সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ হতে সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ধাপ
সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ধাপ
সমাজ স্থিতিশীল নয়, পরিবর্তনশীল। বর্তমানকালে আমরা যে আধুনিক সমাজে বসবাস করছি, আগে তা ছিল না। বর্তমান আধুনিক সমাজ বিভিন্ন ধাপ অক্রিম করে বিবর্তন ধারায় বর্তমান রূপ লাভ করেছে। সমাজবিজ্ঞানীগণ সমাজ বিকাশের ধারাকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করেছেন, যথা-
- আদিম সমাজ
- পশুপালন সমাজ
- কৃষি সমাজ এবং
- শিল্প সমাজ।
আবার প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সমাজ ও সভ্যতার বিকাশের ধারাকে
- প্রাচীন প্রযুগ
- নব্য প্রস্তরযুগ
- ব্রোঞ্জযুগ এবং
- লৌহযুগ
এভাবে ভাগ করেছেন।
সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ হতে সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ধাপ:
আদিম সমাজ : মানবসভ্যতার শুরু হয়েছে আদিম সমাজ হতে। এ সমাজকে নৃবিজ্ঞানীগণ অনক্ষর সমাজ বলে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ যে সমাজে সভ্যতার আলাে পৌছায়নি এবং যে সমাজের লােকেরা লিখতে পড়তে
জানত না সে সমাজকে আদিম সমাজ বলা যেতে পারে।Inline Related Posts
আদিম সমাজের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায় :
অর্থনৈতিক অবস্থা : আদিম সমাজের লােকদের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত সহজ সরল নিম্নমানের। তারা দলবদ্ধ হয়ে বনজঙ্গল হতে ফলমূল সংগ্রহ ও পশুপাখি শিকার করত এবং নদীনালা খালবিল হতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। এ সমাজের মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে পারত না, প্রকৃতি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করত।
তাই এ অর্থনীতিকে খাদ্য-সংগ্রহ অর্থনীতি বলা হয়। আদিম সমাজে সম্পত্তিতে ব্যক্তিমালিকানা ছিল না, ছিল সামাজিক মালিকানা। ব্যক্তিগত মালিকানা না থাকার কারণে আদিম সমাজ ছিল শ্রেণীহীন। এ সমাজে খাদ্য ছিল অপ্রতুল। এ সময় কোনাে বাড়তি খাবার জমা রাখার চিন্তাই করা যেত না। শিকারে যা পাওয়া যেত সবাই মিলে একসঙ্গে ভুরিভােজ করত নয়তাে সবাই একসাথে উপােস করে থাকত। আদিম সমাজে প্রাকৃতিক শ্রমবিভাগ দেখা যায়। টাকা-পয়সা, লেনদেন, হাট-বাজার বলতে কিছুই ছিল না। তবে তাদের মধ্যে বিনিময় প্রথা বিদ্যমান ছিল।
হাতিয়ার : আদিম সমাজের মানুষেরা আত্মরক্ষা ও পশুপাখি শিকারের জন্য বিভিন্ন রকম হাতিয়ার ব্যবহার করত। আদিম মানুষের প্রথম হাতিয়ার হল গাছের ডালপালার লাঠি এবং অমসৃণ পাথরের টুকরা। ক্রমে ক্রমে তারা তীরধনুক, মুগুর, বল্লম, চাকু, বড়শি, দা, বর্শা, গদা, বুমেরাং ইত্যাদি তৈরি করতে শেখে।
পােশাক-পরিচ্ছদ : আদিম সমাজের লােকেরা শুধুমাত্র লজ্জা ও শীত নিবারণের জন্য বা বৃষ্টি ও রােদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই যে পােশাক পরিধান করত, তা নয়। সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে তারা পােশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করত। পােশাকের মাধ্যমেই আদিম সমাজের লােকদের সামাজিক মর্যাদা প্রকাশ পেত। পােশাক হিসেবে তারা ব্যবহার করত বনের লতাপাতা, গাছের ছাল-বাকল, অথবা পশু-পাখির চামড়া।
জীবনমান : আদিম সমাজের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালি ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। এরা ফলমূল সংগ্রহ, মাছ ও পশু-পাখি শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। তারা প্রকৃতিতে অসহায় জীবন যাপন করত। প্রকৃতির কাছে তারা যায়। বাড়তি খাবার ছিল না। দলবদ্ধ হয়ে শিকার করে যা পেত তা সবাই ভাগ করে খেত। এদের অবস্থা ছিল অনেকটা “দিন আনে দিন খায় গােছের”। রােগ, শােক, মহামারী, জীবজন্তুর সঙ্গে লড়াই করে
তাদেরকে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হত।
পশুপালন সমাজ : আদিম সমাজের পরবর্তী সমাজব্যবস্থার নাম পশুপালন সমাজ। এ সমাজের মানুষেরা খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করত। পশুপালন সমাজেই সর্বপ্রথম সম্পত্তিতে ব্যক্তিগত মালিকানা দেখা যায়।
কৃষি সমাজ : কৃষির আবিষ্কার মানবসমাজ বিকাশের আরাে একটি বৈপ্লবিক ঘটনা। কেননা পশুপালন সমাজে মানুষ যাযাবরের ন্যায় এক স্থান হতে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াত। কিন্তু কৃষি আবিষ্কারের সাথে সাথে মানুষ স্থায়ীভাবে এক স্থানে বসবাস শুরু করে। কৃষিকাজ মানুষের খাদ্যের সরবরাহ আরাে নিশ্চিত করে। উদ্বৃত্ত ফসল ফলায়, মানুষ কৃষিকাজ ছাড়াও অন্যান্য পেশায় যেমন- শিল্প, সংগীত, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি পেশায় অংশগ্রহণ করতে থাকে। অর্থাৎ কৃষিতে উদ্বৃত্ত ফসল সভ্যতার সূচনা করে।
শিলযুগ : কৃষিযুগের শেষ দিকে এবং শিল্পযুগে মানুষ শিল্পকারখানা গড়ে তােলে। এ সময়ে শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে। কৃষি ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার এবং বিদ্যুতের ব্যবহারে শিল্পকারখানায় উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ছােট ছােট শিল্পকারখানার পাশাপাশি বৃহদায়তন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। সমাজে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন ধরনের শ্রেণী এবং শ্রেণী-বৈষম্য।
শিল্পযুগকে প্রধানত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা-
- পুঁজিবাদী যুগ
- সমাজতান্ত্রিক যুগ এবং
- সাম্যবাদী যুগ।
এ তিন যুগে সম্পত্তির প্রকৃতি ও মালিকানা বিভিন্ন প্রকৃতির। পুঁজিবাদী যুগে ২টি শ্রেণী দেখা যায়, যথাবুর্জোয়া বা পুঁজিপতি এবং শ্রমিক শ্রেণী। শিল্পকারখানা, ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি যাবতীয় সম্পত্তির মালিক হল বুর্জোয়া।
এ ব্যবস্থায় শ্রমিকেরা মজুরীর বিনিময়ে উৎপাদন যন্ত্রে শ্রম বিক্রি করে। পুঁজিবাদী যুগের পরবর্তী পর্যায় হল সমাজতান্ত্রিক যুগ। এ যুগে কলকারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা লােপ পায় এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎপাদনের উপকরণে সামাজিক মালিকানা থাকায় এখানে মানুষ কর্তৃক মানুষের শােষণ থাকে না।
“সমাজতান্ত্রিক সমাজে মানুষ যার যার সাধ্যানুযায়ী কাজ করবে এবং যােগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে।” এটাই হল সমাজতন্ত্রের মূল কথা। মার্কসীয় দর্শনের মূল লক্ষ্য সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি সাধ্যানুযায়ী কাজ করবে এবং প্রয়ােজন অনুসারে বণ্টন ব্যবস্থায় অংশ নেবে।”
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সভ্যতা কী? সংস্কৃতি ও সভ্যতার সম্পর্ক
সভ্যতা কী?
