আজকের বিষয়: সূরা আদিয়াত সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল আদিয়াত আলমল ও ফজিলত
নামকরণ :
প্রথম শব্দ আল আদিয়াতকে ( আরবী —————-) এর নান হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
নাযিলের সময় – কাল
এই সূরাটির মক্কী বা মাদানী হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) , জাবের (রা) , হাসান বসরী , ইকরামা ও আতা বলেন , এটি মক্কী সূরা। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) ও কাতাদাহ একে মাদানী সূরা বলেন । অন্যদিকে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে দুই ধরনের মত উদ্ধৃত হয়েছে। তাঁর একটি মত হচ্ছে এটি মক্কী সূরা এবং অন্য একটি বক্তব্যে তিনি একে মাদানী সূরা বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সূরার বক্তব্য ও বর্ণনাভঙ্গী পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছে যে , এটি কেবল মক্কী সূরাই নয় বরং মক্কী যুগের প্রথম দিকে নাযিল হয়।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
মানুষ আখেরাতকে অস্বীকার করে অথবা তা থেকে গাফেল হয়ে কিভাবে নৈতিক অধপাতে যার একথা লোকদের বুঝানোই এই সূরাটির উদ্দেশ্য। এই সঙ্গে আখেরাতে কেবল মানুষের বাইরের কাজকর্মই নয়, তাদের মনের গোপন কথাগুলোও যাচাই – বাছাই করা হবে , এ সম্পর্কেও এই সূরায় তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
এ উদ্দেশ্যে আরবে সাধারণভাবে যে বিশৃংখলা ছড়িয়ে ছিল এবং যার ফলে সমগ্র দেশবাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল তাকে যুক্তি ও প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। সারা দেশের চতুর্দিকে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চলছিল। লুন্ঠন , রাহাজানী , এক গোত্রের ওপর অন্য গোত্রের আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। রাতে কোন ব্যক্তিও নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারতো না । কারণ সবসময় আশংকা থাকতো , এই বুঝি কোন দুশমন অতি প্রত্যুষে তাদের জনপদ আক্রমণ করে বসলো। দেশের এই অবস্থার কথা আরবের সবাই জানতো। তারা এসব ক্ষতি ও অনিষ্ট সম্পর্কে পুরোপুরি সজাগ ছিল। যার সবকিছু লুন্ঠিত হতো , সে এ অবস্থার জন্য মাতম করতো এবং যে লুন্ঠন করতো সে আনন্দে উৎফুল্ল হতো। কিন্তু এই লন্ঠনকারী আবার যখন লুন্ঠিত হতো , তখন সেও অনুভব করতো , এ কেমন খারাপ অবস্থার মধ্যে কেমন দুর্বিসহ জীবন আমরা যাপন করে চলেছি।
