আজকের বিষয়: সূরা ক্বাফ সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল ক্বাফ আলমল ও ফজিলত, সূরা ক্বাফ কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা ক্বাফ নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৫০ সূরা আল – ক্বাফ
নামকরণ
সূরার প্রথম বর্ণটিই এর নাম হিসেবে গৃহীত হয়েছে । অর্থাৎ এটি সেই সূরা যা ক্বাফ বর্ণ দিয়ে শুরু হয়েছে ।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
ঠিক কোন সময় এ সূরা নাযিল হয়েছে তা কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায় না । তবে এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে বুঝা যায়, এটি মক্কী যুগের দ্বিতীয় পর্যায়ে নাযিল হয়েছে । মক্কী যুগের দ্বিতীয় পর্যায় নবুওয়াতের তৃতীয় সন থেকে শুরু করে পঞ্চম সন পর্যন্ত বিস্তৃত । আমি সূরা আন’আমের ভূমিকায় এ যুগের বৈশিষ্টসমূহ বর্ণনা করেছি । ঐ সব বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ রেখে বিচার করলে মোটামুটি অনুমান করা যায় যে, সূরাটি নবুওয়াতের পঞ্চম বছরে নাযিল হয়ে থাকবে । এ সময় কাফেরদের বিরোধিতা বেশ কঠোরতা লাভ করেছিল । কিন্তু তখনো জুলুম-নির্যাতন শুরু হয়নি ।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
নির্ভরযোগ্য বর্ণনাসমূহ থেকে জানা যায় যে , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’ঈদের নামাযে এ সূরা পড়তেন ।
উম্মে হিশাম ইবনে হারেসা নাম্নী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিবেশিনী এক মহিলা বর্ণনা করেছেন যে, প্রায়ই আমি নবীর ( সা) মুখ থেকে জুমআর খুতবায় এ সূরাটি শুনতাম এবং শুনতে শুনতেই তা আমার মুখস্ত হয়েছে । অপর কিছু রেওয়ায়াতে আছে যে, তিনি বেশীর ভাগ ফজরের নামাযেও এ সূরাটি পাঠ করতেন । এ থেকে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায় যে, নবীর ( সা) দৃষ্টিতে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা । সে জন্য এর বিষয়বস্তু অধিক সংখ্যক লোকের কাছে পৌছানোর জন্য বারবার চেষ্টা করতেন ।
সূরাটি মনোনিবেশ সহকারে পাঠ করলে এর গুরুত্বের কারণ সহজেই উপলব্ধি করা যায় । গোটা সূরার আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আখেরাত । রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা মুয়াযযমায় দাওয়াতের কাজ শুরু করলে মানুষের কাছে তাঁর যে কথাটি সবচেয়ে বেশী অদ্ভুত মনে হয়েছিল তা হচ্ছে, মৃত্যুর পর পুনরায় মানুষকে জীবিত করে উঠানো হবে এবং তাদেরকে নিজের কৃতকর্মের হিসেব দিতে হবে । লোকজন বলতো, এটা তো একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার । এরূপ হতে পারে বলে বিবেক-বুদ্ধি বিশ্বাস করে না । আমাদের দেহের প্রতিটি অণু-পরমাণু যখন মাটিতে মিশে বিলীন হয়ে যাবে তখন হাজার হাজার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর ঐসব বিক্ষিপ্ত অংশকে পুনরায় একত্রিত করে আমাদের দেহকে পুনরায় তৈরী করা হবে এবং আমরা জীবিত হয়ে যাব তা কি করে সম্ভব? এর জবাবে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এ ভাষণটি নাযিল হয় । এতে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট বাক্যে একদিকে আখেরাতের সম্ভাব্যতা ও তা সংঘটিত হওয়া সম্পর্কে প্রমাণাদি পেশ করা হয়েছে । অপরদিকে মানুষকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা বিস্মিত হও, বিবেক-বুদ্ধি বিরোধী মনে করো কিংবা মিথ্যা বলে মনে করো তাতে কোন অবস্থায়ই সত্য, পরিবর্তিত হতে পারে না । সত্য তথা অকাট্য ও অটল সত্য হচ্ছে এই যে, তোমাদের দেহের এক একটি অণু-পরমাণু যা মাটিতে বিলীন হয়ে যায় তা কোথায় গিয়েছে এবং কি অবস্থায় কোথায় আছে সে সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত আছেন ।
বিক্ষিপ্ত এসব অণু-পরমাণু পুনরায় একত্রিত হয়ে যাওয়া এবং তোমাদেরকে ইতিপূর্বে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল ঠিক সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহ তা’আলার একটি ইংগিতই যথেষ্ট । অনুরূপভাবে তোমাদের ধারণাও একটি ভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয় যে, এখানে তোমাদের লাগামহীন উটের মত ছেড়ে দেয়া হয়েছে , কারো কাছে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে না । প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ তা’আলা নিজেও সরাসরি তোমাদের প্রতিটি কথা ও কাজ সম্পর্কে এমনকি তোমাদের মনের মধ্যে জেগে ওঠা সমস্ত ধারণা ও কল্পনা পর্যন্ত অবহিত আছেন ।
তাছাড়া তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের প্রত্যেকের সাথে থেকে তোমাদের সমস্ত গতিবিধি রেকর্ড করে সংরক্ষিত করে যাচ্ছে । যেভাবে বৃষ্টির একটি বিন্দু পতিত হওয়ার পর মাটি ফুড়ে উদ্ভিদরাজির অঙ্কুর বেরিয়ে আসে ঠিক তেমনি নির্দিষ্ট সময় আসা মাত্র তাঁর একটি মাত্র আহবানে তোমরাও ঠিক তেমনি বেরিয়ে আসবে । আজ তোমাদের বিবেক-বুদ্ধির ওপর গাফলতের যে পর্দা পড়ে আছে তোমাদের সামনে থেকে সেদিন তা অপসারিত হবে এবং আজ যা অস্বীকার করছো সেদিন তা নিজের চোখে দেখতে পাবে । তখন তোমরা জানতে পারবে, পৃথিবীতে তোমরা দায়িত্বহীন ছিলে না, বরং নিজ কাজ-কর্মের জন্য দায়ী ছিলে । পুরস্কার ও শাস্তি, আযাব ও সওয়াব এবং জান্নাত ও দোযখ যেসব জিনিসকে আজ তোমরা আজব কল্প কাহিনী বলে মনে করছো সেদিন তা সবই তোমাদের সামনে বাস্তব সত্য হয়ে দেখা দেবে । যে জাহান্নামকে আজ বিবেক-বুদ্ধির বিরোধী বলে মনে করো সত্যের সাথে শত্রুতার অপরাধে সেদিন তোমাদের সেই জাহান্নামেই নিক্ষেপ করা হবে । আর যে জান্নাতের কথা শুনে আজ তোমরা বিস্মিত হচ্ছো মহা দয়ালু আল্লাহকে ভয় করে সঠিক পথে ফিরে আসা লোকেরা সেদিক তোমাদের চোখের সামনে সেই জান্নাতে চলে যাবে ।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
- “লা আদওয়া” সংক্রমন নেই!হাদীসটি কী বুঝায়?
- রমজানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যত পরামর্শ
- ডায়াবেটিস রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন
- আজহারী: কোন ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙে
- রমজান মাসের ৯টি ফজিলত
৫০ . ক্বাফ – ( ق ) | ক্বাফ
মাক্কী, মোট আয়াতঃ ৪৫
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
১
ق ۚ وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কাফ, কুরআন মাজীদের কসম (কাফেরগণ যে নবীকে অস্বীকার করছে, তা কোন দলীলের ভিত্তিতে নয়);
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
ক্বাফ! সম্মানিত কোরআনের শপথ;
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কা-ফ্, শপথ সম্মানিত কুরআনের
২
بَلْ عَجِبُوا أَن جَاءَهُم مُّنذِرٌ مِّنْهُمْ فَقَالَ الْكَافِرُونَ هَـٰذَا شَيْءٌ عَجِيبٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বরং কাফেরগণ এই কারণে বিস্ময়বোধ করছে যে, খোদ তাদেরই মধ্য হতে তাদের কাছে একজন সতর্ককারী (কিভাবে) আসল? সুতরাং কাফেরগণ বলে, এটা তো বড় আজব ব্যাপার!
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বরং তারা তাদের মধ্য থেকেই একজন ভয় প্রদর্শনকারী আগমন করেছে দেখে বিস্ময় বোধ করে। অতঃপর কাফেররা বলেঃ এটা আশ্চর্যের ব্যাপার।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বরং তারা বিস্ময় বোধ করে যে, এদের মধ্যে একজন সতর্ককারী আবির্ভূত হয়েছে, আর কাফিররা বলে, ‘এটা তো এক আশ্চর্য ব্যাপার !
৩
أَإِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا ۖ ذَٰلِكَ رَجْعٌ بَعِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমরা যখন মরে যাব এবং মাটিতে পরিণত হব তখনও কি (আমাদেরকে আবার জীবিত করা হবে? সে প্রত্যাবর্তন (আমাদের বুঝ সমঝ থেকে) বহু দূরে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমরা মরে গেলে এবং মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে গেলেও কি পুনরুত্থিত হব? এ প্রত্যাবর্তন সুদূরপরাহত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আমাদের মৃত্যু হলে এবং আমরা মৃত্তিকায় পরিণত হলে আমরা কি পুনরুত্থিত হব ? সুদূরপরাহত সেই প্রত্যাবর্তন।’
৪
قَدْ عَلِمْنَا مَا تَنقُصُ الْأَرْضُ مِنْهُمْ ۖ وَعِندَنَا كِتَابٌ حَفِيظٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বস্তুত আমি জানি ভূমি তাদের কতটুকু ক্ষয় করে ১ এবং আমার কাছে আছে এক সংরক্ষণকারী কিতাব। ২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মৃত্তিকা তাদের কতটুকু গ্রাস করবে, তা আমার জানা আছে এবং আমার কাছে আছে সংরক্ষিত কিতাব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি তো জানি মৃত্তিকা ক্ষয় করে এদের কতটুকু এবং আমার নিকট আছে রক্ষিত কিতাব।
তাফসীরঃ
১. এর দ্বারা লাওহে মাহফুজ বোঝানো হয়েছে। যা সব কিছুর সংখ্যা, নাম, মাটিতে তাদের ক্ষয় ইত্যাদি সব কিছু সংরক্ষণ করে।
২. এটা তাদের ওই কথার উত্তর যে, আমরা যখন মরে মাটি হয়ে যাব, তখন আমাদের যে অংশগুলো মাটিতে খেয়ে ফেলবে তা পুনরায় একত্র করে তাতে জীবন দান কী করে সম্ভব? আল্লাহ তাআলা বলছেন, তোমাদের শরীরের কোন কোন অংশ মাটিতে ক্ষয় হয়ে যায় সে সম্পর্কে আমার পরিপূর্ণ জ্ঞান আছে। কাজেই তাকে আবার আগের মত করে ফেলা আমার পক্ষে মোটেই কঠিন নয়।
