আজকের বিষয়: সূরা তাহরীম সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল তাহরীম আলমল ও ফজিলত, সূরা তাহরীম কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা তাহরীম নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৬৬ সূরা আল – তাহরীম
নামকরণ
সূরার প্রথমে আয়াতের () শব্দ থেকে এর নাম গৃহীত । এটিও সূরার বিষয়-ভিত্তিক শিরোনাম নয় । বরং এ নামের অর্থ হচ্ছে এ সূরার মধ্যে তাহরীম সম্পর্কিত বিষয়ের উল্লেখ আছে ।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
এ সূরার মধ্যে তাহরীম সম্পর্কিত যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে সে সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসের বর্ণনাসমূহে দু’জন মহিলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে । তাঁরা দুজনই নবীর (সা) স্ত্রী । তাঁদের একজন হলেন হযরত সাফিয়া (রা) অন্যজন হযরত মারিয়া কিবতিয়া (রা) । তাদের মধ্যে একজন অর্থাৎ হযরত সাফিয়া (রা) খায়বার বিজয়ের পরে নবীর (সা) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । আর সর্বসম্মত মতে খায়বার বিজিত হয় ৭ম হিজরীতে । দ্বিতীহ মহিলা হযরত মারিয়াকে (রা) মিসরের শাসক মুকাওকিস ৭ম হিজরী সনে নবীর(সা) খেদমতের জন্য পাঠিয়েছিলেন । ৮ম হিজরীর যুলহাজ্জ মাসে তাঁরই গর্ভে নবীর(সা) পুত্র সন্তান হযরত ইবরাহীম (রা) জন্ম লাভ করেন । এসব ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে এ বিষয়টি প্রায় সুনির্দিষ্ট হয়ে যায় যে, এ সূরাটি ৭ম অথবা ৮ম হিজরীর কোন এক সময় নাযিল হয়েছিল ।
বিষয়বস্তু ও মুল বক্তব্য
এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা । এ সূরার মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লামের পবিত্র স্ত্রীগণের সাথে জড়িত কিছু ঘটনার প্রতি ইংগিত দিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে ।
একঃ হালাল হারাম এবং জায়েজ নাজায়েযের সীমা নির্ধারণ করার ইখতিয়ার চূড়ান্তভাবে আল্লাহ তা’আলার হাতে । সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা খোদ আল্লাহ তা’আলার নবীর (সা) কাছেও তার কোন অংশ হস্তান্তার করা হয়নি । নবী নবী হিসেবে কোন জিনিসকে হারাম বা হালাল ঘোষণা করতে পারেন কেবল তখনই যখন এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে কোন ইংগিত থাকে । সে ইংগিত কুরআন মজীদে নাযিল হয়ে থাক কিংবা তা অপ্রকাশ্য অহীর মাধ্যমে নাযিল হয়ে থাক তাতে কিছু এসে যায় না । কিন্তু খোদ আল্লাহ কর্তৃক মোবাহকৃত কোন জিনিসকে নিজের পক্ষ থেকে হারাম করে নেয়ার অনুমতি কোন নবীকেও দেয়া হয়নি । এ ক্ষেত্রে অন্য কোন মানুষের তো প্রশ্নই ওঠে না ।
দুইঃ মানব সমাজে নবীর স্থান ও মর্যাদা অত্যন্ত নাজুক । একটি সাধারণ কথা যা অন্য কোন মানুষের জীবনে সংঘটিত হলে তা তেমন কোন গুরুত্বই বহন করে না, কিন্তু অনুরূপ ঘটনাই নবীর জীবনে সংঘটিত হলে আইনের মর্যাদা লাভ করে । তাই আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে অত্যন্ত কঠোরভাবে নবী-রসূলদের জীবন পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে তাদের অতি ক্ষুদ্র কোন পদক্ষেপও আল্লাহর ইচ্ছার পরিপন্থি না হয় । নবীর দ্বারা এমন কোন ক্ষুদ্র কাজও সংঘটিত হয়ে গেলে সংগে সংগে তা সংশোধন করে দেয়া হয়েছে, যাতে ইসলামী আইন ও তার উৎস সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ রূপে শুধু আল্লাহর কিতাব আকারে নয় বরং নবীর “উসওয়ায়ে হাসানা” বা উত্তম জীবন আদর্শরূপে আল্লাহর বান্দাদের কাছে পৌছে এবং তার মধ্যে অণু পরিমাণও এমন কোন জিনিস সংমিশ্রিত হতে না পারে, আল্লাহর ইচ্ছা ও মর্জির সাথে যার কোন মিল নেই ।
তিনঃ ওপরে বর্ণিত মূলনীতির আলোকে আপনা থেকেই যে বিষয়টি বুঝা যায় তা এই যে, একটি ক্ষুদ্র বিষয়েও যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভুল দেখিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তা শুধু সংশোধনই করা হয়নি, বরং রেকর্ডভুক্তও করা হয়েছে তখন তা অকাট্যভাবে আমাদের মনে এ আস্থা সৃষ্টি করে যে, নবীর (সা) পবিত্র জীবনকালে যেসব কাজকর্ম ও হুকুম -আহকাম বর্তমানে আমরা পাচ্ছি, এবং যেসব কাজকর্ম ও হুকুম আহকাম সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে কোন তিরস্কার ব সংশোধনী রেকর্ডে নেই তা পুরোপুরি সত্য ও নির্ভুল এবং আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পূর্ণরূপে সংগতিপূর্ণ । ঐ সব কাজকর্ম ও আদেশ নিষেধ থেকে আমরা পূর্ণ আস্থার সাথে হিদায়াত ও পথনির্দেশ গ্রহণ করতে পারি ।
কুরআন মজীদের এই বাণী থেকে চতুর্থ যে বিষয়টি সামনে আসে তা হচ্ছে, যে পবিত্র রসূলের সম্মান ও মর্যাদাকে আল্লাহ নিজে বান্দাদের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংগ হিসেবে গণ্য করেন সেই রসূল সম্পর্কে এ সূরাতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি তাঁর স্ত্রীদের খুশী করার জন্য একবার আল্লাহর হালালকৃত একটি জিনিসকে নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছিলেন । আর নবীর (সা) পবিত্র স্ত্রীগণ, আল্লাহ নিজে যাদেরকে ঈমানদারদের মা বলে ঘোষণা করেন এবং যাঁদেরকে সম্মান করার জন্য তিনি নিজে মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন কিছু ভুল -ত্রুটির জন্য তাদেরকেই আবার তিনি কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন ।
তাছাড়া নবীকে তিরস্কার এবং তার স্ত্রীদেরকে সাবধান চুপিসারে করা হয়নি, বরং তা সেই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যা সমস্ত উম্মাতকে চিরদিন পড়তে হবে । আল্লাহ তা’আলা তার রসূল এবং উম্মুল মু’মিনীনদেরকে ঈমানদারদের দৃষ্টিতে হেয়প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে তাঁর কিতাবে এসব উল্লেখ করেননি ।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
- নামাজে আমরা যা বলি , তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা !!
