শুকরের মাংস হারাম কেন?,মুসলমানরা শুয়োরের মাংস খায় না কেন,কেন আপনি শূকরের মাংস খাওয়া হতে বিরত থাকবেন?,শূকরের মাংস খাওয়ার ব্যাপারে?,শূকরের মাংস খাওয়ার হারাম কেন,ইসলামে শূকরের গোশত হারাম কেন?

আজকের বিষয়: শুকরের মাংস হারাম কেন?,মুসলমানরা শুয়োরের মাংস খায় না কেন,কেন আপনি শূকরের মাংস খাওয়া হতে বিরত থাকবেন?,শূকরের মাংস খাওয়ার ব্যাপারে?,শূকরের মাংস খাওয়ার হারাম কেন,ইসলামে শূকরের গোশত হারাম কেন?,শুকরের মাংস কেন খাওয়া হারাম মুসলমানদের,৪টি কারণে ইসলামে শুকরের মাংস খাওয়া হারাম,ইসলামে শুকর খাওয়া নিষেধ কেন , শুকরের মাংস নিষিদ্ধ কেন?

ইসলাম কেন শূকরের গোশ্‌ত হারাম করেছে, শূকর কি আল্লাহর সৃষ্টি নয়? জনৈক খ্রীষ্টান ব্যক্তির এ প্রশ্নের উত্তরে বলব :

এক.

আল্লাহ তাআলা অকাট্যভাবে শূকরের গোশত হারাম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে :

বল, আমার নিকট যে ওহী পাঠানো হয়, তাতে আমি আহারকারীর উপর কোনো হারাম পাই না, যা সে আহার করে। তবে যদি মৃত কিংবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশ্‌ত হয়; কারণ, নিশ্চয় তা অপবিত্র।)[সূরা : আল আনআম/১৪৫]

আর এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর রহমত ও সহজিকরণ যে তিনি আমাদের জন্য পবিত্র বস্তুগুলো হালাল করেছেন, পক্ষান্তরে যা অপবিত্র তা করেছেন হারাম। ইরশাদ হয়েছে :

আর তাদের জন্য পবিত্র বস্তুগুলো হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তুগুলো হারাম করেন

[ সূরা: আল আরাফ]

এ বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে শূকর একটি নিকৃষ্ট–অপবিত্র প্রাণী। এ নিকৃষ্ট প্রাণীর গোশ্‌ত খাওয়া মানুষের জন্য ক্ষতিকর। উপরন্তু, শূকর ময়লা আবর্জনায় জীবনযাপন করে। সুস্থ মেজাজের যে কোনো মানুষ এ বিষয়টিকে ঘৃণা করবে নিঃসন্দেহে এবং প্রত্যাখ্যান করবে খাদ্য হিসেবে শূকর গোশ্‌ত গ্রহণ করতে। কেননা এর দ্বারা মানুষের সুস্থ প্রকৃতি ও তবিয়ত, যা আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন, বিকারগ্রস্তার শিকার হয়।

দুই.

শূকরের গোশত ভক্ষণে মানুষের শরীর–স্বাস্থ্য কী ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে আধুনিক মেডিক্যাল বিজ্ঞান তা খুব স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে, নিম্নে এ জাতীয় কিছু তথ্য উল্লেখ করা হল:

  • অন্যান্য পশুর গোশ্‌তের তুলনায় শূকরের গোশ্‌তে কোলেস্তেরল অধিকমাত্রায় থাকে। আর মানুষের শরীরে কোলেস্তেরল বেড়ে গেলে মানবদেহের শিরাগুলো শক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। শূকরের গোশ্‌তের গঠন–প্রকৃতি খুবই ব্যতিক্রমধর্মী, অন্যান্য খাবারে তেলজাত এসিড থেকে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে কারণে তা সহজেই শুষণযোগ্য অন্যান্য খাবারের তুলনায়। ফলে রক্তে কোলেস্তেরল বেড়ে যায়।
  • শূকরের গোশত কোলোন, স্তন, ব্লাড ইত্যাদির ক্যান্সার ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা পালন করে।
  • শূকরের গোশত ও তার চর্বি শরীরের মেদ বাড়িয়ে দেয় এবং এমন রোগের আমাদানী করে যা সারিযে তোলা দুষ্কর।
  • শূকরের গোশ্‌ত ভক্ষণ চুলকানি, এলার্জি, গেষ্ট্রিক ইত্যাদি বাড়িয়ে দেয়।
  • শূকরের গোশ্‌ত ভক্ষণ ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা কৃমি, ফুসফুসের কৃমি ও ফুসফুসের মাইক্রোবিক প্রদাহ থেকে জন্ম নেয়।
  • শূকরের গোশ্‌তের মারাত্মক ক্ষতিকর একটি দিক হল, এতে একপ্রকার কৃমি থাকে যা টিনিয়াসলিন নামে খ্যাত, এ কৃমিটি দৈর্ঘে দুই থেকে তিন মিটার। এ কৃমির ডিম্বগুলোর প্রবৃদ্ধির পরবর্তী ফলাফল এই দাঁড়ায় যে মানুষ পাগল হয়ে যায়, হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত হয় যদি মস্তিষ্কের এলাকায় এগুলোর প্রবদ্ধি ঘটে। হৃৎপিণ্ডের এলাকায় এগুলোর প্রবর্ধন হলে ব্লাডপ্রেসার বেড়ে যায় এবং হার্ট এটাকের ঘটনা ঘটে। শূকরের গোশ্‌তে অন্যান্য আরো যে ওর্ম থাকে তার মধ্যে একটি হল, লোমতুল্য শঙ্খাকৃতির ত্রিকানিলা ওর্ম রন্ধক্রিয়াকে যা প্রতিরোধ করে। আর শরীরে এটার বর্ধন পোলিও এবং চর্ম–এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
  • চিকিৎসকগণ বলেন, টেইপ ওর্ম যা শূকরের গোশ্‌ত থেকে জন্ম নেয়, মানুষের শরীরের জন্য খুবই মারাত্মক। এ ওর্ম মানুষের সূক্ষ্ণ পরিপাকতন্ত্রে পরিবর্ধিত হয়, এবং কয়েক মাসের মধ্যে তা দৃষ্টিগ্রায্য আকৃতিতে পৌঁছে যায়, এবং পূর্ণবয়ষ্ক ওর্মের আকৃতি ধারণ করে। এ ওর্মের শরীর প্রায় এক হাজার টুকরো দিয়ে গঠিত এবং তা লম্বায় ৪–১০ মিটার। এ ওর্মটি আক্রান্ত মানুষের পাকস্থলীতে একাই বসবাস করে এবং তার ডিমগুলো পায়খানার সাথে বের হয়ে যায়। এই ওর্মটি মানুষের শরীরকে দুর্বল করে তোলে, ভিটামিন বি ১২– এর ঘাটতি সৃষ্টি করে, যার ফলে একপ্রকার রক্তশুন্যতা সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো বরং স্নায়ুবিক সমস্যাও সৃষ্টি করে, যেমন স্নায়ুর প্রদাহ ইত্যাদি। আবার কখনো এর প্রভাব ব্রেইন পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এবং ব্রেইন অস্থিরতার কারণ হয়, অথবা তা ব্রেইনে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়; ফলে মাথাব্যথা, প্রচণ্ড বেদনা, এমনকী পেরালাইসেস হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
  • খুব ভাল করে সিদ্ধ না করা শূকরের গোশ্‌ত খাওয়ার ফলে চুলাকৃতির কৃমির জন্ম নেয়, যখন এগুলো সূক্ষ্ণ পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে এগুলো থেকে তখন, চার পাঁচদিন পর, বহুল পরিমাণ লার্ভ বের হয় যা পরিপাকতন্ত্রের দেয়ালে এঁটে যায়। সেখান থেকে রক্তে ও শরীরের অন্যান্য তন্ত্রে। অতঃপর সেখানে সৃষ্টি হয় বহু টাক্ট। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচণ্ড ধরনের আঙ্গিক বেথায় ভোগতে শুরু করে। কখনো কখনো এটা মেনিনজাইটিস প্রদাহ সৃষ্টি করে, মস্তিষ্কের প্রদাহ সৃষ্টি করে, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের প্রদাহ সৃষ্টি করে, কিডনি ও স্নায়ুকেও আক্রান্ত করে, এমনকী কখনো কখনো মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • কিছু কিছু রোগ আছে, যেগুলো শুধু মানুষেরই হয়ে থাকে, এ রোগে শূকর ব্যতীত অন্য কোনো প্রাণী মানুষের শরিক নয়; যেমন রোমাটিজম ও জয়েন্ট পেইন। আল্লাহ তা’লা কত সত্যই না বলেছেন, ইরশাদ হয়েছে: ‘ নিশ্চয় তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশ্‌ত এবং যা গায়রুল্লাহ নামে যবেহ করা হয়েছে, সুতরাং যে বাধ্য হয়ে, অবাধ্য বা সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে, (ভক্ষণ করে) তাহলে তার কোনো পাপ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ [সূরা বাকারা: ১৭৩]

এগুলো হল শূকরের গোশ্‌ত ভক্ষণের কিছু ক্ষতিকারক দিক। শূকরের গোশ্‌ত কেন হারাম করা হয়েছে? আমার ধারণা এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। সঠিক দ্বীনের পথ পাওয়ার জন্য এটি আপনার প্রথম পদক্ষেপ হবে। অতঃপর ভেবে দেখুন, চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগান, বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাই করে দেখুন, সত্যকে আবিষ্কারের জন্য নিজেকে মুক্ত করুন। সত্যকে ধারণ করুন। যা দুনিয়া–আখিরাতে কল্যাণবহ তা যাতে লাভ করতে পারেন সে জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন।