৫
بَلْ كَذَّبُوا بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُمْ فَهُمْ فِي أَمْرٍ مَّرِيجٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বস্তুত তারা তখনই সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, যখন তা তাদের কাছে এসেছিল। সুতরাং তারা পরস্পর বিরোধী উক্তির মধ্যে পড়ে আছে। ৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বরং তাদের কাছে সত্য আগমন করার পর তারা তাকে মিথ্যা বলছে। ফলে তারা সংশয়ে পতিত রয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বস্তুত এদের নিকট সত্য আসার পর এরা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে, এরা সংশয়ে দোদুল্যমান।
তাফসীরঃ
৩. ‘পরস্পর বিরোধী উক্তির মধ্যে পড়ে আছে’ অর্থাৎ তারা কুরআন মাজীদ সম্পর্কে কখনও বলে, এটা যাদু, কখনও বলে, এটা অতীন্দ্রিয়বাদীদের কথা আবার কখনও বলে, এটা কবিতার বই (নাউযুবিল্লাহ)। এমনিভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও কখনও কবি আবার কখনও উন্মাদ বলত।
৬
أَفَلَمْ يَنظُرُوا إِلَى السَّمَاءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَاهَا وَزَيَّنَّاهَا وَمَا لَهَا مِن فُرُوجٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তবে কি তারা তাদের উপর দিকে আকাশমণ্ডলীকে দেখেনি যে, আমি তাকে কিভাবে নির্মাণ করেছি, তাকে শোভা দান করেছি এবং তাতে কোন রকমের ফাটল নেই?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে না আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোন ছিদ্রও নেই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা কি এদের ঊর্ধ্বস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না, আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি ও একে সুশোভিত করেছি এবং এতে কোন ফাটলও নেই ?
৭
وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর ভূমিকে আমি বিস্তার করে দিয়েছি, তাতে স্থাপিত করেছি পর্বতমালার নোঙ্গর। আর তাতে সব রকম নয়নাভিরাম বস্তু উদগত করেছি
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি বিস্তৃত করেছি ভ‚মিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং এতে উদ্গত করেছি নয়নপ্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ,
৮
تَبْصِرَةً وَذِكْرَىٰ لِكُلِّ عَبْدٍ مُّنِيبٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যাতে তা হয় আল্লাহ অভিমুখী প্রত্যেক বান্দার জন্য জ্ঞানবত্তা ও উপদেশস্বরূপ।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এটা জ্ঞান আহরণ ও স্মরণ করার মত ব্যাপার প্রত্যেক অনুরাগী বান্দার জন্যে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ র অনুরাগী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ।
৯
وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً مُّبَارَكًا فَأَنبَتْنَا بِهِ جَنَّاتٍ وَحَبَّ الْحَصِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করেছি বরকতপূর্ণ পানি তারপর তার মাধ্যমে উদগত করেছি উদ্যানরাজি ও এমন শস্য, যা কাটা হয়ে থাকে
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তদ্বারা বাগান ও শস্য উদগত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আকাশ হতে আমি বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি এবং তা দিয়ে আমি সৃষ্টি করি উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি,
১০
وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَّهَا طَلْعٌ نَّضِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং উঁচু-উঁচু খেজুর গাছ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ দানা,
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং লম্বমান খর্জুর বৃক্ষ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খর্জুর,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ও সমুন্নত খর্জুর বৃক্ষ যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর-
১১
