সন্তান নেওয়ার সঠিক বয়স
সন্তান নেওয়ার সঠিক বয়স,বাবা-মা হওয়ার সঠিক বয়স কত?
প্রথমবার বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময় কখন — এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন যে ৩০ বছর বয়সের আগে বাচ্চা নিয়ে নেওয়া উচিৎ। তবে মোটা দাগের এই উত্তরটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। একটি দম্পতি কয়টি বাচ্চা চান, তার উপরে ভিত্তি করে বাচ্চা নেওয়ার বয়সটাও ভিন্ন হবে।
মাসিক চক্রের কোন সময়ে সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে সেই বিষয়ে জানতে গর্ভবতী হওয়ার সঠিক সময় আর্টিকেলটি দেখতে পারেন।
একটি সন্তান চাইলে যে বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করা প্রয়োজন, তিনটি নিতে চাইলে তার অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া সন্তান ধারণে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে এমন উপসর্গগুলো লক্ষ করা গেলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই উপসর্গগুলো এই আর্টিকেলের নিচের অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাছাড়া একটি দম্পতির জীবনের লক্ষ্য, পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, আর্থিক অবস্থা — এমন অনেকগুলো ব্যক্তিগত বিষয়ের ওপরে সন্তান নেওয়ার আদর্শ সময় নির্ভর করে। সবদিক বিবেচনা করার পর সিদ্ধান্তটা একান্তই আপনার এবং আপনার সঙ্গীর। সিদ্ধান্তটি সহজ করতে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে যে বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করা উচিত, সেই বিষয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
বাবা-মা হওয়ার সঠিক বয়স কত? সন্তান নেওয়ার সঠিক বয়স
সন্তান নেওয়ার সঠিক বয়স অনেক পুরুষের ভাবনা, সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বয়স কোনো বাধা নয়। তাদের এই ধারণা একেবারেই ভুল। যদিও ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সি অনেক পুরুষও সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন। গিনেস বুক রেকর্ডসের মতে, ৯২ বছর বয়সি এক পুরুষ সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, ৪০ বছরের পর পুরুষদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়স পিতা হওয়ার জন্য আদর্শ।
নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুবন্ধের পরে সন্তানধারণের কোনও সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু ছেলেদের শরীরে শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়া কখনও বন্ধ হয় না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের নারীদের মতো ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ নেই।
পুরুষদের বয়স বাড়ার সঙ্গে শুক্রাণুগুলো জেনেটিক মিউটেশনের মধ্য দিয়ে যায়। ফলে শুক্রাণুর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। পুরুষদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা প্রভাবিত হয়। শুধু তা-ই নয়, সেই বয়সে যদি তিনি সন্তানের জন্ম দিয়েও ফেলেন, তাহলে শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
প্রথম সন্তান নেয়ার জন্য মেয়েদের ২৫ বছর উপযুক্ত সময়। আর ৩৫ বছর বয়সের পরে সন্তান না নেয়াটাই ভালো। সাধারণত ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত ঝুঁকিহীন হয়ে সন্তান জন্ম দেয়া যায়।
একজন মেয়ে সারা জীবনে কয়টা বাচ্চা জন্ম দিতে পারে? ১ জন নারী তার সারা জীবনে কয়টা সন্তান জন্ম দিতে পারে
পড়ুন
পুরুষের কত বছর বয়সে সন্তান নেওয়া উচিত
বাবা-মা হওয়ার সঠিক সময়
সন্তান নেওয়ার সঠিক বয়স অনেকেই হয়তো জানেন না যে, বাবা-মা হওয়ার সঠিক বয়স কত? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক, বাবা-মা হওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় কখন-
২০ বছরের আগে
এ বয়সে একটি সন্তানকে স্বাগত না জানানোই ভালো। কমবয়সে বাবা-মা হলে সেখানে আর্থিক সমস্যা থাকতে পারে। এমনকি আপনি তখন শিশুকে বড় করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নাও হতে পারেন।
২০-২৪ বছর
২০ বছরের পর থেকে বেশিরভাগ মানুষই খুব উর্বর থাকে। তথ্য অনুসারে, এ বয়সে নারীদের প্রতি মাসে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২৫ শতাংশ থাকে।
মেয়েরা সন্তান জন্ম দেওয়ার সঠিক সময়
আপনি যদি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকেন তাহলে এ বয়সেও সন্তান নিতে পারেন, বিশেষ করে নারীরা। তবে এই বয়সে বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার বুদ্ধি, ধৈর্য ও আর্থিক স্থিতিশীলতা থাকতে হবে।