আরেকটি কথা না বললেই নয়, আর তা হল, আমরা যদি শূকরের গোশ্‌ত খাওয়ার ক্ষতিকারক দিক কী কী তা যদি নাও জানতাম তা হলেও শূকর হারাম হওয়ার ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাসে কোনো চিড় ধরত না। আমাদের ঈমান এতুটুকুন দুর্বল হবার নয়। আদম আলাইহিস সালাম তো বেহেশত থেকে একটি গাছের ফল ভক্ষণের অপরাধে বের হয়ে এসেছেন। কেননা আল্লাহ তা নিষিদ্ধ করেছিলেন। আমরা ওই বৃক্ষ সম্পর্কে কিছুই জানি না। ওই বৃক্ষের ফল কেন নিষিদ্ধ তার কারণ বের করা আদম আলাহিস সালামের প্রয়োজনও ছিল না। তাঁর ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য মুমিনদের ক্ষেত্রে তো এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে আল্লাহ তাআলা তা হারাম, নিষিদ্ধ করেছেন।

শূকরের গোশ্‌ত হারাম হওয়ার আরো কারণ জানার জন্য সংগ্রহ করুন: ইসলামী চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণামালা, যা কুয়েত থেকে ছাপা হয়েছে, বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য পৃষ্ঠা ৭৩১ এর পর থেকে। আরো সংগ্রহ করুন, ‘ কুরআন সুন্নাহর আলোকে স্বাস্থ্যগত প্রতিরক্ষা, প্রণেতা : লুলুয়া বিনতে সালেহ, ৬৩৫ পৃষ্ঠার পর থেকে।

আমি আবার ফিরে আসছি এবং প্রশ্নকারী খ্রীষ্টান ভদ্রলোককে বলছি:

আপনাদের পবিত্র গ্রন্থের ওল্ডটেস্টম্যান্ট কি শূকর হারাম করা হয় নি? ওল্ডটেস্টম্যান্ট তো আপনাদের বিশ্বাসকৃত বাইবেলের একটা অংশ, তাই নয় কি?

বাইবেলে এসেছে: ‘ প্রভু যেগুলো ঘৃণা করেন সেগুলো তোমরা খেও না। … তোমরা অবশ্যই শুয়োর খাবে না। তাদের পায়ের খুরগুলো বিভক্ত, কিন্তু তারা জাবর কাটে না। সুতরাং খাদ্য হিসেবে শুয়োরও তোমাদের গ্রহণযোগ্য নয়। শুয়োরের কোনো মাংস খাবে না। এমনকি শুয়োরের মৃত শরীরও স্পর্শ করো না। [ দ্বিতীয় বিবরণ: ১৪: ৩–৪]

ইহুদিদের উপর শূকর হারাম হওয়ার ব্যাপারে অধিক উদ্বৃতি প্রদানের প্রয়োজন অনুভব করি না। এ ব্যাপারে যদি আপনার সন্দেহ হয় তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তবে যে ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হল, আপনাদের পবিত্র গ্রন্থেই তো রয়েছে যে আপনাদের ক্ষেত্রেও তাওরাতের বিধি–ব্যবস্থা বলবদ রয়েছে। এতে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। ঈসা মসীহ কি বলেন নি : ‘ ভেবো না আমি মোশির বিধি–ব্যবস্থা ও ভাববাদীদের শিক্ষা ধ্বংস করতে এসেছি। আমি তা ধ্বংস করতে আসে নি বরং তা পূর্ণ করতেই এসেছি। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, আকাশ ও পৃথিবীর লোপ না হওয়া পর্যন্ত বিধি–ব্যবস্থার বিন্দু–বিসর্গও লোপ হবে না, বিধি–ব্যবস্থার সবই পূর্ণ হবে।’ [ মথি:৫: ১৭–১৮]

উল্লিখিত টেক্সটের পর নিউ টেস্টম্যান্ট থেকে অন্য কোনো উদ্বৃতি প্রদানের আবশ্যকতা আছে বলে মনে করি না। তবুও আমি অন্য একটি টেক্সট উল্লেখ করছি যা শূকরের অপবিত্রতাকে অকাট্যভাবে নির্দেশ করছে।

‘ সেখানে পর্বতের পাশে একদল শুয়োর চরছিল, আর তারা ( অশুচি আত্মারা) যীশুকে অনুনয় করে বলল, ‘ আমাদের ওই শুয়োরের পালের মধ্যে ঢুকতে হুকুম দিন।’ তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলে সেই অশুচি আত্মারা বের হয়ে শুয়োরদের মধ্যে ঢুকে পড়ল। [ মার্ক:৫:১১–১৩] শুয়োরের নিকৃষ্টতা বিষয়ে আরো পড়ুন, মথি: ৪৭, পিটারের দ্বিতীয় চিঠি: ২/২২, ও লুক: ১৫:১১–১৫ ।

আপনি হয়তো বলবেন, এটা মানসুখ তথা বাতিল বলে ঘোষিত হয়েছে অথবা পিটার এরূপ বলেছেন, অথবা পাউল সেরূপ বলেছেন?!!