رِّزْقًا لِّلْعِبَادِ ۖ وَأَحْيَيْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا ۚ كَذَٰلِكَ الْخُرُوجُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ এবং (এমনিভাবে) আমি সেই পানি দ্বারা এক মৃত নগরকে সঞ্জীবিত করেছি। এভাবেই হবে (কবর থেকে মানুষের) উত্থান। ৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ এবং বৃষ্টি দ্বারা আমি মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করি। এমনিভাবে পুনরুত্থান ঘটবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমার বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ। বৃষ্টি দিয়ে আমি সঞ্জীবিত করি মৃত ভ‚মিকে ; এভাবে উত্থান ঘটবে।
তাফসীরঃ
৪. যেভাবে আল্লাহ তাআলা এক মৃত, পরিত্যক্ত ভূমিকে বৃষ্টির মাধ্যমে সঞ্জীবিত করে তোলেন, ফলে তাতে বোনা বীজ থেকে নানা রকম ফলমূল ও তরি-তরকারি জন্ম নেয়, সেভাবেই যারা কবরে মাটিতে মিশে গেছে আল্লাহ তাআলা তাদেরকেও নতুন জীবন দান করতে সক্ষম।
১২
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَأَصْحَابُ الرَّسِّ وَثَمُودُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাদের আগেও নূহের কওম, রাসসবাসী ৫ ও ছামুদ জাতি (এ বিষয়কে) প্রত্যাখ্যান করেছিল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাদের পূর্বে মিথ্যাবাদী বলেছে নূহের সম্প্রদায়, কুপবাসীরা এবং সামুদ সম্প্রদায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এদের পূর্বেও সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল নূহের সম্প্রদায়, রাস্ ও সামূদ সম্প্রদায়,
তাফসীরঃ
৫. الرس-এর অর্থ কুয়া। ইয়ামামা এলাকায় এ কুয়াকে ঘিরে একটি জনপদ গড়ে উঠেছিল। তাদেরকে ‘আসহাবুর-রাসস’ বা কুয়াওয়ালা বলা হয়। তারা ছিল ছামূদ জাতির একটি শাখা। তাদের কাছে যে নবীকে পাঠানো হয়েছিল তারা তাকে এ কুয়ার মধ্যে চাপা দিয়ে হত্যা করেছিল। -অনুবাদক
১৩
وَعَادٌ وَفِرْعَوْنُ وَإِخْوَانُ لُوطٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাছাড়া আদ জাতি, ফির‘আউন এবং লুতের সম্প্রদায়
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আদ, ফেরাউন, ও লূতের সম্প্রদায়,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আদ, ফির‘আওন ও লূত সম্প্রদায়
১৪
وَأَصْحَابُ الْأَيْكَةِ وَقَوْمُ تُبَّعٍ ۚ كُلٌّ كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ وَعِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং আয়কাবাসী ৬ ও তুব্বা’ ৭র সম্প্রদায়ও। এরা সকলেই রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল। ফলে আমি যে শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলাম, তা সত্যে পরিণত হয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বনবাসীরা এবং তোব্বা সম্প্রদায়। প্রত্যেকেই রসূলগণকে মিথ্যা বলেছে, অতঃপর আমার শাস্তির যোগ্য হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং আয়কার অধিবাসী ও তুব্বা সম্প্রদায় ; এরা সকলেই রাসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, ফলে এদের ওপর আমার শাস্তি আপতিত হয়েছে।
তাফসীরঃ
৬. ‘তুব্বা’ ইয়ামানের হিময়ার বংশীয় রাজাদের উপাধি। কুরআন মাজীদে যে তুব্বা’র কথা বলা হয়েছে তিনি ছিলেন এ বংশের সর্বপ্রধান শাসক। তার মূল নাম হাসসান ইবনে আস‘আদ। তাঁর শাসনকাল ছিল খৃ.পূ. দশম শতাব্দীতে। তিনি একজন ঈমানদার শাসক ছিলেন। নিজ কওমকে ঈমানের দাওয়াত দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি। বলা হয়ে থাকে তিনিই সর্বপ্রথম পবিত্র কাবায় গিলাফ পরিয়েছিলেন। -অনুবাদক
৭. الايكة -এর অর্থ ঘন বৃক্ষ-সম্বলিত বন। হযরত শু‘আয়ব (আ)-এর কওমকে ‘আসহাবুল-আয়কা’ বলা হয়, যেহেতু তারা যে এলাকায় বাস করত, সেখানে প্রচুর গাছপালা ও ঘন বন-বনানী ছিল। অনেকেরই মতে আয়কার’ই অপর নাম মাদয়ান। কেউ বলেন, এ দু’টি আলাদা জনপদ। মাদয়ান ছিল নগর এবং আয়কা পল্লী। হযরত শু‘আয়ব (আ.) ছিলেন উভয় স্থানেরই নবী -অনুবাদক
১৫
أَفَعَيِينَا بِالْخَلْقِ الْأَوَّلِ ۚ بَلْ هُمْ فِي لَبْسٍ مِّنْ خَلْقٍ جَدِيدٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তবে কি আমি প্রথমবার সৃষ্টি করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি? ৮ না। বস্তুত তারা পুনঃসৃষ্টি সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি? বরং তারা নতুন সৃষ্টির ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি! বস্তুত পুনঃ সৃষ্টির বিষয়ে এরা সন্দেহে পতিত।
তাফসীরঃ
৮. যে-কোন জিনিস নতুনভাবে সৃষ্টি করা অর্থাৎ তাকে নাস্তি থেকে অস্তিতে আনা সর্বদা কঠিন হয়ে থাকে। তাকে পুনরায় তৈরি করা সে রকম কঠিন হয় না। তো প্রথমবার সৃষ্টি করতে যখন আল্লাহ তাআলার কোনরূপ কষ্ট বা ক্লান্তি লাগেনি, তখন দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে কষ্ট হবে কেন?