৩০-৩৪ বছর
ইয়েল ইউনিভার্সিটির প্রসূতিবিদ্যা, স্ত্রীরোগবিদ্যা ও প্রজনন বিজ্ঞানের ক্লিনিকাল অধ্যাপক মেরি জেন মিনকিনের মতে, ৩০-৩৫ বছরের পর থেকে নারীর উর্বরতা কমতে শুরু করে।
অনেকে ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে এ বয়সে ব্যস্ত থাকায় সন্তান নিতে পারেন না। পরবর্তী সময়ে গিয়ে তারা গর্ভধারণে ব্যর্থ হন, তাই ৩০ বছরের পর থেকে সব নারীদেরই গর্ভধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
৩৫-৩৯ বছর
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩২ বছর বয়স থেকেই উর্বরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে। ৩৭ বছর বয়সে গিয়ে তা আরও কমতে শুরু করে।
আইভিএফ’এর মতো বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার সাফল্যের হারের সম্ভাবনার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। বেশি বয়সে গর্ভধারণের কারণে উচ্চ রক্তচাপ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের মতো স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে শুরু করে।
৪০-৪৫ বছর
গবেষণা অনুসারে, ৪০ বছর বয়সে নারীদের প্রতি মাসে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৫ শতাংশেরও কম। ৪০ বছরের বেশি বয়স্কদের গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে।
পুরুষের বাচ্চা হওয়ার সর্বোচ্চ বয়স কত
যে দম্পতি ১টি সন্তান চান, তারা যদি ৩২ বছর বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন, তাহলে তাদের সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। এর পর থেকে সেই সম্ভাবনা আস্তে আস্তে কমে যাবে। ৩৭ বছর বয়সে গর্ভধারণের সম্ভাবনা নেমে আসে ৭৫ শতাংশে। আর ৪১ বছর বয়সে তা ৫০ শতাংশে নেমে যায়।
২টি সন্তান নিতে চাইলে, ২৭ বছর বয়সে চেষ্টা শুরু করলে সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। ৩৪ বছর বয়সে সেই সম্ভাবনা কমে ৭৫ শতাংশে চলে যায়। আর বয়স যদি ৩৮ বছর হয়ে যায়, তবে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা নেমে আসে ৫০ শতাংশে।
৩টি সন্তান নিতে চাইলে, ২৩ বছর বয়সে চেষ্টা করতে শুরু করলে সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। ৩১ বছর বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করলে সেই সম্ভাবনা কমে ৭৫ শতাংশে আসে। আর ৩৫ বছর বয়সে গিয়ে সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ।
সহজে বোঝার জন্য নিচের তালিকাটি দেখুন। এখানে একটি, দুটি বা তিনটি সন্তান নেওয়ার জন্য নারীর সর্বোচ্চ যে বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করলে শতকরা ৫০, ৭৫ ও ৯০ শতাংশ সাফল্য মিলবে তা তুলে ধরা হয়েছে।
সন্তান ধারণে সফল হওয়ার সম্ভাবনা | এক সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ বয়স | দুই-সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ বয়স | তিন-সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ বয়স |
---|---|---|---|
৫০% | ৪১ | ৩৮ | ৩৫ |
৭৫% | ৩৭ | ৩৪ | ৩১ |
৯০% | ৩২ | ২৭ | ২৩ |
সিদ্ধান্ত সম্পূর্ন আপনার ও আপনার সঙ্গীর
সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ সফলতার সম্ভাবনা চাইবেন, নাকি ৭৫ বা ৫০ শতাংশ – এটা একান্তই একটি দম্পতির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিছু কিছু দম্পতির কাছে সন্তান নেওয়াই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, এজন্য তারা সব ধরনের চেষ্টা করতে রাজি থাকেন। তারা হয়তো ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকার সময়টাকে বেছে নেবেন। আবার কেউ কেউ জীবনের বিভিন্ন অবস্থা বিবেচনা করে ৭৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকার সময়টাকে বেছে নেন। সব দিক বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত ধারণা নিয়ে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করাই আর্টিকেলটির উদ্দেশ্য।
সন্তান ধারণে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই লক্ষণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো যাতে আপনার অবস্থার সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন।
স্বামী-স্ত্রীর যে যে ভুলের কারনে সন্তান জন্ম হয় না
বন্ধ্যাত্বের অনেক কারণ আছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে নারীর সন্তান ধারণ ক্ষমতা অনেকটাই কমে আসে।
আর কি কি কারণে এমনটা হতে পারে, জেনে নিন বিস্তারিত-
পরিশেষে : বাচ্চা নেওয়ার জন্য সঠিক বয়স,বাচ্চা নেওয়ার সময়
আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট
স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