হাঁ, এভাবেই আল্লাহর বাণীকে পরিবর্তন করে দেয়া হয়, তাওরাতকে এভাবেই আপনারা বাতিল করে দেন। ঈসা মসীর বাণীকে বাতিল করে দেন, অথচ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি বলেছেন যে, আকাশ ও পৃথিবীর মতোই তা টিকে থাকবে। এসব কিছুই বাতিল করে দেওয়া হয় পাউল ও পিটারের কথা মতে?!

তিন.

আপনি আপনার প্রশ্নের একাংশে বলেছেন যে আল্লাহ যদি শূকর খাওয়া হারাম করে থাকেন তবে তা সৃষ্টি করলেন কেন? আমার মনে হয় এ প্রশ্নে আপনি সিরিয়াস নন। অন্যথায় আমরা আপনাকে প্রশ্ন করব, তাহলে আল্লাহ অমুক অমুক কষ্টদায়ক অথবা ঘৃণা উদ্রেককারী বস্তু কেন সৃষ্টি করলেন, বরং আপনাকে এ প্রশ্নও করা সংগত হবে যে, বলুন তো আল্লাহ শয়তানকে কেন সৃষ্টি করলেন?

এটা কি সৃষ্টিকর্তার অধিকারে নেই যে তিনি বান্দাদেরকে যা ইচ্ছা তাই হুকুম দিতে পারেন। তিনি তাদের মাঝে যেভাবে ইচ্ছা বিচার ফয়সালা করতে পারেন। তাঁর নির্দেশ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কারও নেই। তার বাক্যসমূহ পরিবর্তন করার সাধ্য কারো নেই।

সৃষ্টিজীব তার স্রষ্টিকর্তা রবের যে কোনো নিদের্শ মাথায় পেতে নেবে, এটাই মাখলুকের যথার্থ আচরণ। সে তার রবকে বলবে, হাঁ, শুনলাম এবং আনুগত্যে নিজেকে সঁপে দিলাম।

(আমি মানি, আপনার কাছে ওটা মজাদার হতে পারে, ওটা ভক্ষণের তীব্র আকাঙ্খা তৈরি হতে পারে, কেননা আপনার পাশের লোকজন হয়তো খুব মজা করছে, তবে আপনার উপর জান্নাতের কি এতটুকুন দাবি থাকতে পারে না যে তাতে প্রবেশের জন্য কিছু লোভ–লালসা–আশা পরিত্যাগ করবেন?)

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

মহান আল্লাহ তায়ালার একমাত্র মনোনীত ধর্মের নাম ইসলাম। সৃজনশীল এই ধর্মে রয়েছে সুশৃংখল নিয়ম-কানুন, রয়েছে নানা ধরণের বিধি নিষেধ।

বিধি নিষেধগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শুকরের গোশত। ইসলামের বিধি মোতাবেক কোনো মুসলমান শুকরের গোশত খেতে পারবে না। কারণ ইসলাম মোতাবেক শূকরের গোশত হারাম। মুসলমানদের জন্য যা কিছু খারাপ, ক্ষতিকর, বিপদজনক তাই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে আর যা কিছু ভালো, উপকারী তার সব কিছু হালাল।

আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর রহমত হচ্ছে এবং তাঁর পক্ষ থেকে সহজায়ন হচ্ছে- তিনি আমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ খাওয়া বৈধ করেছেন এবং শুধুমাত্র অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করেছেন। তিনি বলেন, 

‘তিনি তাদের জন্য পবিত্রবস্তু হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।’ (সূরা: আরাফ, আয়াত: ১৫৭)

মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের ৪টি স্থানে শুকরের গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। কারণ তা মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর সব দিক ও রোগবালা বয়ে আনে। কোরআনের যে চার জায়গায় নিষেধ করা হয়েছে:

‘তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পরে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোনো পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত – দয়ালু।’ (সূরা: বাক্বারাহ, আয়াত: ১৭৩)

‘তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কণ্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়, যা শিং-এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে, কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল। (সূরা: মায়েদাহ, আয়াত: ৩)