অনেক সমাজবিজ্ঞানী সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে এক করে দেখেন। কিন্তু সংস্কৃতি ও সভ্যতা এক জিনিস নয়। প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ডন মার্টিন ডেল বলেন যে, উন্নত ধরনের শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও ধর্ম-এরই সম্মিলিত অর্থে সভ্যতা শব্দটি ব্যবহৃত হয়।Inline Related Posts
সভ্যতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, “সভ্যতা অর্থে আমরা বুঝি মানুষ তার জীবন ধারণের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে যান্ত্রিক ব্যবস্থা, কলাকৌশল ও সংগঠন সৃষ্টি করেছে, তারই সামগ্রিক রূপ।” সুতরাং সভ্যতা বলতে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে বােঝায় যার দ্বারা মানুষ প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। অর্থাৎ নানা ধরনের কারিগরি কলাকৌশল ও যন্ত্রপাতি সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত।
সংস্কৃতি ও সভ্যতার সম্পর্ক
সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে সম্পর্ক জানতে হলে তাদের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানা প্রয়ােজন। সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
(১) সংস্কৃতি হল মানুষের অবতুগত (Im-material) সৃষ্টি। যেমন- জ্ঞান, বিশ্বাস, সংগীত, নৃত্যকলা ইত্যাদি। এগুলাে হল সংস্কৃতি। অন্যদিকে সভ্যতা হল মানুষের বতুগত (Material) সৃষ্টি। যেমন- ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, ঘড়ি, টেলিভিশন, মােটরগাড়ি ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে ম্যাকাইভার বলেন, “আমরা যা সেটাই আমাদের সংস্কৃতি, আর আমাদের যা আছে’ বা আমরা যা ব্যবহার করি সেটাই হল সভ্যতা।”
(২) জার্মান দার্শনিক কান্ট (Kant) বলেন যে, সংস্কৃতি ব্যক্তির মনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার; সভ্যতার সঙ্গে ব্যক্তির বাহ্য আচরণের সম্পর্ক।
(৩) দক্ষতার ভিত্তিতে সভ্যতার পরিমাপ করা যায়, কিন্তু সংস্কৃতির বিচার হয় মানুষের মানসিক উৎকর্ষের ভিত্তিতে। যেমন- একটি ট্রাক ঘােড়ার গাড়ির তুলনায় অধিক দ্রুতগামী, একটি উড়ােজাহাজ ট্রাকের চেয়ে বেশি দ্রুতগামী। অন্যদিকে সংস্কৃতিকে কোনাে কিছু দিয়ে বিচার করা যায় না। যেমন- একটি ভালাে চিত্র কারাের কাছে সুন্দর, আবার কারাের কাছে অসুন্দর লাগতে পারে।
(৪) সভ্যতা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করা যায়, কিন্তু সংস্কৃতি অর্জন করতে হয়। যেমন- উত্তরাধিকার সূত্রে কোনাে ব্যক্তি একটি হারমােনিয়াম পেতে পারে, কিন্তু ঐ হারমােনিয়াম বাজানাের কৌশল তাকে শিখতে হয়।
(৫) সভ্যতার অবদানকে সহজেই উপলব্ধি করা যায়, কিন্তু সংস্কৃতির অবদান সাধারণ মানুষ অতি সহজেই উপলব্ধি করতে পারে না। সাধারণ লােক সামান্য শিক্ষা পেলেই আধুনিক যন্ত্রপাতির কলাকৌশল বা ব্যবহার বুঝে নিতে পারে। কিন্তু কোনাে লােককে কবিতা লেখার নিয়ম শিখালেই যে সে ঐ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
(৬) সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু সংস্কৃতি সহজে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। যেমন নর্ডিক জাতি রােমানদের পরাজিত করে রােমান সভ্যতা ধ্বংস করে দিয়েছিল, কিন্তু তারা রােমান ভাষা, আইন, প্রথা, ধর্ম প্রভৃতি সংস্কৃতির উপাদান ধ্বংস করতে পারে নি, বরং সেগুলাে গ্রহণ করেছিল।
(৭) সভ্যতার গতি খুব দ্রুত, সংস্কৃতির গতি তেমন দ্রুত নয়।
সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য থাকলেও এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। চারাগাছের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য যেমন উপযুক্ত মাটি ও জলবায়ুর প্রয়ােজন, তেমনি সংস্কৃতির বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দরকার। সভ্যতার বিভিন্ন উপাদান এ পরিবেশ সৃষ্টি করে। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতির যেমন উন্নতি সাধিত হয়, ঠিক তেমনি সভ্যতার অবদানকে উপেক্ষা করে সংস্কৃতি নিজেকে বিকশিত করতে পারে না। কাজেই সভ্যতাকে সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবে গণ্য করাই যুক্তিসঙ্গত।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সংস্কৃতি কী? সংস্কৃতির উপাদান
সংস্কৃতি কী?
