সূরা আনফাল সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল আনফাল আলমল ও ফজিলত, সূরা আনফাল কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা আনফাল নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ০৮ সূরা আল – আনফাল

আজকের বিষয়: সূরা আনফাল সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল আনফাল আলমল ও ফজিলত

নাযিলের সময়কাল

এ সূরাটি দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পর নাযিল হয়। ইসলাম ও কুফরের মধ্যে সংঘটিত এ প্রথম যুদ্ধের ওপর এতে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে সূরার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা -ভাবনা করলে অনুমান করা যায়, সম্ভবত এ সমগ্র সূরাটি একটি মাত্র ভাষনের অন্তরভুক্ত এবং একই সংগে এ ভাষণটি নাযিল করা হয়। তবে এর কোন কোন আয়াত বদর যুদ্ধ থেকে উদ্ধুত সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও পরে নাযিল হয়ে থাকতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে ভাষণের ধারাবাহিকতায় এগুলোকে উপযুক্ত স্থানে রেখে এ সমগ্র ভাষণটিকে একটি ধারবাহিক ভাষণের রূপ দান করা হযেছে। কিন্তু দু তিনটি আলাদা আলাদা ভাষণকে এ সাথে জুড়ে দিয়ে একটি অখণ্ড ভাষনে রূপান্তরিত করা হয়েছে বলে মনে হতে পারে এমন কোন জোড়ের সন্ধান এ সমগ্র ভাষণের কোথাও পাওয়া যাবে না।

ঐতিহাসিক পটভূমি

এ সূরাটি পর্যালোচনা করার আগে বদরের যুদ্ধ এবং তার সাথে সম্পর্কিত অবস্থা ও ঘটনাবলীর ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

নবী (সা) তাঁর দাওয়াতের প্রথম দশ বারো বছর মক্কা ময়াযময়ায় অবস্থান করেছিলেন। এ সময় তাঁর দাওয়াত যথেষ্ট পরিপক্কতা ও স্থিতিশীলতা অর্জন করেছিল। কারণ এর পেছনে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। ইসলামী দাওয়াতের পতাকাবাহী উন্নত চরিত্র ও বিশাল হৃদয়বৃত্তির অধিকারী এক জ্ঞানী পুরুষ। তিনি নিজের ব্যক্তি সত্তার সমস্ত যোগ্যতা ও সামর্থ এ কাজে নিয়োজিত করেছিলেন। তাঁর কার্যধারা থেকে এ সত্যটি পুরোপুরি সষ্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, এ আন্দোলনকে তার সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে দেবার জন্যে তিনি দৃঢ়সংকল্প । এ লক্ষে উপনীত হবার জন্যে পথের যাবতীয় বিপদ আপদ ও সংকট -সমস্যার মোকাবিলায় তিনি সর্বক্ষন প্রস্তুত। অন্যদিকে এ দাওয়াতের মধ্যে ছিল এমন এক অদ্ভুদ ও তীব্র আকর্ষণী ক্ষমতা যে, হৃদয় -মস্তিষ্কের গভীরে তার অনুপ্রবেশ কার্য চলছিল দ্রুত ও অপ্রতিহত গতিতে। মুর্খতা ও অজ্ঞতার অন্ধকার এবং হিংসা ও সংকীর্ণ স্বার্থপ্রতির প্রাচীন তার পথ রোধ করতে পারছিল না। এ কারণে আরবের প্রাচীন জাহেলী ব্যবস্থার সমর্থক শ্রেনী প্রথম দিকে একে হালকাভাবে এবং অবজ্ঞার চোখে দেখলেও মক্কী যুগের শেষের দিকে একে একটি গুরুতর বিপদ বলে মনে করেছিল। একে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে তারা নিজেদের পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তখনো পর্যন্ত এ দাওয়াতের মধ্যে কোন কোন দিক দিয়ে বেশ কিছুটা অভাব রয়ে গিয়েছিল।

একঃ তখনো একথা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি যে, এমন ধরনের যথেষ্ট সংখ্যক অনুসারী এ দাওয়াতের পতাকা তলে সমবেত হয়েছে যারা শুধু তার অনুগতই নয় বরং তার নীতিকে মনেপ্রাণে ভালও বাসে তাকে বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে নিজেদের সর্বশক্তি ও সকল উপায় উপকরণ ব্যয় করতে প্রস্তুত এবং এ জন্যে নিজেদের সব কিছু কুরবানী করে দিতে, সারা দুনিয়ার সাথে লড়াই করতে এমন কি নিজেদের প্রিয়তম আত্মীয়তার বাঁধনগুলো কেটে ফেলতে ও উদগ্রিব। যদিও মক্কার ইসলামের অনুসারীরা কুরাইশদের জুলুম -নির্যাতন বরদাশত করে নিজেদের ঈমানের অবিচলতা ও নিষ্ঠা এবং ইসলামের সাথে তাদের অটুট সম্পর্কের পক্ষে বেশ বড় আকারের প্রমাণ পেশ করেছিল, তবুও একথা প্রমাণিত হওয়া তখনো বাকী ছিল যে, ইসলামী আন্দোলন এমন একদল উৎসর্গীত প্রাণ অনুসারী পেয়ে গেছে যারা নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষের মোকাবিলায় অন্য কোন জিনিসকেই প্রিয়তর মনে করে না। বস্তুত একথা প্রমাণ করার জন্যে তখনো অনেক পরীক্ষারও প্রয়োজন ছিল।

দুইঃ এ দাওয়াতের আওয়াজ সারাদেশ ছড়িয়ে পড়লেও এর প্রভাবগুলো ছিল চারদিকে বিক্ষিপ্ত ও অসংহত। এ দাওয়াত যে জনশক্তি সংগ্রহ করেছিল তা এলোমেলো অবস্থায় সারাদেশে ছড়িয়ে ছিল। পুরাতন জাহেলী ব্যবস্থার সাথে চূড়ান্ত মোকাবিলা করার জন্যে যে ধরনের সামষ্টিক শক্তির প্রয়োজন ছিল তা সে তখনো অর্জন করেনি।

তিনঃ এ দাওয়াত তখনো মাটিতে কোথাও শিকড় গাড়তে পারেনি। তখণো তা কেবল বাতাসেই উড়ে বেড়াচ্ছিল। দেশের অভ্যন্তরে এমন কোন এলাকা ছিল না যেখানে দৃঢ়পদ হয়ে নিজের ভূমিকাকে সুসংহত করে সে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার জন্যে প্রচেষ্টা চালাতে পারতো। তখনো পর্যন্ত যেখানেই যে মুসলমান ছিল, কুফর ও শিরকে নিমজ্জিত সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে তার অবস্থান ছিল ঠিক খালি পেটে গেলা , কুইনিনের মত। অর্থাৎ খালি পেটে কুইনিন গিললে পেট তাকে বমি করে উগরে দেবার জন্যে সর্বক্ষণ চাপ দিতে থাকে এবং কোথাও তাকে এক দণ্ড তিষ্টাতে দেয় না।

চারঃ সে সময় পর্যন্ত এ দাওয়াত বাস্তব জীবনের কার্যাবলী নিজের হাতে পরিচালনা করার সুযোগ পায়নি। তখনো সে তার নিজস্ব সভ্যতা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়নি। নিজস্ব অর্থনৈতিক, সামাজিক, ও রাজনৈতিক , ব্যবস্থা রচনাও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। অন্যান্য শক্তির সাথে তার যুদ্ধ ও সন্ধির কোন ঘটনাই ঘটেনি। তাই যেসব নৈতিক বিধানের ভিত্তিতে এ দাওয়াত সমগ্র দেশ ও সমাজকে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত করতে চাচ্ছিল তার কোন প্রদর্শনীও করা যায়নি। আর এ দাওয়াতের বানী বাহক ও তার অনুসারীরা যে জিনিসের দিকে সমগ্র দুনিয়াবাসীকে আহবান জানিয়ে আসছিলেন তাকে কার্যকর করার ব্যাপারে তারা নিজেরা কতটুকু নিষ্ঠাবান, এখনো কোন পরীক্ষার মানদণ্ডে যাচাই বাছাই করার পর তার সুষ্পষ্ট চেহারাও সামনে আসেনি।

মক্কী যুগের শেষ তিন-চার বছরে ইয়াসরেবে ইসলামের আলো ছড়িয়ে থাকে অপ্রতিহত গতিতে। সেখানকার লোকেরা আরবের অন্যান্য এলাকার গোত্রগুলোর তুলনায় অধিকতর সহজে ও নির্দ্বিধায় এ আলো গ্রহণ করতে থাকে।শেষে নবুওয়াতের দ্বাদশ বছরে হজ্জের সময় ৭৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল রাতের আঁধারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাত করলো, তারা কেবল ইসলাম গ্রহণই করেননি বরং তাকে ও তার অনুসারীদেরকে নিজেদের শহরে স্থান দেয়ার ও আগ্রহ প্রকাশ করলেন। এটি ছিল ইসলামের ইতিহাসের একটি বৈপ্লবিক পটপরিবর্তন। মহান আল্লাহ তার নিজ অনুগ্রহে এ দুর্লভ সুযোগটি দিয়েছিলেন এবং নবী (সা) ও হাত বাড়িয়ে তা লুফে নিয়েছিলেন। ইয়াসরেববাসীরা নবী(সা) কে শুধুমাত্র একজন শরণার্থী হিসেবে নয় বরং আল্লাহর প্রতিনিধি এবং নেতা ও শাষক হিসেবেও আহবান করেছিলেন। আর তার অনুসারীদেরকে তারা একটি অপরিচিতি দেশে নিছক মুহাজির হিসেবে বসবাস করার জন্যে আহবান জানাচ্ছিলেন না। বরং আরবের বিভিন্ন এলাকায় ও বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে যেসব মুসলমানদের সাথে মিলে একটি সুসংবদ্ধ সমাজ গড়ে তোলাই ছিল এর উদ্দেশ্য। এভাবে মূলত ইয়াসরেব নিজেকে মদীনাতুল ইসলাম তথা ইসলামের নগর হিসেবে উপস্থাপিত করলো। নবী(সা) তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে সেখানে আরবের প্রথম দারুল ইসলাম গড়ে তুললেন।

এ ধরনের উদ্যেগ গ্রহণের অর্থ কি হতে পারে সে সম্পর্কে মদীনাবাসীরা অনবহিত ছিল না। এর পরিস্কার অর্থ ছিল, একটি ছোট্র শহর সারাদেশের উদ্যত তরবারি এবং সমগ্র দেশবাসীর অর্থনৈতিক, সামাজিক , ও সাংস্কৃতিক বয়কটের মোকাবিলায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। কাজেই আকাবার বাইআত গ্রহণ করার সময় সেদিনের সেই রাত্রীকালীন মজলিসে ইসলামের প্রাথমিক সাহায্যকারী (আনসারগণ) এ পরিণাম সম্পর্কে পুরোপুরি জেনে বুঝেই নবী (সা) এর হাতে নিজেদের হাত রেখেছিলেন। যখন এ বাইআত অনুষ্ঠিত হচ্ছিল ঠিক তখনই ইয়াসরেবী প্রতিনিধি দলের সর্বকনিষ্ঠ যুব সদস্য আস’আদ ইবনে যুরারাহ (রা) উঠে বললেনঃ

—————————–

“থামো, হে ইয়াসরেব বাসীরা ! আমরা একথা জেনে বুঝেই এঁর কাছে এসেছি যে, ইনি আল্লাহর রসূল এবং আজ এখান থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া মানে হচ্ছে সমগ্র আরববাসীর শত্রুতার ঝুঁকি নেয়া। এর ফলে তোমাদের শিশু সন্তানদেরকে হত্যর করা হবে এবং তোমাদের ওপর তরবারি বর্ষিত হবে। কাজেই যদি তোমাদের এ আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা থাকে তাহলে এঁর দায়িত্ব গ্রহণ করো। আল্লাহ এর প্রতিদান দেবেন। আর যদি তোমরা নিজেদের প্রাণকে প্রিয়তর মনে করে থাকো তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দাও এবং পরিষ্কার ভাষায় নিজেদের অক্ষমতা জানিয়ে দাও। কারণ এ সময় অক্ষমতা প্রকাশ করা আল্লাহর কাছে বেশী গ্রহণযোগ্য হতে পারে”।

প্রতিনিধি দলের আর একজন সদস্য আব্বাস ইবনে উবাদাহ ইবনে নাদলাহ (রা) একথারই পুনরাবৃত্তি করেন এভাবেঃ

——————————-

“তোমরা কি জানো, এ ব্যক্তির হাতে কিসের বাইআত করছো? (ধ্বনিঃ হাঁ আমরা জানি) তোমরা এঁর হাতে বাইআত করে সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঝুঁকি নিচ্ছো।কাজেই যদি তোমরা মনে করে থাকো, যখন তোমাদের ধন-সম্পদ ধ্বংসের মুখোমুখি হবে এবং তোমাদের নেতৃস্থানীয় লোকদের নিহত হবার আশংকা দেখা দেবে তখন তোমরা এঁকে শত্রুদের হাতে সোপর্দ করে দেবে, তাহলে আজই বরং এঁকে ত্যাগ করাই ভাল। কারণ আল্লাহর কসম,এটা দুনিয়ায় ও আখেরাতের সবখানেই লাঞ্চনার কারণ হবে। আর যদি তোমরা মনে করে থাকো, এ ব্যক্তিকে তোমরা যে, আহবান জানাচ্ছো, নিজেদের ধন-সম্পদ ধ্বংস ও নেতৃস্থানীয় লোকেদের জীবন নাশ সত্ত্বেও তোমরা তা পালন করতে প্রস্তুত থাকবে, তাহলে অবশ্যি তাঁর হাতে আকড়ে ধরো। কারণ আল্লাহর কসম, এরই মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ”।

একথায় প্রতিনিধি দলের সবাই এক বাক্যে বলে উঠলেনঃ

————————————-

“আমরা এঁকে গ্রহণ করে আমাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করতে ও নেতৃস্থানীয় লোকদের নিহত হবার ঝুকি নিতে প্রস্তুত”।

এ ঘটনার পর সেই ঐতিহাসিক বাইআত অনুষ্ঠিত হয়। ইতিহাসে একে আকাবার দ্বিতীয় বাইআত বলা হয়।

অন্যদিকে মক্কাবাসীদেরক কাছেও এ ঘটনাটির তাৎপর্য ছিল সুবিদিত। ইতিপূর্বে কুরাইশরা মুহাম্মাদ (সা) এর বিপুল প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ও অসাধারণ যোগ্যতার সাথে পরিচিত হয়েছিল এবং এখন সেই মুহাম্মাদই (সা) যে, একটি আবাস লাভ করতে যাচ্ছিলেন তা তারা বেশ অনুধাবন করতে পারছিল। তাঁর নেতৃত্বে ইসলামের অনুসারীরা যে একটি সুসংগঠিত দলের আকারে অচিরেই গড়ে উঠবে এবং সমবেত হবে একথাও তারা বুঝতে পারছিল। আর ইসলামের এ অনুসারীরা সংকল্পে কত দৃঢ়, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগে কত অবিচল, এতদিনে সেটা তাদের কাছে অনেকটা পরীক্ষিত হয়ে গিয়েছিল। এহেন সত্যাভিসারী কাফেলার এ নব উত্থান পুরাতন ব্যবস্থার জন্যে মৃত্যুর ঘন্টাস্বরূপ। তাছাড়া মদীনার মত জায়গায় এই মুসলিম শক্তির একত্র সমাবেশ কুরাইশদের জন্যে আরো নতুন বিপদের সংকেত দিচ্ছিল। কারণ লোহিত সাগরের কিনারা ধরে ইয়ামন থেকে সিরিয়ার দিকে যে বানিজ্য পথটি চলে গিয়েছিল তার সংরক্ষিত ও নিরাপদ থাকার ওপর কুরাইশ ও অন্যাণ্য বড় বড় গোত্রের অর্থনৈতিক জীবন নির্ভরশীল ছিল। আর এটি এখন মুসলমানদের প্রভাবাধীনে চলে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। এ প্রধান বাণিজ্য পথটি দখল করে মুসলমানরা জাহেলী ব্যবস্থার জীবন ধারণ দুর্বিসহ করে তূলতে পারতো।এ প্রধান বাণিজ্য পথের ভিত্তিতে শুধু মাত্র মক্কাবাসীদের যে ব্যবসায় চলতো তার পরিমাণ ছিল বছরে আড়াই লাখ আশরাফী। তায়েফ ও অন্যান্য স্থানের ব্যবসায় ছিল এর বাইরে।

কুরাইশরা এ পরিণতির কথা ভালভাবেই জানতো। যে রাতে আকাবার বাইআত অনুষ্ঠিত হলো সে রাতেই এ ঘটনার উড়ো খবর মক্কাবাসীদের কানে পৌছে গোলো। আর সাথে সাথেই সেখানে হৈ চৈ শুরু হয় গেলো। প্রথমে তারা চেষ্টা করলো মদীনাবাসীদেরকে নবী (সা) এর দল থেকে ভাগিয়ে নিতে। তারপর যখন মুসলমানরা একজন দুজন করে মদিনায় হিজরত করতে থাকলো এবং কুরাইশদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেলো যে, এখন মুহাম্মাদ (সা) সেখানে স্থানন্তরিত হয়ে যাবেন তখন তারা এ বিপদকে ঠেকিয়ে রাখার জন্যে সর্বশেষ উপায় অবলম্বনে এগিয়ে এলো। রসূলের (সা) হিজরতের মাত্র কয়েক দিন আগে কুরাইশদের পরিমর্শ সভা বসলো। অনেক আলোচনা পর্যালোচানার পর সেখানে স্থির হলো, বনী হাশেম ছাড়া কুরাইশদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে লোক বাচাই করা হবে এবং এরা সবাই মিলে মুহাম্মাদ (সা)কে হত্যা করবে। এর ফলে বনী হাশেমের জন্যে এ সমস্ত গোত্রের সাথে একাকী লড়াই করা কঠিন হবে। কাজেই এ ক্ষেত্রে তারা প্রতিশোধের পরিবর্তে রক্ত মূল্য গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানী এবং নবী (সা) এর আল্লাহর ওপর নির্ভরতা ও উন্নত কৌশল অবলম্বনের কারণে তাদের সব চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেলো। ফলে রসূলুল্লাহ (সা)নির্বিঘ্নে মদীনায় পৌছে গেলেন।এভাবে হিজরত প্রতিরোধ ব্যর্থ হয়ে কুরাইশরা মদীনার সরদার আবুদুল্লাহ ইবনে উবাই কে(যাকে হিজরতের আগে মদীনাবাসীরা নিজেদের বাদশাহ বানাবার প্রস্তুতি নিয়েছিল এবং রসূলের মদীনায় পৌছে যাবার এবং আওস ও খাযরাজদের অধিকাংশের ইসলাম গ্রহণের ফলে যার বাড়া ভাতে ছাই পড়ে গিয়েছিল) পত্র লিখলোঃ তোমারা আমাদের লোককে তোমাদের ওখানে আশ্রয় দিয়েছো। আমরা এ মর্মে আল্লাহর কসম খেয়েছি, হয় তোমরা তার সাথে লড়বে বা তাকে সেখান থেকে বের করে দেবে। অন্যথায় আমরা সবাই মিলে তোমাদের ওপর আক্রমণ করবো এবং তোমাদের পুরুষদেরকে হত্যা ও মেয়েদেরকে বাদী বানাবো। কুরাইশদের এ উষ্কানির মুখে আবুদুল্লাহ ইবনে উবাই কিছু দুষ্কর্ম করার চক্রান্ত এঁটেছিল। কিন্তু সময় মত নবী (সা) তার দুষ্কর্ম রুখে দিলেন। তারপর মদীনার প্রধান সাদ ইবনে মুআয উমরাহ করার জন্যে মক্কা গেলেন । সেখানে হারম শরীফের দরজার ওপর আবু জেহেল তার সমালোচনা করে বললোঃ