১৬
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ ۖ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
প্রকৃতপক্ষে আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার অন্তরে যেসব ভাবনা-কল্পনা দেখা দেয়, সে সম্পর্কে আমি পরিপূর্ণরূপে অবগত এবং আমি তার গলদেশের শিরা অপেক্ষাও তার বেশি নিকটবর্তী,
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমি জানি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী অপেক্ষাও নিকটতর।
১৭
إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সেই সময়ও, যখন (কর্ম) লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতাদ্বয় লিপিবদ্ধ করে ৯ একজন ডান দিকে এবং একজন বাম দিকে বসা থাকে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
স্মরণ রেখ, ‘দুই গ্রহণকারী’ ফিরিশতা তার দক্ষিণে ও বামে বসে তার কর্ম লিপিবদ্ধ করে ;
তাফসীরঃ
৯. অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা মানুষের সমস্ত ভালো-মন্দ কাজের রেকর্ড রাখার জন্য দু’জন ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। তারা সর্বদা তার ডান ও বাম পাশে উপস্থিত থাকে। এ ব্যবস্থা কেবল এজন্যই করা হয়েছে যে, যাতে কিয়ামতের দিন প্রমাণ হিসেবে মানুষের সামনে তার সে আমলনামা পেশ করা যায়। নচেৎ মানুষের কর্ম সম্পর্কে জানার জন্য আল্লাহ তাআলার অন্য কারও সাহায্য গ্রহণের প্রয়োজন নেই। তিনি মানুষের অন্তরে যেসব কল্পনা জাগে সে সম্পর্কেও অবহিত। তিনি মানুষের গলদেশের শিরা অপেক্ষাও তার বেশি কাছে [আয়াতের তরজমা করা হয়েছে এ হিসেবে যে, اِذْ শব্দটি اَقْرَبُ -এর কালাধিকরণ ظرف, যেমন রূহুল মাআনীতে বলা হয়েছে]।
১৮
مَّا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে, যে (লেখার জন্য) সদা প্রস্তুত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তার জন্যে তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।
১৯
وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ۖ ذَٰلِكَ مَا كُنتَ مِنْهُ تَحِيدُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মৃত্যু যন্ত্রণা সত্যিই আসবে। (হে মানুষ!) এটাই সে জিনিস যা থেকে তুমি পালাতে চাইতে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। এ থেকেই তুমি টালবাহানা করতে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মৃত্যুযন্ত্রণা সত্যই আসবে ; এটা হতেই তোমরা অব্যাহতি চেয়ে এসেছো।
২০
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ ۚ ذَٰلِكَ يَوْمُ الْوَعِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। এটাই সেই দিন যে সম্পর্কে সতর্ক করা হত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, এটাই শাস্তির দিন।
২১
وَجَاءَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّعَهَا سَائِقٌ وَشَهِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে দিন প্রত্যেক ব্যক্তি এমনভাবে আসবে যে, তার সাথে থাকবে একজন চালক ও একজন সাক্ষী। ১০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
প্রত্যেক ব্যক্তি আগমন করবে। তার সাথে থাকবে চালক ও কর্মের সাক্ষী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি উপস্থিত হবে, তার সঙ্গে থাকবে চালক ও সাক্ষী।
তাফসীরঃ
১০. অর্থাৎ মানুষ যখন কবর থেকে বের হয়ে হাশরের মাঠের দিকে যাবে, তখন প্রত্যেকের সাথে দু’জন ফেরেশতা থাকবে। তাদের মধ্যে একজন তাকে হাঁকিয়ে হাশরের ময়দানের দিকে নিয়ে যাবে আর অন্য ফেরেশতা হিসাব-নিকাশের সময় তার কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ দু’জন সেই ফেরেশতা, যারা দুনিয়ায় তার আমলনামা লিখত।
২২
لَّقَدْ كُنتَ فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَـٰذَا فَكَشَفْنَا عَنكَ غِطَاءَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
প্রকৃতপক্ষে তুমি এ দিন সম্পর্কে ছিলে উদাসীন। এখন তোমার থেকে উন্মোচন করেছি, তোমার (উপর পড়ে থাকা) পর্দা। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি প্রখর ।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার কাছ থেকে যবনিকা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি এই দিবস সম্বন্ধে উদাসীন ছিলে, এখন আমি তোমার সম্মুখ হতে পর্দা উন্মোচন করেছি। অদ্য তোমার দৃষ্টি প্রখর।
২৩
وَقَالَ قَرِينُهُ هَـٰذَا مَا لَدَيَّ عَتِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং তার সঙ্গী বলবে, এই তো তা (অর্থাৎ সেই আমলনামা), যা আমার কাছে প্রস্তুত রয়েছে। ১১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবেঃ আমার কাছে যে, আমলনামা ছিল, তা এই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবে, ‘এই তো আমার নিকট ‘আমলনামা প্রস্তুত।’
তাফসীরঃ
১১. সঙ্গী দ্বারা সেই ফেরেশতাকে বোঝানো হয়েছে, যে সর্বদা মানুষের সঙ্গে থেকে তার আমল লিপিবদ্ধ করত এবং কবর থেকে তার সঙ্গে সাক্ষীরূপে এসেছিল।
২৪
أَلْقِيَا فِي جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيدٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হুকুম দেওয়া হবে) তোমরা দু’জন ১২ প্রত্যেক ঘোর কাফের ও সত্যের চরম শত্রুকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর,
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আদেশ করা হবে, তোমরা উভয়ে নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক উদ্ধত কাফিরকে-
তাফসীরঃ
১২. অর্থাৎ সেই ফেরেশতাদ্বয়কে হুকুম দেওয়া হবে, যারা তার সঙ্গে এসেছিল।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
