আজকের বিষয়: সূরা নাজ্ম সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল নাজ্ম আলমল ও ফজিলত, সূরা নাজ্ম কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা নাজ্ম নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৫৩ সূরা আল – নাজ্ম
বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ও নাসায়ীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, সর্ব প্রথম যে সূরাটিতে সিজাদার আয়াত নাযিল হয়েছে, সেটি হচ্ছে আন -নাজম । এ হাদীসের যে অংশসমূহ আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ, আবু ইসহাক এবং যুহারের ইবনে মুয়াবিয়া কর্তৃক ইবনে মাসউদের রেওয়ায়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে তা থেকে জানা যায় যে, এটি কুরআন মজীদের প্রথম সূরা যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের এক সমাবেশে (ইবনে মারদুইয়ার বর্ণনা অনুসারে হারাম শরীফের মধ্যে ) শুনিয়েছিলেন। সমাবেশে কাফের ও ঈমানদার সব শ্রেনীর লোক উপস্থিত ছিল। অবশেষে তিনি সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা করলে উপস্থিত সবাই তার সাথে সিজদা করে। এমনকি মুশরিকদের বড় বড় নেতা যারা তার বিরোধিতার অগ্রভাবে ছিল তারাও সিজদা না করে থাকতে পারেনি। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন; আমি কাফেরদের মধ্যে মাত্র এক ব্যক্তি অর্থাৎ উমাইয়া ইবনে খালফকে দেখলাম, সে সিজদা করার পরিবর্তে কিছু মাটি উঠিয়ে কপালে লাগিয়ে বললোঃ আমার জন্য এটাই যথেষ্ট। পরবর্তী সময়ে আমি নিজ চোখে তাকে কাফের অবস্থায় নিহিত হতে দেখেছি।
এ ঘটনার অপর একজন চাক্ষুষদর্শী হলেন হযরত মুত্তালিব ইবনে আবী ওয়াদা’আ । তিনি তখনও মুসলমান হননি। নাসায়ী ও মুসনাদে আহমাদে তার নিজের বক্তব্য এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে যে, নবী (সা) সূরা নাজম পড়ে সিজদা করলেন এবং উপস্থিত সবাই তার সাথে সিজদা করলো। কিন্তু আমি সিজদা করিনি। বর্তমানে আমি তার ক্ষতিপূরণ করি এভাবে যে, এ সূরা তিলাওয়াতকালে কখনো সিজদা না করে ছাড়ি না।
ইবনে সা’দ বর্ণনা করেন, ইতিপূর্বে নবুওয়াতের ৫ম বছরের রজব মাসে সাহাবা কিরামের একটি ছোট্ট দল হাবশায় হিজরত করেছিলেন। পরে ঐ বছর রমযান মাসেই এ ঘটনা ঘটে অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের জনসমাবেশে সূরা নাজম পাঠ করে শোনান এবং এতে কাফের ও ঈমানদার সবাই তার সাথে সিজদায় পড়ে যায়। হাবশায় মুহাজিরদের কাছে এ কাহিনী এভাবে পৌছে যে, মক্কায় কাফেররা মুসলমান হয়ে গিয়েছে। এ খবর শুনে তাদের মধ্যেকার কিছু লোক নবুওয়াতের ৫ম বছরের শাওয়াল মাসে মক্কায় ফিরে আসেন। কিন্তু এখানে আসার পরে জানতে পারেন যে, জুলুম-নির্যাতন আগের মতই চলেছে। অবশেষে হাবশায় দ্বিতীয়বার হিজরত করার ঘটনা সংঘটিত হয়। এতে প্রথমবারের হিজরতের তুলনায় অনেক বেশি লোক মক্কা ছেড়ে চলে যায়।
এভাবে প্রায় নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে, সূরাটি নবুওয়াতের ৫ম বছরের রমযান মাসে নাযিল হয়েছিলো।
এভাবে প্রায় নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে, সূরাটি নবুওয়াতের ৫ম বছরের রমযান মাসে নাযিল হয়েছিলো।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
- নামাজে আমরা যা বলি , তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা !!
- “লা আদওয়া” সংক্রমন নেই!হাদীসটি কী বুঝায়?
- রমজানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যত পরামর্শ
- ডায়াবেটিস রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন
- আজহারী: কোন ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙে
নাযিল হওয়ার সময়-কাল সম্পর্কে এ বিস্তারিত আলোচনা থেকে কিরূপ পরিস্থিতিতে এ সূরাটি নাযিল হয়েছিল তা জানা যায়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াত লাভের শুরু থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শুধু ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং বিশেষ বিশেষ বৈঠকেই আল্লাহর বাণী শুনিয়ে মানুষকে আল্লাহর দীনের দিকে আহবান জানিয়ে আসছিলেন। এ সুদীর্ঘ সময়ে তিনি কখনো কোন জনসমাবেশে কুরআন শোনানোর সুযোগ পাননি।
কাফেরদের চরম বিরোধীতাই ছিল এ প্রধান অন্তরায়। তার ব্যক্তিত্ব ও প্রচারণমূলক তৎপরতায় কিরূপ প্রচণ্ড আকর্ষণ এবং কুরআন মজীদের আয়াতসমূহে কি সাংঘাতিক প্রভাব আছে তারা খুব ভাল করেই জানতো। তাই তাদের চেষ্টা ছিল তারা নিজেরাও এ বাণী শুনবে না, অন্য কাউকেও শুনতে দিবে না এবং তার বিরুদ্ধে নানা রকমের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করে শুধু নিজেদের মিথ্যা প্রচার প্রোপাগাণ্ডা জোরে তার এ আন্দোলনকে দমিয়ে দেবে। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একদিকে তারা বিভিন্ন স্থানে একথা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিলো যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভ্রান্ত ও বিপথগামী হয়েছেন এবং লোকদেরকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছিল। অপরদিকে তাদের স্থায়ী কর্মপন্থা ছিল এই যে, নবী (সা) যেখানেই কুরআন শোনানোর চেষ্টা করতেন সেখানেই হট্টগোল, চিৎকার হৈ হল্লা শুরু করিয়ে দিতে হবে যাতে যে কারণে তাঁকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত লোক বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে জানতে তা যেন লোকে আদৌ জানতে না পারে।
এ পরিস্থিতিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন পবিত্র হারাম শরীফের মধ্যে কুরাইশদের একটি বড় সমাবেশে হঠাৎ বক্তৃতা করতে দাঁড়ালেন। সূরা নাজম আকারে এখন যে সূরাটি আমাদের সামনে বর্তমান, আল্লাহর পক্ষ থেকে রসূলের (সা) মুখে তা বক্তৃতা আকারে পরিবেশিত হলো। এ বাণীর প্রচণ্ড প্রভাবে অবস্থা দাঁড়ালো এই যে, তিনি তা শুনাতে আরম্ভ করলে এর বিরুদ্ধে বিরেধীদের হট্টগোল ও হৈ -হল্লা করার খেয়ালই হলো না। আর শেষের দিকে তিনি যখন সিজদা করলেন তখন তারাও সিজদা করলো। পরে তারা এই ভেবে অত্যন্ত বিচলিত বোধ করলো যে, আমরা একি দুর্বলতা দেখিয়ে ফেললাম।
এজন্য লোকজনও তাদেরকে এ বলে তিরস্কার করলো যে, এরা অন্যদের এ বাণী শুনতে নিষেধ করে ঠিকই কিন্তু আজ তারা কান পেতে তা শুধু শুনলো না, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সিজদাও করে বসলো। অবশেষে তারা এ মর্মে মিথ্যা অপবাদ রটায় যে, আরে মিয়া, আমরা তো () কথাটির পর মুহাম্মাদ (সা) মুখ থেকে ——–( এরা সব উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন দেবী। তাদের শাফায়াতের আশা অবশ্যই করা যায়) কথাটি শুনেছিলাম। তাই আমরা মনে করেছিলাম যে, মুহাম্মাদ (সা) আমাদের পথে ফিরে এসেছে। অথচ তারা যে কথাটি শুনতে পেয়েছে বলে দাবী করেছিলো, এ সমগ্র সূরাটির পূর্বাপর প্রেক্ষিতের মধ্যে তা কোথাও খাটে না। এ ধরনের একটি উদ্ভট বাক্যের সাথে এ সূরার মিল খুঁজে পাওয়া একমাত্র কোন পাগলের পক্ষেই সম্ভব। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন তাফহীমূল কুরআন, আল -হাজ্জ, টীকা -৯৬ থেকে ১০১) ।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
৫৩ . আন-নাজ্ম – ( الـنحـم ) | তারা
মাক্কী, মোট আয়াতঃ ৬২
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
১
وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَىٰ
ওয়ান্নাজমি ইযা-হাওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কসম নক্ষত্রের, যখন তা পতিত হয়। ১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শপথ নক্ষত্রের, যখন তা হয় অস্তমিত,
তাফসীরঃ
১. নক্ষত্রের পতন দ্বারা তার অস্ত যাওয়া বোঝানো হয়েছে। সূরার পরিচিতিতে বলা হয়েছে যে, এ সূরার মূল বিষয়বস্তু হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাত। তাই সূরার শুরুতে তাঁর প্রতি অবতীর্ণ ওহী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তা এক নির্ভরযোগ্য ফেরেশতা আসমান থেকে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। তার আগে নক্ষত্রের কসম দ্বারা ইশারা করা হয়েছে, নক্ষত্র যেমন আলো দান করে এবং তা দেখে আরবের লোক পথ চেনে, তেমনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও মানুষের জন্য হেদায়াতের আলো। মানুষ তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার পথ চিনতে সক্ষম হবে। তাছাড়া নক্ষত্ররাজির চলার জন্য আল্লাহ তাআলা যে পথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তারা সে পথ থেকে বিন্দু পরিমাণ এদিক-ওদিক যায় না এবং বিপথগামিতার শিকারও হয় না। তেমনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি পথ ভুলে যাননি এবং বিপথগামীও হননি। আবার নক্ষত্র যখন অস্ত যাওয়ার উপক্রম করে তখন তার দ্বারা পথ চেনা বেশি সহজ হয়, তাই অস্তগামী নক্ষত্রের কসম করা হয়েছে। তাছাড়া নক্ষত্রের অস্তগমন পথিকের জন্য একটি বার্তাও বটে। সে যেন ডেকে বলে, আমি বিদায় নিলাম। কাজেই আমার দ্বারা শীঘ্র পথ জেনে নাও। তেমনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ছিলেন এক অস্তগামী নক্ষত্রের মত। দুনিয়ায় তাঁর অবস্থান কাল দীর্ঘ ছিল না। যেন বলা হচ্ছে, তাঁর মাধ্যমে যারা হেদায়াত লাভ করতে চাও, শীঘ্র তা করে নাও। কালক্ষেপণের কিন্তু সময় নেই।
২
مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَىٰ
মা-দাল্লা সা-হিবুকুম ওয়ামা-গাওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে মক্কাবাসীগণ!) তোমাদের সঙ্গী পথ ভুলে যায়নি এবং বিপথগামীও হয়নি। ২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়,
তাফসীরঃ
২. ‘তোমাদের সঙ্গী’ বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বোঝানো উদ্দেশ্য। তাঁর জন্য এ শব্দ ব্যবহার করে আল্লাহ তাআলা একটি সত্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বোঝানো হচ্ছে যে, তিনি বাইর থেকে এসে নবুওয়াতের দাবি করেননি; বরং শুরু থেকেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন। তার গোটা জীবন উম্মুক্ত গ্রন্থের মত তোমাদের সামনে বিদ্যমান। তোমরা দেখেছ, জীবনে কখনও তিনি মিথ্যা বলেননি, কখনও কাউকে ধোঁকা দেননি। তোমাদের দ্বারাই তিনি সাদিক (সত্যবাদী) ও আমীন (বিশ্বস্ত) খেতাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। এ অবস্থায় এটা কি করে সম্ভব যে, জীবনের সাধারণ ক্ষেত্রসমূহে যিনি মিথ্যা থেকে এতটা দূরে থাকলেন, তিনি আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে মিথ্যা বলে দেবেন?