——————————-

“তোমরা আমাদের ধর্মত্যাগীদের আশ্রয় দেবে এবং তাদেরকে সাহায্য -সহযোগীতা দান করবে আর আমরা তোমাদেরকে অবাধে মক্কায় তাওয়াফ করতে দেবো ভেবেছ?যদি তুমি আবু সফওয়ান তথা উমাইয়া ইবনে খলফের মেহমান না হতে তাহলে তোমাকে এখান থেকে প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরে যেতে দিতাম না”।

সাদ জবাবে বললেনঃ

————————————–

“আল্লাহর কসম, যদি তুমি আমাকে এ কাজে বাধা দাও তাহলে আমি তোমাকে এমন জিনিস থেকে রুখে দেবো, যা তোমার জন্যে এর চাইতে অনেক বেশী মারাত্মক। অর্থাৎ মদীনা দিয়ে তোমাদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেবো” ।

অর্থাৎ এভাবে মক্কাবাসীদের পক্ষ থেকে যেন একথা ঘোষণা করে দেয়া হলো যে, বায়তুল্লাহ যিয়ারত করার পথ মুসলমানদের জন্যে বন্ধ। আর এর জবাবে মদীনাবাসীদের পক্ষ থেকে বলা হলো, সিরিয়ার সাথে বাণিজ্য করার পথ ইসলাম বিরোধীদের জন্যে বিপদসংকুল।

আসলে সে সময় মুসলমানদের জন্য উল্লেখিত বাণিজ্য পথের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব মজবুত করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় ছিল না। কারণ এ পথের সাথে কুরাইশ ও অন্যান্যগোত্রগুলোর স্বার্থ বিজড়িত ছিল। ফলে এর ওপর মুসলমানদের কৃত্বৃত্ব বেশী মজবুত হলে তারা ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে নিজেদের শত্রুতামূলক নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হতে পারে বলে আশা করা যায়। কাজেই মদীনায় পৌছার সাথে সাথেই নবী (সা) সদ্যজাত ইসলামী সমাজে প্রাথমিক নিয়ম -শৃংখলা বিধান ও মদীনার ইহুদী অদিবাসীদের সাথে চুক্তি সম্পাদন করার পর সর্বপ্রথম এ বাণিজ্য পথটির প্রতি নজর দিলেন। এ ব্যাপারে তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা অবলম্বন করলেন।

প্রথমত মদীনা ও লোহিত সাগরের উপকূলের মধ্যবর্তীস্থলে এ বাণিজ্য পথের আশেপাশে যেসব গোত্রের বসতি ছিল তাদের সাথে তিনি আলাপ- আলোচনা শুরু করে দিলেন। এভাবে তাদেরকে সহযোগিতামূলক মৈত্রী অথবা কমপক্ষে নিরপেক্ষতার চুক্তিতে আবদ্ধ করা ছিল মূল উদ্দেশ্য । এ ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণ সাফলতা লাভ করলেন। সর্বপ্রথম নিরপেক্ষতার চুক্তি অনুষ্ঠিত হলো সাগর তীরবর্তী পার্বত্র এলাকার জুহাইনা গোত্রের সাথে। এ গোত্রটির ভূমিকা এ এলাকায় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারপর প্রথম হিজরীর শেষের দিকে চুক্তি অনুষ্ঠিত হলে বনী যামরার সাথে। এ গোত্রটির অবস্থান ছিল ইয়াম্বু ও যুল আশীরার সন্নিহিত স্থানে এটি ছিল প্রতিরক্ষামূলক সহযোগিতার চুক্তি। দ্বিতীয় হিজরীর মাঝামাঝি সময়ে বনী মুদলিজও এ চুক্তিতে শামিল হলো। কারণ এ গোত্রটি ছিল বনী যামরার প্রতিবেশী ও বন্ধু গোত্র। এ ছাড়াও ইসলাম প্রচারের ফলে এ গোত্রগুলোতে ইসলামের সমর্থক ও অনুসারীদের একটি বিরাট গোষ্ঠি সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল।

দ্বিতীয়ত কুরাইশদের সওদাগরী কাফেলাগুলোকে ভীত -সন্ত্রস্ত করে তোলার জন্যে বাণিজ্য পথের ওপর একের পর এক ছোট ছোট ঝাটিকা বাহিনী পাঠাতে থাকলেন।কোন কোন ঝাটিকা বাহিনীর সাথে তিনি নিজেও গেলেন। প্রথম বছর এ ধরনের ৪টি বাহিনী পাঠানো হলো। মাগাযী (যুদ্ধ ইতিহাস) গ্রন্থগুলো এগুলোকে সারীয় হামযা, সারীয়া, উবাইদা ইবনে হারেস, সারীয়া সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ও গাযওয়া তুল আবওয়া নামে অভিহিত করা হয়েছে। ১ দ্বিতীয় বছরের প্রথম দিকের মাসগুলোর একই দিকে আরো দুটি আক্রমণ চালানো হলো। মাগাযী গ্রন্থগুলোয় এ দুটিকে গাযওয়া বুওয়াত ও গাযওয়া যুল আশারী নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সমস্ত অভিযানের দুটি বৈশিষ্ট উল্লেখযোগ্য । এক, এ অভিযানগুলোয় কোন রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি এবং কোন কাফেলা লুণ্ঠিত ও হয়নি। এ থেকে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এর মাধ্যমে কুরাইশদেরকে বাতাসের গতি কোন দিকে তা জানিয়ে দেয়াই ছিল আসল উদ্দেশ্য। দুই , এর মধ্য থেকে কোন একটি বাহিনীতেও নবী (সা) মদীনার একটি লোককেও শামিল করেননি। মক্কা থেকে আগত মুহাজিরদেরকেই তিনি এসব বাহিনীর অন্তরভুক্ত করেন। কারণ এর ফলে যদি সংঘর্ষ বাধে তাহলে তা যেন এর সাথে চড়িয়ে পড়ে এ আগুনকে চারদিকে ছাড়িয়ে না দেয়। ওদিকে মক্কাবাসীরাও মদীনার দিকে লুটেরা বাহিনী পাঠাতে থাকে। তাদেরই একটি বাহিনী কুরয ইবনে জাবের আল ফিহরীর নেতৃত্বে একেবারে মদীনার কাছাকাছি এলাকায় হামলা চালিয়ে মদীনাবাসীদের গৃহপালিত পশু লুট করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে কুরাইশরা এ সংঘর্ষের মধ্যে অন্যান্য গোত্রদেরকেও জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। তাছাড়া তারা কেবল ভয় দেখিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছিল না , লুটতরাজও শুরু করে দিয়েছিল।

এ অবস্থায় ২য় হিজরীর শাবান মাসে(৬২৩ খৃষ্টব্দের ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাস)কুরাইশদের একটি বিরাট বানিজ্য কাফেলা সিরিয়া থেকে মক্কার পথে অগ্রসর হয়ে এমন এক জায়গায় পৌছে গিয়েছিল যে জায়গাটি ছিল মদীনাবাসীদের আওতার মধ্য। এ কাফেলার সাথে ছিল প্রায় ৫০ হাজার আশরাফীর সামগ্রী। তাদের সাথে তিরিশ চল্লিশ জনের বেশী রক্ষী ছিল না। যেহেতু পণ্যসামগ্রী ছিল বেশী এবং রক্ষীর সংখ্যা ছিল কম আর আগের অবস্থার কারণে মুসলমানদের কোন শক্তিশালী দলের তাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করার আশংকা ছিল অত্যন্ত প্রবল, তাই কাফেলা সরদার আবু সুফিয়ান এ বিপদ সংকুল স্থানে পৌছেই সাহায্য আনার জন্য কোন এক ব্যক্তিকে মক্কা অভিমূখে পাঠিয়ে দিল। লোকটি মক্কায় পৌছেই প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী নিজের উটের কান কেটে ফেললো, তার নাক চিরে দিল, উটের পিঠের আসন উল্টে দিলে এবং নিজের জামা সামনের দিকে ও পিছনের দিকে ছিড়ে ফেলে এই বলে চিৎকার করতে থাকলোঃ

——————————-

১.ইসলামের ইতিহাসের পরিভাষায় সীরিয়া বলা হয় এমন ধরনের ছোটখাট বাহিনীকে যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সাহাবীর নেতৃত্বে পাঠিয়ে ছিলেন আর যে বাহিনীতে তিনি নিজে গিয়েছিলেন তাকে বলা হয় গাযওয়া।

“হে কুরাইশরা! তোমাদের বাণিজ্য কাফেলার খবর শোনো। আবু সুফিয়ানের সাথে তোমাদের যে সম্পদ আছে, মুহাম্মাদ তার সঙ্গীসাথীদের নিয়ে তার পেছনে ধাওয়া করেছে। তোমাদের তা পাবার আশা নেই। সাহায্যের জন্যে দৌড়ে চলো! সাহায্যের জন্যে দৌড়ে চলো”।!

এ ঘোষনা শুনে সারা মক্কার বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে গোলো। কুরাইশদের বড় বড় সরদাররাই সবাই যুদ্ধের জন্যে তৈরী হলো। প্রায় এক হাজার যোদ্ধা রণসাজে সজ্জিত হয়ে পূর্ণ আড়ম্বর ও জাঁক -জমকের সাথে যুদ্ধ ক্ষেত্রে রওয়ানা হলো। তাদের মধ্যে ছিল ৬শ বর্মধারী এবং একশ জন অশ্বারোহী। নিজেদের কাফেলাকে শুধু নিরাপদে মক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে আসাই তাদের কাজ ছিল না বরং এই সংগে তারা নিত্য দিনের এ আশংকা ও আতংকবোধকে চিরতরে খতম করে দিতে চাচ্ছিল। মদীনায় এ বিরোধী শক্তির নতুন সংযোজনকে তারা গুড়িয়ে দিতে এবং এর আশপাশের গোত্রগুলোকে এর দূর সন্ত্রন্ত করে তুলতে চাচ্ছিল যার ফলে ভবিষ্যতে এ বানিজ্য পথটি তাদের জন্যে সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়ে যায়।

নবী (সা) চলমান ঘটনাবলীর প্রতি সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। তিনি উদ্ভুত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটি অনুভব করলেন যেন চূড়ান্ত মীমাংসার সময় এসে গেছে। তিনি ভাবলেন এ সময় যদি একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তাহলে ইসলামী আন্দোলন চিরকালের জন্যে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়বে। বরং এরপর এ আন্দোলনের জন্যে হয়ত আবার মাথা উচু করে দাড়াবার আর কোন সুযোগই থাকবে না। মক্কা থেকে হিজরত করে এ নতুন শহরে আসার পর এখনো দুটি বছরও পার হয়ে যায়নি। মুহাজিররা বিত্ত ও সরঞ্জামহীন, আনসাররা অনভিজ্ঞ , ইহুদীগোত্রগুলো বিরুদ্ধাবাদিতায় মুখর খোদ মদীনাতেই মুনাফিক ও মুশরিকদের একটি বিরাট গোষ্ঠি উপস্থিত এবং চারপাশের সমস্ত গোত্র কুরাইশদের ভয়ে ভীত। আর সেই সংগে ধর্মীয় দিক দিয়েও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এ অবস্থায় যদি কুরাইশরা মদীনা আক্রমণ করে তাহলে মুসলমানদের এ ক্ষুদ্র দলটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যদি তারা মদীনা আক্রমণ না করে শুধু মাত্র নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করে বাণীজ্য কাফেলাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং মুসলমানরা দমে গিয়ে ঘরের কোণে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকে তাহলেও সহসাই মুসলমানদের প্রতিপত্তি এমনভাবে আহত হবে এবং তাদের প্রভাব এত বেশী ক্ষুণ্ন হবে যার ফলে আরবের প্রতিটি শিশুও তাদের বিরুদ্ধে দুঃসাহসী হয়ে উঠবে। সারা দেশে তাদের কোন আশ্রয় স্থল থাকবে না। তখন চারপাশের সমস্ত গোত্র কুরাইশদের ইংগিতে কাজ করতে থাকবে। মদীনার ইহুদী , মুনাফীক ও মুশরিকরা প্রকাশ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। মদীনায় জীবন ধারণ করাও সে সময় দুসাধ্য হয় পড়বে। মুসলমানদের কোন প্রভাব প্রতিপত্তি থাকবে না। ফলে তাদের ধন-প্রাণ-ইজ্জত -আবরুর উপর আক্রমন চালাতে কেউ ইতস্তত করবে না। এ কারণে (সা) দৃঢ় সংকল্প নিলেন যে, বর্তমানে যতটুকু শক্তি -সামর্থ আমাদের আছে তাই নিয়েই আমরা বের হয়ে পড়বো।দুনিয়ার বুকে বেঁচে থাকার ও টিকে থাকার ক্ষমতা কার আছে এবং কার নেই ময়দানেই তার ফায়সালা হয়ে যাবে।

এ চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবার সংকল্প করেই তিনি আনসার ও মোহাজিরদের একত্র করলেন। তাদের সামনে পরিস্থিতি পরিস্কার তূলে ধরলেন। একদিকে উত্তরে বাণিজ্য কাফেলা এবং অন্যদিকে দক্ষিনে এগিয়ে আসছে কুরাইশদের সেনাদল। আল্লাহর ওয়াদা এ দুটির মধ্য থেকে কোন একটি তোমরা পেয়ে যাবে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ বলো, এর মধ্য থেকে কার মোকাবিলায় তোমরা এগিয়ে যেতে চাও? জবাবে বিপুল সংখ্যক সাহাবী মত প্রকাশ করলেন, কাফেলার ওপর আক্রমণ চালানো হোক। কিন্তু নবী (সা) এর সামনে ছিল অন্য কিছু অভিপ্রায়। তাই তিনি নিজের প্রশ্নের পুনরাকৃত্তি করলেন। একথায় মোহাজিরদের মধ্য থেকে মিকদাদ ইবনে আমর (রা) উঠে বললেনঃ

——————————-

“হে আল্লাহর রসূল! আপনার রব আপনাকে যেদিকে যাবার হুকুম দিচ্ছেন সেদিকে চলুন। আপনি যেদিকে যাবেন আমরা আপনার সাথে আছি। আমরা বনী ইসরাঈলের মত একথা বলবো নাঃ যাও তুমি তোমার আল্লাহ দুজনে লড়াই করো, আমরা তো এখানেই বসে রইলাম। বরং আমরা বলছিঃ চলুন আপনি ও আপনার আল্লাহ দুজনে লড়ুন আর আমরা ও আপনাদের সাথে জানপ্রাণ দিয়ে লড়াই করবো। যতক্ষণ আমাদের একটি চোখের তারাও নড়াচড়া করতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত” ।

কিন্তু আনসারদের মতামত না জেনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভবপর ছিল না। কারণ এ পর্যন্ত যেসব সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তাতে তাদের সাহায্য গ্রহণ করা হয়নি এবং প্রথম দিন তারা ইসলামকে সমর্থন করার যে শপথ নিয়েছিল তাকে কার্যকর করতে তারা কতটুকু প্রস্তুত তা পরীক্ষা করার এটি ছিল প্রথম সুযোগ। সুতরাং রসূলুল্লাহ (সা) সরাসরি তাদেরকে সম্বোধন না করে নিজের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন । একথায় সাদ ইবনে মুআয উঠে বললেন, সম্ভবত আপনি আমাদের সম্বোধন করে বলছেন? জবাব দিলেনঃ হাঁ। একথা শুনে সাদ বললেনঃ

—————————-

“আমরা আপনার ওপর ঈমান এনেছি। আপনি যা কিছু এনেছেন তাকে সত্য বলে ঘোষনা করেছি। আপনার কথা শুনার ও আপনার আনুগত্য করার দৃঢ় শপথ নিয়েছি। কাজেই হে আল্লাহর রসূল! আপনি যা সংকল্প করেছেন তা করে ফেলুন। সেই সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আপনি যদি আমাদের নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দেন তালে আমরাও আপনার সাথে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বো। আমাদের একজনও পিছনে পড়ে থাকবে না। আপনি কালই আমাদের দুশমনদের সাথে যুদ্ধ শুরু করুন।এটা আমাদের কাছে মোটেই অপছন্দনীয় নয়। আমরা যুদ্ধে অবিচল ও দৃঢ়পদে থাকবো।মোকাবিলায় আমরা সত্যিকার প্রাণ উৎসর্গীতার প্রমাণ দেবো। সম্ভবত আল্লাহ আমাদের থেকে আপনাকে এমন কিছু কৃতিত্ব দেখিয়ে দেবেন, যাতে আপনার চোখ শীতল হবে। কাজেই আল্লাহর বরকতের ভরসায় আপনি আমাদের নিয়ে চলুন”।

এ আলোচনা ও বক্তৃতার পরে সিদ্ধান্ত হলো, বাণিজ্য কাফেলার পরিবর্তে কুরাইশ সেনা দলের মোকাবিলা করার জন্যে এগিয়ে যাওয়া উচিত।কিন্তু এটা কোন যেন তেন সিদ্ধান্ত ছিল না।এ সংক্ষিপ্ত সময়ে যারা যুদ্ধ করতে এগিয়ে এলেন, তাদের সংখ্যা ছিল তিনশর কিছু বেশী (৮৬ জন মোহাজির, ৬১ আওস গোত্রের এবং ১৭০ জন খাযরাজ গোত্রের)।এদের মধ্যে মাত্র দুতিন জনের কাছে ঘোড়া ছিল। আর বাকি লোকদের জন্য ৭০ টির বেশী উট ছিল না। এগুলোর পিঠে তারা তিন চারজন করে পালাক্রমে সওয়ার হচ্ছিলেন। যদ্ধাস্ত্রও ছিল একেবারেই অপ্রতুল। মাত্র ৬০ জনের কাছে বর্ম ছিল। এ কারণে গুটিকয় উৎসর্গীত প্রাণ মুজাহিদ ছাড়া এ ভয়ংকর অভিযানে শরীক অধিকাংশ মুজাহিদই হৃদয়ে উৎকণ্ঠ অনুভব করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন , যেন তারা জেনে বুঝে মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিছু সুবিধাবাদী ধরনের লোক ইসলামের পরিসরে প্রবেশ করলেও তারা এমন ইসলামের প্রবক্তা ছিল না যাতে ধন-প্রাণের সংশয় দেখা দেয়। তারা এ অভিযানকে নিছক পাগলামী বলে অবিহিত করছিল। তারা মনে করছিল, ধর্মীয় আবেগ উচ্ছ্বাস এ লোকগুলোকে পাগলে পরিণত করেছে।কিন্তু নবী ও সাচ্চা -সত্যনিষ্ঠা মুমিনগণ একথা অনুধাবন করতে পরেছিলেন যে, এটিই প্রাণ উৎসর্গ করার সময়। তাই আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাঁরা বের হয়ে পড়েছিলেন। তারা সোজা দক্ষিণ পশ্চিশ দিকে এগিয়ে গেলেন। এ পথেই কুরাইশদের বাহিনী মক্কা থেকে ধেয়ে আসছিল । অথচ শুরুতে যদি বাণিজ্য কাফেলা লুট করার ইচ্ছা থাকতো তাহলে উত্তর পশ্চিমের পথে এগিয়ে যাওয়া হতো। ১