সাধারণত সংস্কৃতি বলতে আমরা বুঝি মার্জিত রুচি বা অভ্যাসগত উৎকর্ষ। কিন্তু আসলে সংস্কৃতি বলতে আরাে কিছু বােঝায়। মানুষের জীবনের সব দিকগুলােই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সংস্কৃতি হল মানুষের আচরণের সমষ্টি। সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষ সমাজ থেকে যা কিছু অর্জন করে তাই সংস্কৃতি।Inline Related Posts
মানুষের জ্ঞান, বিশ্বাস, আচার-ব্যবহার, ভাষা, খাওয়া-দাওয়া, নৈতিকতা, মূল্যবােধ সব কিছুই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত।
ই.বি টেইলর (TYLOR) বলেন যে, “সংস্কৃতি হচ্ছে জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতি, নিয়ম, সংস্কার ও অন্যান্য দক্ষতা যা মানুষ সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জন করে থাকে।
নর্থ (NORTH) -এর মতে, “কোনাে সমাজের সদস্যরা বংশপরম্পরায় যেসব আচার, প্রথা ও অনুষ্ঠান উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে তাই সংস্কৃতি।”
সংস্কৃতির উপাদান
সংস্কৃতির উপাদানকে ২টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা-
- বস্তুগত উপাদান ও
- অবস্তুগত উপাদান।
সংস্কৃতির যে উপাদানটি বাস্তবরূপ ধারণ করে থাকে তাকে সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদান বলা হয়। যেমন- ঘরবাড়ি, কলকারখানা, টেবিল, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি। অন্যদিকে সংস্কৃতির যে উপাদানটি উপলদ্ধি বা অনুধাবন করা যায় তাকে অবস্তুগত উপাদান বলে। যথা- জ্ঞান, বিশ্বাস, নাটক, সাহিত্য, নৃত্যকলা, ভাষা, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সমাজ কী? সমাজের উপাদান গুলো কি কি আলোচনা কর
সমাজ কী?
সমাজ বলতে সাধারণত সংঘবদ্ধ জনসমষ্টিকে বােঝায়। অর্থাৎ যখন বহুলােক একই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করে তখন তাকে সমাজ বলে। সাধারণত দুইটি বৈশিষ্ট্য থাকলে যে কোনাে জনসমষ্টিকে সমাজ বলা যেতে পারে, যথা-
- বহুলােকের সংঘবদ্ধ বসবাস এবং
- ঐ সংঘবদ্ধতার পেছনে কোনাে উদ্দেশ্য।
সমাজবিজ্ঞানী জিসবার্ট-এর মতে, “সমাজ হল সামাজিক সম্পর্কের জটিল জাল, যে সম্পর্কের দ্বারা প্রত্যেক মানুষ তার সঙ্গীদের সঙ্গে সম্পর্কে যুক্ত”।
যখন একজন মানুষ অপর একজনকে জানবে, তার সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করবে, এবং এক জন আরেক জন সম্পর্কে সচেতন হবে, তখনই সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে মানুষের মেলামেশার ফলে যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয়, তাই সামাজিক সম্পর্ক। এ সম্পর্ক যে কোনাে ধরনের হতে পারেসহযােগিতার সম্পর্ক, প্রতিযােগিতার সম্পর্ক, স্নেহ-ভালবাসার সম্পর্ক, ঘৃণার সম্পর্ক, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক, পিতাপুত্রের সম্পর্ক, শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক ইত্যাদি।
সমাজের উপাদান
সমাজ হল পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্কের সম্বন্ধযুক্ত মনুষ্যগােষ্ঠী। অর্থাৎ যখন বহু ব্যক্তি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তােলে তখন ঐ জনসমষ্টিকে সমাজ বলে। এখন প্রশ্ন হল কী কী উপাদান দ্বারা সমাজ গঠিত ? সমাজ বিভিন্ন উপাদান দ্বারা গঠিত। যথা
সংঘবদ্ধ মানুষ :
সমাজের প্রধান উপাদান হল সংঘবদ্ধ মানুষ। মানুষ ছাড়া সমাজের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সচেতনতা :
পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সচেতনতা না থাকলে সমাজস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আর সামাজিক সম্পর্কহীন মনুষ্যগােষ্ঠীকে সমাজ বলা যায় না। সুতরাং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সচেতনতাকে সমাজ গঠনের অন্যতম উপাদান হিসেবে অভিহিত করা যায়।
সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য :
সমাজ গঠন করতে যেমন কতগুলাে মানুষের প্রয়ােজন তেমনি ঐ সব মানুষের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে অন্তত সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য থাকতে হয়। আর এ সম্বন্ধে তাদের মধ্যে অল্পবিস্তর চেতনা থাকাও জরুরি। সামাজিক সম্পর্কহীন মনুষ্যগােষ্ঠীকে সমাজ বলা যায় না। কেবলমাত্র সমাজের মধ্যে সাদৃশ্যই থাকবে, এটা ঠিক নয়। যেসব মানুষ নিয়ে সমাজ গঠিত, সেসব মানুষের মধ্যে অনেক বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
সহযােগিতা :
সহযােগিতা হল সমাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ সহযােগিতা ছাড়া সমাজ টিকে থাকতে পারে না। পারস্পরিক সহযােগিতা হল সমাজের ভিত্তি।
পরপর নির্ভরশীলতা :
পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সমাজের আরেকটি উপাদান। সমাজের মানুষ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কারণ মানুষ একা বাঁচতে পারে না। সমাজে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সাহায্য-সহযােগিতা ছাড়া স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে না।
সুতরাং উপরের আলােচনায় দেখা যায় যে, সমাজ গঠন করতে যেমন দরকার সমাজবদ্ধ মানুষ, তেমনি প্রয়ােজন মানুষদের মধ্যে সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং সহযােগিতা। এগুলাে না হলে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আর সামাজিক সম্পর্ক না হলে কোনাে মনুষ্যগােষ্ঠীকে আমরা সমাজ বলতে পারি না।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সমাজবিজ্ঞান কি বা সমাজবিজ্ঞান বলতে কি বুঝ? সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতা
সমাজবিজ্ঞান কি বা সমাজবিজ্ঞান বলতে কি বুঝ? সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতা
১৮৩৯ সালে ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁৎ (August Comte) সর্বপ্রথম “Sociology” শব্দটি প্রবর্তন করেন। Sociology শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ “Socious” এবং গ্রিক শব্দ “Logos”- এর সমন্বয়ে।। “Socious” অর্থ সমাজ এবং “Logos” অর্থ অধ্যয়ন বা বিজ্ঞান। অর্থাৎ সমাজ সম্পর্কে যে শাত্ৰ আলােচনা করে থাকে তাই সমাজবিজ্ঞান।
সমাজবিজ্ঞানীগণ সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। এল.এফ.ওয়ার্ড এবং গ্রাহাম সামনার-এর মতে, “সমাজবিজ্ঞান হল সামাজিক ঘটনাবলির বিজ্ঞান”। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ডুর্খেইম বলেন যে, “সমাজবিজ্ঞান হল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান”।
ম্যাকাইভার ও পেজ-এর মতে, “সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ ও মানুষের সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে আলােচনা করে।” উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলাের আলােকে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ। মূলত গােটা সমাজের নিখুঁত বিশ্লেষণই সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। এ প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গােটা সমাজই সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত।
সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতা
সমাজ : মানুষ সামাজিক জীব। প্রত্যেক মানুষ সমাজেই জন্মগ্রহণ করে, বৃদ্ধি লাভ করে এবং সমাজেই মৃত্যুবরণ করে। তাই সমাজ ছাড়া মানুষ নিজের অস্তিত্ব কল্পনাও করতে পারে না এবং নিজের প্রয়ােজনেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস। করে। এখন প্রশ্ন হল সমাজ বলতে কী বােঝায় ?
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সমাজ কী? সমাজের উপাদান গুলো কি কি আলোচনা কর
সমাজ কী?
সমাজ বলতে সাধারণত সংঘবদ্ধ জনসমষ্টিকে বােঝায়। অর্থাৎ যখন বহুলােক একই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করে তখন তাকে সমাজ বলে। সাধারণত দুইটি বৈশিষ্ট্য থাকলে যে কোনাে জনসমষ্টিকে সমাজ বলা যেতে পারে, যথা-
- বহুলােকের সংঘবদ্ধ বসবাস এবং
- ঐ সংঘবদ্ধতার পেছনে কোনাে উদ্দেশ্য।
সমাজবিজ্ঞানী জিসবার্ট-এর মতে, “সমাজ হল সামাজিক সম্পর্কের জটিল জাল, যে সম্পর্কের দ্বারা প্রত্যেক মানুষ তার সঙ্গীদের সঙ্গে সম্পর্কে যুক্ত”।
যখন একজন মানুষ অপর একজনকে জানবে, তার সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করবে, এবং এক জন আরেক জন সম্পর্কে সচেতন হবে, তখনই সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে মানুষের মেলামেশার ফলে যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয়, তাই সামাজিক সম্পর্ক। এ সম্পর্ক যে কোনাে ধরনের হতে পারেসহযােগিতার সম্পর্ক, প্রতিযােগিতার সম্পর্ক, স্নেহ-ভালবাসার সম্পর্ক, ঘৃণার সম্পর্ক, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক, পিতাপুত্রের সম্পর্ক, শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক ইত্যাদি।
সমাজের উপাদান
সমাজ হল পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্কের সম্বন্ধযুক্ত মনুষ্যগােষ্ঠী। অর্থাৎ যখন বহু ব্যক্তি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তােলে তখন ঐ জনসমষ্টিকে সমাজ বলে। এখন প্রশ্ন হল কী কী উপাদান দ্বারা সমাজ গঠিত ? সমাজ বিভিন্ন উপাদান দ্বারা গঠিত। যথা
সংঘবদ্ধ মানুষ :
সমাজের প্রধান উপাদান হল সংঘবদ্ধ মানুষ। মানুষ ছাড়া সমাজের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সচেতনতা :
পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সচেতনতা না থাকলে সমাজস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আর সামাজিক সম্পর্কহীন মনুষ্যগােষ্ঠীকে সমাজ বলা যায় না। সুতরাং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সচেতনতাকে সমাজ গঠনের অন্যতম উপাদান হিসেবে অভিহিত করা যায়।
সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য :
সমাজ গঠন করতে যেমন কতগুলাে মানুষের প্রয়ােজন তেমনি ঐ সব মানুষের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে অন্তত সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য থাকতে হয়। আর এ সম্বন্ধে তাদের মধ্যে অল্পবিস্তর চেতনা থাকাও জরুরি। সামাজিক সম্পর্কহীন মনুষ্যগােষ্ঠীকে সমাজ বলা যায় না। কেবলমাত্র সমাজের মধ্যে সাদৃশ্যই থাকবে, এটা ঠিক নয়। যেসব মানুষ নিয়ে সমাজ গঠিত, সেসব মানুষের মধ্যে অনেক বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
সহযােগিতা :
সহযােগিতা হল সমাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ সহযােগিতা ছাড়া সমাজ টিকে থাকতে পারে না। পারস্পরিক সহযােগিতা হল সমাজের ভিত্তি।
পরপর নির্ভরশীলতা :
পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সমাজের আরেকটি উপাদান। সমাজের মানুষ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কারণ মানুষ একা বাঁচতে পারে না। সমাজে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সাহায্য-সহযােগিতা ছাড়া স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে না।