৩
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ
ওয়ামা-ইয়ানতিকু‘আনিল হাওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে তার নিজ খেয়াল-খুশী থেকে কিছু বলে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং সে মনগড়া কথাও বলে না।
৪
إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ
ইন হুওয়া ইল্লা-ওয়াহইঊ ইয়ূহা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এটা তো খালেস ওহী, যা তাঁর কাছে পাঠানো হয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটা তো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়,
৫
عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَىٰ
‘আল্লামাহূশাদীদুল কুওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাকে শিক্ষা দিয়েছে এক প্রচণ্ড শক্তিমান (ফেরেশতা)
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তাকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী,
৬
ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَىٰ
যূ মিররাতিন ফাছতাওয়া
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে ক্ষমতার অধিকারী। ৩ সুতরাং সে আত্মপ্রকাশ করল,
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
প্রজ্ঞাসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল,
তাফসীরঃ
৩. এর দ্বারা হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে, যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওহী নিয়ে আসতেন। বিশেষভাবে তার শক্তির কথা উল্লেখ করে কাফেরদের মনের এই সম্ভাব্য ধারণাকে খণ্ডন করা হয়েছে যে, কোন ফেরেশতা যদি তাঁর কাছে ওহী নিয়ে এসেও থাকেন, তবে মাঝপথে যে কোন শয়তানী কারসাজী হয়নি তার কী নিশ্চয়তা আছে? এ আয়াত জানাচ্ছে, ওহীবাহী ফেরেশতা এমনই শক্তিশালী যে, অন্য কারও পক্ষে তাকে বিভ্রান্ত করা বা তার মিশন থেকে নিরস্ত করা সম্ভব নয়।
৭
وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَىٰ
ওয়া হুওয়া বিলউফুকিল আ‘লা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যখন সে ছিল ঊর্ধ্ব দিগন্তে। ৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
উর্ধ্ব দিগন্তে,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তখন সে ঊর্ধ্বদিগন্তে,
তাফসীরঃ
৪. কাফেরদের প্রশ্ন ছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যে ফেরেশতা ওহী নিয়ে আসেন, তিনি তো মানব আকৃতিতেই আসেন। কাজেই তিনি কী করে বুঝলেন যে, তিনি মানুষ নন, ফেরেশতা? এ আয়াতসমূহে তার উত্তর দেওয়া হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ফেরেশতাকে অন্ততপক্ষে দু’বার তার প্রকৃতরূপে দেখেছেন। তার মধ্যে একবারের ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনা এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে ফরমায়েশ করেছিলেন, তিনি যেন তাঁর আসল আকৃতিতে তাঁর সামনে আসেন। সুতরাং হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম স্ব-মূর্তিতে আকাশ-দিগন্তে আত্মপ্রকাশ করলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখলেন।
৮
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّىٰ
ছু ম্মা দানা-ফাতাদাল্লা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর সে নিকটে আসল এবং ঝুঁকে গেল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর নিকটবর্তী হল ও ঝুলে গেল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর সে তার নিকটবর্তী হল, অতি নিকটবর্তী,
৯
فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَىٰ
ফাকা-না কা-বা কাওছাইনি আও আদনা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এমনকি দুই ধনুকের দূরত্ব পরিমাণ কাছে এসে গেল, ৫ বরং তার চেয়েও বেশি নিকটে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান রইল বা এরও কম।
তাফসীরঃ
৫. এটি আরবী ভাষার একটি বাগধারা। যখন দু’জন লোক পরস্পরে মৈত্রী চুক্তি করত তখন উভয়ে তাদের ধনুক দু’টি মিলিয়ে দিত। এরই থেকে অতি নৈকট্য প্রকাশ করার জন্য বলা হয়ে থাকে, তারা দুই ধনুকের দূরত্ব পরিমাণ নিকটবর্তী হয়ে গেল।
১০
فَأَوْحَىٰ إِلَىٰ عَبْدِهِ مَا أَوْحَىٰ
ফাআওহাইলা-‘আবদিহী মাআওহা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এভাবে নিজ বান্দার প্রতি আল্লাহর যে ওহী নাযিল করার ছিল তা নাযিল করলেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তখন আল্লাহ্ তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন।
১১
مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَىٰ
মা-কাযাবাল ফুআ-দুমা-রাআ-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে যা দেখেছে, তার অন্তর তাতে কোন ভুল করেনি। ৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
রসূলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যা সে দেখেছে, তার অন্তঃকরণ তা অস্বীকার করে নাই;
তাফসীরঃ
৬. অর্থাৎ এমন হয়নি যে, চোখ প্রকৃতপক্ষে যা দেখেছিল, মন তা বুঝতে ভুল করেছে।
১২
أَفَتُمَارُونَهُ عَلَىٰ مَا يَرَىٰ
আফাতুমা-রূনাহূ‘আলা-মা-ইয়ারা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তবুও কি সে যা দেখেছে তা নিয়ে তোমরা তার সঙ্গে বিতণ্ডা করবে?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সঙ্গে বিতর্ক করবে ?
১৩
وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ
ওয়া লাকাদ রাআ-হু নাঝলাতান উখরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বস্তুত সে তাকে (ফেরেশতাকে) আরও একবার দেখেছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল
১৪
عِندَ سِدْرَةِ الْمُنتَهَىٰ
‘ইনদা ছিদ রাতিল মুনতাহা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সিদরাতুল মুনতাহা (সীমান্তবর্তী কুলগাছ)-এর কাছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সিদরাতুলমুন্তাহার নিকটে,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
প্রান্তবর্তী বদরী বৃক্ষের নিকট,
১৫
عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ
‘ইনদাহা-জান্নাতুল মা’ওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারই কাছে অবস্থিত জান্নাতুল মাওয়া। ৭
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যার নিকট অবস্থিত বাসোদ্যান।
তাফসীরঃ
৭. এটা হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে তার আসল আকৃতিতে দেখার দ্বিতীয় ঘটনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজ সফরে এটা ঘটেছিল। এ সময়ও তিনি তাকে তার স্ব-মূর্তিতে দেখেছিলেন। ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ ঊর্ধ্বজগতের একটি বিশাল বরই গাছ। তারই কাছে জান্নাত অবস্থিত। তাকে ‘জান্নাতুল মাওয়া’ বলা হয়েছে এ কারণে যে, ‘মাওয়া’ অর্থ ঠিকানা। আর জান্নাত হল মুমিনদের ঠিকানা।
১৬
إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَىٰ
ইয ইয়াগশাসসিদরাতা মা -ইয়াগশা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তখন সেই কুল গাছটিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল সেই জিনিস যা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। ৮
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যখন বৃক্ষটি, যা দিয়ে আচ্ছাদিত হওয়ার তা দিয়ে ছিল আচ্ছাদিত,
তাফসীরঃ
৮. একথাও একটি আরবী বাগধারা অনুযায়ী বলা হয়েছে। তরজমার মাধ্যমে এর প্রকৃত মর্ম তুলে আনা কঠিন। বোঝানো হচ্ছে যে, যে জিনিস সে গাছটিকে আচ্ছন্ন করেছিল তা বর্ণনার অতীত। হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘটনার যে ব্যাখ্যা করেছেন, তা দ্বারা জানা যায় যে, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখার জন্য অসংখ্য ফেরেশতা সোনার প্রজাপতি আকারে সেই গাছের উপর একত্র হয়েছিল।
১৭
مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَىٰ
মা-যা-গাল বাসারু ওয়ামা-তাগা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(রাসূলের) চোখ বিভ্রান্ত হয়নি এবং সীমালংঘনও করেনি। ৯
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তার দৃষ্টিবিভ্রম হয় নাই, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয় নাই।
তাফসীরঃ
৯. অর্থাৎ দেখার ব্যাপারে চোখ ধোঁকায় পড়েনি এবং আল্লাহ তাআলা তার জন্য যে সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, তা লংঘনও করেনি যে, তার সামনে কি আছে তা দেখতে যাবে।
১৮
لَقَدْ رَأَىٰ مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَىٰ
লাকাদ রাআ-মিন আ-য়া-তি রাব্বিহিল কুবরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বাস্তবিকপক্ষে, সে তার প্রতিপালকের বড়-বড় নিদর্শনের মধ্য হতে বহু কিছু দেখেছে। ১০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল;
তাফসীরঃ
১০. অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঊর্ধ্বজগতে আল্লাহ তাআলার কুদরত ও হিকমতের বড় বড় নিদর্শন নিজ চোখে দেখেছেন। যেমন সিদরাতুল মুনতাহা, বায়তুল মামুর, জান্নাত, জাহান্নাম, হযরত জিবরীল (আ.)-কে ছয়শ’ ডানাসহ তার প্রকৃত রূপে, দিগন্তজোড়া সবুজ রফরফ প্রভৃতি। -অনুবাদক
১৯
أَفَرَأَيْتُمُ اللَّاتَ وَالْعُزَّىٰ
আফারাআইতুমুল্লা-তা ওয়াল ‘উঝঝা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা কি লাত ও উযযা (এর স্বরূপ) সম্বন্ধে চিন্তা করেছ?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা কি ভেবে দেখেছ ‘লাত’ ও ‘উয্যা’ সম্বন্ধে
২০
وَمَنَاةَ الثَّالِثَةَ الْأُخْرَىٰ
ওয়া মানা-তাছছা-লিছাতাল উখরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তৃতীয় আরেকটি সম্বন্ধে যার নাম মানাত? ১১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্বন্ধে ?