‘আপনি বলে দিন: যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌছেছে, তন্মধ্যে আমি কোনো হারাম খাদ্য পাই না কোনো ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশত এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ; যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়। অতঃপর যে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে এমতাবস্থায় যে অবাধ্যতা করে না এবং সীমালঙ্ঘন করে না, নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা: আনআম, আয়াত: ১৪৫)

‘অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন রক্ত, শূকরের গোশত এবং যা জবাইকালে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। অতঃপর কেউ সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে নিরুপায় হয়ে পড়লে তবে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা: নাহল, আয়াত: ১১৫)

শুকুরের গোশত কেন নিষেধ করা হয়েছে তার সন্তোষজনক উত্তরের জন্য কোরআনের উল্লেখিত আয়াত সমূহেই যথেষ্ট।

পবিত্র কোরআন ছাড়া বাইবেলেও শুকরের গোশত নিষেধ করা হয়েছে। বাইবেল লেভীটিকাস্থ গ্রন্থে শুকরের গোশত খেতে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছে, ‘এবং শুকর যদিও তার খুর দ্বিখন্ডিত এবং খুরযুক্ত পদ বিশিষ্ট। এমন কী সে চিবিয়ে খায়, যাবর কাটে না। (তবু) ওটা অপরিচ্ছন্ন (অপবিত্র) তোমার জন্য।’


 
একই গ্রন্থের ১১ অধ্যায় ৭ ও ৮ স্তবকে বলা হয়েছে, ‘ওগুলোর গোশত তুমি খাবে না এবং ওগুলোর মৃতদেহ তুমি স্পর্শও করবে না, ওগুলো ‘অপবিত্র’ তোমার জন্য।’

বাইবেলের পঞ্চম গ্রন্থ ‘ডিউট্যারনমী’ তেও শুকরের গোশত ‘অপবিত্র’ বলা হয়েছে, ‘আর শুকর- কারণ তার খুর দ্বিখন্ডিত, এমনকি চিবিয়ে খায়, যাবর কাটেনা, ওটা অপবিত্র তোমার জন্য তুমি ওগুলোর গোশত খাবে না, না ওগুলোর মৃতদেহ তুমি স্পর্শ করবে। (ডিউট্যারনমীঃ ১৪:৮)

বিভিন্ন ধর্মীয়গ্রন্থ ব্যতীতও বিজ্ঞানের মাধ্যমেও আজ প্রমাণিত যে শূকরের মাংস মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মানব দেহের উপর শূকর খাওয়ার বিভিন্ন অপকারিতা সাব্যস্ত করেছে; যেমন-

> বিভিন্ন প্রাণীর গোশতের মধ্যে শূকরের গোশতে সবচেয়ে বেশি চর্বিযুক্ত কোলেস্টেরল রয়েছে। মানুষের রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া শূকরের গোশতে থাকা ‘ফ্যাটি এসিড’ অন্য সকল খাদ্যে থাকা ফ্যাটি এসিড থেকে ভিন্নরকম ও ভিন্ন গঠনের। তাই অন্য যেকোনো খাদ্যের তুলনায় মানুষের শরীর খুব সহজে একে চুষে নেয়। যার ফলে, রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যায়।
 
> শূকরের গোশত ও চর্বি মেদ বাড়ায় এবং মেদ সংক্রান্ত রোগ বাড়ায়; যেগুলোর চিকিৎসা করা অনেক দুরূহ।
 
> শূকরের গোশত ও চর্বি কোলন ক্যান্সার (বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার), রেক্টাল ক্যান্সার (মলদ্বারের ক্যান্সার), অণ্ডকোষের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও ব্লাডক্যান্সার এর বিস্তার ঘটায়।
 
> শূকরের গোশত খাওয়া চর্মরোগ ও পাকস্থলির ছিদ্র ইত্যাদি রোগের কারণ। শূকরের গোশত খাওয়ার সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো, শূকরের গোশতে ফিতা কৃমির শূককীট থাকে; যাকে বলা হয় টিনিয়া সলিয়াম (Taenia solium)। এ কৃমি ২-৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এ কৃমির ডিম্বগুলো যদি মস্তিষ্কে বৃদ্ধি পায় তাহলে পরবর্তীতে মানুষ পাগলামি ও হিস্টিরিয়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর যদি হার্টে বৃদ্ধি পায় তাহলে মানুষ উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টএটার্কে আক্রান্ত হতে পারে। শূকরের গোশতের মধ্যে আরো যেসব কৃমি থাকতে পারে সেগুলো হচ্ছে- ট্রিচিনিয়াসিস কৃমির শূককীট; রান্না করলেও এগুলো মরে না। মানুষের শরীরে এ কৃমি বাড়ার ফলে মানুষ প্যারালাইসিস ও চামড়ায় ফুসকুড়িতে আক্রান্ত হতে পারে।
 
> শূকরের গোশত খাওয়ার ফলে সৃষ্ট ফিতা কৃমি ও ফুসফুসের কৃমির কারণে ফুসফুস আলসার ও ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়।