রমযান মাসের ১৭তারিখে বদর নামক স্থানে উভয় পক্ষের মোকাবিলা হলো। নবী (সা) দেখলেন তিনজন কাফেরের মোকাবিলায় একজন মুসলমান দাঁড়িয়েছে এবং তাও আবার তারা পুরোপুরি অস্ত্র সজ্জিত নয়। এ অবস্থা দেখে তিনি আল্লাহর সামনে দোয়া করার জন্যে দু হাত বাড়িয়ে দিলেন। অত্যন্ত কাতর কণ্ঠে ও কান্না বিজড়িত স্বরে তিনি দোয়া করতে থাকলেনঃ

—————————————

১,

উল্লেখ্য বদরের যুদ্ধের ব্যাপারে ইতিহাস ও সীরাত লেখকরা যুদ্ধ কাহিনীসংক্রান্ত হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থগুলোয় উদ্ধৃত বর্ণনাসমূহের ওপর নির্ভর করেছেন।কিন্তু এই বর্ণনাগুলোর বিরাট অংশ কুরআন বিরোধী ও অনির্ভরযোগ্য। শুধুমাত্র ঈমানের কারণেই আমরা বদর যুদ্ধ সংক্রান্ত কুরআনী বর্ণনাকে সবচেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য বলে মনে করতে বাধ্য হই না বরং ঐতিহাসিক দিকে দিয়েও যদি আজ এ যুদ্ধ সংক্রান্ত সবচাইতে নির্ভরযোগ্য কোন বর্ণনা থেকে থাকে তাহলে তা হচ্ছে এ সূরা আনফাল। কারণ যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই এটি নাযিল হয়েছিল। যুদ্ধে যারা শরীক ছিলেন এবং যুদ্ধের স্বপক্ষের বিপক্ষের সবাই এটি শুনেছিলেন ও পড়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ এর মধ্যে কোন একটি কথাও যদি সত্য ও বাস্তব ঘটনা বিরোধী হতো তাহলে হাজার হাজার লোক এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতো।

“হে আল্লাহ! এই কুরাইশরা এসেছে, তাদের সকল ঔদ্বত্য ও দাম্ভিবকতা নিয়ে তোমার রসূলকে মিথ্যা প্রমাণ করতে। হে আল্লাহ! এখন তোমার সেই সাহায্য এসে যাওয়া দরকার , যার ওয়াদা তুমি করেছিলে আমার সাথে। হে আল্লাহ! যদি আজ এ মুষ্টিমেয় দলটি ধ্বসং হয়ে যায় তাহলে এ পৃথীবীতে আর কোথাও তোমার ইবাদত করার মত কেউ থাকবে না”।

এ যুদ্ধের ময়দানে মক্কার মোহাজিরদের পরীক্ষা ছিল সবচেয়ে কঠিন । তাদের আপন ভাই -চাচা ইত্যাদি তাদের বিরুদ্দে ময়দানে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।কারোর বাপ, কারোর ছেলে,কারোর চাচা, কারোর মামা, কারোর ভাই দাড়িয়েছিল তার প্রতিপক্ষে । এ যুদ্ধে নিজের কলিজার টুকরার ওপর তরবারী চালাতে হচ্ছিল তাদের। এ ধরনের কঠিন পরীক্ষায় একমাত্র তারাই উত্তীর্ণ হতে পারে যারা পরিপূর্ণ নিষ্ঠা এ আন্তরিকতাসহকারে হক ও সত্যের সাথে সম্পর্ক জড়েছে। এবং মিথ্যা ও বাতিলের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পুরোপুরি উদ্যোগী হয়েছে। ওদিকে আনসারদের পরীক্ষা ও কিছু কম ছিল না। এতদিন তারা মুসলমানদেরকে শুধুমাত্র আশ্রয় দিয়ে কুরাইশ ও তাদের সহযোগী গোত্রগুলোর শত্রুতার ঝুঁকি নিয়েছিল। কিন্তু এবার তো তারা ইসলামের সমর্থনে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছিল। এর মানে ছিল, কয়েক হাজার লোকের একটি জনবসতি সমগ্র আরব দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে গেছে। এ ধরনের দুঃসাহস একমাত্র তারাই করতে পারে যারা সত্য আদর্শের ওপর ঈমান এনে তার জন্যে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে পুরোপুরি জলাঞ্জলী দিতে প্রস্তুত হতে পারে। অবশেষে তাদের অবিচল ঈমান ও সত্যানিষ্ঠা আল্লাহর সাহায্যের পুরষ্কার লাভে হয়ে গেলো। আর নিজেদের সমস্ত অহংকার ও শক্তির অহমিকা সত্ত্বেও কুরাইশরা এ সহায় সম্বলহীন জানবাজ সৈনিকদের হাতে পরাজিত হয়ে গেলো।তাদের ৭০জন নিহিত হলো, ৭০জন বন্দী হলো এবং তাদের সাজসরঞ্জামগুলো গনীমতের সামগ্রী হিসেবে মুসলমানদের দখলে এলো। কুরাইশদের যেসব বড় বড় সরদার তাদের মজলিসে গুলজার করে বেড়াতো এবং ইসলাম বিরোধী আন্দোলনে যারা সর্বক্ষণ তৎপর থাকতো তারা এ যুদ্ধে নিহিত হলো। এ চুড়ান্ত বিজয় আরবে ইসলামকে একটি উল্লেখযোগ্য শক্তিতে পরিণত করলো। একজন পাশ্চত্য গবেষক লিখেছেন, বদর যুদ্ধের আগে ইসলাম ছিল শুধুমাত্র একটি ধর্ম ও রাষ্ট্র। কিন্তু বদর যুদ্ধের পরে তা রাষ্ট্রীয় ধর্মে বরং নিজেই রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গেলো।

নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তু নামকরণ ‘আন্ফাল’ শব্দটি নফল শব্দের বহুবচন। ফরয কাজের অতিরিক্ত জিনিসকে নফল বলে। এতে দান- খয়রাত , দয়াদাক্ষিণ্য ,ফরয ছাড়া সকল নামায ও সম্পদ-এর মধ্যে শামিল। এখানে আনফাল’ হচ্ছে সেই যুদ্ধলব্ধ মালকে বুঝানো হচ্ছে যা মুসলমানরা বদর যুদ্ধ লাভ করেছিল।

যেহেতু যুদ্ধে সম্পদ লাভ উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু আল্লাহ মুসলমাদেরকে তা দিয়েছেন, তাই একে ‘ নফল’ বা গনীতম বলা হচ্ছে। যেহেতু এ সূরার প্রারম্ভে গণীমতের কথা বলা হয়েছে। সম্ভবতঃ এ কারণেই এ সূরার নাম আন্ফাল রাখা হয়েছে। আবার এ সূরাকে ‘সূরাতুল বদর’ও বলা হয়। নাযিলের সময়কাল এ সূরাটি দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পর নাযিল হয়। ইসলাম ও কুফরের মধ্যে সংঘটিত এ প্রথম যুদ্ধের ওপর এতে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে সূরার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা -ভাবনা করলে অনুমান করা যায়, সম্ভবত এ সমগ্র সূরাটি একটি মাত্র ভাষনের অন্তরভুক্ত এবং একই সংগে এ ভাষণটি নাযিল করা হয়। তবে এর কোন কোন আয়াত বদর যুদ্ধ থেকে উদ্ধুত সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও পরে নাযিল হয়ে থাকতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে ভাষণের ধারাবাহিকতায় এগুলোকে উপযুক্ত স্থানে রেখে এ সমগ্র ভাষণটিকে একটি ধারবাহিক ভাষণের রূপ দান করা হযেছে। কিন্তু দু তিনটি আলাদা আলাদা ভাষণকে এ সাথে জুড়ে দিয়ে একটি অখণ্ড ভাষনে রূপান্তরিত করা হয়েছে বলে মনে হতে পারে এমন কোন জোড়ের সন্ধান এ সমগ্র ভাষণের কোথাও পাওয়া যাবে না।

ঐতিহাসিক পটভূমি এ সূরাটি পর্যালোচনা করার আগে বদরের যুদ্ধ এবং তার সাথে সম্পর্কিত অবস্থা ও ঘটনাবলীর ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। নবী (সা.) তাঁর দাওয়াতের প্রথম দশ বারো বছর মক্কা ময়াযময়ায় অবস্থান করেছিলেন। এ সময় তাঁর দাওয়াত যথেষ্ট পরিপক্কতা ও স্থিতিশীলতা অর্জন করেছিল। কারণ এর পেছনে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। ইসলামী দাওয়াতের পতাকাবাহী উন্নত চরিত্র ও বিশাল হৃদয়বৃত্তির অধিকারী এক জ্ঞানী পুরুষ। তিনি নিজের ব্যক্তি সত্তার সমস্ত যোগ্যতা ও সামর্থ এ কাজে নিয়োজিত করেছিলেন। তাঁর কার্যধারা থেকে এ সত্যটি পুরোপুরি সষ্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, এ আন্দোলনকে তার সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে দেবার জন্যে তিনি দৃঢ়সংকল্প ।

এ লক্ষে উপনীত হবার জন্যে পথের যাবতীয় বিপদ আপদ ও সংকট -সমস্যার মোকাবিলায় তিনি সর্বক্ষন প্রস্তুত। অন্যদিকে এ দাওয়াতের মধ্যে ছিল এমন এক অদ্ভুদ ও তীব্র আকর্ষণী ক্ষমতা যে, হৃদয় -মস্তিষ্কের গভীরে তার অনুপ্রবেশ কার্য চলছিল দ্রুত ও অপ্রতিহত গতিতে। মুর্খতা ও অজ্ঞতার অন্ধকার এবং হিংসা ও সংকীর্ণ স্বার্থপ্রতির প্রাচীন তার পথ রোধ করতে পারছিল না। এ কারণে আরবের প্রাচীন জাহেলী ব্যবস্থার সমর্থক শ্রেনী প্রথম দিকে একে হালকাভাবে এবং অবজ্ঞার চোখে দেখলেও মক্কী যুগের শেষের দিকে একে একটি গুরুতর বিপদ বলে মনে করেছিল।

একে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে তারা নিজেদের পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তখনো পর্যন্ত এ দাওয়াতের মধ্যে কোন কোন দিক দিয়ে বেশ কিছুটা অভাব রয়ে গিয়েছিল। এক. তখনো একথা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি যে, এমন ধরনের যথেষ্ট সংখ্যক অনুসারী এ দাওয়াতের পতাকা তলে সমবেত হয়েছে যারা শুধু তার অনুগতই নয় বরং তার নীতিকে মনেপ্রাণে ভালও বাসে তাকে বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে নিজেদের সর্বশক্তি ও সকল উপায় উপকরণ ব্যয় করতে প্রস্তুত এবং এ জন্যে নিজেদের সব কিছু কুরবানী করে দিতে,

সারা দুনিয়ার সাথে লড়াই করতে এমন কি নিজেদের প্রিয়তম আত্মীয়তার বাঁধনগুলো কেটে ফেলতে ও উদগ্রিব। যদিও মক্কার ইসলামের অনুসারীরা কুরাইশদের জুলুম -নির্যাতন বরদাশত করে নিজেদের ঈমানের অবিচলতা ও নিষ্ঠা এবং ইসলামের সাথে তাদের অটুট সম্পর্কের পক্ষে বেশ বড় আকারের প্রমাণ পেশ করেছিল, তবুও একথা প্রমাণিত হওয়া তখনো বাকী ছিল যে, ইসলামী আন্দোলন এমন একদল উৎসর্গীত প্রাণ অনুসারী পেয়ে গেছে যারা নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষের মোকাবিলায় অন্য কোন জিনিসকেই প্রিয়তর মনে করে না।

বস্তুত একথা প্রমাণ করার জন্যে তখনো অনেক পরীক্ষারও প্রয়োজন ছিল। দুই. এ দাওয়াতের আওয়াজ সারাদেশ ছড়িয়ে পড়লেও এর প্রভাবগুলো ছিল চারদিকে বিক্ষিপ্ত ও অসংহত। এ দাওয়াত যে জনশক্তি সংগ্রহ করেছিল তা এলোমেলো অবস্থায় সারাদেশে ছড়িয়ে ছিল। পুরাতন জাহেলী ব্যবস্থার সাথে চূড়ান্ত মোকাবিলা করার জন্যে যে ধরনের সামষ্টিক শক্তির প্রয়োজন ছিল তা সে তখনো অর্জন করেনি। তিন. এ দাওয়াত তখনো মাটিতে কোথাও শিকড় গাড়তে পারেনি। তখণো তা কেবল বাতাসেই উড়ে বেড়াচ্ছিল।

দেশের অভ্যন্তরে এমন কোন এলাকা ছিল না যেখানে দৃঢ়পদ হয়ে নিজের ভূমিকাকে সুসংহত করে সে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার জন্যে প্রচেষ্টা চালাতে পারতো। তখনো পর্যন্ত যেখানেই যে মুসলমান ছিল, কুফর ও শিরকে নিমজ্জিত সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে তার অবস্থান ছিল ঠিক খালি পেটে গেলা ,

কুইনিনের মত। অর্থাৎ খালি পেটে কুইনিন গিললে পেট তাকে বমি করে উগরে দেবার জন্যে সর্বক্ষণ চাপ দিতে থাকে এবং কোথাও তাকে এক দণ্ড তিষ্টাতে দেয় না। চার. সে সময় পর্যন্ত এ দাওয়াত বাস্তব জীবনের কার্যাবলী নিজের হাতে পরিচালনা করার সুযোগ পায়নি। তখনো সে তার নিজস্ব সভ্যতা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়নি। নিজস্ব অর্থনৈতিক, সামাজিক, ও রাজনৈতিক , ব্যবস্থা রচনাও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। অন্যান্য শক্তির সাথে তার যুদ্ধ ও সন্ধির কোন ঘটনাই ঘটেনি।

তাই যেসব নৈতিক বিধানের ভিত্তিতে এ দাওয়াত সমগ্র দেশ ও সমাজকে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত করতে চাচ্ছিল তার কোন প্রদর্শনীও করা যায়নি। আর এ দাওয়াতের বানী বাহক ও তার অনুসারীরা যে জিনিসের দিকে সমগ্র দুনিয়াবাসীকে আহবান জানিয়ে আসছিলেন তাকে কার্যকর করার ব্যাপারে তারা নিজেরা কতটুকু নিষ্ঠাবান, এখনো কোন পরীক্ষার মানদণ্ডে যাচাই বাছাই করার পর তার সুষ্পষ্ট চেহারাও সামনে আসেনি। মক্কী যুগের শেষ তিন-চার বছরে ইয়াসরেবে ইসলামের আলো ছড়িয়ে থাকে অপ্রতিহত গতিতে। সেখানকার লোকেরা আরবের অন্যান্য এলাকার গোত্রগুলোর তুলনায় অধিকতর সহজে ও নির্দ্বিধায় এ আলো গ্রহণ করতে থাকে।শেষে নবুওয়াতের দ্বাদশ বছরে হজ্জের সময় ৭৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল রাতের আঁধারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাত করলো, তারা কেবল ইসলাম গ্রহণই করেননি বরং তাকে ও তার অনুসারীদেরকে নিজেদের শহরে স্থান দেয়ার ও আগ্রহ প্রকাশ করলেন।

এটি ছিল ইসলামের ইতিহাসের একটি বৈপ্লবিক পটপরিবর্তন। মহান আল্লাহ তার নিজ অনুগ্রহে এ দুর্লভ সুযোগটি দিয়েছিলেন এবং নবী (সা.) ও হাত বাড়িয়ে তা লুফে নিয়েছিলেন। ইয়াসরেববাসীরা নবী(সা.) কে শুধুমাত্র একজন শরণার্থী হিসেবে নয় বরং আল্লাহর প্রতিনিধি এবং নেতা ও শাষক হিসেবেও আহবান করেছিলেন।

আর তার অনুসারীদেরকে তারা একটি অপরিচিতি দেশে নিছক মুহাজির হিসেবে বসবাস করার জন্যে আহবান জানাচ্ছিলেন না। বরং আরবের বিভিন্ন এলাকায় ও বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে যেসব মুসলমানদের সাথে মিলে একটি সুসংবদ্ধ সমাজ গড়ে তোলাই ছিল এর উদ্দেশ্য। এভাবে মূলত ইয়াসরেব নিজেকে মদীনাতুল ইসলাম তথা ইসলামের নগর হিসেবে উপস্থাপিত করলো। নবী(সা.) তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে সেখানে আরবের প্রথম দারুল ইসলাম গড়ে তুললেন। এ ধরনের উদ্যেগ গ্রহণের অর্থ কি হতে পারে সে সম্পর্কে মদীনাবাসীরা অনবহিত ছিল না। এর পরিস্কার অর্থ ছিল, একটি ছোট্র শহর সারাদেশের উদ্যত তরবারি এবং সমগ্র দেশবাসীর অর্থনৈতিক, সামাজিক , ও সাংস্কৃতিক বয়কটের মোকাবিলায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল।

কাজেই আকাবার বাইআত গ্রহণ করার সময় সেদিনের সেই রাত্রীকালীন মজলিসে ইসলামের প্রাথমিক সাহায্যকারী (আনসারগণ) এ পরিণাম সম্পর্কে পুরোপুরি জেনে বুঝেই নবী (সা.) এর হাতে নিজেদের হাত রেখেছিলেন। যখন এ বাইআত অনুষ্ঠিত হচ্ছিল ঠিক তখনই ইয়াসরেবী প্রতিনিধি দলের সর্বকনিষ্ঠ যুব সদস্য আস’আদ ইবনে যুরারাহ (রা) উঠে বললেন, “থামো, হে ইয়াসরেব বাসীরা ! আমরা একথা জেনে বুঝেই এঁর কাছে এসেছি যে, ইনি আল্লাহর রসূল এবং আজ এখান থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া মানে হচ্ছে সমগ্র আরববাসীর শত্রুতার ঝুঁকি নেয়া।

এর ফলে তোমাদের শিশু সন্তানদেরকে হত্যর করা হবে এবং তোমাদের ওপর তরবারি বর্ষিত হবে। কাজেই যদি তোমাদের এ আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা থাকে তাহলে এঁর দায়িত্ব গ্রহণ করো। আল্লাহ এর প্রতিদান দেবেন। আর যদি তোমরা নিজেদের প্রাণকে প্রিয়তর মনে করে থাকো তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দাও এবং পরিষ্কার ভাষায় নিজেদের অক্ষমতা জানিয়ে দাও। কারণ এ সময় অক্ষমতা প্রকাশ করা আল্লাহর কাছে বেশী গ্রহণযোগ্য হতে পারে”।

প্রতিনিধি দলের আর একজন সদস্য আব্বাস ইবনে উবাদাহ ইবনে নাদলাহ (রা) একথারই পুনরাবৃত্তি করেন এভাবে, “তোমরা কি জানো, এ ব্যক্তির হাতে কিসের বাইআত করছো? (ধ্বনিঃ হাঁ আমরা জানি) তোমরা এঁর হাতে বাইআত করে সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঝুঁকি নিচ্ছো।কাজেই যদি তোমরা মনে করে থাকো, যখন তোমাদের ধন-সম্পদ ধ্বংসের মুখোমুখি হবে এবং তোমাদের নেতৃস্থানীয় লোকদের নিহত হবার আশংকা দেখা দেবে তখন তোমরা এঁকে শত্রুদের হাতে সোপর্দ করে দেবে, তাহলে আজই বরং এঁকে ত্যাগ করাই ভাল। কারণ আল্লাহর কসম,এটা দুনিয়ায় ও আখেরাতের সবখানেই লাঞ্চনার কারণ হবে। আর যদি তোমরা মনে করে থাকো, এ ব্যক্তিকে তোমরা যে, আহবান জানাচ্ছো, নিজেদের ধন-সম্পদ ধ্বংস ও নেতৃস্থানীয় লোকেদের জীবন নাশ সত্ত্বেও তোমরা তা পালন করতে প্রস্তুত থাকবে, তাহলে অবশ্যি তাঁর হাতে আকড়ে ধরো।