তাফসীরঃ
১১. লাত, মানাত ও উযযা তিনটিই মূর্তির নাম। আরবের বিভিন্ন গোত্র বিভিন্ন স্থানে এসব মূর্তি স্থাপন করেছিল। তারা এদের মাবুদ মনে করত এবং এদের পূজা-অর্চনা করত। কুরআন মাজীদ বলছে, তোমরা কি ভেবে দেখেছ এগুলো আসলে কী? এগুলো কি পাথর ছাড়া অন্য কিছু? এসব নিষ্প্রাণ পাথরের পূজায় লিপ্ত হওয়া কত বড়ই না মূর্খতা!
২১
أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنثَىٰ
আলাকুমুযযাকারু ওয়ালাহুল উনছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তবে কি তোমাদের থাকবে পুত্র সন্তান আর আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান? ১২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তবে কি তোমাদের জন্যে পুত্র সন্তান এবং আল্লাহ্ র জন্যে কন্যা সন্তান ?
তাফসীরঃ
১২. মক্কার মুশরিকগণ ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ তাআলার কন্যা বলত। তাদের এ বিশ্বাস রদ করে বলা হচ্ছে, তোমরা নিজেদের জন্য তো কন্যা সন্তান পছন্দ কর না, অথচ আল্লাহর জন্য পছন্দ করছ, এটা তোমাদের কেমন বিচার? এটা কী রকমের বণ্টন? নিঃসন্দেহে এটা অতি নিকৃষ্ট বণ্টন।
২২
تِلْكَ إِذًا قِسْمَةٌ ضِيزَىٰ
তিলকা ইযান কিছমাতুন দীঝা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাহলে তো এটা বড় অন্যায় বণ্টন!
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এই প্রকার বণ্টন তো অসংগত।
২৩
إِنْ هِيَ إِلَّا أَسْمَاءٌ سَمَّيْتُمُوهَا أَنتُمْ وَآبَاؤُكُم مَّا أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَانٍ ۚ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الْأَنفُسُ ۖ وَلَقَدْ جَاءَهُم مِّن رَّبِّهِمُ الْهُدَىٰ
ইন হিয়া ইল্লাআছমাউন ছাম্মাইতুমূহাআনতুম ওয়া আ-বাউকুম মাআনঝালাল্লা-হু বিহা-মিন ছুলতা-নিন ইয়ঁইয়াত্তাবি‘ঊনা ইল্লাজ্জান্না ওয়ামা-তাহওয়াল আনফুছু ওয়া লাকাদ জাআহুম মিররাব্বিহিমুল হুদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(এদের স্বরূপ এর বেশি কিছু নয় যে,) এগুলি কতক নাম মাত্র, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ রেখেছ। আল্লাহ এর সপক্ষে কোন প্রমাণ নাযিল করেননি। প্রকৃতপক্ষে তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) কেবল ধারণা এবং মনের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। অথচ তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদের কাছে এসে গেছে পথ-নির্দেশ।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এইগুলি কতক নামমাত্র যা তোমাদের পূর্বপুরুষগণ ও তোমরা রেখেছ, যার সমর্থনে আল্লাহ্ কোন দলীল প্রেরণ করেন নাই। তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, অথচ তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের পথনির্দেশ এসেছে।
২৪
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ
আম লিলইনছা-নি মা-তামান্না-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মানুষ যা-কিছু কামনা করে, তাই কি তার প্রাপ্য? ১৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মানুষ যা চায়, তাই কি পায়?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মানুষ যা চায় তাই কি সে পায় ?
তাফসীরঃ
১৩. মুশরিকরা তাদের মনগড়া উপাস্যদের সম্পর্কে বলত, তারা আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে (দেখুন সূরা ইউনুস ১০ : ১৮)। আল্লাহ তাআলা বলছেন, এটা তো তোমাদের কামনা, কিন্তু মানুষ যা চায়, তাই পায় নাকি?
২৫
فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ
ফালিল্লা-হিল আ-খিরাতুওয়াল উলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(না) কেননা আখেরাত ও দুনিয়া সম্পূর্ণরূপে আল্লাহরই এখতিয়ারে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব, পরবর্তী ও পূর্ববর্তী সব মঙ্গলই আল্লাহর হাতে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বস্তুত ইহকাল ও পরকাল আল্লাহ্ র ই।
২৬
۞ وَكَم مِّن مَّلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِن بَعْدِ أَن يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَن يَشَاءُ وَيَرْضَىٰ
ওয়াকাম মিম মালাকিন ফিছ ছামা-ওয়া-তি লা-তুগনী শাফা-‘আতুহুম শাইআন ইল্লা-মিম বা‘দিআইঁ ইয়া’যানাল্লা-হু লিমাইঁ ইয়াশাউ ওয়া ইয়ারদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আকাশমণ্ডলীতে কত ফেরেশতা আছে, যাদের সুপারিশ (কারও) কোন কাজে আসে না। তবে আল্লাহ যার জন্য চান যদি অনুমতি দেন এবং তাতে তিনি সন্তুষ্ট থাকেন তারপরই তা কাজে আসতে পারে। ১৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন, অনুমতি না দেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আকাশে কত ফেরেশতা রয়েছে ; এদের সুপারিশ কিছুমাত্র ফলপ্রসূ হবে না, তবে আল্লাহ্ র অনুমতির পর ; যার জন্যে তিনি ইচ্ছা করেন ও যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।
তাফসীরঃ
১৪. অর্থাৎ ফেরেশতাগণও যখন আল্লাহ তাআলার অনুমতি ও সন্তুষ্টি ছাড়া কারও জন্য সুপারিশ করতে পারে না, তখন এসব মনগড়া উপাস্যরা কিভাবে সুপারিশ করবে?
২৭
إِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ لَيُسَمُّونَ الْمَلَائِكَةَ تَسْمِيَةَ الْأُنثَىٰ
ইন্নাল্লাযীনা লা- ইউ’মিনূনা বিলআ-খিরাতি লাইউছাম্মূনাল মালাইকাতা তাছমিয়াতাল উনছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না, তারা ফেরেশতাদের নাম রাখে নারীদের নামে। ১৫
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তারাই ফেরেশতাকে নারীবাচক নাম দিয়ে থাকে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তারাই নারীবাচক নাম দিয়ে থাকে ফেরেশতাদেরকে;
তাফসীরঃ
১৫. অর্থাৎ তারা তাদেরকে আল্লাহ তাআলার কন্যা সাব্যস্ত করে।
২৮
وَمَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ ۖ وَإِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا
ওয়ামা-লাহুম বিহী মিন ‘ইলমিন ইয়ঁইয়াত্তাবি‘ঊনা ইল্লাজ্জান্না ওয়া ইন্নাজ্জান্না লাইউগনী মিনাল হাক্কিশাইআ-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অথচ তাদের এ বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল ধারণার পিছনে চলে। প্রকৃতপক্ষে সত্যের ব্যাপারে ধারণা কিছুমাত্র কাজে আসে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমানের উপর চলে। অথচ সত্যের ব্যাপারে অনুমান মোটেই ফলপ্রসূ নয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অথচ এই বিষয়ে এদের কোন জ্ঞান নেই, এরা তো কেবল অনুমানেরই অনুসরণ করে; কিন্তু সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোনই মূল্য নেই।
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
২৯
فَأَعْرِضْ عَن مَّن تَوَلَّىٰ عَن ذِكْرِنَا وَلَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
ফাআ‘রিদ‘আম্মান তাওয়াল্লা- ‘আন যিকরিনা-ওয়া লাম ইউরিদ ইল্লাল হায়াতাদ্দুনইয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং (হে রাসূল!) যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং পার্থিব জীবন ছাড়া অন্য কিছু কামনাই করে না, তুমি তাকে অগ্রাহ্য কর।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব যে আমার স্মরণে বিমুখ এবং কেবল পার্থিব জীবনই কামনা করে তার তরফ থেকে আপনি মুখ ফিরিয়ে নিন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অতএব যে আমার স্মরণে বিমুখ তুমি তাকে উপেক্ষা করে চল; সে তো কেবল পার্থিব জীবনই কামনা করে।
৩০
ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُم مِّنَ الْعِلْمِ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اهْتَدَىٰ
যা-লিকা মাবলাগুহুম মিনাল ‘ইলমি ইন্না রাব্বাকা হুওয়া আ‘লামুবিমান দাল্লা ‘আন ছাবীলিহী ওয়া হুওয়া আ‘লামুবিমানিহতাদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাদের জ্ঞানের দৌড় এ পর্যন্তই। ১৬ তোমার প্রতিপালকই ভালো জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনিই ভালো জানেন কে তার পথ পেয়ে গেছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাদের জ্ঞানের পরিধি এ পর্যন্তই। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ভাল জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন কে সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এদের জ্ঞানের দৌড় এই পর্যন্ত। তোমার প্রতিপালকই ভাল জানেন কে তাঁর পথ হতে বিচ্যুত, তিনিই ভাল জানেন কে সৎপথপ্রাপ্ত।
তাফসীরঃ
১৬. এর দ্বারা যারা এই পার্থিব জীবনকেই সবকিছু মনে করে, আখেরাতের কথা চিন্তা করে না, তাদের স্বরূপ তুলে ধরা হচ্ছে। বলা হয়েছে যে, বেচারাদের দৌড় তো এ পর্যন্তই। তাই এর বেশি কিছু তারা ভাবতে পারে না।
৩১
وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ لِيَجْزِيَ الَّذِينَ أَسَاءُوا بِمَا عَمِلُوا وَيَجْزِيَ الَّذِينَ أَحْسَنُوا بِالْحُسْنَى
ওয়া লিল্লা-হি মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি লিইয়াজঝিইয়াল্লাযীনা আছাউ বিমা-‘আমিলূওয়া ইয়াজঝিইয়াল্লাযীনা আহছানূবিলহুছনা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যা-কিছু আকাশমণ্ডলীতে ও যা-কিছু পৃথিবীতে আছে তা আল্লাহরই। সুতরাং যারা মন্দ কাজ করেছে, তিনি তাদেরকেও তাদের কাজের প্রতিফল দেবেন এবং যারা ভালো কাজ করেছে তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করবেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর, যাতে তিনি মন্দকর্মীদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল দেন এবং সৎকর্মীদেরকে দেন ভাল ফল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আকাশমণ্ডলীতে যা কিছু আছে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহ্ র ই। যারা মন্দ কর্ম করে তাদেরকে তিনি দেন মন্দ ফল এবং যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে দেন উত্তম পুরস্কার।
৩২
الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ ۚ هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ إِذْ أَنشَأَكُم مِّنَ الْأَرْضِ وَإِذْ أَنتُمْ أَجِنَّةٌ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ ۖ فَلَا تُزَكُّوا أَنفُسَكُمْ ۖ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَىٰ
আল্লাযীনা ইয়াজতানিবূনা কাবাইরালইছমি ওয়ালফাওয়া-হিশা ইল্লাল লামামা ইন্না রাব্বাকা ওয়া-ছি‘উল মাগফিরাতি হুওয়া আ‘লামুবিকুম ইয আনশাআকুম মিনাল আরদি ওয়া ইয আনতুম আজিন্নাতুন ফী বুতূনি উম্মাহা-তিকুম ফালা-তুঝাক্কুআনফুছাকুম হুওয়া আ‘লামুবিমানিত্তাকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সেই সব লোককে, যারা বড়-বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে, অবশ্য কদাচিৎ পিছলে পড়লে সেটা ভিন্ন কথা। ১৭ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক প্রশস্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত আছেন যখন তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যখন তোমরা তোমাদের মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে ছিলে। সুতরাং তোমরা নিজেদেরকে পবিত্র বলে দাবি করো না। তিনি ভালোভাবেই জানেন মুত্তাকী কে। ১৮
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা বড় বড় গোনাহ ও অশ্লীলকার্য থেকে বেঁচে থাকে ছোটখাট অপরাধ করলেও নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত। তিনি তোমাদের সম্পর্কে ভাল জানেন, যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা থেকে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে কচি শিশু ছিলে। অতএব তোমরা আত্নপ্রশংসা করো না। তিনি ভাল জানেন কে সংযমী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরাই বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্য হতে, ছোটখাট অপরাধ করলেও। তোমার প্রতিপালকের ক্ষমা অপরিসীম ; আল্লাহ্ তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত-যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মৃত্তিকা হতে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রƒণরূপে ছিলে। অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা কর না, তিনিই সম্যক জানেন মুত্তাকী কে।
তাফসীরঃ
১৭. এ আয়াতে নিজেকে নিজে পবিত্র ও মুত্তাকী মনে করতে এবং আত্মপ্রশংসায় লিপ্ত হতে নিষেধ করা হয়েছে। [দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে যে, মূলত তুমি মাটির সৃষ্টি, মাতৃগর্ভে নাপাক রক্ত দ্বারা পালিত, বহুবিধ অপবিত্রতা ও মলিনতা এবং নানা রকম দুর্বলতা তোমার মধ্যে বিদ্যমান, যার অনেক কিছুই সকলে জানে, যা অন্যে জানে না তা তুমি নিজে জান আর আল্লাহ তাআলা তোমার আদি-অন্তের সবই জানেন। কাজেই অহংকার ও আত্মশ্লাঘায় লিপ্ত না হয়ে বিনীত হয়ে থাক এবং তাকওয়ার মাধ্যমে আত্মোৎকর্ষ লাভের চেষ্টা কর। -অনুবাদক]
১৮. কুরআন মাজীদে শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে اللمم । এর আভিধানিক অর্থ ‘সামান্য কিছু’। মুফাসসিরগণ সাধারণভাবে এর ব্যাখ্যা করেছেন, ‘ছোট-ছোট গুনাহ, যা কদাচিৎ হয়ে যায়’। এর এক অর্থ ‘নিকটবর্তী হওয়া’-ও। সে হিসেবে কোন কোন মুফাসসির এর ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষ যদি কোন গুনাহের কাছাকাছি চলে যায়, কিন্তু তাতে লিপ্ত না হয়, তবে সেজন্য তাকে ধরা হবে না।
৩৩
أَفَرَأَيْتَ الَّذِي تَوَلَّىٰ
আফারাআইতাল্লাযী তাওয়াল্লা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে রাসূল!) তুমি কি সেই ব্যক্তিকে দেখেছ, যে (সত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি কি দেখেছ সেই ব্যক্তিকে যে মুখ ফিরিয়ে নেয়;
৩৪
وَأَعْطَىٰ قَلِيلًا وَأَكْدَىٰ
ওয়া আ‘তা-কালীলাওঁ ওয়া আকদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে সামান্য কিছু দান করেছে, তারপর থেমে গেছে? ১৯
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং দেয় সামান্যই ও পাষাণ হয়ে যায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং দান করে সামান্যই, পরে বন্ধ করে দেয় ?
তাফসীরঃ
১৯. হাফেজ ইবনে জারীর (রহ.) সহ অন্যান্য মুফাসসিরগণ এ আয়াতসমূহের পটভূমি বর্ণনা করেছেন যে, জনৈক কাফের কুরআন মাজীদের কিছু আয়াত শুনে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। তা দেখে তার এক বন্ধু তাকে বলল, তুমি তোমার বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করছ কেন? সে উত্তর দিল, আমি আখেরাতের আযাবকে ভয় করছি। বন্ধু বলল, তুমি যদি আমাকে কিছু অর্থ দাও, তবে তার বিনিময়ে আমি এই দায়িত্ব নিয়ে নেব যে, আখেরাতে যখন দেখব তোমার শাস্তি হতে যাচ্ছে, তখন সে শাস্তি আমি আমার মাথায় তুলে নেব এবং তোমাকে তা থেকে রক্ষা করব। সুতরাং সে ব্যক্তি কিছু অর্থ তাকে দিয়ে দিল। কিছুদিন পর সে আরও চাইল। সে আরও দিল। পরে আবারও চাইলে সে দেওয়া বন্ধ করে দিল। কোন কোন বর্ণনায় আছে, সে এ সম্পর্কে একটি দলীলও লিখে দিল। এ আয়াতসমূহে তাদের নির্বুদ্ধিতা তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি বলেছিল, আমি তোমাকে আখেরাতের আযাব থেকে রক্ষা করব, তার কাছে কি অদৃশ্য-জ্ঞান আছে, যা দ্বারা সে জানতে পেরেছে যে, এটা করতে সে সক্ষম হবে? দ্বিতীয়ত আল্লাহ তাআলা সাধারণ নিয়ম জানিয়ে দিয়েছেন যে, কোন ব্যক্তি অন্য কারও গুনাহের বোঝা বহন করতে পারবে না। আর একথা এই প্রথম বলা হচ্ছে না; বরং পূর্বে হযরত ইবরাহীম ও হযরত মূসা আলাইহিমাস সালামের উপর যে সহীফাসমূহ নাযিল হয়েছিল, তাতেও একথা লিখে দেওয়া হয়েছিল।
৩৫
أَعِندَهُ عِلْمُ الْغَيْبِ فَهُوَ يَرَىٰ
আ ‘ইনদাহূ‘ইলমুল গাইবি ফাহুওয়া ইয়ারা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তার কাছে কি অদৃশ্য-জ্ঞান আছে, যা সে দেখতে পাচ্ছে?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তার কাছে কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে যে, সে দেখে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তার কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে যে, সে প্রত্যক্ষ করে ?
৩৬
أَمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِي صُحُفِ مُوسَىٰ
আম লাম ইউনাব্বা’ বিমা-ফী সুহুফি মুছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাকে কি অবগত করা হয়নি যা আছে মুসার সহীফাসমূহে
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাকে কি জানানো হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তাকে কি অবগত করা হয় নাই যা আছে মূসার কিতাবে,
৩৭
وَإِبْرَاهِيمَ الَّذِي وَفَّىٰ
ওয়া ইবরা-হীমাল্লাযী ওয়াফফা।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং ইবরাহীমের সহীফাসমূহেও, যে পরিপূর্ণ আনুগত্য করেছিল? ২০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং ইব্রাহীমের কিতাবে, যে তার দায়িত্ব পালন করেছিল?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং ইব্রাহীমের কিতাবে, যে পালন করেছিল তার দায়িত্ব ?
তাফসীরঃ
২০. হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পরিপূর্ণ আনুগত্য সম্পর্কিত বিবরণের জন্য দেখুন সূরা বাকারা (২ : ১২৩)।
৩৮
أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ
আল্লা-তাঝিরু ওয়া-ঝিরাতুওঁবিঝরা উখরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে সহীফাসমূহে যা ছিল, তা এই যে, কোন বহনকারী অন্য কারও (গুনাহের) বোঝা বহন করতে ২১ পারে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
কিতাবে এই আছে যে, কোন ব্যক্তি কারও গোনাহ নিজে বহন করবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তা এই যে, কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না,
তাফসীরঃ
২১. অদ্যাবধি বাইবেলের হিযকীল পুস্তকে এ মূলনীতিটি সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে (দেখুন হিযকীল ১৮:২০)।
৩৯
وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ
ওয়াআল লাইছা লিলইনছা-নি ইল্লা-মা-ছা‘আ-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর এই যে, মানুষ নিজের প্রচেষ্টা ছাড়া অন্য কোন কিছুর (বিনিময় লাভের) হকদার হয় না। ২২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এই যে, মানুষ তাই পায় যা সে করে,
তাফসীরঃ
২২. অর্থাৎ মানুষের অধিকার থাকে কেবল নিজ কর্মের সওয়াবে। অন্য কারও আমলের সওয়াবে তার কোন অধিকার নেই। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে কাউকে যদি অন্যের আমল দ্বারা উপকৃত করেন ও তার সওয়াবে তাকে অংশীদার করেন, তবে সেটা কেবলই তাঁর রহমত। এতে কোনও রকমের বাধ্যবাধকতা নেই। সুতরাং আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ঈসালে সওয়াব অর্থাৎ নিজের সওয়াব অন্য কাউকে দান করা বৈধ। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে জীবিতের দান করা সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছান। কেননা সাধারণত কোন ব্যক্তি অন্যকে ঈসালে সওয়াব করে কেবল তখনই, যখন সেই ব্যক্তি তার সাথে কোন ভালো আচরণ করে কিংবা অন্য কোন সৎকর্ম করে যায়।
৪০
وَأَنَّ سَعْيَهُ سَوْفَ يُرَىٰ
ওয়া আন্না ছা‘ইয়াহূছাওফা ইউরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং এই যে, তার চেষ্টা অচিরেই দেখা যাবে। ২৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তার কর্ম শীঘ্রই দেখা হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এই যে, তার কর্ম অচিরেই দেখান হবে-
তাফসীরঃ
২৩. অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তার আমল তার সামনে পেশ করা হবে, আমলনামা খুলে দেওয়া হবে, তার সামনেই তা দাড়িপাল্লায় ওজন করা হবে। এর দ্বারা মুমিনকে সুসংবাদ দেওয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলা তার সৎকর্ম দেখিয়ে দিয়ে তাকে খুশী করবেন আর কাফেরকেও তা দেখানো হবে। ফলে তার দুঃখণ্ডদুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যাবে। -অনুবাদক
৪১
ثُمَّ يُجْزَاهُ الْجَزَاءَ الْأَوْفَىٰ
ছু ম্মা ইউজঝা-হুল জাঝাআল আওফা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর তার প্রতিফল তাকে পুরোপুরি দেওয়া হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর তাকে দেওয়া হবে পূর্ণ প্রতিদান,
৪২
وَأَنَّ إِلَىٰ رَبِّكَ الْمُنتَهَىٰ
ওয়া আন্না ইলা-রাব্বিকাল মুনতাহা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং এই যে, (সকলের) শেষ গন্তব্য তোমার প্রতিপালকেরই কাছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমার পালনকর্তার কাছে সবকিছুর সমাপ্তি,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এই যে, সমস্ত কিছুর সমাপ্তি তো তোমার প্রতিপালকের নিকট,
৪৩
وَأَنَّهُ هُوَ أَضْحَكَ وَأَبْكَىٰ
ওয়া আন্নাহূহুওয়া আদহাকা ওয়া আবকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং এই যে, তিনিই হাসান ও কাঁদান
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তিনিই হাসান ও কাঁদান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এই যে, তিনিই হাসান, তিনিই কাঁদান,
৪৪
وَأَنَّهُ هُوَ أَمَاتَ وَأَحْيَا
ওয়া আন্নাহূহুওয়া আমা-তা ওয়া আহইয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং এই যে, তিনিই মৃত্যু ঘটান ও জীবন দান করেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তিনিই মারেন ও বাঁচান,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এই যে, তিনিই মারেন, তিনিই বাঁচান,
৪৫
وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنثَىٰ
ওয়া আন্নাহূখালাকাঝ ঝাওজাইনিযযাকারা ওয়াল উনছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং এই যে, তিনিই পুরুষ ও নারীর যুগল সৃষ্টি করেছেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এই যে, তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী
৪৬
مِن نُّطْفَةٍ إِذَا تُمْنَىٰ
মিন নুতফাতিন ইযা-তুমনা।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(তাও কেবল) একটি বিন্দু দ্বারা, যখন তা স্খলিত করা হয়। ২৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শুক্রবিন্দু হতে, যখন তা স্খলিত হয়,
তাফসীরঃ
২৪. অর্থাৎ শুক্র তো একই। কিন্তু তা থেকেই কখনও পুরুষ সৃষ্টি হয়, কখনও নারী। যেই আল্লাহ শুক্রের ক্ষুদ্র বিন্দু দ্বারা পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করার জন্য তার ভেতর আলাদা-আলাদা বৈশিষ্ট্য দান করেন, তিনি কি সেই পুরুষ ও নারীকে তাদের মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন দান করার ক্ষমতা রাখেন না?
৪৭
وَأَنَّ عَلَيْهِ النَّشْأَةَ الْأُخْرَىٰ
ওয়া আন্না ‘আলাইহিন্নাশআতাল উখরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং এই যে, দ্বিতীয় জীবন দেওয়ার দায়িত্ব তাঁরই।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
পুনরুত্থানের দায়িত্ব তাঁরই,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এই যে, পুনরুত্থান ঘটাবার দায়িত্ব তাঁরই,
৪৮
وَأَنَّهُ هُوَ أَغْنَىٰ وَأَقْنَىٰ
ওয়া আন্নাহূহুওয়া আগনা-ওয়া আকনা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং এই যে, তিনিই ধনবান বানান এবং সম্পদ সংরক্ষিত করান। ২৫
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তিনিই ধনবান করেন ও সম্পদ দান করেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এই যে, তিনিই অভাবমুক্ত করেন ও সম্পদ দান করেন,
তাফসীরঃ
২৫. اقنى–এর আরেক অর্থ করা হয়ে থাকে ‘গরীব বানান’। হযরত ইবন আব্বাস (রা.) আয়াতটির অর্থ করেছেন, ‘তিনিই ধনবান বানান ও সন্তুষ্ট করেন’। -অনুবাদক
৪৯
وَأَنَّهُ هُوَ رَبُّ الشِّعْرَىٰ
ওয়া আন্নাহূহুওয়া রাব্বুশ শি‘রা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং এই যে, তিনিই শি‘রা নক্ষত্রের প্রতিপালক। ২৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি শিরা নক্ষত্রের মালিক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এই যে, তিনি শি‘রা নক্ষত্রের মালিক।
তাফসীরঃ
২৬. ‘শি‘রা’ এক নক্ষত্রের নাম। জাহেলী যুগে আরবের লোক তার পূজা করত। তারা বিশ্বাস করত, নক্ষত্রটি তাদের কোন উপকার করে। আল্লাহ তাআলা বলছেন, নক্ষত্রটি তো একটি সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলাই তার প্রতিপালক। কাজেই সে পূজার উপযুক্ত হয় কী করে?