সুতরাং উপরের আলােচনায় দেখা যায় যে, সমাজ গঠন করতে যেমন দরকার সমাজবদ্ধ মানুষ, তেমনি প্রয়ােজন মানুষদের মধ্যে সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং সহযােগিতা। এগুলাে না হলে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আর সামাজিক সম্পর্ক না হলে কোনাে মনুষ্যগােষ্ঠীকে আমরা সমাজ বলতে পারি না।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সমাজজীবনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব
মানুষের জীবনের যে কর্মগুলাে অর্থ-উপার্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই অর্থনৈতিক কাজ। যেমন- কৃষক চাষ করে ফসল ফলায়, জেলে মাছ ধরে, শ্রমিক কলকারখানায় কাজ করে, শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করে, চিকিৎসক রােগীর চিকিৎসা করে। এগুলাে সবই অর্থনৈতিক কাজ
সমাজে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অর্থনৈতিক কার্যাবলির গুরুত্ব সর্বাধিক। কারণ বাঁচার তাগিদেই মানুষ অর্থনৈতিক কার্যাদি সম্পাদন করে। আদিমকাল হতে বর্তমানকাল পর্যন্ত মানুষ তার মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করে থাকে।
উৎপাদন, বণ্টন ও ভােগ ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে মানুষ দৈনন্দিন নানা ধরনের অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালনা করে। তা নাহলে মানুষ তার অপরিসীম অভাব মেটাতে পারত না। সুতরাং মানব ও সমাজজীবনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব অপরিসীম।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সমাজজীবনে রাজনৈতিক উপাদান এর প্রভাব
মানুষের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ ও আচারব্যবস্থা সমাজজীবনকে প্রভাবিত করে। মানুষের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয় সাধারণত নাগরিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের নানাবিধ কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য, স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার জন্য এবং দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য। এর জন্য মানুষ রাজনৈতিক দল গঠন করে, রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।Inline Related Posts
এসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। ব্যক্তি দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন দলে সংগঠিত হয়ে নিজেদের বক্তব্য ও মতামত জনগণের নিকট উপস্থাপিত করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে জয়ী দল সরকার গঠন করে এবং বিজিত দল বিরােধী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়। সরকার দেশের নানাবিধ রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করার জন্য চেষ্টা করে।
অপরদিকে বিরােধী দলের কাজ হল ক্ষমতাসীন দলের সমালােচনা করা, ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশ করা, মন্দ কাজের বিরােধিতা করা, যাতে পরবর্তী নির্বাচনে সরকারি দলকে পরাজিত করা যায়। বিরােধী দলের সক্রিয় ভূমিকার কারণে সরকার দুর্নীতি ও অন্যায়মূলক কাজ হতে বিরত থাকে। এজন্য বলা হয় কোনাে দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হল সে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
সুতরাং সরকার ও বিরােধী দল মিলে দেশে যদি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তােলে তাহলে সে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি না হওয়ার কোনাে কারণ থাকে না। দেশের প্রগতি অনেকাংশে নির্ভর করে জনগণের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা ও কর্মকাণ্ডের ওপর।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
মানবসমাজে ভৌগােলিক উপাদান এর প্রভাব
সমাজবিজ্ঞানী পি, সরােকিন (P. Sorokin) এর মতে, “ভৌগােলিক উপাদান বা ভৌগােলিক পরিবেশ বলতে সেই সব মহাজাগতিক অবস্থা এবং ব্যাপারকে নির্দেশ করে যা মানুষের সৃষ্টি নয় এবং যা নিজের নিয়মেই পরিবর্তিত হয়।” তিনি ভৌগােলিক উপাদান বলতে জলবায়ু, তাপমাত্রা, মাটি, বায়ুমণ্ডল, নদনদী, পাহাড়-পর্বত, গ্রহ নক্ষত্র, ঋতু পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত প্রভৃতিকে বুঝিয়েছেন।
ভৌগােলিক উপাদানের প্রভাব :
ভৌগােলিক উপাদান কিভাবে মানবসমাজে প্রভাব বিস্তার করে তা নিম্নে বর্ণনা করা হল :
(১) জনসংখ্যা বণ্টনের ওপর প্রভাব : মানবসভ্যতা বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ হল নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চল। যেখানে বসবাস করার উপযােগী আবহাওয়া বিরাজ করে এবং যেখানে খাদ্যের যােগান পর্যাপ্ত সেখানেই জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
(২) পেশার ওপর প্রভাব : মানুষের পেশা ভৌগােলিক উপাদান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সিলেট পাহাড়ী এলাকা এবং প্রচুর বৃষ্টি হয় বলেই সেখানে চা উৎপন্ন হয়। ফলে সিলেটের চা বাগানে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।
(৩) কুটির শিল্পের ওপর প্রভাব : শিল্পকারখানাও ভৌগােলিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত। রাজশাহীতে রেশম শিল্প এবং সিলেটে বেত ও চা শিল্প গড়ে ওঠার পেছনে ঐ অঞ্চলের ভৌগােলিক পরিবেশ দায়ী।