চিকিৎসকগণ জোরালোভাবে বলেন যে, ফিতাকৃমি অত্যন্ত মারাত্মক রোগ; শূকরের গোশত খাওয়ার ফলে যে রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যেও এ কৃমিগুলো বাড়তে পারে এবং কয়েক মাসের মধ্যে পরিপূর্ণ কৃমিতে পরিণত হতে পারে। যে কৃমির দেহ এক হাজারটি অংশ দিয়ে গঠিত। এর দৈর্ঘ্য ৪-১০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে এটা এককভাবে বাস করতে পারে। এর ডিম্ব মানুষের মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। শূকর যখন এসব ডিম গিলে ফেলে ও হজম করে তখন এটা শুককীটের থলি আকারে টিস্যু ও পেশীতে প্রবেশ করে। এ থলিতে এক জাতীয় তরল ও ফিতাকৃমির মাথা থাকে। যখনি কোনো লোক এ ধরণের শূকরের গোশত খায় তখনি এ শূককীট মানুষের পাকস্থলীতে পরিপূর্ণ কৃমিতে পরিণত হয়। এ কৃমিগুলো মানুষকে দুর্বল করে দেয়। ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি ঘটায়। যার ফলে মানুষের রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। এ ছাড়াও অন্য কিছু স্নায়ুবিক সমস্যা ঘটায়, যেমন-স্নায়ু প্রদাহ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ শূককীট মস্তিষ্কে পৌঁছে খিঁচুনি বা ব্রেইনের উচ্চ রক্তচাপ ঘটতে পারে। যার কারণে মাথা ব্যথা, খিঁচুনি, এমনকি প্যারালাইসিসও হতে পারে।

ভালভাবে সিদ্ধ না করা-শূকরের গোশত খেয়ে মানুষ ট্রিচিনিয়াসিস কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে। এ প্যারাসাইটগুলো যখন মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছে তখন ৪-৫ দিনের মধ্যে এগুলো অসংখ্য কৃমি হয়ে পরিপাকতন্ত্রের দেয়ালে প্রবেশ করে। সেখান থেকে রক্তে এবং রক্তের মাধ্যমে শরীরের অধিকাংশ পেশীতে ঢুকে পড়ে। কৃমিগুলো শরীরের পেশীতে ঢুকে সেখানে থলি তৈরী করে। যার ফলে রোগী পেশীতে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। এ রোগ বেড়ে গিয়ে এক পর্যায়ে মস্তিষ্কের আবরণী ও মস্তিষ্কের প্রদাহ রোগে পরিণত হয়, হার্ট, ফুসফুস, কিডনি ও স্নায়ুর প্রদাহে পরিণত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ রোগ মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
 
এ ছাড়া মানুষের এমন কিছু রোগ আছে যে রোগগুলো প্রাণীদের মধ্যে শুধুমাত্র শূকরের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়; যেমন- Rheumatology (বাতরোগ) ও জয়েন্টের ব্যথা।

এছাড়াও ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে শুকর অশ্লীলতায় নির্লজ্জতম প্রাণী। এটাই একমাত্র পশু যেটা তার স্ত্রী-সঙ্গীর সঙ্গে সংগম করার জন্য অন্যান্য পুরুষ-সঙ্গীদের ডেকে নেয়। আমেরিকার ও ইউরোপের অধিকাংশ মানুষের প্রিয় খাদ্য শুকরের গোশত। খাদ্যভ্যাস আচরণে প্রকাশ পায়, বিজ্ঞানের এ সূত্রের জীবন্ত নমুনা ওরাই। ওদের প্রিয় সংস্কৃতি ডান্স পার্টিগুলোতে নেচে নেচে উত্তেজনায় উন্মত্ত হয় তখন একে অপরের সঙ্গে বউ বদল করে। অনেকেই আবার জীবন্ত নীল ছবির স্বাদ দেয়ার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হতে বন্ধু-বান্ধব ডেকে নেয়। এসব প্রমাণ করে শুকরের গোশত মানুষকে নির্লজ্জতার দিকে ধাবিত করে।
 
পরিশেষে বলা যায় যে,
কোরআনে শূকর হারাম হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে এটি ‘রিজ্‌স’। মানুষের সুস্থ বিবেক ও শরিয়ত কর্তৃক নিন্দনীয় যেকোনো জিনিসকে আরবিতে ‘রিজস’ বলা হয়। শূকরের গোশত হারাম হওয়ার কারণ হিসেবে এটিই যথেষ্ট। এছাড়াও খাদ্য-পানীয়জাতীয় বস্তু হালাল বা হারাম হওয়ার জন্য যে সাধারণ মূলনীতি ঘোষণা করা হয়েছে তার আলোকেও শূকরের গোশত হারামের আওতায় পড়ে।