কারণ আল্লাহর কসম, এরই মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ”। একথায় প্রতিনিধি দলের সবাই এক বাক্যে বলে উঠলেন, “আমরা এঁকে গ্রহণ করে আমাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করতে ও নেতৃস্থানীয় লোকদের নিহত হবার ঝুকি নিতে প্রস্তুত”।

এ ঘটনার পর সেই ঐতিহাসিক বাইআত অনুষ্ঠিত হয়। ইতিহাসে একে আকাবার দ্বিতীয় বাইআত বলা হয়। অন্যদিকে মক্কাবাসীদেরক কাছেও এ ঘটনাটির তাৎপর্য ছিল সুবিদিত। ইতিপূর্বে কুরাইশরা মুহাম্মাদ (সা.) এর বিপুল প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ও অসাধারণ যোগ্যতার সাথে পরিচিত হয়েছিল এবং এখন সেই মুহাম্মাদই (সা.) যে, একটি আবাস লাভ করতে যাচ্ছিলেন তা তারা বেশ অনুধাবন করতে পারছিল।

তাঁর নেতৃত্বে ইসলামের অনুসারীরা যে একটি সুসংগঠিত দলের আকারে অচিরেই গড়ে উঠবে এবং সমবেত হবে একথাও তারা বুঝতে পারছিল। আর ইসলামের এ অনুসারীরা সংকল্পে কত দৃঢ়, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগে কত অবিচল, এতদিনে সেটা তাদের কাছে অনেকটা পরীক্ষিত হয়ে গিয়েছিল।

এহেন সত্যাভিসারী কাফেলার এ নব উত্থান পুরাতন ব্যবস্থার জন্যে মৃত্যুর ঘন্টাস্বরূপ। তাছাড়া মদীনার মত জায়গায় এই মুসলিম শক্তির একত্র সমাবেশ কুরাইশদের জন্যে আরো নতুন বিপদের সংকেত দিচ্ছিল। কারণ লোহিত সাগরের কিনারা ধরে ইয়ামন থেকে সিরিয়ার দিকে যে বানিজ্য পথটি চলে গিয়েছিল তার সংরক্ষিত ও নিরাপদ থাকার ওপর কুরাইশ ও অন্যাণ্য বড় বড় গোত্রের অর্থনৈতিক জীবন নির্ভরশীল ছিল। আর এটি এখন মুসলমানদের প্রভাবাধীনে চলে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। এ প্রধান বাণিজ্য পথটি দখল করে মুসলমানরা জাহেলী ব্যবস্থার জীবন ধারণ দুর্বিসহ করে তূলতে পারতো।

এ প্রধান বাণিজ্য পথের ভিত্তিতে শুধু মাত্র মক্কাবাসীদের যে ব্যবসায় চলতো তার পরিমাণ ছিল বছরে আড়াই লাখ আশরাফী। তায়েফ ও অন্যান্য স্থানের ব্যবসায় ছিল এর বাইরে। কুরাইশরা এ পরিণতির কথা ভালভাবেই জানতো। যে রাতে আকাবার বাইআত অনুষ্ঠিত হলো সে রাতেই এ ঘটনার উড়ো খবর মক্কাবাসীদের কানে পৌছে গোলো। আর সাথে সাথেই সেখানে হৈ চৈ শুরু হয় গেলো। প্রথমে তারা চেষ্টা করলো মদীনাবাসীদেরকে নবী (সা.) এর দল থেকে ভাগিয়ে নিতে। তারপর যখন মুসলমানরা একজন দুজন করে মদিনায় হিজরত করতে থাকলো এবং কুরাইশদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেলো যে, এখন মুহাম্মাদ (সা.) সেখানে স্থানন্তরিত হয়ে যাবেন তখন তারা এ বিপদকে ঠেকিয়ে রাখার জন্যে সর্বশেষ উপায় অবলম্বনে এগিয়ে এলো। রসূলের (সা.) হিজরতের মাত্র কয়েক দিন আগে কুরাইশদের পরিমর্শ সভা বসলো।

অনেক আলোচনা পর্যালোচানার পর সেখানে স্থির হলো, বনী হাশেম ছাড়া কুরাইশদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে লোক বাচাই করা হবে এবং এরা সবাই মিলে মুহাম্মাদ (সা.)কে হত্যা করবে। এর ফলে বনী হাশেমের জন্যে এ সমস্ত গোত্রের সাথে একাকী লড়াই করা কঠিন হবে। কাজেই এ ক্ষেত্রে তারা প্রতিশোধের পরিবর্তে রক্ত মূল্য গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানী এবং নবী (সা.) এর আল্লাহর ওপর নির্ভরতা ও উন্নত কৌশল অবলম্বনের কারণে তাদের সব চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেলো। ফলে রসূলুল্লাহ (সা.)নির্বিঘ্নে মদীনায় পৌছে গেলেন।এভাবে হিজরত প্রতিরোধ ব্যর্থ হয়ে কুরাইশরা মদীনার সরদার আবুদুল্লাহ ইবনে উবাই কে(যাকে হিজরতের আগে মদীনাবাসীরা নিজেদের বাদশাহ বানাবার প্রস্তুতি নিয়েছিল এবং রসূলের মদীনায় পৌছে যাবার এবং আওস ও খাযরাজদের অধিকাংশের ইসলাম গ্রহণের ফলে যার বাড়া ভাতে ছাই পড়ে গিয়েছিল) পত্র লিখলোঃ তোমারা আমাদের লোককে তোমাদের ওখানে আশ্রয় দিয়েছো।

আমরা এ মর্মে আল্লাহর কসম খেয়েছি, হয় তোমরা তার সাথে লড়বে বা তাকে সেখান থেকে বের করে দেবে। অন্যথায় আমরা সবাই মিলে তোমাদের ওপর আক্রমণ করবো এবং তোমাদের পুরুষদেরকে হত্যা ও মেয়েদেরকে বাদী বানাবো। কুরাইশদের এ উষ্কানির মুখে আবুদুল্লাহ ইবনে উবাই কিছু দুষ্কর্ম করার চক্রান্ত এঁটেছিল। কিন্তু সময় মত নবী (সা.) তার দুষ্কর্ম রুখে দিলেন। তারপর মদীনার প্রধান সাদ ইবনে মুআয উমরাহ করার জন্যে মক্কা গেলেন। সেখানে হারম শরীফের দরজার ওপর আবু জেহেল তার সমালোচনা করে বললো, “তোমরা আমাদের ধর্মত্যাগীদের আশ্রয় দেবে এবং তাদেরকে সাহায্য -সহযোগীতা দান করবে আর আমরা তোমাদেরকে অবাধে মক্কায় তাওয়াফ করতে দেবো ভেবেছ?যদি তুমি আবু সফওয়ান তথা উমাইয়া ইবনে খলফের মেহমান না হতে তাহলে তোমাকে এখান থেকে প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরে যেতে দিতাম না”।

সাদ জবাবে বললেন, “আল্লাহর কসম, যদি তুমি আমাকে এ কাজে বাধা দাও তাহলে আমি তোমাকে এমন জিনিস থেকে রুখে দেবো, যা তোমার জন্যে এর চাইতে অনেক বেশী মারাত্মক। অর্থাৎ মদীনা দিয়ে তোমাদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেবো” । অর্থাৎ এভাবে মক্কাবাসীদের পক্ষ থেকে যেন একথা ঘোষণা করে দেয়া হলো যে, বায়তুল্লাহ যিয়ারত করার পথ মুসলমানদের জন্যে বন্ধ। আর এর জবাবে মদীনাবাসীদের পক্ষ থেকে বলা হলো, সিরিয়ার সাথে বাণিজ্য করার পথ ইসলাম বিরোধীদের জন্যে বিপদসংকুল। আসলে সে সময় মুসলমানদের জন্য উল্লেখিত বাণিজ্য পথের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব মজবুত করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় ছিল না। কারণ এ পথের সাথে কুরাইশ ও অন্যান্যগোত্রগুলোর স্বার্থ বিজড়িত ছিল।

ফলে এর ওপর মুসলমানদের কৃত্বৃত্ব বেশী মজবুত হলে তারা ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে নিজেদের শত্রুতামূলক নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হতে পারে বলে আশা করা যায়। কাজেই মদীনায় পৌছার সাথে সাথেই নবী (সা.) সদ্যজাত ইসলামী সমাজে প্রাথমিক নিয়ম -শৃংখলা বিধান ও মদীনার ইহুদী অদিবাসীদের সাথে চুক্তি সম্পাদন করার পর সর্বপ্রথম এ বাণিজ্য পথটির প্রতি নজর দিলেন। এ ব্যাপারে তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা অবলম্বন করলেন।

প্রথমত মদীনা ও লোহিত সাগরের উপকূলের মধ্যবর্তীস্থলে এ বাণিজ্য পথের আশেপাশে যেসব গোত্রের বসতি ছিল তাদের সাথে তিনি আলাপ- আলোচনা শুরু করে দিলেন। এভাবে তাদেরকে সহযোগিতামূলক মৈত্রী অথবা কমপক্ষে নিরপেক্ষতার চুক্তিতে আবদ্ধ করা ছিল মূল উদ্দেশ্য । এ ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণ সাফলতা লাভ করলেন।

সর্বপ্রথম নিরপেক্ষতার চুক্তি অনুষ্ঠিত হলো সাগর তীরবর্তী পার্বত্র এলাকার জুহাইনা গোত্রের সাথে। এ গোত্রটির ভূমিকা এ এলাকায় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারপর প্রথম হিজরীর শেষের দিকে চুক্তি অনুষ্ঠিত হলে বনী যামরার সাথে। এ গোত্রটির অবস্থান ছিল ইয়াম্বু ও যুল আশীরার সন্নিহিত স্থানে এটি ছিল প্রতিরক্ষামূলক সহযোগিতার চুক্তি। দ্বিতীয় হিজরীর মাঝামাঝি সময়ে বনী মুদলিজও এ চুক্তিতে শামিল হলো। কারণ এ গোত্রটি ছিল বনী যামরার প্রতিবেশী ও বন্ধু গোত্র। এ ছাড়াও ইসলাম প্রচারের ফলে এ গোত্রগুলোতে ইসলামের সমর্থক ও অনুসারীদের একটি বিরাট গোষ্ঠি সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত কুরাইশদের সওদাগরী কাফেলাগুলোকে ভীত -সন্ত্রস্ত করে তোলার জন্যে বাণিজ্য পথের ওপর একের পর এক ছোট ছোট ঝাটিকা বাহিনী পাঠাতে থাকলেন।কোন কোন ঝাটিকা বাহিনীর সাথে তিনি নিজেও গেলেন।

প্রথম বছর এ ধরনের ৪টি বাহিনী পাঠানো হলো। মাগাযী (যুদ্ধ ইতিহাস) গ্রন্থগুলো এগুলোকে সারীয় হামযা, সারীয়া, উবাইদা ইবনে হারেস, সারীয়া সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ও গাযওয়া তুল আবওয়া নামে অভিহিত করা হয়েছে। দ্বিতীয় বছরের প্রথম দিকের মাসগুলোর একই দিকে আরো দুটি আক্রমণ চালানো হলো। মাগাযী গ্রন্থগুলোয় এ দুটিকে গাযওয়া বুওয়াত ও গাযওয়া যুল আশারী নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সমস্ত অভিযানের দুটি বৈশিষ্ট উল্লেখযোগ্য ।

এক, এ অভিযানগুলোয় কোন রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি এবং কোন কাফেলা লুণ্ঠিত ও হয়নি। এ থেকে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এর মাধ্যমে কুরাইশদেরকে বাতাসের গতি কোন দিকে তা জানিয়ে দেয়াই ছিল আসল উদ্দেশ্য। দুই , এর মধ্য থেকে কোন একটি বাহিনীতেও নবী (সা.) মদীনার একটি লোককেও শামিল করেননি। মক্কা থেকে আগত মুহাজিরদেরকেই তিনি এসব বাহিনীর অন্তরভুক্ত করেন। কারণ এর ফলে যদি সংঘর্ষ বাধে তাহলে তা যেন এর সাথে চড়িয়ে পড়ে এ আগুনকে চারদিকে ছাড়িয়ে না দেয়। ওদিকে মক্কাবাসীরাও মদীনার দিকে লুটেরা বাহিনী পাঠাতে থাকে। তাদেরই একটি বাহিনী কুরয ইবনে জাবের আল ফিহরীর নেতৃত্বে একেবারে মদীনার কাছাকাছি এলাকায় হামলা চালিয়ে মদীনাবাসীদের গৃহপালিত পশু লুট করে নিয়ে যায়।

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

এ ব্যাপারে কুরাইশরা এ সংঘর্ষের মধ্যে অন্যান্য গোত্রদেরকেও জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। তাছাড়া তারা কেবল ভয় দেখিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছিল না , লুটতরাজও শুরু করে দিয়েছিল। এ অবস্থায় ২য় হিজরীর শাবান মাসে(৬২৩ খৃষ্টব্দের ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাস)কুরাইশদের একটি বিরাট বানিজ্য কাফেলা সিরিয়া থেকে মক্কার পথে অগ্রসর হয়ে এমন এক জায়গায় পৌছে গিয়েছিল যে জায়গাটি ছিল মদীনাবাসীদের আওতার মধ্য। এ কাফেলার সাথে ছিল প্রায় ৫০ হাজার আশরাফীর সামগ্রী। তাদের সাথে তিরিশ চল্লিশ জনের বেশী রক্ষী ছিল না। যেহেতু পণ্যসামগ্রী ছিল বেশী এবং রক্ষীর সংখ্যা ছিল কম আর আগের অবস্থার কারণে মুসলমানদের কোন শক্তিশালী দলের তাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করার আশংকা ছিল অত্যন্ত প্রবল, তাই কাফেলা সরদার আবু সুফিয়ান এ বিপদ সংকুল স্থানে পৌছেই সাহায্য আনার জন্য কোন এক ব্যক্তিকে মক্কা অভিমূখে পাঠিয়ে দিল।

লোকটি মক্কায় পৌছেই প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী নিজের উটের কান কেটে ফেললো, তার নাক চিরে দিল, উটের পিঠের আসন উল্টে দিলে এবং নিজের জামা সামনের দিকে ও পিছনের দিকে ছিড়ে ফেলে এই বলে চিৎকার করতে থাকলো। ইসলামের ইতিহাসের পরিভাষায় সীরিয়া বলা হয় এমন ধরনের ছোটখাট বাহিনীকে যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সাহাবীর নেতৃত্বে পাঠিয়ে ছিলেন আর যে বাহিনীতে তিনি নিজে গিয়েছিলেন তাকে বলা হয় গাযওয়া। “হে কুরাইশরা! তোমাদের বাণিজ্য কাফেলার খবর শোনো। আবু সুফিয়ানের সাথে তোমাদের যে সম্পদ আছে, মুহাম্মাদ তার সঙ্গীসাথীদের নিয়ে তার পেছনে ধাওয়া করেছে। তোমাদের তা পাবার আশা নেই। সাহায্যের জন্যে দৌড়ে চলো! সাহায্যের জন্যে দৌড়ে চলো”।!

এ ঘোষনা শুনে সারা মক্কার বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে গোলো। কুরাইশদের বড় বড় সরদাররাই সবাই যুদ্ধের জন্যে তৈরী হলো। প্রায় এক হাজার যোদ্ধা রণসাজে সজ্জিত হয়ে পূর্ণ আড়ম্বর ও জাঁক -জমকের সাথে যুদ্ধ ক্ষেত্রে রওয়ানা হলো। তাদের মধ্যে ছিল ৬শ বর্মধারী এবং একশ জন অশ্বারোহী। নিজেদের কাফেলাকে শুধু নিরাপদে মক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে আসাই তাদের কাজ ছিল না বরং এই সংগে তারা নিত্য দিনের এ আশংকা ও আতংকবোধকে চিরতরে খতম করে দিতে চাচ্ছিল।

মদীনায় এ বিরোধী শক্তির নতুন সংযোজনকে তারা গুড়িয়ে দিতে এবং এর আশপাশের গোত্রগুলোকে এর দূর সন্ত্রন্ত করে তুলতে চাচ্ছিল যার ফলে ভবিষ্যতে এ বানিজ্য পথটি তাদের জন্যে সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়ে যায়। নবী (সা.) চলমান ঘটনাবলীর প্রতি সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। তিনি উদ্ভুত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটি অনুভব করলেন যেন চূড়ান্ত মীমাংসার সময় এসে গেছে। তিনি ভাবলেন এ সময় যদি একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তাহলে ইসলামী আন্দোলন চিরকালের জন্যে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়বে।

বরং এরপর এ আন্দোলনের জন্যে হয়ত আবার মাথা উচু করে দাড়াবার আর কোন সুযোগই থাকবে না। মক্কা থেকে হিজরত করে এ নতুন শহরে আসার পর এখনো দুটি বছরও পার হয়ে যায়নি। মুহাজিররা বিত্ত ও সরঞ্জামহীন, আনসাররা অনভিজ্ঞ , ইহুদীগোত্রগুলো বিরুদ্ধাবাদিতায় মুখর খোদ মদীনাতেই মুনাফিক ও মুশরিকদের একটি বিরাট গোষ্ঠি উপস্থিত এবং চারপাশের সমস্ত গোত্র কুরাইশদের ভয়ে ভীত।

আর সেই সংগে ধর্মীয় দিক দিয়েও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এ অবস্থায় যদি কুরাইশরা মদীনা আক্রমণ করে তাহলে মুসলমানদের এ ক্ষুদ্র দলটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যদি তারা মদীনা আক্রমণ না করে শুধু মাত্র নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করে বাণীজ্য কাফেলাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং মুসলমানরা দমে গিয়ে ঘরের কোণে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকে তাহলেও সহসাই মুসলমানদের প্রতিপত্তি এমনভাবে আহত হবে এবং তাদের প্রভাব এত বেশী ক্ষুণ্ন হবে যার ফলে আরবের প্রতিটি শিশুও তাদের বিরুদ্ধে দুঃসাহসী হয়ে উঠবে।