২৫
مَّنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ مُّرِيبٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে (অন্যকে) কল্যাণে বাধা দানে অভ্যস্ত, সীমালংঘনকারী ও (সত্য কথার ভেতর) সন্দেহ সৃষ্টিকারী ছিল;
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যে বাধা দিত মঙ্গলজনক কাজে, সীমালঙ্ঘনকারী, সন্দেহ পোষণকারীকে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারী।
২৬
الَّذِي جَعَلَ مَعَ اللَّهِ إِلَـٰهًا آخَرَ فَأَلْقِيَاهُ فِي الْعَذَابِ الشَّدِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে মাবুদ বানিয়ে নিয়েছিল। সুতরাং আজ তোমরা তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য গ্রহণ করত, তাকে তোমরা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যে ব্যক্তি আল্লাহ্ র সঙ্গে অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করত তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।
২৭
۞ قَالَ قَرِينُهُ رَبَّنَا مَا أَطْغَيْتُهُ وَلَـٰكِن كَانَ فِي ضَلَالٍ بَعِيدٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তার সঙ্গী বলবে, ১৩ হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে বিপথগামী করিনি; বরং সে নিজেই চরম বিভ্রান্তিতে নিপতিত ছিল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তার সঙ্গী শয়তান বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তার সহচর শয়তান বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে অবাধ্য করি নাই। বস্তুত সে-ই ছিল ঘোর বিভ্রান্ত।
তাফসীরঃ
১৩. এখানে ‘সঙ্গী’ বলে শয়তানকে বোঝানো হয়েছে। কেননা সেও মানুষকে বিপথগামী করার জন্য সর্বদা তার সঙ্গে লেগে থাকত। কাফেরগণ চাইবে তাদের প্রাপ্য শাস্তি যেন তাদের পরিবর্তে তাদের নেতৃবর্গ ও শয়তানকে দেওয়া হয় এবং এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলবে, আমাদেরকে তারাই বিপথগামী করেছিল। এর উত্তরে শয়তান বলবে, আমি বিপথগামী করিনি। কেননা তোমাদের উপর আমার এমন কোন আধিপত্য ছিল না যে, তোমাদেরকে ভ্রান্ত পথে চলতে বাধ্য করব। আমি বড়জোর তোমাদেরকে প্ররোচনা দিয়েছিলাম ও ভুল পথে চলতে উৎসাহ যুগিয়েছিলাম, কিন্তু সে পথে তোমরা চলেছিলে তো স্বেচ্ছায়। শয়তানের এ উত্তর বিস্তারিতভাবে সূরা ইবরাহীমে গত হয়েছে (১৪ : ২২)।
২৮
قَالَ لَا تَخْتَصِمُوا لَدَيَّ وَقَدْ قَدَّمْتُ إِلَيْكُم بِالْوَعِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ (তাআলা) বলবেন, তোমরা আমার সামনে ঝগড়া করো না। আমি পূর্বেই তো তোমাদের কাছে শাস্তির সতর্কবাণী পাঠিয়েছিলাম।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বলবেনঃ আমার সামনে বাকবিতন্ডা করো না আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ বলবেন, ‘আমার সামনে বাক-বিতণ্ডা কর না; তোমাদেরকে আমি তো পূর্বেই সতর্ক করেছি।
২৯
مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমার সামনে কথার কোন রদবদল হতে পারে না ১৪ এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুম করি না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আমার কথার রদবদল হয় না এবং আমি আমার বান্দাদের প্রতি কোন অবিচার করি না।’
তাফসীরঃ
১৪. অর্থাৎ সতর্কবাণীতে ব্যক্ত এই কথা যে, কুফর অবলম্বনকারী ও তার উৎসাহদাতা উভয়েই জাহান্নামের উপযুক্ত। এর কোন পরিবর্তন নেই।
৩০
يَوْمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَأْتِ وَتَقُولُ هَلْ مِن مَّزِيدٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সেই সময় স্মরণ রাখ, যখন আমি জাহান্নামকে বলব, তুমি কি ভরে গেছ? সে বলবে, আরও কিছু আছে কি? ১৫
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব; তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবেঃ আরও আছে কি?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব, ‘তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছো ?’ জাহান্নাম বলবে, ‘আরও আছে কি ?’
তাফসীরঃ
১৫. অর্থাৎ জাহান্নাম বলবে, আমি আরও মানুষ গ্রাস করতে প্রস্তুত আছি।
৩১
وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর মুত্তাকীদের জন্য জান্নাতকে নিকটবর্তী করে দেওয়া হবে, কোন দূরত্বই থাকবে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে খোদাভীরুদের অদূরে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর জান্নাতকে নিকটস্থ করা হবে মুত্তাকীদের-কোন দূরত্ব থাকবে না।
৩২
هَـٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(এবং বলা হবে,) এটাই তা যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হত প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী (গুনাহ থেকে) আত্মরক্ষাকারীর জন্য, ১৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদের প্রত্যেক অনুরাগী ও স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটারই প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল-প্রত্যেক আল্লাহ্-অভিমুখী, হিফাযতকারীর জন্যে-
তাফসীরঃ
১৬. অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমের বিপরীত কাজ করা হতে নিজেকে রক্ষা করে।
৩৩
مَّنْ خَشِيَ الرَّحْمَـٰنَ بِالْغَيْبِ وَجَاءَ بِقَلْبٍ مُّنِيبٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে তাঁকে না দেখেই এবং আল্লাহর দিকে রুজুকারী অন্তঃকরণ নিয়ে উপস্থিত হয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যে না দেখে দয়াময় আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করত এবং বিনীত অন্তরে উপস্থিত হত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা না দেখে দয়াময় আল্লাহ্কে ভয় করে এবং বিনীত চিত্তে উপস্থিত হয়-
