সালাতের মধ্যে ‘আমিন’ উচ্চস্বরে বলা কি বৈধ?, এ ব্যাপারে ইমামদের অভিমত কী? প্রমাণসহ আলোচনা কর,মাযহাব উৎপত্তির কারণ কি কি ?, মাযহাবের উৎপত্তির কারণ বর্ণনা কর
নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করা অপরিহার্য। এটি ছাড়া নামাজ পরিপূর্ণ হয় না। এটি শেষ করার পর ‘আমিন’ বলতে হয়। কিন্তু এটি বলা সুন্নাত নাকি ওয়াজিব এ বিষয়ে ইমামদের মতবিরোধ রয়েছে।
নামাজে আমিন বলা সম্পর্কে ইমামদের অভিমত : নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠের পর ‘আমিন’ বলার ব্যাপারে তিনটি পর্যায়ে আলোচনা হতে পারে, যা নিম্নরূপ
১. হুকুমত: আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়ের একমত্যে নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠের পর ‘আমিন’ বলা মুস্তাহাব আহলে যাওয়াহেরের মতে, ওয়াজিব। পক্ষান্তরে, রাফেয়ী সম্প্রদায়ের মতে, বিদয়াত এবং এর ফলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে ।
২. অধিকারগত : ইমাম ‘আমিন’ বলবে না মুক্তাদিগণ বলবে, এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা ও মালেক (রহ.) বলেন, ইমাম আমিন বলবে না; বরং শুধু মুক্তাদিগণই বলবে। কেননা হযরত আবু হুয়াররা (রা.)-এর বর্ণিত হাদিসে, ইমাম বলবে এবং মুক্তাদিগণ বলবে ‘আমিন’ । এ হাদিস দ্বারা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, ইমামে অংশ হলো মার্গ, পর্যন্ত এবং মুক্তাদির অংশ হলো ‘আমিন’ বলা । ইমাম শাফেয়ী ও আহমদ (রহ.) বলেন, ইমামসহ মুক্তাদিগণ আমিন বলবেন। যেমন- অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ইমাম যখন আমিন বলবে তখন তোমরাও আমিন বলবে।
৩. উচ্চারণগত আলোচনা : আমিন চুপে চুপে নাকি উচ্চস্বরে বলতে, এ ব্যাপারে বক্তব্য হলো- যে নামাজে কেরাত নীরবে পড়তে হয়, সে নামাজে আমিনও নীরবে পড়তে হবে। এতে কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রকাশ্য কেরাতের ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে। যেমন—
ক. ইমাম আবু হানিফার অভিমত : ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, সর্বাবস্থায় ইমাম এবং মুক্তাদি উভয়ই নীরবে আমিন বলবে। দলিল :
১. রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন ইমাম বলবে- ৩); তখন তোমরা বল ‘আমিন’।
২. হযরত ওমর ও ইবনে মাসউদ (রা.) এর আমল বর্ণিত হাদিসে আছে- “তারা নামাজের চারটি বিষয় নীরবে পড়তেন। সেগুলো হচ্ছে – আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমিন ও সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ।
খ. ইমাম শাফেয়ী ও আহমদের অভিমত : ইমাম শাফেয়ী ও আহমদ (রহ.) বলেন, “সর্বাবস্থায় ইমাম এবং মুক্তাদি উভয়ে আমিন উচ্চঃস্বরে বলবে ।
দলিল : হযরত সুফিয়ান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) আমিন বললেন এবং স্বরকে দীর্ঘায়িত করলেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, স্বরকে উচ্চ করলেন ।
আরো ও সাজেশন:-
গ. ইমাম মালেকের অভিমত : ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ইমাম প্রকাশ্য কেরাতে ‘আমিন’ বলবে না বরং নীরব কেরাতে ‘আমিন’ নীরবে বলবে এবং মুক্তাদিও অনুরূপ করবে ।
বিরুদ্ধবাদীদের দলিলের প্রত্যুত্তর : ‘ইমাম যখন আমিন বলবে’ এ হাদিসের অর্থ হলো, ইমাম যখন বলে আমিন বলার নিকটবর্তী হবে, যখন তোমরা আমিন বলবে। অর্থাৎ তথা যখন আমিন বলার নিকটবর্তী হবে। এখানে । তথা রূপকভাবে বোধগম্য বিষয়কে সংক্ষিপ্ত করণার্থে
৩। বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয় হাদিস ‘রাসূল (সা.) আমিন বললেন এবং স্বরকে দীর্ঘায়িত করলেন’-এর জবাব হলো, এখানে – শব্দের অর্থ স্বরকে উচ্চ করা নয়; বরং ‘আমিন’ এর হামযাকে মদ সহকারে দীর্ঘায়িত ও লম্বা করে উচ্চারণ করা। আর যে বর্ণনায় অর্থাৎ ‘স্বরকে উচ্চ করেছেন’ আছে, এর জবাবে বলা হয়, এ বর্ণনাটি অনুবাদমূলক। অর্থাৎ হাদিস বর্ণনাকারী জড়ো করেছেন এবং ” এর অর্থ র্ডং বুঝেছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কেউ নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে ‘আমিন’ বলা সুন্নাত, আবার কেউ ওয়াজিব বলেছেন। তবে এটি পাঠ করলে অধিক ফজিলত এতে কোনো সন্দেহ নেই ।
মাযহাব উৎপত্তির কারণ : হানাফি মাযহাব মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মাযহাব হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ। এ মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হলেন নোমান ইবনে সাবিত আবু হানিফা (রহ.)।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
মাযহাব উৎপত্তির কারণ কি কি ?, মাযহাবের উৎপত্তির কারণ বর্ণনা কর।
ইসলামি শরিয়তের হুকুম-আহকাম পালনের জন্য মুসলমানগণ একজন ইমামের নেতৃত্বে যে পথ অনুসরণ করে তাকে মাযহাব বলে । ইসলামের ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে মুসলমানগণ নানা সমস্যার সম্মুখীন হন।
সে সকল সমাধানের জন্য যে সকল মুজতাহিদ আলেম কুরআন-সুন্নার গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ‘ইমাম আবু হানিফা (রহ.) (৮০ হিজরি ১৫০ হিজরি) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ তিনিই প্রথম কুরআন হাদিসের বিশ্লেষণ করে দুটোরই সার-নির্যাস (Essence) নিয়ে ফিক্হশাস্ত্র গঠন করেন। তাঁর গবেষণার ফলস্বরূপ একটি মাযহাব প্রতিষ্ঠালাভ করে, যা হানাফি মাযহাব নামে পরিচিত।