সূরা আরাফের ১৫৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: ‘তিনি (আল্লাহ) তাদের জন্য উত্তম জিনিস হালাল করেছেন আর খাবাইস (নিকৃষ্ট জিনিস) হারাম করেছেন।’ এখানে ‘খাবাইস’ দ্বারা ওই সমস্ত জিনিস উদ্দেশ্য করা হয়েছে যা মানুষের শারিরিক, মানসিক, চারিত্রিক বা আর্থিক ক্ষতিসাধন করে। সুতরাং যে জিনিসই মানুষের জন্য কোনো ক্ষতিকর ফল বয়ে আনে তাই ‘খাবাইস’র অন্তর্ভুক্ত হবে। 

শুকরের গোশত ভক্ষণের ফলে মানুষ যেমন ভোগ করবে ইহকালীন রোগবালার কষ্ট তেমনি ভোগ করবে জাহান্নামে চিরকালীন আযাব। তাই আমাদের কোনোভাবেই আল্লাহর নিষেধ অমান্য করে কোনো কাজ করা উচিত নয়। তাহলেই আমাদের ইহকাল ও পরকাল উভয় শান্তির হবে।

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

এটা সর্বজন বিদিত যে, শুকুরের মাংস ভক্ষণ ইসলামে নিষিদ্ধ। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো এই নিষিদ্ধতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরবে।

ক. কুরআনে শুকুরের মাংস নিষিদ্ধতা

শুকুরের মাংস খাওয়া নিষেধঅন্তত চারটি স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে ২:১৭৩, ৫:৩, ৬:১৪৫, এবং ১৬:১১৫।

“নিষিদ্ধ করা হলো তোমাদের জন্য (খাদ্য- হিসেবে) মৃত জন্তুর মাংস, প্রবাহিত রক্ত, শুকুরের মাংস কেন নিষেধ করা হয়েছে তার সন্তোষজনক উত্তরের জন্য কুরআনের উল্লেখিত আয়াত সমূহেই যথেষ্ট।

খ. বাইবেল শুকুরের মাংস ভক্ষণের নিষিদ্ধতা

একজন খ্রীস্টান তার ধর্মগ্রন্থ সমূহের উল্লেখ দেখে সন্তুষ্ট হলে দেখতে পাবে যে, বাইবেল ‘লেভীটিকাস্থ গ্রন্থে শুকুরের মাংস খেতে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছেঃ “এবং শুকুর যদিও তার খুর দ্বিখন্ডিত এবং খুরযুক্ত পদ বিশিষ্ট। এমন কি সে চিবিয়ে খায়, যাবর কাটেনা। (তবু) ওটা অপরিচ্ছন্ন (অপবিত্র) তোমার জন্য”।

একই গ্রন্থের ১১ অধ্যায় ৭ ও ৮ স্তবকে বলা হয়েছেঃ “ওগুলোর মাংস তুমি খাবে না এবং ওগুলোর মৃতদেরহ তুমি স্পর্শও করবে না, ওগুলো ‘অপবিত্র’ তোমার জন্য।”

বাইবেলের পঞ্চম গ্রন্থ ‘ডিউট্যারনমী’ তেও শুকর মাংস ‘অপবিত্র’ বলা হয়েছেঃ “আর শুকর- কারণ তার খুর দ্বিখন্ডিত, এমনকি চিবিয়ে খায়, যাবর কাটেনা, ওটা অপবিত্র তোমার জন্য তুমি ওগুলোর মাংস খাবে না, না ওগুলোর মৃতদেহ তুমি স্পর্শ করবে। (ডিউট্যারনমীঃ ১৪:৮)

বাইবেলের ‘আইযায়াহ, গ্রন্থের ৬৫ অধ্যায় ২ থেকে ৫ স্তবকেও একই নিষিদ্ধতা।

গ. শুকরের মাংস ভক্ষণ বেশ কিছু মারাত্নক রোগের কারণ

অন্যান্য অমুসলিম ও নাস্তিকরা হয়তো উপযুক্ত কারণ ও বিজ্ঞানের যুক্তি প্রমাণের মেনে নিতে পারে- শুকুর মাংস ভক্ষণ কমপক্ষে সত্তুরটি রোগের উদ্ভব ঘটাতে পারে। প্রথমতঃ আক্রান্ত হতে পারে বিভিন্ন প্রকার ক্রিমির দ্বারা। যেমন বৃত্তাকার ক্রিমি, ক্ষুদ্র কাঁটাযুক্ত ক্রিমি এবং বক্র ক্রিমি। এর মধ্যে সবচাইতে ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক হলো ‘টাইনিয়া সোলিয়াম’। সাধারণভাবে যেটাকে ফিতা ক্রিমি’ বলা হয়। এটা পেটের মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং অনেক লম্বা হয়। এর ডিম রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং দেহের প্রায় সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ঢুকে পড়তে পারে, যদি এটা মস্তিস্কে ঢোকে, তাহলে কারণ ঘটাতে পারে স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়ে যাবার। হৃদ-যন্ত্রের মধ্যে ঢুকলে বন্ধ করে দিতে পারে হৃদযন্ত্রক্রিয়া। চোখে ঢুকতে পারলে অন্ধত্বের কারণ , কলিজীতে ঢুকতে পারলে সেখানে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করে অর্থাৎ এটা শরীরের যে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

এরপরও আছে আরো ভয়ঙ্কর ‘ত্রীচুরা টিচুরাসীস্থ। এ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা হলো ভালো করে রান্না করলে এর ডিম্ব মারা যায়। এর ওপরে আমেরিকায় গবেষণা চালানো হয়েছে। ফলাফল ভালো করে রান্না করার পরও প্রতি ২৪ জনের ২২ জন এই ‘ত্রীচুরাসীস্থ দ্বারা আক্রান্ত। প্রমাণিত হলো সাধারণ রান্নায় এ ডিম্ব ধ্বংস হয় না।

ঘ. শুকরের মাংসে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর

শুকর মাংসে পেশী তৈরীর উপাদান অত্যন্ত নগণ্য পরিমাণ। পক্ষান্তরে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর। এ জাতীয় চর্বি বেশিরভাগ রক্ত নালীতে জমা হয়- যা কারণ ঘটায় হাইপার টেনশান এবং হার্ট এটাকের। অবাক হবার কিছু নেই যে ৫০% ভাগ আমেরিকান হাইপার টেনশানের রুগী।

ঙ. পৃথিবীর বুকে শুকর নোংরা ও পঙ্কিলতম প্রাণী

এ প্রাণীটি বসবাস করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে নিজেদের বিষ্ঠা, মানুষের মল ও ময়লাপূর্ণ জায়গায়। আল্লাহ তা‘আলা সমাজবদ্ধ সৃষ্টি কূলের ধাঙর, মেথর বা ময়লা পরিষ্কারক হিসাবেই বোধকরি এ প্রাণিটি সৃষ্টি করেছেন আজ থেকে পঞ্চাশ কি ষাট বছর আগেও যখন সেনিটারী পায়খানা আবিষ্কৃত হয়নি তখন যে কোনো শহরের পায়খানার ধরন ছিল, পেছন থেকে মেথর এসে তা ট্যাঙ্কি ভরে নিয়ে যেত এবং শহরের উপকণ্ঠে কোথাও ফেলতো। যা ছিল শুকরদের পরম আনন্দ নিবাস এবং শেষ পর্যন্ত সেগুলোই সব বিষ্ঠার রুপান্তর ঘটতো।

অনেকেই হয়তো এখন বিতর্কে নেমে পড়বেন উন্নত বিশ্বে এখন শুকরের পরিচ্ছন্ন খামার করা হয়েছে যেখানে ওগুলো লালিত পালিত হয়। তাদের এই অনেক উন্নত, স্বাস্থ্যকর খামারেও ওগুলো নোংরা। অত্যন্ত আনন্দের সাথেই ওরা ওদের নিজেদের ও সঙ্গিদের বিষ্ঠা নিয়ে ওদের চোখা নাক দিয়ে নাড়া চড়া করে আর উৎসবের খাদ্য হিসেবেই খায়।

চ. শুকর নির্লজ্জতায় জঘন্য পশু

ভু-পৃষ্ঠের ওপরে শুকর অশ্লীলতায় নির্লজ্জতম প্রাণী। একমাত্র পশু যেটা তার স্ত্রী-সঙ্গীর সাথে সংগম করার জন্য অন্যান্য পুরুষ-সঙ্গীদের ডেকে নেয়। আমেরিকার ও ইউরোপের অধিকাংষ মানুষের প্রিয় খাদ্য শুকর মাংস। খাদ্যভ্যাস আচরণে প্রকাশ পায়, বিজ্ঞানের এ সূত্রের জীবন্ত নমুনা ওরাই। ওদের প্রিয় সংস্কৃতি ডান্স পার্টি গুলোতে নেচে নেচে উত্তেজনার উত্তুঙ্গে উঠে একে অপরের সাথে ‘সোয়া’র জন্য বউ বদল করে নেয়। অনেকেই আবার জীবন্ত নীল ছবি চোখে দেখার জন্য স্ত্রীর সাথে সংগম করতে বন্ধু-বান্ধব ডেকে নেয়। তারপর এক নারী নিয়ে চলে অনেক পুরুষের সম্মিলিত লীলাখেলা। ধন্য উন্নত বিশ্ব, ধন্য তার সর্বোন্নত সংস্কৃতি।

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

    প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

    আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

    Leave a Comment