সারা দেশে তাদের কোন আশ্রয় স্থল থাকবে না। তখন চারপাশের সমস্ত গোত্র কুরাইশদের ইংগিতে কাজ করতে থাকবে। মদীনার ইহুদী , মুনাফীক ও মুশরিকরা প্রকাশ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। মদীনায় জীবন ধারণ করাও সে সময় দুসাধ্য হয় পড়বে। মুসলমানদের কোন প্রভাব প্রতিপত্তি থাকবে না। ফলে তাদের ধন-প্রাণ-ইজ্জত -আবরুর উপর আক্রমন চালাতে কেউ ইতস্তত করবে না। এ কারণে (সা.) দৃঢ় সংকল্প নিলেন যে, বর্তমানে যতটুকু শক্তি -সামর্থ আমাদের আছে তাই নিয়েই আমরা বের হয়ে পড়বো।দুনিয়ার বুকে বেঁচে থাকার ও টিকে থাকার ক্ষমতা কার আছে এবং কার নেই ময়দানেই তার ফায়সালা হয়ে যাবে। এ চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবার সংকল্প করেই তিনি আনসার ও মোহাজিরদের একত্র করলেন। তাদের সামনে পরিস্থিতি পরিস্কার তূলে ধরলেন। একদিকে উত্তরে বাণিজ্য কাফেলা এবং অন্যদিকে দক্ষিনে এগিয়ে আসছে কুরাইশদের সেনাদল। আল্লাহর ওয়াদা এ দুটির মধ্য থেকে কোন একটি তোমরা পেয়ে যাবে।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বলো, এর মধ্য থেকে কার মোকাবিলায় তোমরা এগিয়ে যেতে চাও? জবাবে বিপুল সংখ্যক সাহাবী মত প্রকাশ করলেন, কাফেলার ওপর আক্রমণ চালানো হোক। কিন্তু নবী (সা.) এর সামনে ছিল অন্য কিছু অভিপ্রায়। তাই তিনি নিজের প্রশ্নের পুনরাকৃত্তি করলেন। একথায় মোহাজিরদের মধ্য থেকে মিকদাদ ইবনে আমর (রা) উঠে বললেন, “হে আল্লাহর রসূল! আপনার রব আপনাকে যেদিকে যাবার হুকুম দিচ্ছেন সেদিকে চলুন। আপনি যেদিকে যাবেন আমরা আপনার সাথে আছি। আমরা বনী ইসরাঈলের মত একথা বলবো না, যাও তুমি তোমার আল্লাহ দুজনে লড়াই করো, আমরা তো এখানেই বসে রইলাম। বরং আমরা বলছিঃ চলুন আপনি ও আপনার আল্লাহ দুজনে লড়ুন আর আমরা ও আপনাদের সাথে জানপ্রাণ দিয়ে লড়াই করবো। যতক্ষণ আমাদের একটি চোখের তারাও নড়াচড়া করতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত” ।

কিন্তু আনসারদের মতামত না জেনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভবপর ছিল না। কারণ এ পর্যন্ত যেসব সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তাতে তাদের সাহায্য গ্রহণ করা হয়নি এবং প্রথম দিন তারা ইসলামকে সমর্থন করার যে শপথ নিয়েছিল তাকে কার্যকর করতে তারা কতটুকু প্রস্তুত তা পরীক্ষা করার এটি ছিল প্রথম সুযোগ। সুতরাং রসূলুল্লাহ (সা.) সরাসরি তাদেরকে সম্বোধন না করে নিজের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন । একথায় সাদ ইবনে মুআয উঠে বললেন, সম্ভবত আপনি আমাদের সম্বোধন করে বলছেন? জবাব দিলেনঃ হাঁ। একথা শুনে সাদ বললেন, “আমরা আপনার ওপর ঈমান এনেছি। আপনি যা কিছু এনেছেন তাকে সত্য বলে ঘোষনা করেছি। আপনার কথা শুনার ও আপনার আনুগত্য করার দৃঢ় শপথ নিয়েছি। কাজেই হে আল্লাহর রসূল! আপনি যা সংকল্প করেছেন তা করে ফেলুন।

সেই সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আপনি যদি আমাদের নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দেন তালে আমরাও আপনার সাথে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বো। আমাদের একজনও পিছনে পড়ে থাকবে না। আপনি কালই আমাদের দুশমনদের সাথে যুদ্ধ শুরু করুন।এটা আমাদের কাছে মোটেই অপছন্দনীয় নয়। আমরা যুদ্ধে অবিচল ও দৃঢ়পদে থাকবো। মোকাবিলায় আমরা সত্যিকার প্রাণ উৎসর্গীতার প্রমাণ দেবো। সম্ভবত আল্লাহ আমাদের থেকে আপনাকে এমন কিছু কৃতিত্ব দেখিয়ে দেবেন, যাতে আপনার চোখ শীতল হবে। কাজেই আল্লাহর বরকতের ভরসায় আপনি আমাদের নিয়ে চলুন”। এ আলোচনা ও বক্তৃতার পরে সিদ্ধান্ত হলো, বাণিজ্য কাফেলার পরিবর্তে কুরাইশ সেনা দলের মোকাবিলা করার জন্যে এগিয়ে যাওয়া উচিত।কিন্তু এটা কোন যেন তেন সিদ্ধান্ত ছিল না।এ সংক্ষিপ্ত সময়ে যারা যুদ্ধ করতে এগিয়ে এলেন, তাদের সংখ্যা ছিল তিনশর কিছু বেশী (৮৬ জন মোহাজির, ৬১ আওস গোত্রের এবং ১৭০ জন খাযরাজ গোত্রের)।এদের মধ্যে মাত্র দুতিন জনের কাছে ঘোড়া ছিল। আর বাকি লোকদের জন্য ৭০ টির বেশী উট ছিল না। এগুলোর পিঠে তারা তিন চারজন করে পালাক্রমে সওয়ার হচ্ছিলেন। যদ্ধাস্ত্রও ছিল একেবারেই অপ্রতুল। মাত্র ৬০ জনের কাছে বর্ম ছিল।

এ কারণে গুটিকয় উৎসর্গীত প্রাণ মুজাহিদ ছাড়া এ ভয়ংকর অভিযানে শরীক অধিকাংশ মুজাহিদই হৃদয়ে উৎকণ্ঠ অনুভব করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন , যেন তারা জেনে বুঝে মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিছু সুবিধাবাদী ধরনের লোক ইসলামের পরিসরে প্রবেশ করলেও তারা এমন ইসলামের প্রবক্তা ছিল না যাতে ধন-প্রাণের সংশয় দেখা দেয়। তারা এ অভিযানকে নিছক পাগলামী বলে অবিহিত করছিল। তারা মনে করছিল, ধর্মীয় আবেগ উচ্ছ্বাস এ লোকগুলোকে পাগলে পরিণত করেছে।কিন্তু নবী ও সাচ্চা -সত্যনিষ্ঠা মুমিনগণ একথা অনুধাবন করতে পরেছিলেন যে, এটিই প্রাণ উৎসর্গ করার সময়। তাই আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাঁরা বের হয়ে পড়েছিলেন।

তারা সোজা দক্ষিণ পশ্চিশ দিকে এগিয়ে গেলেন। এ পথেই কুরাইশদের বাহিনী মক্কা থেকে ধেয়ে আসছিল । অথচ শুরুতে যদি বাণিজ্য কাফেলা লুট করার ইচ্ছা থাকতো তাহলে উত্তর পশ্চিমের পথে এগিয়ে যাওয়া হতো। ১ রমযান মাসের ১৭তারিখে বদর নামক স্থানে উভয় পক্ষের মোকাবিলা হলো। নবী (সা.) দেখলেন তিনজন কাফেরের মোকাবিলায় একজন মুসলমান দাঁড়িয়েছে এবং তাও আবার তারা পুরোপুরি অস্ত্র সজ্জিত নয়। এ অবস্থা দেখে তিনি আল্লাহর সামনে দোয়া করার জন্যে দু হাত বাড়িয়ে দিলেন। অত্যন্ত কাতর কণ্ঠে ও কান্না বিজড়িত স্বরে তিনি দোয়া করতে থাকলেন। উল্লেখ্য বদরের যুদ্ধের ব্যাপারে ইতিহাস ও সীরাত লেখকরা যুদ্ধ কাহিনীসংক্রান্ত হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থগুলোয় উদ্ধৃত বর্ণনাসমূহের ওপর নির্ভর করেছেন।

কিন্তু এই বর্ণনাগুলোর বিরাট অংশ কুরআন বিরোধী ও অনির্ভরযোগ্য। শুধুমাত্র ঈমানের কারণেই আমরা বদর যুদ্ধ সংক্রান্ত কুরআনী বর্ণনাকে সবচেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য বলে মনে করতে বাধ্য হই না বরং ঐতিহাসিক দিকে দিয়েও যদি আজ এ যুদ্ধ সংক্রান্ত সবচাইতে নির্ভরযোগ্য কোন বর্ণনা থেকে থাকে তাহলে তা হচ্ছে এ সূরা আনফাল। কারণ যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই এটি নাযিল হয়েছিল। যুদ্ধে যারা শরীক ছিলেন এবং যুদ্ধের স্বপক্ষের বিপক্ষের সবাই এটি শুনেছিলেন ও পড়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ এর মধ্যে কোন একটি কথাও যদি সত্য ও বাস্তব ঘটনা বিরোধী হতো তাহলে হাজার হাজার লোক এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতো। “হে আল্লাহ! এই কুরাইশরা এসেছে, তাদের সকল ঔদ্বত্য ও দাম্ভিবকতা নিয়ে তোমার রসূলকে মিথ্যা প্রমাণ করতে। হে আল্লাহ! এখন তোমার সেই সাহায্য এসে যাওয়া দরকার , যার ওয়াদা তুমি করেছিলে আমার সাথে। হে আল্লাহ! যদি আজ এ মুষ্টিমেয় দলটি ধ্বসং হয়ে যায় তাহলে এ পৃথীবীতে আর কোথাও তোমার ইবাদত করার মত কেউ থাকবে না”।

এ যুদ্ধের ময়দানে মক্কার মোহাজিরদের পরীক্ষা ছিল সবচেয়ে কঠিন । তাদের আপন ভাই -চাচা ইত্যাদি তাদের বিরুদ্দে ময়দানে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।কারোর বাপ, কারোর ছেলে,কারোর চাচা, কারোর মামা, কারোর ভাই দাড়িয়েছিল তার প্রতিপক্ষে । এ যুদ্ধে নিজের কলিজার টুকরার ওপর তরবারী চালাতে হচ্ছিল তাদের। এ ধরনের কঠিন পরীক্ষায় একমাত্র তারাই উত্তীর্ণ হতে পারে যারা পরিপূর্ণ নিষ্ঠা এ আন্তরিকতাসহকারে হক ও সত্যের সাথে সম্পর্ক জড়েছে। এবং মিথ্যা ও বাতিলের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পুরোপুরি উদ্যোগী হয়েছে। ওদিকে আনসারদের পরীক্ষা ও কিছু কম ছিল না। এতদিন তারা মুসলমানদেরকে শুধুমাত্র আশ্রয় দিয়ে কুরাইশ ও তাদের সহযোগী গোত্রগুলোর শত্রুতার ঝুঁকি নিয়েছিল। কিন্তু এবার তো তারা ইসলামের সমর্থনে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছিল। এর মানে ছিল, কয়েক হাজার লোকের একটি জনবসতি সমগ্র আরব দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে গেছে। এ ধরনের দুঃসাহস একমাত্র তারাই করতে পারে যারা সত্য আদর্শের ওপর ঈমান এনে তার জন্যে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে পুরোপুরি জলাঞ্জলী দিতে প্রস্তুত হতে পারে। অবশেষে তাদের অবিচল ঈমান ও সত্যানিষ্ঠা আল্লাহর সাহায্যের পুরষ্কার লাভে হয়ে গেলো। আর নিজেদের সমস্ত অহংকার ও শক্তির অহমিকা সত্ত্বেও কুরাইশরা এ সহায় সম্বলহীন জানবাজ সৈনিকদের হাতে পরাজিত হয়ে গেলো।

তাদের ৭০জন নিহিত হলো, ৭০জন বন্দী হলো এবং তাদের সাজসরঞ্জামগুলো গনীমতের সামগ্রী হিসেবে মুসলমানদের দখলে এলো। কুরাইশদের যেসব বড় বড় সরদার তাদের মজলিসে গুলজার করে বেড়াতো এবং ইসলাম বিরোধী আন্দোলনে যারা সর্বক্ষণ তৎপর থাকতো তারা এ যুদ্ধে নিহিত হলো। এ চুড়ান্ত বিজয় আরবে ইসলামকে একটি উল্লেখযোগ্য শক্তিতে পরিণত করলো। একজন পাশ্চত্য গবেষক লিখেছেন, বদর যুদ্ধের আগে ইসলাম ছিল শুধুমাত্র একটি ধর্ম ও রাষ্ট্র। কিন্তু বদর যুদ্ধের পরে তা রাষ্ট্রীয় ধর্মে বরং নিজেই রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গেলো। আলোচ্য বিষয় কুরআনের এ সূরাটিতে এ ঐতিহাসিক যুদ্ধের ঘটনাবলী পর্যালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু দুনিয়ার রাজা বাদশাহরা যুদ্ধ জয়ের পর যেভাবে নিজেদের সেনাবাহিনীর পর্যালোচনা করে থাকেন এ পর্যালোচার ধারাটি তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। মুসলমানরা যাতে তাদের নৈতিক ত্রুটিগুলো দূর করার জন্যে প্রচেষ্টা চালাতে পারে সে উদ্দেশ্যে এখানে সর্বপ্রথম সে সব নৈতিক ত্রুটি নির্দেশ করা হয়েছে। যেগুলো তখনো পর্যন্ত মুসলমানদের মধ্যে বিরাজমান ছিল। তারপর তাদের জানানো হয়েছে, এ বিজয়ে আল্লাহর সাহায্য ও সমর্থন কি পরিমাণ ছিল । এর ফলে তারা নিজেদের সাহসিকতা ও শৌর্য-বীর্যের মিথ্যা গরিমায় স্ফীত না হয়ে বরং এ থেকে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা এবং আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্যের শিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

এরপর যে নৈতিক উদ্দেশ্য মুসলমানদের হক ও বাতিলের ও সংঘাত সৃষ্টি করতে হবে তা সুষ্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। আয়াতভিত্তিক শানে নুজুল আয়াত-২৭ : আবু লুবাব, মারওয়ান ও আবদুল মুন্ষির সন্ধন্ধে আলোচ্য আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। বণী কোরাইযার ইহুদীদেরকে তিন মাস ১০দিন পর্যন্ত রাসূল (সা.) অবরোধ রাখার পর যখন তারা অপোষ মীমাসাংর প্রস্তাব দিল, তখন রাসূল (সা.) বললেন, সা’ আদ ইবনে মু’আয যে মীমাংসা করবেন, তদনুসারে মীমাংসা হবে।

তারা এ মিমাংসা না মেনে বলল, আবু লুবাবাকে যখন তারা জিজ্ঞেসা করে যে, মু আযের মিমাংসা সম্পর্কে তোমার মত কি? তিনি ইঙ্গিতে বললেন, তোমাদের হত্যা করা হবে।এর পর হযরত আবু লুবাবা স্বীয় কর্মকে আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রতি জঘন্য খেয়ানত মনে করে তৎক্ষণা মসজিদে নবনীতে রাসূল (সা.) এর সাথে দেখা না করে নিজেকে মসজিদের একটি খুটিঁর সঙ্গে বেঁধে শপথ করে বললেন, যে পর্যন্ত আমার তওবা কবূল না হবে আমি আহার করব না। এরূপে অনবরত সাত দিন পানাহার ব্যতীত থাকার পর অজ্ঞান হয়ে পড়ল রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট এ বিষয়ে সংবাদ পৌঁছলে হুযুর (সা.) বললেন, সে যদি সরাসরি আমার নিকট তখনই চলে আসত, তবে আমিসহ তার জন্য ক্ষমা চাইতাম। কিন্তু সে যখন স্বেচ্ছায় এ শপথ করেছে তখন আমার কিছু করার নেই আল্লাহ্ তা’আলা তার তওবা কবূল না করা পর্যন্ত। অতঃপর আল্লাহ্ আবু লুবাবার তওবা কবূল করলে আবু লুবাবা এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ স্বজাতীয় গ্রাম ত্যাগের এবং সমুদয় সম্পদ আল্লাহ্র রাস্তায় দান করার প্রতিজ্ঞা করলেন। রাসূল (সা.) বললেন, এক তৃতীয়াংশ ছদকা করা যথেষ্ট, সমস্ত সম্পদ করো না।

এ প্রেক্ষিতে ২৭ ও ২৮ নং আয়াত নাযিল হয়। আয়াত-৪১ : গণীমতের মাল বণ্টনের বিধান হল-তাকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে চারভাগ মুজাহিদদেরকে, অবশিষ্ট পঞ্চমাংশকে পুনরায় পাঁচ ভাগ করে একভাগ রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে, একভাগ তাঁর আত্মীয়-স্বজনকে, একভাগ এতীমদেরকে, একভাগ মিসকীনদেরকে এবং এক ভাগ মুসাফিরদেরকে দেয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর উক্ত এক পঞ্চমাংশ সমানভাবে শেষোক্ত তিন দলের মাঝে ভাগ হবে। (মুঃ কোঃ) আয়াত-৪৮ : এই আয়াতটি নিন্মোক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করার জন্য নাযিল হয়েছে- কেনানা কোরাইশ কাফেররা যখন মক্কা ত্যাগ করে মুসলমানদের মুকাবেলায় যেতে উদ্যোগ নিল, তখন তারা কেনানা বংশের পক্ষ হতে প্রতি আক্রমণের আশঙ্কা করল এবং যাওয়া না যাওয়ার ইতস্ততঃ করছিল। তখন কেনানা বংশের সরদার সুরাকার আকৃতিতে শয়তান এসে তাদেরকে বলল তোমরা চিন্তা করো না আমি বনী কেনানার পক্ষ হতে জামিন আছি। সকলেই মনে করল, সে ‘সুরাকা’।

ফলে তারা নিশ্চিন্ত মনে বদর প্রান্তে উপণিত হল এবং ঐ সুরাকার হাতও হারেসের হাতে মুষ্টিবদ্ধ ছিল। যুদ্ধ যখন আরম্ভ হল এবং ফেরেশতাদের আগমন শুরু হল তখন সে হারেসের হাত ছেড়ে পালাতে লাগল। কি হল জিজ্ঞাসা করলে সে জবাব দিল আমি যা প্রত্যক্ষ করছি তোমরা তা দেখছ না। আয়াত-৬২ : এটা হতে বুঝা যায় যে, মানুষের অন্তরে পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টি হওয়া আল্লাহ তা’আলার দান। এতে আরও প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর নাফরমানীর মাধ্যমে তাঁর দান অর্জন করা সম্ভব নয়; বরং তাঁর দান লাভের জন্য তাঁর আনুগত্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা একান্ত প্রয়োজন। (মাঃ কোঃ)

আয়াত-৬৪ : হযরত ওমর (রা.) যখন ঈমান আনেন তখন পর্যন্ত তেত্রিশজন পুরুষ ও ছয়জন নারী ঈমান গ্রহণ করেছিলেন। এ সময় মুশরিকরা আফসূস করে বলল, আমাদের দল হতে ওমর চলে যাওয়ায় আমাদের অর্ধেক শূন্য হয়ে গেল। আর ইসলাম পন্থীদের সংখ্যা এখন চল্লিশজন হল। এ সময়ে আল্লাহ্পাক আলোচ্য আয়াতটি নাযিল করেন। এ বর্ণনানুসারে আয়াতটি মাক্কী এবং সূরাটি মাদানী। আয়াত-৬৭ : বদরযুদ্ধে সত্তরজন কাফের মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়। যাদের মধ্যে হযরত আব্বাস (রা.) ও হযরত আক্কীল ইবনে আবিতালেবও ছিলেন। হুযূর (সা.) তাদের সম্বন্ধে সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করলেন। রাসূল (সা.) হযরত আবূ বকর (রা.)-এর মতামত গ্রহণ করলেন এবং সকল বন্দীদেরকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু হযরত ওমরের পরামর্শ ছিল ভিন্ন। তিনি প্রত্যেককে হত্যার কথা বলেছিলেন। তার মতের স্বপক্ষে এ ভৎসনাব্যঞ্জক আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।

