প্রশ্ন সমাধান: সাম্প্রদায়িকতা বলতে কী বুঝ? ঔপনিবেশিক শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতা উদ্ভবের কারণসমূহ বর্ণনা দাও, ঔপনিবেশিক শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ও বিকাশ
ভূমিকা : যেকোনো শান্তিকামী দেশের জন্য সাম্প্রদায়িকতা অভিশাপস্বরূপ । সাম্প্রদায়িকতা একটি জাতি ও দেশের সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থায় অশান্তির বীজ বপন করে। প্রাচীনকাল থেকে বাংলায় হিন্দু, মুসলিম সম্প্রদায় সৌহার্দের সাথে বসবাস করে আসছিল কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ভারতে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল এবং দীর্ঘমেয়াদি ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে সুকৌশলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব সৃষ্টি করে। হিন্দু সম্প্রদায়কে অধিক সুবিধা প্রদান করে ব্রিটিশরা, অপরদিকে মুসলমান সম্প্রদায়কে সন্দেহের চোখে দেখত ব্রিটিশ সরকার। এর ফলে মুসলমান সম্প্রদায় সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত হয় এবং পিছিয়ে পড়ে। বঞ্চনা থেকে শুরু হয় তিক্ততা, যার ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয়
সাম্প্রদায়িকতা। নিচে ঔপনিবেশিক শাসন আমলে সাম্প্রদায়িকতা উদ্ভবের কারণ উল্লেখ করা হলো :
সাম্প্রদায়িকতা : ব্রিটিশ সরকার ভারতে তাদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করার লক্ষ্যে সুকৌশলে হিন্দু, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের অবিশ্বাস করতো এবং হিন্দুদের সরকারি৷ চাকরিসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা প্রদান করতো। এর ফলে মুসলমানরা হিন্দু বিদ্বেষী হয়ে উঠে।
সাধারণভাবে সাম্প্রদায়িকতা বলতে ধর্মের নামে মাত্রাতিরিক্ত লক্ষ্যসিদ্ধির জন্য কাজ করাকে বুঝায়। ব্রিটিশ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করে, এর ফলে বাংলার মুসলমানরা বেশকিছু সুযোগ সুবিধা লাভ করে।
কিন্তু হিন্দুদের বিরোধিতার কারণে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায় বিদ্বেষী হয়ে উঠে । ব্রিটিশ সরকারের এরূপ কৌশলে ব্রিটিশ ভারতে বিভিন্ন সময়ে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা সংগঠিত হয়।
ঔপনিবেশিক শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব : ব্রিটিশদের শাসনামলে ভারতে নানা কারণে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ চরম রূপ লাভ করে ।
যথা :
১. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হলে লাভবান হন প্রধানত হিন্দু জমিদারগণ। অপরপক্ষে মুসলমানগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুসলমানরা ব্রিটিশ বিরোধী ছিল এবং শিক্ষিত জমিদার হিন্দুরা ব্রিটিশদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। যা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টিতে সহায়ক ছিল।
২. রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপন : ব্রিটিশরা ভারতে বিভেদ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দীর্ঘস্থায়ী করতে তৎপর হয়। যার ফলে তারা ভাগ কর, শাসন কর নীতি অনুসরণ করে। ভাগ কর, শাসন কর নীতির মাধ্যমে সুকৌশলে ব্রিটিশ
শাসকগণ বাংলার হিন্দু মুসলমান বিভেদ সৃষ্টি করেছিল যা সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়।
৩. সাম্রাজ্য স্থায়ী করা : ব্রিটিশ সরকার সাম্রাজ্য স্থায়ী করতে সাম্প্রদায়িক চেতনা সৃষ্টি করে। ইংরেজরা প্রথম থেকেই মুসলমানদের বিশ্বাস করতো না। কারণ ইংরেজরা মনে করতো যেহেতু মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে সুযোগ পেলে মুসলমানরা ক্ষমতা দখল করবে। যার ফলে ইংরেজদের শিক্ষা সংস্কৃতি জীবন চর্চা হিন্দুরা সহজে গ্রহণ করে। যা হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।
৪. পক্ষপাতদুষ্ট নীতি গ্রহণ : ঔপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন পক্ষপাতদুষ্ট নীতি গ্রহণ করেছিল। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় হিন্দুরা এগিয়ে যায় আর মুসলমানরা পিছিয়ে পড়ে। আর্থিক ব্যাপারে মুসলমান কৃষকগণ হিন্দু জমিদার ও ব্যবসায়ীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ঋণের দায়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে মুসলমান সম্প্রদায় জমি হারাতে থাকে। ফলে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হয়।
৫. হিন্দুদের ষড়যন্ত্র : ব্রিটিশ ভারতে অধিকাংশ কৃষক ও কারিগর ছিল মুসলমান। আর্থিক ও আইনের কাঠামোই অনেক ক্ষেত্রে মুসলমান সম্প্রদায় হিন্দুদের উপর নির্ভর করতো। এ সুযোগে হিন্দু ব্যবসায়ীর খপ্পড়ে পড়ে অশিক্ষিত ও অনগ্রসর মুসলমান কৃষকগণ সহায় সম্বল হারাতে থাকে যা সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়।
৬. মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব : ব্রিটিশরা মুসলমান শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে। ফলে ভারতীয় মুসলমানগণ ব্রিটিশদেরকে ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি। মুসলমানরা ছিল ব্রিটিশদের বিরোধী, অন্যদিকে হিন্দুরা ছিল ব্রিটিশদের সহায়ক শক্তি। যে কারণে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়।
৭. ধর্মভিত্তিক প্রতিষ্ঠান : ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতে বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। যেমন : হিন্দু মেলা, প্রতিষ্ঠান, বেনারসে হিন্দুরা উর্দুর পরিবর্তে হিন্দি ভাষা ব্যবহার শুরু করে। যার ফলে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়।
৮. ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি : ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হয়। হিন্দু সমাজসংস্কারক ও কবিসাহিত্যিকগণ হিন্দু জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে, মুসলিম সমাজ সংস্কারক ও আলেমগণ মুসলিম জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যা সাম্প্রদায়িকতার সূত্রপাত ঘটায়।
৯. কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা : ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে কংগ্রেস একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। অনেক ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত মুসলিম বিরোধী হয় যা সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি করে।
১০. মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা : ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগ মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর অধিকাংশ সদস্য মুসলিম ছিল। ফলে হিন্দু সম্প্রদায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
১১. বঙ্গভঙ্গ : ব্রিটিশরা ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করে মুসলমানদের সুবিধার জন্য। পূর্ব বাংলায় মুসলমান অধ্যুষিত হওয়ায় প্রশাসনিক কর্মসংস্থান ও আর্থিক সুবিধার জন্য মুসলমানগণ একে স্বাগত জানায় কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় এর তীব্র বিরোধিতা করলে শেষ পর্যন্ত ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। যা উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিভেদ সৃষ্টি করে।
১১. দ্বিজাতি তত্ত্ব : ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্ব উপস্থাপন করলে ঔপনিবেশিক শাসনামলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ চরম আকার ধারণ করে। যা শেষ পর্যন্ত দাঙ্গায় রূপ নেয়।
১২. বিভিন্ন মনীষীদের অবস্থান : রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ব্যক্তি ছিল হিন্দু মনীষী। তারা হিন্দু সম্প্রদায়কে হিন্দুত্ববাদে জাগ্রত করে। অন্যদিকে, সৈয়দ আহমদ খান, সৈয়দ আমীর আলী, নওয়াব আব্দুল লতিফসহ অনেক মনীষী মুসলমানদের স্বকীয় স্বার্থে জাগিয়ে তোলে। ফলে উভয় সম্প্রদায় মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
১৩. লাহোর প্রস্তাব ও পৃথক আবাসভূমি : ভারতে মুসলমান সম্প্রদায় লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মুসলমানরা পৃথক স্বাধীন আবাসভূমি দাবি করে। অন্যদিকে, হিন্দুরা ভারত বিভক্তিতে একেবারেই রাজি ছিল না।যার ফলে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠে। যা সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীনকাল থেকে হিন্দু-মুসলিমগণ ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাথে পাশাপাশি বসাবাস করে আসছিল। কিন্তুব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতে বিভক্তি সৃষ্টি করে ইংরেজরা সুকৌশলে ভারতকে শোষণ ও শাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘ করতে তৎপর ছিল। এর ফলে হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ঘটায় ভারতবর্ষে । যা শেষ পর্যন্ত ভারত বিভক্তি অনিবার্য করে তোলে।
রচনা ,প্রবন্ধ | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র ও Application | উত্তর লিংক | অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক |
চিঠি ও Letter | উত্তর লিংক | প্রতিবেদন | উত্তর লিংক |
ইমেল ও Email | উত্তর লিংক | সারাংশ ও সারমর্ম | উত্তর লিংক |
Paragraph | উত্তর লিংক | Composition | উত্তর লিংক |
CV | উত্তর লিংক | Seen, Unseen | উত্তর লিংক |
Essay | উত্তর লিংক | Completing Story | উত্তর লিংক |
Dialog/সংলাপ | উত্তর লিংক | Short Stories/Poems/খুদেগল্প | উত্তর লিংক |
অনুবাদ | উত্তর লিংক | Sentence Writing | উত্তর লিংক |
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- সোয়াপ (SWAP) কাকে বলে? , সোয়াপ (SWAP) কতো প্রকার বিস্তারিত আলোচনা করো
- ব্যবসায়িক ঝুকি বলতে কি বুঝায় উদাহরণ সহ আলোচনা করো
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization