সূরা কাফিরুন সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল কাফিরুন আলমল ও ফজিলত, সূরা কাফিরুন কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা কাফিরুন নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ১০৯ সূরা আল – কাফিরুন
সূরা কাফিরুন পবিত্র কোরআন এর ১০৯ তম সূরা। এই সূরার আয়াত সংখ্যা ৬, রুকু সংখ্যা ১ এবং সূরা কাফিরুন মক্কায় অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ এটি একটি মাক্কী সূরা। এই সূরাটি পবিত্র কোরআন শরীফের ৩০তম পারায় অন্তর্গত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওহীদের বাণী প্রচার করতেন, এই বার্তা প্রচারের সময় মক্কার কুরাইশরা বিভিন্নভাবে বাধা দিত। যখন তারা তাদের বিভিন্ন চেষ্টায় ব্যর্থ হয়, তখন তারা রাসুল (সাঃ) কে একটি বার্তা দেয় যা অনৈতিক।
আল্লাহ তায়ালার কোন শরীক নেই। একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা মুসলমানদের জন্য ফরজ। আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের প্রতি একাগ্রতা ও নিষ্ঠা থাকতে হবে এবং তাওহীদ এর উপর অবিচল ঈমান থাকা প্রয়োজন। সেই একত্ববাদের উপাসনা সূরা কাফিরুনে স্পষ্ট হয়েছে। এই সূরায় বলা হয়েছে শিরক থেকে মুক্ত হওয়ার কথাও।
সূরা কাফিরুন পাঠ করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। কাবা তাওয়াফের সময়ও এই সূরাটি পাঠ করার ফজিলত রয়েছে। জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার শেষ দুই রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। (মুসলিম)
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
(১)
আরবিঃ قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ
উচ্চারণঃ কুল ইয়া আইউহাল কাফিরূন
অনুবাদঃ বলুন, হে কাফেরকূল,
(২)
আরবিঃ لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ
উচ্চারণঃ লা আ’বুদু মাতাবুদুন
অনুবাদঃ আমি এবাদত করিনা, তোমরা যার এবাদত কর।
(৩)
আরবিঃ وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
উচ্চারণঃ ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আবুদ
অনুবাদঃ এবং তোমরাও এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি
(৪)
আরবিঃ وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ
উচ্চারণঃ ওয়ালা আনা আবিদুম মা আ বাত্তুম ।
অনুবাদঃ এবং আমি এবাদতকারী নই, যার এবাদত তোমরা কর।
(৫)
আরবিঃ وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
উচ্চারণঃ ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মাআবুদ
অনুবাদঃ তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি।
(৬)
আরবিঃ لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ
উচ্চারণঃ লাকুম দীনুকুম ওয়ালীয়া দ্বীন
অনুবাদঃ তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।
সূরা কাফিরুনের শানে নুযূল
একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে সূরা কাফিরুন অবতীর্ণ হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার করতে শুরু করলেন, তখন কুরাইশরা তাঁকে বিভিন্নভাবে বাঁধা দিল। যখন তারা তাদের বাঁধা এবং ষড়যন্ত্র করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়, তখন তারা রাসুল (সঃ) এর সাথে একটি শান্তি চুক্তির আহ্বান জানায় যা ছিল সম্পূর্ণ অনৈতিক। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রস্তাব করেছিল যে, এক বছর তারা সবাই মূর্তি পূজা করবে এবং অন্য বছর তারা সবাই আল্লাহর ইবাদত করবে। এই অনৈতিক প্রস্তাব শুনে মহান আল্লাহ এই পবিত্র সূরাটি প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে অবতীর্ণ করেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে এই প্রস্তাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ঘোষণা করেন। সূরা নাযিলের পর মক্কায় হৈচৈ পড়ে যায় এবং কিছু মুশরিকরা ইসলাম গ্রহণ করে এবং আল্লাহর একত্ববাদকে স্বাগত জানায়। অন্য বর্ণনায়, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, কাফেররা প্রথম শান্তি চুক্তির স্বার্থে নবী (সাঃ) কে প্রস্তাব করেছিল যে তারা নবী (সাঃ) কে প্রচুর ধন সম্পদ দেবে এবং যে কোনো নারীকে বিয়ে করতে চাইলে করতে পারবে। আর যদি এটা না মানে, তাহলে এক বছর আমরা আপনার সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করব এবং এক বছর আপনি আমাদের দেবতাদের পূজা করবে। এর প্রেক্ষাপটে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন।