অতঃপর এ র্ভৎসনার কারণে মুসলমানেরা গণীমতের মাল গ্রহণেও যখন অসুবিধা মনে করল, তখন তা লওয়ার অনুমতিস্বরূপ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। আয়াত-৭০ : বদর যুদ্ধ বন্দীদের মধ্যে হযরত আব্বাস (রা.) এবং আক্কীল ও নওফেল ইবনে হারেসও বন্দী হয়ে আসে। রাসূল (সা.) যখন হযরত আব্বাস হতে তার দু ভ্রাতুত্র আক্কীল ও নওফেলের মুক্তিপণ দাবী করলেন, তখন আব্বাস বললেন, তোমরা কি আমাকে একেবারে দরিদ্র বানিয়ে দিতে চাও, সারা জীবন যেন কোরাইশদের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে বেড়াতে থাকি?” রাসূল (সা.) বললেন, “সেই স্বর্ণ কোথায়? যা যুদ্ধ যাত্রাকালে আপন স্ত্রী উম্মুল ফযলের নিকট এ বলে হাওয়ালা করেছিলেন যে, কি জানি যুদ্ধে কি ঘটে, যদি অভাবিত কিছু হয়, তবে তুমি এই স্বর্ণ দ্বারা আপন সন্তান আবদুল্লাহ্, ওবাইদুল্লাহ্, ফযল, কসম ও তোমার খরচ চালিয়ে যেয়ো।” এতদশ্রবণে হযরত আব্বাস হতভম্ব হয়ে গেলেন এবং বললেন, “মুহাম্মদ! এই সংবাদ তোমাকে কে দিল?” হুযূর (সা.) বললেন, “আমার মহান রব!” তখন হযরত আব্বাস কালেমা পড়ে ঈমান আনলেন এবং বললেন, আমি স্বীকার করছি হে মুহাম্মদ (সা.)! আপনি সম্পূর্ণ সত্যবাদী এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ব্যতীত দ্বিতীয় কোন মা’বুদ নেই এবং আপনি তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

বাংলা উচ্চারণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বাংলা অনুবাদ পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَنْفَالِ قُلِ الْأَنْفَالُ لِلَّهِ وَالرَّسُولِ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ8.1

বাংলা উচ্চারণ ৮.১। ইয়াস্য়ালূনাকা ‘আনিল্ আন্ফা-ল;কুলিল্ আন্ফা-লু লিল্লা-হি র্অরসূলি, ফাত্তকুল্লা-হা অ আছ্লিহূ যা-তা বাইনিকুম্ অ আত্বী‘উল্লা-হা অরসূলাহূ য় ইন্ কুন্তুম্ মু”মিনীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.১ লোকেরা তোমাকে গনীমতের মাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে; বল, গনীমতের মাল আল্লাহ ও রাসূলের জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং পরস্পরের মধ্যকার অবস্থা সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা মুমিন হও।

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ8.2

বাংলা উচ্চারণ ৮.২। ইন্নামাল্ মু”মিনূনা ল্লাযীনা ইযা-যুকিরাল্লা-হু অজ্বিলাত্ কুলূবুহুম্ অ ইযা-তুলিয়াত্ ‘আলাইহিম্ আ-ইয়া-তুহূ যা-দাত্হুম্ ঈমা-নাঁও অ‘আলা-রব্বিহিম্ ইয়াতাঅক্কালূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.২ মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে।

الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ8.3

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩। আল্লাযীনা ইয়ুক্বীমূনাছ্ ছলা-তা অ মিম্মা-রযাকনা হুম্ ইয়ুন্ফিকুন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩ যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে।

أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ8.4

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪। উলা – য়িকা হুমুল্ মু”মিনূনা হাকক্বা-; লাহুম্ দারাজ্বা-তুন্ ‘ইন্দা রব্বিহিম্ অমাগ্ফিরাতুঁও অরিয্ক্বুন্ কারীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪ তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট উচ্চ মর্যাদাসমূহ এবং ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযক।

كَمَا أَخْرَجَكَ رَبُّكَ مِنْ بَيْتِكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّ فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لَكَارِهُونَ8.5

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫। কামা – আখ্রাজ্বাকা রব্বুকা মিম্ বাইতিকা বিল্হাকক্বি অইন্না ফারীকাম্ মিনাল্ মুমিনীনা লাকা-রিহূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫ (এটা এমন) যেভাবে তোমার রব তোমাকে নিজ ঘর থেকে বের করেছেন যথাযথভাবে এবং নিশ্চয় মুমিনদের একটি দল তা অপছন্দ করছিল।

يُجَادِلُونَكَ فِي الْحَقِّ بَعْدَمَا تَبَيَّنَ كَأَنَّمَا يُسَاقُونَ إِلَى الْمَوْتِ وَهُمْ يَنْظُرُونَ8.6

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬। ইয়ুজ্বা-দিলূনাকা ফিল্হাকক্বি বা’দা মা-তাবাইয়্যানা কাআন্নামা-ইয়ুসা-কুনা ইলাল্ মাওতি অহুম্ ইয়ান্জুরূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬ তারা তোমার সাথে সত্য সম্পর্কে বিতর্ক করছে তা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর। যেন তাদেরকে মৃত্যুর দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হচ্ছে, আর তারা তা দেখছে।

وَإِذْ يَعِدُكُمُ اللَّهُ إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ أَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ وَيُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِينَ 8.7

বাংলা উচ্চারণ ৮.৭। অইয্ ইয়া‘ইদুকুমুল্লা-হু ইহ্দাত্বত্বোয়া-য়িফাতাইনি আন্নাহা-লাকুম্ অতাওয়াদ্দূনা আন্না গাইরা যা-তিশ্ শাওকাতি তাকূনু লাকুম্ অইয়ুরীদুল্লা-হু আঁই ইয়ুহিকক্বাল্ হাকক্বা বিকালিমা-তিহী অইয়াকত্বোয়া‘আ দা-বিরাল্ কা-ফিরীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৭ আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে দু’দলের একটির ওয়াদা দিয়েছিলেন যে, নিশ্চয় তা তোমাদের জন্য হবে। আর তোমরা কামনা করছিলে যে, অস্ত্রহীন দলটি তোমাদের জন্য হবে এবং আল্লাহ চাচ্ছিলেন তাঁর কালেমাসমূহ দ্বারা সত্যকে সত্য প্রমাণ করবেন এবং কাফেরদের মূল কেটে দেবেন।

لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ8.8

বাংলা উচ্চারণ ৮.৮। লিইয়ুহিকক্বাল্ হাক্ক্বা অইয়ুব্ত্বিলাল্ বা-ত্বিলা অলাও কারিহাল্ মুজ্বরিমূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৮ যাতে তিনি সত্যকে সত্য প্রমাণিত করেন এবং বাতিলকে বাতিল করেন, যদিও অপরাধীরা তা অপছন্দ করে।

إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ8.9

বাংলা উচ্চারণ ৮.৯। ইয্ তাস্তাগীছূনা রব্বাকুম্ ফাস্তাজ্বা-বা লাকুম্ আন্নী মুমিদ্দুকুম্ বিআল্ফিম্ মিনাল্ মালা – য়িকাতি র্মুদিফীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৯ আর স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের রবের নিকট ফরিয়াদ করছিলে, তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পর পর আগমনকারী এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করছি’।

وَمَا جَعَلَهُ اللَّهُ إِلَّا بُشْرَى وَلِتَطْمَئِنَّ بِهِ قُلُوبُكُمْ وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ8.10

বাংলা উচ্চারণ ৮.১০। অমা-জ্বা‘আলাহুল্লা-হু; ইল্লা-বুশ্রা- অলিতাত্বমায়িন্না বিহী কুলূবুকুম্ অমান্নাছ্রু ইল্লা-মিন্ ‘ইনদিল্লা-হ্; ইন্নাল্লা-হা ‘আযীযুন্ হাকীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.১০ আর আল্লাহ তো তা করেছেন কেবল সুসংবাদস্বরূপ এবং যাতে এর দ্বারা তোমাদের অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয় এবং সাহায্য তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لِيُطَهِّرَكُمْ بِهِ وَيُذْهِبَ عَنْكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلَى قُلُوبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الْأَقْدَامَ 8.11

বাংলা উচ্চারণ ৮.১১। ইয ইয়ুগাশ্শীকুমুন্ নু‘আ- সা আমানাতাম্ মিন্হু অইয়ুনায্যিলু ‘আলাইকুম্ মিনাস্ সামা-য়ি মা-য়াল্ লিইয়ুত্বোয়াহ্হিরাকুম্ বিহী অইয়ুয্হিবা ‘আন্কুম্ রিজ্বযাশ্ শাইত্বোয়া-নি অলিইর্য়াবিত্বোয়া ‘আলা- কুলূ বিকুম্ অইয়ুছাব্বিতা বিহিল্ আক্বদা-ম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.১১ স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন তাঁর পক্ষ থেকে নিরাপত্তাস্বরূপ এবং আকাশ থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর যাতে এর মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করেন, আর তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করেন, তোমাদের অন্তরসমূহ দৃঢ় রাখেন এবং এর মাধ্যমে তোমাদের পাসমূহ স্থির রাখেন।

إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلَائِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِينَ آمَنُوا سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ8.12

বাংলা উচ্চারণ ৮.১২। ইয্ ইয়ূহী রব্বুকা ইলাল্ মালা – য়িকাতি আন্নী মা‘আকুম্ ফাছাব্বিতুল্ লাযীনা আ-মানূ; সাউল্ক্বী ফী কুলূবিল্ লাযীনা কাফার্রু রু’বা ফাদ্ব্রিবূ ফাওক্বাল্ আ’না-ক্বি ওয়াদ্বরিবূ মিন্হুম্ কুল্লা বানা-ন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.১২ স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করেন যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তোমরা তাদেরকে অনড় রাখ’। অচিরেই আমি ভীতি ঢেলে দেব তাদের হৃদয়ে যারা কুফরী করেছে। অতএব তোমরা আঘাত কর ঘাড়ের উপরে এবং আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙুলের অগ্রভাগে।

ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَمَنْ يُشَاقِقِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ8.13

বাংলা উচ্চারণ ৮.১৩। যা-লিকা বিআন্নাহুম্ শা – ককুল্ লা-হা অ রসূলাহূ অমাই ইয়ুশা-ক্বিক্বি ল্লা-হা অ রসূলাহূ ফাইন্নাল্লা-হা শাদীদুল্ ই’ক্বা-ব্।

বাংলা অনুবাদ ৮.১৩ এটি এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করেছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।

ذَلِكُمْ فَذُوقُوهُ وَأَنَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابَ النَّارِ8.14

বাংলা উচ্চারণ ৮.১৪। যা-লিকুম্ ফাযূকুহু অ আন্না লিল্কাফিরীনা ‘আযা-বান্নার্-।

বাংলা অনুবাদ ৮.১৪ এটি আযাব, সুতরাং তোমরা তা আস্বাদন কর। আর নিশ্চয় কাফিরদের জন্য রয়েছে আগুনের আযাব।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوهُمُ الْأَدْبَارَ8.15

বাংলা উচ্চারণ ৮.১৫। ইয়া য় আ ইয়্যুহাল্ লাযীনা আ-মানূ য় ইযা-লাক্বীতুমুল্ লাযীনা কাফারূ যাহ্ফান্ ফালা-তুওয়াল্লূ হুমুল্ আদ্বার্-।

বাংলা অনুবাদ ৮.১৫ হে মুমিনগণ, তোমরা যখন কাফিরদের মুখোমুখি হবে বিশাল বাহিনী নিয়ে, তখন তাদের থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না।

وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَى فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ8.16

বাংলা উচ্চারণ ৮.১৬। অমাইঁ ইয়ুওয়াল্লিহিম্ ইয়াওমায়িযিন্ দুবুরাহূ য় ইল্লা- মুতার্হারিফাল্ লিক্বিতা-লিন্ আও মুতাহাইয়্যিযান্ ইলা-ফিয়াতিন্ ফাক্বদ্ বা- য়া বিগাদ্বোয়াবিম্ মিনাল্লা-হি অমা’ওয়া-হু জ্বাহান্নাম্; অবিসাল্ মাছীর।

বাংলা অনুবাদ ৮.১৬ আর যে ব্যক্তি সেদিন তাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তাহলে সে আল্লাহর গযব নিয়ে ফিরে আসবে। তবে যুদ্ধের জন্য (কৌশলগত) দিক পরিবর্তন অথবা নিজ দলে আশ্রয় গ্রহণের জন্য হলে ভিন্ন কথা এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর সেটি কতইনা নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।

فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ قَتَلَهُمْ وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ رَمَى وَلِيُبْلِيَ الْمُؤْمِنِينَ مِنْهُ بَلَاءً حَسَنًا إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ8.17

বাংলা উচ্চারণ ৮.১৭। ফালাম্ তাকতুলূহুম্ অলা-কিন্না ল্লা-হা ক্বাতালাহুম্ অমা-রমাইতা ইয্ রমাইতা অলা-কিন্না ল্লা-হা রমা-অলিইয়ুব্লিয়াল্ মু”মিনীনা মিন্হু বালা-য়ান্ হাসানা-; ইন্নাল্লা-হা সামী‘উন্ ‘আলীম্ ।

বাংলা অনুবাদ ৮.১৭ সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি নিক্ষেপ করনি যখন তুমি নিক্ষেপ করেছিলে; বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছেন এবং যাতে তিনি তাঁর পক্ষ থেকে মুমিনদেরকে পরীক্ষা করেন উত্তম পরীক্ষা। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

ذَلِكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ مُوهِنُ كَيْدِ الْكَافِرِينَ8.18

বাংলা উচ্চারণ ৮.১৮। যা-লিকুম্ অআন্নাল্লা-হা মূহিনু কাইদিল্ কা-ফিরীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.১৮ এই (হল ঘটনা) এবং নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের ষড়যন্ত্র দুর্বল করে দেন।

إِنْ تَسْتَفْتِحُوا فَقَدْ جَاءَكُمُ الْفَتْحُ وَإِنْ تَنْتَهُوا فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَإِنْ تَعُودُوا نَعُدْ وَلَنْ تُغْنِيَ عَنْكُمْ فِئَتُكُمْ شَيْئًا وَلَوْ كَثُرَتْ وَأَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ8.19

বাংলা উচ্চারণ ৮.১৯। ইন্ তাস্তাফ্তিহূ ফাক্বদ্ জ্বা – য়াকুমুল্ ফাত্হু অইন্ তান্তাহূ ফাহুওয়া খইরুল্লাকুম্, অইন্ তা‘ঊদূ না‘উদ্,অলান্ তুগ্নিয়া ‘আন্কুম্ ফিয়াতুকুম্ শাইয়াঁও অলাও কাছুরাত অআন্নাল্লা-হা মা‘আল্ মু”মিনীন্

বাংলা অনুবাদ ৮.১৯ যদি তোমরা বিজয় কামনা করে থাক, তাহলে তো তোমাদের নিকট বিজয় এসে গিয়েছে। আর যদি তোমরা বিরত হও, তাহলে সেটি তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর যদি তোমরা পুনরায় কর, তাহলে আমিও পুনরায় করব এবং তোমাদের দল কখনো তোমাদের কোন উপকারে আসবে না যদিও তা অধিক হয়। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের সাথে আছেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَأَنْتُمْ تَسْمَعُونَ8.20

বাংলা উচ্চারণ ৮.২০। ইয়া য় আইয়াহাল্ লাযীনা আ-মানূ য় আত্বী‘উল্লা-হা- অ রসূলাহূ অলা-তাওয়াল্লাও ‘আন্হু অআন্তুম্ তাস্মা‘ঊন।

বাংলা অনুবাদ ৮.২০ হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, অথচ তোমরা শুনছ।

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ قَالُوا سَمِعْنَا وَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ8.21

বাংলা উচ্চারণ ৮.২১। লা-তাকূনূ কাল্লাযীনা ক্ব-লূ সামি’না- অহুম্ লা-ইয়াস্মা‘ঊন।

বাংলা অনুবাদ ৮.২১ আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে আমরা শুনেছি অথচ তারা শুনে না।

إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ8.22

বাংলা উচ্চারণ ৮.২২। ইন্না র্শারা দ্দাওয়া-ব্বি ‘ইন্দা ল্লা-হিছ্ ছুম্মুল্ বুক্মুল্লাযীনা লা-ইয়া’ক্বিলূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.২২ নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম বিচরণশীল প্রাণী হচ্ছে বধির, বোবা, যারা বুঝে না।

وَلَوْ عَلِمَ اللَّهُ فِيهِمْ خَيْرًا لَأَسْمَعَهُمْ وَلَوْ أَسْمَعَهُمْ لَتَوَلَّوْا وَهُمْ مُعْرِضُونَ 8.23

বাংলা উচ্চারণ ৮.২৩। অলাও ‘আলিমাল্লা-হু ফীহিম্ খাইরাল্ লাআস্মা‘আহুম্;অলাও আস্মা‘আহুম্ লাতাওয়াল্লাও অহুম্ মু’রিদ্বুন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.২৩ আর আল্লাহ যদি তাদের মধ্যে কোন কল্যাণ জানতেন তাহলে অবশ্যই তাদেরকে শুনাতেন। আর যদি শুনাতেন তাহলেও তারা মুখ ফিরিয়ে নিত, এমতাবস্থায় যে, তারা উপেক্ষাকারী।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ8.24

বাংলা উচ্চারণ ৮.২৪। ইয়া য় আইয়্যুহা ল্লাযীনা আ-মানুস্ তাজ্বীবূ লিল্লা-অর্লিরসূলি ইযা-দা‘আ-কুম্ লিমা-ইয়ুহ্য়ীকুম্ অ’লামূ য় আন্না ল্লা-হা ইয়াহূলু বাইনাল্ মার্-য়ি অক্বল্বিহী অআন্নাহূ য় ইলাইহি তুহ্শারূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.২৪ হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দাও; যখন সে তোমাদেরকে আহ্বান করে তার প্রতি, যা তোমাদেরকে জীবন দান করে। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন। আর নিশ্চয় তাঁর নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।

وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ8.25

বাংলা উচ্চারণ ৮.২৫। অত্তাকু ফিত্নাতাল্ লা-তুছীবান্নাল্ লাযীনা জ্বোয়ালামূ মিন্কুম্ খা-ছ্ছোয়াতান্ অ’লামূ য় আন্নাল্লা-হা শাদীদুল্ ই’ক্বা-ব্।

বাংলা অনুবাদ ৮.২৫ আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।

وَاذْكُرُوا إِذْ أَنْتُمْ قَلِيلٌ مُسْتَضْعَفُونَ فِي الْأَرْضِ تَخَافُونَ أَنْ يَتَخَطَّفَكُمُ النَّاسُ فَآوَاكُمْ وَأَيَّدَكُمْ بِنَصْرِهِ وَرَزَقَكُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ 8.26

বাংলা উচ্চারণ ৮.২৬। অয্কুরূ য় ইয্ আন্তুম্ ক্বালীলুম্ মুস্তাদ্ব্‘আফূনা ফিল্ র্আদ্বি তাখা-ফূনা আই ইয়াতাখাত্ত্বোয়াফাকুমুন্ না-সু ফাআ-ওয়া-কুম্ অ আইয়্যাদাকুম্ বিনাছ্রিহী অ রযাক্বাকুম্ মিনাত্ ত্বোয়াইয়্যিবা-তি লা‘আল্লাকুম্ তাশ্কুরূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.২৬ আর স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে অল্প, তোমাদেরকে দুর্বল মনে করা হত যমীনে। তোমরা আশঙ্কা করতে যে, লোকেরা তোমাদেরকে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন, নিজ সাহায্য দ্বারা তোমাদেরকে শাক্তিশালী করেছেন এবং তোমাদেরকে পবিত্র রিয্ক দান করেছেন। যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ8.27