- “লা আদওয়া” সংক্রমন নেই!হাদীসটি কী বুঝায়?
- রমজানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যত পরামর্শ
- ডায়াবেটিস রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন
- আজহারী: কোন ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙে
আল্লাহ তা’আলার এরূপ কোন অভিপ্রায় ছিল না , কিংবা তা থাকতেও পারে না । একথা স্পষ্ট যে, পবিত্র কুরআনের এ সূরা পাঠ করে কোন মুসলমানের অন্তর থেকে তাদের সম্মান ও মর্যাদা উঠে যায়নি । তাহলে কুরআনে এ কথা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য এ ছাড়া আর কি হতে পারে যে, আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদেরকে তাদের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে সম্মান প্রদর্শনের সঠিক সীমারেখার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চান ।
নবীগণ কেবল নবীই, তাঁরা খোদা নন যে, তাদের কোন ভুল -ত্রুটি হতে পারে না । বরং নবীর মর্যাদা এ কারণে যে, তিনি আল্লাহর ইচ্ছার পূর্ণাঙ্গ বাস্তব রূপ । তাঁর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুল -ত্রুটিকেও আল্লাহ সংশোধন না করে ছেড়ে দেননি । এভাবে আমরা এ আস্থা ও প্রশান্তি লাভ করি যে, নবীর রেখে যাওয়া আদর্শ আল্লাহর ইচ্ছার বাস্তব প্রতিনিধিত্ব করছে । একইভাবে সাহাবা কিরাম হোন বা নবীর (সা) পবিত্র স্ত্রীগণ হোন, তাঁরা সবাই মানুষ ছিলেন, ফেরেশতা বা মানব সত্তার উর্ধে ছিলেন না । তাদেরও ভুল-ত্রুটি হওয়া সম্ভব ছিল ।
তাঁরা যে মর্যাদা লাভ করেছিলেন তার কারণ ছিল এই যে, আল্লাহর রসূলের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ তাদেরকে মানবতার সর্বোত্তম নমুনা বানিয়ে দিয়েছিল । তাদের যা কিছু সম্মান ও মর্যাদা তা এ কারণেই । তাঁরা ভুল-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন এরূপ অনুমান ও মনগড়া ধারণার ওপর তাদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত নয় । এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কল্যাণময় যুগে সাহাবা কিরাম কিংবা নবীর (সা) পবিত্র স্ত্রীগণের দ্বারা মানবিক দুর্বলতার কারণে যখনই কোন ভুল-ত্রুটি সংঘটিত হয়েছে তখনই তাদের সতর্ক করা হয়েছে ও ভুল -ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া হয়েছে । নবী (সা) নিজেও তাদের কিছু কিছু ভুল-ত্রুটি সংশোধন করেছেন যা হাদীস গ্রন্থসমূহের বহু সংখ্যক জায়গায় উল্লেখ আছে ।
আল্লাহ তা’আলা নিজেও কুরআন মজিদে তাদের কিছু কিছু ভুল-ত্রুটির উল্লেখ করে তা সংশোধন করেছেন যাতে মুসলামনগণ কখনেই তাদের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে সম্মান দেখানোর এমন কোন অতিরঞ্জিত ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে না নেয় যা তাদেরকে মানুষের পর্যায় থেকে উঠেয়ে আল্লাহর মর্যাদার বসিয়ে না দেয় । আপনি যদি চোখ খুলে কুরআম মজীদ অধ্যয়ন করেন তাহলে আপনার সামনে এর দৃষ্টান্ত একের পর এক আসতে থাকবে । আল্লাহ তা’আলা সূরা আলে ইমরানে ওহুদ যুদ্ধের আলোচনা প্রসংগে সাহাবা কিরামদের সম্বোধন করে বলেছেনঃ
“আল্লাহ তা’আলা (সাহায্য -সহযোগিতার ) যে প্রতিশ্রুতি তোমাদের দিয়েছিলেন তা তিনি পূরণ করেছেন যখন তোমরা তাদেরকে তাঁর ইচ্ছায় হত্যা করছিল । অবশেষে তোমরা যখন দুর্বলতা দেখালে এবং কাজের ব্যাপারে মতানৈক্য করলে আর যে জিনিসের আকাংখা তোমরা করছিলে আল্লাহ তা’আলা যেই মাত্র তোমাদের সেই জিনিস দেখালেন (অর্থাৎ গণিমতের সম্পদ) তখনই তোমরা তার হুকুমের নাফরমানি করে বসলে । তোমাদের মধ্যে কেউ ছিল পার্থিব স্বার্থের প্রত্যাশী এবং কেউ ছিলে আখেরাতের প্রত্যাশী । এ অবস্থায় তোমাদের পরীক্ষার জন্য আল্লাহ তাদের মোকাবেলায় তোমাদের পরস্ত করে দিলেন । আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, ও মেহেরবান । “ (আয়াত ১৫২) ।
অনুরূপভাবে সূরা নূরে হযরত আয়েশার বিরুদ্ধে অপবাদের উল্লেখ করে আল্লাহ সাহাবীগণকে বলেনঃ
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
“এমনটা কেন হলো না যে, যখন তোমরা এ বিষয়টি শুনেছিলে মু’মিন নারী ও পুরুষ সবাই নিজে সে বিষয়ে ভাল ধারণা পোষণ করতে এবং বলে দিতে যে, এটা তো স্পষ্ট অপবাদ । ……… দুনিয়া ও আখেরাতে যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর মেহেরবানী ও দয়া না হতো তাহলে যে বিষয়ের মধ্যে তোমরা নিক্ষিপ্ত হয়েছিলে তার পরিণামে কঠিন আযাব তোমাদের গ্রাস করতো । একটু ভেবে দেখ যখন তোমাদের মুখে মুখে কাহিনীটার চর্চা হচ্ছিল এবং তা ছড়াচ্ছিল এবং তোমরা এমন কিছু বলছিলে যে, বিষয়ে তোমাদের কিছুই জানা ছিল না । তোমরা এটাকে একটা মামুলি ব্যাপার মনে করেছিলে । কিন্তু আল্লাহর কাছে তা ছিল গুরুতর বিষয় । কেন তোমরা এ কথা শোনামাত্র বললে না যে, আমাদের জন্য এরূপ কথা মুখে আনাও শোভা পায় না । সুবহানাল্লাহ! এটা তো একটা গুরুতর অপবাদ? আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক তাহলে ভবিষ্যতে আর কখনো যেন তোমরা এরূপ আচরণ না করো । “ (আয়াত , ১২ থেকে১৭) ।
সূরা আহযাবে নবীর (সা) পবিত্র স্ত্রীগণকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছেঃ
“হে নবী, তোমার স্ত্রীদের বলো, তোমরা দুনিয়া ও তার চাকচিক্য চাও তাহলে এসো আমি তোমাদের কিছু দিয়ে উত্তম রূপে বিদায় করে দিই । আর যদি তোমরা আল্লাহ , তাঁর রসূল এবং আখেরাতের প্রত্যাশী হয়ে থাকো তাহলে জেনে রাখ, তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ তাদের জন্য বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন । “ (আয়াত , ২৮ , ২৯) ।
সূরা জুম’আতে সাহাবীদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
তারা ব্যবসায়-বাণিজ্য ও খেল -তামাশা দেখে সে দিকে ছুটে গেল এবং (হে নবী ) তোমাকে (খোতবা দানরত অবস্থায়) দণ্ডায়মান রেখে গেল । তাদের বলো, আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা খেল -তামাশা ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের চেয়ে উত্তম । আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা । “ (আয়াত ১১) ।
মক্কা বিজয়ের পূর্বে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী হযরত হাতেব ইবনে আবী বালতায়া নবীর (সা) মক্কা অভিযানের খবর গোপনে কুরাইশদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । সূরা মুমতাহিনায় তাঁর এ কাজের কঠোর সমালোচনা ও তিরস্কার করা হয়েছে ।
কুরআন মজীদের মধ্যেই এসব উদাহরণ বর্তমান, যে কুরআন মজীদের মধ্যে আল্লাহ তা’আলা সাহাবা কিরাম এবং নবীর (সা) পবিত্র স্ত্রীগণের সম্মান ও মর্যাদা নিজে বর্ণনা করেছেন এবং তাদেরকে রাদিয়াল্লাহ আনহুম ওয়া রাদু আনহু অর্থাৎ তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট বলে ফরমান শুনিয়েছেন । সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান দেখানো এই শিক্ষা মধ্যপন্থার ওপর ভিত্তিশীল । এ শিক্ষা মুসলমানদেরকে মানুষ পূজার সেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করেছে যার মধ্যে ইহুদী ও খৃস্টানরা নিপতিত হয়েছে । আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বড় বড় মনীষী হাদীস, তাফসীর, এবং ইতিহাস বিষয়ে এসব গ্রন্থ রচনা করেছেন তার মধ্যে যেসব জায়গায় সাহাবায়ে কিরাম, নবীর (সা) পবিত্র স্ত্রীগণ এবং অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গদের মর্যাদা ও পূর্ণতার যে বর্ণনা করা হয়েছে সেখানে তাদের দুর্বলতা, বিচ্যুতি এবং ভুল-ত্রুটির ঘটনা বর্ণনা করতেও দ্বিধা করা হয় নাই । অথচ বর্তমান সময়ের সম্মান প্রদর্শনের দাবীদারদের তুলনায় তাঁরা তাঁদের বেশী মর্যাদা দিতেন এবং সম্মান প্রদর্শনের সীমারেখাও তারা এদের চেয়ে বেশী জানতেন ।
পঞ্চম যে কথাটি এ সূরায় খোলাখুলি বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে, আল্লাহর দীন সম্পূর্ণ নিরপক্ষ ও নিখুঁত । এ দীন অনুসারে ঈমান ও আমলের বিচারে প্রত্যেকের যা প্রাপ্য তাই সে পাবে । অতি বড় কোন বোজর্গের সাথে ঘনিষ্ঠতাও তার জন্য আদৌ কল্যাণকর নয় এবং অত্যন্ত খারাপ কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্কও তার কোন ক্ষতি করতে পারে না । এ ব্যাপারে বিশেষ করে নবীর(সা) পবিত্র স্ত্রীগণের সামনে উদাহরণ হিসেবে তিন শ্রেণীর স্ত্রীলোককে পেশ করা হয়েছে । একটি উদাহরণ দেয়া হয়েছে নূহ (আ) ও হযরত লূতের (আ) স্ত্রীদের । তারা যদি ঈমান আনয়ন করত এবং তাদের মহাসম্মানিত স্বামীর সাথে সহযোগিতা করত তাহলে মুসলিম উম্মার মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র স্ত্রীগণের যে মর্যাদা তাদের মর্যাদাও তাই হতো ।
কিন্তু যেহেতু তারা এর বিপরীত আচরণ ও পন্থা অবলম্বন করেছে তাই নবীদের স্ত্রী হওয়াটাও তাদের কোন কাজে আসেনি এবং তারা জাহান্নামের অধিবাসী হয়েছে । দ্বিতীয় উদাহরণ দেয়া হয়েছে ফেরাউনের স্ত্রীর । যদিও তিনি আল্লাহর জঘণ্য এক দুশমনের স্ত্রী ছিলেন কিন্তু যেহেতু তিনি ঈমান গ্রহণ করেছিলেন এবং ফেরাউনের কওমের কাজ কর্ম থেকে নিজের কাজ কর্মের সম্পূর্ণ আলাদা করে নিয়েছিলেন তাই ফেরাইনের মত চরম পর্যায়ের কাফেরের স্ত্রী হওয়াও তাঁর কোন ক্ষতির কারণ হয়নি । আল্লাহ তা’আলা তাঁকে জান্নাতের উপযুক্ত বানিয়ে দিয়েছেন ।
তৃতীয় উদাহরণ দেয়া হয়েছে হযরত মারয়াম আলাইহিস সালামের । তাঁর এই বিরাট মর্যাদা লাভের কারণ হলো, আল্লাহ তাআলা তাঁকে যে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে নিক্ষেপ করার ফায়সালা করেছিলেন তা তিনি মাথা পেতে গ্রহণ করেছেন ।
তাঁকে কুমারী অবস্থায় আল্লাহর হুকুমে মু’জিযা হিসেবে গর্ভবতী বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এভাবে তাঁর রব তাঁর দ্বারা কি কাজ নিতে চান তাও তাকে বলে দেয়া হয়েছে । হযরত মারয়াম ছাড়া পৃথিবীর আর কোন অভিজাত ও নেককার মহিলাকে এরূপ কোন কঠিন পরীক্ষার মধ্যে কখনো ফেলা হয়নি । হযরত মারয়াম এ ব্যাপারে যখন কোন আফসোসও আর্তনাদ করেননি বরং একজন খাঁটি ঈমানদার নারী হিসেবে আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য যা বরদাশত করা অপরিহার্য ছিল তা সবই বরদাশত করা স্বীকার করেছেন তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁকে () ‘বেহেশতের মহিলাদের নেত্রী’(মুসনাদে আহমাদ) হওয়ার মত সুউচ্চ মর্যাদা দান করেছেন ।
এসব বিষয় ছাড়াও আমরা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য এ সূরা থেকে জানতে পারি । তা হচ্ছে, কুরআন মজীদে যা কিছু লিপিবদ্ধ আছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কেবল সেই জ্ঞানই আসতো না । বরং তাঁকে অহীর মাধ্যমে অন্যান্য বিষয়ের জ্ঞানও দেয়া হতো যা কুরআনে লিপিবদ্ধ করা হয়নি । এ সূরার ৩নং আয়াত তার সুস্পষ্ট প্রমাণ । তাতে বলা হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পবিত্র স্ত্রীদের একজনের কাছে গোপনীয় একটি কথা বলেছিলেন । কিন্তু তিনি তা অন্য কাউকে বলেছিলেন ।
আল্লাহ তা’আলা বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানিয়ে দিলেন । অতপর নবী (সা) এই ত্রুটির জন্য তাঁর সেই স্ত্রীকে সতর্ক করে দিলেন । এতে তাঁর স্ত্রী তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তাঁর এই ত্রুটি সম্পর্কে তাঁকে কে অবহিত করেছেন । নবী (সা) জবাব দিলেন । যে সত্তা আলীম ও খাবীর তিনিই আমাকে তা জানিয়েছেন । এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গোটা কুরআন মজীদের মধ্যে সেই আয়াতটি কোথায় যার মধ্যে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীকে গোপনীয় যে কথা বলেছিলে তা সে অন্যের কাছে বা অমুকের কাছে প্রকাশ করে দিয়েছে? কুরআনে যদি এমন কোন আয়াত না থেকে থাকে এবং এটা সুস্পষ্ট যে, তা নেই তাহলে এটাই এ বিষয়ের সুস্পস্ট প্রমাণ যে, কুরআন ছাড়াও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অন্য অহী আসতো । কুরআন ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আর কোন অহী আসতো না, হাদীস অস্বীকারকারীদের এ দাবী এর দ্বারা বাতিল হয়ে যায় ।
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
৬৬ . আত তাহরীম – (الـتحريم) | নিষিদ্ধকরণ
মাদানী, মোট আয়াতঃ ১২
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
১
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَاۤ اَحَلَّ اللّٰہُ لَکَ ۚ تَبۡتَغِیۡ مَرۡضَاتَ اَزۡوَاجِکَ ؕ وَاللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
ইয়াআইয়ুহান্নাবিইয়ুলিমা তুহাররিমুমাআহাল্লাল্লা-হু লাকা তাবতাগী মারদা-তা আঝওয়া-জিকা ওয়াল্লা-হু গাফূরুর রাহীম।
O Prophet, why do you ban (on your self) something that Allah has made lawful for you, seeking to please your wives? And Allah is Most-Forgiving, Very-Merciful.
হে নবী! আল্লাহ যে জিনিস তোমার জন্য হালাল করেছেন, তুমি নিজ স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্য তা হারাম করছ কেন? ১ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।
হে নবী ! আল্লাহ্ তোমার জন্যে যা বৈধ করেছেন তুমি তা নিষিদ্ধ করছো কেন ? তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাইছো; আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
তাফসীরঃ
১. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটা নিয়ম ছিল, তিনি প্রতিদিন আসরের পর প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে কিছুক্ষণের জন্য যেতেন। নিয়ম অনুসারে একদিন তিনি হযরত যয়নাব (রাযি.)-এর ঘরে গেলেন। হযরত যয়নাব (রাযি.) তাকে মধু খেতে দিলেন। তিনি তা খেলেন। তারপর তিনি হযরত আয়েশা ও হযরত হাফসা (রাযি.)-এর ঘরে গেলেন। তারা দু’জনেই জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি মাগাফির খেয়েছেন? (মাগাফির এক জাতীয় উদ্ভিদ, যাতে কিছুটা দুর্গন্ধ আছে)। তিনি বললেন, না তো! তারা বললেন, তাহলে আপনার মুখে এ গন্ধ কিসের? তখন তাঁর সন্দেহ হল, হয়ত তিনি যে মধু পান করেছেন, মৌমাছি তাতে মাগাফিরের রসও রেখেছিল! মুখে গন্ধ থাকাটা তাঁর কাছে খুবই অপছন্দের ছিল। কাজেই তিনি কসম করলেন, আর কখনও মধু পান করবেন না। তারই প্রেক্ষাপটে এ আয়াত নাযিল হয়।
২
قَدۡ فَرَضَ اللّٰہُ لَکُمۡ تَحِلَّۃَ اَیۡمَانِکُمۡ ۚ وَاللّٰہُ مَوۡلٰىکُمۡ ۚ وَہُوَ الۡعَلِیۡمُ الۡحَکِیۡمُ
কাদ ফারাদাল্লা-হু লাকুম তাহিল্লাতা আইমা-নিকুম ওয়াল্লা-হু মাওলা-কুম ওয়া হুওয়াল ‘আলীমুল হাকীম।
Allah has prescribed (the way of) absolution from your oaths. And Allah is your protector, and He is the All- Knowing, the All-Wise.
আল্লাহ তোমাদের কসম থেকে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা দান করেছেন। ২ আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক। তিনিই সর্বজ্ঞ, পরিপূর্ণ হেকমতের মালিক।
আল্লাহ তোমাদের জন্যে কসম থেকে অব্যহতি লাভের উপায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তোমাদের মালিক। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
আল্লাহ্ তোমাদের কসম হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন, আল্লাহ্ তোমাদের কর্মবিধায়ক, তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
তাফসীরঃ
২. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধু না খাওয়া সম্পর্কে যে কসম করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত তাকে নির্দেশ দিচ্ছে, তিনি যেন কসম ভেঙ্গে ফেলেন এবং তার জন্য কাফফারা আদায় করেন। হাদীসে আছে, কেউ যদি কোন অনুচিত কসম করে, তবে সে যেন তা ভেঙ্গে ফেলে ও কাফফারা আদায় করে। এর কাফফারা সেটাই, যা সূরা মায়েদার (৫ : ৮৯) বর্ণিত হয়েছে।
৩
وَاِذۡ اَسَرَّ النَّبِیُّ اِلٰی بَعۡضِ اَزۡوَاجِہٖ حَدِیۡثًا ۚ فَلَمَّا نَبَّاَتۡ بِہٖ وَاَظۡہَرَہُ اللّٰہُ عَلَیۡہِ عَرَّفَ بَعۡضَہٗ وَاَعۡرَضَ عَنۡۢ بَعۡضٍ ۚ فَلَمَّا نَبَّاَہَا بِہٖ قَالَتۡ مَنۡ اَنۡۢبَاَکَ ہٰذَا ؕ قَالَ نَبَّاَنِیَ الۡعَلِیۡمُ الۡخَبِیۡرُ
ওয়া ইযআছাররান্নাবিইয়ুইলা-বা‘দিআঝওয়া-জিহী হাদীছান ফালাম্মা-নাব্বাআত বিহী ওয়া আজহারাহুল্লা-হু আলাইহি ‘আররাফা বা‘দাহূওয়াআ‘রাদা ‘আম বা‘দিন ফালাম্মা-নাব্বাআহা-বিহী কা-লাত মান আম্বাআকা হা-যা- কা-লা নাব্বাআনিয়াল ‘আলীমুল খাবীর।
And (remember) when the Prophet told one of his wives something in secret. So, when she disclosed it (to another wife), and Allah made it known to him, he told (the disclosing wife) part of it,and avoided another part. So when he informed her about it, she said, “Who told you about this?” He said, “I was told of it by the All-Knowing, the All-Aware.
এবং স্মরণ কর, যখন নবী তার কোন এক স্ত্রীকে গোপনে একটি কথা বলেছিল। ৩ তারপর সেই স্ত্রী যখন সে কথা (অন্য কাউকে) বলে দিল ৪ এবং আল্লাহ তা নবীর কাছে প্রকাশ করে দিলেন, তখন সে তার কিছু অংশ জানাল এবং কিছু এড়িয়ে গেল। ৫ যখন নবী তা তার সেই স্ত্রীকে জানাল, তখন সে বলতে লাগল, আপনাকে একথা কে জানাল? নবী বলল, আমাকে জানিয়েছেন তিনি, যিনি সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবগত।
যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর স্ত্রী যখন তা বলে দিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সে বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না। নবী যখন তা স্ত্রীকে বললেন, তখন স্ত্রী বললেনঃ কে আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করল? নবী বললেন,ঃ যিনি সর্বজ্ঞ, ওয়াকিফহাল, তিনি আমাকে অবহিত করেছেন।
স্মরণ কর-নবী তার স্ত্রীদের একজনকে গোপনে একটি কথা বলেছিল। এরপর যখন সে তা অন্যকে বলে দিয়েছিল এবং আল্লাহ্ নবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তখন নবী এই বিষয়ে কিছু ব্যক্ত করল এবং কিছু অব্যক্ত রাখলো। যখন নবী তা তার সেই স্ত্রীকে জানাইল তখন সে বলল, ‘কে আপনাকে এটা অবহিত করল ?’ নবী বলল, ‘আমাকে অবহিত করেছেন তিনি, যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবগত।’
তাফসীরঃ
৩. গোপন কথাটি ছিল এই যে, ‘আমি আর মধু খাব না বলে কসম করেছি’। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি হযরত হাফসা (রাযি.)কে বলে দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে সাবধান করেছিলেন, তিনি যেন একথা কারও কাছে ফাঁস না করেন। কেননা তাহলে হযরত যয়নাব (রাযি.) যার ঘরে তিনি মধু খেয়েছিলেন, মনে কষ্ট পাবেন।
৪. অর্থাৎ হযরত হাফসা (রাযি.) সে কথা হযরত আয়েশা (রাযি.)কে বলে দিলেন।
৫. হযরত হাফসা (রাযি.) যে গোপন কথাটি হযরত আয়েশা (রাযি.)-এর কাছে ফাঁস করে দিয়েছেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে কথা তাকে বললেন, কিন্তু সবটুকু বললেন না। কেননা তা বললে হযরত হাফসা বড় বেশি লজ্জা পাবেন।
৪
اِنۡ تَتُوۡبَاۤ اِلَی اللّٰہِ فَقَدۡ صَغَتۡ قُلُوۡبُکُمَا ۚ وَاِنۡ تَظٰہَرَا عَلَیۡہِ فَاِنَّ اللّٰہَ ہُوَ مَوۡلٰىہُ وَجِبۡرِیۡلُ وَصَالِحُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۚ وَالۡمَلٰٓئِکَۃُ بَعۡدَ ذٰلِکَ ظَہِیۡرٌ
ইন তাতূবাইলাল্লা-হি ফাকাদ সাগাত কুলূবুকুমা- ওয়া ইন তাজা-হারা-‘আলাইহি ফাইন্নাল্লা-হা হুওয়া মাওলা-হু ওয়া জিবরীলুওয়া সা-লিহুল মু’মিনীনা ওয়াল মালাইকাতুবা‘দা যা-লিকা জাহীর।
(O two wives of the Prophet,) If both of you repent to Allah, then (your conduct calls for it, because) your hearts have departed from the correct way. And if you back each other against him (the Prophet), then Allah is his supporter, and Jibra’īl (Gabriel) and righteous believers, and after all that, angels are his helpers.
(হে নবী পত্নীগণ!) তোমরা যদি আল্লাহর কাছে তাওবা কর (তবে তাই হবে উচিত কাজ), কেননা তোমাদের অন্তর ঝুঁকে পড়েছে। ৬ কিন্তু তোমরা যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে (জেনে রেখ) তার সঙ্গী আল্লাহ, জিবরাঈল ও সৎকর্মশীল মুমিনগণ। তাছাড়া ফেরেশতাগণ তার সাহায্যকারী।
তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রেখ আল্লাহ জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সহায়। উপরন্তুত ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।
যদি তোমরা উভয়ে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্ র দিকে প্রত্যাবর্তন কর তবে ভাল, কারণ তোমাদের হৃদয় তো ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু তোমরা যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরের পোষকতা কর তবে জেনে রাখ, আল্লাহ্ই তার বন্ধু এবং জিব্রাঈল ও সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনগণও, তা ছাড়া অন্যান্য ফেরেশতাও তার সাহায্যকারী।
তাফসীরঃ
৬. একথা বলা হচ্ছে হযরত আয়েশা (রাযি.) ও হযরত হাফসা (রাযি.) উভয়কে। অধিকাংশ মুফাসসির এর ব্যাখ্যা করেছেন ‘তোমাদের অন্তর সত্য থেকে অন্য দিকে ঝুঁকে পড়েছে।’ অর্থাৎ সত্য-সঠিক পথ থেকে সরে গিয়েছে। কিন্তু কারও কারও মতে এর ব্যাখ্যা হল তোমাদের অন্তর তাওবার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কাজেই তোমাদের তাওবা করে ফেলা উচিত।
৫
عَسٰی رَبُّہٗۤ اِنۡ طَلَّقَکُنَّ اَنۡ یُّبۡدِلَہٗۤ اَزۡوَاجًا خَیۡرًا مِّنۡکُنَّ مُسۡلِمٰتٍ مُّؤۡمِنٰتٍ قٰنِتٰتٍ تٰٓئِبٰتٍ عٰبِدٰتٍ سٰٓئِحٰتٍ ثَیِّبٰتٍ وَّاَبۡکَارًا
‘আছা-রাব্বুহইন তাল্লাকাকুন্না আইঁ ইউবদিলাহূ আঝওয়া-জান খাইরাম মিনকুন্না মুছলিমাতিম মু’মিনা-তিন কা-নিতা-তিন তাইবা-তিন ‘আ-বিদা-তিন ছাইহা-তিন ছাইয়িবাতিওঁ ওয়া আবকা-রা-।
It is hoped that, if he divorces you, Allah will give him in your place wives better than you, submissive to Allah, believing, devout, penitent, steadfast in worship, fasting, previously married and virgins.
সে যদি তোমাদের সকলকে তালাক দিয়ে দেয়, তবে তার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে শীঘ্রই তাকে দিতে পারেন এমন স্ত্রী, যারা হবে তোমাদের চেয়ে উত্তম, মুসলিম, মুমিন, অনুগত, তাওবাকারী, ইবাদতগোজার, রোযাদার, পূর্ববিবাহিতা বা কুমারী।
যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে সম্ভবতঃ তাঁর পালনকর্তা তাঁকে পরিবর্তে দিবেন তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী, যারা হবে আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, নামাযী তওবাকারিণী, এবাদতকারিণী, রোযাদার, অকুমারী ও কুমারী।
যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করে তবে তার প্রতিপালক সম্ভবত তোমাদের স্থলে তাকে দিবেন তোমাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর স্ত্রী- যারা হবে আত্মসমর্পণকারী, বিশ্বাসী, অনুগত, তওবাকারী, ‘ইবাদতকারী, সিয়াম পালনকারী, অকুমারী এবং কুমারী।
৬
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَاَہۡلِیۡکُمۡ نَارًا وَّقُوۡدُہَا النَّاسُ وَالۡحِجَارَۃُ عَلَیۡہَا مَلٰٓئِکَۃٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا یَعۡصُوۡنَ اللّٰہَ مَاۤ اَمَرَہُمۡ وَیَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ
ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূকূআনফুছাকুমওয়াআহলীকুমনা-রাওঁ ওয়াকূ দুহান্না-ছু ওয়াল হিজা-রাতু‘আলাইহা-মালাইকাতুনগিলা-জু নশিদা-দুল লা-ইয়া‘সূনাল্লা-হা মা আমারাহুম ওয়া ইয়াফ‘আলূনা মা-ইউ’মারূন।
O you who believe, save yourselves and your families from a fire, the fuel of which is human beings and stones, appointed on which are angels, stern and severe, who do not disobey Allah in what He orders them, and do whatever they are ordered to do.
হে মুমিনগণ! নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। ৭ তাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব, কঠিন হৃদয় ফেরেশতাগণ, যারা আল্লাহর কোন হুকুমে তাঁর অবাধ্যতা করে না এবং সেটাই করে, যার নির্দেশ তাদেরকে দেওয়া হয়।
মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।
হে মু’মিনগণ ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর দোযখ হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ্ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।
তাফসীরঃ
৭. ‘পাথর’ দ্বারা পাথর নির্মিত প্রতিমা বোঝানো হয়েছে, মূর্তিপূজকরা যাদের পূজা করে থাকে। তাদেরকে জাহান্নামে ফেলে তার পূজারীদের শিক্ষা দেওয়া হবে যে, দেখ তোমরা যাদেরকে উপাস্য মনে করতে আজ তাদের কী শোচনীয় পরিণাম হয়েছে।
৭
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَا تَعۡتَذِرُوا الۡیَوۡمَ ؕ اِنَّمَا تُجۡزَوۡنَ مَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ٪
ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা কাফারূলা-তা‘তাযিরুল ইয়াওমা ইন্নামা-তুজঝাওনা মা-কুনতুম তা‘মালূন।
O you who disbelieve, do not make excuses today. You will only be recompensed for what you have been doing.
হে কাফেরগণ! আজ তোমরা অজুহাত দেখিও না। তোমরা যা করতে তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেওয়া হচ্ছে।
হে কাফের সম্প্রদায়, তোমরা আজ ওযর পেশ করো না। তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেয়া হবে, যা তোমরা করতে।
হে কাফিরগণ ! আজ তোমরা দোষ স্খালনের চেষ্টা কর না। তোমরা যা করতে তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেওয়া হবে।
৮
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ تَوۡبَۃً نَّصُوۡحًا ؕ عَسٰی رَبُّکُمۡ اَنۡ یُّکَفِّرَ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَیُدۡخِلَکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ۙ یَوۡمَ لَا یُخۡزِی اللّٰہُ النَّبِیَّ وَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ ۚ نُوۡرُہُمۡ یَسۡعٰی بَیۡنَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَبِاَیۡمَانِہِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَتۡمِمۡ لَنَا نُوۡرَنَا وَاغۡفِرۡ لَنَا ۚ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ
ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূতূবূইলাল্লা-হি তাওবাতান নাসূহা ‘আছা-রাব্বুকুম আইঁ ইউকাফফিরা ‘আনকুম ছাইয়িআ-তিকুম ওয়া ইউদখিলাকুম জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু ইয়াওমা লা-ইউখঝিল্লা-হুন নাবিইইয়া ওয়াল্লাযীনা আ-মানূ মা‘আহূ নূরুহুম ইয়াছ‘আ-বাইনা আইদীহিম ওয়া বিআইমা-নিহিম ইয়াকূলূনা রাব্বানা আতমিম লানা-নূরানা-ওয়াগফিরলানা- ইন্নাকা ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদীর।
O you who believe, turn to Allah with a faithful repentance. It is hoped from your Lord that he will write off your faults, and will admit you to the gardens beneath which rivers flow, on the Day when Allah will not disgrace the Prophet and those who believed with him. Their light will run before them and to their right hands. They will say, “Our Lord, perfect for us our light, and forgive us. Indeed you are powerful over every thing.”
হে মুমিনগণ! আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা কর। অসম্ভব নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের পাপসমূহ তোমাদের থেকে মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন উদ্যানে প্রবেশ করাবেন, যার নিচে নহর বহমান থাকবে, সেই দিন, যে দিন আল্লাহ নবীকে এবং তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও তাদের ডান পাশে ধাবিত হবে। ৮ তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এ আলোকে পরিপূর্ণ করে দিন ৯ এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে তওবা কর-আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানদিকে ছুটোছুটি করবে। তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান।
হে মু’মিনগণ ! তোমরা আল্লাহ্ র নিকট তওবা কর-বিশুদ্ধ তওবা ; তা হলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলি মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেই দিন আল্লাহ্ লজ্জা দিবেন না নবীকে এবং তার মু’মিন সঙ্গীদেরকে, তাদের জ্যোতি তাদের সামনে ও দক্ষিণ পার্শ্বে ধাবিত হবে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’
তাফসীরঃ
৮. অর্থাৎ এ আলো শেষ পর্যন্ত স্থায়ী রাখুন। সূরা হাদীদে গেছে, মুনাফেকরাও প্রথম দিকে সে আলো দ্বারা উপকৃত হবে, কিন্তু পরে তাদের থেকে তা সরিয়ে নেওয়া হবে।
৯. এর দ্বারা খুব সম্ভব সেই সময়কে বোঝানো হয়েছে, যখন সমস্ত মানুষকে পুলসিরাত পার হতে বলা হবে। সে দিন প্রত্যেক মুমিনের ঈমান তার সামনে আলো হয়ে তাকে পথ দেখাবে, যেমন সূরা হাদীদে (৫৭ : ১২) গত হয়েছে।
৯
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ جَاہِدِ الۡکُفَّارَ وَالۡمُنٰفِقِیۡنَ وَاغۡلُظۡ عَلَیۡہِمۡ ؕ وَمَاۡوٰىہُمۡ جَہَنَّمُ ؕ وَبِئۡسَ الۡمَصِیۡرُ
ইয়াআইয়ুহান্নাবিইয়ুজা-হিদিল কুফফা-রা ওয়াল মুনা-ফিকীনা ওয়াগলুজ‘আলাইহিম ওয়া মা’ওয়া-হুম জাহান্নামু ওয়া বি’ছাল মাসীর।
O Prophet, carry out Jihād (struggle) against the disbelievers and the hypocrites, and be harsh with them. Their final abode is Jahannam (Hell), and it is an evil end.
হে নবী! কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর ১০ এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়ে যাও। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। তা অতি মন্দ ঠিকানা।
হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান।
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর এবং এদের প্রতি কঠোর হও। এদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম, তা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।
তাফসীরঃ
১০. ‘জিহাদ’-এর প্রকৃত অর্থ চেষ্টা ও মেহনত করা। দীনী দাওয়াতের যে-কোন শান্তিপূর্ণ প্রচেষ্টাও এর অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে দীনের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠাকল্পে যেসব নির্বিরোধী কর্মপন্থা গ্রহণ করা হয় তাও। আবার শত্রুর মোকাবেলায় যে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালিত হয় তাও জিহাদ। তবে সশস্ত্র সংগ্রাম কেবল কাফেরদের বিরুদ্ধেই হতে পারে। মুনাফেকরা যেহেতু নিজেদেরকে মুমিন বলে পরিচয় দিত তাই দুনিয়ায় তাদের সাথে মুমিনদের মত আচরণই করা হত। সাধারণ অবস্থায় তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হত না, তবে তারা বিদ্রোহ করলে সেটা ভিন্ন কথা।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
১০
ضَرَبَ اللّٰہُ مَثَلًا لِّلَّذِیۡنَ کَفَرُوا امۡرَاَتَ نُوۡحٍ وَّامۡرَاَتَ لُوۡطٍ ؕ کَانَتَا تَحۡتَ عَبۡدَیۡنِ مِنۡ عِبَادِنَا صَالِحَیۡنِ فَخَانَتٰہُمَا فَلَمۡ یُغۡنِیَا عَنۡہُمَا مِنَ اللّٰہِ شَیۡئًا وَّقِیۡلَ ادۡخُلَا النَّارَ مَعَ الدّٰخِلِیۡنَ
দারাবাল্লা-হু মাছালালিলল্লাযীনা কাফারুমরাআতা নূহিওঁ ওয়ামরাআতা লূতিন কানাতা-তাহতা ‘আবদাইনি মিন ‘ইবা-দিনা-ছা-লিহাইনি ফাখা-নাতা-হুমা-ফালাম ইউগনিয়া-‘আনহুমা-মিনাল্লা-হি শাইআওঁ ওয়া কীলাদ খুলান্না-রা মা‘আদ্দা-খিলীন।
Allah has cited for the disbelievers the example of the wife of NūH and the wife of LūT. Both were married with two of Our righteous servants, but betrayed them. So they could not benefit them against Allah at all, and it was said, “Enter the Fire along with those who enter.”
যারা কুফর অবলম্বন করেছে, আল্লাহ তাদের জন্য নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত পেশ করছেন। তারা আমার অত্যন্ত নেককার দু’জন বান্দার বিবাহাধীন ছিল। অতঃপর তারা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ১১ ফলে আল্লাহর বিরুদ্ধে তারা তাদের কোন কাজে আসল না এবং তাদেরকে (অর্থাৎ স্ত্রী দু’জনকে) বলা হল, অন্যান্য প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও জাহান্নামে প্রবেশ কর।
আল্লাহ তা’আলা কাফেরদের জন্যে নূহ-পত্নী ও লূত-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তারা ছিল আমার দুই ধর্মপরায়ণ বান্দার গৃহে। অতঃপর তারা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ফলে নূহ ও লূত তাদেরকে আল্লাহ তা’আলার কবল থেকে রক্ষা করতে পারল না এবং তাদেরকে বলা হলঃ জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে চলে যাও।
আল্লাহ্ কাফিরদের জন্যে নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, এরা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দুই সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু এরা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে নূহ্ ও লূত এদেরকে আল্লাহ্ র শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারল না এবং এদেরকে বলা হল, ‘তোমরা উভয়ে প্রবেশকারীদের সঙ্গে জাহান্নামে প্রবেশ কর।’
তাফসীরঃ
১১. হযরত নূহ আলাইহিস সালামের স্ত্রী তার মহাত্মা স্বামীর বিরুদ্ধাচরণ করত এবং তাঁকে পাগল বলত। তাঁর গোপনীয় বিষয় সে মানুষের কাছে ফাঁস করে দিত। আর হযরত লূত আলাইহিস সালামের স্ত্রীও ছিল স্বামীর অবাধ্য। সেও তাঁর শত্রুদের সাহায্য করত (রূহুল মাআনী)। এ দৃষ্টান্ত দ্বারা আল্লাহ তাআলা বোঝাচ্ছেন, মানুষ নিজে মুমিন না হলে, নিকটতম আত্মীয়ের ঈমান দ্বারাও উপকৃত হতে পারবে না।
১১
وَضَرَبَ اللّٰہُ مَثَلًا لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوا امۡرَاَتَ فِرۡعَوۡنَ ۘ اِذۡ قَالَتۡ رَبِّ ابۡنِ لِیۡ عِنۡدَکَ بَیۡتًا فِی الۡجَنَّۃِ وَنَجِّنِیۡ مِنۡ فِرۡعَوۡنَ وَعَمَلِہٖ وَنَجِّنِیۡ مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ۙ
ওয়া দারাবাল্লা-হু মাছালালিলল্লাযীনা আ-মানুমরাআতা ফির‘আওনা । ইযকা-লাত রাব্ব্বিনি লী ‘ইনদাকা বাইতান ফিল জান্নাতি ওয়া নাজ্জিনী মিন ফির‘আওনা ওয়া ‘আমালিহী ওয়া নাজ্জিনী মিনাল কাওমিজ্জা-লিমীন।
And Allah has cited for the believers the example of the wife of Fir’aun (Pharaoh), when she said, “My Lord, build for me, near You, a house in the Paradise, and deliver me from Fir’aun and his deeds, and deliver me from the unjust people.”
আর আল্লাহ মুমিনদের জন্য পেশ করছেন ফির‘আউন-পত্নীর দৃষ্টান্ত, ১২ যখন সে বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে মুক্তি দিন। আর আমাকে নাজাত দিন জালেম সম্প্রদায় হতে।
আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের জন্যে ফেরাউন-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন, আমাকে ফেরাউন ও তার দুস্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন।
আল্লাহ্ মু’মিনদের জন্যে দিচ্ছেন ফির‘আওন পত্নীর দৃষ্টান্ত, যে প্রার্থনা করেছিল : ‘হে আমার প্রতিপালক! তোমার সন্নিধানে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং আমাকে উদ্ধার কর ফিরা‘আওন ও তার দুষ্কৃতি হতে এবং আমাকে উদ্ধার কর জালিম সম্প্রদায় হতে।’
তাফসীরঃ
১২. ফির‘আউনের স্ত্রীর নাম ছিল আসিয়া। আল্লাহ তাআলা যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে যাদুকরদের বিরুদ্ধে জয়যুক্ত করেছিলেন, তখন যাদুকরদের সঙ্গে তিনিও হযরত মূসা আলাইহিস সালামের উপর ঈমান এনেছিলেন। এ কারণে ফির‘আউন তার উপর অনেক নিপীড়ন চালিয়েছিল। সেই নিপীড়ন ভোগ কালেই তিনি এই দুআ করেছিলেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে, ফির‘আউন তার হাত-পায়ে পেরেক গেঁথে উপর থেকে পাথর নিক্ষেপে উদ্যত হয়েছিল, কিন্তু তার আগে-আগেই আল্লাহ তাআলা তাঁকে মৃত্যু দান করেন (রূহুল মাআনী)। [এ দৃষ্টান্ত দ্বারা বোঝানো হচ্ছে নিজে ঈমানদার হলে স্বামী বা অন্য কোনও প্রিয়জনের কুফরীর কারণে আখিরাতে তার কোনো ক্ষতি হবে না। -অনুবাদক]
১২
وَمَرۡیَمَ ابۡنَتَ عِمۡرٰنَ الَّتِیۡۤ اَحۡصَنَتۡ فَرۡجَہَا فَنَفَخۡنَا فِیۡہِ مِنۡ رُّوۡحِنَا وَصَدَّقَتۡ بِکَلِمٰتِ رَبِّہَا وَکُتُبِہٖ وَکَانَتۡ مِنَ الۡقٰنِتِیۡنَ ٪
ওয়া মারইয়ামাবনাতা ‘ইমরা-নাল্লাতীআহসানাত ফারজাহা-ফানাফাখনা-ফীহি মিররূহিনাওয়া সাদ্দাকাত বিকালিমা-তি রাব্বিহা-ওয়া কুতুবিহী ওয়া কা-নাত মিনাল কা-নিতীন।
And (Allah has also cited the example of) Maryam, daughter of ‘Imrān who guarded her chastity, so We breathed into her Our spirit, and she testified to the truth of the words of her Lord and His books, and she was one of the devout.
তাছাড়া ইমরান কন্যা মারয়ামকেও (দৃষ্টান্ত রূপে পেশ করছেন), যে তার সতীত্ব রক্ষা করেছিল। ১৩ ফলে আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিলাম। ১৪ আর সে নিজ প্রতিপালকের বাণী ও তার কিতাবসমূহকে সত্য বলে স্বীকার করেছিল এবং সে ছিল আনুগত্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ১৫
আর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এমরান-তনয়া মরিয়মের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে জীবন ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার পালনকর্তার বানী ও কিতাবকে সত্যে পরিণত করেছিল। সে ছিল বিনয় প্রকাশকারীনীদের একজন।
আরও দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন ইমরান-তনয়া মারইয়ামের-যে তার সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তার মধ্যে রূহ্ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছিল, সে ছিল অনুগতদের অন্যতম।
তাফসীরঃ
১৩. এর দ্বারা ইয়াহূদীদের দেওয়া অপবাদ খণ্ডন হয়ে গেছে। তারা হযরত মারয়াম ‘আলায়হাস সালামের প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছিল। তাদের ধারণা হযরত ‘ঈসা ‘আলায়হিস সালামের জন্ম সেই ব্যভিচার থেকেই (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। -অনুবাদক
১৪. সেই রূহ থেকেই হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম হয়েছিল। তাই তাকে ‘রূহুল্লাহ’ বলা হয়।
১৫. এর দ্বারাও মু’মিনদের জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে যে, নিজ সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোক কাফের হওয়া সত্ত্বেও একজন নারীকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে কি বিপুল মর্যাদার অধিকারী করেছেন। বোঝা গেল দোজাহানের কল্যাণ ও মুক্তির জন্য নিজ ঈমানই আসল জিনিস। কাজেই সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজ ঈমান রক্ষায় যত্নবান থাকা চাই। -অনুবাদক
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
আমাদের নতুন ইসলামিক নিউজ ও জিজ্ঞাসা ভিত্তিক সাইড
Islamic Info Hub ( www.islamicinfohub.com ) আজই ভিজিড করুন !!
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
- ইসলামে কুরবানীর গুরুত্ব ও বিধান,ইসলামে কোরবানির যত ফজিলত গুরুত্ব ও শিক্ষা
- বৃষ্টির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, বৃষ্টির নামাজের পর আমল
- ইসতিসকার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, ইসতিসকার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইসতিসকার নামাজের পর আমল
- বাসর রাত সম্পর্কে ইসলামের বিধান,বাসর রাতের নামাজ