৫০
وَأَنَّهُ أَهْلَكَ عَادًا الْأُولَىٰ
ওয়া আন্নাহূআহলাকা ‘আ-দানিল ঊলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং এই যে, তিনিই ‘প্রথম ‘আদ’-কে ধ্বংস করেছেন। ২৭
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই প্রথম আদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এই যে, তিনিই প্রাচীন ‘আদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিলেন
তাফসীরঃ
২৭. ‘প্রথম ‘আদ’ বলা হয় হযরত হূদ ‘আলায়হিস সালামের কওমকে। এ জাতি (খৃ.পূ. আনুমানিক ২০০-খৃ. পূ. ১৭০০) দক্ষিণ আরবের ইয়ামান ও হাযরামাওত অঞ্চলে বাস করত। তাদেরকে ‘আদ ইরাম’ও বলা হয়। তারা অত্যন্ত শক্তিশালী জাতি ছিল। নাগরিক সভ্যতায় প্রভূত উন্নতি লাভ করেছিল। কিন্তু ছিল ঘোর অবাধ্য ও দুরাচার। হযরত হূদ (‘আ.)-এর সব রকম দাওয়াতী মেহনতকে তারা চরমভাবে প্রত্যাখ্যান করে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা টানা সাত রাত, আট দিনের ঝড়-ঝঞ্ঝা দ্বারা তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। মুষ্টিমেয় যারা ঈমান এনেছিল তারা আযাবের আগে সে অঞ্চল ত্যাগ করে হিজায এলাকায় চলে যায়। তাদের বংশধরদেরকে বলা হয় দ্বিতীয় ‘আদ। -অনুবাদক
৫১
وَثَمُودَ فَمَا أَبْقَىٰ
ওয়া ছামূদা ফামাআবকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং ছামুদ (জাতি)-কেও। কাউকে বাকি রাখেননি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং সামুদকেও; অতঃপর কাউকে অব্যহতি দেননি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং সামূদ সম্প্রদায়কেও; কাউকেও তিনি বাকি রাখেন নাই-
৫২
وَقَوْمَ نُوحٍ مِّن قَبْلُ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا هُمْ أَظْلَمَ وَأَطْغَىٰ
ওয়া কাওমা নূহিম মিন কাবলু ইন্নাহুম কা-নূহুম আজলামা ওয়া আতগা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং তার আগে নুহের জাতিকেও (ধ্বংস করেছেন)। নিশ্চয়ই তারা ছিল সর্বাপেক্ষা বড় জালেম ও অবাধ্য।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কে, তারা ছিল আরও জালেম ও অবাধ্য।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কেও, এরা ছিল অতিশয় জালিম ও অবাধ্য।
৫৩
وَالْمُؤْتَفِكَةَ أَهْوَىٰ
ওয়াল মু’তাফিকাতা আহওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে জনপদসমূহ উল্টে পড়ে গিয়েছিল, ২৮ সেগুলোকেও তিনিই তুলে নিক্ষেপ করেছিলেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই জনপদকে শুন্যে উত্তোলন করে নিক্ষেপ করেছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
উল্টানো আবাসভ‚মিকে নিক্ষেপ করেছিলেন,
তাফসীরঃ
২৮. এর দ্বারা হযরত লুত আলাইহিস সালামকে যে জনপদসমূহে প্রেরণ করা হয়েছিল তার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। তাদের উপর্যুপরি পাপাচারের কারণে শেষ পর্যন্ত জনপদগুলিকে আকাশের দিকে তুলে উল্টিয়ে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। বিস্তারিত দেখুন সূরা হুদ (১১ : ৭৭-৮২)।
৫৪
فَغَشَّاهَا مَا غَشَّىٰ
ফাগাশশা-হা-মা-গাশশা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর যে (ভয়াবহ) বস্তু তাকে আচ্ছন্ন করল, তা তাকে আচ্ছন্ন করে ছাড়ল। ২৯
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তাকে আচ্ছন্ন করে নেয় যা আচ্ছন্ন করার।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
একে আচ্ছন্ন করল কী সর্বগ্রাসী শাস্তি!
তাফসীরঃ
২৯. অর্থাৎ সে জনপদবাসীদেরকে যে বিভীষিকাময় শাস্তি দান করা হয়েছিল, তা বর্ণনার অতীত। -অনুবাদক
৫৫
فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكَ تَتَمَارَىٰ
ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকা তাতামা-রা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং (হে মানুষ!) তুমি তোমার প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নি‘আমতে সন্দেহ পোষণ করবে? ৩০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তুমি তোমার পালনকর্তার কোন অনুগ্রহকে মিথ্যা বলবে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তবে তুমি তোমার প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে ?
তাফসীরঃ
৩০. অর্থাৎ হে মানুষ! আল্লাহ তোমাদেরকে সেই শাস্তি হতে রক্ষা করে যেসব নি‘আমতের মধ্যে তোমাদেরকে রেখেছেন, তারপর তোমাদের হেদায়েতের জন্য কুরআন মাজীদ বিচিত্র বর্ণনাধারায় যেভাবে তোমাদেরকে বোঝাচ্ছে ও সতর্ক করছে, সেই সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মহব্বত ও দরদের সাথে বুঝিয়ে-সমঝিয়ে তোমাদেরকে আযাব থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, এসব বড়-বড় নি‘আমতের মধ্যে কোনটার ব্যাপারে তুমি সন্দেহ করবে?
৫৬
هَـٰذَا نَذِيرٌ مِّنَ النُّذُرِ الْأُولَىٰ
হা-যা-নাযীরুম মিনান নুযুরিল ঊলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে (অর্থাৎ রাসূল)-ও পূর্ববর্তী সতর্ককারীদের মত একজন সতর্ককারী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতীতের সতর্ককারীদের মধ্যে সে-ও একজন সতর্ককারী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অতীতের সতর্ককারীদের ন্যায় এই নবীও এক সতর্ককারী।
৫৭
أَزِفَتِ الْآزِفَةُ
আ-ঝিফাতিল আ-ঝিফাহ।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আসন্ন কাল তো নিকটে এসে গেছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
কেয়ামত নিকটে এসে গেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কিয়ামত আসন্ন,
৫৮
لَيْسَ لَهَا مِن دُونِ اللَّهِ كَاشِفَةٌ
লাইছা লাহা-মিন দূনিল্লা-হি কা-শিফাহ।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ ছাড়া এমন কেউ নেই, যে তা রোধ করতে পারে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ ব্যতীত কেউ একে প্রকাশ করতে সক্ষম নয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ ব্যতীত কেউই এটা ব্যক্ত করতে সক্ষম নয়।
৫৯
أَفَمِنْ هَـٰذَا الْحَدِيثِ تَعْجَبُونَ
আফামিন হা-যাল হাদীছিতা‘জাবূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তবে কি তোমরা এ কথায়ই বিস্ময়বোধ করছ?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা কি এই বিষয়ে আশ্চর্যবোধ করছ?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা কি এই কথায় বিস্ময় বোধ করছো!
৬০
وَتَضْحَكُونَ وَلَا تَبْكُونَ
ওয়া তাদহাকূনা ওয়ালা-তাবকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং (একে উপহাসের বিষয় বানিয়ে) হাসি-ঠাট্টা করছ এবং কান্নাকাটি করছ না;
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং হাসছ-ক্রন্দন করছ না?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং হাসিঠাট্টা করছো! ক্রন্দন করছো না ?
৬১
وَأَنتُمْ سَامِدُونَ
ওয়া আনতুম ছা-মিদূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং তোমরা স্পর্ধিত ঔদাসিন্যে লিপ্ত রয়েছ?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা ক্রীড়া-কৌতুক করছ,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা তো উদাসীন,
৬২
فَاسْجُدُوا لِلَّهِ وَاعْبُدُوا ۩
ফাছজূদূলিল্লা-হি ওয়া‘বুদূ(ছিজদাহ-১২)।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এখন (ও সময় আছে) আল্লাহর সামনে ঝুঁকে পড় এবং তাঁর বন্দেগীতে লিপ্ত হও। ৩১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব আল্লাহকে সেজদা কর এবং তাঁর এবাদত কর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অতএব আল্লাহ্কে সিজ্দা কর এবং তাঁরই ‘ইবাদত কর।
তাফসীরঃ
৩১. এটা সিজদার আয়াত। যে ব্যক্তি আরবীতে এ আয়াত পড়বে বা শুনবে তার উপর সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
আমাদের নতুন ইসলামিক নিউজ ও জিজ্ঞাসা ভিত্তিক সাইড
Islamic Info Hub ( www.islamicinfohub.com ) আজই ভিজিড করুন !!
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
- ইসলামে কুরবানীর গুরুত্ব ও বিধান,ইসলামে কোরবানির যত ফজিলত গুরুত্ব ও শিক্ষা
- বৃষ্টির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, বৃষ্টির নামাজের পর আমল
- ইসতিসকার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, ইসতিসকার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইসতিসকার নামাজের পর আমল
- বাসর রাত সম্পর্কে ইসলামের বিধান,বাসর রাতের নামাজ