শিশুর জীবন শিকলে বাঁধা

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পল্লীতে শিকলে বাঁধা অবস্থায় পারভেজ মিয়া (১২) নামের এক শিশুর জীবন বেড়ে উঠছে। শিকলে বাঁধা অবস্থায় তার কেটে গেছে দুই বছর।

সোনাতলার জোড়গাছা ইউনিয়নের গোসাইবাড়ী গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও পারভীন বেগমের ঘরে ১২ বছর আগে জন্ম নেয় পারভেজ মিয়া।

জন্মের পর শিশুটি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠলেও গত দুই বছর আগে শিশুটি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়।

এরপর শিশুটির মানসিক রোগ দেখা দেয়। এ কারণে ওই শিশুটি স্বাভাবিক জীবন থেকে অস্বাভাবিক জীবনে পা বাড়ায়।

বয়স যতই বাড়তে থাকে ততই শিশুটি বাবা-মাসহ অন্য শিশুদের সঙ্গে মানসিক রোগীর আচরণ করতে থাকে। এমনকি খেলাধুলার ছলে অন্য কোথাও গিয়ে হারিয়ে যায় শিশুটি।

বেশ কয়েকবার অনেক খোঁজাখুঁজির পর অনেক কষ্টে আদরের শিশু সন্তানকে ফিরে পেয়ে শিকলে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় তার বাবা-মা। 

এ বিষয়ে গোসাইবাড়ী গ্রামের শাহাদত হোসেন মাস্টার, শামছুল হক মাস্টার, মোনাহার হোসেন, শিবলী বেগম জানান, অনেক সময় মানসিক ভারসাম্য হারানো ওই শিশুটি বাড়িতে খেলাধুলার একপর্যায়ে আশপাশের বাড়ির শিশুদের ক্ষতির চেষ্টা করে।

এমনকি আশপাশে বাড়ির লোকজনের মূল্যবান জিনিসপত্র ক্ষতিসাধন করার মতো একাধিক অভিযোগ থাকায় বাবা-মা ওই শিশুটিকে শিকলে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে শিশুর বাবা শফিকুল ইসলাম ও মা পারভীন জানান, তাদের ঘরে আরও দুই সন্তান রয়েছে। এদের একজন হাবিবুল ইসলাম এবং আরেকজন তানজিলা আক্তার। তাদের তিন শিশুর মধ্যে দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী।

শিশু পারভেজ একাধিকবার খেলাধুলার একপর্যায়ে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাকে গত দুই বছর ধরে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। ফলে শিকলে বাঁধা অবস্থায় শিশুটি বেড়ে উঠছে।

শিশুটির দরিদ্র বাবা- মা আরও জানান, প্রাথমিক অবস্থায় শিশুটিকে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করানো হলেও আর্থিক অভাব অনটনের কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অভাব অনটনে সংসার চালানো কষ্টকর।

তার ওপর আবার দুজন প্রতিবন্ধী শিশুর লালন-পালন করা। বারবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো সরকারি সুযোগ পাননি তারা।  

সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রোস্তম আলী মন্ডল জানান, পুরো ইউনিয়নের খোঁজখবর রাখা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য তাকে কোনো দিন এ বিষয়ে অবগত করেননি।

সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লীটন জানান, এ বিষয়ে কেউ তাকে অবগত করেননি। বাবা-মা চাইলে শিশুটি প্রতিবন্ধীর তালিকায় এনে ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

সূত্র/ আমাদের সময়

Leave a Comment