বাংলা উচ্চারণ ৮.২৭। ইয়া য় আইয়্যুহাল্লাযীনা অ-মানূ লা- তাখূনুল্লা-হা র্অরসূলা অতাখূনূ য় আমা-না-তিকুম্ অ আন্তুম্ তা’লামূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.২৭ হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের খিয়ানত করো না। আর খিয়ানত করো না নিজদের আমানতসমূহের, অথচ তোমরা জান।

وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ8.28

বাংলা উচ্চারণ ৮.২৮। অ’লামূ য় অন্নামা য় ‘আম্ওয়া-লুকুম্ অ ‘আওলা-দুকুম্ ফিত্নাতুঁও অআন্না ল্লা-হা ‘ইন্দাহূয় আজ্বরুন্ ‘আজীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.২৮ আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো ফিতনা। আর নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর নিকট আছে মহা পুরস্কার।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ8.29

বাংলা উচ্চারণ ৮.২৯। ইয়া য় আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূয় ইন্ তাত্তাকুল্লা-হা ইয়াজ্ব‘আল্ লাকুম্ র্ফুক্ব-নাও অইয়ুকার্ফ্ফি ‘আন্কুম্ সাইয়িয়া-তিকুম্ ইয়ার্গ্ফিলাকুম্ ; অল্লা-হু যুল্ফাদ্ব্লিল্ ‘আজ্বীম্ ।

বাংলা অনুবাদ ৮.২৯ হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন, তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।

وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ 8.30

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩০। অইয্ ইয়াম্কুরু বিকাল্লাযীনা কাফারূ লিইয়ুছ্বিতূকা আও ইয়াকতুলূকা আও ইয়ুখ্রিজ্ব ূক্; অ ইয়াম্কুরূনা অ ইয়াম্কুরুল্লা-হ্; অল্লা-হু খাইরুল্ মা-কিরীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩০ আর যখন কাফিররা তোমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল, তোমাকে বন্দী করতে অথবা তোমাকে হত্যা করতে কিংবা তোমাকে বের করে দিতে। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে উত্তম।

وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا قَالُوا قَدْ سَمِعْنَا لَوْ نَشَاءُ لَقُلْنَا مِثْلَ هَذَا إِنْ هَذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ8.31

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩১। অইযা-তুত্লা- ‘আলাইহিম্ আ-ইয়া-তুনা-ক্ব-লূ ক্বদ্ সামি’না লাও নাশা – য়ু লাকুল্না- মিছ্লা হা-যা য় ইন্ হা-যা য় ইল্লা য় আসা-ত্বীরুল্ আওওয়ালীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩১ আর তাদের উপর যখন আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা বলে, শুনলাম তো। যদি আমরা চাই, তাহলে এর অনুরূপ আমরাও বলতে পারি। এতো পিতৃ-পুরুষদের কল্প-কাহিনী ছাড়া কিছু না।

وَإِذْ قَالُوا اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ هَذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِنْدِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِنَ السَّمَاءِ أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ8.32

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩২। অইয্ ক্ব-লুল্লা-হুম্মা ইন্ কা-না- হা-যা- হুঅল্ হাকক্বা মিন্ ‘ইন্দিকা ফাআর্ম্ত্বি ‘আলাইনা- হিজ্বা-রাতাম্ মিনাস্ সামা – য়ি আওয়িতিনা-বি‘আযা-বিন্ আলীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩২ আর স্মরণ কর, যখন তারা বলেছিল, ‘হে আল্লাহ, যদি এটি সত্য হয় আপনার পক্ষ থেকে তাহলে আমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করুন অথবা আমাদের উপর অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক আযাব নিয়ে আসুন’।

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ8.33

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩৩। অমা-কা- নাল্লা-হু লিইয়ু‘আযযিবাহুম্ অ‘আন্তা ফীহিম্; অমা-কানা ল্লা-হু মু‘আয্যিবাহুম্ অহুম্ ইয়াস্তাগ্ফিরূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩৩ আর আল্লাহ এমন নন যে, তাদেরকে আযাব দেবেন এ অবস্থায় যে, তুমি তাদের মাঝে বিদ্যমান এবং আল্লাহ তাদেরকে আযাব দানকারী নন এমতাবস্থায় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে।

وَمَا لَهُمْ أَلَّا يُعَذِّبَهُمُ اللَّهُ وَهُمْ يَصُدُّونَ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَا كَانُوا أَوْلِيَاءَهُ إِنْ أَوْلِيَاؤُهُ إِلَّا الْمُتَّقُونَ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ8.34

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩৪। অমা লাহুম্ আল্লা-ইয়ু‘আয্যিবাহুমুল্লা-হু অহুম্ ইয়াছুদ্দূনা ‘আনিল্ মাস্জ্বিদিল্ হারা-মি অমা-কানূ য় আওলিয়া – য়াহ্; ইন্ আওলিয়া – য়ুহূ য় ইল্লাল্ মুত্তাকুনা অলা-কিন্না আক্ছারাহুম্ লা-ইয়া’লামূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩৪ আর তাদের কী আছে যে, আল্লাহ তাদেরকে আযাব দেবেন না? অথচ তারা মসজিদুল হারাম থেকে বাধা প্রদান করে, আর তারা এর অভিভাবকও নয়। তার অভিভাবক তো শুধু মুত্তাকীগণ; কিন্তু তাদের অধিকাংশ জানে না।

وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمْ عِنْدَ الْبَيْتِ إِلَّا مُكَاءً وَتَصْدِيَةً فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ8.35

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩৫। অমা-কা-না ছলা-তুহুম্ ‘ইন্দাল্ বাইতি ইল্লা- মুকা – য়াঁও অতাছ্দিয়াহ; ফাযূকুল্ ‘আযা-বা বিমা-কুন্তুম্ তাক্ফুরূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩৫ আর কা‘বার নিকট তাদের সালাত শিষ ও হাত-তালি ছাড়া কিছু ছিল না। সুতরাং তোমরা আস্বাদন কর আযাব। কারণ তোমরা কুফরী করতে।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ فَسَيُنْفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ8.36

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩৬। ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ ইয়ুন্ফিকুনা আমওয়া-লাহুম্ লিইয়াছুদ্দূ ‘আন্ সাবীলিল্লা-হ্; ফাসাইয়ুন্ফিকুনাহা- ছুম্মা তাকূনু ‘আলাইহিম হাস্রাতান্ ছুম্মা ইয়ুগ্লাবূন্; অল্লাযীনা কাফারূ য় ইলা-জ্বাহান্নামা ইয়ুহশারূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩৬ নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে, তারা নিজদের সম্পদসমূহ ব্যয় করে, আল্লাহর রাস্তা হতে বাধা প্রদান করার উদ্দেশ্যে। তারা তো তা ব্যয় করবে। অতঃপর এটি তাদের উপর আক্ষেপের কারণ হবে এরপর তারা পরাজিত হবে। আর যারা কুফরী করেছে তাদেরকে জাহান্নামে সমবেত করা হবে।

لِيَمِيزَ اللَّهُ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيثَ بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ فَيَرْكُمَهُ جَمِيعًا فَيَجْعَلَهُ فِي جَهَنَّمَ أُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ8.37

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩৭। লিইয়ামীযাল্লা-হুল্ খাবীছা মিনাত ত্বোয়াইয়্যিবি অইয়াজ্ব‘আলাল্ খবীছা বা’দ্বোয়াহূ ‘আলা- বা’দ্বিন্ ফাইর্য়াকুমাহূ জ্বামীআন্ ফাইয়াজ্ব‘আলাহূ ফী জ্বাহান্নাম্;উলা – য়িকা হুমুল্ খ-সিরূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩৭ যাতে আল্লাহ পৃথক করেন মন্দকে ভাল হতে আর মন্দের কতককে কতকের উপর রাখবেন এবং সেগুলোকে একসাথে স্তূপ করবেন। এরপর তা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।

قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنْتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ وَإِنْ يَعُودُوا فَقَدْ مَضَتْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ8.38

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩৮। কুল্ লিল্লাযীনা কাফারূ য় ইঁ ইয়ান্তাহূ ইয়ুর্গ্ফালাহুম্ মা-ক্বাদ্ সালাফা অইঁ ইয়া‘ঊদূ ফাক্বদ্ মাদ্বোয়াত্ সুন্নাতুল্ আওঅলীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩৮ যারা কুফরী করেছে তুমি তাদেরকে বল, যদি তারা বিরত হয় তাহলে অতীতে যা হয়েছে তাদেরকে তা ক্ষমা করা হবে। আর যদি তারা পুনরায় করে তাহলে পূর্ববর্তীদের (ব্যাপারে আল্লাহর) রীতি তো গত হয়েছে।

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ8.39

বাংলা উচ্চারণ ৮.৩৯। অক্বা-তিলূ হুম্ হাত্তা-লা-তাকূনা ফিত্নাতুঁও অইয়াকূনাদ্ দীনু কুল্লুহূ লিল্লা-হি ফাইনিন্তাহাও ফাইন্নাল্লা-হা বিমা-ইয়া’মালূনা বার্ছী।

বাংলা অনুবাদ ৮.৩৯ আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। তবে যদি তারা বিরত হয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে তার সম্যক দ্রষ্টা।

وَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَوْلَاكُمْ نِعْمَ الْمَوْلَى وَنِعْمَ النَّصِيرُ8.40

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪০। অইন্ তাঅল্লাও ফা’লামূ য় আন্নাল্লা-হা মাওলা-কুম্; নি’মাল্ মাওলা- অনি’মান্ নার্ছী।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪০ আর যদি তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে, তাহলে জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক। তিনি কতইনা উত্তম অভিভাবক এবং কতইনা উত্তম সাহায্যকারী।

وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَى وَلِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ إِنْ كُنْتُمْ آمَنْتُمْ بِاللَّهِ وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَى عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ8.41

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪১। অ’লামূ য় আন্নামা-গনিম্তুম্ মিন্ শাইয়িন্ ফাআন্না লিল্লা-হি খুমুসাহূ অর্লিরসূলি অলিযিল্ ক্বর্ বা- অল্ইয়াতা-মা- অল্মাসা-কীনি অব্নিস্ সাবীলি ইন্ কুন্তুম্ আ-মান্তুম্ বিল্লা-হি অমা য় আন্যাল্না-‘আলা-আব্দিনা-ইয়াওমাল্ র্ফুক্বা-নি ইয়াওমাল্ তাক্বাল্ জ্বাম্‘আ-ন্; অল্লা-হু ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন্ ক্বার্দী।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪১ আর তোমরা জেনে রাখ, তোমরা যা কিছু গনীমতরূপে পেয়েছ, নিশ্চয় আল্লাহর জন্যই তার এক পঞ্চমাংশ ও রাসূলের জন্য, নিকট আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরের জন্য, যদি তোমরা ঈমান এনে থাক আল্লাহর প্রতি এবং হক ও বাতিলের ফয়সালার দিন আমি আমার বান্দার উপর যা নাযিল করেছি তার প্রতি, যেদিন দু’টি দল মুখোমুখি হয়েছে, আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

إِذْ أَنْتُمْ بِالْعُدْوَةِ الدُّنْيَا وَهُمْ بِالْعُدْوَةِ الْقُصْوَى وَالرَّكْبُ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَوْ تَوَاعَدْتُمْ لَاخْتَلَفْتُمْ فِي الْمِيعَادِ وَلَكِنْ لِيَقْضِيَ اللَّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولًا لِيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْ بَيِّنَةٍ وَيَحْيَا مَنْ حَيَّ عَنْ بَيِّنَةٍ وَإِنَّ اللَّهَ لَسَمِيعٌ عَلِيمٌ 8.42

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪২। ইয্ আন্তুম্ বিল্উ’দ্ অতিদ্ দুন্ইয়া- অহুম বিল্উ’দ্অতিল্ কুছ্ওয়া-অররাক্বু আস্ফালা মিন্কুম্; অলাও তাওয়া-‘আত্তুম্ লাখ্ তালাফ্তুম্ ফীল্ মী‘আ-দি অলাকিল্ লিইয়াকদ্বিয়াল্লা-হু আম্রান্ কা-না মাফ্ঊ’লাল্ লিইয়াহ্লিকা মান্ হালাকা ‘আম্ বাইয়্যিনাতিঁও অইয়াহ্ইয়া-মান্ হাইয়্যা আম্ বাইয়্যিনাহ্; অইন্নাল্লা-হা লাসামীউ’ন্ ‘আলীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪২ যখন তোমরা ছিলে নিকটবর্তী প্রান্তরে, আর তারা ছিল দূরবর্তী প্রান্তরে এবং কাফেলা ছিল তোমাদের চেয়ে নিম্নভূমিতে, আর যদি তোমরা পরস্পর ওয়াদাবদ্ধ হতে, (যুদ্ধে মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারে) তাহলে অবশ্যই সে ওয়াদার ক্ষেত্রে তোমরা মতবিরোধ করতে, কিন্তু আল্লাহ (তাদেরকে একত্র করেছেন) যাতে সম্পন্ন করেন এমন কাজ যা হওয়ারই ছিল, যে ধ্বংস হওয়ার সে যাতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর ধ্বংস হয়, আর যে জীবিত থাকার সে যাতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর বেঁচে থাকে, আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

إِذْ يُرِيكَهُمُ اللَّهُ فِي مَنَامِكَ قَلِيلًا وَلَوْ أَرَاكَهُمْ كَثِيرًا لَفَشِلْتُمْ وَلَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ وَلَكِنَّ اللَّهَ سَلَّمَ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ8.43

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪৩। ইয্ ইয়ুরীকাহুমু ল্লা-হু ফী মানা-মিকা ক্বালীলা-; অলাও আরা-কাহুম্ কাছীরাল্ লাফাশিল্তুম্ অলাতানা-যা’তুম্ ফিল্ আম্রি অলা-কিন্না ল্লা-হা সাল্লাম্; ইন্নাহূ ‘আলীমুম্ বিযা-তিছ্ ছুর্দূ।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪৩ যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নের মধ্যে তাদেরকে স্বল্প সংখ্যায় দেখিয়েছিলেন। আর তোমাকে যদি তিনি তাদেরকে বেশি সংখ্যায় দেখাতেন, তাহলে অবশ্যই তোমরা সাহসহারা হয়ে পড়তে এবং বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করতে। কিন্তু আল্লাহ নিরাপত্তা দিয়েছেন। নিশ্চয় অন্তরে যা আছে তিনি সে সব বিষয়ে অবগত।

وَإِذْ يُرِيكُمُوهُمْ إِذِ الْتَقَيْتُمْ فِي أَعْيُنِكُمْ قَلِيلًا وَيُقَلِّلُكُمْ فِي أَعْيُنِهِمْ لِيَقْضِيَ اللَّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولًا وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ8.44

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪৪। অইয্ ইয়ুরীকুমূহুম্ ইযিল্ তাক্বাইতুম্ ফী য় আ’ইয়ুনিকুম্ কালীলাঁও অইয়ুক্বাল্লিলুকুম্ ফী য় আ’ইয়ুনিহিম্ লিইয়াক্ব দ্বিয়া ল্লা-হু আম্রান্ কা-না মাফ্ঊ’লা-; অ ইলাল্লা-হি র্তুজ্বাউ’ল্ উর্মূ।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪৪ আর যখন তোমরা মুখোমুখি হয়েছিলে, তিনি তোমাদের চোখে তাদেরকে স্বল্প দেখিয়েছিলেন এবং তাদের চোখেও তোমাদেরকে স্বল্প দেখিয়েছিলেন যাতে আল্লাহ সম্পন্ন করেন এমন কাজ যা হওয়ারই ছিল এবং আল্লাহর দিকেই সকল বিষয় ফেরানো হবে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ 8.45

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪৫। ইয়া য় আইয়্যুহাল্ লাযীনা আ-মানূ য় ইযা-লাক্বীতুম্ ফিয়াতান্ ফাছ্বুতূ অয্কুরুল্লা-হা কাছীরাল্ লা‘আল্লাকুম্ তুফ্লিহূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪৫ হে মুমিনগণ, যখন তোমরা কোন দলের মুখোমুখি হও, তখন অবিচল থাক, আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হও।

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ8.46

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪৬। অ আত্বীউ’ল্লা-হা অ রাসূলাহূ অলা- তানা-যাঊ’ ফাতাফ্শালূ অতায্হাবা রীহুকুম্ অছ্বিরূ; ইন্না ল্লা-হা মা‘আছ্ ছোয়া-বিরীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪৬ আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَرِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَاللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ8.47

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪৭। অলা-তাকূনূ কাল্লাযীনা খারাজূ মিন্ দিয়া-রিহিম্ বাত্বোয়ারাঁও অরিয়া – য়া ন্না-সি অ ইয়াছুদ্দূনা ‘আন সাবীলি ল্লা-হ্; অল্লা-হু বিমা- ইয়া’মালূনা মুহীত্ব।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪৭ আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের ঘর থেকে অহঙ্কার ও লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বের হয়েছে এবং আল্লাহর রাস্তায় বাধা প্রদান করে, আর তারা যা করে, আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন।

وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَى عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكُمْ إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ8.48

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪৮। অইয্ যাইয়্যানা লাহুমুশ্ শাইত্বোয়া-নু আ’মা- লাহুম্ অক্ব-লা লা-গ-লিবা লাকুমুল্ ইয়াওমা মিনান্না-সি অইন্নী জ্বা-রুল্ লাকুম্ ফালাম্মা-তার – য়াতিল্ ফিয়াতা-নি নাকাছোয়া ‘আলা- ‘আক্বিবাইহি অক্ব-লা ইন্নী বারী – য়ুম্ মিন্কুম্ ইন্নীয় আরা- মা- লা-তারাওনা ইন্নী য় আখা-ফুল্লা-হ্; অল্লা-হু শাদীদুল্ ই’ক্বা-ব্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪৮ আর যখন শয়তান তাদের জন্য তাদের আমলসমূহ সুশোভিত করল এবং বলল, ‘আজ মানুষের মধ্য থেকে তোমাদের উপর কোন বিজয়ী নেই এবং নিশ্চয় আমি তোমাদের পার্শ্বে অবস্থানকারী’। অতঃপর যখন দু’দল একে অপরকে দেখল, তখন সে পিছু হটল এবং বলল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে মুক্ত, নিশ্চয় আমি এমন কিছু দেখছি, যা তোমরা দেখছ না। অবশ্যই আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং আল্লাহ কঠিন আযাবদাতা’।

إِذْ يَقُولُ الْمُنَافِقُونَ وَالَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ غَرَّ هَؤُلَاءِ دِينُهُمْ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ8.49

বাংলা উচ্চারণ ৮.৪৯। ইয্ ইয়াকুলুল্ মুনাফিকুনা অল্লাযীনা ফী কুলূ বিহিম্ মারাদ্বুন্ র্গরা হা য় য়ুলা – য়ি দীনুহুম্; অমাইঁ ইয়াতাওয়াক্কাল্ ‘আলা ল্লা-হি ফাইন্না ল্লা-হা ‘আযীযুন্ হাক্বীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৪৯ যখন মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা বলছিল, ‘এদেরকে এদের ধর্ম ধোকায় ফেলেছে’ এবং যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তবে তো আল্লাহ নিশ্চয় পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।