৩৪
ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ ۖ ذَٰلِكَ يَوْمُ الْخُلُودِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা এতে প্রবেশ কর শান্তির সাথে। সেটা হবে অনন্ত জীবনের দিন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা এতে শান্তিতে প্রবেশ কর। এটাই অনন্তকাল বসবাসের জন্য প্রবেশ করার দিন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তাদেরকে বলা হবে, ‘শান্তির সঙ্গে তোমরা এতে প্রবেশ কর ; তা অনন্ত জীবনের দিন।’
৩৫
لَهُم مَّا يَشَاءُونَ فِيهَا وَلَدَيْنَا مَزِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং তারা (অর্থাৎ জান্নাতবাসীগণ) তাতে পাবে এমন সবকিছু, যা তারা চাবে এবং আমার কাছে আছে আরও বেশি কিছু। ১৭
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা তথায় যা চাইবে, তাই পাবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরও অধিক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এখানে তারা যা কামনা করবে তাই পাবে এবং আমার নিকট রয়েছে তারও অধিক।
তাফসীরঃ
১৭. আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে জান্নাতের নি‘আমতরাজি সম্পর্কে মোটামুটিভাবে আলোকপাত করেছেন। তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার অবকাশ এ সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে নেই। কেননা অনন্ত বসবাসের সে জান্নাতে আল্লাহ তাআলা যে অফুরান নি‘আমতের ব্যবস্থা রেখেছেন একটি ‘হাদীসে কুদসী’তে তার দিকে এভাবে ইশারা করা হয়েছে যে, ‘আল্লাহ তাআলা জান্নাতে এমন সব নি‘আমত প্রস্তুত করে রেখেছেন, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন ব্যক্তির অন্তর তা কল্পনাও করেনি, এ আয়াতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাষায় আল্লাহ তাআলা সেসব নি‘আমতের প্রতি ইশারা করছেন যে, ‘আমার কাছে আছে আরও বেশি কিছু’। সেই নি‘আমতসমূহের মধ্যে এক বিরাট নি‘আমত হল আল্লাহ তাআলার দর্শন লাভ। আরও দেখুন সূরা ইউনুস (১০ : ২৬)।
৩৬
وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّن قَرْنٍ هُمْ أَشَدُّ مِنْهُم بَطْشًا فَنَقَّبُوا فِي الْبِلَادِ هَلْ مِن مَّحِيصٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি তাদের (অর্থাৎ মক্কাবাসী কাফেরদের) আগে কত জাতিকে ধ্বংস করেছি, যারা শক্তিতে তাদের চেয়ে প্রবল ছিল। তারা নগরে-নগরে ঘুরে বেড়িয়েছিল। ১৮ তাদের কি পালানোর কোন জায়গা ছিল?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি তাদের পূর্বে বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, তারা এদের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী ছিল এবং দেশে-বিদেশে বিচরণ করে ফিরত। তাদের কোন পলায়ন স্থান ছিল না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি তাদের পূর্বে আরও কত মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি যারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে প্রবল, এরা দেশে দেশে ঘুরে বেড়াইত ; এদের কোন পলায়নস্থল রইল কি ?
তাফসীরঃ
১৮. অর্থাৎ খুবই সমৃদ্ধশালী ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য উপলক্ষে তারা নগরে-নগরে ঘুরে বেড়াত। আয়াতটির এক অর্থ এ রকমও হতে পারে যে, তারা শাস্তি থেকে আত্মরক্ষার্থে বিভিন্ন শহরে দৌড়াদৌড়ি করেছিল, কিন্তু তারা আল্লাহর ধরা থেকে বাঁচতে পারেনি।
- নামাজে আমরা যা বলি তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা !!
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
৩৭
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَذِكْرَىٰ لِمَن كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয়ই এর ভেতর এমন ব্যক্তির জন্য উপদেশ রয়েছে, যার আছে অন্তর কিংবা যে মনোযোগ দিয়ে কর্ণপাত করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
নিশ্চয়ই এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে যার আছে অন্তঃকরণ বা যে শ্রবণ করে নিবিষ্ট চিত্তে।
৩৮
وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী জিনিস সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে আর এতে আমাকে বিন্দুমাত্র ক্লান্তি স্পর্শ করেনি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে; আমাকে কোন ক্লান্তি স্পর্শ করে নাই।
৩৯
فَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং (হে রাসূল!) তারা যা-কিছু বলছে, তুমি তাতে সবর কর এবং সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে প্রশংসার সাথে নিজ প্রতিপালকের তাসবীহ পাঠ করতে থাক।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অতএব এরা যা বলে তাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে,
৪০
وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَأَدْبَارَ السُّجُودِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাঁর তাসবীহ পাঠ কর রাতের অংশসমূহেও ১৯ এবং সিজদার পরেও। ২০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
রাত্রির কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং নামাযের পশ্চাতেও।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর রাত্রির একাংশে এবং সালাতের পরেও।
তাফসীরঃ
১৯. ‘সিজদা’ দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য ফরয নামায এবং তারপর ‘তাসবীহ পাঠ’ দ্বারা নফল নামাযে লিপ্ত হতে বলা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে এ রকম তাফসীরই বর্ণিত আছে (রূহুল মাআনী)।