(৪) মােগাযােগ ব্যবস্থার ওপর প্রভাব : কোনাে দেশের যােগাযােগ ব্যবস্থা কীরূপ হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে সে দেশের ভৌগােলিক পরিবেশের ওপর। বাংলাদেশ নদী-নালার দেশ বলেই এদেশের প্রধান যােগাযােগের মাধ্যম হল নৌকা। আবার মরুভূমি অঞ্চলের যােগাযােগের মাধ্যম হল উট।
(৫) পােশাক-পরিচ্ছদ : মানুষের পােশাক-পরিচ্ছদের ওপর ভৌগােলিক পরিবেশ প্রভাব বিস্তার করে। গ্রীষ্মমণ্ডলের লােকেরা পাতলা, ঢিলেঢালা এবং শীত অঞ্চলের লােকেরা গরম বা পশমি কাপড় পরিধান করে।
(৬) গৃহ নির্মাণের ওপর প্রভাব : গৃহ নির্মাণের রীতিতে ভৌগােলিক উপাদান বেশ কার্যকরি ভূমিকা পালন করে । জাপানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয় বলে সেদেশের লােকেরা কাঠ ও কাগজের ঘর নির্মাণ করে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে গােলপাতা ও সুন্দরী কাঠ বেশি জন্মে বলে ঐ অঞ্চলের লােকেরা গৃহ নির্মাণে ঐসব কাঠ ব্যবহার করে।
(৭) খাদ্যের ওপর প্রভাব : মানুষের খাদ্য উপাদান ও খাদ্যাভ্যাস নির্ভর করে ভৌগােলিক পরিবেশের ওপর। বাংলাদেশের জলবায়ুতে ধান, ডাল, আম, কাঁঠাল প্রভৃতি ভালাে জন্মে এবং নদনদী, খালবিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এজন্য বাঙালিদেরকে বলা হয়, “ভাতে মাছে বাঙালি”।
(৮) অপরাধ প্রবণতার ওপর প্রভাব : ফরাসি অপরাধবিজ্ঞানী লসাে (Lombroso) বলেন যে, ভৌগােলিক কারণে অপরাধ সংঘটিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে চরাঞ্চলের লােকের মারামারিতে বেশি লিপ্ত হতে দেখা যায়।
(৯) দক্ষতার ওপর প্রভাব : মানবদক্ষতাও ভৌগােলিক উপাদান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আবহাওয়া মানুষের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবান্বিত করে।
উপরের আলােচনা হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্ৰই ভৌগােলিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
আধুনিক সমাজ বলতে কি বুঝ? আধুনিক সমাজের বৈশিষ্ট্য
আধুনিক সমাজ হল সে সমাজ যেখানে মানুষ শিল্পকারখানা স্থাপন ও কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিক কলাকৌশল প্রয়ােগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে।
প্রথমত :
আধুনিক সমাজে মানুষের জাতীয় আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ আধুনিক সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল স্বনির্ভর হওয়া
দ্বিতীয়ত :
আধুনিক সমাজের আরাে একটি বৈশিষ্ট্য হল রাজনীতিতে আপামর জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। অর্থাৎ রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে দাবি-দাওয়া আদায় এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যাতে কাঙিক্ষত পরিবর্তন আনতে পারে সে সুযােগ থাকতে হবে।
তৃতীয়ত :
নগরায়ন ও শিল্পায়নের দ্রুত বিকাশ আধুনিক সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শিল্পের সম্পসারণ, যানবাহন ও যােগাযােগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতির মাধ্যমে জনগণের ভৌগােলিক সচলতা আধুনিক সমাজের বৈশিষ্ট্য।
চতুর্থত :
নিরক্ষরতা দূরীকরণ আধুনিক সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আধুনিক সমাজে কারিগরি বিদ্যার প্রসারের ফলে মানুষের শারীরিক শ্রম হ্রাস পায় এবং অবসর সময়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার সম্প্রসারণের ফলে আধুনিক সমাজে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস লােপ পায় এবং মানুষের মধ্যে ব্যক্তিস্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও যুক্তিবাদী চিন্তার প্রাধান্য লক্ষ করা যায়।
পঞ্চমত :
আধুনিক সমাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল প্রচারমাধ্যমগুলাের আধুনিকতা। জনসাধারণের নিকট নানা প্রকার তথ্য-সংবাদ এবং নানা বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান সরবরাহের জন্য সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন তথা ইলেকট্রনিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাের প্রভূত উন্নতি সাধন।
ষষ্ঠত :
আধুনিক সমাজের আরাে একটি বৈশিষ্ট্য হল, এ সমাজের মানুষের মধ্যে জন্মহার ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশ কম। কারিগরি বিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যা ও শিক্ষার সম্প্রসারণ এর প্রধান কারণ।
সুতরাং আধুনিক সমাজ বলতে সে সমাজকে বােঝায় যেখানে মানুষ মন-মানসিকতার দিক দিয়ে আধুনিক এবং তারা অতীতের ধ্যান-ধারণার প্রতি অন্ধ আনুগত্য না দেখিয়ে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে যুক্তিবাদী কার্যক্রম গ্রহণ করে।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
প্রত্নতাত্ত্বিক যুগ বিভাগ | প্রাচীন প্রস্তরযুগ, নব্য প্রত্যযুগ, ব্রোঞ্জযুগ এবং লৌহযুগ।
প্রত্নতাত্ত্বিক যুগ বিভাগ : প্রত্নতাত্ত্বিকগণ মানবসমাজ ও সভ্যতার বিকাশকে ৪টি ধাপে বা যুগে বিভক্ত করেছেন, যথা-
- প্রাচীন প্রস্তরযুগ
- নব্য প্রস্তরযুগ
- ব্রোঞ্জযুগ এবং
- লৌহযুগ।
প্রাচীন প্রস্তরযুগ
প্রস্তরযুগ বলতে পাথরের হাতিয়ার ব্যবহারের সংস্কৃতিকালকে বােঝায়। আর প্রাচীন প্রত্যযুগ বলতে সে যুগ বা কালকে বােঝায় যখন আদিম মানুষ ভোতা ও অমসৃণ পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত। প্রাচীন প্রস্তরযুগ আজ থেকে ৬ লক্ষ বছর পূর্বে আরম্ভ হয়েছিল এবং তা ১০ হাজার বছর পূর্বে শেষ হয়েছিল। প্রাচীন প্রস্তরযুগকে ৩ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা-