وَلَوْ تَرَى إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِينَ كَفَرُوا الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ8.50

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫০। অলাও তারা য় ইয্ ইয়াতাওয়াফ্ ফাল্লাযীনা কাফারুল্ মালা – য়িকাতু ইয়াদ্ব্রিবূনা উজ্ব ূহাহুম্ অআদ্বা-রাহুম্ অযূকু ‘আযা-বাল্ হারীক।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫০ আর যদি তুমি দেখতে, যখন ফেরেশতারা কাফিরদের প্রাণ হরণ করছিল, তাদের চেহারায় ও পশ্চাতে আঘাত করে, আর (বলছিল) ‘তোমরা জ্বলন্ত আগুনের আযাব আস্বাদন কর’।

ذَلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ8.51

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫১। যা-লিকা বিমা-কাদ্দামাত্ আইদীকুম্ অআন্নাল্লা-হা লাইসা বিজোয়াল্লা-মিল্ লিল্‘আবীদ্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫১ তোমাদের হাত আগে যা প্রেরণ করেছে সে কারণে এ পরিণাম। আর নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের প্রতি যুল্মকারী নন।

كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ شَدِيدُ الْعِقَابِ8.52

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫২। কাদা”বি আ-লি ফির‘আউনা অল্লাযীনা মিন্ ক্বাব্লিহিম্; কাফারূ বিআ-ইয়া-তি ল্লা-হি ফাআখাযাহুমু ল্লা-হু বিযুনূবিহিম্; ইন্না ল্লা-হা ক্বওওয়িয়ুন্ শাদীদুল্ ‘ইক্ব-ব্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫২ ফিরআউন বংশ ও তাদের পূর্বের লোকদের আচরণের মত তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিশালী, কঠিন আযাবদাতা।

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَى قَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ8.53

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫৩। যা-লিকা বিআন্নাল্লা-হা লাম্ ইয়াকু মুগইয়্যিরাঁন্ নি’মাতান্ আন্‘আমাহা-‘আলা-ক্বওমিন্ হাত্তা-ইয়ুগইয়িরূ মা- বিআন্ফুসিহিম্ অ আন্না ল্লা-হা সামীঊ’ন্ ‘আলীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫৩ তা এ জন্য যে, আল্লাহ কোন নিআমতের পরিবর্তনকারী নন, যা তিনি কোন কওমকে দিয়েছেন, যতক্ষণ না তারা পরিবর্তন করে তাদের নিজদের মধ্যে যা আছে। আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَذَّبُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُمْ بِذُنُوبِهِمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَكُلٌّ كَانُوا ظَالِمِينَ54

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫৪। কাদা”বি আ-লি ফির‘আউনা অল্লাযীনা মিন্ ক্বাব্লিহিম্; কায্যাবূ বিআ-ইয়া-তি রব্বিহিম্ ফাআহ্ লাক্না-হুম্ বিযুনূবিহিম্ অ আগ্রাকনা য় আ-লা র্ফি‘আউনা অকুল্লুন্ কা-নূ জোয়া-লিমীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫৪ ফিরআউন বংশ ও তাদের পূর্বের লোকদের আচরণের মত তারা তাদের রবের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, ফলে আমি তাদেরকে ধ্বংস করেছি তাদের পাপের কারণে এবং ফিরআউন বংশকে ডুবিয়েছি, আর তারা সকলেই ছিল যালিম।

إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّهِ الَّذِينَ كَفَرُوا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ8.55

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫৫। ইন্না র্শারাদ্ দাওয়া – ব্বি ‘ইন্দা ল্লা-হিল্ লাযীনা কাফারূ ফাহুম্ লা-ইয়ু”মিনূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫৫ নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী তারা, যারা কুফরী করে, অতঃপর ঈমান আনে না।

الَّذِينَ عَاهَدْتَ مِنْهُمْ ثُمَّ يَنْقُضُونَ عَهْدَهُمْ فِي كُلِّ مَرَّةٍ وَهُمْ لَا يَتَّقُونَ 8.56

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫৬। আল্লাযীনা ‘আ-হাত্তা মিন্হুম্ ছুম্মা ইয়ান্ক্বুদ্বূনা ‘আহ্দাহুম্ ফী কুল্লি র্মারাতিঁও অহুম্ লা- ইয়াত্তাকুন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫৬ যাদের থেকে তুমি অঙ্গীকার নিয়েছ, অতঃপর তারা প্রতিবার তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এবং তারা ভয় করে না।

فَإِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِي الْحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِمْ مَنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ8.57

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫৭। ফাইঁম্মা- তাছ্ক্বাফান্নাহুম্ ফির্ল্হাবি ফার্শারিদ্ বিহিম্ মান্ খল্ফাহুম্ লা‘আল্লাহুম্ ইয়ায্যাক্কারূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫৭ সুতরাং যদি তুমি যুদ্ধে তাদেরকে নাগালে পাও, তাহলে এদের মাধ্যমে এদের পেছনে যারা রয়েছে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দাও, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।

وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِيَانَةً فَانْبِذْ إِلَيْهِمْ عَلَى سَوَاءٍ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْخَائِنِينَ8.58

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫৮। অইম্মা-তাখ-ফান্না মিন্ ক্বওমিন্ খিয়া-নাতান্ ফাম্বিয্ ইলাইহিম্ ‘আলা-সাওয়া – য়্; ইন্নাল্লাহা লা-ইয়ুহিব্বুল্ খ – য়িনীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫৮ আর যদি তুমি কোন কওম থেকে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা কর, তাহলে (তাদের চুক্তি) তাদের দিকে সোজা নিক্ষেপ কর, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের পছন্দ করেন না।

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَبَقُوا إِنَّهُمْ لَا يُعْجِزُونَ8.59

বাংলা উচ্চারণ ৮.৫৯। অলা-ইয়াহ্সাবান্নাল্লাযীনা কাফারূ সাবাকু; ইন্নাহুম্ লা-ইয়ু’জ্বিযূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৫৯ আর কাফিররা যেন কখনও মনে না করে যে, তারা (আযাবের) নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে, নিশ্চয় তারা (আল্লাহকে আযাব প্রদানে) অক্ষম করতে পারে না।

وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ 8.60

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬০। অআ‘ইদ্দূ লাহুম্ মাস্তাত্বোয়া’তুম্ মিন্ কুওয়্যাতিঁও অর্মি রিবা-ত্বিল্ খইলি র্তুহিবূনা বিহী ‘আদুঅল্লা-হি অ‘আদুওয়্যাকুম্, অআ-খরীনা মিন্ দূনিহিম্,লা-তা’লামূনাহুম্ আল্লা-হু ইয়া’লামুহুম্; অমা-তুন্ফিকু মিন্ শাইয়িন্ ফী সাবীলিল্লা-হি ইয়ুওয়াফ্ফা ইলাইকুম্ অ আন্তুম্ লা-তুজ্লামূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬০ আর তাদের মুকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত কর, তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্র“ ও তোমাদের শত্র“দেরকে এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকেও, যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদেরকে জানেন। আর তোমরা যা আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর, তা তোমাদেরকে পরিপূর্ণ দেয়া হবে, আর তোমাদেরকে যুলম করা হবে না।

وَإِنْ جَنَحُوا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ8.61

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬১। অইন্ জ্বানাহূ লিস্সাল্মি ফাজ্বনাহ্ লাহা-অতাওয়াক্কাল্ ‘আলা ল্লা-হ্; ইন্নাহূ হুওয়াস্সামী ঊ’ল্ ‘আলীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬১ আর যদি তারা সন্ধির প্রতি ঝুঁকে পড়ে, তাহলে তুমিও তার প্রতি ঝুঁকে পড়, আর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল কর, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

وَإِنْ يُرِيدُوا أَنْ يَخْدَعُوكَ فَإِنَّ حَسْبَكَ اللَّهُ هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ8.62

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬২। অইঁ ইয়ুরীদূ য় আঁই ইয়াখ্দা‘উকা ফাইন্না হাস্বাকাল্লা-হ্; হুওয়াল্লাযী য় আইয়্যাদাকা বিনাছ্রিহী অবিল্ মু”মিনীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬২ আর যদি তারা তোমাকে ধোঁকা দিতে চায়, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই তোমাকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা।

وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ8.63

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬৩। অআল্লাফা বাইনা কুলূবিহিম্; লাও আন্ফাকতা মা- ফিল্ র্আদ্বি জ্বামী‘আম্ মা য় আল্লাফ্তা বাইনা কুলূবিহিম্ অলা-কিন্নাল্লা-হা আল্লাফা বাইনাহুম্; ইন্নাহূ ‘আযীযুন্ হাকীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬৩ আর তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করেছেন। যদি তুমি যমীনে যা আছে, তার সবকিছু ব্যয় করতে, তবুও তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন, নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ8.64

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬৪। ইয়া য় আইয়্যুহা ন্নাবিয়্যু হাস্বুকাল্লা-হু অমানিত্তাবা‘আকা মিনাল্ মু”মিনীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬৪ হে নবী, তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং যেসব মুমিন তোমার অনুসরণ করেছে তাদের জন্যও।

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةٌ يَغْلِبُوا أَلْفًا مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَفْقَهُونَ8.65

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬৫। ইয়া য় আইয়্যুহান্ নাবিয়্যু র্হারিদ্বিল্ মু”মিনীনা ‘আলাল্ ক্বিতা-ল্; ইঁয় ইয়াকুম্ মিন্কুম্ ‘ইশ্রূনা ছোয়া-বিরূনা ইয়াগ্লিবূ মিয়াতাইনি অইঁ ইয়াকুম্ মিন্কুম্ মিয়াতুঁই ইয়াগ্লিবূ য় আল্ফাম্ মিনাল্লাযীনা কাফারূ বিআন্নাহুম্ ক্বওমুল্ লা-ইয়াফ্ক্বাহূন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬৫ হে নবী, তুমি মুমিনদেরকে লড়াইয়ে উৎসাহ দাও, যদি তোমাদের মধ্য থেকে বিশজন ধৈর্যশীল থাকে, তারা দু’শ জনকে পরাস্ত করবে, আর যদি তোমাদের মধ্যে একশ’ জন থাকে, তারা কাফিরদের এক হাজার জনকে পরাস্ত করবে। কারণ, তারা (কাফিররা) এমন কওম যারা বুঝে না।

الْآنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضَعْفًا فَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُوا أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ8.66

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬৬। আল্য়া-না খফ্ফাফাল্লা-হু আ’ন্কুম্ অ‘আলিমা আন্না ফীকুম্ দ্বোয়া’ফা-; ফাইঁ ইয়াকুম্ মিন্কুম্ মিয়াতুন্ ছোয়া-বিরাতুঁই ইয়াগ্লিবূ মিয়াতাইনি, অইঁ ইয়াকুম্ মিন্কুম্ আল্ফুইঁ ইয়াগ্লিবূ য় আল্ফাইনি বিইয্নিল্লা-হ্; অল্লা-হু মা‘আছ্ ছোয়া-বিরীন্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬৬ এখন আল্লাহ তোমাদের থেকে (দায়িত্বভার) হালকা করে দিয়েছেন এবং তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। অতএব যদি তোমাদের মধ্যে একশ’ জন ধৈর্যশীল থাকে, তারা দু’শ জনকে পরাস্ত করবে এবং যদি তোমাদের মধ্যে এক হাজার জন থাকে, তারা আল্লাহর হুকুমে দু’হাজার জনকে পরাস্ত করবে এবং আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।

مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَكُونَ لَهُ أَسْرَى حَتَّى يُثْخِنَ فِي الْأَرْضِ تُرِيدُونَ عَرَضَ الدُّنْيَا وَاللَّهُ يُرِيدُ الْآخِرَةَ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ8.67

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬৭। মা- কা-না লিনাবিয়্যিন্ আঁই ইয়াকূনা লাহূ য় আস্রা- হাত্তা- ইয়ুছ্খিনা ফিল্ র্আদ্ব; তুরীদূনা ‘আরাদ্বোয়াদ্ দুন্ইয়া- অল্লা-হু ইয়ুরীদুল্ আ-খিরাহ্; অল্লা-হু ‘আযীযুন্ হাকীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬৭ কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, তার নিকট যুদ্ধবন্দি থাকবে (এবং পণের বিনিময়ে তিনি তাদেরকে মুক্ত করবেন) যতক্ষণ না তিনি যমীনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন। তোমরা দুনিয়ার সম্পদ কামনা করছ, অথচ আল্লাহ চাচ্ছেন আখিরাত। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।

لَوْلَا كِتَابٌ مِنَ اللَّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمْ فِيمَا أَخَذْتُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ8.68

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬৮। লাওলা-কিতাবুম্ মিনাল্লা-হি সাবাক্বা লামাস্সাকুম্ ফীমা য় আখায্তুম্ ‘আযা-বুন্ ‘আজীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬৮ আল্লাহর লিখন অতিবাহিত না হয়ে থাকলে, অবশ্যই তোমরা যা গ্রহণ করেছ, সে বিষয়ে তোমাদেরকে মহা আযাব স্পর্শ করত।

فَكُلُوا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَالًا طَيِّبًا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ8.69

বাংলা উচ্চারণ ৮.৬৯। ফাকুলূ মিম্মা- গনিম্তুম্ হালালান্ ত্বোয়াইয়্যিবাঁও অত্তাকু ল্লা-হ্; ইন্নাল্লা-হা গফূর্রু রহীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৬৯ অতএব তোমরা যে গনীমত পেয়েছ, তা থেকে হালাল পবিত্র হিসেবে খাও, আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِمَنْ فِي أَيْدِيكُمْ مِنَ الْأَسْرَى إِنْ يَعْلَمِ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمْ خَيْرًا يُؤْتِكُمْ خَيْرًا مِمَّا أُخِذَ مِنْكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ8.70

বাংলা উচ্চারণ ৮.৭০। ইয়া য় আইয়্যুহান্ নাবিয়্যু কুল্ লিমান্ ফী য় আইদীকুম্ মিনাল্ আস্রা য় ইঁইয়া’লামি ল্লা-হু ফী কুলূবিকুম্ খাইরাঁই ইয়ু’তিকুম্ খাইরাম্ মিম্মা য় উখিযা মিন্কুম্ অইয়ার্গ্ফি লাকুম; অল্লা-হু গফূর্রু রহীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৭০ হে নবী, তোমাদের হাতে যে সব যুদ্ধবন্দি আছে, তাদেরকে বল, ‘যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহে কোন কল্যাণ আছে বলে জানেন, তাহলে তোমাদের থেকে যা নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে উত্তম কিছু দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।

وَإِنْ يُرِيدُوا خِيَانَتَكَ فَقَدْ خَانُوا اللَّهَ مِنْ قَبْلُ فَأَمْكَنَ مِنْهُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ8.71

বাংলা উচ্চারণ ৮.৭১। অইঁ ইয়ুরীদূ খিয়া-নাতাকা ফাক্বদ্ খা-নুল্লা-হা মিন্ ক্বাব্লু ফাআম্কানা মিন্হুম্; অল্লা-হু ‘আলীমুন্ হাকীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৭১ আর যদি তারা তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার ইচ্ছা করে, তাহলে তারা তো পূর্বে আল্লাহর সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অতঃপর তিনি তাদের উপর (তোমাকে) শক্তিশালী করেছেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান।

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوْا وَنَصَرُوا أُولَئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُمْ مِنْ وَلَايَتِهِمْ مِنْ شَيْءٍ حَتَّى يُهَاجِرُوا وَإِنِ اسْتَنْصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ إِلَّا عَلَى قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ8.72

বাংলা উচ্চারণ ৮.৭২। ইন্নাল্লাযীনা আ-মা-নূ অহা-জ্বারূ অ জ্বা-হাদূ বিআমওয়া-লিহিম্ অ আন্ফুসিহিম্ ফী সাবীলিল্লা-হি অল্লাযীনা আ-ওয়াও অ নাছোয়ারূ য় উলা – য়িকা বা’দ্বুহুম্ আওলিয়া – য়ু বা’দ্ব্; অল্লাযীনা আ-মানূ অলাম্ ইয়ুহা-জ্বিরূ মা-লাকুম্ মিওঁ অলা-ইয়াতিহিম্ মিন্ শাইয়িন্ হাত্তা-ইয়ুহা-জ্বিরূ অইনিস্ তান্ছোয়ারূ কুম্ ফিদ্দীনি ফা‘আলাইকুমুন্ নাছ্রূ ইল্লা-‘আলা-ক্বওমিম্ বাইনাকুম্ অবাইনাহুম্ মীছা-ক; অল্লা-হু বিমা- তা’মালূনা বার্ছী।

বাংলা অনুবাদ ৮.৭২ নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দিয়েছে ও সহায়তা করেছে, তারা একে অপরের বন্ধু। আর যারা ঈমান এনেছে, কিন্তু হিজরত করেনি, তাদেরকে সাহায্যের কোন দায়িত্ব তোমাদের নেই, যতক্ষণ না তারা হিজরত করে। আর যদি তারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের নিকট কোন সহযোগিতা চায়, তাহলে সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। তবে এমন কওমের বিরুদ্ধে নয়, যাদের সাথে তোমাদের একে অপরের চুক্তি রয়েছে এবং তোমরা যে আমল কর, তার ব্যাপারে আল্লাহ পূর্ণ দৃষ্টিমান।

وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ 8.73

বাংলা উচ্চারণ ৮.৭৩। অল্লাযীনা কাফারূ বা’দ্বুহুম্ আওলিয়া য় য়ু বা’দ্ব্; ইল্লা-তাফ্‘আলূহু তাকুন্ ফিত্নাতুন্ ফিল্ র্আদ্বি অফাসা-দুন্ কার্বী।

বাংলা অনুবাদ ৮.৭৩ আর যারা কুফরী করে, তারা একে অপরের বন্ধু। যদি তোমরা তা না কর, তাহলে যমীনে ফিতনা ও বড় ফাসাদ হবে।

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوْا وَنَصَرُوا أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ8.74

বাংলা উচ্চারণ ৮.৭৪। অল্লাযীনা আ-মানূ অহা-জ্বারূ অজ্বা-হাদূ ফী সাবীলিল্লা-হি অল্লাযীনা আ-ওয়াওঁ অ নাছোয়ারূ য় উলা – য়িকা হুমুল্ মু”মিনূনা হাকক্বা-; লাহুম্ মাগ্ফিরাতুঁও অরিয্ক্বুন্ কারীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৭৪ আর যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা আশ্রয় দিয়েছে ও সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিয্ক।

وَالَّذِينَ آمَنُوا مِنْ بَعْدُ وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا مَعَكُمْ فَأُولَئِكَ مِنْكُمْ وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ 8.75

বাংলা উচ্চারণ ৮.৭৫। অল্লাযীনা আ-মানূ মিম্ বা’দু অহা-জ্বারূ অ জ্বা-হাদূ মা‘আকুম্ ফাউলা – য়িকা মিন্কুম্; অউলুল্ র্আহা-মি বা’দ্বু হুম্ আওলা- বিবা’দ্বিন্ ফী কিতা-বিল্লা-হ্; ইন্নাল্লা-হা বিকুল্লি শাইয়িন্ ‘আলীম্।

বাংলা অনুবাদ ৮.৭৫ আর যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং তোমাদের সাথে জিহাদ করেছে, তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত, আর আত্মীয়-স্বজনরা একে অপরের তুলনায় অগ্রগণ্য, আল্লাহর কিতাবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে মহাজ্ঞানী।

    প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

    আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

    Leave a Comment