আজকের বিষয়: সূরা মাউন সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে, পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল মাউন আলমল ও ফজিলত
সূরা মাউন পবিত্র কোরআনের ১০৭ তম সূরা। এ সূরাটি পবিত্র কোরআনের ৩০ পারায় অবস্থিত। এর আয়াত সংখ্যা ৭, রুকু সংখ্যা ১ এবং এটি মাক্কী সূরার অন্তর্গত একটি সূরা। অর্থাৎ এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সূরায় মুনাফিক ও কাফেরদের কতিপয় দুষ্কর্ম এবং যারা তাদের নামাজে বেখেয়াল বা গাফলতি করে ও লোক দেখানো নামাজ পড়ে তাদের ধ্বংসের বার্তা শুনানো হয়েছে।
এই সূরাতে আল্লাহ প্রথমে বিচার দিবসের কথা বলেছেন এবং তারপর তাদের কথা বলেছেন যারা এতিমদের গলা ধাক্কা দেয়। মূলত তারা বিচার দিবসকে অস্বীকার করে। আমাদের বর্তমান সমাজে এর প্রভাব প্রায় প্রতিদিনের। অন্যায়ভাবে অনর্থক সম্পদ গ্রাস করছে। এবং আল্লাহ বলেন যে এরা নামাজের ব্যাপারে অমনোযাগী এবং তা অমান্য করে।
এবং তাদের প্রার্থনা আল্লাহ কখনও গ্রহণ করবে না। আমাদের সমাজে অনেক লোক আছে যারা লোক দেখানে নামাজ পড়ে এবং লোক দেখানো সাহায্য করে। আর এরা হল মুনাফিক। এরা ভিতরে ভিতরে তাদের দাম্ভিকতা দেখাচ্ছে কিন্তু বাইরে থেকে তাদের অহংকার প্রকাশ পাচ্ছে। এরা দেখায় তারা সমাজের সেবা করছে। এরা মুনাফিক। এবং তারা কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হবে। মূলত, আল্লাহর কাছে লোক দেখানো পৌঁছায় না। সুতরাং আমাদের উচিত সূরা মাউনকে ভালোভাবে বোঝা। নিজের প্রার্থনায় আরও উপযোগী হওয়া। আরও এতিম ও মেসকিনদের সাহায্য করা এবং অন্যদেরও একই কাজ করতে উৎসাহিত করা।
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
সূরা মাউন
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
(১)
আরবিঃ أَرَءَيْتَ ٱلَّذِى يُكَذِّبُ بِٱلدِّين
উচ্চারণঃ আরাআইতাল্লাযী ইউকাযযি বুবিদ্দীন।
অনুবাদঃ আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচারদিবসকে মিথ্যা বলে?
(২)
আরবিঃ فَذَٰلِكَ ٱلَّذِى يَدُعُّ ٱلْيَتِيمَ
উচ্চারণঃ ফাযা-লিকাল্লাযী ইয়াদু‘‘উল ইয়াতীম।
অনুবাদঃ সে সেই ব্যক্তি, যে এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়।
(৩)
আরবিঃ وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلْمِسْكِينِ
উচ্চারণঃ ওয়ালা-ইয়াহুদ্দু‘আলা-তা‘আ-মিল মিছকীন।
অনুবাদঃ এবং মিসকীনকে অন্ন দিতে উৎসাহিত করে না।
(৪)
আরবিঃ فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ
উচ্চারণঃ ফাওয়াইঁলুলিলল মুসাল্লীন।
অনুবাদঃ অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর।
(৫)
আরবিঃ ٱلَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ
উচ্চারণঃ আল্লাযীনাহুম ‘আন সালা-তিহিমি ছা-হূন।
অনুবাদঃ যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর।
(৬)
আরবিঃ ٱلَّذِينَ هُمْ يُرَآءُونَ
উচ্চারণঃ আল্লাযীনা হুম ইউরাঊনা।
অনুবাদঃ যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে।
(৭)
আরবিঃ وَيَمْنَعُونَ ٱلْمَاعُون
উচ্চারণঃ ওয়া ইয়ামনা‘ঊনাল মা-‘ঊন।
অনুবাদঃ এবং নিত্য ব্যবহার্য্য বস্তু অন্যকে দেয় না।
সূরা মাউন এর শানে নুযূল
এই সূরায় ধ্বংসের বার্তা সকল নামাজিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যারা তাদের নামাজকে অবহেলা করে এবং লোক দেখানো নামাজ আদায় করে। এ ধরনের মুনাফিক মদিনায় পাওয়া যেত। কারণ ইসলাম এবং ইসলামের অনুসারীরা সেখানে এমন এক মাত্রার ক্ষমতা অর্জন করেছিল যে অনেক লোককে পরিস্থিতির জরুরীতায় বিশ্বাস করতে হয়েছিল এবং তারা মসজিদে আসতে বাধ্য হয়েছিল।
তারা জামাতে নামাজে যোগ দিতেন এবং লোক দেখানো নামাজ আদায় করতেন। এভাবে তারা মুসলমানদের মধ্যে গন্য হতে চেয়েছিল। অন্যদিকে মক্কায় মানুষের নামাজ পড়ার পরিবেশ ছিল না। সেখানে মুমিনদের জন্য জামায়াতের সাথে নামাজের ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল। নামাজ গোপনে আদায় করতে হতো। যদি কেউ জনসম্মুখে প্রার্থনা করতেন, তিনি বড় সাহস দেখাতেন। তার মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল।
সেখানে যে ধরনের মুনাফিক দেখা গেছে তারা বিশ্বাসী লোকদের দল বা জনসম্মুখে প্রার্থনা করে না। বরং তারা জানতেন এবং মেনে নিয়েছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন প্রকৃত নবী। কিন্তু তাদের কেউ কেউ তাদের শাসন ক্ষমতা, প্রভাব এবং নেতৃত্ব বজায় রাখার জন্য ইসলাম গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিলেন। আবার, কিছু লোক ইসলাম গ্রহণ করে তাদের চোখের সামনে মুসলমানদের বিপদে পড়তে দেখে নিজেরাও বিপদে পড়তে প্রস্তুত ছিল না। এরই প্র্রেক্ষাপটে সূরা মাউন নাযিল হয়েছিল।
এর ফজিলত সমূহ
একজন ব্যক্তির পরকালে বিশ্বাস না হলে তার মধ্যে কোন ধরনের নৈতিকতার জন্ম হয় তা বর্ণনা করাই এর মূল বিষয়। এখানে ২ এবং ৩ নং আয়াতে কাফেরদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যারা পরকালকে প্রকাশ্যে অস্বীকার করে।
এবং শেষের চারটি আয়াতে মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যাদের মুসলমান বলে মনে হয় কিন্তু তাদের পরকাল, এর শাস্তি এবং পুরস্কার ও পাপের পূর্ণতা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। পরকালে বিশ্বাস ছাড়া মানুষের মধ্যে শক্তিশালী ও পবিত্র চরিত্র গড়ে তোলা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
পাপকাজ সমাজকে অন্ধকারে নামিয়ে আনে। পাপকাজের প্রচার ও প্রসার মানুষের ঈমানকে দূর্বল করে দেয়। মানুষকে নির্লজ্জায় নামিয়ে দেয়। ইসলামে সকল ধরনের অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘বলে দাও, আমার পালনকর্তা হারাম করেছেন সকল প্রকাশ্য ও গোপনীয় অশ্লীলতাকে, আর পাপ ও অসংগত বিরোধিতা এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করাকে, যার কোনো সনদ তিনি পাঠাননি। আর আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলা, যা তোমরা জানো না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩৩)