শীতে ভালো থাকার কিছু টিপস, শীতে ভালো থাকার উপায় জেনে নিন, শীতে সতেজ থাকার ১০ উপায়
Table of Contents
শীতে ভালো থাকার কিছু টিপস, শীতে ভালো থাকার উপায় জেনে নিন, শীতে সতেজ থাকার ১০ উপায়,শীতে সুস্থ থাকতে যা করবেন
এই লেখা যখন লিখছি, তখন কুয়াশার চাদর ছেড়ে শহরটা মাত্রই আড়মোড়া ভাঙতে শুরু করেছে। কদিন ধরে রোদের দেখা পাওয়া ছিল ভার। ঘরের ক্ষুদ্রতম ফাঁকফোকর দিয়ে হু হু করে ঢুকেছে উত্তুরে হাওয়া।
শীতে শিশু ও বয়স্করা ভোগেন বেশি। ঠান্ডায় অ্যালার্জি থাকলে কিংবা শ্বাসকষ্টজনিত অন্যান্য সমস্যা থাকলে তো কথাই নেই। এমন ব্যক্তির জন্য শীতে চাই বাড়তি যত্ন। শুধু নিজেদের নয়, পোষা প্রাণীর কথাও এ সময় ভুললে চলবে না। শীতে ভালো থাকার কিছু টিপস
শীতে আরামদায়ক উষ্ণতা চাই। হিম হাওয়া যখন বয়ে যায়, তখন আটকে রাখুন জানালা-দরজা। আরামদায়ক শীতের পোশাক পরতে হবে। প্রয়োজনে হাতমোজা, কানটুপি—সবই পরতে হবে। তবে খুব আঁটসাঁট পোশাক না পরা ভালো। এমন শীতপোশাক পরে বাইরে যাওয়া উচিত, প্রয়োজনে যেটি সহজে খুলে রাখা যাবে। নিত্যব্যবহারের জন্য উষ্ণ পানি রাখতে পারেন। এমনটি জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মতলেবুর রহমান। শীতের জীবনধারা বিষয়ে তাঁর আরও পরামর্শ—
• শীতে নানা শাকসবজি ফলে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এসব শাকসবজি খান প্রচুর পরিমাণে। ফলমূলও খেতে হবে।
• শীতে তৃষ্ণা অনুভূত হয় কম। তৃষ্ণা না পেলেও পানি খেতে হবে পর্যাপ্ত।
• গোসল করতে আলসেমি লাগলেও রোজকার ধুলাময়লা পরিষ্কার করতে গোসলের বিকল্প নেই। তবে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
নিয়মিত গোসলে শরীর পরিষ্কার থাকেছবি: অধুনা
• ত্বকের সুস্থতায় নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
• বিদ্যুৎ, গ্যাস, আগুন ও উষ্ণ পানি থেকে দুর্ঘটনার ভয় থাকে। তাই সতর্কতার সঙ্গে এগুলো ব্যবহার করুন। বিশেষত শিশু, বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি এবং পোষা প্রাণী যাতে দুর্ঘটনার শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
• সূর্যের দেখা মিললে রোদে থাকুন খানিকক্ষণ।
• রুমহিটার রাখতে পারেন।
• ঘরের মেঝেতে বিছিয়ে দিতে পারেন শতরঞ্জি।
• শরীরচর্চার অভ্যাস শীতেও অব্যাহত রাখুন।
শিশুর যত্নে কী করব শীতে ভালো থাকার কিছু টিপস
শীতে শিশুকে গরম কাপড় পরিয়ে রাখুনছবি: অধুনা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার বলছিলেন, এই সময়ে শিশুদের নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ, কাশি, জ্বর, এমনকি শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। অনেকের পাতলা পায়খানা হয়। তা ছাড়া এ বছর শীতের মৌসুমেও টিকে আছে ডেঙ্গু। শিশুদের প্রতি তাই বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে।
• শিশুদের পারতপক্ষে ঠান্ডা হাওয়ায় নেবেন না। তাদের পরিষ্কার, উষ্ণ ও শুষ্ক স্থানে রাখুন।
• নিজেরা যে কয় পরত পোশাক পরছেন, শিশুকে তার থেকে এক পরত বেশি পরাতে হবে। তাদের অবশ্যই সুতি কাপড়ের পোশাক পরান। কৃত্রিম তন্তুর কাপড় এড়িয়ে চলুন। নবজাতক ও ছোট শিশুর মাথা ঢেকে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খেয়াল রাখুন, শিশু ঘেমে যাচ্ছে কি না। ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মুছে দিন।
• কুসুম গরম পানি দিয়ে দু-তিন দিন অন্তর শিশুকে গোসল করাতে পারেন, এর মধ্যে আর শরীর মুছে দেয়ার প্রয়োজন নেই। যেদিন গোসল করাবেন, সেদিন অল্প করে সাবান (শিশুর উপযোগী) লাগিয়ে দিন। শিশুকে উন্মুক্ত স্থানে গোসল করাবেন না।
• শ্যাম্পু করলে পানির সংস্পর্শে থাকা হয় অনেকক্ষণ। এ সময়ের জন্য এটা ঠিক নয়। আর বাইরে না গেলে সাধারণত সপ্তাহে একবারের বেশি তাদের শ্যাম্পু করানোর প্রয়োজন পড়বে না।
• শর্ষের তেল দিয়ে নবজাতক বা ছোট শিশুর শরীর মালিশ করার যে রীতি প্রচলিত আছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন সাঈদা আনোয়ার। শর্ষের তেলের কারণে অনেক শিশুর ত্বকে ফুসকুড়ি বা একজিমার মতো ক্ষত সৃষ্টি হয়। নাকে শর্ষের তেল গিয়ে শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। তেল মালিশ করতে চাইলে শিশুর উপযোগী তেল (বেবি অয়েল) বেছে নিন। মালিশ করার পর শিশুকে খালি গায়ে রেখে দেবেন না।
বয়স্কদের যত্নে রাখুন
প্রবীনদেরও দরকার বাড়তি যত্নছবি: অধুনা
উন্নত জীবনযাত্রা ও চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু। স্বাভাবিকভাবে তাই প্রবীণদের সংখ্যা বেড়েছে। আপনার পরিবারে থাকা প্রবীণ মানুষটির জন্য তাই শীতে দরকার বাড়তি নজরদারি। বয়স বাড়ার ফলে তাঁদের অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, শীতে যা আরও বাড়তে পারে। এমনিতে বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি কমে আসে। ক্ষীণ হয় দৃষ্টিশক্তিও। এ ছাড়া ত্বকে বলিরেখা, চুল পাকা, চুল পড়া, হাড় ক্ষয়, উচ্চ রক্তচাপের মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। শীতে বাড়ে নানা ধরনের ব্যথা। তাই প্রবীণদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
বয়স্ক পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়ায় প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন না। বারবার প্রস্রাব করতে চাইলে বিরক্ত হবেন না। মাসিক বন্ধ হয়ে বয়স্ক নারীদেরও নানা সমস্যা দেখা দেয়, সেসব খেয়াল রাখুন। অনেকের আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো সমস্যা থাকে। তাই শীতের সময়ে তাঁদের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও উষ্ণতা দিতে চেষ্টা করুন। ঘরের জানালা সঠিকভাবে লাগানো রয়েছে কি না, দেখে নিন। নইলে শীতল হাওয়ায় তাঁরা কষ্ট পাবেন। তাঁদের গোসল, অজু ও হাতমুখ ধোয়ার সময় কুসুম গরম পানির ব্যবস্থা করুন। নিজেরা না পারলে তাঁদের শরীরে লোশন বা তেল লাগিয়ে দিন। উষ্ণ পানীয় পান করতে দিতে পারেন, তবে অতিরিক্ত নয়।
শীতে গোসল না করার উপায়, শীতে গোসল না করেও পরিচ্ছন্ন থাকার উপায় :- বিস্তারিত পড়ুন
সবার জন্যই যা প্রযোজ্য
উষ্ণ পানীয় ঠান্ডার সমস্যা কাটাতে সাহায্য করবে। মডেল: সাফাছবি: কবির হোসেন
• মাস্ক পরুন নিয়মিত।
• সাবানপানিতে হাত ধুতে হবে।
• মশারি ব্যবহার করুন।
• নির্দিষ্ট কোনো জিনিসে অ্যালার্জি থাকলে সেটি এড়িয়ে চলুন।
• সানগ্লাস এবং সানস্ক্রিন সামগ্রী ব্যবহার করুন।
• ঠান্ডা কিছু খাবেন না।
• ঠান্ডা-কাশির ঘরোয়া চিকিৎসা নিতে পারেন উষ্ণ পানীয়, তুলসী, মধু, লেবু বা বাসকপাতার রস দিয়ে। তবে গলাব্যথা হলে গড়গড়া করবেন না।
• মৌসুমি রোগবালাইয়ের উপসর্গ সপ্তাহ খানেকের মধ্যে উপশম হয়ে যায়, না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
• চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন না। আর একবার অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে কোর্স শেষ করতে হবে।
• সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব টিকা নিন। পোষা প্রাণীর প্রয়োজনীয় টিকা দিতে দেরি করবেন না।
• পোষা প্রাণীর পাত্রের পানি ঘন ঘন বদলে দিন। জমাট, ঠান্ডা পানি খেতে কষ্ট হয় তাদের। তাদের উষ্ণ স্থানে রাখুন। গ্রাম–মফস্সলে অনেকের বাসায় গবাদিপশু আছে। এই শীতে তাদের দিকে বিশেষ নজর রাখুন। গোয়ালঘর পরিচ্ছন্ন ও উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন। শীতে ভালো থাকার কিছু টিপস
Ways to keep yourself warm in the cold,6 Cost-Effective Ways to Stay Warm in Winter
পরিশেষে : শীতে সতেজ থাকার ১০ উপায়,শীতে সুস্থ থাকতে যা করবেন
আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট