আজকের বিষয়: সূরা ত্বালাক সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল ত্বালাক আলমল ও ফজিলত, সূরা ত্বালাক কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা ত্বালাক নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৬৫ সূরা আল – ত্বালাক
নামরকণ
সূরার নামই শুধু () নয়, বরং এটি এর বিষয়বস্তুর শিরোনামও । কারণ এর মধ্যে কেবল তালাকের হুকুম আহকামই বর্ণনা করা হয়েছে । হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস একে সূরা () অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত নিসা বলে অভিহিত করেছেন ।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেছেন যে, সূরা বাকারার যেসব আয়াতে সর্ব প্রথম তালাক সম্পর্কিত হুকুম আহকাম দেয়া হয়েছে সেসব আয়াত নাযিল হওয়ার পর এ সূরাটি নাযিল হয়েছে । সূরার বিষয়বস্তুর আভ্যন্তরীণ সাক্ষও তা প্রমাণ করে । সূরাটি নাযিল হওয়ার সঠিক সময়-কাল কোনটি তা নির্ণয় করা যদিও কঠিন, কিন্তু বিভিন্ন রেওয়ায়াত থেকে এতটুকু অন্তত জানা যায় যে, লোকজন সূরা বাকারার বিধিনিষেধগুলো বুঝতে যখন ভুল করতে লাগলো এবং কার্যতও তাদের থেকে ভুল-ত্রুটি হতে থাকলো তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের সংশোধনের জন্য এসব নির্দেশ নাযিল করলেন ।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
তালাক ও ইদ্দত সম্পর্কে কুরআন মজীদে ইতিপূর্বে যেসব বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে এ সূরার নির্দেশাবলী বুঝার জন্য পুনরায় তা স্মৃতিতে তাজা করে নেয়া প্রয়োজন ।
“ তালাক দুইবার । এরপর স্ত্রীকে হয় উত্তমরূপে রাখবে নয় ভালভাবে বিদায় করে দেবে” ।
“তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীলোকেরা (তিন তালাকের পর) তিন হায়েজ পর্যন্ত নিজেদের বিরত রাখবে………………. যদি তারা সংশোধনের আগ্রহী হয় তাহলে এই সময়ের মধ্যে তাদের স্বামীরা তাদেরকে (স্ত্রী হিসেবে) ফিরিয়ে নিয়ার অধিকারী” ।
“এরপর সে যদি তৃতীয়বারের মত তালাক দিয়ে দেয় তাহলে অন্য কারো সাথে সেই স্ত্রীর বিয়ে হওয়ার আগে সে আর তার জন্য হালাল হবে না । … “ । (আল বাকারাহ ২৩০)
“তোমরা ঈমানদার নারীদের বিয়ে করে স্পর্শ করার পূর্বেই যদি তালাক দিয়ে দাও তাহলে তোমরা তাদের কাছে ইদ্দত পালন করার দাবী করতে পার না । কারণ তোমাদের জন্য ইদ্দত পালন জরুরী নয় “ । (আল আহযাবঃ ৪৯)
“তোমাদের মধ্যে কেউ স্ত্রী রেখে মারা গেলে স্ত্রীরা চার মাস দশদিন পর্যন্ত নিজেদের বিরত রাখবে বা অপেক্ষা করবে” । (আল বাকারাহঃ ৩৪ )
উল্লেখিত আয়াতসমূহে যেসব নীতি নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছেল তা হচ্ছেঃ
একঃ স্বামী তার স্ত্রীকে সর্বাধিক তিন তালাক দিতে পারে ।
দুইঃ এক বা দুই তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার স্বামীর থাকে এবং ইদ্দতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর স্বামী স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে করতে পারবে । এ জন্য তাহলীলের কোন শর্ত প্রযুক্ত হবে না । কিন্তু স্বামী যদি স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দেয় তাহলে ইদ্দতের সময়ের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার আর স্বামীর থাকে না, বরং তা বাতিল হয়ে যায় । এরপর ঐ স্ত্রীর অপর কোন পুরুষের সাথে বিয়ে হওয়া এবং ঐ স্বামী স্বেচ্ছায় তাকে তালাক না দেয়া পর্যন্ত পূর্বোক্ত স্বামীর সাথে পুনরায় তার বিয়ে হতে পারে না ।
তিনঃ ঋতুস্রাব চালু আছে এবং স্বামীর সাথে দৈহিক মিলন হয়েছে এমন স্ত্রীলোকের ‘ইদ্দত’ হলো তালাক প্রাপ্তির পর তিনবার মাসিক হওয়া । এক তালাক বা দুই তালাক হওয়ার ক্ষেত্রে এ ইদ্দত পালনের অর্থ হলো, স্ত্রীলোকটি এখনও তার দাম্পত্য বন্ধনে আবদ্ধ আছে এবং ইদ্দতকালের মধ্যে সে তাকে ফিরিয়ে নিতে পারে । কিন্তু স্বামী যদি তিন তালাক দিয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর এই ইদ্দত পালন তাকে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য নয়, বরং শুধু এ জন্য যে, ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বে সে অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না ।
চারঃ দৈহিক মিলন হয়নি এমন কোন স্ত্রীকে (স্পর্শ করার পূর্বে) যদি তালাক দেয়া হয়, তাকে কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না । সে চাইলে তালাক প্রাপ্তির পরপরই বিয়ে করতে পারে ।
পাঁচঃ যে স্ত্রীলোকের স্বামী মারা গিয়েছে তাকে চার মাস দশদিন সময় কালের জন্য ইদ্দত পালন করতে হবে ।
এখন এ কথাটি ভাল করে বুঝে নিতে হবে যে, এসব বিধি-বিধানের কোনটি বাতিল করা বা সংশোধন করার জন্য সূরা তালাক নাযিল হয়নি । বরং দুটি উদ্দশ্য পূরণের জন্য এ সূরা নাযিল হয়েছে ।
প্রথম উদ্দেশ্যটি হলো, পুরুষকে তালাক দেয়ার যে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে তা প্রয়োগের জন্য এমন কিছু বিজ্ঞোচিত পন্থা বলে দেয়া , যার সাহায্য নিলে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিস্থিতি না আসতে পারে । আর বিচ্ছিন্ন হলেও যেন শেষ পর্যন্ত এমন অবস্থায় তা হয় যখন পারস্পরিক সমঝোতা ও বুঝাপড়ার সমস্ত সম্ভাবনা নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে । কারণ আল্লাহর শরীয়াতে তালাকের অবকাশ রাখা হয়েছে শুধু একটি অনিবার্য প্রয়োজন হিসেবে । অন্যথায়, একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে যে দাম্পত্য বন্ধন একবার কায়েম হয়েছে তা আবার ছিন্ন হয়ে যাক তা আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন না । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“তালাকের চেয়ে অপছন্দনীয় আর কোন জিনিসকে আল্লাহ তা’আলা হালাল করেননি” । (আবু দাউদ)
তিনি আরো বলেছেনঃ
“সমস্ত হালাল জিনিসের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হচ্ছে তালাক “ । (আবু দাউদ) ।
দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি হলো, সূরা বাকারায় নাযিলকৃত বিধি-বিধান ছাড়া আরো যেসব বিষয় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ সাপেক্ষে ছিল তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়ে ইসলামের পারিবারিক আইনের এ দিক ও বিভাগটি পূর্ণতা দান করা । সুতরাং এ ক্ষেত্রে স্বামীর সাথে দৈহিক মিলন হয়েছে মাসিক বন্ধ হওয়া । এমন স্ত্রীলোক কিংবা যাদের এখনো মাসিক আসেনি তারা তালাক প্রাপ্তা হলে তাদের ইদ্দত কি হবে, তা ছাড়া যেসব নারী গর্ভবর্তী হয়েছে তারা যদি তালাকপ্রাপ্তা হয় কিংবা স্বামী মারা যায় তাদের ইদ্দত কি হবে তা বলা হয়েছে । এ ছাড়াও বিভিন্ন রকম তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীলোকের খোরপোষ ও বাসস্থানের ব্যবস্থা কিভাবে হবে এবং যেসব ছেলেমেয়ের পিতামাতা তালাকের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে তাদের দুধপানের ব্যবস্থা কিভাবে করা হবে তা এই সূরাতে বলা হয়েছে ।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
- “লা আদওয়া” সংক্রমন নেই!হাদীসটি কী বুঝায়?
- রমজানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যত পরামর্শ
- ডায়াবেটিস রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন
- আজহারী: কোন ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙে
- রমজান মাসের ৯টি ফজিলত
৬৫ . আত ত্বালাক – (الـطلاق) | তালাক
মাদানী, মোট আয়াতঃ ১২
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
১
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ اِذَا طَلَّقۡتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوۡہُنَّ لِعِدَّتِہِنَّ وَاَحۡصُوا الۡعِدَّۃَ ۚ وَاتَّقُوا اللّٰہَ رَبَّکُمۡ ۚ لَا تُخۡرِجُوۡہُنَّ مِنۡۢ بُیُوۡتِہِنَّ وَلَا یَخۡرُجۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ یَّاۡتِیۡنَ بِفَاحِشَۃٍ مُّبَیِّنَۃٍ ؕ وَتِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰہِ ؕ وَمَنۡ یَّتَعَدَّ حُدُوۡدَ اللّٰہِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَہٗ ؕ لَا تَدۡرِیۡ لَعَلَّ اللّٰہَ یُحۡدِثُ بَعۡدَ ذٰلِکَ اَمۡرًا
ইয়াআইয়ুহান্নাবিইয়ুইযা-তাল্লাকতুমুন্নিছাআ ফাতালিলকূহুন্না লি‘ইদ্দাতিহিন্না ওয়া আহসুল ‘ইদ্দাতা ওয়াত্তাকুল্লা-হা রাব্বাকুম লা-তুখরিজুহুন্না মিম বুয়ূতিহিন্না ওয়ালাইয়াখরুজনা ইল্লাআইঁ ইয়া’তীনা বিফা-হিশাতিম মুবাইয়িনাতিওঁ ওয়া তিলকা হুদূদুল্লাহি ওয়া মাইঁ ইয়াতা‘আদ্দা হুদূদাল্লা-হি ফাকাদ জালামা নাফছাহূ লা-তাদরী লা‘আল্লাল্লা-হা ইউহদিছু বা‘দা যা-লিকা আমরা-।
O prophet, when you people divorce women, divorce them at a time when the period of ‘Iddah may start. And count the period of ‘Iddah, and fear Allah, your Lord. Do not expel them from their houses, nor should they go out, unless they come up with a clearly shameless act. These are the limits prescribed by Allah. And whoever exceeds the limits prescribed by Allah wrongs his own self. You do not know (what will happen in future); it may be that Allah brings about a new situation thereafter.
হে নবী! তোমরা যখন নারীদেরকে তালাক দাও, তখন তাদেরকে তাদের ইদ্দতের সময়ে তালাক দিও ১ এবং ভালোভাবে ইদ্দতের হিসাব রেখ এবং আল্লাহকে ভয় করো, যিনি তোমাদের প্রতিপালক। তাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করো না এবং তারা নিজেরাও যেন বের না হয় যদি না তারা সুস্পষ্ট কোন অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। ২ এটা আল্লাহর (স্থিরীকৃত) সীমারেখা। কেউ আল্লাহর (স্থিরীকৃত) সীমারেখা লংঘন করলে সে তো তার নিজের উপরই জুলুম করল। তুমি জান না, হয়ত আল্লাহ এরপর কোন নতুন বিষয় সৃষ্টি করে দেবেন। ৩
হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। সে জানে না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন।
হে নবী! তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীগণকে তালাক দিতে ইচ্ছা কর, এদেরকে তালাক দিও ‘ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং তোমরা ‘ইদ্দতের হিসেব রেখ এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্কে ভয় কর। তোমরা এদেরকে এদের বাসগৃহ হতে বহিষ্কার কর না এবং এরাও যেন বের না হয়, যদি না এরা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। এইগুলি আল্লাহ্ র নির্ধারিত সীমা ; যে আল্লাহ্ র সীমা লংঘন করে সে নিজেরই ওপর অত্যাচার করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ্ এটার পর কোন উপায় করে দিবেন।
তাফসীরঃ
১. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটার পর স্ত্রী যদি নতুন স্বামী গ্রহণ করতে চায়, তবে সেজন্য তাকে কিছুকাল অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষার সেই মেয়াদকেই ‘ইদ্দত’ বলে। সূরা বাকারায় (২ : ২২৮) বলা হয়েছে, তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দত হল, তালাকের পর তিনটি ঋতু অতিবাহিত হওয়া। এ আয়াতে তালাকদাতা স্বামীকে আদেশ করা হয়েছে, স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে এমন সময় দেবে, যার পরপর সে ইদ্দত শুরু করতে পারে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাখ্যা করেছেন এই যে, স্ত্রীকে তার ঋতু চলাকালে তালাক দেবে না; বরং এমন পবিত্রতার মেয়াদে দেবে, যেই মেয়াদের ভেতর সে তার সাথে সহবাস করেনি। এ নির্দেশের বহু তাৎপর্য আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি এই যে, (এক) ইসলাম চায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা অটুট থাকুক। যদি কখনও তালাকের মাধ্যমে তা ছিন্ন করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তা যেন ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে ভদ্রোচিত পন্থায় হয় এবং তাতে কোন পক্ষই অন্যের জন্য অহেতুক কষ্টের কারণ না হয়। ঋতুকালে তালাক দিলে এই সম্ভাবনা থাকে যে, স্বামী স্ত্রীর অশুচি অবস্থার কারণে সাময়িক ঘৃণার বশে তালাক দিয়ে দিয়েছে। কিংবা যেই পবিত্রতার মেয়াদে সহবাস হয়েছে, সেই মেয়াদের ভিতর তালাক দিলেও হতে পারে স্ত্রীর প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণে তালাক দিয়েছে। পক্ষান্তরে যে পবিত্রতার মেয়াদে একবারও সহবাস হয়নি, সেই মেয়াদের ভেতর তালাক দিলে বোঝা যায় এ তালাক কোন সাময়িক অনাগ্রহের ফল নয়। কেননা এরূপ সময়ে সাধারণত স্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আগ্রহ ও আকর্ষণ থাকে, তা সত্ত্বেও যখন তালাক দিচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই এর যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ আছে। (দুই) ঋতুকালে তালাক দিলে স্ত্রীর ইদ্দত অহেতুক দীর্ঘ করা হয়। কেননা যেই ঋতুতে তালাক দেওয়া হয়েছে, সেটি তো ইদ্দতের মধ্যে হিসাবে ধরা হবে না। তার ইদ্দত হিসাব করা হবে সেই ঋতু থেকে পাক হওয়ার পর যখন পরবর্তী ঋতু শুরু হবে তখন থেকে। এর ফলে স্ত্রীকে অযথা কষ্ট দেওয়া হবে। তাই হুকুম দেওয়া হয়েছে, তালাক দিতে হবে পবিত্রতার মেয়াদে এবং তাও সেই মেয়াদে, যার ভেতর সহবাস হয়নি। অধিকাংশ মুফাসসির আয়াতের তাফসীর এভাবেই করেছেন। কয়েকটি সহীহ হাদীস দ্বারাও এর সমর্থন পাওয়া যায়। কোন কোন মুফাসসির এর অন্য রকম তাফসীরও করেছেন। তারা আয়াতের তরজমা করেছেন এ রকম, ‘তাদেরকে তালাক দাও ইদ্দতের জন্য।’ তারা এর ব্যাখ্যা করেন যে, আয়াতে আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরকে উৎসাহিত করেছেন, তাদের যদি স্ত্রীদেরকে তালাক দেওয়ার দরকার পড়ে, তবে যেন রজঈ তালাক দেয়। অর্থাৎ এমন তালাক দেয়, যার পর ইদ্দতকালে স্ত্রীকে ফেরত গ্রহণ করা সম্ভব হয়। যেন তালাক দেওয়া হবে ইদ্দতকালের সময় পর্যন্ত। এ সময়কালে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ হবে এবং অবস্থা অনুকূল মনে হলে তালাক প্রত্যাহার করে নেওয়া যাবে, যেমন পরের আয়াতে বলা হয়েছে।
২. ইদ্দতকালে স্বামীর দায়িত্ব তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে নিজ ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া। স্ত্রীরও দায়িত্ব স্বামীর ঘরেই ইদ্দতকাল কাটানো, অন্য কোথাও না যাওয়া, অবশ্য স্ত্রী যদি প্রকাশ্য কোন অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়, সেটা ভিন্ন কথা। এর এক অর্থ তো ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া আর দ্বিতীয় অর্থ ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল কথাবার্তা বলা। এ রকম অবস্থায় স্বামী-গৃহে ইদ্দত পালন জরুরি নয়।
৩. ইশারা করা হচ্ছে, অনেক সময় পারস্পরিক ঝগড়ার কারণে উত্তেজনাবশত তালাক দিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা উভয়ের মধ্যে আপসরফা করে দেন আর এ অবস্থায় বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে, কিন্তু সেটা সম্ভব কেবল তখনই যখন তালাক হবে রজঈ। তাই আয়াতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, তালাক যদি দিতেই হয়, তবে যেন রজঈ তালাকই দেওয়া হয়। কেননা ‘বায়েন’ তালাকের পর স্বামীর হাতে প্রত্যাহারের কোন ক্ষমতা থাকে না। তখন স্ত্রীকে ফেরত নিতে চাইলে পুনরায় বিবাহ করা জরুরি। আর যদি তিন তালাক দিয়ে ফেলে তবে তো সেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পুনর্বিবাহের সুযোগও শেষ হয়ে যায়।
২
فَاِذَا بَلَغۡنَ اَجَلَہُنَّ فَاَمۡسِکُوۡہُنَّ بِمَعۡرُوۡفٍ اَوۡ فَارِقُوۡہُنَّ بِمَعۡرُوۡفٍ وَّاَشۡہِدُوۡا ذَوَیۡ عَدۡلٍ مِّنۡکُمۡ وَاَقِیۡمُوا الشَّہَادَۃَ لِلّٰہِ ؕ ذٰلِکُمۡ یُوۡعَظُ بِہٖ مَنۡ کَانَ یُؤۡمِنُ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ۬ؕ وَمَنۡ یَّتَّقِ اللّٰہَ یَجۡعَلۡ لَّہٗ مَخۡرَجًا ۙ
ফাইযা-বালাগনা আজালাহুন্না ফাআমছিকূহুন্না বিমা‘রূফিন আও ফা-রিকূহুন্না বিমা‘রূফিওঁ ওয়া আশহিদূযাওয়াই ‘আদলিম মিনকুম ওয়া আকীমুশশাহা-দাতা লিল্লা-হি যা-লিকুম ইঊ‘আজুবিহী মান কা-না ইউ’মিনুবিল্লা-হি ওয়াল ইয়াওমিল আ-খিরি ওয়া মাইঁ ইয়াত্তাকিল্লা-হা ইয়াজ‘আল্লাহূমাখরাজা-।
So, when they (the divorced women) have (almost) reached their term, then either retain them with fairness, or part with them with fairness. And make two just men from among you witnesses (of your either decision). And (O witnesses,) keep your testimony upright for the sake of Allah. That is what anyone who believes in Allah and the Last Day is exhorted to do. Whoever fears Allah, He brings forth a way out for him,
অতঃপর তাদের (ইদ্দতের) মেয়াদ শেষ পর্যায়ে পৌঁছলে তোমরা হয় তাদেরকে যথাবিধি (নিজেদের বিবাহাধীন) রেখে দেবে অথবা তাদেরকে যথাবিধি বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ৪ আর নিজেদের মধ্য হতে ন্যায়নিষ্ঠ দু’জন লোককে সাক্ষী রাখবে। ৫ তোমরা আল্লাহর জন্য সঠিক সাক্ষ্য দিও। ৬ (হে মানুষ!) এটা এমন বিষয়, যার দ্বারা তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোন পথ তৈরি করে দেবেন। ৭
অতঃপর তারা যখন তাদের ইদ্দতকালে পৌঁছে, তখন তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে। এতদ্দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।
এদের ‘ইদ্দত পূরণের কাল আসন্ন হলে তোমরা হয় যথাবিধি এদেরকে রেখে দিবে, না হয় এদেরকে যথাবিধি পরিত্যাগ করবে এবং তোমাদের মধ্য হতে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে ; আর তোমরা আল্লাহ্ র জন্যে সঠিক সাক্ষ্য দিবে। এটা দিয়ে তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ্ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে তাকে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। যে কেউ আল্লাহ্কে ভয় করে আল্লাহ্ তার পথ করে দিবেন,
তাফসীরঃ
৪. এটা রজঈ তালাক সংক্রান্ত বিধান। স্বামী যদি স্ত্রীকে রজঈ তালাক দেয় আর স্ত্রী ইদ্দত পালন করতে থাকে, তবে ইদ্দত শেষ হওয়ার আগেই স্বামীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সে কি তালাক প্রত্যাহার করে স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক পুনর্বহাল করবে, না এখনও বিচ্ছেদকেই সে সমীচীন মনে করে। উভয় অবস্থায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সে যা-ই করতে চায়, তা যেন ভালোভাবে করে, ন্যায়সঙ্গতভাবে করে। যদি দাম্পত্য সম্পর্ক পুনর্বহাল করতে চায়, তবে তালাক প্রত্যাহার করে নিক এবং এরপর থেকে স্ত্রীর সাথে প্রীতিপূর্ণ আচার-আচরণ করে চলুক আর যদি বিচ্ছেদকেই বেছে নেয়, তবে ভদ্রোচিত পন্থায়, সদ্ভাবে স্ত্রীকে বিদায় করুক।
৫. তালাক প্রত্যাহার করতে চাইলে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, স্বামী যেন দু’জন সাক্ষীর সামনে বলে, আমি তালাক প্রত্যাহার করে নিলাম। সাক্ষীদের হতে হবে ন্যায়নিষ্ঠ, সৎলোক। এটাই প্রত্যাহারের উত্তম পন্থা। তবে প্রত্যাহারের জন্য সাক্ষী রাখা অপরিহার্য শর্ত নয়। এমনিভাবে স্বামী যদি মুখে কিছু না বলে, বরং স্ত্রীর সাথে প্রীতি-ঘনিষ্ঠ আচরণ করে কিংবা চুম্বনই করে, তাতেও প্রত্যাহার হয়ে যাবে।
৬. এটা বলা হচ্ছে সাক্ষীদেরকে, যাদের সামনে স্বামী তালাক প্রত্যাহার করেছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, কখনও যদি প্রত্যাহারকে প্রমাণ করার জন্য সাক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে যেন সঠিকভাবে সাক্ষ্য দেয়।
৭. যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে যথাযথভাবে ভয় করবে, স্বাভাবিকভাবেই সে তাঁর বিধানাবলী মেনে চলতে সচেষ্ট থাকবে। এরূপ ব্যক্তি যত সমস্যারই সম্মুখীন হোক আল্লাহ তা‘আলা তার সমাধান করে দেবেন। সে যত বড় বিপদেই পড়ুক, তা থেকে মুক্তির পথ করে দেবেন। তাকে অকল্পনীয়ভাবে ক্ষুধায় অন্ন যোগাবেন এবং দুনিয়া-আখিরাতের সফলতা দান করবেন। -অনুবাদক
৩
وَّیَرۡزُقۡہُ مِنۡ حَیۡثُ لَا یَحۡتَسِبُ ؕ وَمَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ فَہُوَ حَسۡبُہٗ ؕ اِنَّ اللّٰہَ بَالِغُ اَمۡرِہٖ ؕ قَدۡ جَعَلَ اللّٰہُ لِکُلِّ شَیۡءٍ قَدۡرًا
ওয়া ইয়ারঝুকহু মিন হাইছুলা-ইয়াহতাছিবু ওয়া মাইঁ ইয়াতাওয়াক্কাল ‘আলাল্লা-হি ফাহুওয়া হাছবুহূ ইন্নাল্লা-হা বা-লিগু আমরিহী কাদ জা‘আলাল্লা-হু লিকুল্লি শাইয়িন কাদরা-।
and provides him (with what he needs) from where he does not even imagine. And whoever places his trust in Allah, He is sufficient for him. Surely Allah is to accomplish His purpose. Allah has set a measure for every thing.
এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে। যে-কেউ আল্লাহর উপর নির্ভর করে, আল্লাহই তার (কর্ম সম্পাদনের) জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার কাজ পূরণ করেই থাকেন। (অবশ্য) আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটা পরিমাণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। ৮
এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।
এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিযিক। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ র ওপর নির্ভর করে তার জন্যে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। আল্লাহ্ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই; আল্লাহ্ সমস্ত কিছুর জন্যে স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।
তাফসীরঃ
৮. অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করে, আল্লাহ তাআলা তার কাজ পূর্ণ করে দেন। তবে কাজ পূর্ণ করার ধরন ও তার সময় আল্লাহ তাআলা নিজেই নির্ধারণ করেন। কেননা তিনি প্রতিটি জিনিসের এক মাপজোখকৃত পরিমাণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। প্রকাশ থাকে যে, উপায় অবলম্বন করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। বরং তা অবলম্বন করাও আল্লাহর হুকুম। কিন্তু ভরসা রাখতে হবে আল্লাহ তা‘আলার উপর, উপায়ের উপর নয়।
৪
وَالّٰٓیِٴۡ یَئِسۡنَ مِنَ الۡمَحِیۡضِ مِنۡ نِّسَآئِکُمۡ اِنِ ارۡتَبۡتُمۡ فَعِدَّتُہُنَّ ثَلٰثَۃُ اَشۡہُرٍ ۙ وَّالّٰٓیِٴۡ لَمۡ یَحِضۡنَ ؕ وَاُولَاتُ الۡاَحۡمَالِ اَجَلُہُنَّ اَنۡ یَّضَعۡنَ حَمۡلَہُنَّ ؕ وَمَنۡ یَّتَّقِ اللّٰہَ یَجۡعَلۡ لَّہٗ مِنۡ اَمۡرِہٖ یُسۡرًا
ওয়াল্লাঈইয়াইছনা মিনাল মাহীদিমিন্নিছাইকুম ইনিরতাবতুম ফা‘ইদ্দাতুহুন্না ছালাছাতুআশহুরিওঁ ওয়াল্লায়ী লাম ইয়াহিদনা ওয়া উলা-তুল আহমা-লি আজালুহুন্না আইঁ ইয়াদা‘না হামলাহুন্না ওয়া মাইঁ ইয়াত্তাকিল্লা-হা ইয়াজ‘আল লাহূমিন আমরিহী ইউছরা-।
And those women from among you who have despaired of (further) menstruation, if you are in doubt, their ‘Iddah is three months, as well as of those who have not yet menstruated. As for those having pregnancy, their term (of ‘Iddah ) is that they give birth to their child. And whoever fears Allah, He brings about ease for him in his affair.
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতু আসার কোন আশা নেই, তোমাদের যদি (তাদের ইদ্দত সম্পর্কে) সন্দেহ হয়, তবে (জেনে রাখ) তাদের ইদ্দত হল তিন মাস। ৯ আর এখনও পর্যন্ত যারা ঋতুমতীই হয়নি, তাদেরও (ইদ্দত এটাই)। যারা গর্ভবতী, তাদের (ইদ্দতের) মেয়াদ হল তাদের সন্তান প্রসব। যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজ সহজে সমাধান করে দেন।
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।
তোমাদের যে সকল স্ত্রীর আর ঋতুমতী হওয়ার আশা নেই তাদের ‘ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ‘ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যারা এখনও রজঃস্বলা হয় নাই তাদেরও ; আর গর্ভবতী নারীদের ‘ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আল্লাহ্কে যে ভয় করে আল্লাহ্ তার সমস্যা সমাধান সহজ করে দিবেন।
তাফসীরঃ
৯. সূরা বাকারায় (২ : ২২৮) বলা হয়েছিল তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দতকাল তিনটি ঋতু। এতে কারও মনে প্রশ্ন দেখা দিল, যাদের বয়স বেশি হওয়ার কারণে ঋতু আসা বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের ইদ্দত কী হবে? এ আয়াতে তার জবাব দেওয়া হয়েছে যে, তাদের ইদ্দতকাল তিন ঋতুর স্থানে তিন মাস হবে। এমনিভাবে নাবালেগ মেয়ে, যার এখনও পর্যন্ত ঋতু দেখা দেয়নি, তার ইদ্দতও তিন মাস। যাদেরকে গর্ভাবস্থায় তালাক দেওয়া হয়েছে, তার ইদ্দত ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকবে, যতক্ষণ না সন্তান প্রসব হয় বা কোন কারণে গর্ভপাত ঘটে, তা তিন মাসের আগেই হোক বা তার পরে।
৫
ذٰلِکَ اَمۡرُ اللّٰہِ اَنۡزَلَہٗۤ اِلَیۡکُمۡ ؕ وَمَنۡ یَّتَّقِ اللّٰہَ یُکَفِّرۡ عَنۡہُ سَیِّاٰتِہٖ وَیُعۡظِمۡ لَہٗۤ اَجۡرًا
যা-লিকা আমরুল্লা-হি আনঝালাহূইলাইকুম ওয়া মাইঁ ইয়াত্তাকিল্লা-হা ইউকাফফির ‘আনহু ছাইয়িআ-তিহী ওয়া ইউ‘জিম লাহূআজরা-।
This is the command of Allah that He has sent down to you. And whoever fears Allah, He will write off his evil deeds, and will give him a huge reward.
এটা আল্লাহর নির্দেশ, যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তাঁর পাপরাশি মার্জনা করবেন এবং তাকে দিবেন মহা পুরস্কার।
এটা আল্লাহর নির্দেশ, যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করেন এবং তাকে মহাপুরস্কার দেন।
এটা আল্লাহ্ র বিধান যা তিনি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ্কে যে ভয় করে তিনি তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে দিবেন মহাপুরস্কার।
৬
اَسۡکِنُوۡہُنَّ مِنۡ حَیۡثُ سَکَنۡتُمۡ مِّنۡ وُّجۡدِکُمۡ وَلَا تُضَآرُّوۡہُنَّ لِتُضَیِّقُوۡا عَلَیۡہِنَّ ؕ وَاِنۡ کُنَّ اُولَاتِ حَمۡلٍ فَاَنۡفِقُوۡا عَلَیۡہِنَّ حَتّٰی یَضَعۡنَ حَمۡلَہُنَّ ۚ فَاِنۡ اَرۡضَعۡنَ لَکُمۡ فَاٰتُوۡہُنَّ اُجُوۡرَہُنَّ ۚ وَاۡتَمِرُوۡا بَیۡنَکُمۡ بِمَعۡرُوۡفٍ ۚ وَاِنۡ تَعَاسَرۡتُمۡ فَسَتُرۡضِعُ لَہٗۤ اُخۡرٰی ؕ
আছকিনূহুন্না মিন হাইছুছাকানতুম মিওঁউজদিকুম ওয়ালা-তুদাররূহুন্না লিতুদাইয়িকূ ‘আলাইহিন্না ওয়া ইন কুন্না ঊলা-তি হামলিন ফাআনফিকূ‘আলাইহিন্না হাত্তা-ইয়াদা‘না হামলাহুন্না ফাইন আরদা‘না লাকুম ফাআ-তূহুন্না উজূরাহুন্না ওয়া’তামিরূবাইনাকুম বিমা‘রূফিও ওয়া ইন তা‘আ-ছারতুম ফাছাতুরদি‘উ লাহূউখরা-।
Provide to them (the divorced women) residence where you reside according to your means, and do not hurt them to straiten (life) for them. And if they are pregnant, spend on them till they give birth to their child. Then if they suckle the child for you, give them their fees, and consult each other (for determining the fee) with fairness, and if you create a deadlock between you, then another woman will suckle him.
তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে সেই স্থানে বাস করতে দাও, যেখানে তোমরা নিজেরা বাস কর। তাদেরকে সংকটে ফেলার জন্য কষ্ট দিও না। ১০ তারা গর্ভবতী হলে তাদের জন্য ব্যয় করতে থাক, যতক্ষণ না তারা সন্তান প্রসব করে। ১১ তারপর তারা যদি তোমাদের জন্য শিশুদের দুধ পান করায়, তবে তাদেরকে তাদের পারিশ্রমিক দিও। আর (পারিশ্রমিক নির্ধারণের জন্য) উত্তম পন্থায় নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নিও। তোমরা যদি একে অন্যের জন্য সংকট সৃষ্টি কর, তবে অন্য কোন নারী তাকে দুধ পান করাবে। ১২
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
তোমরা তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না। যদি তারা গর্ভবতী হয়, তবে সন্তানপ্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ সম্পর্কে পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পরস্পর জেদ কর, তবে অন্য নারী স্তন্যদান করবে।
তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর তাদেরকেও সেরূপ গৃহে বাস করতে দিবে ; তাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে না সঙ্কটে ফেলার জন্যে ; তারা গর্ভবতী হয়ে থাকলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের জন্যে ব্যয় করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্য দান করে তবে তাদেরকে পারিশ্রমিক দিবে এবং সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে তোমরা সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি নিজ নিজ দাবিতে অনমনীয় হও তা হলে অন্য নারী তার পক্ষে স্তন্য দান করবে।
তাফসীরঃ
১০. অর্থাৎ স্বামী যেন এরূপ চিন্তা না করে যে, স্ত্রীকে যখন বিদায়ই দিতে হবে তখন আচ্ছা মত জ্বালিয়ে নেই। বরং তার উচিত হবে, যত দিন স্ত্রী তার ঘরে ইদ্দত পালন করবে, ততদিন তার সাথে ভালো ব্যবহার করা। এ আয়াত দ্বারাই হানাফী ফুকাহায়ে কেরাম প্রমাণ করেন, তালাক রজঈ হোক বা বায়েন, ইদ্দতকালে স্ত্রীর ব্যয়ভার স্বামীকেই বহন করতে হবে। কেননা খোরপোষ না দেওয়াটা তাকে কষ্ট দানেরই নামান্তর, যা এ আয়াতে নিষেধ করা হয়েছে।
১১. সাধারণ অবস্থায় ইদ্দত তো মাস তিনেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গর্ভকাল যেহেতু আরও বেশি দিন থাকতে পারে, তাই গর্ভাবস্থার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে হুকুম দেওয়া হয়েছে, গর্ভবতীর খরচা তার সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত চালু থাকবে, তা যত দিনই দীর্ঘ হোক।
১২. তালাকপ্রাপ্তা নারী তার শিশুকে দুধ খাওয়ানোর জন্য তার প্রাক্তন স্বামী ও শিশুর পিতার কাছে পারিশ্রমিক দাবি করতে পারে। আয়াতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, পারিশ্রমিক যেন উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সন্তুষ্টিক্রমে ঠিক করে নেয়। স্বামীও যেন এক্ষেত্রে কার্পণ্য না করে এবং স্ত্রীও যেন ন্যায্য পারিশ্রমিকের বেশি দাবি না করে। কেননা পারস্পরিক সম্মতিক্রমে যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা না যায় এবং স্বামী কার্পণ্য করে, তবে তো অন্য কোন নারীকে দিয়ে দুধ খাওয়াতে হবে আর সেই নারী রেওয়াজমত পারিশ্রমিকই চাবে, তার কমে রাজি হবে না। তো অন্য নারীকে যখন রেওয়াজ মোতাবেক পারিশ্রমিকই দিতে হবে, তখন সেই পারিশ্রমিক শিশুর মা’কেই দেওয়া হোক না! এটাই তো বেশি যুক্তিযুক্ত। আবার মা’ যদি রেওয়াজের বেশি পারিশ্রমিক দাবি করে, তবে শিশুর পিতা অন্য কাউকে দিয়ে দুধ খাওয়াতে বাধ্য হবে। আর মায়ের পক্ষে এটা কিছুতেই শোভনীয় নয় যে, সে কেবল টাকার লোভে নিজ সন্তানকে দুধ খাওয়ানো হতে বিরত থাকবে এবং এ দায়িত্ব অন্য কোন নারীর হাতে ছেড়ে দেবে।
৭
لِیُنۡفِقۡ ذُوۡ سَعَۃٍ مِّنۡ سَعَتِہٖ ؕ وَمَنۡ قُدِرَ عَلَیۡہِ رِزۡقُہٗ فَلۡیُنۡفِقۡ مِمَّاۤ اٰتٰىہُ اللّٰہُ ؕ لَا یُکَلِّفُ اللّٰہُ نَفۡسًا اِلَّا مَاۤ اٰتٰىہَا ؕ سَیَجۡعَلُ اللّٰہُ بَعۡدَ عُسۡرٍ یُّسۡرًا ٪
লিইয়ুনফিকযূছা‘আতিম মিন ছা‘আতিহী ওয়া মান কুদিরা ‘আলাইহি রিঝকুহূ ফালইউনফিকমিম্মাআ-তা-হুল্লা-হু লা-ইউকালিলফুল্লা-হু নাফছান ইল্লা-মাআ-তাহা- ছাইয়াজ‘আলুল্লা-হু বা‘দা ‘উছরিইঁ ইউছরা-।
A man of vast means should spend according to his vast means. And anyone whose sustenance is limited should spend from whatever Allah has given to him. Allah makes no one liable beyond what He has given to him. Allah will soon bring ease after a difficulty.
প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী খরচা দেবে আর যার জীবিকা সংকীর্ণ করে দেওয়া হয়েছে, (অর্থাৎ যে গরীব) সে, আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে খরচা দেবে। আল্লাহ যাকে যতটুকু দিয়েছেন তার বেশি ভার তার উপর অর্পণ করেন না। ১৩ আল্লাহ সংকটের পর স্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টি করে দেবেন। ১৪
বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন।
বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ্ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তদপেক্ষা গুরুতর বোঝা তিনি তার ওপর চাপান না। আল্লাহ্ কষ্টের পর দিবেন স্বস্তি।
তাফসীরঃ
১৩. এটা গরীবদের জন্য একটা সুসংবাদ যে, আল্লাহ তাআলা তাকে যতটুকুই দিয়েছেন, তা থেকেই সে যদি বিধিমতো খরচ করে, তবে একদিন আল্লাহ তা‘আলা তার অর্থকষ্ট ঘুচিয়ে দেবেন। -অনুবাদক
১৪. স্বামীর উপর যে স্ত্রী ও সন্তানদের খরচা বহন ওয়াজিব, এটা তার আর্থিক অবস্থা অনুপাতেই হয়ে থাকে, তার বেশি নয়।
৮
وَکَاَیِّنۡ مِّنۡ قَرۡیَۃٍ عَتَتۡ عَنۡ اَمۡرِ رَبِّہَا وَرُسُلِہٖ فَحَاسَبۡنٰہَا حِسَابًا شَدِیۡدًا ۙ وَّعَذَّبۡنٰہَا عَذَابًا نُّکۡرًا
ওয়া কাআইয়িম মিন কারয়াতিন ‘আতাত ‘আন আমরি রাব্বিহা-ওয়া রুছুলিহী ফাহা-ছাব নাহা-হিছা-বান শাদীদাওঁ ওয়া ‘আযযাবনা-হা-‘আযা-বান নুকরা-।
And how many a township rebelled against the command of its Lord, and against His messengers, so We called them to a severe account, and punished them with a punishment that was unimagined by them.
এমন কত জনপদ রয়েছে, যেগুলো নিজ প্রতিপালক ও তাঁর রাসূলগণের আদেশ অহংকার বশে অমান্য করেছিল। ফলে আমি তাদের হিসাব নেই কঠোরভাবে এবং তাদেরকে শাস্তি দেই, অদৃষ্টপূর্ব শাস্তি।
অনেক জনপদ তাদের পালনকর্তা ও তাঁর রসূলগণের আদেশ অমান্য করেছিল, অতঃপর আমি তাদেরকে কঠোর হিসাবে ধৃত করেছিলাম এবং তাদেরকে ভীষণ শাস্তি দিয়েছিলাম।
কত জনপদ এদের প্রতিপালক ও তাঁর রাসূলগণের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল! ফলে আমি এদের নিকট হতে কঠোর হিসেব নিয়েছিলাম এবং এদেরকে দিয়েছিলাম কঠিন শাস্তি।
৯
فَذَاقَتۡ وَبَالَ اَمۡرِہَا وَکَانَ عَاقِبَۃُ اَمۡرِہَا خُسۡرًا
ফাযা-কাত ওয়া বা-লা আমরিহা-ওয়া কা-না ‘আ-কিবাতুআমরিহা-খুছরা-।
Thus they tasted the evil consequence of their acts, and the end of their conduct was loss.
এভাবে তারা তাদের কর্মের পরিণতি ভোগ করল। বস্তুত ক্ষতিই ছিল তাদের কর্মের পরিণতি।
অতঃপর তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করল এবং তাদের কর্মের পরিণাম ক্ষতিই ছিল।
এরপর এরা এদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করল; ক্ষতিই হল এদের কর্মের পরিণাম।
১০
اَعَدَّ اللّٰہُ لَہُمۡ عَذَابًا شَدِیۡدًا ۙ فَاتَّقُوا اللّٰہَ یٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ ۬ۚۖۛ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ؕ۟ۛ قَدۡ اَنۡزَلَ اللّٰہُ اِلَیۡکُمۡ ذِکۡرًا ۙ
আ‘আদ্দাল্লা-হু লাহুম ‘আযা-বান শাদীদান ফাত্তাকুল্লা-হা ইয়াউলিল আলবা-বিল্লাযীনা আ-মানূ কাদ আনঝালাল্লা-হু ইলাইকুম যিকরা-।
Allah has prepared for them a severe punishment; so fear Allah O men of understanding who have believed! Allah has sent down to you a Reminder,
(আর আখেরাতে) আল্লাহ তাদের জন্য এক কঠিন শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। সুতরাং হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। ১৫ আল্লাহ তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন এক উপদেশ
আল্লাহ তাদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তত রেখেছেন অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, যারা ঈমান এনেছ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তোমাদের প্রতি উপদেশ নাযিল করেছেন।
আল্লাহ্ এদের জন্যে কঠোর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। অতএব তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর, হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ ! যারা ঈমান এনেছ। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন উপদেশ-
তাফসীরঃ
১৫. এটা কুরআন মাজীদের এক বিশেষ বাকশৈলী। কুরআন যখনই যে বিধান দেয়, তার আগে-পরে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়, তোমাদেরকে আল্লাহ তাআলার সামনে অবশ্যই একদিন জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং সেই চেতনার সাথে তাকে ভয় করে চল। এটা এমন এক চেতনা, যা তোমাদের জন্য তাঁর সমস্ত আদেশ-নিষেধের অনুসরণকে সহজ করে দেবে।
১১
رَّسُوۡلًا یَّتۡلُوۡا عَلَیۡکُمۡ اٰیٰتِ اللّٰہِ مُبَیِّنٰتٍ لِّیُخۡرِجَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ؕ وَمَنۡ یُّؤۡمِنۡۢ بِاللّٰہِ وَیَعۡمَلۡ صَالِحًا یُّدۡخِلۡہُ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ قَدۡ اَحۡسَنَ اللّٰہُ لَہٗ رِزۡقًا
রাছূলাইঁ ইয়াতলূ‘আলাইকুম আ-য়া-তিল্লা-হি মুবাইয়িনা-তিল লিইউখরিজাল্লাযী না আ-মানূ ওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি মিনাজ্জুলুমা-তি ইলান্নূরি ওয়া মাইঁ ইউ’মিম বিল্লা-হি ওয়া ইয়া‘মাল সা-লিহাইঁ ইউদখিলহু জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু খা-লিদীনা ফীহাআবাদা- কাদ আহছানাল্লা-হু লাহূরিঝকা-।
a messenger who recites to you the verses of Allah, making (the truth) clear, so that He may bring forth those who believe and do righteous deeds from the layers of darkness into the light. And whoever believes in Allah, and acts righteously, He will admit him to the gardens beneath which rivers flow, wherein such people will live forever. Allah has made for him a good provision.
অর্থাৎ এমন এক রাসূল, যে তোমাদের সামনে পাঠ করে আল্লাহর আলোকপাতকারী আয়াত, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোতে আনার জন্য। যে-কেউ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন এমন উদ্যানে, যার নিচে নহর প্রবাহিত থাকবে, যাতে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ এরূপ ব্যক্তির জন্য উৎকৃষ্ট রিযকের ব্যবস্থা রেখেছেন।
একজন রসূল, যিনি তোমাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করেন, যাতে বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণদের অন্ধকার থেকে আলোতে আনয়ন করেন। যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তথায় তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাকে উত্তম রিযিক দেবেন।
এক রাসূল, যে তোমাদের নিকট আল্লাহ্ র সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে, যারা মু’মিন ও সৎকর্মপরায়ণ তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোতে আনার জন্যে। যে কেউ আল্লাহে বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তিনি তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ্ তাকে উত্তম রিযিক দিবেন।
১২
اَللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ وَّمِنَ الۡاَرۡضِ مِثۡلَہُنَّ ؕ یَتَنَزَّلُ الۡاَمۡرُ بَیۡنَہُنَّ لِتَعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ۬ۙ وَّاَنَّ اللّٰہَ قَدۡ اَحَاطَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عِلۡمًا ٪
আল্লা-হুল্লাযী খালাকা ছাব‘আ ছামা-ওয়া-তিওঁ ওয়া মিনাল আরদিমিছলাহুন্না ইয়াতানাঝঝালুল আমরু বাইনাহুন্না লিতা‘লামূআন্নাল্লা-হা ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদীরুওঁ ওয়া আন্নাল্লা-হা কাদ আহা-তা বিকুল্লি শাইয়িন ‘ইল মা-।
Allah is the One who has created seven skies, and their like from earth. The Command descends among them, so that you may know that Allah is powerful over every thing, and that Allah has encompassed every thing in knowledge.
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ এবং তার অনুরূপ পৃথিবীও। ১৬ তাদের মাঝে আল্লাহর হুকুম অবতীর্ণ হতে থাকে, যাতে তোমরা জানতে পার আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিপূর্ণ শক্তি রাখেন এবং আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে।
আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভূত।
আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ এবং এদের অনুরূপ পৃথিবীও, এদের মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ ; যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ্ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।
তাফসীরঃ
১৬. বিভিন্ন হাদীস দ্বারা এর যে অর্থ বোঝা যায়, তা হচ্ছে আকাশমণ্ডলীর মত পৃথিবীও সাতটি। কিন্তু কুরআন ও হাদীস এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেশ করেনি। অর্থাৎ সাত পৃথিবী স্তরে-স্তরে গ্রথিত, না এর পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব আছে? দূরত্ব থাকলে তা কোথায়-কোথায় অবস্থিত? এসব জানানো হয়নি। কিন্তু একথাও সত্য যে, মহা বিশ্বে এখনও এমন অসংখ্য বস্তু রয়েছে, মানব-জ্ঞান যে পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। কেবল আল্লাহ তাআলাই তা জানেন। কুরআন মাজীদ যে উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে তা পূরণের জন্য এসব জানা জরুরিও নয়। এ আয়াতের মূল উদ্দেশ্য এই যে, মহাবিশ্বের সৃষ্টিনিচয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করে আল্লাহ তাআলার অসীম শক্তি ও অপার হেকমতের উপর ঈমান আনাই সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির দাবি।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
আমাদের নতুন ইসলামিক নিউজ ও জিজ্ঞাসা ভিত্তিক সাইড
Islamic Info Hub ( www.islamicinfohub.com ) আজই ভিজিড করুন !!
- নামাজে আমরা যা বলি তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা !!
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
- ইসলামে কুরবানীর গুরুত্ব ও বিধান,ইসলামে কোরবানির যত ফজিলত গুরুত্ব ও শিক্ষা
- বৃষ্টির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, বৃষ্টির নামাজের পর আমল
- ইসতিসকার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, ইসতিসকার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইসতিসকার নামাজের পর আমল