এ পরিস্থিতির ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে , মৃত্যুর পর পুনুজ্জীবন এবং সেখানে আল্লাহর সামনে জবাদিহি করার ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে মানুষ তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়েছে। সে আল্লাহর দেয়া ক্ষমতাগুলোকে জুলুম নিপীড়নের কাজে ব্যবহার করছে। সে ধন সম্পদের প্রেমে অন্ধ হয়ে তা অর্জন করার জন্য যে কোন অন্যায় , অসৎ ও গর্হিত পন্থা অবলম্বন করতে কুন্ঠিত হয় না। তা অবস্থা নিজেই সাক্ষ দিচ্ছে সে নিজের রবের দেয়া শক্তিগুলোর অপব্যবহার করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাহীনতার প্রকাশ করছে। যদি সে সেই সময়ের কথা জানতো যখন কবর থেকে জীবিত হয়ে আবার উঠতে হবে এবং যেসব ইচ্ছা , উদ্দেশ্য ও স্বার্থপ্রবণাতায় উদ্ধৃদ্ধ হয়ে সে দুনিয়ায় নানান ধরনের কাজ করেছিল সেগুলোকে তার মনের গভীর তলদেশ থেকে বের করে এনে সামনে রেখে দেয়া হবে , তাহলে সে এই দৃষ্টিভংগী ও কর্মনীতি কখনই অবলম্বন করতে পারতো না দুনিয়ায় কে কি করে এসেছে এবং কার সাথে কোন ধরনের ব্যবহার করা উচিত মানুষের রব সে সময় সেকথা খুব ভালোভাবেই জানবেন।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অনুবাদ পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
وَالْعَادِيَاتِ ضَبْحًا100.1
উচ্চারণ ১০০.১। অল্ ‘আ- দিয়া-তি দ্বোয়াব্হান্
অনুবাদ ১০০.১ কসম ঊর্ধশ্বাসে ছুটে যাওয়া অশ্বরাজির,
فَالْمُورِيَاتِ قَدْحًا100.2
উচ্চারণ ১০০.২। ফাল্ মূরিয়া-তি ক্বাদ্হান্
অনুবাদ ১০০.২ অতঃপর যারা ক্ষুরাঘাতে অগ্নি স্ফূলিঙ্গ ছড়ায়,
فَالْمُغِيرَاتِ صُبْحًا100.3
উচ্চারণ ১০০.৩। ফাল্মুগীর-তি ছুব্হান্
অনুবাদ ১০০.৩ অতঃপর যারা প্রত্যুষে হানা দেয়,
فَأَثَرْنَ بِهِ نَقْعًا100.4
উচ্চারণ ১০০.৪। ফাআর্ছানা-বিহী নাক্বআ’ন্।
অনুবাদ ১০০.৪ অতঃপর সে তা দ্বারা ধুলি উড়ায়,
فَوَسَطْنَ بِهِ جَمْعًا100.5
উচ্চারণ ১০০.৫। ফাওয়াসাতনা বিহী জ্বাম্‘আন্।
অনুবাদ ১০০.৫ অতঃপর এর দ্বারা শত্রুদলের ভেতরে ঢুকে পড়ে;
إِنَّ الْإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُودٌ100.6
উচ্চারণ ১০০.৬। ইন্নাল্ ইন্সা-না লিরব্বিহী লাকানূদ্।
অনুবাদ ১০০.৬ নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ।
وَإِنَّهُ عَلَى ذَلِكَ لَشَهِيدٌ100.7
উচ্চারণ ১০০.৭। অইন্নাহূ ‘আলা-যা-লিকা লাশাহীদ্।
অনুবাদ ১০০.৭ আর নিশ্চয় সে এর উপর (স্বয়ং) সাক্ষী হয়।
وَإِنَّهُ لِحُبِّ الْخَيْرِ لَشَدِيدٌ100.8
উচ্চারণ ১০০.৮। অইন্নাহূ লিহুব্বিল্ খইরি লাশাদীদ্।
অনুবাদ ১০০.৮ আর নিশ্চয় ধন-সম্পদের লোভে সে প্রবল।
أَفَلَا يَعْلَمُ إِذَا بُعْثِرَ مَا فِي الْقُبُورِ100.9
উচ্চারণ ১০০.৯। আফালা- ইয়া’লামু ইযা-বু’ছিরা মা-ফিল্ কুবুরি
অনুবাদ ১০০.৯ তবে কি সে জানে না যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে?
وَحُصِّلَ مَا فِي الصُّدُورِ100.10
উচ্চারণ ১০০.১০। অহুছছিলা মা-ফিছ্ ছুদূরি।
অনুবাদ ১০০.১০ আর অন্তরে যা আছে তা প্রকাশিত হবে।
إِنَّ رَبَّهُمْ بِهِمْ يَوْمَئِذٍ لَخَبِيرٌ 100.11
উচ্চারণ ১০০.১১। ইন্না রব্বাহুম্ বিহিম্ ইয়াওমায়িযিল লাখর্বী।
অনুবাদ ১০০.১১ নিশ্চয় তোমার রব সেদিন তাদের ব্যাপারে সবিশেষ অবহিত।