- নিম্ন প্রাচীন প্রস্তরযুগ
- মধ্য প্রাচীন প্রস্তরযুগ এবং
- উচ্চ প্রাচীন প্রস্তরযুগ
(ক) নিম্ন প্রাচীন প্রস্তরযুগ (৬০০০০০-১০০০০০) :
নিম্ন প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষ পানি সরবরাহের উৎস, শিকার করার উপযােগী খােলা স্থানে বসবাস করত। তারা পাথরের গায়ে নদীর গতিপথ খােদাই করে রাখত। নিম্ন প্রাচীন প্রত্যযুগের প্রথম দিকে মানুষ কাঁচা মাংস ভক্ষণ করত, কিন্তু কালক্রমে তারা আগুন জ্বালাবার কৌশল আয়ত্তে এনে মাংস আগুনের তাপে ঝলসে খেতে অভ্যাস করে। এ যুগের মানুষ হল জার্মানীতে প্রাপ্ত হাইডেলবার্গ, ইন্দোনেশিয়ার জাভা মানব এবং চীনের পিকিং মানব।
(খ) মধ্য প্রাচীন প্রস্তরযুগ (১০০০০০-৩০০০০) :
মধ্য প্রাচীন প্রত্যযুগ ১ লক্ষ বছর আগে শুরু হয় এবং ৩০ হাজার বছর পূর্বে শেষ হয়। পূর্বের তুলনায় এ যুগের মানুষ যেসব হাতিয়ার তৈরি করত তা ছিল অধিকতর সরু ও ধারালাে। মধ্য প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষ আগুনের ব্যবহার জানত। তারা গুহায় বসবাস করত এবং মানুষের মৃত্যু হলে হলুদ ও লাল রং মেখে মৃতদেহ কবর দিত।Inline Related Posts
এ যুগের মানুষ আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছিল। মৃত্যুর পরে আত্মা দেহে পুনরায় ফিরে আসে বলে তারা বিশ্বাস করত। এ বিশ্বাস থেকেই এ যুগের মানুষ কবরের মধ্যে খাদ্য, পানীয়, মৃতের ব্যবহার্য হাতিয়ার প্রভৃতি রেখে নানা রকম আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে কবর দিত। রুগ্ণ ও বয়স্কদের প্রতি যত্ন নেওয়ার রীতি এ সময় হতে চালু হয়েছিল।
(গ) উচ্চ প্রাচীন প্রস্তরযুগ (৩০০০০-১০০০০):
উচ্চ প্রাচীন প্রস্তরযুগের যাত্রা শুরু হয় প্রায় ৩০০০০ বছর পূর্বে এবং তা খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০০ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ যুগের মানুষেরা আরাে উন্নত ধরনের হাতিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হয়। আল নামক ছিদ্রকারী সুচ ক্ষেপণাস্ত্র ও কাঁটাবিশিষ্ট হাৰ্পন প্রভৃতি এ সময়ের উল্লেখযােগ্য হাতিয়ার। উচ্চ প্রাচীন প্রত্যযুগের মানুষ হল ক্রোম্যাগনন। এরা ছিল শিকারি। তারা গুহার দেয়ালে ছবি অঙ্কন করত।
এসব ছবির মধ্যে ধাবমান অবস্থায় বাইসন, ঘােড়া, হরিণ, প্রভৃতি জীবজন্তুর চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। তারা নানারকম অলংকার যেমন- হাতির দাঁত, পুঁতিজাতীয় গুটকা, হাড়, শামুক ও ঝিনুকের মালা ব্যবহার করত। এ যুগের মানুষ মৃত্যু, আত্মা, নিদ্রা প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছিল। মৃত্যু হলে আত্মা দেহ হতে চলে যায় বলে তাদের বিশ্বাস ছিল।
নব্য প্রস্তরযুগ
খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০০ অব্দের পূর্বেই এ যুগের সূচনা হয় মধ্যপ্রাচ্যে, পরে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এবং সর্বশেষে ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে ব্রিটেনে। সংস্কৃতি ও সভ্যতার ইতিহাসে নব্য প্রত্যযুগ একটি বৈপ্লবিক ঘটনা। অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য আবিষ্কারের দিক দিয়ে এ যুগের মানুষ অনেক উন্নতি সাধন করেছিল।
উৎপাদন ব্যবস্থা :
এ যুগের মানুষ উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রাচীন প্রস্তরযুগ অপেক্ষা অনেক উন্নতি সাধন করেছিল। তারা খাদ্য-সংগ্রহ অর্থনীতির স্থলে খাদ্য-উৎপাদন অর্থনীতির প্রবর্তন করে। ভূমি চাষও করে, গবাদিপশু পালন করে তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি খাদ্যসম্পদে নির্ভরশীল হয়ে ওঠে।
এ যুগে স্থানীয় প্রয়ােজন মেটাবার পরও বাড়তি খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয়। সর্ব প্রথম এশিয়া মাইনর বা ইরাক, ইরানের কোনাে স্থানে কৃষি আবাদ শুরু হয়। এ অঞ্চলের মানুষ সর্ব প্রথম গম, বার্লি, যব, কুমড়া, গােলআলু প্রভৃতি ফসল উৎপাদন করত। কৃষিতে উদ্বৃত্ত ফসল ফলায় সমাজে অনেকেই হস্তশিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি কাজে যােগ দেয়। ফলে এ সময়ে বাজার ও শহর গড়ে ওঠে। এজন্য ভি. গর্ডন চাইল্ড (Gordon Child) এ যুগকে নবপলীয় বিপ্লব নামে আখ্যা দেন।
আবিষ্কার :
এ যুগের মানুষ মসৃণ, ধারালাে ও উন্নত ধরনের পাথরের হাতিয়ার তৈরি করে। তারা উন্নত ধরনের চাকু, কুঠার, গাঁতি প্রভৃতি ব্যবহার করত। মানুষ এ সময় কুঠারের সঙ্গে হাতল লাগানাের কৌশল আয়ত্ত করেছিল। তখন কোদাল তৈরি করা হত। হরিণের শিং দিয়ে তৈরী গাঁইতি মাটি আলগা করার কাজে লাগাত। বর্শা ও তীরের সাহায্যে এ যুগের মানুষ দূরের পশুপাখি শিকার করত।
এ যুগে নিড়ানি ও গর্তকারীর উপকরণ (লাঠির) ব্যবহার ছিল আরেকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য। এ যুগের সর্বাপেক্ষা বড় আবিষ্কার হল চাকা। মাটির পাত্র তৈরি করার কাজে চাকা ব্যবহারের সাথে সাথে যন্ত্রশিল্পের সূত্রপাত হয়। তাছাড়া এ যুগের শেষের দিকে মানুষ লাঙল আবিষ্কার করে কৃষিকাজ শুরু করে। তাঁত এ যুগের আরাে একটি উল্লেখযােগ্য আবিষ্কার।
ধর্মীয় জীবন:
মধ্য প্রাচীন প্রস্তরযুগের ধর্মীয় রীতিনীতি তখনাে লােপ পায়নি। তখনকার মানুষ বিশ্বাস করত যে, আত্মা, প্রেতাত্মা, ঝড়-বজ্রপাত মানুষের অকল্যাণ করতে পারে। তারা অপদেবতা, আত্ম-প্রেতাত্মা বা অতিপ্রাকৃত শক্তির হাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য নানা রকম আচার-অনুষ্ঠানাদি পালন করত। এছাড়া তখনকার মানুষ রােগ, শােক, মৃত্যু বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে এসব হতে পরিত্রাণ লাভের আশায় জাদুকরের শরণাপন্ন হত।