২০. এখানে ‘তাসবীহ’ দ্বারা নামায বোঝানো উদ্দেশ্য। সুতরাং ‘সূর্যোদয়ের আগে’ বলে ‘ফজরের’ নামায এবং সূর্যাস্তের আগে বলে ‘জুহর’ ও ‘আসরের’ নামায বোঝানো হয়েছে আর ‘রাতের অংশসমূহে’ বলে মাগরিব, ইশা ও তাহাজ্জুদের নামায বোঝানো হয়েছে।
৪১
وَاسْتَمِعْ يَوْمَ يُنَادِ الْمُنَادِ مِن مَّكَانٍ قَرِيبٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং মনোযোগ দিয়ে শোন, যে দিন এক আহ্বানকারী নিকটবর্তী একস্থান থেকে ডাক দেবে, ২১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
শুন, যে দিন এক আহবানকারী নিকটবর্তী স্থান থেকে আহবান করবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শোন, যেদিন এক ঘোষণাকারী নিকটবর্তী স্থান হতে আহ্বান করবে,
তাফসীরঃ
২১. অর্থাৎ প্রত্যেকের কাছে মনে হবে ঘোষণাকারী খুব নিকটবর্তী স্থান থেকেই ঘোষণা করছে। খুব সম্ভব এই ঘোষণাকারী হবেন হযরত ইসরাফিল আলাইহিস সালাম, যিনি মৃতদেরকে কবর থেকে বের হয়ে আসার জন্য ডাক দেবেন।
৪২
يَوْمَ يَسْمَعُونَ الصَّيْحَةَ بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكَ يَوْمُ الْخُرُوجِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে দিন তারা সত্যি সত্যি আওয়াজ শুনবে, ২২ সেটাই (কবর থেকে) বের হওয়ার দিন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যেদিন মানুষ নিশ্চিত সেই ভয়াবহ আওয়াজ শুনতে পাবে, সেদিনই পুনরত্থান দিবস।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যেদিন মানুষ অবশ্যই শুনতে পাবে মহানাদ, সেই দিনই বের হওয়ার দিন।
তাফসীরঃ
২২. এর দ্বারা ঘোষণাকারীর ঘোষণার আওয়াজও বোঝানো হতে পারে এবং শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার আওয়াজও।
৪৩
إِنَّا نَحْنُ نُحْيِي وَنُمِيتُ وَإِلَيْنَا الْمَصِيرُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয়ই আমিই দান করি জীবন এবং মৃত্যুও। শেষ পর্যন্ত আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি জীবন দান করি, মৃত্যু ঘটাই এবং আমারই দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমিই জীবন দান করি, মৃত্যু ঘটাই এবং সকলের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে।
৪৪
يَوْمَ تَشَقَّقُ الْأَرْضُ عَنْهُمْ سِرَاعًا ۚ ذَٰلِكَ حَشْرٌ عَلَيْنَا يَسِيرٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে দিন ভূমি তাদের (উপর) থেকে ফেটে যাবে এবং তারা (কবর থেকে) অতি দ্রুত বের হয়ে আসবে। এভাবে সকলকে একত্র করে ফেলা আমার পক্ষে খুবই সহজ।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যেদিন ভূমন্ডল বিদীর্ণ হয়ে মানুষ ছুটাছুটি করে বের হয়ে আসবে। এটা এমন সমবেত করা, যা আমার জন্যে অতি সহজ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যেদিন তাদের ওপরস্থ যমীন বিদীর্ণ হবে এবং মানুষ ত্রস্ত-ব্যস্ত হয়ে ছুটাছুটি করবে, এই সমবেত সমাবেশকরণ আমার জন্যে সহজ।
৪৫
نَّحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَ ۖ وَمَا أَنتَ عَلَيْهِم بِجَبَّارٍ ۖ فَذَكِّرْ بِالْقُرْآنِ مَن يَخَافُ وَعِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা যা-কিছু বলছে আমি তা ভালোভাবেই জানি এবং (হে রাসূল!) তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও। ২৩ আমার সতর্কবাণীকে ভয় করে এমন প্রত্যেককে তুমি কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দিতে থাক।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা যা বলে, তা আমি সম্যক অবগত আছি। আপনি তাদের উপর জোরজবরকারী নন। অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কোরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা যা বলে তা আমি জানি, তুমি এদের ওপর জবরদস্তিকারী নও, সুতরাং যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে উপদেশ দান কর কুরআনের সাহায্যে।
তাফসীরঃ
২৩. [নানাভাবে বোঝানো সত্ত্বেও কাফেরগণ তাঁর ডাকে সাড়া না দেওয়ায়, উপরন্তু তাঁর ও কুরআন সম্পর্কে বিভিন্ন রকম অশোভন উক্তি করায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মনে বড় ব্যথা ছিল এবং এত কিছুর পরও তারা যেন ঈমান আনে, সেজন্য তার অন্তরে অবর্ণনীয় জ্বালা ছিল।] তাই এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁকে সান্তনা দিচ্ছেন যে, জবরদস্তিমূলকভাবে মানুষকে ঈমান আনতে বাধ্য করা আপনার দায়িত্ব নয়। আপনার কাজ কেবল তাদের কাছে উপদেশ বাণী পৌঁছিয়ে দেওয়া। যার অন্তরে কিছুটা হলেও আল্লাহর ভয় থাকবে, সে আপনার কথা মেনে নেবে। আর যে মানবে না তার ব্যাপারে আপনার কোন দায়-দায়িত্ব নেই। [এ ধরনের লোকে যে সব মন্তব্য করছে আমার তা জানা আছে। আমি সময় মত তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব]।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
আমাদের নতুন ইসলামিক নিউজ ও জিজ্ঞাসা ভিত্তিক সাইড
Islamic Info Hub ( www.islamicinfohub.com ) আজই ভিজিড করুন !!
- নামাজে আমরা যা বলি তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা !!
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
- ইসলামে কুরবানীর গুরুত্ব ও বিধান,ইসলামে কোরবানির যত ফজিলত গুরুত্ব ও শিক্ষা
- বৃষ্টির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, বৃষ্টির নামাজের পর আমল
- ইসতিসকার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, ইসতিসকার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইসতিসকার নামাজের পর আমল