সূরা কাফিরুন এর গুরুত্ব
সূরা কাফিরুন এর শানে নুযূল শুনে এই সিদ্বান্তে আশা যায় যে, এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। সূরাটির বিষয়বস্তু এই যে, আল্লাহ এই সূরায় ওই সমস্ত কাফেরদের বুঝিয়েছেন, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ জানতেন তারা কাফির হয়েই মরবে এবং তাদের মৃত্যু শিরক অবস্থাতেই হবে। আর এই সূরাটির গুরুত্ব বুঝতে পেরে কিছু মুশরিক ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকৃতি জানিয়েছিল। এই সূরা আমাদেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় শিক্ষা দেয় আর তা হলাে, আল্লাহ ও আল্লাহর একত্ববাদের সাথে অন্যকারাে সামিল করা শিরক। এবং এমন কোনাে কিছুর আপােস করা যাবে না যা শিরকের দিকে নিয়ে যায়। সূরাটির গভীরে যদি যান তাহলে দেখবেন, মহানবী (সাঃ)-এর কাছে যখন কাফেররা শান্তিচুক্তির জন্যে অনৈতিক প্রস্তাব দিলাে যা সম্পূর্ণভাবে তাওহীদের বিপরীত, তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এটা কখনই সম্ভব নয় যে, আমি তাওহীদের পথ পরিত্যাগ করে শিরকের পথ অবলম্বন করে নেব, যেমন তােমরা চাচ্ছ। তিনি আরাে বললেন, আর যদি আল্লাহ তােমাদের ভাগ্যে হিদায়াত না লিখে থাকেন, তাহলে তােমরাও তাওহীদ ও আল্লাহর উপাসনা থেকে বঞ্চিতই থাকবে। যদি তােমরা তােমাদের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট থাক এবং তা ত্যাগ করতে রাজী না হও, তাহলে আমিও নিজের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট, তা কেন ত্যাগ করব?
সূরা কাফিরুন এর ফজিলত সমূহ
সূরা আল কাফিরুনের তেলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এই সূরার বেশ কিছু ফজিলত বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আসুন তা জেনে নেই।
১. জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন এবং কুল
হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন।” [মুসলিম; ১২১৮]
২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমাতে যাওয়ার আগে সূরা কাফিরুন পাঠ করেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন তুমি‘ কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ’পাঠ করবে। কারণ এতে শিরক থেকে মুক্তির ঘোষণা রয়েছে। ‘(তাবানী শরীফ)
৩. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নাত নামাজে সূরা দুটি ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন এবং কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ আদায় করেছিলেন। ” [মুসলিম; ৭২৬]
৪. ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, “আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে, এই দুটি সূরা ফজরের আগে দুই রাকাতে এবং মাগরিবের পর দুই রাকাতে পড়তেন। ” (মুসনাদ আহমদ; ২/২৪] অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, “আমি এটা চব্বিশ বা পঁচিশবার শুনেছি।”
5. ইবনে উমর (রা।) বলেন : “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক মাস পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি তিনি ফজরের আগের দুই রাকাতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন এবং কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ এ দুটি সূরা পাঠ করতেন।
৬. তাছাড়া এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে আরয করলেন, আমাকে নিদ্রার পূর্বে পাঠ করার জন্যে কোন দো’আ বলে দিন। তিনি আমাকে সূরা কাফিরুন পাঠ করার আদেশ দেন এবং বলেন যে এটি শিরক থেকে মুক্তির দোয়া। [আবু দাউদ; ৫০৫৫, সুনান দারমি; ২/৪৫৯;।
৭. অন্য এক হাদিসে, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সুরা কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ কোরআনের এক চতুর্থাংশ।” [তিরমিযী; ২৮৯৩, ২৮৯৫] অর্থাৎ সূরা কাফিরুন চার বার পাঠ করলে একবার কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যাবে। (সুবহানআল্লাহ)।