মধ্য প্রাচীন প্রযুগ ও উচ্চ প্রাচীন প্রত্যযুগের মানুষের ন্যায় নব্য প্ৰযুগের মানুষেরা বিশ্বাস করত যে মানুষের মৃত্যুর পরে আত্মা দেহে পুনরায় ফিরে আসে। সেজন্য তারা মৃতদেহের সৎকার করার সময় কবরের মধ্যে খাদ্য, পানীয়, মৃতের ব্যবহার্য হাতিয়ার প্রভৃতি রেখে দিয়ে নানা প্রকার আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে কবর দিত। এছাড়া নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ প্রকৃতিপূজা যেমন- গাছপালা, পাহাড়-পর্বত, নদীনালা ইত্যাদির পূজা করত। কালক্রমে এ যুগে মানুষেরা ঈশ্বরপূজা করতে শুরু করে।
ব্রোঞ্জযুগ
খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩০০০ অব্দের মধ্যে মিসর, ভারত, মেসােপটেমিয়া এবং চীনে ব্রোঞ্জের ব্যবহার শুরু হয় এবং তা ১৪০০ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ যুগে মানুষ টিনের সঙ্গে তামা মিশিয়ে ব্রোঞ্জ তৈরি করত এবং তা দিয়ে অনেক উন্নতমানের হাতিয়ার তৈরি করত। এ যুগের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
(ক) ব্রোঞ্জ নির্মিত হাতিয়ার :
এ যুগের মানুষ ব্রোঞ্জের দ্বারা নানা ধরনের হাতিয়ার নির্মাণ শুরু করে। ব্রোঞ্জের নির্মিত বর্ম, শিরস্ত্রাণ, উরস্থান (Curass), তলােয়ার, বর্শা এবং তীর এ যুগের উল্লেখযােগ্য হাতিয়ার।
(খ) ব্যবসা-বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক রূপ :
ব্রোঞ্জযুগেই সর্ব প্রথম ব্যবসা-বাণিজ্য আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে। খ্রিষ্ট পূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে ভূমধ্যসাগর, আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে নিয়মিতভাবে পাল তােলা বড় বড় নৌকা যাতায়াত করত। সমুদ্রপথে যাতায়াতের জন্য মানুষ আকাশের তারা দেখে দিক নির্ণয় করত এবং এ সময় মানুষ সমুদ্র যাতায়াতের নিয়মকানুন চালু করেছিল।
(গ) স্থায়ী বসতি নির্মাণ :
ব্রোঞ্জযুগে মানুষ অধিক জনসমষ্টি মিলে বড় বড় স্থায়ী মানবসমাজ গড়ে তােলে। গাছের খুঁড়ির ওপর ঘরের ছাউনি দিয়ে ঘর নির্মাণ করত। এ যুগের শেষ দিকে মানুষ শবদাহ করার রীতি প্রচলন করে।
(ঘ) লিখন পদ্ধতির উন্নতি :
নব্য প্রস্তরযুগে যে লিখন পদ্ধতির সূত্রপাত হয়েছিল তা ব্রোঞ্জযুগে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল।
(ঙ) চাকা তৈরি :
চাকা আবিষ্কৃত হওয়ায় এ যুগের মানুষ চাকাওয়ালা গাড়ি যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করত।খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মেসােপটেমিয়া ও সিরিয়ায় যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী, যুদ্ধত প্রভৃতি নানা ধরনের চাকাওয়ালা গাড়ির প্রচলন শুরু হয়।
লৌহযুগ
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে মধ্যপ্রাচ্যে এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দে ব্রিটেনে লৌহের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। এশিয়া মাইনরে হিটটিদের (Hittites) মধ্যে সর্বপ্রথম লৌহশিল্পের ব্যবহার জানা যায়। এ যুগে লৌহনির্মিত কুঠার ও লাঙলের ফলা আবিষ্কার হওয়ায় অকর্ষিত ভূমি পরিষ্কার ও কৃষিকাজ আরাে সহজতর হয়। লােহার যন্ত্রপাতি ব্যবহারে জমির ফলন আগের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ লৌহ কৃষিতে আনে এক নবতর বিপ্লব।
আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি হচ্ছে লৌহ। বর্তমান যুগে হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি প্রধানত লৌহনির্মিত। যানবাহন তৈরিতে লৌহ ব্যবহারের ফলে যানবাহন ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ঘটে। ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণে লৌহের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। লৌহ দ্বারা নির্মিত প্রেস ও অক্ষর আবিষ্কৃত হওয়ায় ছাপাশিল্পের অভূতপূর্ব অগ্রগতি দেখা দেয়। পূর্বের সমাজব্যবস্থার চেয়ে এ সমাজব্যবস্থায় মানুষের মধ্যে অধিকতর যুক্তিনির্ভর ও বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনার বিকাশ ঘটে। অর্থাৎ লৌহযুগ মানেই আধুনিক সভ্যতার যুগ এবং এ যুগেই মানুষ আধুনিক সমাজব্যবস্থার প্রবর্তন করে।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সবার আগে সাজেশন আপডেট পেতে Follower ক্লিক করুন
১ম থেকে ৪৩তম বিসিএস প্রশ্ন ও সমাধান লিংক
Professor Primary Assistant Teacher book লিংক
ইংরেজি
বাংলা
বাংলা ব্যাকরণ
গণিত
সবার আগে Google News আপডেট পেতে Follower ক্লিক করুন
- প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সুপার সাজেশন ও উত্তর, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ভিত্তিক সাজেশন,প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সাজেশন,কম সময়ে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লিখিত পরীক্ষার সাজেশন,ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান
- শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার সাজেশন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (EEDMOE) উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ)’ ও ‘ড্রাফটসম্যান’ নিয়োগ পরীক্ষার সাজেশন