।

    নামাজের নিয়ত:

    আরবীতে: “নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা‘আ-লা- রাক‘আতাই ছালা-তি লাইলাতুল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার”।

    বাংলায়: “আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দু‘রাক‘আত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার”।

    লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের দোয়া:

    এ রাত ভাগ্য নির্ধারণের রাত, এ রাত পূর্বের গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের রাত, এ রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত। অতএব এ রাতে আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দোয়া করবেন এবং ইবাদতে মশগুল থাকবেন।

    হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?

      রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে:-

      اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

      উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’

      অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

      এ ছাড়াও আল্লাহ তাআলার ক্ষমা লাভে কুরআনুল কারিমে তিনি বান্দার জন্য অনেক দোয়া তুলে ধরেছেন। যা নামাজের সেজদা, তাশাহহুদসহ সব ইবাদত-বন্দেগিতে পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। আর তাহলো-

       رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ

      উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’

      অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)

       رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

      উচ্চারণ: ‘রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’

      অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)

       رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ

      উচ্চারণ: ‘রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।’

      অর্থ: ‘(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)

      رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

      উচ্চারণ: ‘রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’

      অর্থ: হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)

      رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

      উচ্চারণ: ‘রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’

      অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)

       رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ

      উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’

      অর্থ: হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)

        سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ

        উচ্চারণ: ‘সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।’

        অর্থ: ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)

         رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ  وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا 

        উচ্চারণ: ‘ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’

        অর্থ: ‘হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু।’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)

         رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ

        উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি।’

        অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।’ (সুরা হাশর : আয়াত ১০)

         رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

        উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’

        অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)

        رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

        উচ্চারণ: ‘রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।’

        অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)

        আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং অশেষ নেকি হাসিল এর জন্য মুমিন মুসলমানের উচিত, সেজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়ে কিংবা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ার পর নিজেদের গোনাহ থেকে মুক্তির জন্য কুরআনে বর্ণিত এ দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া।


        লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলতগুলোর সারসংক্ষেপ:-

        লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত পবিত্র কুরআন ও সহীহ-হাদীস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।

        • এ রাতটি হাজার মাস হতে উত্তম- কল্যাণময় (কুরআন)
        • এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়েছে। (কুরআন)
        • এ রাতে ফেরেস্তা নাযিল হয় এবং আবেদ বান্দাহদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
        • ফজর পর্যন্ত এ রাতে পুরাপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার (কুরআন)
        • এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারি করা হয়। (কুরআন)
        • এ রাতে ইবাদতে মশগুল বান্দাদের জন্য অবতরণকৃত ফেরেশতারা দু’আ করেন। (হাদিস)
        • গুনাহ মাফ : ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর নিকট হতে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পিছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (বুখারি-মুসলিম)
        • এ রাতে কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না। (ইবনে মাজাহ-মিশকাত)

        অতএব, আমাদের সকলের উচিত বেশি বেশি নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবিহ, উমরী কাজা, নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সাদকা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার, দোয়া-দুরুদসহ ইত্যাদি নফল আমলের প্রতি মনযোগী হওয়া। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের আমল করার তৌফিক দান করুন।

          Leave a Comment